তোমাতেই পূর্ণ আমি #পর্ব -২৯ শেষ

0
988

#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -২৯ শেষ
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা

অনেক কষ্টে নিজের চোখ দুটো মেলে তাকালাম আমি। চোখের সামনে আবিষ্কার করলাম তূর্যর লালচে বর্ণের দুটো চোখ। লাফিয়ে উঠলাম আমি। তূর্য জরিয়ে নিল আমাকে অতি যত্নে। রুমের চারদিকে তাকাতেই চোখে পড়ল প্রিয়ু ও আয়ুশ ভাইয়া কে। তূর্যর বুক থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসলাম আমি। আয়ুশ ভাইয়া ও প্রিয়ু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,,,

—ঠিক আছো জেরি?

—ঠিক আছি ভাইয়া।

ভয়ার্ত চোখে তূর্যর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,,,

–ঐ ছেলেটা?

হাসল আয়ুশ ভাইয়া। তূর্যর দিকে এক পলক চেয়ে বলল,,

–ছেলেটা কে হসপিটালে পাঠানো হয়েছে।

–হসপিটালে কেন?

–তোমার স্বামী এমন মার মেরেছে হসপিটালে এডমিট করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

তূর্যর দিকে তাকাতেই দেখলাম ওনি একদম চুপ করে বসে আছেন। নরম স্বরে প্রিয়ুর উদ্দেশ্যে বললাম,,

–আমার জন্য তোদের হলুদ অনুষ্ঠান নষ্ট হলো। আমাকে ক্ষমা করে দিস প্রিয়ু।

–তোর চেয়ে বড় আমার কাছে আর কিছুই না শ্রেয়া। তুই ঠিক আছিস তো সব ঠিক আছে। অনুষ্ঠান তো এখনও শেষ হয় নি। অপেক্ষায় আছি তোর। তাড়াতাড়ি বাহিরে আয় প্লিজ।

–প্রিয়ু ঠিক বলেছে জেরি। আমরা গেলাম। তূর্য কে নিয়ে বাহিরে এসো।


সবাই যেতেই উঠে দাঁড়াল তূর্য। ওনার হাত টা টেনে ধরলাম আমি। মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।হাত টা ছাড়িয়ে খাটে বসে পড়লেন। মাথার চুল গুলো টেনে পিছনে ঠেলে দিয়ে নিজের রাগ কিছুটা দমিয়ে নিলেন। কিন্তু রাগ কেন করছেন সেটাই তো মাথায় ঢুকছে না আমার।কঠিন গলায় বলে উঠলেন,,,

–কি হতো নিজের আত্মরক্ষার জন্য একটা স্টেপ নিলে? আজ আমি না আসলে খুব খারাপ কিছু হতে পারত তোমার সাথে। লড়াই না করে থরথর করে কাঁপছিলে তুমি। এভাবে টিকে থাকবে পৃথিবীতে?কখনও যদি আমি না থাকি তাহলে কিভাবে রক্ষা করবে নিজেকে?

তূর্যর কথা শুনে অন্তর মোচড় দিয়ে উঠল। তাড়াতাড়ি করে তূর্যর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম আমি। চমকে উঠলেন তূর্য। আমাকে তুলতে নিলে বাঁধা দিলাম ওনাকে। ওনার হাঁটুর উপর মাথা রেখে বললাম,,,

–কখনও যদি আপনি হারিয়ে যান তবে আমার একটাই আবেদন তূর্য আমাকে সঙ্গে নিয়ে হারাবেন। আপনার শুভ্রপরীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হবে, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে, জীবন্ত লাশ হয়ে যাবে আপনাকে ছাড়া। জীবন টা অমানিশা তে ডুবে ছিল। আপনি আলোর প্রদীপ হয়ে এক ঝাঁক আলো ঢেলে দিয়েছেন জীবনে। আমি আর অন্ধকারে ডুবতে চাই না তূর্য। আমি আলোর সন্ধানী হয়ে বাঁচতে চাই আমার চিরকুট লেখকের সাথে। আপনার সাথে। আমি তখন খুব বেশি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।

