তোমাতেই
পর্ব_১৮,১৯
Arvy_Poli
পর্ব_১৮
মুগ্ধ পুতুলকে থামিয়ে দেয়।তার ঠোঁট জোড়ায় আলতো চুমু খায় মুগ্ধ। আস্তে আস্তে পুতুলের ওড়নাটা সরিয়ে নিজের দখলে করে নেয় পুতুলকে। দুজন পারি জমায় অজানা সুখের রাজ্যে।
করিম সাহেব মর্নিং ওয়ার্কে গিয়েছিলেন হঠাৎ তার প্রেসার বেড়ে যায়। তিনি অসুস্থ হয়ে মাটিতে বসে পড়লে এমনতা-অবস্থায় মৃদ্ধার নজরে পড়ে। মৃদ্ধা করিম সাহেবকে এপার্টমেন্টে নিয়ে আসে। করিম সাহেব মৃদ্ধার এমন আচরণে খুব খুশি হোন।
মৃদ্ধা হাঁটতে হাঁটতে মুগ্ধের রুমে চলে যায়। মুগ্ধ মাত্র সাওয়ার নিয়েছে। খালি গা নিচে সাদা টাওয়াল পড়ে আছে মুগ্ধ। হাতে কফির কাপ।। মৃদ্ধা পেছন থেকে মুগ্ধের কাঁধে হাত রাখলে মুগ্ধ ফিরে তাকায়,
-তুই?
মৃদ্ধা কিছু না বলে আকুল দৃষ্টিতে মুগ্ধের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে,
-কিছু হয়েছে?
মৃদ্ধা মৃদু হেসে জবাব দেয়।
-নাতো, কি হবে আমার?
-তাহলে।
-এমনি আসলাম, কেনো আসতে পারি না?
-হুম তুই গিয়ে বস আমি চেঞ্জ করে আসছি।
ওই মূহুর্তে পুতুল সুপ হাতে রুমে ঢুকে মৃদ্ধা আর মুগ্ধকে দেখে নেয়।
মৃদ্ধা হাসি মাখা মুখ নিয়ে মুগ্ধের দিকে তাকায়,
-আচ্ছা ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি চলে আয়।
মৃদ্ধা ড্রইংরুমে বসে আছে। সায়মা বেগম মৃদ্ধাকে দেখে বেশ অবাক হোন। মৃদ্ধা হাত থেকে পেপারটি রেখে সায়মা বেগমকে সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করে । করিম সাহেব সায়মা বেগমকে বিস্তারিত বললে সায়মা বেগম মৃদ্ধার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আজকে নাস্তাটা উনাদের সাথেই করতে বলেন।
-আরে,না না আন্টি তেমন কিছুই করব না আমি। এমনিতেই আপনাদের বাড়িতে আসতাম,,,,
মৃদ্ধার কথা শেষ না হতেই মুগ্ধ বলে উঠে,
-কেনো?
মৃদ্ধা উঠে দাড়িয়ে মুগ্ধের কাছে গিয়ে আনন্দের সাথে বলতে লাগে,
-কারন আগামী এক মাসের মধ্যে আমি বিয়ে করছি আর সেখানে তুই আর তোর পরিবার মাস্ট থাকতে হবে,
মুগ্ধ হেসে ফেলে,
-রিয়েলি?
মৃদ্ধা হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়ে মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরে। মুগ্ধও খুব শক্ত করে মৃদ্ধাকে আঁকড়ে ধরে তাকে অভিনন্দন জানায়।
————————
পুতুল চুপটি মেরে বিছানায় বসে আছে। মুগ্ধ পেছন থেকে এসে পুতুলকে জড়িয়ে ধরে।
-কি করছো?
-কিছু না তো
-না কিছু তো আছেই কিন্তু কি?
-উউফফ বললাম তো কিছু না
মুগ্ধ কিছুই বুঝতে পারছে না একটুতেই পুতুল রেগে গেলো কেনো? আগে কখনোই এরকম করেনি।
-তুমি রেগে আছো?
-রাগবো কেন?
সায়মা বেগম শাড়ির আচলে হাত মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকে বলতে থাকেন,
-রাগবে না তো কি করবে? নতুন বিয়ে হয়েছে কই একটু ঘুরে আসবি তা না রুমে বসিয়ে র আলগা আদর দেখাছিস।
পুতুল বেখেয়ালি হয়ে বলে উঠে,
-না মা লাগবে না,,,
-তুই চুপ থাক।
মুগ্ধ বাধ্য ছেলেটির মতো সায়মা বেগমের কথায় রাজি হয়ে যায়। পুতুলকে রেডি হতে বলে।
সায়মা বেগম নিজ হাতে পুতুলকে সাজিয়ে দিয়েছে। কত মানা করলো কিন্তু কে শুনে কার কথা!
