#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ৪,৫
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৪
–তামিম এই মেয়েটা কে রে.? আর ও আমাদের বাসায় কি করছে.?
৩ দিনের দিন তামিমের আম্মুকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে যখন বাসায় আনা হলো তখন উনি বাসার মধ্যে মায়াকে দেখে উপরোক্ত প্রশ্নটা করলেন। তামিম তাঁর আম্মুর প্রশ্নের উত্তরে স্বাভাবিক স্বরে বললো ‘এটা তোমার বউমা’। তামিমের কথা শুনে তাঁর আম্মু চোখ বড় বড় তাঁর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মানে কি.?
তামিমঃ মানে আমি ওকে বিয়ে করেছি আম্মু।
তামিমের আম্মুঃ কবে.?
তামিমঃ তোমার অপারেশন করানোর আগের দিন।
তামিমের আম্মুঃ এতো বছর ধরে মাইশার কথা ভেবে তুই বিয়ে করলি না তাহলে এখন কেন হঠাৎ করে বিয়ে করলি.?
তামিমঃ উনাকে আমার ভালো লেগেছে তাই করেছি। যাইহোক এসব এখন বাদ দাও তুমি রুমে যাও আর গিয়ে রেস্ট নাও।
তামিমের আম্মুঃ মাইশা কই.?
তামিমঃ ঘুমাচ্ছে।
তামিমের আম্মুঃ ওহ
তামিমঃ আচ্ছা তুমি আম্মুর পাশে থাক আমি রান্নার ব্যবস্থা করি।
মায়াঃ রান্না আমি করে ফেলেছি তুমি আসার আগেই।
তামিমঃ ওহ।
হঠাৎ মাইশা ঘুম থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে আসে আর দেখে তাঁর দাদু বাসায় এসেছেন। সে দৌড়ে গিয়ে তাঁর দাদুকে জড়িয়ে ধরলো।
মাইশাঃ দাদু তুমি কখন এলে.?
তামিমের আম্মুঃ এইতো একটু আগে এসেছি তুমি যখন ঘুমে ছিলে।
মাইশাঃ তুমি আর ওইখানে যাবে না তো আমাদের রেখে.?
তামিমের আম্মুঃ না দাদু ভাই।
মাইশাঃ দাদু এই দেখ আমার নতুন আম্মু (মায়ার দিকে ইশারা করে)। আমার আগের আম্মু নাকি এই আম্মুকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে, আমার আম্মু ছাড়া থাকতে কষ্ট হয় বলে।
তামিমের আম্মুঃ হে দাদু ভাই জানি আমি। চল এখন আমরা ঘরে যাই (বলেই মাইশাকে নিয়ে উনার রুমে চলে এলেন)।
মায়াঃ আম্মুর কাছে শুধু শুধু মিথ্যা বললে কেন.?
তামিমঃ সত্যিটা শুনলে যদি আম্মু তোমাকে খারাপ ভাবে।
মায়াঃ ভাবলে তোমার কি আসে যায়.?
তামিমঃ কিছু নাহ বলেই তাদের রুমে চলে আসলো।
তামিমের পিছনে পিছনে মায়াও রুমে চলে আসলো।
তামিমের আম্মুঃ দাদু ভাই, আমার রুমটা এতো সুন্দর করে কে ঘুছিয়েছে.? তোমার আব্বু.?
মাইশাঃ নাহ আম্মু।
তামিমের আম্মুঃ তোমার নতুন আম্মু তোমায় আদর করে.?
মাইশাঃ হ্যাঁ, ওই আম্মু অনেক ভালো আমাকে অনেক আদর করে। আমাকে এখন থেকে ওই আম্মুই স্কুলে নিয়ে যায়, খাওয়ার সময় খাইয়ে দেয় আবার রাতে ঘুমও পাড়িয়ে দেয়।
তামিমের আম্মুঃ এতোদিন যে আমি ছিলাম না তুমি কার সাথে ঘুমিয়েছিলে.?
