#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -৪,বোনাস পার্ট
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা
তূর্য ভাইয়ার সামনে দাড়িয়ে আছি।হৃদয় কম্পিত হচ্ছে প্রচন্ড বেগে।যতই বলি না কেন ভয় পায় না কিন্তু ওনাকে দেখলে অন্যরকম ভয় করে আমার।হৃদয়ের কম্পন বেড়ে যায় দ্বিগুণ। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। আশ্চর্য তো প্রথম যেদিন ওনার সাথে দেখা হয়েছে তখন তো এতো ভয় হয় নি।সময়ের সাথে সাথে এমন কেন হচ্ছে? কেন না চাইতেই জমে বরফ হয়ে যাই ওনার সামনে?কই অন্য কারো ক্ষেত্রে তো এতো ভয় লাগে না।বরং সাহস বেড়ে যায়।কেমন যেন রাগী চোখে তূর্য ভাইয়া তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।মনে হচ্ছে এই বুঝি এখনি খুন করে গুম করে ফেলবেন আমায়।ভয়ে ঢুক গিললাম আমি।একা একা নিজেকে যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক মনে হচ্ছে যার গর্দান নিবে শত্রু পক্ষ। ওনার সব ফ্রেন্ডরা ও একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে কি সার্কাসের জোকার মনে হচ্ছে? সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? তূর্য ভাইয়ার রাগী লুক এবং বাকি সবার একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকায় ভয় ও অস্বস্তি দুটোই চেপে ধরল আমায়।প্রিয়ু থাকলে আজ নিজেকে কিছুটা হলেও সাহসী মনে হত।দূর কি বলছি ওই মেয়ে তো আরেক ভীতুর ডিম।চারদিকে একবার চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম আয়ুশ ভাইয়া নেই। হয়তো ওনি এখনও আসে নি।ওনি থাকলে হয়তো কিছুটা সাপোর্ট করত আমায় এই বেয়াদব তূর্য ভাইয়ার হাত থেকে বাঁচাতে।
প্রিয়ু নুসাইবা আপুর বাসায় গেছে তাই আজ আমি একাই এলাম ভার্সিটিতে।নীল জর্জেটের ওড়না টা ভালো করে জরিয়ে নিলাম মাথায়।ক্যাম্পাসের চারপাশে তাকালাম না কোথাও দেখা যাচ্ছে না তূর্য ভাইয়া ও ওনার গ্যাং পার্টি কে।মনে হলো অনেক বড় ঝামেলা থেকে বেঁচে গেলাম।কারণ কালকে অনুষ্ঠানে বন্ধ রুমে ঐ ঘটনা ঘটার পর আর কারো সামনে যায় নি আমি।সোজা বেরিয়ে গিয়েছিলাম ভার্সিটি থেকে।রাতে প্রিয়ু অনেকবার জানতে চাইলে ও বলতে পারি নি আমি যে কেন নাচি নি আর কেনই বা ওকে না বলে বাসায় চলে গেলাম।কিন্তু প্রিয়ুর শেষ কথায় আতংক ছড়িয়ে গেল আমার মাঝে।সারা রাত ঘুমাতে পারি নি চিন্তায়। নাচে যে অংশগ্রহণ করি নি বেয়াদব তূর্য তো আমার ক্ষমা একসেপ্ট করবে না।ক্ষমা একসেপ্ট না হলে ভার্সিটিতে থাকাও আমার জন্য দুষ্কর হয়ে যাবে।কারণ এই এক সপ্তাহে বেশ বুঝতে পেরেছি বড়লোকের বিগড়ানো ছেলে বেয়াদব তূর্য সাহেব এই ইউনিভার্সিটির টিচার,,,সিনিয়র জুনিয়র সবার চোখের মণি। খচ্চর সব মেয়েদের ওয়ান এন্ড অনলি ক্রাশ। ওনাকে যত এড়িয়ে চলব এতেই আমার মঙল হবে।তাই চারদিকে তাকিয়ে ওনাদের দেখতে না পেয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ক্লাসে ঢুকলাম।কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো কই?
