তোমাতেই_আমি_মগ্ন ? #পর্ব_০৪,০৫

0
1101

#তোমাতেই_আমি_মগ্ন ?
#পর্ব_০৪,০৫
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
০৪

অন্না তার বাড়িতে চলে আসলো।বাড়িতে আসলে দেখলো তিথি,দিশা আর নিতু বসে আছে।অন্নার আগমনে তাদের মুখে হাসি ফুটলো।তিনজনে দৌড়ে এসে অন্নাকে জড়িয়ে ধরলো।অন্না-ও হাসি দিয়ে তিনজনকে জড়িয়ে ধরলো।

আমরা কত ভয় পেয়ে গেছিলাম জানিস?(দিশা)

তোকে কতবার কল করছি তুই ধরিসনি।তারপরে আজকে আবার ভার্সিটিতে গেলি না।(তিথি)

আমরা ক্লাস করে তোর বাসায় আসলাম তারপরে দেখি তুই বাড়িতে নেই।(নিতু)

হয়েছে রে বাবা!এবার একটু থাম।আমাকে বলতে দে।(অন্না)

জ্বি বলুন মহারাণী।(দিশা)

আমার মোবাইল কালকে দিয়ে অফ।আমি চার্জেই দেই নাই।তাহলে ফোনটা ধরবো কিভাবে!(অন্না)

আর আমি ভেবেছিলাম তুই ফোন অফ করে রেখেছিস।(নিতু)

অনেক ভাবা-ভাবি হয়েছে।অনেক বেলা হয়ে গেছে প্লাস আমার প্রচুর খিদে পেয়েছে।আই নো তোরাও না খেয়ে এসেছিস।এখন চল আমরা একসাথে খাবো।(অন্না)

তিন বান্ধবী হা হয়ে অন্নার দিকে তাকিয়ে আছে।

কি রে এভাবে কি দেখছিস তোরা?(অন্না)

অন্না তোর মুড ঠিক আছে?(তিথি)

একদম।(অন্না)

ওয়াও!যাক তাহলে তুই কিছুটা স্বাভাবিক তো হলি।(দিশা)

অন্না মুচকি হাসলো।উপরে যতই ভালো থাকার অভিনয় করুক না কেন!সে তো জানে সে ভালো নেই।
তারপরে আজকে আবার ওই ছেলের মুখোমুখি হতে হলো।

//

বিকেলবেলা,

আবির গার্ডেনে বসে চা খাচ্ছে।তবে তার বড্ড ইচ্ছা করছে অন্নাকে একটি বার দেখতে।তবে অন্না তো তাকে দেখলে বিরক্ত হয়।যাতে আবিরের কষ্ট আরও দ্বিগুণ হয়ে যায়।

হঠাৎ আবিরের মোবাইলে কল আসলো।তাকিয়ে দেখে নিশান ফোন করেছে।আবিরের একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড।আবির হাসি মুখে কলটা রিসিভ করলো।

কি রে দোস্ত!কি খবর তোর?(নিশান)

এই তো কোনমতে চলছে ব্রো।(আবির)

তা তোর প্রিয়তমা ইয়ে মানে আমাদের ভাবির কি খবর?যার জন্য কানাডা ছেড়েই চলে গেলি।(নিশান)

সে আছে তার মতো।(আবির)

তোর কথার তো আগামাথা কিছু বুঝলাম নাহ্।(নিশান)

তোর ওই মাথায় আমার কথা ঢুকবে না।সো বুঝতেও হবে না।(আবির)

ওকে রিলাক্স।শোন আমি কালকে দেশে আসছি।(নিশান)

তো আয় কে নিষেধ করেছে তোকে!(আবির)

তুই খুশি হোসনি?(নিশান)

সত্যি বলতে একটুও নাহ্।(আবির)

এই আমার বেস্টফ্রেন্ড?(নিশান)

আবির জোরে হেসে দিল।নিশান-ও হাসছে।

\/

বান্ধবীদের বিদায় দিয়ে অন্না তার রুমে এসে বিছানায় বসলো।অন্না নিরব দৃষ্টিতে একভাবে চেয়ে আছে জানালার দিকে।জানালা দিয়ে হালকা শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।অন্না চোখ বন্ধ করে বয়ে যাওয়া হাওয়া অনুভব করার চেষ্টা করছে।

