#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -২,০৩
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা
০২
দুদিন আগেও যে মানুষ গুলো আমাকে ছেলের বউ বানাতে চেয়েছিল আজ বিধবা জানতেই বের করে দিল ।এটাই হয়ত আমার ভাগ্য। মেনে নিলাম আমি।এই সমাজে টিকে থাকতে হলে তোর অনেক লড়তে হবে শ্রেয়সী।আম্মু কি বলতেন ভুলে গেছিস?ভালো খারাপ মিলিয়েই দুনিয়া। প্রত্যেক টা মানুষ কেই এই সমাজে লড়াই করে বাঁচতে হয়।ছোট বেলায় মায়ের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারছিস অথচ এখন লড়াই করতে পারছিস না?লজ্জা হওয়া উচিত তোর।হয় লড়াই করে বেঁচে থাক নাহয় হার মেনে মরে যা।নিজেকে নিজেই কথাগুলো বলে চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালাম আমি।
হাতের দুই হাজার টাকা ব্যাগে ভরে নিলাম।আজ মাসের দুই তারিখ। বাড়ির মালিক হয়তো বাসা ভাড়ার জন্য আজই হাজির হবেন।খুব কর্কশ স্বভাবের লোক ওনি।মায়া দয়া বলতে কিছুই নেই তার।মাস শেষ হলে সাথে সাথেই ভাড়া চায় ওনার।কারো অসুবিধা ও বুঝতে চায় না।এতকিছু ভেবে তো আর লাভ নেই এটা তো ওনার হক।কিভাবে চলব আমি?দুটো টিউশনির চার হাজার টাকা দিয়ে পড়ালেখা,বাসা ভাড়া,যাবতীয় খরচ চালানো সম্ভব হবে না। দু’ মাসেই হাফিয়ে উঠেছি আমি।কিভাবে কাটাব বাকি জীবনটা?চারপাশের মানুষগুলো এতো কঠোর কেন?সুখ তো কপালে কখনোই ছিল না বাঁচার জন্য ও কতো লড়তে হচ্ছে। —কথা গুলো ভেবেই হাঁটা ধরলাম ফুটফাট ধরে।উদ্দেশ্য বাসায় যাওয়া।রিকশা নিয়ে আর এক টাকাও খরচ করতে চাই না।বিলাসিতা একদম যায় না আমার সাথে কারণ বেঁচে থাকায় তো দায় হয়ে পড়েছে।
শ্রেয়া কে চলে যেতে দেখে দূর থেকে দৃষ্টি নিবদ্ধ মানুষটাও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।
।
শ্রেয়া আজ কিন্তু ভাড়া দিতে হবে–রীতি আপুর কথায় তার দিকে ফিরে তাকালাম আমি।রীতি আপু আর আমি একসাথে থাকি এই বাসায়।ওনি আমার আপন কেউ না তবুও মেয়েটা আমার খুব কাছের হয়ে উঠেছে এই দু মাসে।প্রিয়ুর বড় আপুর ফ্রেন্ড হন ওনি।সেই সুবাদেই ওনার সাথে এখানে থাকা আমার।রীতি আপুর ফ্যামিলি অবস্থা ভালো না। পরিবারের খরচ তাকেই চালাতে হয়।ছোট একটা কোম্পানিতে জব করেন ওনি।দু’জন মিলিয়ে ভাড়া দেই বাসার।ব্যাগ থেকে তিন হাজার টাকা বের করে ওনার হাতে দিয়ে বললাম-“বাড়িওয়ালা বা ওনার ছেলে যেই আসুক ভাড়াটা দিয়ে দিও আপু।যদি ওনার ছেলে আসে তবে বলবে আমি বাসায় নেই। টিউশনিতে গেছি।তুমি তো জানোই ঐ ছেলে কেমন?”
–হুম আমি বলে দিব।কিন্তু এভাবে কদিন শ্রেয়া?আজ আমি সহ থাকি তাই তুৃমি কিছুটা সাহস নিয়ে থাকতে পারো।যদি কখনও আমি না থাকি তবে একা কিভাবে থাকবে?আজ বাড়িওয়ালার মাতাল ছেলে পিছু নিয়েছে কাল হয়তো অন্য কেউ নিবে।জীবনে তো প্রটেকশন প্রয়োজন আছে তাই না?এতো সুন্দর একটা মেয়েকে সারাক্ষণ এভাবে মনমরা হয়ে থাকতে দেখে একদম ভালো লাগে না।দোয়া করব আল্লাহ যেন তোমায় প্রটেক্ট করার একজন মানুষ দেন যে এই সুন্দরী কে আগলে রাখবে।
রীতি আপুর কথায় একটু হাসলাম আমি।নিজের গাল থেকে আপুর হাত টা হাতের মুঠোয় নিয়ে বললাম–শ্রেয়সী নিজেকে নিজে দিব্যি প্রটেক্ট করতে পারে আপু।
ফোনের শব্দে আপুর হাত টা ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ থেকে মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখলাম প্রিয়ু কল দিয়েছে। উফ্ বাসায় গিয়েছে একঘন্টা ও হবে না পাগল মেয়ে বার বার ফোন দেওয়া শুরু করেছে।কল রিসিভ করতেই প্রিয়ুর আতঙ্ক কন্ঠ ভেসে আসল।ভয় পেয়ে গেলাম আমি।
—কি হয়েছে প্রিয়ু? নুসাইবা আপুর কিছু হয়নি তো?বেবী ঠিক আছে?
