#তোমাতেই_আমি_মগ্ন ?
#পর্ব_০৮,০৯
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
০৮
সূর্যের আলো চোখে পড়তে অন্নার ঘুম ভেঙে গেলো।হাত-পা চারিদিকে ছড়িয়ে অবশ শরীরটাকে ফুরফুরে করলো।তারপরে এক চিলতে হাসি দিয়ে উঠে বসলো।
পাশে তাকিয়ে দেখে দিশা মুখে বালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।হয়তো সূর্যের আলো চোখে পড়ছে তাই এমনভাবে শুয়ে আছে।অন্না ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল আটটা বাজে।অন্না ধাক্কা দিয়ে দিশাকে ডাকছে।অন্নার ধাক্কায় দিশার ঘুম ভেঙে গেলো।দিশা উঠে বসে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে অন্নার মুখে বালিশটা ছুড়ে মারলো।অন্না বালিশটা ধরে খিলখিল করে হাসছে।
–
–
–
আবির হোটেলের নিচে বসে আছে ফারাবীর অপেক্ষায়।কিছু সময়ের মধ্যে ফারাবী এসে হাজির হলো।চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে হোটেলের ভিতরে প্রবেশ করলো।আবির ফারাবীকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।ফারাবী মুখে হাসি এঁকে আবিরের সামনে এসে দাঁড়ালো।আবির আর ফারাবী হ্যান্ডশেক করলো।
মি.চৌধুরী,কি অবস্থা আপনার?(ফারাবী)
এইতো চলে যাচ্ছে।আপনার কি অবস্থা?(আবির)
আপনি যেমন আমিও তেমনই আছি।কোনভাবে চলে যাচ্ছে।(ফারাবী)
দুজনে হেসে চেয়ারে বসলো।
তা আমাকে হঠাৎ ডাকলেন কেন?(ফারাবী)
আসলে কিছু বিষয়ে আলোচনা করা দরকার ছিলো।কারণ আমরা আজকে রাতে ঢাকায় ব্যাক করবো সো আর তো ডিসকাশন করতে পারবো নাহ্।(আবির)
টেনশন করেন না মি.চৌধুরী।আমরাও কালকে ঢাকায় যাবো।বিকজ এখানের কোম্পানির থেকে ঢাকার কোম্পানিতে আমার আর বাবার প্রয়োজন বেশি।(ফারাবী)
ওহ্ তাহলে তো ভালোই হলো।আর কোনো চিন্তাই রইলো না।(আবির)
ইয়েস।একদম চিন্তাহীন মানুষের মতো ঘুরে বেড়ান।ওকে তাহলে আমি আজ আসি।(ফারাবী)
ফারাবী হোটেল থেকে বের হয়ে দেখে অন্না একটা বেঞ্চে বসে আছে।ফারাবী গিয়ে অন্নার পাশে বসলো।
অন্না হঠাৎ করে ফারাবীকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায়।হঠাৎ করে সে মনে করে এটা ফাহাদ তবে পরক্ষণে মনে হয় না এটা ফারাবী।
আপনি এখানে এসে বসলেন কেন?(অন্না)
এটা পাব্লিক প্লেস।সো সবাই এখানে বসতে পারে।আর এতো রিয়েক্ট করার তো কিছু নেই।আমি অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে বসেছি।(ফারাবী)
অন্না চোয়াল শক্ত করে বলে,
দেখুন এখানে আরো বেঞ্চ আছে।আপনি সেখানে গিয়ে বসেন।(অন্না)
ওই বেঞ্চ গুলোতে তো আর আপনি নেই।(ফারাবী)
মানে?(অন্না)
আরে আমি বলতে চাচ্ছি যে আপনি এমন একা একা বসে থাকেন কেনো?(ফারাবী)
সেটা আপনি জেনে কি করবেন?(অন্না)
আমার মনে হয় হয়তো ব্রেকআপ হয়েছে।কারণ ব্রেকআপ হলেই মানুষ এমন চুপচাপ হয়ে যায়।(ফারাবী)
আপনার মনে হয় অনেক অভিজ্ঞতা আছে।(অন্না)
কি যে বলেন!সারা জীবন পড়েছি বয়েজ স্কুল,কলেজে।আমার জীবনে প্রেম আসার প্রশ্নই নেই।তার উপরে আবার ব্রেকআপ!(ফারাবী হাসি দিয়ে বললো)
অন্না ফারাবীর কথায় মুচকি হাসলো।তারপরে বলতে শুরু করলো,
আসলে জানেন আমার লাইফে ব্রেকআপের চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণের কষ্ট আছে।যেই কষ্ট ব্রেকআপের কষ্টকেও হার মানায়।(অন্না)
কি এমন কষ্ট আছে আপনার লাইফে?(ফারাবী)