মাইশাঃ আব্বু আম্মুর সাথে। কিন্তু এখন থেকে আবার তোমার সাথে ঘুমাব।
টক টক..
মায়াঃ আম্মু আসবো.? (বাহির থেকে)
তামিমের আম্মুঃ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলেন মায়া হাতে শরবত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হে আস।
মায়াঃ এই নিন আম্মু আপনার আর মাইশার জন্য শরবত বানিয়ে এনেছি। এইটা খেয়ে নেন শরীরে শক্তি পাবেন। মামনি তুমিও নাও (তাদের দিকে দুই গ্লাস শরবত এগিয়ে দিয়ে)।
মাইশাঃ না আমি খাব না এগুলা খেতে আমার ভালো লাগে না।
মায়াঃ আচ্ছা তাহলে এটা তোমার আব্বুকে দিয়ে আস আমি একটু তোমার দাদুর সাথে গল্প করি।
মাইশাঃ আচ্ছা বলে শরবতের গ্লাস নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
মায়াঃ আম্মু আপনাকে আমার কিছু বলার ছিল।
তামিমের আম্মুঃ বল কি বলবে.?
মায়াঃ আসলে ও আমায় পছন্দ করে না আপনাকে তখন ও মিথ্যা বলেছে। সত্যিটা হলো আমি ওকে পছন্দ করি আর ও যে অফিসে কাজ করে আমি ওই অফিসের বস। আমি আগে থেকেই জানতাম যে ও বিবাহিত আর ওর একটা মেয়েও আছে। তা ছাড়া মানুষ হিসেবে ওকে আমার খুবই ভালো লেগেছে আর মাইশাকেও আমার অনেক ভালো লাগে। তাই ও যেদিন আপনার চিকিৎসার জন্য সে আমার কাছে টাকা ধার চাইতে আসে সেদিন আমি ওকে টাকা দেওয়ার বদলে বিয়ের প্রস্তাব দেই আর বলি টাকা নিতে হলে আগে আমাকে বিয়ে করতে হবে তারপর আমি টাকা দিব। আমি জানতাম ওর এমন কোনো আত্নীয় নেই যে ওকে এতো টাকা ধার দিবে তাই সে বাধ্য হয়েই আমার কাছে টাকা চাইতে আসে। তাই আমি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নেই। আর ও আর কোনো উপায় না পেয়ে আপনার কথা ভেবে আমায় বিয়ে করে। বিশ্বাস করেন আম্মু আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে ওকে বিয়ে করি নি, সত্যি আমি ওকে অনেক পছন্দ করি তাই ওকে এইভাবে চাপে ফেলে বিয়ে করি (বলতে বলতে মায়ার চোখে পানি চলে আসে)।
তামিমের আম্মুঃ কেদ না মা, আমি বুঝতে পেরেছি সত্যিটা কি। আর ও তোমায় বিয়ে করায় আমার কোনো অভিযোগ নেই কারণ মাইশার মা মারা যাওয়ার পর আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি মাইশার জন্য অন্তত সে একটা বিয়ে করে দেয়। কিন্তু ও আমার কথা শুনেনি, নতুন বউ যদি মাইশাকে দেখতে না পারে তাহলে মেয়েটার কি হবে এটা ভেবে মূলত সে এতো বছর ধরে বিয়ে করেনি। এখন যেহেতু ও তোমায় বিয়ে করেই ফেলেছে তাতে আমি অনেক খুশি। আর সারাজীবন খুশি থাকতে পারবো যদি মাইশাকে তুমি নিজের মেয়ে মনে করে ওর লালন-পালন কর। কখনো আমার মা হারা দাদুটাকে কষ্ট দিও না মা তোমার কাছে আমার এই একটাই অনুরোধ রইলো (কথাটা বলতে বলতে উনার চোখেও পানি চলে আসলো)।
মায়াঃ না আম্মু আমি কখনো মাইশাকে কষ্ট দিব না এই আমি কথা দিলাম আপনার কাছে, প্লিজ আপনি কাদবেন না।
মাইশাঃ দাদু, আম্মু তোমরা দুজন কান্না করছ কেন.? (হঠাৎ মাইশা রুমে এসে)
মায়াঃ না মামনি কই কান্না করছি এমনি তোমার দাদুকে পেয়ে খুশিতে চোখে জল চলে এসেছে।
মাইশাঃ দাদু তুমি কেন কান্না করছ.?
