#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ৬, ৭ (টুইস্ট)
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৬
–আপনিই তাহলে মাইশার নতুন আম্মু.?
মাইশাকে নিয়ে স্কুলে এসে তাকে তাঁর ক্লাসে ঢুকিয়ে দিয়ে মায়া যখন চলে আসতে যাবে এমন সময় একজন মহিলা এসে তাঁর সামনে দাড়ালো আর মায়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করল।
মায়াঃ জী।
–মানে আপনি মাইশার আব্বুর দ্বিতীয় স্ত্রী.?
মায়াঃ জী, কেন.?
–না মানে উনার একটা মেয়ে থাকা সত্তেও আপনি উনাকে কেন
মায়াঃ কারণ উনার চলাফেরা দেখে আমি উনার উপর মুগ্ধ হয়েছি। আর উনার চরিত্রের ব্যাপারে কি আর বলবো, একটা স্ত্রী হারা বিবাহিত পুরুষ হয়েও উনার চরিত্র একদম ফুলের মতো পবিত্র। আর এমন পুরুষ এখন খুজে পাওয়া মুশকিল তাই উনার একটা মেয়ে আছে এটা জেনেও আমি উনাকে নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ে করেছি (হাসি মুখেই কথাগুলো বললো)।
–কথাগুলো আপনি ভুল বলেন নি। আসলে আগে তো মাইশার আব্বু মাইশাকে স্কুলে নিয়ে আসতো তাই আমি একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম উনার স্ত্রী থাকতে উনি কেন প্রতিদিন মাইশাকে স্কুলে নিয়ে আসেন। তারপর উনি নিজেই বললেন যে মাইশাকে জন্ম দিতে গিয়ে নাকি ওর আম্মু মারা গেছে। এ কথা শুনে আমার যে কি খারাপ লেগেছিল সেদিন তা বলে বোঝাতে পারবো না। তারপর থেকে যখনই মাইশা স্কুলে আসতো তাঁর সাথে আমার মেয়েকে খেলতে বলি, মেয়েটার জন্য ভিষণ কষ্ট হতো আমার। মেয়েটা মা হারিয়ে কিভাবে থাকছে এটা ভেবে (অনেকটা কষ্ট মাখানো কন্ঠেই কথাগুলো বললো মহিলাটা)।
মায়াঃ আচ্ছা আপনার সাথে অন্যদিন কথা হবে আজ আমি যাই, অফিসের টাইম হয়ে গেছে।
–আপনিও জব করেন নাকি.?
মায়াঃ জী, আমি আর মাইশার আব্বু একই অফিসে জব করি (মিথ্যা বললো যাতে মহিলাটা এটা না ভাবে যে তাঁর ধনসম্পত্তির জন্য তামিম তাকে বিয়ে করেছে)।
–ওহ তাইতো বলি উনার সম্পর্কে আপনি এতকিছু কিভাবে জানলেন।
মায়াঃ আচ্ছা তাহলে আজ আসি.?
–আচ্ছা।
তারপর মায়া সেখান থেকে তাঁর অফিসে চলে আসলো। অফিসে এসে নিজের কেবিনে ঢোকার আগে একবার তামিমের ডেক্সের দিকে তাকিয়ে দেখল তামিম এক ধ্যানে কাজ করে যাচ্ছে। মায়া একটা মুচকি হাসি দিয়ে তাঁর কেবিনে ঢুকে পরল।
–––––––
দুপুর ১২ টার দিকে মায়া তাঁর ড্রাইভারকে মাইশার স্কুলে পাঠিয়ে দিল মাইশাকে স্কুল থেকে বাসায় দিয়ে আসতে। এখন তো তামিমের আম্মু বাসায় থাকবেন ই তাই মাইশাকে আর অফিসে এনে রাখা লাগবে না। ড্রাইভারও মায়ার কথামতো মাইশাকে স্কুল থেকে বাসায় দিয়ে আসলো। তাঁর কিছুক্ষণ পর লাঞ্চ টাইমের সময় হয়ে গেলে মায়া প্রতিদিনকার মতো তামিমকে কল দিয়ে লাঞ্চ করার জন্য তাঁর কেবিনে আসতে বললো। তামিমও মায়ার কথামতো নিজের ডেক্স থেকে উঠে মায়ার কেবিনে চলে আসলো।
মায়াঃ এসেছ, যাও হাত ধুয়ে এসে বস পর।
তামিমঃ মাইশাকে স্কুল থেকে আনা হয়নি.?