সেটা আপনার জানতে হবে না।আর আপনি এখন এখান থেকে চলে যান।(অন্না নিজেকে শক্ত করে বললো)
কি মেয়ে রে বাবা!হঠাৎ করে বিয়েভ চেঞ্জ হয়ে যয়।(ফারাবী)
আমি এমনিই।(অন্না)
ফারাবী আর কিছু না বলে অন্নার পাশে থেকে উঠে দাঁড়ালো।কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে কি মনে করে আবার অন্নার সামনে এসে দাঁড়ালো।
আবার ফিরে আসলেন কেনো?(অন্না)
আপনার সাথে এতো কথা হলো কিন্তু আপনার নামটাই তো জানা হলো না।(ফারাবী)
নাম জেনে আপনি কি করবেন?(অন্না)
দেখুন আমি কতো ভদ্রভাবে কথা বলছি আপনার সাথে।আর আপনি কিনা আমার সাথে এমন রুড বিয়েভ করছেন।(ফারাবী নরম সুরে বললো)
আসলেই তো!একজন অচেনা লোকের সাথে আমার এতো বাজে বিয়েভ করা ঠিক না।(অন্না মনে মনে বললো)
অন্না চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
আমার নাম অন্না।(অন্না)
ওহ্ অনুমা।(ফারাবী)
সরি অনুমা না অন্না হবে।(অন্না)
তবে আমি অনুমা-ই ডাকলো।এটা আপনার সাথে যায়।কারণ আপনার মধ্যে মা মা ভাব আছে।(ফারাবী)
ফারাবী মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।অন্না বসে বসে রাগে ফুসছে।
কি অসভ্য লোক!আমার মধ্যে নাকি মা মা ভাব আছে!ইচ্ছে করছে মুখ ভেঙে দিতে।(অন্না)
////
ফাহাদ বসে বসে সিগারেট টানছে।মিমি এসে তার হাত থেকে সিগারেটটা টেনে ফেলে দিলো।ফাহাদ মিমির দিকে রাগী লুকে তাকালো তবে নিমিষেই রাগ যেন ধুয়ে পানি হয়ে গেলো।ফাহাদ এক দৃষ্টিতে মিমির দিকে তাকিয়ে আছে।লাল গাড়িতে মিমিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।ফাহাদের চোখ ফেরাতে মন চাইছে না।সে উঠে মিমির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।মিমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।হয়তো ফাহাদ এভাবে তাকিয়ে থাকায় তার কিছুটা লজ্জা লাগছে।
তোকে অনেক সুন্দর লাগছে মিমি।(ফাহাদ)
মিমি চোখ তুলে ফাহাদের দিকে তাকালো।তার চোখ ছলছল করছে।ফাহাদ এই প্রথম তার প্রশংসা করলো।
কি রে চোখে আবার পানি আসলো কেন?(ফাহাদ)
তোর কথা শুনে।(মিমি)
আমি তো বাজে কিছু বলিনি।(ফাহাদ)
মিমি চোখ মুছে মুচকি হেসে বললো,
আমি জানি তো বাজে কথা বলিসনি।ভালো কথা বলেছিস বলেই তো ভালো লাগলো।(মিমি)
ফাহাদ মিমির কথায় জোরে হেসে দিলো।
আরে এইসব আবেগ বাদ দে।এই ফাহাদ হোসেন কারো হাতে ধরা দেওয়ার পাত্র না বুঝছি।(ফাহাদ)
ফাহাদ বাঁকা হাসি দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলে গেলো।
এতোটা অবহেলা করছিস তো!ওকে আমি আর কখনো তোর কাছেই আসবো না।(মিমি)
মিমি চোখ রাঙিয়ে ফাহাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
__?__
আচ্ছা অন্না একটা কথা বল তো ফাহাদ আর ফারাবী কি আলাদা?(তিথি)
অন্না রুমে বসে বসে কফি খাচ্ছিল।আর বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।আড্ডার মাঝে হঠাৎ তিথি এই প্রশ্ন করলো।
আমার মনে হয় দুজনে আলাদা।কারণ ফারাবী আর ফাহাদের চেহারার মিল থাকলেও।দুজনের মাঝে অনেক অমিল আছে।(অন্না)
অন্না যা বলছে তাই ঠিক।কারণ ও আমাদের থেকে ভালো বুঝবে।কারণ ওই ফাহাদ জানোয়ারটাকে অন্নাই ভালো করে চিনে।(নিতু)
/?/
নিশানের ফোনে একটা কল আসলো।নিশান নাম্বারটা দেখে মোবাইলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।নিশান নিজেকে স্বাভাবিক করে কলটা রিসিভ করলো।
