#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ১৭ (শেষ পর্ব)
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
–ছিঃ! তুই আমার বন্ধু হয়ে এরকম একটা জঘন্যতম কাজ কিভাবে করতে পারলি.?
রনিঃ কারণ আমি তোকে
মায়াঃ চুপ আর একটা কথাও বলবি না তুই। তোকে আমি সেই কলেজ লাইফ থেকেই বন্ধু ভেবে এসেছি আর তুই কি না আমি বিবাহিত এটা জেনেও আমাকে পাওয়ার সপ্ন দেখছিলি.! তুই তো আমাকে পাওয়ার জন্য এমনটা করিস নি, করেছিস আমার সম্পত্তির জন্য।
রনিঃ মায়া আমার একটা কথা
মায়াঃ ওকে আপনারা এইখান থেকে নিয়ে যান প্লিজ (পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে)
তারপর পুলিশ বাহিনী রনিকে ওইখান থেকে নিয়ে চলে গেল। ওরা চলে যাওয়ার পর মায়া একটা লজ্জিত ভাব নিয়ে তামিমের সামনে এসে দাড়ালো আর বললো…
মায়াঃ আমি জানতাম না যে রনির মনে এমন শয়তানি চক্র চলছে। জানলে আমি অনেক আগেই ওর সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিতাম। এটা সত্যি যে রনি আমায় কলেজ লাইফ থেকেই ভালোবাসতো আর আমায় অনেকবার প্রপোজও করেছিল। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি ওকে সবসময় বন্ধুর নজরেই দেখে এসেছি।
তামিমঃ তুমি এইখানে কিভাবে এলে.?
সানিঃ আমি বলছি। তুমি যখন আমায় মেসেজ দিয়ে ওই গাড়িটার খুঁজ পেয়ে গেছ বলেছিলে তাঁর আগেই আমি সবকিছু জেনে ফেলি। ওই কালো গাড়িটা রনির। আর সেদিন এই রনি ছেলেটাই তোমাকে মাঝ রাস্তায় পেয়ে গাড়ি ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। কারণটা তো সে তোমায় বলেই দিয়েছে তাই আমি আর এ বিষয়ে কিছু বলছি না। আমি অবশ্য গতকাল রাতেই এ বিষয়ে সবকিছু জেনে ফেলেছি আমার ২ জন CID কর্মীদের সাহায্যে। ভেবেছিলাম আজ মায়ার অফিসে গিয়ে তোমাকে এ বিষয়ে সবকিছু জানাব। কিন্তু তাঁর আগেই তুমি সকালে ওই মেসেজটা দিয়ে সবকিছুর গড়মিল পাকিয়ে দিলে। আমার মনে হচ্ছিলো ওর পিছু করতে গিয়ে তুমি ওর কাছে ধরা খেয়ে যাবে আর ধরা খেলে ও আর তোমায় ছাড়বে না। তাই আমি আসার সময় কয়েকজন পুলিশকে আমার সাথে নিয়ে আসি আর মায়াকেও ফোন দিয়ে এই জায়গায় চলে আসতে বলি যাতে সে এসে নিজ চোখে এসব দেখতে পারে। আর এইখানে এসে রনির যতগুলা চামচা বাহিরে ছিল সবকটাকে কৌশলে ধরে ফেলি।
মায়াঃ তোমার দুইজন CID কর্মীদের সাহায্যে জেনেছ মানে.?
তামিমঃ মানে হলো উনি CID তে কাজ করেন তাও গোপনে। এটা আমি কয়েকদিন আগেই জেনেছি। তাই আমি উনার সাথে একদিন দেখা করে এ বিষয়টা উনাকে জানালাম। কিন্তু ওই গাড়িটার নাম্বার বলতে না পারার কারণে উনি আমায় কোনো প্রকার হেল্প করতে পারেন নি। কিন্তু গতকাল অফিস থেকে বেরিয়ে দেখলাম রনির ওই গাড়িটা অফিসের কিছুটা সামনে দাড় করানো। আর তখনই আমি গাড়িটা চিনে ফেলি আর ওই রাতেই উনাকে কল দিয়ে গাড়ির রঙ আর নাম্বারটা উনাকে জানিয়ে দেই।
মায়াঃ ওহ আচ্ছা। এবার বুঝলাম ব্যাপারটা।
সানিঃ বোঝেই যখন গেছ তাহলে এখন আর এইখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে দুজন অফিসে চলে যাও।
তামিমঃ হ্যাঁ মায়া চল এবার অফিসে যাওয়া যাক এমনিতেই ১০ঃ৩০ বেজে গেছে।
মায়াঃ আচ্ছা।
সানিঃ তোমরা তাহলে যাও আর রাতে তোমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
মায়াঃ কি সারপ্রাইজ.?
