তোমাতেই পর্ব_৭,৮

0
2532

তোমাতেই
পর্ব_৭,৮
Arobi_Akter_Poly
পর্ব_৭

-আই লাভ ইউ।

পুতুলের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়।রীতিমতো ঘামতে শুরু করে সে।।মনে মনে ভাবতে থাকে পাগল হয়ে গেছে নাকি।তারপর আবার শুরু,,,

-তুমিই আমার সব, মা।

পুতুল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।বিরবির করে বলতে লাগে,,

-মা? আমি তোর মা না বেটা, আমি তোর বউ লাগি বউ,

মুগ্ধ পুতুলকে কোলবালিশ ভেবে আঁকড়ে ধরে যা তার সপ্নে মায়ের রুপ ধারণ করে আছে!

ফজরের আজান শোনা যাচ্ছে। রুবি চুলে খোপা করতে করতে কিচেনের দিকে যাচ্ছে। গ্যাস থাকবে না তাই ৬ টার মধ্যেই রাঁন্না শেষ করতে হবে তার।

পুতুল নড়াচড়া করছে না। স্থির হয়ে মুগ্ধের বুকে শুয়ে আছে সে। তাদের দুজনের দিকে চোখ পড়তেই রুবি থেমে যায়। এ কি দেখছে সে? আদো কি এটা সত্য নাকি কোনো সপ্ন। রুবি হা করে সোফার দিকে তাকিয়ে আছে, ছোট সাহেব কাকে নিয়ে শুয়ে আছে, কে এই মেয়ে? পুতুল ম্যাম সাহেব তো হতেই পারেন না। তাহলে কে এলো এই ঘরে? সে ভীতু কন্ঠে বলে উঠে,

-কে ওখানে ?

পুতুল কারো ডাকের আওয়াজ পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ে। তার গলার চেইনটা ছিঁড়ে মুগ্ধের চেইনের সাথে আঁটকে যায়।। মুগ্ধ এসবের কিছুই জানে না, অন্যদিকে ফিরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

পুতুল কোনোদিক না তাকিয়ে দৌড়ে তার রুমে চলে যায়।

সকাল ৯ টা। শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ।কাল রাতে কি হয়েছিলো সব অজানা তার কাছে। স্বাভাবিকভাবেই গলায় হাত দিতে কারো ছেঁড়া চেইন আবিষ্কার করলো সে। সামনে এনে তাকাতেই তার আর বুঝতে বাকি রইলো না, এটি কার।চেইনটি খুব যত্ন করেই নিজের কাছে রেখে দিল মুগ্ধ।

শাওয়ার শেষ করে মাত্র বের হয়েছে সে। পড়নে কেবল একটি সাদা টাউয়েল।

সায়মা বেগম টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছেন। রুবি ফ্লোর ক্লিন করছে।

-এই রুমটা করে গেস্ট রুমে যাবি।
-জ্বি ম্যাম সাহেব

পুতুল চেয়ারে বসে গ্রিন আপেল খাচ্ছে।। রুবির কাজে মন নেই একটু পর পর পুতুলের দিকে তাকাচ্ছে সে।কাল রাতে মুগ্ধ সাহেবকে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ঘুমুতে দেখেছে এটা কি বলা ঠিক হবে? মুগ্ধ সাহেব যদি সবকিছু জেনে ফেলে আর তাকে চাকরি থেকে বের করে দেয়, তাহলে? না,না এটা বলা যাবে না। কিন্তু পুতুল ম্যাম সাহেবের সাথে তো অন্যায় হচ্ছে। আর যাই হোক এটা সে কিছুতেই মানতে পারে না।

-এই পুতুল যা মুগ্ধকে নাস্তা খেতে আসতে বল।
-না আমি পারবো না, রুবিকে বলো।
-দেখছিস না সে কাজ করছে, আমি এই দিকটা দেখছি, যা না।

পুতুল বিরক্ত হয়ে হাটতে শুরু করলো। ফোনে কথা বলছে মুগ্ধ। পুতুল দরজায় নক করতেই,

-ডোন্ট অপেন দ্যা ডোর।

ফিসফিস করে কথার আওয়াজ বেসে আসছে। পুতুল আড়িপেতে মুগ্ধের কথা গুলো শোনার চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না। একই সময় মুগ্ধ দরজাটা খুলে আর অম্নি পুতুল মুগ্ধের বাহুডোরে।

