তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ১৬ (ধামাকা)

0
1444

#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ১৬ (ধামাকা)
#লেখকঃ- Tamim Ahmed

–বাসায় চলে এসেছি তো, নামছ না কেন.?

হঠাৎ মায়ার এমন কথায় তামিম চারপাশে তাকিয়ে দেখলো গাড়িটা তাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তামিম কিছু না বলে চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতরে চলে আসলো। তামিমের পিছন পিছন মায়াও বাসার ভিতরে চলে আসলো। রুমে এসে মায়া তামিমকে উদ্দেশ্য করে বললো…

মায়াঃ আচ্ছা তোমার কি হয়েছে বল তো.? এক্সিডেন্টের আগে অফিসে কাজ করার সময় কয়েকবার তোমায় কোনো একটা বিষয় নিয়ে অনেক চিন্তিত দেখেছিলাম। আবার যেদিন তোমায় হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয় সেদিনও দেখলাম একা একা কি যেন ভেবে চলছ। তারপর এখন অফিস থেকে বাসায় আসার সময়ও একবার দেখলাম কি যেন ভাবছ। গাড়ি বাসায় এসে দাঁড়িয়ে আছে আর আমি তোমায় ডেকে চলছি অথচ তুমি প্রথমে আমার কথা শুনতেই পাওনি। কি নিয়ে এতো ভাব তুমি সারাক্ষণ.? বল তো আমায়।

তামিমঃ না মানে তোমার আম্মু কি আমাদের বিয়েটা মেনে নিবেন না কখনো.?

মায়াঃ হঠাৎ এই কথা কেন.?

তামিমঃ এমনিই জানতে মন চাইলো তাই।

মায়াঃ তাঁর কোনো নিশ্চয়তা নেই।

তামিমঃ ওহ। আব্বা আম্মা কি আমার এক্সিডেন্টের বিষয়ে কিছু শুনেছেন.?

মায়াঃ বলেছি আমি তাদেরকে। যখন তুমি অজ্ঞান অবস্থায় ছিলে তখন আব্বু একবার এসে তোমায় দেখে গেছিলাম হাসপাতালে থাকাকালীন। আর সামনের শুক্রবারে একবার বাসায় আসবেন বলেছেন।

তামিমঃ আচ্ছা তাহলে আব্বার জন্য রান্না-বান্না করে রাখিও।

মায়াঃ আচ্ছা।

তারপর তামিম আর মায়া দুজনে ফ্রেশ হয়ে নিল। ফ্রেশ হয়ে মায়া রান্নাঘরে চলে গেল। এই সুযোগে তামিম তাঁর ফোনটা বের করে একজনকে কল দিল। দুইবার রিং হওয়ার পর অপরপ্রান্তের ব্যাক্তিটা কল রিছিভ করলো।

–হ্যাঁ বল.?

তামিমঃ কয়েকদিন আগে আমাকে যেই গাড়িটা ধাক্কা দিয়েছিল সেই গাড়িটার মতোই একটা গাড়ি আজ মায়ার অফিসের কিছুটা সামনে দেখেছি। গাড়ির রঙ কালো আর গাড়ির নাম্বার ____ এইটা। খুঁজ নিয়ে দেখ এই গাড়িটা কার। আর আমাকে ওই ব্যাক্তিটার সব ডিটেইলস জানাও।

অপরপ্রান্তের লোকটা ‘ওকে’ বলে কল কেটে দিল।

–––––––

রাতের খাবার খেয়ে তামিম আর মায়া রুমে এসে বসে আছে এমন সময় মাইশা এসে রুমে ঢুকলো আর তামিমকে উদ্দেশ্য করে বললো…

মাইশাঃ আব্বু আমার একটা ভাই লাগবে।

মাইশার কথা শুনে তামিম আর মায়া দুজনেই থতমত খেয়ে গেল। তামিম নিজেকে সামলে নিয়ে বললো…

তামিমঃ ভাই লাগবে কেন মামনি.?

