তোমাতেই পর্ব_৯,১০

0
2194

তোমাতেই
পর্ব_৯,১০
Arobi_Akter_Poly
পর্ব_৯

খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে মৃদ্ধাকে। মুগ্ধ তড়িঘড়ি করে মৃদ্ধাকে কল করলো কিন্তু সে কল রিসিভ করছে না।

নাস্তার টেবিলে করিম খান হাতে ব্রেড নিতে নিতে বললেন,

-আজকে সন্ধ্যায় আমাদের কম্পানি গ্র‍্যানড ইভেন্ট অ্যারেঞ্জ করেছে। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করেই তো তুমি অফিস জয়েন্ট করচ্ছো। সেক্ষেত্রে আজকে তোমার উপস্থিত থাকাটা অনেক ম্যাটার করে। আমাদের কলিগ আর নিউ পার্টনারদের সাথে পরিচিত হবে।
-ওকে বাবা।

পুতুল কিছু বলছে না চুপ করে গিলে যাচ্ছে,

-আমরা সবাই যাবো পুতুল।

পুতুল চোখ পাকিয়ে বলল,

-না,বাবা তোমার ছেলের সাথে কোথায় যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব!
-তোরা কেন এতটা আলাদা আমি বুঝিনা, (সায়মা বেগম)

করিম খান ইশারায় সায়মা বেগমকে শান্ত হতে বলেন।

ভার্সিটিতে ঢুকেই পুতুল মেয়েদের ভীড় দেখতে পেলো। মৃদ্ধা কাকে যেন শাসাচ্ছে।

-আবার কেন? একবার বলেছিনা মুগ্ধ আমার বফ।
-মুগ্ধ আপনার বফ না সেটা আমি ভালো করেই জানি।
-ওয়াট দ্যা হেল!

এই বলেই মৃদ্ধা মেয়েটিকে পাগলের মতো থাপ্পড় মারতে লাগলো। গন্ডগোল পেকে গেছে এখানে। পুতুল সেখান থেকে চলেই আসছিল, কিছু মেয়ের বিরবির শব্দে থেমে গেলো।

-হায়! মৃদ্ধা আপু কত লাকী,মুগ্ধের মতো বফ পেয়েছে আর আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব। একজন চিরকুট লিখেছিলো মাত্র এতেই এত খেঁপেছে আর যদি জানতো পুরো ভার্সিটির মেয়েদের ক্রাশ মুগ্ধ তাহলে কি যে করতো এই পাগল আল্লাহই ভালো জানে। হি হি হি।

পুতুল চুপটি করে চলে যায়।

ক্যানটিনে বসে আছে মৃদ্ধা। হাতে ব্যান্ডেজ। পাশেই মুগ্ধ।মৃদ্ধা মুগ্ধের দিকে তাকাচ্ছে না।অন্যদিকে তাকিয়ে নিজের মত কফি খাচ্ছে।।

-আমি বিজি ছিলাম তাই রিসিভ করতে পারিনি। এর জন্য হাত কাটা লাগে? ফুলিস গার্ল এভার!
-ওই মেয়েটা কে?
-কোন মেয়ে?
-যাকে কুলে নিয়েছিস কাল!

মুগ্ধ কিছুটা বিরক্ত হলো।

-ওঁর কথা কেন আসছে?

এভার মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে,

-আমি জানতে চাই মুগ্ধ।

একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। আসলে এরকম মৃদ্ধা আগে থেকেই ছিলো। পুতুলের সাথে তার সম্পর্কটা ৮-১০ টা কাপলদের মত হলে না হয় শুরুতেই বলে দিত। এমনটাও তো না। আবার তখন তো পুতুল তার সামনে ছিলো না। এখন আছে! মৃদ্ধাকে আর মিথ্যা গূঢ়ে রেখে কষ্ট দিতে চায় না সে। তাই পুতুলের ব্যাপারটা বলে দেয়াই বাহুল্য।

-দেখ,কষ্ট পাওয়া যাবে না।
-কষ্ট কেনো পাবো, তুই বল।
-হুম, আসলে পুতুল আমার,,,,,,

-হেই মৃদ্ধা, ওয়াটস আপ!