হঠাৎ তার ঘোর কাটলো মঈন সাহেবের ডাকে।মঈন সাহেব নিচে থেকে অন্নাকে ডাকছে।অন্না কিছু একটা ভেবে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো আবির বসে আছে।সঙ্গে আকরাম সাহেব-ও এসেছেন।

অন্নার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তাদের সামনে গেল।অন্না মুচকি হেসে আকরাম সাহেবকে সালাম করলো।উনি সালামের উত্তর দিলেন।

কেমন আছো তুমি মা?(আবিরের বাবা)

জ্বি আঙ্কেল আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?(অন্না)

এই তো চলে যাচ্ছে।(আবিরের বাবা)

অন্না কিছুক্ষণ আকরাম সাহেবের সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে আসলো।কারণ আবিরের সাথে বারবার চোখাচোখি হচ্ছিল।যাতে অন্না কিছুটা অস্তিত্ব বোধ করছিল।

রুমে এসে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে অন্না।আবির এসে অন্নার দরজায় টোকা দিলো।অন্না পিছনে ফিরে দেখলো আবির দাঁড়িয়ে আছে।

আপনি এখানে কেন এসেছেন?আমার আর এক কথা বারবার বলতে ভালো লাগছে না।প্লিজ আপনি চলে যান।আর আপনি এখনো অনেক কিছুই জানেন না।(অন্না)

কি জানার কথা বলছো তুমি অনুলতা?(আবির)

অন্না কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

কিছু নাহ্।আপনি আমার রুম থেকে চলে যান।(অন্না)

রিলাক্স অনুলতা।আমি জাস্ট তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছিলাম।(আবির)

কি বলবেন আপনি?ওই তো একই কথা তাই-না?(অন্না)

আবির মুচকি হেসে বললো,

এতোটা হাইপার হয়ো নাহ্ অনুলতা।আমি তো তোমাকে একটা কার্ড দিতে এসেছি।আর আমি একবার যেটা বারণ করি সেটা আর দ্বিতীয় বার করি নাহ্।(আবির)

অন্না কিছুক্ষণ আবিরের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

কিসের কার্ড?(অন্না)

আমাদের সিলিটের কোম্পানি অনেক বড় একটা ডিল সাইন করেছে।তাই সিলেটের কোম্পানিতে বাবা একটা পার্টি থ্রো করেছে।(আবির)

এখন কি এই পার্টির জন্য আমাদের সিলেট যেতে হবে?(অন্না)

যেতে তো হবেই।যতই হোক তোমার বাবা আর আমার ডে কিন্তু বেস্টফ্রেন্ড।তোমাদের তো যেতেই হবে।(আবির)

বাবা কি বলেছে?(অন্না)

আঙ্কেলও যাওয়ার কথা বলেছেন।কারণটা তুমি।তোমার নাকি মন ভিষণ খারাপ।তাই আঙ্কেল-আন্টি যেতে রাজি হয়েছেন।(আবির)

এতো মানুষ থাকতে এই কার্ড দিতে আপনাকেই আমার রুমে আসতে হলো?(অন্না)

সবাই গল্পে বিজি আছে।তাই বাবা বললো আমাকে, কার্ডটা তোমাকে দিতে।(আবির)

অন্না কার্ডটা নিয়ে নিলো।

কার্ড দেওয়া শেষ আপনি এখন আসতে পারেন।(অন্না)

অন্না কথাগুলো বলে আবিরের দিকে থেকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।আবির মুচকি হেসে অন্নার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।

এতোটা অবহেলা করো নাহ্ অনুলতা।কখন হারিয়ে যাবো টেরও পাবে নাহ্।তখন আবার কষ্ট পেয়ো না কিন্তু!বাই দ্যা ওয়ে কার্ডটা যত্নে রেখো।নাহলে পার্টিতে ঢুকতে দিবে না সিকিউরিটিরা।(আবির)

আবির অন্নার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল।অন্নার অশস্তি লাগছে।আবিরের প্রতিটা কথা তার বুকে গিয়ে লেগেছে।সে তো চায় না আবির তার থেকে হারিয়ে যাক।কিন্তু সে এখন কি করবে!