ফ্লোর থেকে তুলে আমাকে দাঁড় করালেন তূর্য। একটু দূরে সরে চোখ বুলালেন উপর থেকে নিচ পর্যন্ত।তূর্যর এমন চাহনি ভীষণ অস্বস্তিতে ফেলে দিল আমাকে। তূর্য কাছে এগিয়ে আসতেই মাথা নিচু করে ফেললাম আমি। ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলেন তূর্য,,,

–শাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে বউ। কোমর টা দৃশ্যমান। আমাকে সম্মোহিত করে নিজেই লজ্জা পাবে এটা কেমন কথা বলো?আর লজ্জা পাওয়ার মত তো কিছুই করি নি এখনও।

কথাটা বলেই কোমরে নিজের ঠান্ডা হাত ছুঁয়ে দিলেন তূর্য। শিউরে উঠল সারা শরীর। শাড়ির এক পাশে খামচে ধরে ঠাঁই দাড়িয়ে রইলাম আমি। কোমরে হাতের বিচরণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে নিশ্বাসের উত্তাপ যার ফলে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। গলায় মুখ ডুবাতেই দুচোখ বন্ধ হয়ে এল আবেশে। মুচকি হেসে তূর্য দৃষ্টি নিবদ্ধ করল শ্রেয়ার বন্ধ চোখের পাতায়। নরম ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে দিল দু চোখের পাতায়। দু কদম সরে এসে বলল,,,

–এখন রোমান্স করতে গেলে তোমার বান্ধবীর গায়ে হলুদ মাটি হয়ে যাবে বউ।

তূর্যর কথা শুনে লজ্জায় আর এক মুহুর্ত দাড়িয়ে থাকার সাহস হলো না আমার।
———————————————

রোবটের মত দাড়িয়ে আছি। নড়চড় করা একদম নিষেধ তূর্য সাহেবের। আধাঘন্টা ধরে শাড়ি পড়ানোর চেষ্টায় লেগে আছেন ওনি। একবার পড়িয়েছেন উল্টো। আমি দেখিয়ে দিতে চাইলেই চোখ রাঙান। কি আর করার! চুপচাপ দাড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায়ই নেই। শাড়ি টা হাতে নিয়ে তীর্যক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারও পড়াতে শুরু করলেন। আর আমি বরাবরই নীরব দর্শক। কিছুক্ষণ পর শাড়ি পড়িয়ে আমাকে আয়ানার সামনে দাড় করালেন তূর্য। পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে থুতুনি ঠেকিয়ে বলে উঠলেন,,,

—শুভ্রতার রঙে মুড়ানো আমার শুভ্রপরী।

লাজুক হাসলাম আমি।আরেকটু শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন আমাকে। স্লো ভয়েসে বলে উঠলেন,,,

—একটা নিউজ আছে।

—কি?

—সিনথিয়া কে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ।

বিস্ময়ে হতবাক হয়ে আয়নায় তূর্যর দৃষ্টিতে দৃষ্টি রাখলাম আমি। অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,,,

–আপনি কিছু করেন নি তো তূর্য?

হাসল তূর্য। রহস্যময় কন্ঠে বলে উঠল,,,

–তোমার কি মনে হয় জান?

—তার মানে আপনি?