ঢুকতে না ঢুকতেই মিহি বলে উঠল- “শ্রেয়া ফুহাদ ভাইয়া এসেছিল একটু আগে। তূর্য ভাইয়া তোমায় ডেকে পাঠিয়েছেন পার্কিং এরিয়ায়।”
মিহির কথা শুনে আমি প্রায় বেহুঁশ হবার উপক্রম। এই লোক কি আমায় ছাড়বে না?শেষ পর্যন্ত কি ভার্সিটি থেকে বের করেই ছাড়বে!!থম মেরে বসে রইলাম আমি যাব না কিছুতেই যাব না।কিন্তু এতে ও রক্ষা হল না।তূর্য ভাইয়ার ফ্রেন্ড নিশি আপু এসে দাঁড়ালেন আমার সামনে।আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
,,–কি মিস শ্রেয়সী ?আপনি কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন যে বার বার আপনাকে ডাকা হচ্ছে কিন্তু আপনি যাচ্ছেন না?সমস্যা নেই আসুন প্রেসিডেন্ট সাহেবা তূর্য বলেছে আপনাকে সাদরে আমন্ত্রণ করে নিয়ে যেতে।
নিশি আপুর কথায় বুক টা ধুক করে উঠল আমার।সত্যিই ভাগ্য খুব খারাপ আমার।পড়ালেখা টা ও আর করা হবে না।সব হারিয়েছি।এখন শুধু মৃত্যু টাই বাকি।উঠে দাড়ালাম আমি।আপুর পিছু পিছু আসলাম পার্কিং এরিয়ায়। গ্রেট তূর্য ভাইয়া বাইকের উপর বসে এদিকেই তাকিয়ে আছেন।চোখে মুখে তার মুগ্ধতা, হাসি ভর করে রেখেছে ।আমাকে দেখতে পেয়েই ওনার মুখের হাসিটা বিলীন হয়ে গেল। চোখ দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করল।
।
।
মিনিট দশেক হবে দাড়িয়েই আছি কিন্তু কিছু বলছে না তূর্য ভাইয়া ।শুরু থেকেই রাগী লুক নিয়ে চেয়ে আছেন আমার দিকে।চোখ ফিরিয়ে নিশি আপুর দিকে তাকালেন ওনি।মুচকি হেসে বললেন–
“”নিশি,ফুহাদ,মিথি,তিহান তোদের প্রেকটিক্যাল খাতা তো কমপ্লিট করিস নি তাই না?কষ্ট করে আর তোদের করতে হবে না।খাতাগুলো সব কি যেন নাম?ওহ হে শ্রেয়সীর কাছে দিয়ে দে।মিস শ্রেয়সী কমপ্লিট করে দিবে।”
তূর্য ভাইয়ার কথায় মনে হল আমার মাথায় বাঁশ পড়ল।এতগুলো প্রাকটিক্যাল খাতা আমি কিভাবে কি করবো?ফিজিক্সের স্টুডেন্ট ওনারা এতো চিত্র গ্রাফ কিভাবে আঁকব?সকাল বিকাল টিউশন করে নিজের পড়া কমপ্লিট করাই তো কঠিন হয়ে পড়ে।ওনি বাঁকা হেসে তাকালেন আমার দিকে।
“””–কি পারবেন তো মিস শ্রেয়সী?আশা করি সাইন্সের স্টুডেন্ট হয়ে প্রেকটিক্যাল করতে তেমন কষ্ট হবে না আপনার।”
ওনার বাঁকা হাসি দেখে গলাটা একদম জমে গেল আমার। তবুও অনেক কষ্টে মুখ খুললাম আমি,,,
–ভাইয়া,,,
–তোমাকে কিছু বলার জন্য বলেছি?কাল নাচো নি।সো তোমার সরি একসেপ্ট করা হয় নি।তোমার সরি যেহেতু একসেপ্ট করার সুযোগ তুমি হারিয়েছ তাই আমি যা বলব তাই করতে হবে তোমার। নয়তো চোখের জল ফেলতে আর ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার প্রিপারেশন নিয়ে নাও।সেদিনের কথা আমি আজও ভুলি নি।(রাগী কন্ঠে)
মুখের কথাটা বলার সুযোগ পর্যন্ত দিলেন না।অযথাই রাগ দেখালেন।এতো কঠোর মানুষ আমি কখনও দেখি নি।আমি তো জাস্ট জিজ্ঞেস করতাম যে কবে দিতে হবে আর একটু সময় চেয়ে নিতাম।ক্লাসে,,ক্যাম্পাসে সবার মুখে তো শোনা যায় ওনি অনেক ভালো।ওনি ক্যাম্পাসে আসার পর কেউ নাকি আর এই ক্যাম্পাসে রেগিং করার সুযোগ পায় না।ওনি নাকি কখনো মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করে না। তাহলে আমার সাথে এসব কি করছেন ওনি?সবার সামনে ভালো সাজার নাটক।কেউ যদি ওনার আসল চেহারা টা দেখত তাহলে বুঝত কতটা খারাপ ও বেয়াদব তূর্য ভাইয়া। প্রেকটিক্যাল খাতাগুলো নিয়ে চলে আসব এমন সময় তূর্য বলে উঠলেন,,