!!!

সোফায় বসে সিগারেট টানছে ফাহাদ।আর ধোঁয়া ছাড়ছে।সকালে ঘটে যাওয়া সব কিছু মিলিয়ে সে বিগড়ে আছে।একদিকে ডিল ক্যান্সেল তার উপরে অন্নার থাপ্পড়।প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে ফাহাদ।

হাই ফাহাদ।(মিমি)

হঠাৎ করে মিমি এসে ফাহাদের গলা জড়িয়ে ধরলো।ফাহাদ রাগে এক ঝটকা দিয়ে মিমিকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দিলো।

তোকে কতবার বলেছি এমন গায়ে এসে পড়বি নাহ্।তুই তো কোন কথাই শুনিস না।(ফাহাদ)

এতো মেয়ের সঙ্গ পেলে তো আমাকে আর তোর ভালো লাগবে নাহ্।(মিমি)

ফাহাদ চোখ রাঙিয়ে মিমির দিকে তাকালো।সিগারেট নিচে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

তোকে ইউজ করা শেষ।তুই এখন ওল্ড হয়ে গেছিস।তোর কোন মূল্য নেই আমার কাছে।তারপরেও বেহায়ার মতো কেন আসিস আমার কাছে?(ফাহাদ)

আমি তোকে ভালোবাসি ফাহাদ।(মিমি)

মিমির কথায় ফাহাদ জোরে হেসে দিলো।

ভালোবাসা মাই ফুট!এইসব প্রেম-ভালোবাসার কোন দাম নেই আমার কাছে।আমার তো মেয়ে হলেই চলে যায়।(ফাহাদ)

মিমি ফাহাদের হাত ধরে বললো,

ফাহাদ প্লিজ এমনটা করিস না।আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।তুই এইসব বাজে কাজ ছেড়ে দে।দেখ আমরা দুজনে অনেক ভালো থাকবো।(মিমি)

ফাহাদ ঝটকা দিয়ে মিমির হাতটা ছাড়িয়ে ফেললো।

আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো।আর আমার যা ইচ্ছা হবে তাই করবো।(ফাহাদ)

ফাহাদ হেঁটে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।মিমি দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে।

কেন তোকে ভালোবাসলাম আমি ফাহাদ?তোর কাছে তো ভালোবাসা মানে মেয়েদের শরীর।তা ছাড়া কিছুই নাহ্।মিমি)

মিমি চোখ মুছে ফাহাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেল।

/\/\/\

কি রে ফোন ধরতে এতো টাইম লাগে তোর?(নিতু)

আরে আমি নিচে ছিলাম।(অন্না)

কি করছিস এখন?(নিতু)

এই তো চা খাচ্ছি।(অন্না)

মুড ভালো আছে?(নিতু)

হু আছে।(অন্না মুখটা মলিন করে বললো)

কাল ভার্সিটিতে আসবি?(নিতু)

না রে কালকে সিলেটে যাবো।(অন্না)

হঠাৎ কিসের জন্য?(নিতু)

অন্না তারপরে নিতুকে সবটা বললো।

এই তাহলে আমাদের তিনজনের জন্য তিনটা কার্ডের ব্যবস্থা করে দে।আমরাও যাবো তোর সাথে প্লিজ।(নিতু)

আরে কার্ডের ব্যবস্থা করতে হলে আমাকে আবির বাবুর সাথে কথা বলতে হবে।(অন্না)

বল তাহলে সমস্যা কি?(নিতু)

নাহ্ আমি উনার সাথে কথা বলতে পারবো না।(অন্না)

তাহলে আমিও তোর সাথে কথা বলবো নাহ্।(নিতু)

উফ!তোর জ্বালায় আর বাঁচি নাহ্।ফোন রাখ আমি আবির বাবুকে কল করি।(অন্না)

ওকে মিসেস.আবির বাবু।(নিতু)

মাইর খাবি কিন্তু আমার কাছে।(অন্না)