মাইশাঃ আমার ফ্রেন্ড ইশার কয়েকদিন আগে একটা ভাই হয়েছে। এখন সে স্কুলে এলে সারাক্ষণ শুধু তাঁর ভাইয়ের কথা আমাদের কাছে বলে বেড়ায়। তা ছাড়া রিয়া আর সোনিয়ারও ভাই আছে তাঁরা সারাক্ষণ একে অন্যের সাথে তাদের ভাইয়ের গল্প করে। সবার ভাই আছে শুধু আমার নেই। তাই আমার একটা ভাই লাগবে।

মাইশার কথা শুনে তামিম কি বলবে বুঝতে না পেরে মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। মায়া বিষয়টা বুঝতে পেরে মাইশাকে বললো…

মায়াঃ কিন্তু মামনি এর জন্য তো অনেক সময় লাগবে।

মাইশাঃ কতো সময় লাগবে.?

মায়াঃ তা তো বলতে পারবো না তবে অনেক মাস লেগে যাবে।

মাইশাঃ তাহলে এখন থেকে ভাই আনার ব্যবস্থা শুরু করে দেও তাহলে ওদের ভাই বড় হতে হতে আমিও ভাই পেয়ে যাব।

মায়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে এখন তুমি দাদুর কাছে যাও।

মাইশাঃ ‘আচ্ছা’ বলে রুমে থেকে বেরিয়ে গেল।

মাইশা চলে যাওয়ার পর তামিম আর মায়া কেউ কারও দিকে তাকাল না হয়তো লজ্জায়। তামিম কিছু না বলে বিছানার একপাশ দখল করে শুয়ে পরল। মায়াও আর বসে না থেকে অন্যপাশ দখল করে শুয়ে পরল।

পরেরদিন সকালবেলা…

প্রতিদিনকার মতো নাস্তা খাওয়া শেষে তামিম অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরল আর মায়া মাইশাকে নিয়ে তাঁর স্কুলে চলে গেল। তামিম রিক্সা করে কিছুটা পথ আসতেই হঠাৎ দেখতে পেল সেদিনের কালো গাড়িটা পাশের একটা জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে। তামিম গাড়িটা দেখে রিক্সাওয়ালাকে সেই গাড়িটার পিছু পিছু যেতে বললো। রিক্সাওয়ালাও তামিমের কথামতো সেই গাড়িটার পিছু পিছু যাওয়া শুরু করলো। প্রায় কিছুক্ষণ পর সেই গাড়িটা একটা বড় গোডাউনের সামনে এসে থামলো। অতঃপর গাড়ি থেকে একটা লোক বের হয়ে সেই গোডাউনের ভিতরে চলে গেল। তামিমও ততক্ষণে রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা থামাতে বলে রিক্সা থেকে নেমে রিক্সা ভাড়াটা দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে সেই গোডাউনের কাছে চলে আসলো। তামিম বাহির থেকে গোডাউনের ভিতরে উঁকি দিতেই ভিতরে থাকা মানুষটাকে দেখে চমকে উঠলো আর আপনা আপনি তাঁর মুখ থেকে সেই মানুষটার নাম বেরিয়ে আসলো, ‘রনি!’
এমন সময় হঠাৎ কেউ একজন পিছন থেকে কোনো রড জাতীয় কিছু একটা দিয়ে তামিমের মাথায় আঘাত করল। যার ফলে তামিম মাথা ঘুরিয়ে সেখানেই পরে যায়। তামিম ঘাড় ঘুরিয়ে একবার সেই লোকটাকে দেখতে চাইল কিন্তু তাঁর আগেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।

জ্ঞান ফিরলে তামিম নিজেকে একটা চেয়ারের সাথে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেল। তামিম নিজেকে ছাড়ানোর জন্য নড়েচড়ে উঠলো কিন্তু এতে কোনো লাভ হলো না।

রনিঃ এতো নড়েচড়ে লাভ নেই মিস্টার তামিম। রশিগুলো খুবই মজবুত, এতো সহজে ছাড়া পাবেন না। আর ছাড়া পেয়েই বা কি লাভ এইখান থেকে তো আর বেঁচে যেতে পারবেন না (বলেই একটা শয়তানি হাসি হাসলো)।

তামিমঃ তাহলে সেদিন তুই আমাকে মাঝ রাস্তায় গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মেরেছিলি.?

রনিঃ আপনার বুদ্ধির প্রসংশা করতে হবে। কিভাবে যে এই বিষয়টা বুঝলেন আমার তো মাথায় ঢুকছে না।

তামিমঃ একবার আমার হাত-পা খুলে দে তারপর তোর মাথায় ঢোকাচ্ছি (রাগে গজগজ করে)।

রনিঃ আরে আপনি এতো রাগ করছেন কেন আজব.! জীবনের শেষ মূহুর্তটা কি কেউ এতো রাগ দেখিয়ে কাটায়.?