—ঠিক আছে।
—তাহলে এভাবে আতঙ্কিত হয়ে কথা বলছিস কেন?আংকেল আন্টির শরীর ভালো আছে?
—সবাই একদম ফিটফাট আছে।কিন্তু তুই কতক্ষণ ফিট থাকবি জানা নেই আমার।ভীষণ ভয় হচ্ছে শ্রেয়া।তোর কিছু হলে খুব কান্না পাবে আমার।
প্রিয়ুর আবোল তাবোল কথায় মেজাজ খারাপ হতে লাগল।বিরক্তির সুরে বললাম,,
—উল্টা পাল্টা কি বলছিস প্রিয়ু?আন্টি কি আজ তোকে মাইর দিসে নাকি কোনো আকাম করে এসে আমায় ব্যবহার করে আন্টি থেকে বাঁচার ফন্দি আঁটতে ফোন দিয়েছিস?
—-এমন কিছুই না।আমি খুব ভালো মেয়ে তুই ভালো করেই জানিস।প্রিয়ু কখনও কোনো দোষ করে না?(গর্বের সাথে)
—ওমা তাই নাকি?বাহ!!আপনি তো ভীষণ লক্ষী মেয়ে।
–হু।যেইটা বলার জন্য ফোন দিয়েছি শোন।(আতঙ্কিত কন্ঠে)
—আবারও আতঙ্ক কন্ঠ। আচ্ছা বল কি জন্য ফোন দিয়েছিস।
—তূর্য ভাইয়া তোকে ছাড়বে না শ্রেয়া।ওনার ক্ষমতা,,জেদ,,রাগ সম্পর্কে তোর কোনো আইডিয়া নেই। সবচেয়ে বড় কথা ভার্সিটির টিচার দের প্রিয় ছাত্র ওনি।
–কার প্রিয় অপ্রিয় এসব জানতে চাইছি আমি?(ধমক দিয়ে)আর তুর্য কে?ক্যাম্পাসের ওই বেয়াদব ছেলেটা?
–চুপ শ্রেয়া।আর এমন বলবি না।তোকে কিভাবে বাঁচাব ওই টেনশনে আছি আমি।
—যতই টপ সপ হোক বেয়াদব ছেলে ওনি।আর আমার জন্য টেনশন করতে হবে না তোর।ওনি বাঘ না ভালুক ও না।আজাইরা কথা বলার জন্য ফোন দিয়ে আমার সময় নষ্ট করছিস কেন?খেয়ে দেয়ে ঘুমাব আমি।ফোন রাখ।
—তুই তো কিছু জানিস না।আমাদের ডিপার্টমেন্টের মিহি থেকে খবর পেয়েছি আমরা চলে আসার পর তূর্য ভাইয়া রেগে মেগে ক্যান্টিনের দিকে এগিয়ে যায়।
—আবার ওই বেয়াদব, বদমেজাজী ছেলের নাম নিচ্ছিস?ফোন রাখছি।
—প্লিজ দোস্ত পুরো কথা শুন।আমি তো তোর ভালোই চাই তাই না কলিজা?
–হয়েছে এতো প্যাঁচাল না করে তাড়াতাড়ি বল প্লিজ।
—ক্যান্টিন থেকে মোটা একটা লাঠি এনে তুর্য ভাইয়া নিজের পুরো গাড়ির কাঁচ ভেঙে ফেলেছে।কারণ তুই ওনার গাড়িতে ছুয়েছিস। তাই রাগে জিদে নিজের গাড়ি নিজেই নষ্ট করেছেন। সবার সামনে নাকি চিল্লিয়ে বলেছেন ওই মেয়েকে কিছুতেই ছাড়ব না আমি।এমন শিক্ষা দিব আমার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবে আকুতি মিনতি করবে।ওনার কথায় সবাই কেঁপে উঠেছেন।আমারও শরীর কাঁপছে এই কথা শুনে।কি দরকার ছিল শ্রেয়া ওনার সাথে তর্কে জড়ানোর? ওনার কথা মেনে চলে সবাই ক্যাম্পাসে।আমার তো ভয় করছে তোকে ক্যাম্পাস থেকে যদি বের করে দেয়!