কেমন আছো নিশান?(মেয়ে)
ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?(নিশান)
আছি কোনমতে।তা আবির কেমন আছে?(মেয়েটা)
মারিয়া আপনি এখনো আবিরের কথা জিগাসা করবেন?(নিশান)
আগে তো আমাকে মারিয়া ভাবি বলতে।এখন শুধু মারিয়া!(মারিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো)
আসলে…..(নিশান)
নিশানকে থামিয়ে মারিয়া বললো,
আবিরকে পারলে বলো একবার জানি আমাদের সাথে দেখা করে যায়।আমার কল তো ও আর রিসিভ করে না।তুমি তো জানোই আমার মেয়েটা যে এই পৃথিবীতে এসেছে।(মারিয়া)
আবির সবটা জানে।(নিশান)
কি বললো ও?(মারিয়া)
তেমন কিছুই বলেনি।(নিশান)
মারিয়া চোখ বন্ধ করলো।দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
আচ্ছা আমি তাহলে রাখি।(মারিয়া)
মারিয়া কলটা কেটে দিলো।নিশান মোবাইলটা রেখে দিয়ে চুপ হয়ে বসে আছে।
–
–
–
আবির আমার সাথে এমনটা না করলেও পারতে!(মারিয়া)
মারিয়ার ছোট মেয়েটা কেঁদে উঠলো।মারিয়া গিয়ে তাকে পরম যত্নে কোলে নিয়ে আদর করছে।
“?”
আবির তুই যা করছিস সেটা ঠিক না।(নিশান)
নিশান তোর কি হয়েছে আমাকে বল তো?(আবির)
আমাকে মারিয়া কল করেছিল।(নিশান)
মারিয়ার নামটা শুনতেই আবিরের রুহু কেঁপে উঠলো।সে তুতলিয়ে জিগাসা করলো,
কখন কল করেছিল?(আবির)
একটু আগে।(নিশান)
তোর কাছে কল করলো কেন?(আবির)
নিশান মুচকি হেসে বললো,
তুই তো মারিয়ার নাম্বার ব্লকলিস্টে রেখে দিয়েছিস সো বুঝে নে আমাকে কেনো কল করেছে!আর একটা কথা বলি,তুই একসাথে দুইটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলছিস আর এখন তো আর একটা বাচ্চা এসেছে।(নিশান)
চুপ কর নিশান।একদম এইসব বলে আমার মাথা নষ্ট করবি নাহ্।(আবির ধমক দিয়ে বললো)
নিশান চোখ রাঙিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।আবির বিছানায় বসে রাগে কাঁপছে।তার মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
আসলেই কি আমি অন্যায় করছি?কিন্তু আমি অনুলতাকে ভুলতে পারবো নাহ্।(আবির)
–
–
–
অন্না তার বাবা-মার রুমে গেল।রুমে গিয়ে দেখে দুজনে বসে গল্প করছে।অন্না মুচকি হেসে বললো,
এই যে রোমিও আর জুলিয়েট এটা আপনাদের বাড়ি না।এখানে যে দরজা লক না করে বসে আছেন।এটা কিন্তু ঠিক না।কত বিপদ হতে পারে!(অন্না)
দেখেছিস তোর বাবা সবসময় এমনটা করে।বুড়ো কোথাকার!(অন্নার মা)
এই অনেমা একদম আমাকে এইসব বলবে না।আমি মোটেও বুড়ো না।আমি যথেষ্ট স্মার্ট।পাখি মা তুই কি বলিস?(অন্নার বাবা)
অন্না গিয়ে মঈন সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বললো,
আম্মু একদমই না।আমার বাবা এখনো স্মার্ট আছে।(অন্না)
হয়েছে আর বাবার হয়ে চামচামি করতে হবে না।(অন্নার মা)
অনেমা বেগম গিয়ে অন্নার মাথায় হাত রাখলো,
মা তোর মনটা এখন ভালো আছে?(অন্নার মা)
জ্বি আম্মু এখন অনেকটা ভালো আছি আমি।(অন্না)
অনেমা বেগম অন্নাকে জড়িয়ে ধরে তার মাথায় একটা চুমু দিলো।অন্না-ও মুচকি হাসি দিয়ে অনেমা বেগমের গালে একটা চুমু দিলো।
আমার সুন্দরী আম্মু।(অন্না)
অনেমা বেগম আর মঈন সাহেব জোরে হেসে দিলো।অন্না-ও হাসছে।
আচ্ছা অনেক হাসাহাসি হয়েছে।এখন বলো আমরা ব্যাক করবো কখন?(অন্না)
এই তো রাতের বেলা।(অন্নার বাবা)
ওকে তোমরা দুজনে বরং প্রেম করো।আর আমি না হয় আমার গ্যাংয়ের সাথে গিয়ে গল্প করি।(অন্না)