মায়াঃ এখন তো আম্মু সবসময় বাসায় থাকবেন ই তাই মাইশাকে আর অফিসে আনি নাই। ড্রাইভারকে বলে দিয়েছি সে মাইশাকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে গেছে। তা ছাড়া মাইশা এইখানে এসে বসে থাকতে থাকতে বোরিং হয়ে যায় আর ওদিকে বাসায় আম্মুকেও একা একা থাকতে হয় তাই মাইশাকে বাসায় আম্মুর কাছে পাঠিয়ে দিলাম। ভালো করি নাই.?
তামিমঃ হ্যাঁ ভালোই করেছ, আমিও বলতে চাচ্ছিলাম এখন যেহেতু আম্মু বাসায় থাকবেন তাহলে মাইশাকে আর অফিসে এনে রাখা লাগবে না।
মায়াঃ আচ্ছা যাও এবার হাত ধুয়ে আস।
মায়ার কথামতো তামিম হাত ধুয়ে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে পরল। মায়া প্রতিদিনের মতো নিজে খাওয়ার পাশাপাশি মাইশাকেও খাইয়ে দিল। খাওয়া শেষে তামিম যখন মায়ার কেবিন থেকে চলে আসতে যাবে তখন মায়া তামিমকে যেতে মানা করে।
তামিমঃ লাঞ্চ টাইমের সময় তো শেষ হতে চলেছে, খাওয়াও শেষ তাহলে আর থেকে কি করবো.?
মায়াঃ চেয়ারে এসে বস বলছি।
মায়ার কথায় তামিম চেয়ারে এসে বসে পরল।
তামিমঃ বল এবার.?
মায়াঃ এই নাও তোমার এই মাসের বেতন (একটা খাম এগিয়ে দিয়ে)।
তামিমঃ কত আছে এইখানে.?
মায়াঃ যতটা তুমি এই ৩ মাস ধরে পেয়ে আসছ।
তামিমঃ এইখান থেকে ১০,০০০ টাকা রেখে দাও।
মায়াঃ কেন.?
তামিমঃ ওই যে আম্মুর চিকিৎসার জন্য তোমার থেকে ২ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলাম সেটার। একসাথে তো এতো টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই তাই এইভাবেই প্রতি মাসে একটু একটু করে
মায়াঃ দেওয়া লাগবে না।
তামিমঃ তাহলে একসাথে এতো টাকা আমি কিভাবে দিব.?
মায়াঃ বললাম না দেওয়া লাগবে না, আমার কথার মানে বুঝ না.?
তামিমঃ কেন দেওয়া লাগবে না.?
মায়াঃ আমি তোমার কি.?
তামিমঃ স্ত্রী (নিচু কন্ঠে)।
মায়াঃ তোমার পরিবারের কি.?
