তোমাতেই
পর্ব_৪
Arobi_Akter_Poly
সেখানে আর এক মূহুর্তের জন্য দাঁড়াতে পারলো না মুগ্ধ,,,,,,,, পুতুল নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে
পুতুল খুব মন দিয়ে এসাইনমেন্টের জন্য প্রিপেয়ার্ড হচ্ছে।ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো রাত ১১ টা।মেইন দরজা খুলতেই মুগ্ধের উপর পানির বালতি ধপাস করে পড়লো।।। মুগ্ধের সারা শরীর ভিজে গেছে।। মাথা থেকে বালতিটা উঠিয়ে এক ঝাক রাগ নিয়ে মুগ্ধ রুমে চলে যায় আর এদিকে পুতুল অনাবরত হাসতে থাকে,,,,।
আজ ভার্সিটিতে প্রথম দিন পুতুলের ।।একজনের সাথে তার ইতিপূর্বে পরিচয় পর্ব শেষ।। তারা সেইম ইয়ার।। খুব এক্সাইটেড পুতুল। হাটতে হাটতে কখন যে সে কাদায় পা ডুবিয়ে দিয়েছে তা খেয়াল করেনি সে।। পুতুল কোনোরকমে পাব্লিক কলের কাছে গিয়ে পা ধুঁতে থাকে । তখন প্রিয়ম তার কিছু ছেলেপুলে নিয়ে হাজির হয়।।
-আহারে! কাদা লেগে গেছে
পুতুল তার দিকে এক নজর তাকায় তারপর আবার পা ধুতে থাকে,,
-চুপ কেনো হানি?
পুতুল কিছু বলছে না,,,
-নিউ??
পাশের মেয়েটি নিচু গলায় বিরবির করে বলে উঠে,,
-পুতুল হয়েছে না তোমার এবার এসো,,,
-হুম চলো,,
প্রিয়ম পুতুলের রাস্তা আটকিয়ে ফেলে।।তারপর জানায় ভার্সিটিতে পড়তে চাইলে নাকি তাদের কথা শুনতেই হবে তাদের দলের সাথে পরিচিতি থাকতে হবে।।
পুতুল মাথা গুজে সেখান থেকে চলে গেলো,,, পেছনে থেকে প্রিয়ম আর তার বন্ধুরা সমস্বরে বলতে উঠে,,,
-ও সুন্দরী নামটা তো বলে যাও
তারপর অট্টহাসি,,,
পুতুল ক্লাসে বসে আছে।। প্রিয়ম এসে একটি চেয়ার এগিয়ে বসলো,,,
-কি ব্যাপার নাম না বলেই পালিয়ে এলে কেনো?
-আপনি কে? কেনো আমাকে ডিস্টার্ব করছেন?
-মনে হয় নিঁচে কি বলেছি তা শুনতে পাওনি,, এই ভার্সিটিতে পড়তে চাইলে আমাদের সাথে ভাব রাখতে হবে মিস?