মুগ্ধ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলতে লাগে,

-শত সাধনার প্রাপ্তি!
-কি?
-এই আমাকে টার্চ করার।নিজেকে আঁটকাতে পারোনা, না? কোনো না কোনো বাহানা চাই তোমার।
-চুপ।আমি তোমার মত একশটার সাথে প্রেম করতে পারি, তোমাকে আমার দরকার নেই বুঝলে?
-প্রেম করবা তাও আবার আমার মতই লাগবে।বাহ! আমাকে ছাড়া তো তোমার চলেই না দেখছি।

পুতুল আর কিছু বলছে না।

-পুতুল মুগ্ধকে ডেকেছিস?

সায়মা বেগমের হাক শুনে মুগ্ধ চলে যায়।পুতুল সেখানেই দাড়িয়ে রাগে গজগজ করতে লাগে। তারপর রুমে এসে বসে পড়ে।

পুতুলকে একা পেয়ে রুবি দৌড়ে তার কাছে আসে। আতংকের সাথে বলতে থাকে,

-ছোট ম্যাম সাহেব।
-হুম।
-আপনি ধৈর্য ধরেন আগে,
-কেনো? কি হয়েছে?
-না মানে কাল রাতে,,
-কি?
-ছোট সাহেব,
-মুগ্ধ,কি?
-কাল রাতে ছোট সাহেব একটা মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো আমি নিজ চোখে দেখছি। খুদার কছম! আমি মিথ্যা বলছি না। আমি দেখার আগেই কোথায় যেনো চলে গেল। এই বলে কাঁন্না শুরু করে দিল সে।

পুতুলের তৎক্ষণাৎ সব মনে পড়ে গেলো। কিন্তু সে কিছু না-জানার ভান করছে।

-হুম তো?

রুবি হা করে পুতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে বলে কি? স্বামী অন্যকারো সাথে ছিল আর তার কিছুই যায়-আসে না। এটাই আখিরি জমানার নিশানা।

-কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

রুবি বাস্তবে ফিরে,

-না মানে আপনার খারাপ লাগছে না?
-খারাপ কেনো লাগবে, আমি কে তার? আর সে যা ইচ্ছে করতে পারে আমার কি?

মুগ্ধ সিঁড়ি বেয়ে নেমে বাইক স্টার্ট করতেই বুঝল তার বাইকের চাকা নেই। কে করলো এটা?

-পুতুললললললললল……

ঠিক সেই সময় পুতুল হাজির।

-কি হয়েছে? বাইকের চাকা গায়েব?
-ইচ্ছে করছে তোমাকে,,,,,

পেছন থেকে সায়মা বেগম মুগ্ধকে থামিয়ে বলতে লাগলেন,

-পুতুলের কোনো দোষ নেই।আমি এই কাজ করেছি।
-কেনো???
-কাল সংবাদে দেখলাম মাত্র ২১ বছরের একটা ছেলে বাইক অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তুই আর বাইক রাইড করবি না
-ওয়াট? একজন মারা গেছে তাই সবাই মরবে?
-এতো কিছু বুঝি না আজ থেকে পুতুল তোর সাথেই একই গাড়ি করে ভার্সিটি যাবে।
-মা।

সায়মা বেগম চলে গেলেন।

ড্রাইভার এসে গাড়ি পার্কিং করছে। পুতুল গাড়িতে উঠে বসে আছে। রাগে ফুপিয়ে উঠছে মুগ্ধ। আর কিছুই করার নেই তার।

গাড়ি ক্যাম্পাসে এসে থামে। সামনেই মুগ্ধের ফ্রেন্ড সার্কেল। মৃদ্ধা,নীর, প্রিয়, জেন্নি সবাই আছে। মুগ্ধ আসতেই সবাই হৈচৈ শুরু করে দেয়।। তখন গাড়ির অন্য দরজা দিয়ে পুতুল নেমে তার ক্লাসে চলে যায়।

মুগ্ধের সাথে কোনো মেয়েকে দেখে কলিজা মুছড়ে উঠে মৃদ্ধার। এক নিমিষেই ঠোঁটের হাসিটা মলিন হয়ে যায় তার।সন্দেহ কোণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পুতুলের দিকে যত দূর দেখা যায়।

মুগ্ধের সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করে,

-এই মেয়েটা তোর সাথে কেনো মুগ্ধ?