তামিমের আম্মুঃ আমিও তোমার নতুন আম্মুকে পেয়ে খুশিতে কান্না করছি দাদু ভাই (চোখের জল মুছে)।
মায়াঃ মামনি তোমার আব্বু শরবত খেয়েছেন.?
মাইশাঃ হ্যাঁ আম্মু।
মায়াঃ আচ্ছা তাহলে তুমি তোমার দাদুর রুমে বই নিয়ে পড়তে বস আমি তোমার আব্বুর কাছে যাই।
মাইশাঃ আচ্ছা আম্মু।
মায়াঃ আমি যাই আম্মু, কিছু লাগলে ডাক দিয়েন।
তামিমের আম্মুঃ আচ্ছা মা।
তারপর মায়া সেখান থেকে তাদের রুমে চলে আসলো।
মায়াঃ কালকে একবার তোমায় আমাদের বাসায় যেতে হবে।
তামিমঃ কেন.?
মায়াঃ এমনিই আব্বু বলেছেন তাই, বিয়ের পর তো একবারও আমাদের বাসায় যাওনি তাই।
তামিমঃ শুধু আমি একা যাব.?
মায়াঃ নাহ, মাইশা আর আম্মুকেও সাথে নিয়ে যাব তো।
তামিমঃ আম্মু কি যাবে.?
মায়াঃ যাবে না কেন অবশ্যই যাবে।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে কখন যাব তাহলে.?
মায়াঃ কাল দুপুরে।
তামিমঃ তখন না অফিস
মায়াঃ কালকে তোমায় অফিসে যেতে হবে না তোমার ছুটি।
তামিমঃ আচ্ছা।
–––––––
পরেরদিন লাঞ্চ টাইমে মায়া মেনেজারকে বলে বাসায় চলে আসে আর সবাইকে রেডি হয়ে নিতে বলে।
মাইশাঃ আম্মু আমরা কোথায় যাব.?
মায়াঃ তোমার নানু বাড়ি।
মাইশাঃ দাদু যাবে না.?
মায়াঃ যাবে তো।
মাইশাঃ কিন্তু দাদু তো বললো উনি যাবে না।
মায়াঃ আচ্ছা আস দেখি তো তোমার দাদু কেন যাবে না (বলে মাইশাকে নিয়ে তাঁর দাদুর রুমে চলে আসলো)।
মায়াঃ আম্মু আপনি নাকি আমাদের বাসায় যাবেন না বলেছেন.?
তামিমের আম্মুঃ ওইখানে আমি বুড়ি মানুষ গিয়ে কি করবো মা.?
মায়াঃ এতকিছু বুঝি না আপনি রেডি হোন আপনাকেও আমাদের সাথে যেতে হবে।
তারপর মায়ার জোরাজুরিতে তামিমের আম্মু যেতে রাজি হলেন। সবাই রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে দেখল বাসার সামনে একটা গাড়ি রাখা। তামিম গাড়িটা দেখে চিনে ফেললো যে এটা মায়ার প্রাইভেট কার। এরপর সবাই ওই গাড়িতে উঠে মায়াদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।
.
.
.
.
.
Loading…….
#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৫
,,
,,
,,
,,
–এই ছোটলোকদের নিয়ে তুই কোন সাহসে এখানে এসেছিস.? আর এরাই কি তোর সেই মেহমান যাদের জন্য আমায় সারাদিন এতকিছু রান্না করতে হয়েছে.?