নিতু খিলখিল করে হেসে ফোনটা কেটে দিলো।

অন্না ফোনটা হাতে নিয়ে বসে আছে।তার হাত রীতিমতো কাঁপছে আবিরকে কল করতে।তবে কিছুটা বাধ্য হয়েই সে আবিরকে কল করলো।

অন্যদিকে,

আবির বসে বসে অফিসের কাজ করছে।কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর একটা একটা করে ফাইলের পেজ উল্টাচ্ছে।হঠাৎ করে মোবাইলটা বেজে উঠলো।তাকিয়ে দেখে তার সুপরিচিত নামটা ভেসে উঠেছে ‘অনুলতা’।আবির কিছুটা অবাক হলো।কারণ অন্না কখনোই তাকে কল করে না।বলা যায় আবিরের ফোনে অন্নার নাম্বারটা শপিজ হিসেবে সাজানো।

আবির সাত-পাঁচ ভাবা বাদ দিয়ে কলটা রিসিভ করলো।ওই পাশ থেকে অন্নার মধুর কণ্ঠে ফেসে আসলো,

আবির বাবু।(অন্না)

ডাকটা শুনে আবির মুচকি হাসলো।

হুম বলো অনুলতা।(আবির)

আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে।(অন্না)

‘অরবিণী ইসলাম অন্না’র আবির চৌধুরীর কাছে অনুরোধ আছে?আর ইউ সিরিয়াস?নাকি জোকস করছো?(আবির)

আপনি ভালো করেই জানেন আবির বাবু আমি সহজে মজা করি না।(অন্না)

আচ্ছা ওকে তুমি কি বলবে সেটা বলো।(আবির)

আমার আরোও তিনটা কার্ড লাগবে।(অন্না)

কিসের জন্য?(আবির)

আমার বান্ধবীরা আমাদের সাথে যেতে চাইছে।(অন্না)

ওকে কাল যখন যাবো তখন দিয়ে দিবো।তুমি তাদের জানিয়ে দিও।(আবির)

আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ তাহলে রাখি।(অন্না)

একটা কথা বলি?(আবির)

জ্বি বলুন।(অন্না)

কালকে পারলে একবার শাড়ি পড়ো।(আবির)

অন্না আবিরের কথায় থমকে গেলো।আবির তাকে শাড়ি পড়তে বলছে কেন?এতো অবহেলার পরেও কেনই বা এই আবির এমন করে?অন্না কিছুতেই বুঝতে পারে না।যতই সে চাচ্ছে আবিরের থেকে দূরে সরে যেতে সেই আবির তার আরো কাছে চলে আসছে।

শাড়ি পড়বো কেন?(অন্না)

ভয় পেও না অনুলতা।আমি তোমাকে প্রপোজ করবো নাহ্।জাস্ট অনেকদিন হলো তোমায় শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখি না।তাই বললাম।এখন বাকিটা তোমার ইচ্ছা।আল্লাহ হাফেজ।(আবির)

অন্না আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিল।

//

আবির মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে।সে জানে অন্না তার কথা ফেলবে নাহ্।অন্না নিশ্চিত শাড়ি পড়েই আসবে।

কিছু কিছু জিনিস দূর থেকেই সুন্দর।আমি না হয় তোমায় দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো আর তোমার সৌন্দর্য্য উপভোগ করবো অনুলতা।(আবির)

“””””””””

প্রচন্ড ঘুম আসছে অন্নার।তবে তার মাথায় একটা জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছে।সে কি শাড়ি পড়বে নাকি পড়বে নাহ্!সে চায় আবিরকে কষ্ট দিতে কিন্তু আবার চায় না।আবিরকে কষ্ট দিলে যে সে নিজেও কষ্ট পায়।

#চলবে……….

#তোমাতেই_আমি_মগ্ন ?

#পর্ব_০৫

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

সকালে ঘুম ভাঙতে অন্না দেখলো সাড়ে সাতটা বাজে।অন্না দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাচ্ছে।আরেকটু পরে তাদের বের হতে হবে।আর সে তো এখনো প্যাকিং করেনি।তাহলে কিভাবে যাবে সে!