মুগ্ধ চুল ঠিক করতে করতে বলে,

-রাস্তায় গাড়ি পাচ্ছিলো না তাই,,,,
-ওহ আচ্ছা

পুরোনো বইগুলো দিয়ে কিছু নতুন বই বরো করতে হবে পুতুলের। ৩ তলায় লাইব্রেরি তাই সেখানেই যাচ্ছে সে।

পা গুলো প্রায় ব্যাথা হয়ে গেল।বই হাতে এতটা পথ পারি দেয়া খুবই অস্বস্তিকর। শেষ সিঁড়ি অতিক্রম করে পশ্চিম দিক মুড়তেই সে দাঁড়িয়ে পড়লো। মুগ্ধ দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আছে আর মৃদ্ধা তার সাথে ইন্টিমেট হওয়ার চেষ্টা করছে। হাত-পা কাঁপছে পুতুলের। মুগ্ধ পুতুলকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। মৃদ্ধা পুতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে পুতুল।চশমাটা একটু ঠিক করে নেয় সে। তারপর নীচের দিক হয়ে চলে যায়,,

-মৃদ্ধা, আমার এসব পছন্দ না তোকে কতবার বলব?
-হুম আমি জানি তোর পছন্দ না কিন্তু,
-জাস্ট কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ মৃদ্ধা।

এটা বলেই চলে যায় মুগ্ধ।

প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আকবর চাচা আসতে এতো লেইট করছে কেনো? পুতুল ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে নিচে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে সে। চোখ দুটো যেনো আর বাঁধা মানছে না। বারবার ওই দৃশ্য স্পষ্ট হয়ে বেসে উঠছে পুতুলের সামনে। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে কুল পাচ্ছে না সে।ইচ্ছে করছে এই বৃষ্টিতে নিজেকে বিলিয়ে দেই। মুগ্ধ শুধুই ওঁর। সেই ছোট থেকে সে মুগ্ধকে ভালোবেসে এসেছে। এতটা সে মুগ্ধের সাথেই মিশেছে। প্রতি রাতে সে মুগ্ধকে নিয়েই সপ্ন দেখছে। মুগ্ধকে সে কতটা ভালোবাসে তা প্রকাশ করার ভাষা পুতুলের কাছে নেই তাই হয়তো কখনো প্রকাশ করা হয়নি। আর সে এতটা সাহসীও নয়। কিন্তু আজকে যা হলো তা কিভাবে মানবে পুতুল? ওই মেয়েকে কি তাহলে মুগ্ধ ভালোবাসে?

এমন হাজারো প্রশ্নের মধ্যে ডুবে আছে পুতুল।বৃষ্টির পানি তার সারা শরীর বেয়ে পড়ছে। হঠাৎ কেউ যেন তাকে ধাঁক্কা দিল। পুতুল মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। এবার ডুকরে কেঁদে উঠলো সে।নিজেকে হালজা করার বৃথা চেষ্টা। কেনো? মুগ্ধ তো তাকে কখনো ভালোবাসবে না। তাহলে কি তার ভালোবাসার গল্পটা অসমাপ্ত থেকে যাবে? সেই টুনাটুনির সংসার কি কবু করতে পারবে না পুতুল? সবকিছুই কল্পনা ছিলো মাত্র?

পুতুল কোনোরকমে উঠে আবার হাটা শুরু করে এক পর্যায় সে রাস্তায় চলে যাচ্ছে। কিন্তু সেই দিকে খেয়াল নেই তার।।

মুগ্ধ ২ তলার বারান্দা থেকে সবটা দেখে । সাথে সাথে সে খুব জোরে দৌড়াতে লাগে। এ কি করছে পুতুল? পাগল হয়ে গেল নাকি।।

একটা গাড়ি বারবার হর্ণ দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পুতুল বেখেয়ালির মত হাঁটছে।

মুগ্ধ পুতুলের হাত ধরে টান দেয়। পুতুলের হুশ ফিরে। অ্যাক্সিডেন্ট হওয়া থেকে বেঁচে যায় সে। মুগ্ধ তাকে বাঁচিয়েছে । দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে টইটম্বুর,

-ছেড়ে দাও আমাকে,
-কি করছিলে তুমি?
-যা ইচ্ছে করব তোমার কি? আমি তোমার কে?