মায়াদের বাসায় এসে মায়া সবাইকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে তাঁর আম্মুর কাছে রান্নাঘরে চলে আসে, ঠিক তখনই মায়ার আম্মু জোর গলায় কথাটা বলে উঠেন।
মায়াঃ আম্মু আস্তে বল ওরা শুনে ফেলবে।
মায়ার আম্মুঃ শুনলে আমার কি, আমি কি ওদের ভয় পাই নাকি.?
মায়াঃ তাদের কিছুই নাহ তবে আমার অনেক কিছু কারণ এখন থেকে আমি তাদের পরিবারেরই একজন, আর আমার সামনে আমার পরিবারের উদ্দেশ্যে কেউ এমন ভাষায় কথা বললে আমি মেনে নিতে পারবো না।
মায়ার আম্মুঃ মায়া তুই আমার মেয়ে হয়ে ওদের মতো ছোটলোকদের হয়ে কথা বলছিস.! কি এমন পেয়েছিস ওই ছেলেটার মধ্যে যে আমাদের কথার অবাধ্য হয়ে একটা বিবাহিত পুরুষকে তুই বিয়ে করলি.? শুধু বিবাহিত হলেও তো একসময় মানা যেত কিন্তু ওই ছেলেটার তো একটা ৬ বছরের মেয়েও আছে। এসব জানার পরেও তুই কিভাবে ওই ছেলেটাকে বিয়ে করলি.?
মায়াঃ কারণ ও আমার দেখা একজন শ্রেষ্ঠ পুরুষ। যার বাস্তব প্রমাণ আমি ওর চলাফেরা দেখেই বুঝেছি। আর ওর ছোট্ট মেয়েটা তো একদম নিষ্পাপ আর মা হারা মেয়ে। আমাকে পেয়ে মেয়েটা নিজের মা হারানোর কষ্টটাই ভুলে গেছে। তা ছাড়া আমি ওর সাথে জীবনে অনেক সুখে থাকব।
মায়ার আম্মুঃ আমি কত শখ করেছিলাম আমার বোনের ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিব কিন্তু তুই
মায়াঃ আম্মু প্লিজ অনেক হয়েছে এখন এইসব বাদ দাও। বিয়েতে তোমার মত না থাকলেও আব্বুর কিন্তু ঠিকই মত ছিল কারণ তিনি জানেন আমি জীবনে কখনো কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিব না, আর উনি এটাও বুঝেছেন ওর সাথে বিয়ে হলে আমি সুখেই থাকব। তা ছাড়া প্রতিটা মেয়ের মা-বাবাই তো চায় তাঁর মেয়ে জীবনে সুখি হোক তাহলে আমি যেহেতু বলছি আমি ওর সাথে সুখে থাকব তাহলে এইখানে তোমার অসন্তুষ্ট হওয়ার কি আছে.?
মায়ার আম্মুঃ তোর বিয়ের বিষয়ে আমরা ছাড়া আর কেউ জানে না যখন তোর মামা, খালারা জানবে তখন তাদের সামনে আমরা কিভাবে মুখ দেখাব.? ছেলেটার তো আমাদের মতো ধনসম্পদও নেই, সেটা হলেও তো সবাইকে একটা বলে বুঝানো যেত।
মায়াঃ এসব এবার বাদ দাও আর চল তাদের সাথে দেখা করে আসবা।
মায়ার আম্মুঃ আমি যাব না, আর ওদের সাথে আমি কোনো কথাও বলবো না। বিয়ের আগে তোকে নিষেধ করেছিলাম এই ছেলেটাকে বিয়ে না করতে তখন শুনেছিলি আমার কথা.? তাহলে এখন আমি কেন তোর কথা শুনবো.? বাসায় যেহেতু নিয়েই এসেছিস তাহলে খেয়ে দেয়ে ওদেরকে নিয়ে বিদায় হ আমাকে আর ডাকবি না (বলেই উনি সেখান থেকে চলে গেলেন)।
মায়া বুঝতে পারলো এখন শত চেষ্টা করেও তাঁর আম্মুকে তাদের সামনে নিয়ে যেতে পারবে না তাই সে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আবার ড্রয়িংরুমে চলে আসলো। মায়া ড্রয়িংরুমে এসে দেখল তাঁর আব্বু তামিমের সাথে বসে বসে কথা বলছেন।
মায়াঃ আরে আব্বু তুমি কখন এলে.?