তামিমঃ সদস্য।
মায়াঃ তাহলে দ্বিতীয়বার আর টাকা ফেরত দেওয়ার নাম ধরবে না বলে দিলাম (কিছুটা রাগ দেখিয়ে)।
তামিমঃ টাকা দেওয়ার আগে তুমি কিন্তু এটা বল নি যে আমার সাথে তোমার বিয়ে হলে টাকাগুলো আর দেওয়া লাগবে না। তাহলে এখন কেন
মায়াঃ এখন আমার টাকাগুলো নিতে ইচ্ছা করছে না তাই নিব না।
তামিমঃ তোমাকে নিয়েই হবে রাখ বলছি।
মায়াঃ আমি নিব না বলছি না।
তামিমঃ তুমি টাকাগুলো না নিলে আমার মনের ভিতর সারাক্ষণ খচখচ করবে। এই নাও ১০,০০০ টাকা রাখ। আর তুমি যেহেতু এখন আমার পরিবারেরই একজন তাহলে সংসার চালানোর টাকা যদি ফুরিয়ে যায় তাহলে তোমার থেকে নিয়ে নিব হবে তো.?
মায়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে (তামিমের সাথে আর কথা বলে লাভ হবে না তাই সে বাধ্য হয়ে টাকাগুলো নিয়ে নিল)।
তামিমঃ আচ্ছা আমি তাহলে এখন যাই (বলেই মায়ার কেবিন থেকে বেরিয়ে তাঁর ডেক্সে চলে আসলো)।
–কি ব্যাপার তামিম সাহেব, ইদানীং আমি প্রায়ই লক্ষ্য করছি যে আপনি কয়দিন ধরে লাঞ্চ টাইমের সময় হলেই ম্যাডামের কেবিনে চলে যান, ব্যাপার কি বলুন তো.?
তামিম নিজের ডেক্সে এসে বসে বসে কাজ করছিল। তখন হঠাৎ তাঁর পাশের ডেক্স থেকে ইরা তাঁর ডেক্সে এসে কথাটা বললো। ইরার কথা শুনে তামিম চিন্তায় পরে যায় এটা ভেবে যে সে এখন তাকে কি জবাব দিবে। সত্যিটা বললে যদি সে বিশ্বাস করে না আবার বিশ্বাস করলে যদি সেটা সবাইকে জানিয়ে দেয় তাহলে তো গন্ডগোল হয়ে যাবে।
ইরাঃ কি হলো আপনি কথা বলছেন না কেন.?
তামিমঃ আসলে ম্যাডাম এই কয়দিন ধরে একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে। তো ম্যাডাম অফিসে বস হয়ে আসার আগে তো উনার বাবা অফিসের বস ছিল তখনও আপনি অফিসে জয়েন হোন নাই। তো ম্যাডামের বাবার সাথে আমার অনেক ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যায় কয়েকদিনের মধ্যেই। তো উনি যখন ম্যাডামকে অফিসের বস বানিয়ে দেন তখন ম্যাডামকে বলে গেছিলেন কোনো সমস্যা হলে যাতে আমায় বলেন তাই ম্যাডাম এই কয়দিন লাঞ্চ টাইমে আমায় উনার কেবিনে ডেকে নেন।
ইরাঃ ওহ আচ্ছা বুঝলাম। আরেকটা কথা, কয়দিন ধরে একটা ছোট্ট মেয়েকে ম্যাডামের কেবিনে বসে থাকতে দেখতাম কিন্তু আজকে দেখতে পাইনি। ওই ছোট্ট মেয়েটা কে বলতে পারেন.? মানে ম্যাডামের কিছু হয় নাকি.?
তামিমঃ হ্যাঁ আমিও দেখেছি কিন্তু মেয়েটার সম্পর্কে ম্যাডামকে কখনো জিজ্ঞেস করি নি তাই আপনাকে কিছু বলতে পারছি না।
ইরাঃ আসলে মেয়েটা দেখতে খুবই কিউট ছিল তাই একটু জানার ইচ্ছা হলো মেয়েটা ম্যাডামের কিছু হয় নাকি।
তামিমঃ ওহ Thank You.
ইরাঃ Thank You কেন.?
তামিমঃ নাহ মানে এমনিই, ওহ আচ্ছা বলতে গিয়ে Thank You বলে ফেলেছি।
ইরাঃ ওহ, আচ্ছা তাহলে আপনি কাজ করেন আর ডিস্টার্ব করার জন্য সরি।
তামিমঃ It’s Okay.