মুগ্ধ পুতুল বেরুতেই সায়মা বেগম মুগ্ধের রুম গোছাতে শুরু করে। ড্রয়ার খুলে জিনিসপত্র গোছাতেই তার হাত পড়ে পুতুলেরনসেই রিপোর্টের উপর। তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে সবটা দেখেন। পুতুল কোনোদিন মা হতে পারবে না! একটা মাত্র ছেলে তার। আর তার নাকি ছেলেসন্তান থাকবে না।
বিকিলে পুতুল আর মুগ্ধ খুব হাসিখুশি বাড়ি ফিরে দেখে সায়মা বেগম আর করিম সাহেব সোফায় বসে আছেন। পরিস্থিতি তেমন ভালো না। সায়মা বেগমের চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সবাই মিলে তাকে ঠকিয়েছে!
-কি হয়েছে মা? কোনো সমস্যা?
সায়মা বেগম রেগে চোখ পাকিয়ে পুতুলকে বলতে লাগে,
-সমস্যা? নাতো কোনো সমস্যা নেই।
পুতুল কিছুই বুঝতে পারে না মুগ্ধ চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
করিম সাহেব পাশ থেকে সায়মা বেগমকে থামানোর চেষ্টা করছে,
-আচ্ছা পরে কথা বলা যাবে ওরা এখন এলো আর তুমি,,,
-তুমি চুপ করো।
এবার মুগ্ধ বলে উঠে,
-ঝগড়া হয়েছে তোমাদের?
সায়মা বেগম চোখ দুটো লাল মরিচের মতো করে মুগ্ধের দিকে এগুতে থাকে। হাতের থাকা রিপোর্টগুলো খাবার টেবিলে আছড়ে ফেলে মুগ্ধকে জিজ্ঞাসা করে বসে,
-এই মেয়ে যে বন্ধা আমাকে আগে কেনো বলিস নাই।
-আহা! (করিম সাহেব)
মুগ্ধ হা করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কথাটা শুনে পুতুলের হাত পা কাঁপছে।
-এই বাড়িতে কোনোদিন কোনো বাচ্চা খেলবে না। কেউ আমাকে দাদু ডাকবে না। আমার বংশের কোনো অলাদ নেই। এই দিন দেখার জন্য একে আমি আশ্রয় দিয়েছিলাম?
মুগ্ধ ধৈর্য ধরে,
-জানি ব্যাপারটা লুকিয়ে আমরা অনেক বড় অন্যায় করেছি। এই বিষয়ে পরে কথা বলছি তুমি শান্ত হোও।
-শান্ত হবো? যতক্ষণ না এই মেয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আমি শান্ত হতে পারবো না।
পুতুল করুন কন্ঠে বলতে শুরু করে,,
-মা আমি কোথায় যাবো তোমরাই তো আমার সব।
-ন্যাকা কাদন শুরু করবি না পুতুল। আমি নিজের পায়ে নিজে কোরাল মেরেছি৷ কত মেয়ে আমার ছেলের জন্য লাইন ধরে ছিলো,,,,
মুগ্ধ তার মায়ের কথাগুলো কিছুতেই নিতে পারছে না।
চলবে,,,
#তোমাতেই
#পর্ব_১৯
#Arvy_Poli
মুগ্ধ তার মায়ের কথাগুলো কিছুতেই নিতে পারছে না। পুতুলের হাতটা ধরে রুমে নিয়ে যায় সে। এদিকে সায়মা বেগম রাগে গজগজ করত্র লাগেন।
পুতুল কাদো কাদো কন্ঠে বলে উঠে,
-মা তো ঠিক কাজটাই করছেন। যে কেউ এসময় এটাই করতো।
মুগ্ধ পুতুলের মাথাটা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে,
-চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।
পুতুল ছলছল চোখে মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে,
-কিচ্ছু ঠিক হবে। তুমি আরেকটা বিয়ে করে নাও।
মুগ্ধের চেহারায় রাগের ছাপ নিয়ে সে চলে যায়।
পুতুল আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে নেয়। মূল উদ্দেশ্য মাকে খুশি করা। যতই রাগ দেখাক পুতুল জানে তার আসল মা সায়মা বেগমই আর মায়েরা সন্তানের উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না।
টেবিলে নাস্তা দিয়ে সবার জন্য ওয়েট করতে করতে পুতুল সোফায় ঘুমিয়ে পড়ে।
-ছোট ম্যাম সাহেব? ছোট ম্যাম সাহেব।
অস্পষ্ট একটি ধ্বনি পুতুলের কানে এসে পৌঁছাচ্ছে। চোখ খুলে রুমিকে আবিষ্কার করেছে সে।
-কি, কি?
ঘড়িতে চোখ পড়তেই দেখলো ৮ টা বেজে গেছে। টেবিলেও সবাই এসে নাস্তা শুরু করে দিয়েছে অলরেডি।
পুতুল রুমিকে বলে,
-মুগ্ধ কোথায়?
-সাহেব তো নাস্তা করে অফিসে চলে গেছে আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন তাই ডাকতে মানা করেছেন।
-ওও।
এরইমধ্যে করিম সাহেব হাসিমাখা মুখ নিয়ে নাস্তা খেতে খেতে পুতুলকে বলে উঠেন,
-পুতুল মা, ফ্রেশ হয়ে নে। নাস্তা করবি আয়।
পুতুলও একটি হাসি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে বসে পড়ে।
সায়মা বেগম কিছুই বলছেন না গম্ভীর হয়ে নাস্তা করে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর তিনি কিছু একটা খুজতে থাকেন,
-রুমি এই রুমি।
-জ্বি।
-বলেছিলাম না আজকে একটু ভেজেটেবল করতে। করিসনি কেনো?