মৃদ্ধা মুড়তেই দেখতে পেলো তুলিকে,

-ওয়াও! তুই এখানে!
-হুম,
-হাসবেন্ড কোথায়?
– হাসবেন্ডের সাথেই এসেছি তোদের সাথে দেখা করতে । সারপ্রাইজ আছে।
-কি?
-আই এম প্রেগন্যান্ট।
-ওয়াট!!!!
-হুম চল চল অনেক কথা আছে, আমি কি মৃদ্ধাকে নিয়ে যেতে পারি মুগ্ধ ভাইয়া?
-হুম সিউর!

পুতুল সেই চিরচেনা ফুলের দোকানের পাশ কেটে চলে যাচ্ছিলো। একজন পথচারী শিশু দৌড়ে পুতুলের কাছে আসে।

-দিদি আমাকে একটা ফুল কিনে দাও না!

পুতুল থেমে যায়,

– ফুল দিয়ে কি হবে?
-আজকে ভ্যালেন্টাইন্স-ডে

পুতুল মৃদু হাসে,

-তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?
-নাহ, আমার মাকে দিব।

সঙ্গে সঙ্গে পুতুলের মুখের হাসিটা কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো।মা! একটি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল পুতুল।

-কে কে আছে তোমার?
-আমি আর মা।

ছেলেটিকে দু-প্যাকেট বিরিয়ানি, গোলাপ,দই আর চকলেট কিনে দিলো পুতুল।

গাড়ি থেকে প্রিয়ম পুতুলকে ফলো করছে। খুব ভালো লাগছে পুতুলকে। যেমন সুন্দরী তেমনই যত্নশীল।

গাড়ি থেকে নামলো প্রিয়ম।

-সিনরিতা!
-আবার আপনি!
-উফফফ কি সুন্দর কথার ধরণ।

প্রিয়ম পুতুলকে একটি লাল গোলাপ এগিয়ে দিল।

-হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে!

পুতুল কিছু না বলেই সোজা বাসায় চলে এলো।

সায়মা বেগম, করিম খান রেডি হচ্ছে। মুগ্ধ রেডি হয়ে সোফায় বসে বসে মোবাইল স্ক্রল করছে । তার পাশেই পুতুল বসে পপ কর্ণ খাচ্ছে আর মুভি দেখছে।

পুতুল কিছুক্ষণ পর পর মুগ্ধের দিকে তাকাচ্ছে। ইশ, কালো ব্লেজার পড়ে একদম ভদ্রলোক সেজেছে দেখছি। বাদরটাকে তো খুব হ্যান্ডসাম লাগছে মেয়েদের নজর তো পড়বেই না এর উপর থেকে । নিশ্চয়ই মেয়েদের জন্যই এত পরিপাটি । কি করব আমি,বুক চিন চিন করছে হায়, মন তোমায় কাছে চায়!

মুগ্ধ একটু আড়চোখে পুতুলের দিকে তাকিয়ে দেখল পুতুল আগে থেকেই তাকিয়ে আছে,

-কিছু বলবে?
-হুম,তোমাকে ওয়েটারের মত লাগছে ওখানে গিয়ে ড্রিংক সার্ভ করো বেশি মানাবে।
-ওয়াট দ্যা ফ**
-কি বললে?

মুগ্ধ টিভি বন্ধ করে দেয়। পুতুল বিরক্তি নিয়ে চলে যেতে নেয় পেছন থেকে মুগ্ধ পুতুলের হাত ধরে ফেলে।

-মৃদ্ধার সাথে আমার কিচ্ছু নেই।
-আমি কিছু বলেছি?
-রাগ করাটা স্বাভাবিক ওইদিন যা দেখেছো,,
-আমি কিচ্ছু দেখিনি মিস্টার মুগ্ধ আর দেখলেই বা কি? আমি আপনার কে যে এত কৈফিয়ত দিচ্ছেন।

মুগ্ধ কিছু বলছে না।খুব রাগ হচ্ছে তার। এই মেয়ে কি কোনোদিনও তাকে বুঝার চেষ্টা করবে না?