তামিমঃ সেদিন কেন আমায় মারতে চেয়েছিলি.?

রনিঃ মায়াকে আর মায়ার সম্পত্তি পাওয়ার জন্য। মায়াকে আমি সেই কলেজ লাইফ থেকেই ভালোবাসতাম। অনেকবার তাকে প্রপোজও করেছিলাম কিন্তু সে আমায় প্রতিবার ফিরিয়ে দিয়েছিল। তাই আমি একপ্রকার রাগ করে ইন্টার এক্সাম দিয়ে আমেরিকা চলে যাই। ভেবেছিলাম ওইখানে গিয়ে টাকা ইনকাম করে দেশে এসে মায়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিব। কিন্তু দেশে এসে মায়ার সাথে দেখা করে জানতাম পারলাম সে তোর মতো একটা ছেলেকে বিয়ে করেছে। তোর মধ্যে এমন কি দেখেছে সে যে আমাকে রেখে তোর মতো একটা ছেলেকে বিয়ে করল। তাই এখন তোকে মেরে আমার রাস্তাটা ক্লিয়ার করে দিব (বলেই একটা পিস্তল বের করে তামিমের মাথায় ঠেকাল)।

তামিমঃ আরে আমাকে মারার এতো তাড়া কিসের একটু ওয়েট তো কর।

রনিঃ ওয়েট করবো.? কার জন্য.? কেউ কি তোকে বাঁচাতে আসবে নাকি.? (বলেই একটা শয়তানি হাসি দিয়ে উঠলো)

তামিমঃ কয়টা বাজে এখন.?

রনিঃ ১০ টা।

তামিমঃ ওকে মিস্টার রনি রেডি হয়ে নাও সারপ্রাইজের জন্য। ওয়ান, টু, থ্রি।

তামিম থ্রি বলে উঠতেই গোডাউনে কয়েকজন পুলিশ এসে ঢুকলো আর সবাই রনির দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে রইলো। গোডাউনে এতো পুলিশ দেখে রনি অবাক হয়ে গেল। এরা কোথা থেকে আসলো রনি কিছুই বুঝতে পারছে না। হঠাৎ পুলিশের ভীড় থেকে সানি বেরিয়ে আসলো। সানি তামিমের কাছে আসতে যাবে ওমনি রনি তাঁর পিস্তলটা তামিমের মাথায় ঠেকিয়ে বললো…

রনিঃ একদম এগুবে না নাহলে কিন্তু আমি গুলি করে এর খুলি উড়িয়ে দিব।

রনির কথায় সানির মধ্যে কোনো পরিবর্তন এলো না, উলটো সে একটা পুলিশের দিকে ইশারায় কি যেন বললো ওমনি পুলিশটা তাঁর বন্দুক দিকে রনির হাতে শুট করলো। সাথে সাথে রনির হাত থেকে পিস্তলটা পরে গেল আর সে নিজের হাত চেপে ধরলো। এরপর দুইজন পুলিশ এগিয়ে এসে রনিকে ধরে ফেললো। এদিকে সানি এসে তামিমের হাত-পায়ের রশি খুলে দিল। সানি এবার মায়া বলে আওয়াজ করে উঠলো ওমনি মায়া পুলিশের ভীড় থেকে বেরিয়ে এলো আর রনির দিকে একবার ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাঁর গালে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিল।
.
.
.
.
.
Loading…….

বিঃদ্রঃ তো বন্ধুরা কেমন হলো আজকের ধামাকা পর্বটা.? সবাই বলেছিলেন তামিমকে মেসেজ দেওয়া আর মারতে চাওয়া লোকটা সানি হবে। অনেকে এটার যুক্তিও দিয়েছেন কিন্তু সবটাই তো উলটা হয়ে গেল। সানি কেন তামিমকে এমন পরিস্থিতিতে হেল্প করলো নিশ্চয়ই কারও বুঝে আসছে না। সবটাই জানতে পারবেন আগামী পর্বতে। আজকের পর্বটা কেমন হলো জানাবেন কিন্তু, হ্যাপি রিডিং ❤️

~~সবাই নিয়মিত নামাজ পড়বেন আর নামাজের লাভ জানিয়ে অন্যদেরকে দাওয়াত দিবেন~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here