পুতুল বিরক্ত হয়ে নোটবুকে কিছু একটা লিখা শুরু করলো।। অম্নি প্রিয়ম তার নোটবুকটা কেড়ে নিয়ে সবাইকে শুনিয়ে পড়তে লাগলো,,,, পুরো ক্লাস স্তব্ধ।।
-কি হচ্ছে? আমার নোটবুক ফিরিয়ে দিন প্লিজ
প্রিয়ম আড়চোখে পুতুলের দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে নোটবুকটা ছিড়ে ফেলে।।
পুতুলের চোখে জল চলে এলো। কিন্তু সে কাঁদলো না।। করিডর থেকে মৃদ্ধা এসে প্রিয়মকে ডাকছে,,,
– ওই কি করছিস তোরা এখানে,, চল সবাই ক্যাম্পাসে আছে,,,
প্রিয়ম মৃদ্ধার সাথে চলে গেলো।।
ক্লাসের সবাই পুতুলেকে চোখাচোখি করছে,, পুতুল মাটি থেকে ছেঁড়া পেপার গুলো উঠিয়ে আবার বাজ করে রাখলো পুতুল। মিতু পুতুলকে স্বান্তনা দিয়ে বলল,,
-ওঁরা এমনি,, তুমি ওদের চোখে পড়ে গেছো
-কি করব আমি বুঝতেছি না,,
-টেনশন কর না মৃদ্ধা আপুর বয়ফ্রেন্ডকে বললে সব ঠিক হয়ে যাবে এরা ওঁর গ্যাংগেরই,,,
-মৃদ্ধা কে? প্লিজ আমাকে হেল্প করো
-হুম চলো এখনই যাই ক্যাম্পাসেই পাবো ওঁদের
-ওকে চল
একটা টেবিল ঘিরে ১৫-১৬ জন ছেলেমেয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে।।তাদের সামনেই ৬ জন হাবাগোবা ছেলে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। পুতুল সেখানে গিয়ে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।। প্রিয়ম, জেন্নি,নীর, মৃদ্ধা, মুগ্ধ আরো অনেকেই সেখানে বসা।। তবে মুগ্ধকে পুতুলের চোখে পড়েনি,,,,,
-হাই আপু
সবার চোখ মিতুর দিকে।। প্রিয়ম ফাস্ট চেয়ারেই বসে আছে, পুতুলকে দেখে বলতে লাগে,,
-ওহ! আমার খুঁজে এখানেও চলে এসেছো কতবার বলবো আমি তোমাকে পছন্দ করি না
সেখানে বসে থাকা সবাই হাসা শুরু করে,,,
মিতু ভীতু কন্ঠে মৃদ্ধাকে ডাকে,,
-মৃদ্ধা আপু,,
মৃদ্ধা বেখেয়ালি হয়ে বলে,,
-হ্যাঁ বলো
-আপু আমি তোমাদের বাসার নিচের ফ্ল্যাটে থাকি মতিউরের ছোট বোন
-ওহ আচ্ছা
-আপু আমার ফ্রেন্ড এখানে নতুন, এই শহরে সে একা, কেউকে চিনে না, এখানে ওঁর কেউ নেই,,, ভাইয়াকে (মুগ্ধকে) একটু বলুন না আপনার ফ্রেন্ড যেনো তাকে আর ডিস্টার্ব না করে,,
মৃদ্ধা মুগ্ধকে ডাকে।। পুতুল সেই ৬ জন রোদে পোড়া ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে।। মুগ্ধ এতক্ষন মোবাইল স্ক্রোল করছিলো এবার সে চোখ উঠায় সেই অবলা মেয়েটিকে দেখার জন্য।। পুতুল!।। মুগ্ধ পুতুলের দিকে তাকিয়ে আছে,,, হঠাৎ পুতুলের চোখ মুগ্ধের দিকে পড়ে,, মুগ্ধ মুচকি হেসে ভ্রু কুচকায়,,,,, পুতুল হা করে মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকে,,,
-এই সেই মেয়ে? যার কেউ নেই এই শহরে?