মুগ্ধ একটু চুপ করে রইলো,

-বৃষ্টি পড়ছে। এখান থেকে চলো
-না আমি যাবো না তোমার সাথে,
-প্লিজ পুতুল তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে চলো,
-না তুমি যাও আমার জন্য এত দরদ দেখাতে হবে না তোমার।
-যাবে না?
-না

মুগ্ধ অন্য কোনো উপায় না পেয়ে পুতুলকে কোলে উঠিয়ে নিলো।

২ তলা থেকে মৃদ্ধা সবটা দেখছে আর বেগুনের মত ফুলছে,,,

চলবে,,,

#তোমাতেই
#পর্ব_৮
#Arobi_Akter_Poly

মুগ্ধ অন্য কোনো উপায় না পেয়ে পুতুলকে কোলে উঠিয়ে নিলো।

২ তলা থেকে মৃদ্ধা সবটা দেখছে আর বেগুনের মত ফুলছে,,,

পুতুল মুগ্ধের ঘাড় শক্ত করে ধরে। যেন এটাই তার শেষ ঠিকানা।

কিছুদূরে, মুগ্ধ পুতুলকে একটি টংয়ে বসিয়ে দেয় মাটির কাপে দু কাপ চা অর্ডের করে সে। পুতুল চুপটি মেরে বসে আছে। ঠোঁট দুটো কাঁপা-কাঁপি করছে। মুগ্ধ পুতুলকে চা এগিয়ে দেয়,

-খেয়ে নাও। ভালো লাগবে।

পুতুল মুগ্ধের হাত থেকে চায়ের কাপটি নেয়।

মৃদ্ধা অনাবৃত মুগ্ধকে কল করে যাচ্ছে। কিন্তু মুগ্ধ কল রিসিভ করছে না। পুতুল মৃদ্ধার সাথে তাকে দেখে এমনটা করলো নাতো? পুতুলকে এখন কি করে বুঝাবে সে। হৃদয়ের সবটা জুরেই যে শুধু পুতুল।এখানে আর কেউকে যায়গা দিতে পারবে না মুগ্ধ। কিন্তু কোনোদিন তা বলা হবে না তার,কারন পুতুল মানবে না। এটা সে ভালো করেই জানে। ইহা ভালোবাসা না অন্যকিছু তা জানে না মুগ্ধ।যদি রাগ করে পুতুল সারাজীবনের জন্য অন্যকোথাও চলে যায় তাহলে তো পুতুলকে সে আর দেখতে পাবে না। যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক অন্তত পুতুল তার চোখে চোখে তো থাকছে!

ইতিমধ্যে আকবর চাচা গাড়ি নিয়ে চলে এসেছেন। মুগ্ধ পুতুলকে গাড়িতে বসিয়ে অন্যপাশ থেকে সেও উঠে পড়লো। মৃদ্ধার চোখ দুটো থেকে অঝোরে পানি পড়ছে। কে এই মেয়ে? কেনো তার প্রতি মুগ্ধের এত টান।

ঠান্ডায় পুতুলের সারা শরীর কাঁপছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে তা। জ্বর এলো না তো?