অনেমা বেগম অন্নার রুমে এসে দেখে অন্না হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

অন্না তুই না রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?(অন্নার মা)

আম্মু সাড়ে আটটায় বের হবো।এই এক ঘন্টার মধ্যে আমি কিভাবে প্যাকিং শেষ করবো?আর কিভাবে বা রেডি হবো?(অন্না)

প্যাকিং নিয়ে তোর টেনশন করতে হবে না।আমি সব রেডি করে রেখেছি।তুই বরং রেডি হয়ে নিচে আয়।তিন পাকনি এসে বসে আছে।

ওরা চলে এসেছে আম্মু?(অন্না)

হুম তোর জন্য ওয়েট করছে।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয়।আমি গেলাম।(অন্নার মা)

অনেমা বেগম অন্নার রুম থেকে চলে গেলেন।অন্না ফ্রেশ হয়ে এসে দাঁড়িয়ে আছে।সে কি শাড়ি পড়বে?নাকি পড়বে নাহ্!অন্না মাথা থেকে এই ঘোরপ্যাঁচ বাদ দিয়ে শাড়ি পড়ে নিলো।অন্না একটা কালো রঙের শাড়ি পড়েছে।অন্না খুব ভালো করেই জানে আবির কালো রং পছন্দ করে।অন্নার শাড়ি পড়া হলে হালকা সেজে তার রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে যায়।

অন্নাকে দেখে তো সবাই অবাক।অনেমা বেগম মৃদু হেসে দাঁড়িয়ে আছেন।তিনি অন্নার সামনে এসে দাঁড়িয়ে চোখের কোণের কাজল নিয়ে অন্নার খোলা চুলের পাশে লাগিয়ে দিলো।অন্না মুচকি হেসে তার মাকে জড়িয়ে ধরলো।

অন্না অনেমা বেগমকে ছেড়ে তার বান্ধবীদের কাছে গেল।

যাক তোরাও শাড়ি পড়ে এসেছিস?(অন্না)

হুম তুই কালকে ফোন করে বললি শাড়ি পড়ে আসতে।তবে কি জানিস আমাদের সবার চেয়ে তোকে বেশি সুন্দর লাগছে।(দিশা)

নিতু আস্তে করে বললো,

হ্যাঁ আবির বাবু ফিদা হয়ে যাবেন।(নিতু)

অন্না নিতুর দিকে তাকিয়ে চোখ গরম দেখালো।অন্না একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

উনাকে তো অনেক কষ্ট দেই আমি।নাহলে এই ছোট্ট ইচ্ছাটা পূরণ করে একটু আনন্দ দিলাম আবির বাবুকে।(অন্না)

অন্নার বাবা নিচে নেমে আসলেন।উনাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে উনি অনেক ব্যস্ত আছেন।

এই তোমরা রেডি তো?আবিররা বাড়ির বাইরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।(অন্নার বাবা)

একদম আমরা সবাই রেডি।(অন্নার মা)

আচ্ছা তাহলে রওয়ানা দেওয়া যাক।(অন্নার বাবা)

ওয়েট!আমি মেইবি আমার ফোনটা রুমে রেখে এসেছি।তোমরা যেতে লাগো আমি আসছি।(অন্না)

সবাই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।অন্না রুমে এসে তার ফেন নিয়ে,বাড়ির দরজায় তালা লাগিয়ে বের হলো।গাড়ির সামনে এসে দেখে পিছনের একটা সিটও খালি নেই।শুধুমাত্র ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটটা খালি।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ড্রাইভিং সিটে বসে আছে আবির।

কি রে অন্না উঠে বসে পড়।(তিথি চোখ মেরে বললো)

অন্না কিছু করতেও পারছে না বলতেও পারছে না।চুপচাপ আবিরের পাশের সিটে উঠে বসে পড়লো।আবির আড়চোখে অন্নাকে পর্যবেক্ষণ করছে।অন্না শাড়ি পড়েছে দেখে আবির অনেকটাই খুশি হয়েছে।তবে সে একটা জিনিস ভেবে পাচ্ছে না এতো হালকা সাজে একটা মেয়েকে কিভাবে এতো সুন্দর লাগে?খালি চুলগুলো খোলা।আর চোখে হালকা কাজল।এতেই অসাধারণ সুন্দর লাগছে অন্নাকে।