অন্না তার বাবা-মায়ের রুম থেকে বের হতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো।তাকিয়ে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে।আবিরকে দেখে অন্না কিছুটা অবাক হলো।কারণ আবিরের চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে।তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে কিছু নিয়ে ভয় পেয়ে আছে।
আবির বাবু কি হয়েছে আপনার?(অন্না)
আবির অন্নার হাত চেপে ধরলো।অন্না কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।কারণ আবির আগে কখনো এমন বিয়েভ করেনি।
অনুলতা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আমি তোমাকে হারাতে চাই না।(আবির)
অন্না বুঝতে পারে আবির হয়তো কিছু নিয়ে ভয় পাচ্ছে।
আবির বাবু রিলাক্স।আপনি এমন অদ্ভুত বিয়েইভ করছেন কেন?(অন্না)
অন্নার কথায় আবির কিছুটা শান্ত হয়।অন্নার হাতটা ছেড়ে দেয়।তারপরে কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে।তারপরে অন্নার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দেয়।
কি হয়েছিল আপনার আবির বাবু?(অন্না)
কিছু না।জাস্ট এমনি।(আবির)
আবির অন্নার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেলো।অন্না আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে,
আবির বাবু এমন করলো কেনো?(অন্না)
অন্না আর কিছু না ভেবে তার রুমের দিকে হেঁটে চলে গেলো।রুমে গিয়ে দেখে তিন বান্ধবী বসে গল্প করছে সঙ্গে নিশান-ও আছে।নিশান অন্নাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।
অন্না আপনি এসেছেন।আসলে আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে।আমি তার জন্যই এই রুমে এসেছিলাম।(নিশান)
#চলবে………..
#তোমাতেই_আমি_মগ্ন ?
#পর্ব_০৯(ধামাকা)
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
অন্না নিশানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অন্না নিশানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
জ্বি কি বলবেন বলুন।(অন্না)
আমি একটু আলাদাভাবে কথা বলতে চাই আপনার সাথে।আমি যা বলতে চাই আমার মনে হয় তা আপনার জানা উচিত।(নিশান)
হঠাৎ করে অন্নাদের রুমের দরজায় কলিংবেল বেজে উঠলো।দিশা দরজা খুলে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে।নিশান মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
শিট!(নিশান)
অন্না নিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
আপনি জেনো কি বলবেন বলছিলেন।(অন্না)
আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম আবির না আপনাকে অনেক ভালোবাসে।বেচারাকে আর কষ্ট দিয়েন না।(নিশান)
নিশানের কথায় সবাই হেসে দেয়।আবির লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।তবে অন্নার চোখ নিশানের মুখের দিকে।কারণ তার মনে হচ্ছে নিশান অন্য কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু আবির আসার কারণে কথা ঘুরিয়ে ফেললো।
–
–
–
সবাই হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।দুইটা গাড়ি রেডি করা হয়েছে তাদের জন্য।একটা গাড়ি আবির ড্রাইভ করবে আরেকটা নিশান।অন্না চালাকি করে নিশানের গাড়িতে উঠে পড়লো।কারণ তার জানতে হবে নিশান কি বলতে চেয়েছিলো!