মুগ্ধ পুতুলের কপালে হাত বুলাতেই পুতুল গুটি মেরে মুগ্ধের কুলে শুয়ে পড়ে। মুগ্ধ কিছু বলল না। জ্বরে গা পুঁড়ে যাচ্ছে পুতুলের।

-পুতুল মায়ের বোধহয় শরীর খারাপ করেছে ছোট সাহেব।
-বৃষ্টিতে ভিজলে ওঁর এরকমই হয়। আপনার আসতে এতো লেট হলো কেনো?
-বড় ম্যাম আর বড় সাহেব বিসনেসের একজন পার্টনারের সাথে দেখা করতে গেছেন। ওনাদের ছেড়ে আসতেই পথে দেরি হয়ে গেলো, ছোট সাহেব।

মুগ্ধ জিন্সের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতেই দেখলো সায়মা বেগমের অনেকগুলো মিসড কল সাথে মেসেজ,

-মুগ্ধ আমরা এখানে ফেঁসে গেছি রে। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে কখন বাসায় ফিরবো বলতে পারছিনা। রুবি আমাদের সাথেই আছে। আকবরকে আজ তোদের সাথে রেখে দিস কিছু দরকার পরলে ডাকতে পারবি। পুতুল তোর সাথে তো?

মুগ্ধ মেসেজের রিপ্লাই দিলো,
-হুম

পুতুলের অসুস্থতার কথা চেঁপে গেলো মুগ্ধ। অযথা টেনশনে পড়ে যাবে সবাই।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে। পুতুল গরম শরীর নিয়ে মুগ্ধের কুলে শুয়ে আছে। মুগ্ধ পুতুলকে কুলে করে গাড়ি থেকে নেমে যায়। পুরো বাসা ফাঁকা। মুগ্ধ এসে ঘরের সবগুলো লাইট অন করে দিলো । বাহিরে বৃষ্টি থামছে না।

পুতুলকে তার রুমে শুইয়ে দিয়ে ডক্টর চাচ্চুকে কল করলো সে,

-মুগ্ধ বাবা, এখন তো বেরুতে পারবো না। অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। তুমি এক কাজ করো বাবা, পুতুলকে গোসল করিয়ে দাও,,
-কিন্তু চাচ্চু,,
-হুম তারপর,, হ্যালো হ্যালো
-হ্যালো
-টুট, টুট

নেটওয়ার্ক প্রব্লেম।

মুগ্ধ পুতুলের দিকে তাকিয়ে রইলো কিচ্ছুক্ষন৷ তারপর পুতুলের কাছে গিয়ে বলল,

-চাচ্চু তোমাকে শাওয়ার নিতে বলেছে,যাও আমি এখানেই আছি।

পুতুল মরার মত শুয়ে আছে।

মুগ্ধ পরিস্থিতি বুঝতে পারে। একটি দীর্ঘ শ্বাস নিলো সে। তারপর পুতুলকে বসিয়ে তার কামিজটি খুলে ফেলল মুগ্ধ। পুতুল চোখ বন্ধ করে মুগ্ধের উপর হেলান দিয়ে আছে।

পুতুলের সাথে মুগ্ধও শাওয়ারের নিচে। পুতুলের চেহারায় এত মায়া কোথা থেকে আসলো আজ! সেটাই ভাবছে মুগ্ধ।

কাপড় চেইঞ্জ করিয়ে তার একটি সাদা শার্ট পড়িয়ে দিল পুতুলকে।

থার্মোমিটার দিয়ে বারবার জ্বর মাপছে সে। না, জ্বর তো কমছে না। খুব অস্থির হয়ে পড়ে মুগ্ধ।

এমন সময় টেলিফোন আসে,

-হ্যালো মুগ্ধ,পুতুল কোথায়?
-ঘুমুচ্ছে,
-আজকের রাতটা রিসিপশনেই থাকতে হবে রে। আমি আকবরকে সব বুঝিয়ে দিয়েছি। ফ্রিজে খাবার আছে গরম করে খেয়ে নিস। আমরা কাল সকালেই চলে আসবো বাবা।
-হুম

মুগ্ধ কিচেনে গিয়ে ইউটিউব দেখে পুতুলের জন্য সুপ রাঁন্না করছে।

-পুতুল খেয়ে নাও,
-ন ন না,
-হা করো
-হা,,
-এটা অনেক হেলথি

মুগ্ধ কিছুটা জোর করেই খাইয়ে দিল পুতুলকে। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে ব্লেনক্যাটটা গায়ে দিয়ে দিল পুতুলের।

পুতুলের যদি কিছু দরকার পড়ে? তাই মুগ্ধ নিজের রুমে গেলো না।দরজাটা আঁটকিয়ে পুতুলের রুমেই সোফায় শুয়ে রইলো সে ।

মৃদ্ধা ১৩৪ টা কলে করেছে মুগ্ধকে! কল রিং হচ্ছে মুগ্ধের ফোনের। মুগ্ধ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে একটু গম্ভীর হয়েই বলে উঠলো,

-কি হয়েছে মৃদ্ধা, বুঝতে পারছিস না? একটা মানুষ ব্যাস্ত বিধায় কল রিসিভ করছে না। এতবার কল করা লাগে? তোর আর কোনো কাজ নেই?