সানিঃ রাতেই দেখতে পারবা। এখন আমি গেলাম আমার কিছু কাজ আছে (বলেই সানি সেখান থেকে চলে গেল)।
মায়াঃ এই তোমার কোথাও লাগে নি তো.? প্রথমেই এটা জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে এটা ভুলেই গেছিলাম।
তামিমঃ নাহ আমার কোথাও লাগে নি, আমি ঠিক আছি। এবার তাহলে চল অফিসে যেতে হবে তো।
মায়াঃ হু চল।
তারপর তামিম আর মায়া সেখান থেকে অফিসে চলে আসলো। অফিসে এসে তামিম নিজের ডেক্সে আর মায়া নিজের কেবিনে চলে গেল।
সন্ধ্যাবেলা…
তামিম আর মায়া বাসায় এসে ঢুকতেই দেখল বাসার দরজার সামনে অনেকগুলা জুতা রাখা। এতো জুতা দেখে দুজনে বেশ অবাক হলো আর ভাবতে লাগলো, বাসায় কেউ এসেছে নাকি। তাঁরা দু’জন যখন বাসার ভিতরে এসে ঢুকলো তখন দেখল তামিমের আম্মুর রুমে মায়ার আম্মু-আব্বু বসে আছেন। তাদের সাথে সানিও আছে।
মায়াঃ আম্মু.! আব্বু.! তোমরা এইখানে.!
মায়ার আব্বুঃ হ্যাঁ মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে আসলাম (হাসি মুখে কথাটা বললেন)।
মায়াঃ কিন্তু আম্মু কিভাবে
সানিঃ খালা তোমাদেরকে মেনে নিয়েছেন।
মায়াঃ সত্যি.! কিন্তু কিভাবে কি.?
সানিঃ আস আমার সাথে বলছি।
কথাটা বলেই সানি রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। সানির পিছে পিছে তামিম আর মায়াও আসলো।
সানিঃ খালার ইচ্ছা ছিল আমার সাথে তোমার বিয়ে দিতে। এ বিষয়ে আমাকে আগে থেকে জানিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু দেশে এসে শুনি তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। তামিমের একটা মেয়ে থাকা সত্তেও ওকে তুমি বিয়ে করেছ দেখে খালা তোমার উপর এতদিন রেগে ছিলেন। আর আমি ভেবেছিলাম তামিম হয়তো তোমাদের সম্পত্তির লোভে পরে তোমায় বিয়ে করেছে। কিন্তু আমি তামিমের ব্যাপারে খুঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ও মানুষটা খুবই ভালো। আর ওর সাথে আমি একবার পারসোনালভাবে এ বিষয়ে কথাও বলেছি। উনার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম উনি উনার মা’কে বাঁচাতে বাধ্য হয়েই তোমাকে বিয়ে করেছেন। তবে খালা আমার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন এটা ওকে বলি নি। তারপর আমি একদিন তোমাদের বাসায় গিয়ে খালাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলি আর এতে খালা তোমাদেরকে মেনে নেন।
মায়াঃ আমাদের জন্য তুমি এতকিছু করেছ.! তোমায় কি বলে যে ধন্যবাদ দিব বুঝতে পারছি না।
সানিঃ ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা আজ রাতে খেয়ে যাব তো আমাদের জন্য রান্না করলেই হবে।
মায়াঃ আচ্ছা তোমরা গল্প কর আমি গিয়ে রান্নার কাজ শুরু করে দেই (বলেই সেখান থেকে চলে গেল)।
তারপর তামিম আর সানি মায়ার আম্মু-আব্বুর কাছে আসলো।
মায়ার আম্মুঃ কেমন আছ বাবা তুমি.?
তামিমঃ জী আলহামদুলিল্লাহ আপনি কেমন আছেন.?