–দু দিনে যেন খাতাগুলো কমপ্লিট পাই।নয়তো জানো তো কি হবে?(রাগী কন্ঠে)
–জজজজ্বী ভাইয়া।(কাপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলাম)
হাসলেন ওনি।ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বললেন –ভেরি গুড। ইউ ক্যান গো নাও।
চেহারা এতো সুন্দর, হাসি তার চেয়েও সুন্দর তাহলে আপনার আচরণ এতো খারাপ কেন তূর্য ভাই?(হাটতে হাঁটতে বিড় বিড় করে বললাম)।
।
।
ক্লাস শেষে লাইব্রেরির দিকে পা বাড়ালাম আমি।বই নেই তাই লাইব্রেরি তে বসে কিছু নোটস করে নিব।লাইব্রেরি তে এসে দেখলাম তেমন মানুষ নেই। হাতে গুণা দু তিনজন।ব্যাগ টা টেবিলে রেখে বই আনতে গেলাম আমি।লাইব্রেরি টা বেশ বড়।সারি সারি করে বুক শেলফে বই রাখা।বুক শেলফ থেকে বই নিচ্ছি হঠাৎ অনুভব করলাম ঘাড়ে কারো গরম নিশ্বাস আঁচড়ে পড়ছে।তার মানে আমার পিছনে একদম কাছে কেউ দাড়িয়ে আছে। ভয়ে ভয়ে ঘুরে দাঁড়ালাম আমি।এ কি করে সম্ভব কেউ নেই! তাহলে এটা কি আমার বুঝার ভুল ছিল?ভুল কি করে হতে পারে ঘাড়ে গরম শ্বাস অনুভব করা কোনোভাবেই ভুল হতে পারে না।চারদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখলাম না।ফ্লোরে তাকাতেই নজরে ভেসে উঠল একটা সাদা কাগজ।এটা তো আগে ছিল না।তার মানে আমার পিছনে সত্যি কেউ ছিল।কাগজটা তুলে নিলাম আমি।
~”””আমার শুভ্রপরী,,,কি নামে ডাকব তোমায় একদম ভেবে পাই না।সাদা তে তোমাকে শুভ্রপরী,, নীলে তোমায় নীল পরী মনে হয় আমার কাছে।আমার এই স্নিগ্ধ মনে তুমি মুগ্ধতায় ছুঁয়ে যাচ্ছো বার বার।তুমি কি মুগ্ধরাণী?নাকি আমার শুভ্রপরী?কি তুমি?তুমি কি বুঝতে পারছো তোমার অমায়িক হাসি আমার হৃদপিণ্ডে ঘায়েল করছে প্রতি রাতে?তুমি আজ নীল পড়লে কেন?তোমার অবুঝ মনটা কি জানে যখন তুমি আজ নীল ওড়না মাথায় দিয়ে মাঠের মাঝে হেঁটে বেড়াচ্ছিলে কতজন মুগ্ধ চোখে চেয়েছিল তোমার পানে?একদম সহ্য করতে পারি নি আমি সেই দৃশ্য। মন চেয়েছে তোমায় খুন করে ফেলি নয়তো নিজের বুকে লুকিয়ে রাখি।””””~
“” আমার শুভ্রপরী”””শব্দটা পড়ে স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি।কতটা আবেগ, ভালোবাসা জড়ানো শব্দ টা তে।এই ডাকটা সেদিন বদ্ধ রুমে শুনেছি আমি।তার মানে ঐ লোকটাই এসেছিল! চিরকুটের মালিক কি তবে আমায় ভালোবাসে! ভালোবাসা শব্দটা আমার মুখে মানায় না।কারণ জীবনে কখনও ভালোবাসাই পাই নি আমি।আর সবার দৃষ্টিতে আমার এই অপয়া জীবনে যে জড়াবে সেই মানুষটাই ধ্বংস হয়ে যাবে।বিধবা দের করুণা করা যায় তবে ভালোবাসা যায় না।চিরকুট টা হাতের মুঠোয় নিয়ে টেবিলের কাছে এসে দেখলাম আয়ুশ ভাইয়া দাড়িয়ে। চমকে গেলাম আমি।আয়ুশ ভাইয়া লাইব্রেরি তে!!তার মানে কি আয়ুশ ভাইয়া সেই ব্যাক্তি? ভুল ভাবছি নাতো?কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।সবকিছু কেমন এলো মেলো লাগছে।আমাকে দেখতেই কাছে এসে দাঁড়ালেন আয়ুশ ভাইয়া। মুচকি হেসে ডাকলেন আমায়,,
—-জেরি,,,,
–জ্বি ভাইয়া।
—পড়ছিলে?