রুমি ভয়ে ভয়ে,
-আজকে তো আমি নাস্তা বানাইনি বড় ম্যাম সাহেব।
সায়মা বেগম চোখ পাকিয়ে,
-তাহলে কে বানিয়েছে?
-পুতুল ম্যাম সাহেব।
পুতুল নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়মা বেগম টেবিলের সব খাবার ছুড়ে মাটিতে ফেলে দেন। করিম সাহেবের পাতেরটুকু ফেলে বলতে থাকেন,
-খেয়েও না এই খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে আমরা যেনো মরে যাই আর এই বন্ধা মেয়ে আমার ছেলের জীবনটা ধ্বংস করতে পারে।
পুতুল হাউমাউ করে কেদে সায়মা বেগমের পা দুটো আঁকড়ে ধরে,
-মা, আমি জানি আমি দোষ করেছি। কিন্তু এর শাস্তি এভাবে নয়। আমি তোমার ছেলেকে ভালোবাসি তার জীবন নষ্ট হয়ে যাক আমি তা চাই না তুমি তোমার ছেলের জন্য মেয়ে দেখো। কিন্তু তুমিই আমার মা।
সায়মা বেগম এবার যেন কিছুটা স্বস্তি পেলো।
-ঠিক আছে ঠিক আছে পা ছাড়।
পুতুল পা ছেড়ে উঠে দাড়ায়,
-মুগ্ধের জন্য মেয়ে দেখতে তুই আমার হেল্প করবি তো।
পুতুল চোখের পানি মুছতে মুছতে।
-হ্যাঁ করবো।
-তা বেশ তাহলে আমাকে মৃদ্ধার নাম্বারটা দে।
-আমার কাছে তো ওর নাম্বার নেই, মা,,
-ন্যাকা, সরে যা আমিই দেখছি।
সায়মা বেগম পুতুলকে সরিয়ে তার ফোনটা হাতে নিয়ে চ্যাক করতে লাগে। অবশেষে পেয়েও যায়।
-এখন কি নাম্বারটা আসমান থেকে পরেছে?
পুতুল ঠিক মনে করতে পারছে না কবে তার ফোনে সে মৃদ্ধার নাম্বার সেব করেছিলো। হবে একদিন। তাতে কি!
পুতুল রুমিকে নিয়ে ফ্লরে থাকা জিনিসপত্র গুলো পরিষ্কার করতে লাগে।
———————-
মুগ্ধ ল্যাপটপে ব্যাস্ত। হঠাৎ একটি কল আসে। মুগ্ধ স্ক্রিন না দেখেই কল রিসিভ করে।
-হ্যালো মুগ্ধ।
-হুম বল।
-কি করছিস?
-অফিসে বসে আইস্ক্রিম খাচ্ছি।
-সিরিয়াসলি? আমিও আইস্ক্রিম খাচ্ছি।
-মৃদ্ধা।
-ওকে সরি সরি । শুন, আন্টির কি হয়েছে বলতো?
-কি হবে?
-তুই অন্যভাবে নিস না বাট আন্টি আমাকে কল করে বলল আমি যেনো বিয়ে না করি তুই নাকি পুতুলকে মেনে নিতে পারিসনি মন থেকে আমাকেই ভালোবাসিস হা হা হা হা
মুগ্ধের খুব রাগ হচ্ছে তার মায়ের উপর শেষমেশ এতটা নিচে নেমে গেছেন উনি। ভাবতেও পারছে না সে।
-পরে কথা হবে।
-ওকে সি ইউ।
খুব শব্দ হচ্ছে পুতুল রুম থেকে বেরিয়ে দেখে রুমি খুব জুড়ে জুড়ে কাঁন্না করছে।
-ম্যাম সাহেব আমি এই বাড়িতে থাকমু। আমাকে বের করে দিয়েন না গো।
পুতুল কিছুই বুঝতে পারছে না।
-না, তুই আমার ননদের বাড়িতে কাজ করবি এখন থেকে। এই বাড়িতে আমাদের আর কাউকে লাগবে না।
পুতুল খুব নরম মেজাজে সায়মা বেগমকে জিজ্ঞাসা করে,
-রুমি কতদিন আমাদের সাথে ছিল। এখন অন্যকোথাও যাবে। মা, ওকে রেখে দেই এমনিতেও ওঁ যেভাবে কাজ করে ওভাবে কেউ করতে পারবে না।
সায়মা বেগম পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করেন,
-কেনো তুই কোন নবাবের মেয়ে যে এসব কাজ করতে পারবি না। আমরা না থাকলে এখন কোনো ব্যাশা পল্লীতে থাকতি তুই।
কথাটা পুতুলের হৃদয়ে খুব আঘাত করে।
-তুমি চিন্তা করো না মা। আমিই করবো সব কাজ।
চলবে,,,