তোমাতেই পর্ব_২০ (শেষ পর্ব)

0
2067

তোমাতেই
পর্ব_২০ (শেষ পর্ব)
Arvy_Poli

কথাটা পুতুলের হৃদয়ে খুব আঘাত করে।

-তুমি চিন্তা করো না মা। আমিই করবো সব কাজ।

পুতুল হাতে একটি ময়লা কাপড় নিয়ে ফ্লর মুছতে শুরু করে দেয়। এদিকে মুগ্ধ রেগে -মেঘে একাকার হয়ে বাড়ি ফিরে।

-মা, মা।

সায়মা বেগম তাড়াহুড়ো করে মুগ্ধের কাছে এসে ন্যাকামো শুরু করে দেয়।

-কি হয়েছে আমার বাবাই টার, আজকে এই সময়?

মুগ্ধ রক্ত মাখা চেহারা নিয়ে বলতে শুরু করে,

-এসব কি, তুমি মৃদ্ধাকে কি বলেছো?
-কি আবার বললাম?
-মা,তোমাকে কি একবারও আমি বলেছি, আমি পুতুলের সাথে সুখী নই? তাহলে কেনো এরকম করছো বলবা প্লিজ।

সায়মা বেগম খুব স্ট্রেইট হয়ে বলতে শুরু করে,

-তুই ওই মেয়েকে নিয়ে সুখী হতে পারিস কিন্তু আমি একদমই সুখী না। তুই পুতুলকে তালাক দিবি ব্যাস,,,,

মুগ্ধ হা করে সায়মা বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে। মুগ্ধের স্বর শুনে পাশের রুম থেকে পুতুল দৌড়ে আসে।হাতে ময়লা কাপড়। ওড়নাটা কোমরে গিট্টু দেয়া।

-তুমি? এতো তাড়াতাড়ি!

পুতুলের দিকে চোখ যেতেই,

-কি হাল করেছো? এসব কি? হাতে ওটা কি তোমার?
-ফ্লর পরিষ্কার করছিলাম।
-মানে, রুবি কই?

সায়মা বেগম বলতে শুরু করে,

-রুবি কেনো? পুতুল কি কাজ করতে পারে না।
-না পারে না।

পুতুল মুগ্ধকে থামিয়ে,

-আচ্ছা ঘরেরই তো কাজ আমি করলে কি হবে?

মুগ্ধ খুব রেগে যায়, সায়মা বেগমকে জিজ্ঞাসা করে বসে,

-আচ্ছা মা তুমি কেনো পুতুলের পিছু লেগেছো বলতে পারবা?
-আমি? পুতুলকে এক্ষুনি বল চলে যেতে।
-পুতুল একা যাবে না সাথে আমিও যাবো তাহলে।
-কি? তুই তোর মায়েকে ছেড়ে এই মেয়ের সাথে চলে যাবি। বাহ! এই মেয়ে যতদিন এই বাড়িতে আছে আমি থাকতে পারবো না। আমিই চলে যাচ্ছি,,,

সায়মা বেগম কাদতে কাদতে বাড়ি ছেড়ে চলে চায়,

পুতুল কিছুতেই তাকে আটকে রাখতে পারেনি।

-এটা কি করলে? মা চলে গেছে বুঝতে পেরেছ তুমি? আল্লাহ এখন কি হবে উফফফ।

মুগ্ধ কিচ্ছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে থেকে দৌড়ে সায়মা বেগমকে খোঁজতে বেরিয়ে পড়ে।

প্রায় ঘন্টা খানেক পর মুগ্ধ পুতুলকে কল করে জানায় রাস্তায় এলোপাতাড়ি গাড়ি চালিয়ে সায়মা বেগম এক্সিডেন করেছেন।

খুব খারাপ অবস্থায় পড়ে যান সায়মা বেগম। হাত -পা ব্যান্ডেজ করা। খাওয়া থেকে শুরু করে ওয়াশরুম অব্ধি অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিছুই নিজে করতে পারেন না।

পুতুল দিন-রাত এক করে সায়মা বেগমের খুব যত্ন করেন। এভাবেই কেটে যায় একটি মাস। তিনি এখন কিছুটা সুস্থ। আস্তে আস্তে সায়মা বেগম তার নিজের ভুল বুঝতে পারেন।

পুতুল সায়মা বেগমের কাছেই শুয়ে আছে। সায়মা বেগম আলতো করে পুতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। পুতুল আচমকা জেগে উঠে,

-কিছু লাগবে মা?