-আমার হাত ধরার সাহস হলো কোথা থেকে তোমার?

এবার রাগে গা গিরগির করছে মুগ্ধের। কি করবে এঁকে?

-হাত? হা হা হা, ওইদিন রাতে কত কিছু যে ধরেছি।

কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগে,

-এমনি এমনি তো আর আমার গায়ের শার্ট তোমার গায়ে চলে যায়নি।

পুতুল মুখ ভেংচিয়ে চলে যায়।

মুগ্ধ আলতো করেই বলতে থাকে,

-হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে পুতুল।

ততক্ষণে পুতুল নিজের রুমে চলে গেছে।

মিস্টার খান কার্ড দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন।বেশ জমজমাট পরিবেশ। বেশ নামি-দামি ব্যাক্তিরা আছেন। মুগ্ধ একে একে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে।

-মুগ্ধ, আমাদের নিউ পার্টনার মিস্টার আজিজুল হক চৌধুরী।

মুগ্ধ মিস্টার আজিজুলের সাথে হ্যান্ডশেক করলো।

-উনি আমাদের কম্পানিতে ৩০% শেয়ার করবেন যার ২০% উনার ছেলে হৃদয় মেইনটেইন করবে আর বাকি ১০% উনার মেয়ে মৃদ্ধা।

হঠাৎ করেই কেউ একজন হাত বারিয়ে দেয়,

-হ্যালো মিস্টার মুগ্ধ। আই এম মৃদ্ধা। মৃদ্ধা হক চৌধুরী।

মুগ্ধ তাকিয়ে হবাক হয়। মৃদ্ধা! মাল্টিন্যাশনাল ফ্যাশন কম্পানির নিউ পার্টনার।

মুগ্ধ হালকা মুচকি হাসে।তারপর হ্যান্ডশেক করে।

-হ্যালো

পার্টি ড্রেসে তার সাথে হায়-হিলস বেশ লাগছে মৃদ্ধাকে। একদম অন্যরকম।

মুগ্ধ বার-ডেক্সে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। পুতুলের কলের জন্য অপেক্ষা করছে সে।ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে একটা চিরকুট, সট ড্রেস আর কিছু গোলাপ পুতুলকে সে গিফট করেছে। চিরকুটে তো লিখা ছিলো কল দেয়ার কথা। তাহলে কি পুতুল খুব বেশি রাগ করেছে এসব করাতে?

এসব ভাবতেই মৃদ্ধা হাজির,

-পরিবেশটা আমাদের ক্যাম্পাস থেকে একদম ভিন্ন তাই না।
-হুম
-আজ তোকে আমার ড্রিম বয় লাগছে।
-হুম,
-শুধু হুম? আমাকে কেমন লাগছে বলছিস না কেন?

মুগ্ধ এক নজর তাকালো,

-বরাবরের মতই ভালো।
-অনলি ভালো?

মুগ্ধ বুঝতে পারছে মৃদ্ধা তার থেকে কি এক্সপেক্ট করছে। কিন্তু সেটা তো সে কখনই মৃদ্ধাকে বলতে পারবে না।

-জানিস তো, আমার যদি ছোট ভাই থাকতো আমি তোদের হেল্প করতাম,
-আমার ছোট ভাই না, তোকে লাগবে মুগ্ধ।আমি তোকে বিয়ে করতে চাই, তোকে ভালোবাসতে চাই, তোর বাচ্চার মা হতে চাই ।

মিস্টার আজিজুল হক সেখানে হাজির হোন।

-কি কথা চলছে?
-বাপ্পি, আমি মুগ্ধকে আগে থেকেই চিনি। জানো? আমরা একই ভার্সিটি অ্যাটেন্ড করি।
-তাই নাকি?