প্রিয়ুর কথা শুনে সাথে সাথে ফোনটা কেটে দিলাম আমি।একটা মানুষ এতো খারাপ কি করে হতে পারে?এতো অহংকার ওনার?ওনাকে ভয় পাচ্ছি না আমি।ভয় হচ্ছে যদি আমায় ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়!পড়ালেখা টা চালিয়ে যাওয়া অনেক জরুরি আমার জীবনে বাঁচতে হলে।নতুন কোনো ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা আমার নেই। প্রিয়ুর বাবার আর্থিক সাহায্যে ভর্তি হয়েছি এই ভার্সিটিতে।বই টুকু কেনার ও সাধ্য নেই আমার প্রিয়ুর থেকে বই এনে নোট করে পড়ি।এই মুহূর্তে বের করে দিলে কি করব আমি।হাঁটু ভেঙে বসে পড়লাম নিচে পাতানো বিছানায়।ভার্সিটিতে পড়তে হলে নিজের এই অসহায় পরিস্থিতির জন্য নিজের কাছেই হেরে যেতে হবে আমার।প্রিয়ু ঠিকি বলে-যখন প্রতিবাদ করার প্রয়োজন হয় তখন করি না অযথা কারণে যায় প্রতিবাদ করতে।একের পর এক ঝামেলায় পড়ছিস তো শ্রেয়া।আবারও লড়তে হবে তোকে,,তবে এবার নিজের মাথাটা নিচু করে।
।
।
টিউশনি শেষ করে বাসায় যাচ্ছি। রিকশা নেই নি বলে হেঁটে যেতে অনেকটাই দেরি হয়ে যাচ্ছে। প্রায় আট টা বেজে গেছে।ল্যাম্পপোস্টের আলোয় কিছুটা ভয় নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমি।প্রতিদিনই ভয়ে থাকি।তবে কেন জানিনা আজ ভীষণ ভয় লাগছে।হঠাৎ মনে হল আমার পিছু পিছু কেউ আসছে।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি একটা ছেলে আমার পিছু নিচ্ছে।ছেলেটার চেহারা মৃদ্যু আলোতে তেমন বুঝা যাচ্ছে না।বুকটা ধুক করে উঠল আমার।যতই বলি আমি নিজেকে নিজে ঠিক প্রটেক্ট করতে পারব তবু্ও একজন ছেলের শক্তির কাছে আমার শক্তি কিছুই না।কাঁপা কাঁপা হাতে হাতরিয়ে ব্যাগ থেকে পেপার স্প্রে টা নিলাম।কাছে আসলেই চোখ বরাবর স্প্রে করে দিব।নিজের সেফটির জন্যই এটা রাখা।তাড়াতাড়ি করে পা চালাতে লাগলাম।ছেলেটাও পা চালিয়ে কাছে আসতেই তাড়াতাড়ি করে স্প্রে করতে যাবো তার আগেই ছেলেটা চেচিয়ে উঠল—-হেই স্টপ।ডোন্ট ডু দিস জেরি।
জেরি ডাকে চমকে উঠলাম আমি।কে জেরি? ছেলেটা পাগল নয়তো?এখানে কোনো আলো ও নেই। মোবাইলের ফ্লাশ অন করল ছেলেটা।আলোতে ছেলেটার চেহারা ভেসে উঠতেই বলে উঠলাম—আপনি?আপনি তো ঐ বেয়াদব তূর্য চৌধুরীর বন্ধু তাই না?আজ ক্যাম্পাসে তার সাথে দেখেছিলাম আপনাকে।
ফিক করে হেসে দিল আয়ুশ।শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,
–জ্বী জেরি সাহেবা আমি ওই বেয়াদব তূর্যর শুধু ফ্রেন্ড না বেস্ট ফ্রেন্ড।আমি আয়ুশ। আর তুর্য খুব বেয়াদব তাই না?
জেরি কেন ডাকছে বার বার লোকটা।পাগল নাকি?তুই ও তো পাগল শ্রেয়া। এই লোকটা ঐ বেয়াদব তুর্য ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড আর তার কাছে তুর্যর ব্যাপারে বদনামি করে একদমই নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা যাবে না।তাই ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
—আপনি আমায় জেরি কেন ডাকছেন?অদ্ভুত আমার নাম শ্রেয়সী।শ্রেয়সী উচ্চারণ করতে না পারলে শ্রেয়া বলে ডাকবেন।
কথাটা বলে সামনের দিকে হাঁটা ধরলাম আমি।লোকটা কে খারাপ মনে হচ্ছে না।তবুও সাবধানের মাইর নাই তাই সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম।
—তুমি ছোটবেলায় টম এন্ড জেরি কার্টুন দেখতে?টম এন্ড জেরি কার্টুনে যেমন সারাক্ষণ ওরা জগড়া লেগেই থাকতো সকালে তূর্য আর তুমি যখন জগড়া করছিলে তোমাদের দু’জনের জগড়া টাও ঠিক ওদের মতো লেগেছে।আমি তো বেশ উপভোগ করেছি।তূর্য যদি রাগ না করতো তবে আমি তাকে টম বলে ডাকতাম।(হেসে)
–তাই বলে আপনি আমায় জেরি ডাকবেন?(ওনার দিকে তাকিয়ে)
–অবশ্যই।বাই দ্যা ওয়ে তূর্যর ওমন ব্যবহারের জন্য দুঃখিত।কিন্তু তূর্য অনেক ভালো মনের একটা মানুষ। তুমি,,,
ওনাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বলে উঠলাম–হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না ওনার কথা।ওনার এতো গুণগান দিয়ে আমি কি করব? আপনি আমার পিছু পিছু কেন আসছেন?আপনি কি আমায় ফলো করছিলেন?
–একদম না।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম রাস্তার মোড়ে।তূর্য ও ছিল।তখনই দেখলাম গলি থেকে বের হয়ে আসছো তুমি।আর কিছু ছেলে কু-দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তোমার দিকে।তাই ভাবলাম পিছু পিছু গিয়ে তোমায় একটু এগিয়ে দিয়ে আসি।শত হোক আমাদের ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট তুমি।সিনিয়র হিসেবে এতটুকু তো করতেই পারি আমি।(হেসে)
–ধন্যবাদ। সামনেই আমার বাসা।ভালো থাকবেন ভাইয়া।
কথাটা বলে দ্রুত পা চালিয়ে চলে আসলাম আমি।উপর দিয়ে যতই কঠোরতা দেখাই না কেন ভালোই হয়েছে ওনি এগিয়ে দিয়েছেন।
———————–
ক্লাসে বসে আছি।স্যার এই মাত্র বের হয়ে গেলেন।আমার পাশে বসে ঠকঠক করে কাঁপছে প্রিয়ু। এই মেয়ে কে দেখে যে কারোই মনে হবে বর্ষার মৌসুমেই শীতের আগমন ঘটেছে। বিরক্তি নিয়ে পাশ ফিরে প্রিয়ুর দিকে তাকালাম আমি।
–কি রে?শীত কি বেশি লাগছে?কম্বল দিব একটা?
