তোমাতেই
পর্ব_৩
Arobi_Akter Poly
মুগ্ধ নাক মুখ লাল করে রক্তমাখা চোখে পুতুলের দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল,,,
– এই মেয়েকে তুমিই নিয়ে যাও,,,,
এটা বলেই সে বাইকের চাবি নিয়ে চলে গেলো,,,,
কিছুক্ষণ পর করিম খান পুতুলকে নিয়ে বেরিয়ে পরলেন।।পুতুলদের প্রাইভেট-কারটা একটু দূরে যেতেই পুতুল আর করিম খান গাড়ির জানালা দিয়ে মুগ্ধের বাইকটি দেখতে পান,,,,,, মুগ্ধ বাইক থামিয়ে পথচারী শিশুদের কি যেনো বিলি করছে।। শিশুদের মুখে এক তৃপ্তিভরা হাসি।। এই হাসির মূল্য দাড়িপাল্লা দিয়ে ওজন করলে পরিমাণটা ঠিক কত হবে পুতুলের তা জানা নেই।।চলতি গাড়ি থেকে চোখের সামনে একঝলক দৃশ্যটি পুতুলকে খুব ভাবাচ্ছে।।।
হঠাৎ করেই করিম সাহেব একগাল হেসে বললেন,,,
-জানিস তো মা, আমার ছেলেটাকে যতটা খারাপ ভাবিস সে কিন্তু তা না,,,
পুতুল তাকে থামিয়ে স্ট্রেইট হয়ে বলতে শুরু করল,,
-হয়েছে বাবা, আমার সামনে তাকে সাধু বানাতে হবে না,, তোমার ছেলেকে আমি খুব ভালো করে জানি,, বদের হাড্ডি একটা,,
করিম সাহেব ইতস্ততবোধ করে জানালার ওপাশে তাকালেন,,,,
মুগ্ধ ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকতেই দেখতে পায় দু- দলে বিভক্ত মানুষ।।উত্তর দল মুগ্ধের ফ্রেন্ড সার্কেল তথা ভার্সিটির যাদের কথা চলে আর এসবের লিডার মুগ্ধ।।।দক্ষিণ দল যার আগে ক্ষমতা ছিলো কিন্তু এখন সে ভিলেন।। তাই প্রাই মুগ্ধের সাথে এদের ঝগড়া হয়।।। মুগ্ধ বাইক থেকে নামতেই প্রিয়ম তার পাশে এসে দাঁড়ালো তারপর জনি মুগ্ধকে বলতে লাগলো,,,
-আমার ছোটবাইকে মেরেছিস কেনো,,,
-Influencer ছিলো তাই,,,
জনি মুগ্ধের শার্টের কলারে ধরে।। মুগ্ধ জনির হাত সরিয়ে তাকে নাক বরাবর ঘুষি দেয় সাথে ফ্রি কিখ।।একপর্যায়ে এক দল অপরের সাথে মারামারি শুরু করে।। জনি ভীষনভাবে রক্তাক্ত হয়ে পরে।। প্রফেসররা হাজির হয় প্রিনসিপাল আসে তাও তাদের থামাতে পারে না তারপর পুলিশ ডাকা হয়।। এ্যাম্বুলেন্স ডেকে জনিকে ও তার দলবলকে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হয়।।
পুলিশ মুগ্ধের মামার বন্ধু তাই তাকে থ্রেড দিয়ে চলে যায়।। এমনটা সে প্রতিবারই করে।।।
মৃদ্ধা, প্রিয়ম নীর, জেন্নি, রাফছান…… আরও অনেকেই একজোট হয়ে কথোপকথন চালায়,,, হঠাৎ মৃদ্ধা লক্ষ্য করে মুগ্ধের হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে।। সে দৌড়ে মুগ্ধের কাছে এসে তার গলার স্কার্ফটা দিয়ে হাতটা বেঁধে দেয়।।
-উফফ বেশি লেগেছে?