মায়ার আব্বুঃ এইতো একটু আগে আসলাম। তোমার আম্মু কই.? উনাকে ডেকে নিয়ে আস এইখানে।
মায়াঃ আম্মু তো উনার রুমে ঘুমিয়ে আছেন উনার নাকি মাথা ব্যাথা করছে।
মায়ার আব্বুঃ ওহ তাহলে তাদের জন্য টেবিলে খাবার নিয়ে নাও আর তোমার আম্মুর মাথা ব্যাথা কমে গেলে ওদের সাথে কথা বলিয়ে নিও।
মায়াঃ আচ্ছা তাহলে তোমরা বস আমি তোমাদের জন্য টেবিলে খাবার নিচ্ছি (বলেই মায়া আবার রান্নাঘরে চলে আসলো)।
মায়ার আব্বুঃ তা তোমার আম্মুকে কি কেমোথেরাপি দেওয়া লাগবে নাকি.?
তামিমঃ নাহ এসব দেওয়া লাগবে না। তাড়াতাড়ি অপারেশন করানোর কারণে এটা এতোটা গুরুতর হয়নি।
মায়ার আব্বুঃ ঠিক আছে তাহলে।
–––––––
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরও কিছুক্ষণ মায়াদের বাসায় অবস্থান করে যখন চলে আসার সময় হলো তখন তামিমের আম্মু বলে উঠলেন…
তামিমের আম্মুঃ তোমাদের বাসায় আসলাম অথচ তোমার আম্মুর সাথে দেখা না করেই চলে যাব এটা কেমন দেখায় না.? একবার ডাক দাও তোমার আম্মুকে, এতক্ষণে তো উনার মাথা ব্যাথা কমে গেছে নিশ্চয়ই।
তামিমের আম্মুর কথা শুনে মায়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো…
মায়াঃ আচ্ছা আপনারা একটু বসেন আমি আম্মুকে নিয়ে আসছি।
তারপর মায়া সেখান থেকে তাঁর আম্মুর রুমে চলে আসলো এসে দেখলো তাঁর আম্মুর রুমের দরজা ভিতর থেকে লাগানো। মায়া বুঝতে পারলো কেউ যেন উনাকে আর না ডাকে সেই জন্য ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে রাখা হয়েছে। মায়া আর ওইখানে দাঁড়িয়ে না থেকে আবার ড্রয়িংরুমে চলে আসলো।
মায়াঃ আম্মুর রুমের দরজা ভিতরে থেকে লাগানো, অনেকবার ডেকেছি কিন্তু কোনো সাড়া দেননি হয়তো ঘুমিয়ে গেছেন।
তামিমঃ আচ্ছা ঘুমিয়ে গেলে থাক আমরা নাহয় অন্য আরেকদিন এসে আম্মার সাথে দেখা করে যাব আজকে আমরা যাই এমনিতেই সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
মায়াঃ আচ্ছা, আব্বু আমরা তাহলে আজ যাই।
মায়ার আব্বুঃ আচ্ছা মা।
মায়াঃ মামনি তোমার নানা ভাইকে টাটা বল।
মাইশাঃ টাটা নানা ভাই, তুমি কিন্তু আমাদের বাসায় যাবে একদিন কেমন।
মায়ার আব্বুঃ আচ্ছা নানু ভাই আমি আসবো একদিন তোমাদের বাসায়।
সেদিন কার মতো তাঁরা মায়াদের বাসা থেকে চলে আসলো। বাসায় এসে মায়া রান্নাঘরে গিয়ে রাতের জন্য রান্না শুরু করে দিল। তামিম মাইশাকে তাঁর আম্মুর রুমে পড়তে পাঠিয়ে দিল আর নিজে অফিসের কিছু কাজ করতে লেগে পরল কারণ এখন যেহেতু সে ফ্রি আছে তাহলে সেই সুযোগে কাজগুলো করে নিলে কালকে আর এতো চাপ নিতে হবে না।
–––––––
মায়াঃ আমাদের বাসায় দাওয়াত খেতে গেলে অথচ আম্মুর সাথে তোমাদের দেখা করাতে পারলাম না এর জন্য আমি সরি।
রাতের খাবার খেয়ে মাইশাকে তাঁর দাদুর রুমে পাঠিয়ে দিয়ে তামিম আর মায়া তাদের রুমে চলে আসে আর তখনই মায়া তামিমকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে।
তামিমঃ It’s Okay. আম্মার যেহেতু আমাদের সাথে দেখা করার ইচ্ছা নেই তাহলে তোমার কি দোষ.?