–তুই মজা করছিস?আমি তোর জন্য টেনশনে শেষ আর তুই মজা করছিস?যা কোনো কথা বলব না তোর সাথে।
–রিলেক্স প্রিয়ু।এতো টেনশন করার কিছুই নেই। যা হবে পরে দেখা যাবে।এখন অন্তত ক্লাসে মনোযোগ দে।স্যার ঢুকেছে ক্লাসে।
–তুই তূর্য ভাইয়াকে সরি বলে দে।দেখিস ওনি মাফ করলেও করতে পারে।
—হুম বলব।আমি অনেক ভেবেছি ওনি যেমনই হোক আমাদের সিনিয়র তো।ওমন ব্যবহার করা উচিত হয়নি।তাই সরি চেয়ে সব মিটমাট করে ফেলব।তোর আর কাঁপতে হবে না।
।
।
ক্লাস শেষে অডিটোরিয়াম রুমের সামনে এসে দাঁড়ালাম আমরা।ভিতর থেকে কারো সুরেলা কন্ঠ ভেসে আসছে।খুবি সুন্দর ভয়েস।” আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাই তোকে” গানটা গাইছে।দরজার কাছে দাড়িয়ে পুরোটা গান শুনলাম আমি আর প্রিয়ু।হয়তো নবীন বরণ অনুষ্ঠানের জন্য প্রেকটিস করছে।মিহির কাছে জেনে আসলাম তূর্য ভাইয়াকে এখানে পাওয়া যাবে।মিহি মেয়েটাকে ইনফর্মার বললে ভুল হবে না।সব নিউজ পাওয়া যায় তার কাছে।সেই কারণেই এখানে আসা।দরজা থেকে উঁকি দিয়ে দেখলাম তূর্য ভাইয়ার হাতে গিটার।তার মানে এই বদমেজাজি লোকটাই এতো সুন্দর করে গাইছিলেন।থাক এতো ভেবে লাভ নেই যা করতে আসছি তাই করে যাই।দরজার আড়াল থেকে ধীরে ধীরে ভিতরে ঢুকলাম আমি।আমার পেছনে প্রিয়ু এখনও কেঁপে যাচ্ছে। মন চাইছে এই মেয়েকে উগান্ডা পাঠিয়ে দেই।একটা মানুষ এতো ভীতু কি করে হতে পারে?কই অন্য সময় তো বাঘিনী হয়ে উঠে।
।
ভিতরে ঢুকে দেখলাম আয়ুশ ভাইয়া,,তূর্য ভাইয়া,,কালকের বাকি দুটো ছেলে আর দুটো মেয়ে ও আছে।হয়তো মেয়ে দুটো ও তাদের ফ্রেন্ড। শ্রেয়া কে দেখেই গিটার টা রেখে উঠে দাঁড়াল তূর্য।রাগী কন্ঠে বলে উঠল-স্টপ দেয়ার।
–সরররি,,,
—হোয়াট?(ভ্রু কুঁচকে)
আমি এক নিঃশ্বাসে বললাম,,–কালকের জন্য সরি ভাইয়া।আমি একদম বুঝতে পারি নি।আমার জন্য এই ভার্সিটিতে পড়া খুব জরুরি। প্লিজ স্যারদের কাছে নালিশ করে আমায় বের করে দেবেন না।প্লিজ।
শ্রেয়ার এভাবে এক নাগাড়ে কথা বলায় হেসে দিল বাকি সবাই।মুচকি হাসল আয়ুশ।এগিয়ে এসে বলল —ইটস ওকে জেরি।তূর্য কিছু করবে না।
স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললাম আমি।পিছন ফিরে চলে যাব বাঁকা হেসে বলে উঠল তূর্য,,,—ইটস নট ওকে আয়ুশ।
ওনার কথায় থমকে গেলাম আমরা দু’জনে। প্রিয়ুর কাঁপুনি দ্বিগুণ বেরে গেল।তূর্য ভাইয়ার দিকে তাকালাম আমি।থমকে গেলাম আবারও তার দিকে তাকিয়ে। কালো টি শার্ট আর কালো জ্যাকেটে তার সৌন্দর্য কালকের থেকেও আরো বেশি বেড়ে গেছে।তাড়াতাড়ি করে মাথা নত করে ফেললাম।
শ্রেয়ার থেকে কিছুটা দূরে এসে দাঁড়াল তূর্য।মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,,–আমি কি তোমাকে ক্ষমা করেছি?
–ক্ষমা চেয়েছি তো ভাইয়া।(মাথা নিচু করে বললাম)
–ক্ষমা চাইলেই কি ক্ষমা পাওয়া যায়?(হেসে)
–ক্ষমা করা মহৎ গুণ ভাইয়া।
—ওহ তাই নাকি?এতো গুণ দিয়ে কি করব বলো?তবে তোমায় ক্ষমা করতে পারি এক শর্তে?