মুগ্ধ একগাল হেসে,

-হ্যাঁ,
-তাহলে তো আমাদের পার্টনারশিপ অনেক ভালো চলবে,
-হোপ সো,

চলবে,
#তোমাতেই
#পর্ব_১০
#Arobi_Akter_Poly

-তাহলে তো আমাদের পার্টনারশিপ অনেক ভালো চলবে,
-হোপ সো,

পুতুল মুগ্ধের রুমে গিয়ে গুনগুন করতে থাকে। তার কাপড়ের গন্ধ নেয়। বাহিরে তুমুল হাওয়া বইছে। পুতুল গান ধরে,,,,

“ওহে, কি করিলে বল পাইবো তোমারে।রাখিবো আঁখিতে আঁখিতে।”

রুমের এটা-ওটা দেখছে পুতুল।মুগ্ধের বিছানায় শুতেই তার মধ্যে শিহরণ সৃষ্টি হয়। যেন মুগ্ধ তারই পাশে শুয়ে আছে। বারান্দা দিয়ে বয়ে আসছে প্রকৃতির ধমকা বাতাস। পর্দাগুলো নিজেদের মত উঁড়ছে।সবকিছুর আহরনে পুতুল কখন যে ঘুমিয়ে গেলো তা সে নিজেই টের পেলো না।

মৃদ্ধা প্লেন করল। সে মুগ্ধকে হার্ড-ড্রিংক করিয়ে ফায়দা নিতে চাইবে। এটাই সুযোগ। কতবার চেষ্টা করেছে সে মুগ্ধকে নিজের করে পাওয়ার জন্য কিন্তু,,,,,,,,,, এবার সে মুগ্ধকে আপন করে নিবেই।

-মুগ্ধ লেটস চ্যাস!

পুতুল এখনো তাকে কল করছে না কেনো? কলিজাটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে মুগ্ধের। আর কিছু না ভেবে মৃদ্ধার হাত থেকে ড্রিংকস টা নিয়ে পিপাসাক্ত প্রানীর মত এক ডুকরে সবটা শেষ করে ফেলে সে। মৃদ্ধা ডেভিল মার্কা একটা হাসি দেয়। মুগ্ধের হাতে আরেকটা গ্লাস দিল।এবাভেই খেলায় মেতে উঠলো সে।,,,

মুগ্ধ টোটাল ড্রাংক।মৃদ্ধা লোকচক্ষুর অন্তরালে মুগ্ধকে নিয়ে প্রাইভেট রুমে চলে গেলো।

মুগ্ধ কিচ্ছু অনুভব করতে পারছে না। মৃদ্ধা মুগ্ধের ব্লেজার খুলতে লাগে। তারপর শার্টের বোতাম খুলে অনাবৃত চুমু খেতে শুরু করে সে।

-তুই শুধু আমার মুগ্ধ। আই লাভ ইউ। আজকে আমি তোকে নিজের করেই ছাড়বো।
-কি করছিস এসব।

মুগ্ধ খুব বাদা দিচ্ছে কিন্তু মৃদ্ধা থামছেই না। শেষমেশ মৃদ্ধাকে কষে একটা থাপ্পড় লাগায় মুগ্ধ। মৃদ্ধা লুটে পড়ে মাটিতে। থাপ্পড় দেয়া গালে ধরে হা করে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধের দিকে।

মুগ্ধ তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে বেহিরে পড়ে।

রাত ২ঃ৪৫ মিনিট। সায়মা বেগম মুগ্ধকে তার রুম পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। রুমে এসে মুগ্ধ তার গায়ের শার্টটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে ধপাস করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

রাতে খুব ভালো একটা ঘুম হয়েছে পুতুলের। ধীরে ধীরে চোখ দুটো খুলে নিজেকে মুগ্ধের রুমে আবিষ্কার করেছে সে।একটা ফ্রেস হাসি দিল পুতুল। কিন্তু তার বুকের উপর পাথরের ন্যায় কি পড়ে আছে?