মায়াঃ মানে.? তুমি কিভাবে বুঝলে যে
তামিমঃ আব্বা হয়তো তোমাকে বুঝেছে তাই তোমাকে আমায় বিয়ে করতে নিষেধ দেয়নি বাট আমি বিবাহিত আর আমার একটা মেয়ে আছে এটা শোনে আম্মা হয়তো চাননি যে তুমি আমায় বিয়ে কর কিন্তু তুমি উনার অবাধ্য হয়ে আমায় বিয়ে করলে এর জন্য হয়তো উনি তোমার উপর রেগে আছেন আর তাই আমাদের সাথে দেখা করতে চান নি।
তামিমের কথা শুনে মায়া কিছু না বলে চুপ করে রইলো।
তামিমঃ এসব নিয়ে মন খারাপ করার প্রয়োজন নেই অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমিয়ে পর। তা ছাড়া তুমি আমার মধ্যে যা দেখেছ সেটা আম্মা কখনো দেখেন নি দেখলে হয়তো আমাকে মেনে নিতেন। তাই এসব নিয়ে মন খারাপ না করাই ভালো।
মায়াঃ হু।
তামিমঃ ঘুমাও তাহলে (বলেই সে একদিক ফিরে শুয়ে পরল)।
মায়াও আর বসে না থেকে অন্যদিক ফিরে শুয়ে পরল।
সকালবেলা…
মায়া ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ তামিমের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলো অতঃপর আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুম গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে সবার জন্য সকালের নাস্তা বানিয়ে প্রথমে তামিমকে এসে ডাক দিল এরপর গেল তামিমের আম্মুর রুমে তাদেরকে ডাক দিতে। গিয়ে দেখল তামিমের আম্মু উঠে বসে আছেন আর পাশে মাইশা ঘুমিয়ে আছে।
মায়াঃ আম্মু আপনি কখন উঠলেন.?
তামিমের আম্মুঃ এইতো একটু আগে উঠলাম।
মায়াঃ ওহ, আচ্ছা আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমি মাইশাকে ঘুম থেকে উঠাই তারপর সবাইকে নাস্তা দিয়ে দিব
তামিমের আম্মুঃ তামিম উঠেছে.?
মায়াঃ জী উঠেছে।
তারপর মায়া মাইশাকে ডেকে ঘুম থেকে উঠাল আর ওকে স্কুলের জন্য রেডি করে খাবার টেবিলে নিয়ে আসলো আর সবাইকে সকালের নাস্তা পরিবেশন করলো। নাস্তা খাওয়া শেষে প্রতিদিনের মতো তামিম অফিসে চলে গেল আর মায়া মাইশাকে নিয়ে তাঁর স্কুলে চলে গেল। স্কুলে এসে ঘটলো এক বিপত্তি.!
.
.
.
.
.
Loading…….