পাশ থেকে আয়ুশ ভাইয়া বলল–থাক না তূর্য।
—কেন থাকবে?আর তুই এতো দরদ দেখাচ্ছিস কেন এই মেয়ের জন্য? এই মেয়ে সিনিয়র দের রেসপেক্ট পর্যন্ত করতে পারে না।
—ছোট মানুষ।বাদ দে,,,
—আমার ব্যাপারটা আমায় হ্যান্ডেল করতে দে আয়ুশ।
তূর্যর কথায় চুপ হয়ে গেল আয়ুশ ভাইয়া।আমি মাথা তুলে বললাম–কি শর্ত ভাইয়া?আমি আপনার যেকোনো শর্তে রাজি।
—নিশি এই মেয়ের নামটা তুল লিস্টে নাচে পার্টিসিপেট করার জন্য।
তূর্য ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম আমি।এটা কেমন শর্ত?ক্ষমা পাওয়ার জন্য নাচতে হবে?অসম্ভব। মুখটা মলিন হয়ে এল শ্রেয়ার।সে খুব ভালো নাচে তবে জীবনের এমন এক পরিস্থিতিতে নাচা তার পক্ষে সম্ভব না।বেশ বুঝতে পেরেছি নাচ গান এইসবে আমি রাজি হব না।তাই ইচ্ছে করেই শাস্তি দেওয়ার জন্য এমন এক শর্ত দিলেন ওনি।
আমি করুন চোখে তাকাতেই তিনি হাসি দিয়ে বলে উঠলেন—
–শর্ত মানলেই ক্ষমা একসেপ্ট করা হবে।নয়তো জানো তো কি হবে???নাও ডিসিশন ইজ ইউরস।
কথাটা বলেই বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে গেলেন ওনি।সাথে বাকি সবাই ও।আমি এখনো থম মেরে দাড়িয়ে রইলাম।খারাপ কি আর সাধে বলি,,,!!!
চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)
#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -৩
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা
ভার্সিটির মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি আমি।সকালের মিষ্টি রোদ এসে লাগছে চোখে মুখে। কিন্তু শাড়ি নিয়ে এই রোদে দাঁড়িয়ে থাকা খুবি বিরক্তির ব্যাপার।তার উপর চারদিকে মানুষের ছড়াছড়ি। আজ আমাদের নবীবরণ। প্রিয়ু মেয়েটা এতো জেদী যে শেষ পর্যন্ত আমায় শাড়ি পরিয়েই ছাড়ল। সাদার মধ্যে লাল পাড়ের একটা শাড়ি নিয়ে সকাল বেলা আমার বাসায় হাজির হয়েছে মহারানী। হাজার বার না করেও শেষ পর্যন্ত প্রিয়ু ও রীতি আপুর জেদের কাছে হার মানলাম আমি।নিজে সুখে না থাকি কিন্তু অন্য মানুষের মুখে তো একটু হলেও হাসি ফোটাতে পারি।আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দুজন এমন ভাব করেছিল যেন অসাধ্য সাধন করে ফেলেছিলেন। দুজনের আনন্দিত ফেস টা মনে পড়তেই ভালো লাগা ছেয়ে যাচ্ছে এখনো। কাছের মানুষগুলো সবসময় ভালো থাকুক এটাই চাওয়া আল্লাহর কাছে।
না আর দাড়িয়ে থাকা সম্ভব না।রোদ টা কেও এই মুহুর্তে মিষ্টি লাগছে না।শাড়িটা ধরে নরম ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে এগিয়ে গেলাম কিছুটা দূরে থাকা শিউলি ফুল গাছটার নিচে।গাছের ছায়ায় দাড়িয়ে চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম কিছু ছেলেমেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।হাসার কারণ অবশ্যই আছে।নিজের পায়ের দিকে তাকালাম আমি।খালি পায়ে থাকা কি হাস্যকর?মানুষ কি সারাজীবন জুতা পায়ে দিয়েই থাকে?খালি পায়ে দেখলে কি কাউকে অন্য গ্রহের প্রাণী মনে হয় যে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে?
কিছুক্ষণ আগে,,
মাঠের মাঝখানে এসে এক পায়ের জুতা ছিঁড়ে যায় আমার।খালি পায়ে দেখলে তো বাঙালি হাসবে আর সারাক্ষণ খালি পায়ে থাকা সম্ভব না। এখন কি করব বলতেই প্রিয়ু বলে উঠল,,
—দোস্ত এক কাজ করি আলতা নিয়ে আসি।সাদা লাল পাড়ের শাড়ির সাথে লাল আলতা বেশ মানাবে।
প্রিয়ুর এমন উদ্ভট কথায় অবাক হলাম আমি।কি বলছে কি এই মেয়ে?