কি গো আবির ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট করবেন না?(দিশা)

দিশার কথায় আবিরের ঘোর কাটলো।কিছুটা লজ্জা পেলো সে।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পথ চলতে শুরু করলো।গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।চারিদিকে কি সুন্দর গাছাপালা,নানা রঙের পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে।পাখির কিচিরমিচি শব্দে পথ চলতে বেশ লাগছে।

অন্না গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে চারিপাশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করছে।অন্নার খারাপ মনটা যেনো হঠাৎ করেই ভালো হয়ে গেল।তার ইচ্ছে করছে এই ফসলের মাঠের সরু পথ দিয়ে ছুটে বেড়াতে।ইচ্ছে করছে আকাশের পাখিদের মতো উড়ে যেতে।সত্যি মানুষ কল্পনাতে বেশ সুখী!

আবির আড়চোখে অন্নাকে দেখছে।সে তার প্রিয়তমাকে দূর থেকে দেখতেই বেশি পছন্দ করে।কারণ কাছে যাওয়ার সাধ্য তার নেই।হঠাৎ আবিরের মাথায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব হলো।এটা তার প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে।একদিকে ভালোবাসার মানুষের অবহেলা,অন্যদিকে এই মাথা ব্যাথা।

আবির সবটা জানে তারপরেও কেন সে অন্নাকে পাওয়ায় আশায় মেতে থাকে সে নিজেও তা জানে নাহ্।মাঝে মাঝে তার ইচ্ছা হয় অভিমান করে দূরে সরে যেতে।কিন্তু তা সে পারে না।অন্নার মুখটা মনে হতেই সে আবার বেকুল হয়ে উঠে তার প্রেয়সীকে একবার দেখার জন্য।

আবির।(আবিরের বাবা)

আকরাম সাহেবের ডাকে আবিরের ঘোর কাটলো।

হুম ডেড বলো।(আবির)

অনেকক্ষণ ধরে তো তুই ড্রাইভ করছিস।আর তা ছাড়া আমরা প্রায়ই চলে এসেছি।এক কাজ কর গাড়িটা কোন রেস্টুরেন্টে থামা।আমরা একটু ভুঁড়ি-ভোজ করেনি।(আবিরের বাবা)

আকরাম সাহেবের কথায় সবাই হেসে দিলো।আবির একটা রেস্টুরেন্ট দেখে গাড়িটা থামালো।সবাই গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।শুধুমাত্র অন্না বসে আছে।আবির অন্নার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

অনুলতা তুমি নামছো না কেন?(আবির)

আচ্ছা আপনি আমাকে অনুলতা ডাকেন কেন?(অন্না)

আবির মুচকি হাসি দিলো,

তার কোন বিশেষ কারণ নেই বললেই চলে।তবে কি জানো তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই আমার মনে হয়েছিল আমি আমার কল্পনার প্রিয়তমাকে পেয়ে গেছি।আর আমার কল্পনার প্রিয়তমার নাম আমি রেখেছিলাম ‘অনুলতা’।সেই কারণের তোমাকে আমি অনুলতা বলে ডাকি।(আবির)

অন্নার চোখ ছলছল করছে।একটা মানুষ এতোটা ভালোবাসতে জানে!অন্না নিজেকে সামলে চোখের কোণের পানি মুছে ফেললো।

দেখুন আমি আপনার কল্পনার প্রিয়তমা হওয়ার যোগ্যতা রাখি না।তাই আমি চাই না আপনি আমাকে এই নামে ডাকুন।(অন্না)

আমার কল্পনার প্রিয়তমা হওয়ার যোগ্যতা তুমি ছাড়া আর কারো নেই।আর তুমি হাজার বার বারণ করলেও আমি তোমাকে অনুলতা বলে ডাকবো।(আবির)

আবির আর অন্না একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনের চোখে কতো না বলা কথা ভেসে উঠেছে যা মুখ দিয়ে কেউ বলতে পারছে না।