নিশান আর দিশা সামনের সিটে।তিথি আর অন্না পিছনে।বাকি সবাই আবিরের গাড়িতে।আবির খুব করে চেয়েছিলো অন্না জানি তার গাড়িতে উঠে।তবে অন্না বাহানা দেখিয়ে নিশানের গাড়িতে উঠেছে।
আবিরের গাড়ি আগে আর নিশানেরটা পিছনে।দিশা আর তিথি ঘুমিয়ে কাঁদা তবে অন্না জেগে বসে আছে।অন্না আস্তে করে বললো,
নিশান ভাইয়া আপনি তখন কি বলতে চেয়েছিলেন?(অন্না)
নিশান লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখলো অন্না ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।নিশানের মুখে হাসি ফুটলো।
যাক আপনি তাহলে ঘুমান নাই।খুব ভালো করেছেন।(নিশান)
আমার কেনো জানি মনে হলো তখন আপনি আমাকে অন্যকিছু বলতে চেয়েছিলেন তবে আবির বাবু আসায় কথা ঘুরিয়ে ফেলেছেন।(অন্না)
ইউ আর রাইট।ওই কথা বলার আমার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না।আমি অন্য কথাই বলতে চেয়েছিলাম।(নিশান)
হুম এখন বলুন।(অন্না)
দিশা আর তিথি?(নিশান)
ওরা ঘুমিয়ে আছে।এতো সহজে ওদের ঘুম ভাঙ্গবে নাহ্।(অন্না)
নিশান গাড়ির গতি কমিয়ে দিলো।তারপরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
আমি আপনাকে সবটা বলবো নাহ্।সবটা আপনার আবিরের মুখ থেকেই শুনতে হবে।আমি জাস্ট আপনাকে সাবধান করতে পারবো।(নিশান)
কি বলতে চাইছেন?(অন্না)
আবির আপনাকে ঠকাচ্ছে।মেইবি ও আপনাকে ভালোবাসে তবে ওর সাথে আরো দুইটা জীবন জড়িয়ে আছে।কানাডায় ওর বিয়ে করা বউ মারিয়া আর তার মেয়ে আছে।(নিশান)
অন্না জেনো আকাশ থেকে পড়লো।সে কি করবে বুঝতে পারছে নাহ্।অন্নার চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো।যেই না আবিরকে একটু বিশ্বাস করতে শুরু করলো সেই এমন একটা সত্যি তার সামনে আসলো!অন্না চোখের পানি মুছে নিজেকে শক্ত করে বললো,
আমি সম্পূর্ণ বিষয়টা জানতে চাই।(অন্না)
আমি এইটুকুই জানি।কারণ আবির আমাকে মারিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে বলেছিলো ‘তোর ভাবি’।দ্যান আমিও ভাবি ডাকতে শুরু করি।আর আবির আপনাকে ভালোবাসতো তা আগে থেকেই জানি।তবে হঠাৎ একদিন এসে আমাকে বললো সে নাকি বিয়ে করে ফেলেছে।আমিও খুশি হয়েছিলাম।সে বললো আপনাকে নাকি ভুলে গেছে।তবে হঠাৎ করে যখন পড়াশোনা শেষ হলো তখন দেশে আসার ভূত চাপলো।তখন মারিয়া প্রেগন্যান্ট ছিলো।আবির মারিয়াকে এক প্রকার শাসিয়ে দেশে চলে এসেছিলো।আর আমাকেও বলে এসেছিলো আমি জানি মারিয়ার সাথে সব সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলি।ও-কে আর ভাবি বলে সম্মোধন না করি।তাই আমি মারিয়ার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দি।আর আবিরের দেশে আসার কারণ হলো আপনি।ওর হঠাৎ করেই আপনার প্রতি আবার ভালোবাসা জেগে উঠেছে।আবির একজন সাইকোলজিক্যাল পেসেন্ট।হয়তো আপনি এগুলো জানেন না আপনাকে জানানো উচিত।আপনার একটা ভুল ডিসিশান দুইটা জীবন নষ্ট করে দিবে।আর আপনার জীবনটাও নষ্ট হয়ে যাবে।তাই আমি আপনাকে এগুলো বলতে বাধ্য হলাম।(নিশান)
অন্নার চোখে পানি।রাগে তার মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে।
আবিরকে তো আমি জাস্ট মেরে ফেলবো।লজ্জা করে না উনার!উনি একসাথে তিনটা জীবন নিয়ে খেলা করছেন।আমার আর মারিয়ার কথা বাদ দিলাম কিন্তু বাচ্চাটার কথা সে একবার ভাবলো না!আর আমি যদি আবিরের প্রতি দূর্বল হয়ে যেতাম তাহলে তো আরো বড় ক্ষতি হয়ে যেতো!(অন্না)