–জ্বি।
–তা কি পড়ছিলে?
—কিছু না।(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
আমার অদ্ভুত জবাবে হাসলেন আয়ুশ ভাইয়া।
—আর ইউ ওকে জেরি?
–হুম ভাইয়া।
–ওকে পড়ো তাহলে।
চলে যেতে নিয়েও আবার আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি।ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বললেন,,,
–নীলে তোমায় একদম নীল পরী লাগছে জেরি।
কথাটা বলে চলে গেলেন তিনি।ধুক করে উঠল আমার বুকটা।চিরকুটের লেখাগুলো মনে পড়তেই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল আমার।আয়ুশ ভাইয়া আমায় “নীল পরী” বলল।না না এভাবে কাউকে সন্দেহ করতে পারি না আমি।টেবিলের উপর নজর পড়তেই দেখলাম প্রেকটিক্যাল খাতাগুলো নেই। ব্যাগে ও নেই। কোথায় গেল খাতাগুলো?এখন ওনাদের খাতা আমি কিভাবে দিব?কিনার টাকাও নেই আমার।এক টাকা ও হাতে নেই। ভার্সিটিতেই প্রতিদিন হেটে আসছি।দুচোখ জলে ভরে আসল।ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই বেসামাল ভাবে কারো সাথে খুব জোরে ধাক্কা খেলাম।পড়ে যেতে নিলেই সামনের মানুষ টা দু হাতে আকড়ে ধরে আমার কোমর।হাতের ছোঁয়া পেতেই জ্বলে উঠল কোমরের কাটা জায়গাটা।চোখে মেলে সামনে তাকিয়ে দেখলাম —আয়ুশ ভাইয়া।
এক নজরে তাকিয়ে আছেন ওনি আমার দিকে।ওনার চোখের চাহনি তে কেমন যেন মুগ্ধতা।কিছুটা নড়তেই কোমর ছেড়ে সোজা করে দাঁড় করালেন আমায়।
–ফ্রি তে সিনেমা দেখা হয়ে গেল।আয়ুশ তুই তো নায়ক হয়ে গেলি।কিন্তু তোর নায়কা একদম পারফেক্ট না।
পানি ভর্তি টলমল চোখে পিছনের দিকে তাকালাম আমি।তূর্য ভাইয়ার এমন কথা কানে আসতেই এক মিনিট ও দাঁড়ালাম না সেখানে।বেরিয়ে এলাম ভার্সিটি থেকে।তূর্য ভাইয়ার অপমানজনক কথা গুলো আর নিতে পারছি না আমি। মনে বার বার প্রশ্ন জাগছে আয়ুশ ভাইয়াই কি তবে সেই মানুষ টা?