মুগ্ধ মৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে বলে,,
-তেমন না
পাশ থেকে সবাই হৈচৈ করে বলে উঠে,,,
-মৃদ্ধার শুরু হয়ে গেছে,,,, মুগ্ধ প্লিজ একসেপ্ট হ্যার,,,
প্রিয়ম খুব উৎসাহের সাথে জানায় তার কাজিন মৃদ্ধা নাকি সকল ছেলেদের ড্রিম গার্ল।। ৫ টা বছর যাবৎ সে মুগ্ধকে ভালোবেসে আসছে কিন্তু মুগ্ধ হ্যাঁ ও বলছে না না’ও বলছে না।। তার মতে মুগ্ধের মতো বোকা আর একটিও নেই।। সে হলে কবেই এই সুন্দরী কাজিনের সাথে প্রেমে হাবুডুবু খেতো।।
মুগ্ধ কারো কথার পাত্তা না দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে সিগারেটে আগুন দেয় ,,,,,,, মৃদ্ধা ছলছল চোখে মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকে।।।
বিকেল ৫ টার কার্টুন পুতুল কখনো মিস করে না।। সোফায় বসে হাতে ফ্রেঞ্চ-ফ্রাইয়ের প্লেট নিয়ে একধ্যানে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে আর একটু পর পর মুখে ফ্রেঞ্চ-ফ্রাই গুচ্ছে,,,,,,,, হঠাৎ কলিং বেল বেঁজে উঠে।। রুবি গিয়ে দরজা খুলে কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না।। নিচে একটি গিফট বক্স পড়ে আছে। ডেডিকেটেড টো তে পুতুলের নাম লিখা।। রুবি গিফট বক্স নিয়ে পুতুলের কাছে দিয়ে আসে এবং সে রাঁন্না ঘরে চলে যায়,,,,, পুতুলের গিফট খুব পছন্দ কিন্তু কোথা থেকে আসলো? কে দিলো? কিছুই উল্লেখ নেই,,,, যাক এগুলো দেখার সময়ও নেই তার,,,, পুতুল খুব এক্সাইটেড হয়ে গিফট খুলল আর অম্নি একটি পান্স হ্যান্ড এসে পুতুলের নাক থেথলে দিলো।। হাতের ফ্রেঞ্চ-ফ্রাইয়ের প্লেটটা কোথায় যে গিয়ে পড়লো পুতুলের জানা নেই।।।। এক মূহুর্তের জন্য সে কিছুই বুঝতে পারলো না,, কি হচ্ছে এসব???
পুতুলের নাকটা কেঁটে গেছে।। মলম দিয়ে উপরে এইড বেন্ড লাগানো আছে।। পুতুল রাগে লাল হয়ে আছে কে করলো এমটা তার সাথে কেন করলো??
ড্রাইভাই গ্রামের বাড়ি গেছে তাই মুগ্ধই ড্রাইভারের কাজটা করছে আজ অবশ্য নিজের গাড়ি চালালে কেউ ড্রাইভার হয় না,,, সায়মা বেগম তাড়াহুড়ো করে ব্যাগটা নিয়ে বলল তুই রেডি হয়ে গেছিস চল চল মুগ্ধ গাড়ি নিয়ে নিচে অপেক্ষা করছে।
-নাহ আমি যাবো না তোমার ছেলের সাথে,,,,
-আহা! এখন এগুলো বলিস নাতো মুডটাই নষ্ট হয়ে যাবে,,, এতদিন পর একটু সপিংয়ে যাচ্ছি প্লিজ এমন করিস না,,,
-না আমি যাবো না ওই হনুমানটার সাথে,,,, আমার এই অবস্থা তোমার ছেলেই করেছে তুমি দেখো মা পরে এটাই শুনবা,,,পুতুল রীতিমতো কাঁদছে
– আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে এর বিচার নিশ্চয়ই হবে মা,, এমটাই যদি হয় তাহলে মুগ্ধকে আমি নিজে কান মলাই দিবো,,,
-তুমি কখনো তোমার ছেলেকে বকা দাও না,, চোখের পানি মুছতে মুছতে
-এবার দিবো প্রমিস,,,,
সায়মা বেগম ও পুতুল দরজার কাছে আসতেই কলিং বেল বেঁজে উঠলো।। পুতুল দরজা খুলতেই মুগ্ধকে দেখতে পেলো।। মুগ্ধ পুতুলকে দেখে খিলখিলিয়ে হেসে ফেলল।। মুগ্ধের হাসি যেনো তার থামছেই না।। রাগে পুতুল গিরগির করছে।।
-দরজায় লেগে কেঁটে গেছে এতো হাসার কি আছে (ভেংচি দিয়ে)
এটা শুনে মুগ্ধ আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো
-ওও আচ্ছা আমি ভাবছি কেউ পান্স মারছে নাকে,,
পুতুল বে করে কেদে বলতে লাগলো,,
-দেখেছো মা দেখেছো বলেছিলাম না এটা তোমার ছেলের কাজ এবার বিশ্বাস হলো তো
-কাকে বলছো?