অন্না এখানে আপনার কোনো দোষ নেই।আর আবিরকে কিছু বলার দরকার নেই।আমার মনে হয় আবির নিজেই সবটা আপনাকে জানাবে।(নিশান)
ঢাকায় গিয়ে উনার সাথে সব যোগাযোগ আমি বন্ধ করে দিবো।(অন্না)
এটা ভুলেও করবেন না আপনি।কারণ তাহলে ও আরো সাইকো হয়ে যাবে।হয়তো আপনার কোনো ক্ষতি করে ফেলতে পারে!(নিশান)
অন্না তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
আমার জীবনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে।আর কোনো কিছুতেই আমি ভয় পাই না।(অন্না)
/?/
বাবা আমরা কালকে ঢাকায় যাচ্ছি।মনে আছে তো তোমার?(ফারাবী)
তুই তো জানিস আমার ঢাকায় যেতে মন চায় না।(ফারাজ খান)
বাবা জাস্ট কাম ডাউন!এতো ভাবার কিছু নেই।আর যেতে তো হবেই তাই-না।(ফারাবী)
তোকে নিয়ে আমার অনেক গর্ব হয়।তোর মতো একটা ছেলে আমার হবে আমি কখনো ভাবিনি।(ফারাজ খান)
ফারাবী মুচকি হেসে তার বাবার পাশে থেকে উঠে তার রুমে চলে গেলো।সব প্যাকিং শেষ করে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।এক দৃষ্টিতে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।তার মনের মাঝে বারবার অন্নার মুখটা ভেসে উঠছে।
কি হচ্ছে আমার সাথে?আমি কেনো বারবার অনুমার কথা ভাবছি?আমি কি তার প্রেমে পড়ে গেলাম?মনে হয় প্রেমে পড়ে কাজ হবে না।সে তো আমাকে পাত্তায়ই দিবে নাহ্।(ফারাবী)
/?\
অন্নার ঘুম ভাঙলো তিথির ডাকে।কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গেছে কে জানে!অন্না চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে তারা একটা রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।হাতে থাকা হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দেড়টা বাজে।অন্না গাড়ি থেকে নেমে রেস্তোরাঁর ভিতরে গেলো।সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে আর হালকা কিছু খেয়ে নিচ্ছে।তবে অন্নার রাগ হচ্ছে আবিরকে দেখে।যাকে সে ভাবতো কতো ভদ্র!তার এই ভদ্র চেহারার পিছনে যে মুখোশ আছে তা অন্না ঘুণাক্ষরে-ও টের পায়নি।
অন্না এক কাপ কফি আর একটা বার্গার নিয়ে গাড়িতে চলে আসলো।কারণ আবিরের মুখোমুখি হতেই তার বিরক্ত লাগছে এখন!আগে আবিরের প্রতি যেই বিরক্তিটা ছিলো তা আবার নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে।
অন্না গাড়িতে বসে বসে খাচ্ছে আর নিশানের কথাগুলো ভাবছে।সবাই এসে গাড়িতে বসলো।আবির এসে অন্নার বসে থাকা সিটের জানালার গ্লাসে হালকা শব্দ করলো।অন্না তাকিয়ে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে।অন্নার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও গ্লাসটা খুললো।আবির একটা ক্যাটবেরী তার দিকে এগিয়ে দিলো।
সবাইকে দিয়েছি।তোমারটা দেওয়া হয়নি।(আবির)
অন্না ক্যাটবেরীটা নিলো।তারপরে গ্লাস লাগাতে লাগাতে বললো,
অন্য কারো কাছে দিয়ে দিলেই তো পারতেন।(অন্না)
আবির কিছু না বলে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।অন্না ক্যাটবেরীর প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে একটা চিরকুট লাগানো।অন্না বিরক্তির সাথে চিরকুটটা খুললো।
কিছু জিনিস স্পর্শ করা যায় না
তবে দূরে থেকে দেখতে মন্দ লাগে না!|-?