মৃদ্ধা কিছু বলছে না। ওপাশ থেকে শুধু কাঁন্নার আওয়াজ পাচ্ছে মুগ্ধ।

মৃদ্ধা কল কেটে দেয় এবং ডুকরে কেদে উঠে। এর আগে কখনো মুগ্ধ এতটা বাজে ব্যাবহার করেনি তার সাথে। তাহলে আজ কেন? ওই মেয়েটার জন্য? কে ওঁ? ওই মেয়েটা পাশে থাকলে কেমন যেনো হয়ে যায় মুগ্ধ।

সকালের মিষ্টি হাওয়ায় ঘুম ভাঙে পুতুলের।চোখ মেলতেই সামনে মুগ্ধকে দেখতে পায় সে। এত মায়াবী চেহারা, এত মাসুম, এত অবুঝ কেউকে দেখছে সে। আসলেই কি এটা মুগ্ধ নাকি অন্যকেউ।

কিন্তু কাল যা ঘটলো? সেই মেয়ে। কিভাবে ছিলো তারা দুজন। চোখের সামনে এখন সে কাকে দেখছে তার অতি আপন কেউ নাকি অন্যকারো আমানত।

তার পর পরই পুতুল দেখলো তার শরীরের কাপড় ঠিক নেই। শার্ট! কে, কি, কিভাবে?

বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে পুতুল। রীতিমতো চিঁল্লাতে থাকে সে।

-আহহহহহহহহহহহহহহ,,,

মুগ্ধের ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম ঘুম চোখে মুগ্ধ বলে উঠে,

– এখন কেমন লাগছে?
-তুমি আমার রুমে কেনো? বেরিয়ে যাও।

এবার মুগ্ধ চোখ খুলে,

-এখন ঠিক আছো তো?

পুতুল কোনো কথাই শুনছে না,

-তুমি বের হও এখানে থেকে। গেট আউট।
-ও হ্যালো! আমার এখানে থাকার কোনো শখ নেই, তোমার শরীর খারাপ করেছিলো তাই,

-আমার শরীর খারাপ করুক বা যাই করুক তাতে তোমার কিইইইইইই, সুযোগ বুঝে কি করেছ তুমি আমার সাথে?

মুগ্ধ খিঁচ ধরে আছে। এই অকৃতজ্ঞ মেয়েকে কি করবে সে!

-অনেক কিছুই করেছি। নিজের দিকে একবার তাকালেই বুঝতে পারবা।

কলিং বেল বাঁজচ্ছে। আকবর দরজা খুলে দেয়। করিম সাহেব সেখান থেকেই অফিসে চলে গেছেন। সায়মা বেগম আর রুবি বাড়িতে ফিরেছে।

মুগ্ধ আর কিছু বলছে না।রেগে, এংগ্রি ইয়াং ম্যান হয়ে চলে যায়।

নিজের চুল নিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে পুতুলের। আল্লাহ যানে রাতে একা পেয়ে বদমাশইটা কি করেছে তার সাথে।

মুগ্ধ ফোনটা অন করে দেখে মৃদ্ধা রাত ৩ টায় কিছু ছবি পাঠিয়ে রেখেছে। কাল রাতে একটু বেশি বলে ফেলেছে মৃদ্ধাকে। মুগ্ধ মেসেজ অপেন করল।মৃদ্ধা হাত কেঁটে “মুগ্ধ”লিখেছে। এ কি পাগল? হাত থেকে অঢেলে রক্ত পড়ছে মৃদ্ধার।খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে মৃদ্ধাকে। মুগ্ধ তড়িঘড়ি করে মৃদ্ধাকে কল করলো কিন্তু সে কল রিসিভ করছে না।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here