আপনাদের দুজনের গল্প শেষ হলে গাড়ি থেকে নেমে আসুন।সবাই বসে ওয়েট করছে।(দিশা)

দিশার কথায় দুজনের ধ্যান ভাঙ্গলো।আবির গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে চলে গেল।অন্না আর দিশা ধীরে ধীরে হেঁটে চলেছে।

কি রে অন্না আবির বাবুর প্রেমে পড়লি নাকি?(অন্না)

তোরা না আসলেই পাগল।(অন্না)

তোর মুখ তো দেখছি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।(দিশা)

দেখ আমি এখন আর আগের মতো নেই।আমি এখন একজন ধর্ষিতা নারী।আমি চাই না আমার জন্য আবির বাবুর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক।(অন্না)

অন্নার চোখ ছলছল করছে।দিশা অন্নার চোখ মুছে দিলো।

অন্না তুই আবার এইসব বলা শুরু করলি?একদম এইসব বলবি নাহ্।(দিশা)

যেটা সত্যি সেটা তো আর কেউ লুকিয়ে রাখতে পারবে না।আর আবির বাবু এখনো কিছুই জানে না তাই এমন পাগলামি করে চলেছে।যখন সত্যিটা জানবে তখন আর উনার এই পাগলামো থাকবে না।উনিও আমাকে ঘৃণা করবে।(অন্না)




বিকেলের দিকে সিলেটে এসে পৌছালো তারা।আকরাম সাহেব আগেই হোটেলে রুম বুক করে রেখেছেন।সবাই যে যার রুমে চলে গেল।অন্না আর দিশা একটা রুমেই থাকলো।অন্না আর দিশার রুমের পাশেই আবিরের রুম।

অন্নার রুমের দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো।দিশা রুমে নেই।সে গিয়েছে চারিপাশ ঘুরে দেখতে।অন্নাকে অনেকবার বলেছিল কিন্তু অন্না যেতে নারাজ।কারণ অন্নার শরীর ম্যাজম্যাজ করছিল।এখন শাওয়ার নেওয়ার পরে কিছুটা ভালো লাগছে।শাওয়ার নিয়ে যেই এসে রুমের সোফায় বসলো ওমনি দরজায় কলিংবেল।

অন্না উঠে গিয়ে দরজাটা খুললো।অন্না তাকিয়ে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে।

আপনি এখানে?(অন্না)

অনুলতা সবাই তো ঘুরতে বের হয়েছে।তুমি একা আছো তাই আমি আসলাম তোমাকে নিয়ে যেতে।(আবির)

সবাই ঘুরতে বের হয়েছে ভালো কথা।আপনিও তো ঘুরতে যেতে পারতেন তাই-না?আপনি কেনো এখানে এসেছেন?(অন্না)

তোমার কাছে একটা কথার ব্যাখ্যা জানতে চাই।(আবির)

কোন কথার?(অন্না)

আমি চাই না তোমার রুমের ভিতরে যেতে।আমি যদি তোমার হোটেলের রুমে যাই তাহলে নানা মানুষ নানা কিছু ভাবতে পারে।তার কারণ হলো আমরা বিবাহিত না।সো তুমি আমার সাথে একটু বাইরে চলো।তারপরে সবটা বলছি।(আমি)

অন্না কিছু একটা ভেবে বললো,

আচ্ছা আপনি একটু ওয়েট করেন আমি ফোনটা নিয়ে আসছি।(অন্না)

আচ্ছা ঠিক আছে।(আবির)

আবির রিসিপশনের সামনে এসে দাঁড়ালো।রিসিপশনে বসে থাকা মেয়েটি বারবার আবিরের দিকে তাকাচ্ছে যা আবির বুঝতে পারছে।এতে আবিরের কিছুটা অশস্তি বোধ হচ্ছে।আবির যেই পিছনে ঘুরে যেতে যাইবে অন্নার সাথে ধাক্কা লাগলো।অন্না তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে লাগলে আবির তাকে টেনে ধরলো।

আবিরের স্পর্শে অন্নার হৃদকম্পন বেড়ে গেছে।সে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছে না।এই শীতের আগমনের সময়েও অন্না ঘেমে যাচ্ছে।আবির এক দৃষ্টিতে অন্নার দিকে তাকিয়ে আছে।।

আবির বাবু।(অন্না)

অন্নার ডাকে আবিরের ধ্যান ভাঙ্গলো।আবির কিছুটা লজ্জা পেয়ে অন্নাকে ছেড়ে দিলো।আবির মুচকি হেসে হাঁটা শুরু করলো।অন্নাও আবিরের সাথে হাঁটছে।অন্নার একটা জিনিস ভেবে হাসি পাচ্ছে আবির এতোটা লাজুক!

আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?(অন্না)

পাশেই একটা ক্যাফে আছে।ওখানে যাবো।ওখানে তোমার পছন্দের ভেলপুরি আছে।(আবির)

আপনি জানলেন কিভাবে আমি ভেলপুরি পছন্দ করি?(অন্না)

যাকে এতোটা ভালোবাসি তার বিষয়ে এতোটুকু জানাই যায়।(আবির)

অন্না আবিরের কথায় মুচকি হাসলো।পরক্ষনেই কিছু মনে হতে নিজেকে শক্ত করে নিলো।

আবির বাবু আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।(অন্না)

হুম বলবে তো।আরেকটু গেলেই ক্যাফে।ওখানে গিয়েই বলো।বাই দ্যা ওয়ে আগে আমি বলবো।আর আমি যেটা বলবো সেটার ব্যাখ্যা দিতে হবে।(আবির)

আপনি কি এমন বলতে চান?(অন্না)

অনুলতা রিলাক্স।কেবল তো সন্ধ্যা।রাত তো হয়ে যায়নি।সো একটু ধৈর্য্য ধরো।(আবির)

আবির বাবু আপনি এখনো অনেক কিছুই জানেন না।যার জন্য এতোটা ধৈর্য্য ধরতে পারছেন।তবে এগুলো আপনাকে না জানালে আমি তো শান্তি পাচ্ছি না।(অন্না মনে মনে বললো)

/\

মিমি তার রুমের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আর চোখের পানি ফেলছে।সে আর পারছে না ফাহাদের এইসব নষ্টামি সহ্য করতে।

না আমাকে আরো শক্ত হতে হবে।আমি ফাহাদকে আমার করেই ছাড়বো।(মিমি)

হঠাৎ চেনা স্পর্শে মিমির বুক কেঁপে উঠলো।ফাহাদ এসে মিমিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।যার কারণেই মিমির এমন লাগছে।মিমি পিছনে ফিরে দেখে ফাহাদ বাঁকা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

হঠাৎ আমার কাছে আসলি যে?(মিমি)

ফাহাদ মিমির সামনে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো,

কালকে তোর সাথে একটু বেশিই বাজে বিয়েভ করে ফেলেছি।তুই তো জানিস আমি কোন মেয়েকে কষ্ট দিতে পারি না।তাই আজকে চলে আসলাম তোর মুড ঠিক করতে।(ফাহাদ)

তা আমার মুড কিভাবে ভালো করবি?নিশ্চয়ই তুই রোজ মেয়েদের সাথে যেটা করে থাকিস সেটা করে?(মিমি দাঁতে দাঁত চেপে বললো)

ফাহাদ মিমির কথায় জোরে হেসে দিলো।তারপরে মিমির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

ইউ নো আমি ইউজ করা জিনিস আর ইউজ করি না।সো তোর মুড ভালো করবো এখন তোকে নিয়ে ঘুরতে যেয়ে।(ফাহাদ)

আচমকাই মিমির মুখে হাসি ফুটলো।ফাহাদ এক দৃষ্টিতে মিমির হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

__?__

ক্যাফের মধ্যে বসে আছে আবির আর অন্না।দুজনের মাঝে নিরবতা বিরাজ করছে।আবির নিরবতা ভেঙে বললো,

তুমি ধর্ষিতা এটার মানে কি অনুলতা?(আবির)

অন্না অবাক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

এতোটা অবাক হতে হবে না।দিশাকে যখন এই কথা বলতেছিলে তখন আমি শুনেছি।কারণ আমি ফিরে এসেছিলাম গাড়ির চাবি নিতে।(আবির)

#চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here