— আমি তো জাস্ট লোক লাগিয়ে কিছু প্রমাণ কালেক্ট করেছি। সিনথীয়া ড্রাগস ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। সবচেয়ে বড় কথা ও আমার শুভ্রপরী কে কষ্ট দিয়েছে। আমার শুভ্রপরীর মা হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। ওকে শাস্তি না দিলে যে আমি স্বস্তি পেতাম না।

আমি এমন একটা তূর্যই চাই সারাজীবন। তূর্য নামক মানুষটাই আমার অস্তিত্ব। তূর্য নামক মানুষটা তেই আমার পূর্ণতা। তূর্য মানেই এক রাশ ভালোবাসা। প্রথম দিনের দেখা সেই বেয়াদব তূর্য চৌধুরী-ই আমার জীবনের শেষ ভরসা।আমার বেঁচে থাকার কারণ। ভাবলে কষ্ট হয় অনেক কষ্ট হয় যে মেহরিমা চৌধুরী তূর্য আর তোহাশ ভাইয়ার মত ছেলেদের হারিয়েছেন। সার্থের জন্য ভালেবাসা কে পায়ে ঠেলে দিয়েছেন। অন্যায়কারী একদিন না একদিন সময়ের স্রোতে ঠিকি শাস্তি পায়। যেমনটা আভাস ও সিনথিয়া পেয়েছেন।
————————–
বিয়ের গেইট ধরে দাড়িয়ে আছি। তূর্য ছেলেপক্ষ। বরযাত্রী এসেছেন প্রায় দু’শ মানুষের মত। শালী হিসেবে গেইটে দাঁড়িয়েছি আমি। দাবি করেছি বিশ হাজার টাকা না দিলে গেইট ছাড়ব না আমরা।মিহি ও পাল্লা দিয়ে ঝগড়া করে চলেছে। গলা খেঁকিয়ে বলে উঠলাম,,,

–দেখুন ভালো ভালোই বিশ হাজার টাকা দিন। এতো ঝগড়াঝাটি করা ভালো নয়।

ভ্রুকুটি করে তাকালেন তূর্য। সুদৃঢ় কন্ঠে ঠোটে আলতো হাসি ফুটিয়ে বললেন,,,

–তাই নাকি বেয়াইন সাহেবা?টাকা কি গাছে ধরে। বিয়ে করতে এসেছে বিয়ে করে চলে যাবে। এক টাকা ও দিচ্ছি না আমরা। গেইট না ছাড়লে নো প্রবলেম বউ আমরা তুলে নিয়ে আসব সাথে আপনার মতো সুন্দরী বেয়াইন কে ও।

তূর্যর কথায় থতমত খেয়ে গেলাম আমি। কি সাংঘাতিক লোক! বউ কে বেয়াইন বলছে তার উপর আমার সাথে কিপ্টামি। লোকসমাগমে তুলে নেওয়ার হুমকি। আজ আপনার নিস্তার নাই তূর্য চৌধুরী। শুধু একটা বার বাসায় ফিরি। মনে মনে কথাগুলো বলে নরম স্বরে বললাম আমি,,,

— এই যে সাদা বিলাই থুক্কু অতি সুদর্শন বেয়াই সাহেব যতই বলেন টাকা দিবেন না লাভ নেই। টাকা আদায় করা ছাড়া গেইট আমরা ছাড়ছি না। টাকা দেন বউ নিয়ে ফুটুন।

পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল—সাথে আপনাকে ও নিয়ে যাব বেয়াইন।

রক্তিম বর্ণ ধারণ করল তূর্যর দু চোখ। অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে চোখের ইশারায় না বুঝালাম। কেন যে একটু তে রেগে যায় লোকটা। বিয়ে তে মানুষ মজা করেই। দু চোখ বুঝে আবারও মেলল তূর্য। মুখে হাসির ভাব এনে পিছনে তাকিয়ে বলল,,,

—সুন্দরী বেয়াইন টা শুধু আমার। বিয়ে করা বউ তো আমার। একটু সাবধানে কথা বলবে ভাই। পরে দেখা যাবে আমি হয়ে গেছি হাইপার।

তূর্যর কথায় হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে রইল সবাই। একজন বলে উঠল,,,–সরি ভাই আমরা জানতাম না ওনি আপনার বউ। সরি ভাবী।

স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম আমি। আয়ুশ ভাইয়া এবার দাড়িয়ে পড়লেন। আমার দিকে চেয়ে বললেন,,