-জ্বি ভাইয়া
মুগ্ধ ইশারায় মিতুকে যেতে বলে। মিতু চলে যায়। পুতুল অসহায়ের মতো সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে।।
-হাত গুলো উপরে উঠাও
পুতুল মুগ্ধের কথা শুনছে না।।সে সেখান থেকে চলে যেতে চায় কিন্তু জেন্নি এসে তাকে আটকিয়ে দেয়।। এবার জেন্নি এসে পুতুলের কাঁধ থেকে ব্যাগটা হাতিয়ে নেয়। মৃদ্ধা পুতুলের চশমা কেড়ে নেয়।।
-আর কিছু হারাতে চাও?,,
পুতুল হাত দুটো উপরের দিকে করে দাঁড়ায়,,,মুগ্ধ সিট থেকে উঠে হাতে একটা পানির বোতল নিয়ে পুতুলের মাথায় পানি ঢেলে দেয়,,,,,,সবাই হাসাহাসি শুরু করে।। পুতুল কোনোরকমে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে
-কেমন লাগছে,,,,ওহহহ মেক-আপ নষ্ট হয়ে গেলো? সো সরি,,, জানি না তোমাকে দেখলেই কেনো আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়,,
পুতুল চুপ করে সব শুনছে,,,
-বাবাকে এসবের ক” কানে দিলে তোমার খবর হয়ে যাবে ভার্সিটিতে পড়বে থাক দূরে এর কথা মনে পড়লেই আঁতকে উঠবে মনে থাকে যেনো,,,
পুতুল এবার তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,,
-তোমার কাছে এর থেকে বেশি আমি কিছুই আশা করিনি মিস্টার মুগ্ধ,, কেউ না জানলেও আমি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছি তুমি গুন্ডামী করার জন্যই পার্ফেক্ট,,
মুগ্ধ রেগে যায়,, আর পুতুলকে যেতে বলে।।
পুতুল রাস্তার ধারে হাটছে এমন সময় একটি গাড়ি একনাগাড়ে হর্ণ বাঁজাতে থাকে,,, পুতুল পেছনে ফিরতেই প্রিয়মকে দেখতে পায়,,,
-ওহ মাই লাভ ,,,, আমার নামে বিচার নিয়ে এসেছিলে? তারপর কি হলো??
তখন গাড়ি থেকে জেন্নি একটি পেপার মোড়ে পুতুলের দিকে ছুড়ে ফেলে,,,
-ওপস সরি,, হা হা হা
তারপর ওঁরাব চলে যায়,,
ভার্সিটির প্রথম দিন তেমন ভালো কাটেনি পুতুলের।।ব্যাগটা রেখে, চোখ থেকে চশমাটা খুলে একটু রিলেক্স হওয়ার চেষ্টা করছে সে।। তাহলে বাবা যেই লিডারের কথা বলেছিলো আসলে সে মুগ্ধই।। অথচ বাবা-মা তাকে কতোই না বাধ্যসন্তান মনে করে ।। কথাগুলো ভাবছে ওইসময় সায়মা বেগম এসে পুতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,
-চলে এসেছিস,, কেমন কাটলো রে,,কেউ ডিস্টার্ব করলে বা ঝামেলা হলে মুগ্ধকে বলিস কেমন সে একটা ব্যাবস্থা করবে ,,
পুতুল এক নজর সায়মা বেগমের মুখটার দিকে তাকায়,,,
-ও হ্যাঁ আজকে তোর উকিল বোনের বেবি শাওয়ের,, আমাদের যেতে বলেছে,, তুই আমার খয়েরী রংয়ের শাড়ীটা পরিস কেমন,,, খয়েরীতে তোকে খুব মানায়,,
-ঠিক আছে মা
জানালা বেয়ে মিষ্টি বাতাস এসে মৃদ্ধার চুলগুলো দোলাচ্ছে।। ল্যাপটপের স্ক্রিনে মুগ্ধের ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে সে।। চোখ যেনো সরাতেই পারছে না।। ভাবি তার জন্য কফি নিয়ে এসেছে।। স্ক্রিনে মুগ্ধের ছবি থেকে মুচকি হাসছে ভাবি।।
-এই নাও তোমার কফি,,,
ভাবিকে দেখে মৃদ্ধা তারাহুরো করে ল্যাপটপ অফ করতে চায়,,
-না না অফ করোনা ভালোই তো লাগছে
ন্যাকামী কন্ঠে মৃদ্ধা,,
-ভাবি,,,
-তোমার ভাইকে জানাবো নাকি?
-না এখন না,,,,সে যত দিন না হ্যাঁ বলছে আমি কেউকে কিচ্ছু জানাবো না,,,, আমি মুগ্ধের মনে থাকতে চাই,, তার জন্য আমি সারাজীবন অপেক্ষা করতেও রাজি,,
-ভাব্বা
-উফ তুমি এখন যাও তো ভাবি
-হা হা আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে তুমি থাকো তোমার মুগ্ধের সাথে আমি গেলাম,,
চলবে,,,,