পুতুল সেদিকে তাকাতেই মুগ্ধকে দেখতে পেলো। খালি গায়ে মুগ্ধ, পুতুলকে ঝাপটে জড়িয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন। পুতুল কিছুক্ষন নির্বোধ হয়ে পড়ে রইলো। কি হচ্ছে সব? মুগ্ধ কখন এলো তা জানে না পুতুল। ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে মুগ্ধের দিকে। যতবার দেখছে ততবারই প্রেমে পড়ে যাচ্ছে তার।

পুতুল কোনোরকমে উঠে বসে। দরজার ওপাশে রুবি।

-ছোট সাহেব, বড় ম্যাম সাহেব নাস্তার জন্য ডাকছেন।

হাকের শব্দে মুগ্ধ কিছুটা নড়েচড়ে উঠে। কপালে হাত দিতেই পুতুল মুগ্ধের হাতের ঘড়িতে সময়টা দেখে নিলো।সাড়ে নয়টা বেঁজে গেছে। এদিকে মুগ্ধও তো উঠে যাচ্ছে। কি করবে সে। বের হলে তো মা,রুবি বাবা, আকবর চাচা দেখে নিবে।ছ্বিঃ ছ্বিঃ। এগুলো ভাবতে ভাবতেই মুগ্ধ প্রায় চোখ খুলে ফেলছে। মাথা ঝিমঝিম করছে মুগ্ধের। কাল রাতে একটু বেশিই হয়ে গেছে। বেডসাইড ড্রয়েরের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে টাইম দেখলো সে।

পুতুল বারান্দায় লুকিয়ে আছে। মুগ্ধ ওয়াশরুমে ঢুকতেই মুগ্ধের রুম থেকে বেরিয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল।

রুবি টেবিলে প্লেট সাজাচ্ছিল। সে কি ঠিক দেখছে? সাজ-সকালে পুতুলই মুগ্ধের রুম থেকে বের হলো।রুবি প্লেট হাতে হা করে তাকিয়ে পুতুলের চলে যাওয়া দেখছে।

সায়মা বেগম ফলের জোস হাতে রুবিকে হালকা ধাঁক্কা দিলে রুবির হুশ হয়।

-হ্যাঁ হ্যাঁ, কে?
-কাজ কর।এখনই সবাই নাস্তার জন্য চলে আসবে। পুতুলকে ডাক দিয়েছিস?

রুবি কথা চেঁপে গেলো মাথায় ইশারা করে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল।

প্রতি শুক্রবার বিকেলে পুতুল পথচারী শিশুদের সাথে সময় কাটায়।এতে নাকি তার মন স্বচ্ছতা খুঁজে পায়। কত এতিম মানুষের মাথার উপর থাকার ছাদটুকু নেই পুতুল তো খুব ভালো আছে। ওটাই ভাবে পুতুল। বাচ্চাদের জন্য কিছু কাপড় আর খিচুড়ি রেঁধে নিয়ে গেল পুতুল।তাদের কাছে পুতুল খুবই পরিচিত একটি মুখ।

খাবার বিলি করছে তখনই,

-আমি একটু পেতে পারি?

প্রিয়মকে দেখে পুতুল,

-আপনি এখানে?
-হুম। আপনাকে দেখেই এলাম।
-উহু!ঠিক আছে নিন।

পুতুলকে যত দেখছে ততই মায়ায় পড়ে যাচ্ছে প্রিয়ম। এত মায়া চেহারায় ছোট বাচ্চাদের মত হাসি। চোখ!

-কেমন হয়েছে। আমি নিজে রেঁধেছি।

প্রিয়মের গূঢ় কাটে,

-খুব মিষ্টি।
-খিচুড়ি মিষ্টি?
-নাহ,আপনি।মানে খিচুড়ি খুব মজা।

পুতুল না চাইতেও হেসে দেয়।

-ধন্যবাদ
-আপনার নাম?