–তূর্যর সাথে অভিনয় টা দারুণ ছিল জেরি। আর তূর্য ও তো সেই লেভেলের ঝগড়াটে প্রমাণ করল নিজেকে। আর কষ্ট করতে হবে না তোমার।

কথাটা বলে মিহির হাতে বিশ হাজার টাকা ধরিয়ে দিলেন আয়ুশ ভাইয়া। সামনে থেকে এক গ্লাস শরবত তুলে নিয়ে আমাকে ইশারা করলেন নিতে। চমকালাম আমি। দৃঢ়তা বজায় রেখে বললাম,,,

–এটা তো আপনার জন্য ভাইয়া।

–আমার জন্য কিন্তু জেরি যে প্রচন্ড টায়ার্ড হয়ে গেছে তর্ক করতে করতে। প্রিয়ু ও হয়তো এতোটা তর্ক করতে পারত না।

আয়ুশ ভাইয়ার কথায় হেসে দিলাম আমি। গ্লাস টা নিয়ে শরবত টা খেয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দিলাম ওনাকে। সবাই যাওয়া শেষে আমি পা বাড়াতেই পেছন থেকে শাড়ির আঁচলে টান অনুভব করলাম। ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে তূর্যর দিকে চেয়ে বললাম,,,

—কি সুন্দর মেয়ে দেখলেই আঁচল ধরে টানাটানি! আপনি তো প্রচন্ড বেয়াদব। এসব শিখাবেন বুঝি নিজের ছেলেমেয়েদের?

হেসে দিল তূর্য। আমাকে এক হাতে জরিয়ে নিয়ে বলে উঠলেন,,,

—ভার্সিটির সেই প্রথম দেখার ডায়লগ?

তূর্যর প্রশ্নে হেসে দিলাম আমি। এতো সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে কেন? সবকিছু এতো পরিপূর্ণ লাগছে কেন? চারপাশের মানুষ গুলো খুশি আর কিছুই কষ্টের নেই। ওই যে দূরে দেখা যাচ্ছে শিহাব ভাইয়া মিহির সাথে কতোটা হেসে কথা বলছেন। হয়তো উনি ও আজ কোনো না কোনো দিক দিয়ে পরিপূর্ণ হয়েছেন।
———————————-

গলা কাটা মুরগির মত রাস্তায় পড়ে ছটফট করছে তূর্য। আমি পাথরের ন্যায় বসেই আছি । ভুলে গেছি সকল দিক বিক। তূর্যর চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। কিছুই করতে পারছি না আমি। রক্তে ভিজে যাচ্ছে তূর্যর সাদা শার্ট টা। আমার মনে হচ্ছে আমি মরে যাচ্ছি। হাত বাড়িয়ে তূর্য কে ধরতে নিলেই শরীরের অবশিষ্ট শক্তি দিয়ে চিতকার করে উঠলেন ওনি।
চলে যাও শুভ্রপরী। প্লিজ চলে যাও। এখানে এসো না।
কেঁদে উঠলাম আমি। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলাম,,–আমি আপনাকে ছাড়া মরে যাব তূর্য। আমাকে ও আপনার সাথে নিয়ে যান। দয়া করে আমায় একা ছেড়ে যাবেন না। আমি বিধবা হয়ে বাঁচতে চাই না। আপনার সাথে আপনার বউ হয়ে আপনার শুভ্রপরী হয়ে বাঁচতে চাই। তূর্য একটু হেসে কিছু বলতে নিলেই মাস্ক পড়া লোকগুলো রড দিয়ে তূর্যর মাথায় সজোরে বারি দিতেই আমার পৃথিবী যেন থমকে গেল। শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চিতকার করে উঠলাম আমি।
–তূর্য,,,,,,,,,,,,,,,,,,

তূর্য আমায় শক্ত করে জরিয়ে ধরতেই কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেল আমার। ঘেমে একাকার হয়ে আছে পুরো শরীর। তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। হুম স্বপ্ন দেখছিলাম। এইতো আমার তূর্য। বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি। বিচলিত হয়ে পড়লেন তূর্য। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,,

–কি হয়েছে শ্রেয়া? বাজে স্বপ্ন দেখছিলে?