ইরা মেয়েটা চলে যাওয়ার পর তামিম আবার কাজে মনোযোগ দিল।
.
.
.
.
.
Loading…….
#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৭ (টুইস্ট)
,,
,,
,,
,,
–ইরা মেয়েটার সাথে আজ তোমার কি নিয়ে কথা হয়েছিল.?
বাসায় এসে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে তামিম আর মায়া তাদের রুমে চলে আসলো। রুমে এসেই মায়া তামিমকে উপরোক্ত প্রশ্নটা করে।
তামিমঃ এই যে আমি প্রতিদিন লাঞ্চ টাইমে তোমার কেবিনে গিয়ে কি করি এটাই জিজ্ঞেস করেছিল।
মায়াঃ তখন তুমি কি বললে তাকে.?
তামিমঃ বললাম যে ম্যাডাম মানে তুমি একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছ আর প্রজেক্টে তোমায় হেল্প করার জন্য তুমি প্রতিদিন আমায় লাঞ্চ টাইমে তোমার কেবিনে ডেকে নাও।
মায়াঃ আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি.?
তামিমঃ হ্যাঁ করেছে।
মায়াঃ সেটা কি.?
তামিমঃ মাইশাকে নাকি উনি কয়েকদিন তোমার কেবিনে দেখেছে তাই আজকে আমায় জিজ্ঞেস করল যে মাইশা তোমার কিছু হয় নাকি কারণ আমি তো ইদানীং প্রায়ই তোমার কেবিনে যাওয়া-আসা করি।
মায়াঃ তুমি তখন কি বললে.?
তামিমঃ বলেছি আমি কখনো এ বিষয়ে ম্যাডামকে কিছু জিজ্ঞেস করি নি।
মায়াঃ তখন তুমি বললে না কেন যে মাইশা আমাদের মেয়ে আর আমরা স্বামী-স্ত্রী।
তামিমঃ এসব বললে উনি কি আমার কথা বিশ্বাস করতেন.? আর করলেও তখন এই কথাটা যদি অফিসের সকল স্টাফদের বলে দিত তাহলে তাঁরা কি ভাবত ভেবে দেখ তো একবার।
মায়াঃ কি ভাবত.?
তামিমঃ অফিসের কেউ তো আর জানে না যে আমাদের বিয়ে হয়েছে। আর তাঁরা এটাও জানে না যে মাইশা আমার মেয়ে। তাহলে আমি যদি উনাকে সত্যিটা বলে দিতাম তাহলে তো অফিসে একধরণের ঝামেলা শুরু হয়ে যেত।
মায়াঃ বুঝেছি তোমার কথা আর এটাও বুঝেছি যে এখন আমায় কি করতে হবে।
তামিমঃ কি করবা তুমি.?
মায়াঃ কাল অফিসে গিয়ে সকল কর্মীদেরকে একটা রুমে ডেকে এনে সবাইকে জানিয়ে দিব যে আমরা স্বামী-স্ত্রী আর মাইশা আমাদের মেয়ে।
তামিমঃ আরে কি বলছ তুমি এ
মায়াঃ সবাইকে সত্যিটা জানাতে সমস্যা কি.? নাহলে অফিসের বাকি কর্মীরা যদি এটা লক্ষ্য করে যে তুমি প্রতিদিন লাঞ্চ টাইমে আমার কেবিনে আস তাহলে তো ওরা বিষয়টা অন্য মাইন্ডে নিয়ে যাবে এর চেয়ে ভালো সবাইকে সত্যিটা জানিয়ে দিলেই ব্যাটার হবে।
তামিমঃ এমনটা করলে অফিসের সবাই তোমায় নিয়ে কি ভাববে.?