মায়ার আম্মুঃ এইতো ভালো। সানি নিশ্চয়ই তোমাদেরকে সব বলেছে। আসলে মা বলে কথা, আর মানুষ বিয়ে তো জীবনে একবারই করে। কিন্তু সেটা যদি নিজ ইচ্ছায় করে তাহলে মা-বাবার মনে খুবই আঘাত লাগে। মায়ার আব্বু আগে থেকেই তোমার ব্যাপারে জানতেন তারপরও তুমি মানুষটা ভালো হওয়াতে উনি তোমাদের বিয়েটা খুব সহজেই মেনে নেন। কিন্তু আমি তো আর তোমাকে ভালো করে চিনি না তাই প্রথমে তোমাদেরকে মেনে নিতে পারি নি।
তামিমঃ আম্মা থাক না এখন এইসব কথা। আপনি আমাদের মেনে নিয়েছেন এতেই আমরা খুশি।
তারপর কেউ আর এ বিষয়ে কোনো কথা বললো না। মাইশা তো মায়ার আম্মু-আব্বুকে পেয়ে ভিষণ খুশি। একটু পর পরই দাদা, দাদু বলে তাদেরকে এটা সেটা বলে যাচ্ছে। তাঁরাও মাইশার কথায় কোনো প্রকাশ বিরক্তি প্রকাশ করছেন না।
–––––––
রাতের খাবার খেয়ে মায়ার আম্মু-আব্বু আর সানি তামিমদের বাসা থেকে চলে গেলেন। সবকিছু গোছগাছ করে মায়া তাদের রুমে চলে আসলো। রুমে আসতেই তামিম বলে উঠলো…
তামিমঃ আজ আকাশে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে, চল দেখে আসি।
মায়াঃ আচ্ছা চল।
তামিমঃ সাথে একটা চাদর নিয়ে নাও ঠান্ডা লাগলে গায়ে দেওয়া যাবে।
মায়াঃ আচ্ছা বলে একটা চাদর বের করে আনলো।
তারপর তাঁরা দু’জনে ছাদে চলে আসলো। মাইশা অনেক আগেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। ছাদে একটা ছোট্ট দোলনা আছে তামিম আর মায়া সেটাতেই গিয়ে বসলো। প্রায় কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে তামিম বলে উঠলো…
তামিমঃ নীলা বেঁচে থাকতে প্রায়ই ওর সাথে এইভাবে ছাদে এসে চাঁদ দেখতাম। চাঁদ দেখতে দেখতে কোনোদিন নীলা আমার বুকের মধ্যেই শুয়ে পরত। আমিও ওকে আর জাগাতাম না। ওর মায়াবী চেহারার দিকে তাকিয়ে একসময় আমিও ঘুমিয়ে পরতাম। কিন্তু এখন নীলা আর নেই আছ শুধু তুমি। নীলাকে আমি এখনো ভালোবাসি আর সারাজীবন বেসে যাব। কিন্তু এর জন্য তোমাকে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে উপরওয়ালার কাছে আমি পাপী হতে চাইনা। তাই আমি চাই এখন থেকে তুমি আমার মধরাতে চাঁদ দেখার সঙ্গী হবে। আমি চাই এখন থেকে তুমি আমার আগামী দিনের পথচলার সাথী হবে। আমার সুখ-দুঃখের অংশীদার হবে। বল এবার তুমি কি হবে আমার এসবের সঙ্গী.? (বলেই মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো)
মায়াঃ আমি হয়তো কখনো নীলা আপুর মতো হতে পারবো না বা আমাকে তুমি নীলা আপুর মতো ভালো নাও বাসতে পার। তবে আমি তোমার সবসময়ের সঙ্গী হব আর সবসময় তোমার পাশে থাকব। এই কথা দিলাম তোমায়। বদলে আমায় শুধু একটুখানি ভালোবাসা দিও তাহলেই হবে।
তামিমঃ ঠান্ডা লাগছে চাদর দাও।
মায়া তামিমের দিকে চাদরটা এগিয়ে দিল।
তামিম চাদরটা মেলে নিজের গায়ে জড়িয়ে নিল আর মায়াকে চাদরের ভিতরে আসতে বললো। মায়া খুশি মনে চাদরের ভিতরে চলে আসলো আর আস্তে করে তামিমের বুকে তাঁর মাথা ঠেকাল। তামিমও চাদর দিয়ে মায়াকে নিজের সাথে আবদ্ধ করে নিল আর মায়ার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বললো, ‘ভালোবাসি।’
.
.
The End……