সায়মা বেগমের চোখে পানি। হাত জোড় করে পুতুলের কাছে ক্ষমা চেয়ে পুতুলকে জড়িয়ে ধরে। পুতুলও অতীতের সমস্ত কথা ভুলে গিয়ে আবার নতুন করে শুরু করে।।

দরজায় দাড়িয়ে থাকা মুগ্ধ সবটা দেখে। মুচকি হাসে ঠিক তখনই তার ফোনে মৃদ্ধার কল।

-হুম,
-কি হুম? কই তোরা? বিয়ে তো শেষ হয়ে যাচ্ছে আমার। কখন আসবি।
-আসছি।
-ওকে ওকে তুই এলেই আমি কবুল বলব মনে থাকে যেনো। ওকে বায়।।

পুতুল আর সায়মা বেগম মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে।

-মৃদ্ধা খুব তাড়া দিচ্ছে। যাই?

সায়মা বেগম পুতুলের মুখটা ধরে,

-খুব সুন্দর করে সেজে যাবি। ঠিক আছে?

তারপর কপালে একটা চুমু।

পুতুল খুশিতে কেদে ফেলে।

মৃদ্ধার বিয়েতে মুগ্ধ আর পুতুল। কত উৎফুল্ল পরিবেশ। কেউ খাচ্ছে,কেউ সেলফি নিচ্ছে, কেউ ড্যান্স করছে। মুগ্ধ পুতুলের পাশেই দাড়িয়ে আছে আর পুতুল জুসের গ্লাস নিয়ে।

হঠাৎ করেই পুতুলের মাথাটা ঝিম ধরে আসে।চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে তার। কিছু বোঝে উঠার আগেই মুগ্ধের উপড় ঝাপটে পড়ে সে তার পরের কিছুই পুতুলের মনে নেই,,,,,

চোখ খুলতেই পাশে ডক্টর কাকুকে আবিষ্কার করে পুতুল। তিনি হাতে ফোনটা নিয়ে সায়মা বেগমকে কল করেন,

-হ্যালো ভাবি সাহেব বলছেন?
-জ্বি।
-মিষ্টি খাওয়াবেন কবে?
-কিসের?
-দাদীমা যে হতে যাচ্ছেন আপনি।
-মানে?
-খুশির খবর পুতুল মা হতে যাচ্ছে।
-সত্যি ডক্টর?
-১০০% সত্যি।
-আল্লাহ কোথায় ওরা আমি মুগ্ধের বাবা কে নিয়ে এক্ষুনি আসছি। আপনাদের সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবো। আল্লাহ তোমার দয়া,,,
-হা হা হা আসুন আসুন।

-মুগ্ধ, মিরাক্কেল হয়ে গেছে। তুমি বাবা হতে যাচ্ছো,,,কংগ্রেস মাই বয়।

মুগ্ধের বুকের স্পন্দন বেড়েই যাচ্ছে। কিছুই যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না তার।

-কিন্তু,,,
-হুম,বলেছিলাম পুতুল মায়ের প্রেগ্ন্যাসির পার্সেন্টেজ কম তবে অসম্ভব বলিনি। সবই গডের ইচ্ছা। পুতুল এখন একদম সুস্থ বাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারো।

মুগ্ধ দৌড়ে পুতুলের কাছে এসে তাকে কুলে নিয়ে কপালে চুমু খায়। পুতুলের আনন্দের শেষ হয় না।

-তোমাকে অনেক ভালোবাসি আমার বাবুর আম্মু।
-আমিও আমার বাবুর আব্বু।

দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগে। এই চাহুনি এই ভালোবাসা যেনো কবু শেষ হবার নয়❤

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here