মাথা নাড়িয়ে হুম বুঝালাম আমি। আমাকে শুয়ে দিতে নিলে বললাম,,,–বারান্দায় যাব তূর্য।

সাথে সাথেই আমায় কোলে নিয়ে বেলকনিতে চলে এলেন ওনি। একটা চেয়ারে বসে আমাকে নিজের কোলে বসালেন। স্বপ্ন ছিল ভেবেই একটু শান্তি পাচ্ছি। তবুও বুকটা কাঁপছে অনবরত। উল্টো ঘুরে তূর্যর কপালে,,চোখে,, গালে চুমু খেলাম অজস্র। ভ্রু উঁচু করে চাইলেন তূর্য। মুহুর্তেই এক রাশ লজ্জা এসে গ্রাস করে নিল আমাকে। আলতো হেসে সামনে ফিরতে নিলে আমাকে কাছে টেনে নিলেন তূর্য। গালে স্লাইড করতে করতে বলে উঠলেন,,

—আজ এতো ভালোবাসা ব্যাপার কি?

ওনার খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্পর্শে শিউরে উঠলাম। ধুকপুক করা হৃদপিণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করলাম,,,

—আপনি তো কখনও জানতে চাইলেন না তূর্য আমি কিভাবে আপনাকে চিনলাম?

মুচকি হাসল তূর্য। নিজের হাত টা আমার সামনে মেলে ধরল। বারান্দায় ড্রিম লাইটের আলোয় স্পষ্ট জ্বলমল করছে হাতে লিখা” শুভ্রপরী” নামটা। লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে আমি বলে উঠলাম,,,

–হুম। কক্সবাজার যখন পিছন থেকে আমাকে জরিয়ে ধরেছিলেন সেদিন ও ড্রিম লাইটের আলোয় লেখাটা চোখে পড়েছিল আমার। এক মুহুর্তের জন্য থেমে গিয়েছিল আমার হৃৎস্পন্দন। বার বার মনে হয়েছে আমি আগে কেন দেখি নি আপনার হাতের দিকে ভালো করে। দেখলে তো আমি শুরুতেই চিনতে পারতাম আপনাকে। আপনার স্লো ভয়েস ও আমাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল আপনিই আমার চিরকুট লেখক।

আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে নাকে নাক ঘষলেন তূর্য। ওনার উম্মুক্ত বুকে খামচে ধরলাম আমি খুব জোরে। কিন্তু কোনো রিয়েক্ট নেই তূর্যর। তিনি অপলকভাবে চেয়ে আছেন আমার দিকে। কোথা থেকে ঝি ঝি পোকার ডাক ভেসে আসছে। স্নিগ্ধময় নির্মল বাতাস আমাদের ছুঁয়ে যাচ্ছে কিছু সময় পর পর। তূর্যর দৃষ্টিতে আর দৃষ্টি রাখা সম্ভব না আমার। চোখ নামিয়ে নিতেই কপাল গভীর চুমু খেলেন তূর্য। আবারও গভীর স্পর্শ একে বলে উঠলেন,,,

❝ আমার অসীম ভালোবাসা
তোমার জন্যই গচ্ছিত রাখা
তুমি এসেছিলে আমার জীবনে হৃদমোহিনী হয়ে
আমি তোমায় বরণ করে নিয়েছি শুভ্রপরী নামক নাম দিয়ে
ভালোবাসি শুভ্রপরী,, ভালোবাসি তোমায়
প্রতিটা মুহুর্তে ভালোবাসার দাবী নিয়ে উপস্থিত হব
তোমার হৃদয় আঙিনায়। ❞

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here