চলবে,,,
#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#বোনাস পার্ট
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা
প্লিজ আমায় একটু সময় দেন আভাস।বিয়েটা এতো তাড়াহুড়োয় হয়েছে আমার একটু সময় প্রয়োজন প্লিজ। একটু সময় দেন।শয়তানি হাসি হাসল আভাস।চোখের পলকেই আমায় চেপে ধরল দেয়ালের সাথে।নিজের শক্ত হাত দুটো চেপে ধরল আমার বাহুতে।ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম।বাহু দুটো আরো জোরে শক্ত করে মুখে কঠিন ভাব এনে বলল,,,,
–কেন বিয়ে তো বসেছিস টাকা আর দেহের চাহিদা মিটানোর জন্য। তো সময় কেন প্রয়োজন তোর?আমার সহজ সরল মাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিস আর এখন নিজেকে সতী নারী প্রমাণ করতে চাইছিস?তোর সতীত্ব এখন ধুলোয় মিশিয়ে দিব আমি।
কথাটা বলেই আভাস ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিল আমায়।ভয়ে আঁতকে উঠলাম আমি।কাঁদতে কাঁদতে বললাম,,,
—প্লিজ আভাস সময় দেন।জোর করে কিছু হয় না।জোর করবেন না প্লিজ।মাতাল আপনি।আমায় ছেড়ে দিন দয়া করে।আমি তো আপনার বউ।এমন করবেন না দয়া করে।
কোনো আকুতি মিনতি শুনল না আভাস।আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তেই চিতকার দিয়ে উঠলাম আমি।
আমার চিতকারে রীতি আপু দৌড়ে আসল।রীতি আপুকে দেখেই বুঝতে পারলাম স্বপ্ন দেখছিলাম আমি। সারা শরীর ঘেমে একাকার।রীতি আপু পানি এগিয়ে দিতেই খেয়ে নিলাম তাড়াতাড়ি করে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছিল। আবার সেই স্বপ্ন। কেন অতীত পিছু ছাড়ে না আমার।আমার মাথায় হাত বুলালেন রীতি আপু।
–কি হয়েছে শ্রেয়া খারাপ স্বপ্ন দেখছিলে?
—আআআআভাস,,,কথাটা বলেই ঝাপিয়ে পড়লাম রীতি আপুর বুকে।
—রিলেক্স শ্রেয়া।আভাস তো বেঁচে নেই। এতো মাস যা সহ্য করেছ তা তো শেষ।এখন আর আভাস পৃথিবীতে নেই। পৃথিবীতে বাঁচতে নিজেকে আরো স্ট্রং করতে হবে।ঘুমিয়ে পড়।
—হুম।
রীতি আপু যেতেই শুয়ে পড়লাম।কিন্তু ঘুম আর চোখে ধরা দিচ্ছে না।হঠাৎ চিরকুটার কথা মনে পড়ল।লিখা গুলো আমার অতি পরিচিত। আমার সেই অসমাপ্ত স্মৃতির অংশ।উঠে দাঁড়ালাম আমি।মোবাইলে ফ্লাশ জ্বালিয়ে নিজের বড় ব্যাগটা থেকে বক্সটা বের করে নিলাম।এই বক্সে বন্দি হয়ে আছে আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসার স্মৃতি। আজকের সেই চিরকুট টা মেলে ধরলাম পুরোনো চিরকুট গুলোর সাথে।স্তব্ধত হয়ে গেলাম আমি।সারা হৃদয়ে বয়ে গেল শীতল স্রোত। মনের মধ্যে অজানা ঝড় এসে হানা দিচ্ছে বার বার।একই লেখা। তার মানে অতীতের মানুষ টা ও ক্যাম্পাসের মানুষটা একই ব্যাক্তি!!!আয়ুশ ভাইয়াই আমার স্মৃতিতে জড়ানো মানুষ টা??না এটা অসম্ভব। যদি আয়ুশ ভাইয়া হতো তবে আমার মন কেন মানতে চাইছে না।কে আপনি?কেন এসেছেন আমার জীবনে আবার ফিরে?আমি জানি আপনি কখনও আয়ুশ ভাইয়া হতে পারেন না।আপনি অন্য কেউ তবে আমার খুব কাছাকাছি থাকেন।
যাকে স্মৃতির পাতায় বন্দী করে রাখলাম সে কেন আবার ফিরে এলো?আমি চাই না তাকে।চাই না আমি এই বিধবা জীবনে কাউকে।চাই না আপনার জীবনটা নষ্ট হোক।প্লিজ ফিরে যান আপনি।একা বাঁচতে দিন আমায়।চিরকুট গুলো হাতে নিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি।
চলবে,,,