অন্না চিরকুটটা পড়ে মুড়ে রেখে দিলো।
কি রে আবির বাবু চিরকুটে করে কি লিখে দিলো?(তিথি)
এই যে তোকে নাকি তার খুব ভালো লেগেছে সেটাই লিখে দিয়েছে।(অন্না)
তিথি বুঝতে পারলো অন্নার মুড অফ তাই কথা না বাড়িয়ে চুপ হয়ে বসে রইলো।
!??️!
বাড়ি ফিরে অন্না সোজা তার রুমে চলে গেলো।নিশান দিশা আর তিথিকে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে গিয়েছে।আর নিতুকে আবির পৌঁছে দিবে কারণ আবিরের বাড়ির পাশেই নিতুর বাড়ি।
অন্না এসে তার রুমের দরজা লাগিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বিছানায় বসলো।
আমার আগেই মনে হতো আবির বাবু সবার সামনে যেই রুপটা দেখায় সেটা আসল না।আজ তার প্রমাণ পেয়ে গেলাম।ছিঃবউ বাচ্চা থাকতে আবার এসেছে আমাকে বিয়ে করতে!ওর মতো ছেলেকে তো পিটিয়ে মারা উচিত।(অন্না)
অন্না পরক্ষনে ভাবলো,
আচ্ছা আমার মনটা হঠাৎ করেই ভালো লাগছে।কেন জানি আমি যে ধর্ষিত এটা ভেবে এখন আর মন খারাপ হচ্ছে না।ধন্যবাদ আল্লাহ আমার মন ভালো করে দেওয়ার জন্য আর মাথা থেকে যা ঘটেছে তা দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য।আমি এখন নতুন করে বাঁচবো।ফাহাদ আর আবির দুটোকেই শাস্তি দিবো।(অন্না)
অন্না বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।বিছানায় শুতেই তার চোখে ঘুম চলে আসলো।কারণ সারারাত একটুও ভালোভাবে তার ঘুম হয়নি।
“✨”
ফারাবী তার মা-বাবাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছে।ঢাকায় এসেছে তাদের বাড়িতে উঠেছে।এক সময় তারা এই বাড়িতে থাকতো।এক বিশ্রী কারণের জন্য তারা এই বাড়ি ছেড়ে সিলেটে চলে গেছিলো।
আচ্ছা লোকেরা যদি আমাদের এখনো আগের মতো অপমান করে?(ফারাজ খান)
আগের লোকেরা এখন এখানে কেউ থাকে না বাবা।আর ফারাবী খানের বাবা-মাকে অপমান করার সাহস কারো নেই।(ফারাবী)
ফারাবী ওর কোনো খবর তোর কাছে আছে?(রুমানা হোসেন!ফারাবীর মা!)
না আম্মু।অনেকদিন পরে ঢাকায় এসেছি তো।তাই কিছু জানি না এখনো।(ফারাবী)
রুমানা হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার রুমের দিকে চলে গেলেন।ফারাবী তার মায়ের যাওয়ার দিকে নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
–
–
–
ফাহাদ রাফসানের কলার টেনে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।ফাহাদ রাগে গজগজ করছে।সে ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছে না।কারণ নেশা করে একদম বেতাল হয়ে গেছে।
মিমি কালকে দিয়ে একবারো আসলো না কেনো্?(ফাহাদ)
বস আমি কিভাবে জানবো।আপনার সাথেই তো ম্যাডামের কথা হয়েছিলো।(রাফসান)
ও আমার ফোন-ও রিসিভ করছে না।আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো আমি মিমি না দেখে থাকতে পারি না।(ফাহাদ)
বস আমি জানি তো।তবে আপনিই তো মিমি ম্যাডামকে বারবার অবহেলা করে ফিরিয়ে দেন।হয়তো তাই অভিমান করে ম্যাডাম আসছে নাহ্।(রাফসান)
ও যেটা চায় আমি সেটা চাই না।তবে আমি এটাও চাই না যে মিমি আমার থেকে দূরে সরে থাকুক।আমি চাই ও আমার কাছাকাছি থাকবে।(ফাহাদ)
কথাগুলো বলে ফাহাদ ধাক্কা দিয়ে রাফসানকে সোফায় ফেলে দেয়।
#চলবে………