–পাগল হয়েছিস তুই?আমার জুতা ছিঁড়ে গেছে আর তুই আলতার কথা বলছিস?কিসের সাথে কি মেলাচ্ছিস?আন্টি যে বলে তোর মাথা খারাপ একদম ঠিকি বলে।
— অনুষ্ঠান শুরু হতে তো আরো কিছু সময় বাকি আছে।দোস্ত তুই পাঁচ মিনিট দাঁড়া আমি দশ মিনিটে আসছি।
কথাটা বলেই প্রিয়ু তার শাড়ি আঁকড়ে ধরে কিছুটা দৌড়ের মতো করে চলে গেল।উফ পাগল মনে হয় এই মেয়ে।কি করব এখন আমি?একটু দাঁড়াই দেখি আসে কিনা।
।
।
গাছের ছায়ায় ভালোই লাগছে।কিছুটা বাতাস এসে গা ছুয়ে যাচ্ছে। খোলা চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে আছে।এতে কিছুটা গরম অনুভব হচ্ছে। এইসব প্রিয়ুর কান্ড। মেয়েটা চুলগুলো পর্যন্ত বাঁধতে দিল না।দৌড়ে এসে প্রিয়ু আমার পাশে দাঁড়াল। হাতে শপিং ব্যাগ। খুব অবাক হলাম আমি।
—কী রে হাতে কি?
—তোর জুতো।
–আমার জুতো মানে?
–আরে তোর জন্য জুতো এনেছি।কিছুটা দূরেই তো একটা শপিং মল আছে।ওইখান থেকে কিনে নিয়ে আসলাম।সারাদিন তো জুতা ছাড়া হাঁটা পসিবল না।
–তুই কেন আবার কিনতে গিয়েছিস?বাসায় তো একজোড়া জুতা আছে প্রিয়ু।
–কি সারাদিন তুই জুতা ছাড়া থাকবি?নো নেবার। প্রিয়ুর কলিজার দোস্ত জুতা ছাড়া হাটবে আর প্রিয়ু জুতা পড়ে হাঁটবে হতেই পারে না।
প্রিয়ুর কথায় ফিক করে হেসে দিলাম আমি।মেয়েটা মানুষ কে হাসানোর জন্য পটু।
–দে জুতা দে। এখানে দাড়িয়ে থাকব নাকি?শাড়িতে গরমে খারাপ লাগছে।
জুতাগুলো পরে সামনের দিকে যাবো প্রিয়ু পিছন থেকে ডেকে উঠল।
–আবার কি হয়েছে প্রিয়ু?
–আলতা এনেছি দোস্ত।(দাঁত কেলিয়ে)
প্রিয়ুর কথায় অবাক হলাম আমি।
–এখন আলতা পড়ার সময়?আর মাঠের মাঝখানে আলতা পড়ব আমি?
–মাঝখানে কেন পড়বি?ওই যে বেঞ্চ টা দেখা যাচ্ছে ওইখানে বসে ঝটপট লাগিয়ে নিবি।(হাত দিয়ে দেখিয়ে)
—ঠিক আছে চল।
।
।
বেঞ্চিতে পা উঠিয়ে বসতেই প্রিয়ু খুব সুন্দর করে আলতা লাগিয়ে দিল আমার এক পায়ে।
—বাহ্ আলতা রাঙা পা খুব সুন্দর লাগছে তো।
–আপনি দিয়ে দিচ্ছেন ম্যাডাম সুন্দর তো হবেই।
–অন্য পা টা এগিয়ে দিন।
।
।
“ইউনিভার্সিটি আজকাল আলতা লাগানোর জায়গাতে পরিণত হয়ে গেল।”
কথাটা শুনেই মাথা তুলে তাকালাম আমি আর প্রিয়ু।তূর্য,আয়ুশ,নিশি আপু,,মিথি আপু,ফুহাদ ভাইয়া দাঁড়িয়ে। ঠেস মারা কথাটা শুনে আমার আর বুঝার বাকি রইল না যে বদমেজাজী তূর্য ভাইয়া ছাড়া এই কথাটা আর কেউ বলতেই পারে না।পা টা বেঞ্চ থেকে নামিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি।আমার পাশাপাশি প্রিয়ু ও দাড়িয়ে পড়ল।আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে তূর্য ভাইয়া। এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন তিনি?আবার অন্য কোনো ফন্দি আঁটছে নাতো?এমনিতেই তিনদিন ধরে ডান্স প্রেকটিস করতে করতে আমি শেষ।চোখ তুলে ওনার দিকে তাকালাম ।এখনো তার দৃষ্টি আমার দিকে।কালো একটা পাঞ্জাবি পড়ে এসেছেন তিনি।পাঞ্জাবি তে খুব সুন্দর লাগছে অহংকারী তূর্য সাহেবকে।ওনার বাঁকা কথায় ওনার দিক থেকে চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।
–শুধু আলতা পড়ে ছেলেদের দেখিয়ে হেঁটে বেড়ালে হবে নাকি ডান্স ও শিখেছ মিস শ্রেয়সী ? ইউ নো না আজ নাচ না করলে কী কী হতে পারে?(হেঁসে)
চোখ দুটো ছলছল করে উঠল আমার।মিথ্যা অপবাদ দিলেন ওনি আমায়।স্কুল,,কলেজ জীবন পার করে আসলাম কিন্তু কখনও একটা ছেলে ফ্রেন্ড ও বানায় নি।এতো সুন্দর একটা মানুষের মন চিন্তা ভাবনা এমন কেন?আর এসব ভেবে লাভ নেই। যে যেমন তেমনই তো করবে।আজ নাচ করে নিজেকে ওনার কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারলেই হলো।আর কখনো ভুলেও এদের সামনে পড়ব না।
—জ্বী ভাইয়া শিখেছি।আর আজ আমি অবশ্যই নাচব।
কথাটা বলে ওনার সামনে থেকে চলে আসব তখনি আয়ুশ ভাইয়ার ডাকে থেমে গেলাম।হেসে আমার দিকে এগিয়ে এল আয়ুশ ভাইয়া।নীল পাঞ্জাবি তে তাকেও বেশ ভালো লাগছে।পাশ থেকে প্রিয়ু খামচে ধরল আমার হাত।এই মেয়ের আবার কি হল?এই মেয়ের মতিগতি বুঝা বড় দায়।
—জেরি ইউ আর লুকিং সো পিটি।সাদা তে তোমায় খুব সুন্দর লাগে।
—ধন্যবাদ ভাইয়া।আপনাকেও ভালো লাগছে।–হেসে বললাম।
।
।
অনুষ্ঠানে যেখানে হচ্ছে সেখানে এসে উপাস্থিত হলাম আমি ও প্রিয়ু।চেয়ারে বসতেই পাশ থেকে ফিহা বলে উঠল,,দেখ না আজকাল মানুষ বিধবা হয়ে ও লাজ লজ্জা ভুলে সেজে বেড়ায়।প্রিয়ু চিল্লিয়ে বলল,,–তোমার এতো চুলকানি হলে চোখ বন্ধ করে রাখো।
—ইউ ইডিয়ট গার্ল।
—তুমি মনে হয় খুব সভ্য মাইয়া তাই না চুলকানি আপা?