মায়াঃ মানুষ আমায় নিয়ে কি ভাবলো না ভাবলো এটা নিয়ে আমার এতো মাথা ব্যাথা নেই। কারণ আমি অন্যের খাইনা নিজের খাই।
তামিমঃ তারপরও
মায়াঃ রাত অনেক হয়েছে এবার ঘুমাও।
কথাটা বলেই মায়া বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে পরল। তামিমও মায়ার অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পরল।
সকালবেলা…
প্রতিদিনের মতো মায়া সবার আগে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো। নাস্তা খাওয়া শেষ করে মায়া মাইশাকে নিয়ে তাঁর স্কুলে চলে গেল আর তামিম অফিসে। মাইশাকে স্কুলে দিয়ে মায়া অফিসে এসে পিয়নকে বললো অফিসের সব কর্মীদের মিটিং রুমে আসার জন্য বলতে। পিয়ন এসে সবাইকে মিটিং রুমে আসার জন্য বলে গেলে সবাই কাজ রেখে মিটিং রুমে চলে আসলো।
মায়াঃ আপনাদের সবাইকে আজ একটা কথা জানানোর জন্য এইখানে ডাকা হয়েছে। জানি কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে যাবেন আর আমার কথাটা বিশ্বাস করতে পারবেন না।
–কি কথা ম্যাডাম.?
মায়াঃ বলছি, কিছুদিন আগে আমার একজনের সাথে বিয়ে হয়েছে। বিয়েটা আনুষ্ঠানিক ভাবে করা হয়নি বলে আপনাদের কাউকে বিয়েতে দাওয়াত দিতে পারি নি। যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সে এই অফিসেই কাজ করে।
–উনি কে ম্যাডাম.?
মায়া তামিমের দিকে তাকিয়ে ইশারায় তাকে নিজের কাছে ডাকল। তামিমও মায়ার ইশারায় ধীর পায়ে তাঁর কাছে এসে দাড়ালো।
মায়াঃ উনাকে নিশ্চয়ই আপনারা সবাই চিনেন। আর এটাও সবাই জানেন যে উনি বিবাহিত আর উনার একটা ছয় বছরের মেয়েও আছে কিন্তু উনার স্ত্রী তাদের মেয়েকে জন্ম দিতে গিয়ে ৬ বছর আগে মারা যান। খুবই ভালো আর সৎ চরিত্রের মানুষ উনি। উনার চলাফেরা দেখে আমি উনার উপর মুগ্ধ হয়েছি আর নিজেই উনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেই। এতো বছর মেয়ের কথা ভেবে উনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি তবে আমি উনাকে কথা দেই যে আমায় বিয়ে করলে উনার মেয়েকে আমি একদম নিজের মেয়ের মতোই দেখবো। তারপর অনেক কষ্টে উনাকে আমি বিয়ের জন্য রাজি করাই আর উনার সাথে আমার বিয়ে হয়।
এখন আপনারা সবাই ভাবতে পারেন যে উনি আমার সম্পত্তির লোভে আমায় বিয়ে করেছেন। এমনটা ভেবে থাকলে আমার কিছুই করার নেই কারণ উনি আমায় বিয়ের প্রস্তাব দেননি, আমি নিজেই উনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি। তাই কেউ শুধু শুধু আমাদের বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে সমালোচনা করবেন না আশা করি। এবার আপনারা সবাই যেতে পারেন, ধন্যবাদ সবাইকে।
তারপর উপস্থিত সবাই সেখান থেকে চলে গেল শুধু তামিম একা মায়ার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।