পাশে তাকিয়ে দেখে সায়মা বেগম রাঁন্না করে চলে গেছে।। রুবিকে বলছে অফিসিয়াল কাজে কিছু গেস্ট আসবে যদি তাদের আসতে দেরি হয় তাহলে যেনো তাদের বসতে বলে ।।।
বসুন্ধরা চিটি কপ্রেক্সে আসতে মোটমাট আধা ঘন্টার মতো লেগেছে তাদের।। সায়মা বেগম ও পুতুল সামনে হাঁটছে।। মুগ্ধ পেছনে।।
জেন্ড-ওয়মেনের ফ্লরে এসে পুতুল হ্যাংগার থেকে কিছু ড্রেস দেখছে।। মুগ্ধ জিন্স পকেটে হাত দিয়ে সিস বাঁজাতে বাঁজাতে সেও কিছু দেখছে।। সায়মা বেগম থার্ড ফ্লরে চলে গেছে কেনাকাটা করতে।।
পুতুল হাতে কিছু লং ড্রেস নিয়ে ট্রাই রুমে চলে যায়।। বোরকা খুলে টপস্টা নাভি অব্ধি উঠিয়েছে অম্নি একটা ছেলে তার রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।।পুতুলের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।। পুতুল তড়িঘড়ি করে জামাটা নামিয়ে ফেলে।। দুজন দুদিকে মোড়তেই মুগ্ধ পুতুলের মুখ চেঁপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ফেলে।। একে অপরের এতোটা কাছাকাছি তারা আজ অব্দি আসেনি ।। মুগ্ধের নিশ্বাস এসে পুতুলের কপালে পড়ছে।। পুতুল নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে,,,
-চুপ,,, আই এম সরি দরজা খুলা ছিল তাই আমি ভেবেছি,,,,আই এম সো সরি প্লিজ ডোন্ট সাউড আমি চলে যাচ্ছি আমি তোমার কিছু দেখিনি,, সরি,,
পুতুল মুগ্ধের কথা না শুনে ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকে,,
দৌড়ে মেনেজমেন্ট এসে বলে উঠলেন,,
-এনি প্রব্লেম ম্যাম ওয়াট হ্যাপেন্ড,,
-এই বকাটে লোকটা আমার ট্রাই রুমে ঢুকেছে,,, আমি ওনাকে চিনি না,,,প্লিজ পুলিশ ডেকে একে এরেস্ট করুন এসব ছেলেদের জন্য মেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়,,,
একটা স্টার্ফ উপরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,,
– আপনার সাথে কি সে জোরাজোরি করেছে।। ডোর অফ থাকলে তো ভেতরে ঢুকার ক্যাপাবিলিটি নেই,
পুতুলের মনে পরলো সে তো দরজাটা ক্লোজ করেনি,,, কিছুক্ষণ ভেবে পুতুল জোর গলায় বলল,,
-তাতে কি মেয়েদের ট্রায় রুমে ছেলে কেনো ঢুকবে? কিভাবে পারলো সে?
মুগ্ধ কিছু বলছে না,,,
-ম্যাম আপনি উপরের দিকে তাকান তাহলেই বুঝতে পারবেন,,
পুতুল ডোরের উপরের সাইনবোর্ড দেখে রীতিমতো লঁজ্জা পেলো।। স্তব্ধ হয়ে পরলো সে।। এটা তো ছেলেদের ট্রায় রুম সে ভুল করে সাইনবোর্ড না দেখে চেইঞ্জ করছিলো,,,।। এতে মুগ্ধের কোনো দোষ ছিলো না।।
-সরি স্যার
মুগ্ধ গম্ভীর হয়ে বলল,,
-ইটস ওকে
সেখানে আর এক মূহুর্তের জন্য দাঁড়াতে পারলো না মুগ্ধ,,,,,,,, পুতুল নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে
চলবে,,