পুতুল কিছু বলে না। নিজের মত কাজ করতে থাকে।

রাতে ঘুম হচ্ছে না প্রিয়মের। একি দেখল সে! চোখ বন্ধ করলেই পুতুলের হাসি,চোখ, সবকিছুই ভেসে উঠছে। কিন্তু এখনো নামটা জানা হলো না।উফফ পাগল হয়ে যাচ্ছে সে। এত মেয়ের সাথে টাইম পাস করেছে কিন্তু এত মায়া কারো জন্যই অনুভব করেনি প্রিয়ম। তার উপর কি মেয়েটা যাদু করল। মেয়েটিকে না পেলে তার জীবনই বৃথা।

ক্যান্টিনে বসে আছে সবাই। প্রিয়ম তড়িঘড়ি করে আসে।

-সরি সরি লেট হয়ে গেছি, কাল সারা রাত ঘুমুতে পারিনি।

জেন্নি পাশ থেকে হুল্লোড় করে বলে উঠলো,

-কেন রে! এক্সকে মনে পরে গেছিলো?
-নাহ,ওই চোখ ওই হাসি। আমি এখনো ওর মায়াজালে আঁটকে আছি, ভুলতে পারছিনা।

মুগ্ধ কফি খাচ্ছে।জেন্নি,মৃদ্ধা, নীর খুন আগ্রহ দেখিয়ে ।

-কে সে? মেয়েটার নাম কি?
-নাম তো জানি না তবে তোরা দেখেছিস এই ভার্সিটিতেই পড়ে।এই মুগ্ধ ভাই আমার তুই প্লিজ আমাকে হেল্প করবি।

মুগ্ধ খুব এটিটিউড দেখিয়ে,

-তুই একবার বল কে সেই মেয়ে। বাড়ি থেকে তুলে এনে বিয়ে করিয়ে দিব।

সবাই সমস্বরে হেসে উঠে।মুগ্ধ মৃদ্ধা সাথে হাই-সাইফ করে।

-আই লাভ ইউ দোস্ত

মৃদ্ধা,

-মেয়েটা কে রে? দেখাস একদিন।

পুতুল বই হাতে ক্যানটিন ক্রস করছে। আচমকা একজনের সাথে ধাঁক্কা লেগে বইগুলো পড়ে যায় পুতুলের। অধিকাংশ মানুষই পুতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। পুতুল ফ্লর থেকে বইগুলো উঠাচ্ছে। মুগ্ধের সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই। সে কফি খাচ্ছে আর মোবাইল স্ক্রল করছে।

-ওহ! আমার সিনরিতা!

মৃদ্ধা সন্দেহ কোণ দৃষ্টিতে প্রিয়মের দিকে তাকায়।প্রিয়ম খুব নেশাগ্রস্ত চোখে পুতুলের দিকে তাকিয়ে আছে।

-এই তো সেই মেয়ে।

মুগ্ধ এক পলক প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পুতুলের দিকে চোখ যেতেই আকাশটা ভেঙে পড়ে তার উপর। কাকে দেখছে সে? কার ব্যাপারে এতক্ষণ এত কিছু শুনল মুগ্ধ।পুতুল!! অসম্ভব।পুতুল শুধু মুগ্ধের এর উপর কারো ভাগ নেই। দরকার পড়লে অন্য ভার্সিটিতে বদলি করিয়ে দিবে পুতুলকে, শহর ছেড়ে অন্যকোথাও চলে যাবে পুতুলকে নিয়ে তারপরও অন্যকারো হতে দেখতে পারবে না সে।।

প্রিয়ম দৌড়ে গিয়ে পুতুলকে হেল্প করছে,

-হাই

পুতুল কিছুটা ইতস্তত করে,

-হাই

পুতুল প্রিয়মের সাথে কথা বলছে! মাথার উপর দিয়ে আগুন বয়ে যাচ্ছে মুগ্ধের। চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত কাটতে থাকে সে।রাগে অভিমানে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। চোখ দুটো গুলাবারুদ হয়ে আছে মুগ্ধের।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here