প্রিয়ুর হাতটা চেপে ধরে বললাম,,–প্লিজ প্রিয়ু এখানে জগড়া লাগিস না।আমি কিন্তু এমন করলে চলে যাবো।
থেমে গেল প্রিয়ু।আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,–আচ্ছা দোস্ত আমাকে কেমন লাগছে?
–একদম নীলপরী লাগছে তোকে প্রিয়ু বেবী।
–সত্যি বলছিস?
–একদম।
–তাহলে আরেকটা সত্যি কথা বলবি?
প্রিয়ুর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি।
–কেমন সত্যি কথা?
–তোর পায়ে এখনো ঐ পায়েল টা কেন শ্রেয়া?
চমকে উঠলাম আমি।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,,
–কোন পায়েল টা প্রিয়ু?
–ঐ পায়েল টা যে তোর অচে,,,,
প্রিয়ুর মুখে হাত দিয়ে আটকে দিলাম আমি।কোনো কিছুই আর শুনতে চাই না অতীতের কথা।এখনো মাঝ রাতে মনটা বড্ড কেঁপে উঠে। সেই মায়াভরা কথাগুলো মনে পড়ে যায়।মনে পড়ে যায় সেই অসম্পূর্ণ স্মৃতি গুলো।যা স্মৃতির পাতায় কখনও সম্পূর্ণ হয়ে ভেসে উঠে নি।
—এখন এসব বলার সময় না প্রিয়ু।অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।অতীত তো অতীতই।আর এইসব ঘাঁটার কোনো প্রয়োজন নেই।
—তবে যাই বলিস শ্রেয়া আমার বড্ড ইচ্ছা একবার তাঁকে দেখার।আচ্ছা তোর ইচ্ছে করে না?যেই ব্যাক্তি এতো সুন্দর পায়েল দিতে পারে না জানি সে কতো সুন্দর হবে।
প্রিয়ুর কথায় বুকটা ধুক করে উঠল আমার।মনে অশান্তির ঝড় বয়ে যেতে লাগল।না আর কোনো ভাবেই সেই অতীত মনে করতে চাই না।স্মৃতির পাতায় থাকুক সে।বাস্তবে যেন আর কখনও দেখা নাহয় তার সাথে।
—আবার শুরু করেছিস? আমি কিন্তু চলে যাবো।
–আচ্ছা সরি সরি।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল।উপস্থাপন করছেন আয়ুশ ভাইয়া।কিছু কিছু মেয়ে তার দিকে চোখ বড় বড় করে চেয়ে রয়েছে। সিনিয়র আপুরা ফুল দিয়ে বরণ করে নিলেন আমাদের।একের পর এক বক্তব্য দেওয়া শেষ।এবার শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সবাই খুব ভালো গাইছেন।তূর্য চৌধুরীর নাম এনাউন্সমেন্ট করতেই সব মেয়েরা নিজেদের মেকআপ ঠিক করতে লাগল।মনে হয় কোনো রকস্টার আসছে।উফফ ঢং দেখলে বাঁচি না।অ্যাটিটিউড নিয়ে স্টেজে এলেন তিনি।মুচকি হেসে সবাইকে রিলেক্স হতে বললেন।
—রিলেক্স গাইস।আজকের গানটা খুব স্পেশাল। আশা করি সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনবেন।দিস সং ইজ ডেডিকেট ফর সামওয়ান।
একজন চিল্লিয়ে বলে উঠলেন–সেই মানুষ টা কে ভাইয়া?