মায়াঃ সত্যিটা সবাইকে না বললে সবাই একসময় আমাদের বিষয় নিয়ে অন্য কিছু ভাবা শুরু করবে যেটা আমার ভালো লাগবে না। তাই এখনই সবাইকে সত্যিটা জানিয়ে দিলাম এখন তাঁরা যা ভাবার ভাবুক আমার কিছু যায় আসে না।
তামিমঃ আচ্ছা তাহলে আমি এখন যাই।
মায়াঃ ওকে যাও, আর লাঞ্চ টাইমে আমার কেবিনে চলে এস আমি কিন্তু প্রতিদিন কল করে তোমায় ডাকতে পারবো না। এতে আমার তোমায় পর পর মনে হয়।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে চলে আসবো।
তারপর তামিম সেখান থেকে তাঁর ডেক্সে চলে আসলো আর মায়া তাঁর কেবিনে চলে গেল। এদিকে মায়ার কথাগুলো শুনে অফিসের সকল কর্মীরা অবাক হয়ে গেছে যে মায়া এই অফিসের বস হয়ে কিনা অফিসেরই একজন কর্মীকে বিয়ে করেছে.! সকল কর্মী কাজের ফাঁকে অনেকবার তামিমের দিকে ত্যাড়া চোখে তাকাচ্ছে যেটা তামিম খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। কিন্তু তামিম এদের তাকানোর দিকে লক্ষ্য না দিয়ে নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে।
–––––––
ইরাঃ আচ্ছা আপনার তো একটা ছয় বছরের মেয়ে আছে তাইনা.? তাহলে কয়দিন আগে যে একটা ছোট্ট মেয়েকে ম্যাডামের কেবিনে দেখেছিলাম ওই মেয়েটাই কি আপনার মেয়ে ছিল.?
লাঞ্চ টাইমের সময় হলে সবাই যার যার ডেক্স থেকে উঠে লাঞ্চ করার জন্য অফিস কেন্টিনে চলে গেল। সবার শেষে তামিমও তাঁর ডেক্স থেকে উঠে মায়ার কেবিনের দিকে পা বাড়ালো। এমন সময় তাঁর পাশের ডেক্সে থাকা ইরা মেয়েটাও লাঞ্চ করার জন্য উঠে দাঁড়ায় আর তামিমকে দেখে তার সামনে এসে উপরোক্ত প্রশ্নটা করে।
তামিমঃ জী।
ইরাঃ তাহলে আপনি গতকাল বললেন না কেন যে ওটা আপনার মেয়ে ছিল.?
তামিমঃ বলিনি কারণ বললে আপনি আবার জিজ্ঞেস করতেন আমার মেয়ে ম্যাডামের রুমে কেন। তখন আমি কি জবাব দিতাম.?
ইরাঃ তখন তো বলতে পারতেম যে ম্যাডাম আপনার ওয়াইফ।
তামিমঃ ম্যাডামের সাথে যে আমার বিয়ে হয়েছে এটা আপনি গতকালকে জানতেন.?
ইরাঃ নাহ।
তামিমঃ তাহলে আমি যদি গতকাল বলতাম ম্যাডাম আমার ওয়াইফ আপনি সেই কথা বিশ্বাস করতেন.?
ইরাঃ ওহ আচ্ছা এখন বুঝেছি আপনি কেন গতকাল আমায় মিথ্যা বলেছিলেন।
তামিমঃ আমি তাহলে এখন যাই.?
ইরাঃ ম্যাডামের রুমে যাচ্ছেন.?
তামিমঃ জী।
ইরাঃ আচ্ছা যান তাহলে, আমিও যাই ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে আসি।
তারপর তামিম সেখান থেকে মায়ার কেবিনে চলে আসলো। মায়ার কেবিনে এসে ঢুকতেই তামিম দেখল মায়া একটা ছেলের সাথে বসে গল্প করছে। ছেলেটা মায়ার বিপরীতে দিকে বসে থাকায় ছেলেটার ব্যাক সাইড দেখা যাচ্ছে শুধু। তামিম ধীর পায়ে হেটে তাদের সামনে এসে দাড়ালো।
মায়াঃ আরে তুমি এসেছ, আস বস।
তামিমঃ উনি কে.? (ছেলেটার দিকে তাকিয়ে)
–হাই আমি মায়ার বয়ফ্রেন্ড (ছেলেটা তামিমের দিকে হাত বারিয়ে)।
.
.
.
.
.
Loading…….