তিনি মুচকি হেসে জবাব দিলেন–হয়তো এখানে উপস্থিত কেউ।
ওনার কথায় হাত তালি দিলেন সবাই।বাহ্!ওনার আবার বিশেষ কেউ আছে!যেই মেয়েই ওনার বিশেষ কেউ নিশ্চিত কপাল পুড়েছে তার।হঠাৎ -ই আমার দিকে তাকিয়ে তিনি গাইতে শুরু করলেন,,,
“কি করে তোকে রাখব ধরে বল না তুই আমায়
কত ভালোবাসা কত সুখে ভাসা কেন সবই বদলে যায়
ওও কি করে তোকে রাখব ধরে বল না তুই আমায়
ওও কত ভালোবাসা কত সুখে ভাসা কেন বদলে যায়
এক অচেনা ঝড়ে সব ভেঙে পড়ে বরবাদ হয়ে যায় মন
কেমন করে বল থাকবি দূরে হৃদয়ে তুই সারাক্ষণ
ওও কেমন করে বল থাকবি দূরে হৃদয়ে তুই সারাক্ষণ,,,,
পুরোটা গান গাওয়ার সময় ওনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে।ওনার এই মোহময় দৃষ্টিতে কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছি আমি।এ কোন তূর্য?অন্যরকম লাগছে ওনাকে।মনে হচ্ছিল গানটা আমার জন্যই গাওয়া।এতো সুন্দর গান ওনি।সবার করতালিতে সম্মতি ফিরে আসল আমার।পাগল হয়ে গেছি আমি।ওনি কেন আমার জন্য গাইতে যাবেন।ওনি তো ওনার স্পেশাল মানুষটার জন্য গেয়েছেন।এখন নাচের পালা।পাঁচ নম্বরে আমার সিরিয়াল আসবে।তিনটা নাচ শেষ। শাড়ি টা কেমন যেন লাগছে।নাচের আগে একবার ঠিক করে নিলেই ভালো হবে।প্রিয়ু কে জানিয়ে পা বাড়ালাম ক্লাস রুমের দিকে।আচমকা আমার হাত ধরে খুব শক্ত করে টান দিল কেউ। আমি হুমড়ি খেয়ে পড়তে গিয়েও বেঁচে গেলাম।রুমটা পুরো অন্ধকার। মনে হচ্ছে বহুদিন দরজা জানালা কিছুই খোলা হয় না।বাহিরের ঝাপ্সা আলোয় পিছন ফিরে দেখতে যাব তার আগেই পিছন থেকে আমার চোখ দুটো বেঁধে দিল কেউ। হাত দিয়ে সরাতে যাব পিছন থেকে হাত দুটো মুচড়ে ধরে দেয়ালে ঠেসে দাঁড় করাল আমায়।হাতের ব্যাথায় মৃদু আওয়াজ করে উঠলাম ।ভয় হচ্ছে খুব বেশি।কাঁপা কাঁপা স্বরে প্রশ্ন করলাম,,,
–কককককে আপনি?
তখনি আমার কানের কাছে লো ভয়েসে কেউ বলে উঠল-হুশশশ,,একদম চুপ।
হৃদপিণ্ড প্রচন্ড বেগে স্পন্দিত হতে লাগল।মানুষ টা আমার একদম কাছে উপলব্ধি করতে পারছি আমি।তার স্লো ভয়েসে সারা শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আবারও কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন,,,,
—শাড়ি ঠিক করে পরতে পারো না শুভ্রপরী?পরতেই যখন পার না তাহলে শরীরে শাড়ি রাখার কি দরকার।খুলেই ফেলি।
আঁতকে উঠলাম আমি।সত্যিই আবার খুলে ফেলবে নাতো?অনেক কষ্টে বললাম,,,
—প্লিজ শাড়ি,,,
ঠোঁট দুটো তে কারো স্পর্শ পেয়েই কেঁপে উঠলাম।অসমাপ্ত রয়ে গেল মুখের কথা।স্পর্শ আস্তে আস্তে গভীর হতে লাগল।ঠোঁট দুটো সামনে উপস্থিত থাকা মানুষটা দখল করে নিল।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি বারবার কিন্তু বরাবরই ব্যার্থ হচ্ছি।ঠোঁটে ওনার ছোয়া বেড়েই চলছে।আমার দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।কে এমন করছে আমার সাথে?সাথেই সাথেই কোমড়ে স্পর্শ পেলাম ঐ মানুষটার।এতো জোরে খামচে ধরেছে মনে হচ্ছে নখ বিঁধে যাচ্ছে। ঠোঁট সরিয়ে গলায় মুখ ডুবাল লোকটা।ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছি আমি।সেই মানুষটার গরম উত্তপ্ত নিশ্বাস ও গলায় পড়ছে।কোমড়ের অসহ্য যন্ত্রণায় চোখের জল ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে।বাহির থেকে ভেসে আসছে আমার নাম নাচের জন্য।
–তুমি নাচবে না শুভ্রপরী।কারো নজরই তোমার উপর পড়তে দিব না আমি।কতো বড় সাহস তোমার কোমর দেখিয়ে শাড়ি পড়েছিলে একদম মেরে ফেলব তোমায়।কোমড়ের এই অসহ্য যন্ত্রণা টা তোমার শাস্তি। পরের বার শাস্তি টা হয়তো আরো কঠোর হবে।
কানের কাছে স্লো ভয়েসে কথাগুলো বললেন অচেনা মানুষটা। মুখের কাছে আর কারো গরম নিশ্বাস এসে পড়ছে না। হঠাৎ -ই অনুভব করলাম আর কারো অস্তিত্ব টের পাচ্ছি না।বাধন খুলে চোখ মেলে সামনে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই। হাঁটু ভেঙে ফ্লোরে বসে পড়লাম আমি।হৃদপিণ্ডে ঝড় এখনো বয়ে যেতে লাগল।অসহায় লাগছে নিজেকে অনেক।চোখের সামনে ভেসে উঠল পুরোনো সেই স্মৃতি,,,
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)