#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ৮,৯
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৮
–আপনি কবে থেকে উনার বয়ফ্রেন্ড হলেন.?
অচেনা ছেলেটার কথা শুনে তামিম বেশ অবাক হয়েই প্রশ্নটা করল।
–সে তো আরও ৫ বছর আগে থেকেই হয়েছি ইভেন এখনো আছি (খুবই সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথাটা বললো ছেলেটা)।
তামিমঃ উনি যা বলছেন তা কি সত্যি.? (মায়ার দিকে তাকিয়ে)
মায়াঃ হ্যাঁ ও যা বলছে ঠিকই বলেছে। আসলে এই কথাটা তোমাকে আমার অনেক আগেই জানানোর কথা ছিল বাট তোমাকে জানাতেই পারি নি।
–তুই উনাকে এসব বলতে যাবি কেন উনি তোর কি হোন.?
মায়াঃ তুই হয়তো জানিস না যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আসলে আমার বিয়েটা খুবই সাধাসিধে ভাবে হয়েছে তাই বিয়েতে কাউকে ইনভাইট করা হয়নি। তো যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে উনি তোর সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন।
–What.! তোর বিয়ে হয়ে গেছে তাও উনার সাথে.?
মায়াঃ হ্যাঁ কোনো ডাউট আছে নাকি.?
–ডোন্ট মাইন্ড বাট উনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে তোর অফিসে কাজ করেন তাহলে কিভাবে কি.?
মায়াঃ সে অনেক কাহিনি তোকে পরে একদিন বলবো। এখন যেহেতু লাঞ্চ টাইমের সময় হয়ে গেছে তাহলে লাঞ্চ করে নেই। এই যাও হাত ধুয়ে আস, আর তুইও হাত ধুয়ে এসে আমাদের সাথে বসে পর।
–না রে আমি খাব না, আম্মু বাসায় আমার জন্য রান্না করেছে আর বলেছে বাহিরে কোথাও যেন না খাই। তাই আমি এখন গেলাম তোরা খেয়ে নে, অন্য আরেকদিন আসবো নে।
মায়াঃ আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে। আর তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন যাও হাত ধুয়ে আস।
তামিমঃ উনি না তোমার বয়ফ্রেন্ড তাহলে তোমাকে তুই করে বলছে কেন.?
তামিমের কথা শুনে সেই ছেলেটা আর মায়া একে অন্যের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। তামিম তাদের হাসির কারণ খুজে না পেয়ে বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
–উনি মেবি বয়ফ্রেন্ড এর মানেটা বোঝেন নাই দাড়া আগে উনাকে বুঝিয়ে দেই তারপর যাচ্ছি নাহলে উনার রাতের ঘুম উড়ে যাবে। শোনেন বয়ফ্রেন্ড মানে আপনি যা ভাবছেন তা নয়। মানে আমাদের মধ্যে ওইসব প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক নেই। আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড। কলেজে একসাথেই পড়াশোনা করেছি দুজন।
মায়াঃ হ্যাঁ ও ঠিকই বলছে তুমি যেমনটা ভাবছ তেমন কিছুই নাহ। আসলে ও সবার সাথেই এইভাবে ফান করে।
তামিমঃ তাহলে উনি যে বললেন উনি তোমার বয়ফ্রেন্ড.?
–আরে ভাই বয়ফ্রেন্ড মানেই কি শুধু প্রেমিক.? বয়ফ্রেন্ড শব্দটা কি ছেলে বন্ধুর বেলায় ব্যবহার করা যায়না.? আসলে এখন মানুষরা বয়ফ্রেন্ড শব্দটাকে প্রেমিক আর গার্লফ্রেন্ড শব্দটাকে প্রেমিকা হিসেবে ব্যবহার করছে তাই হয়তো আপনি আমার মুখ থেকে বয়ফ্রেন্ড শব্দটা শুনে আমাকে মায়ার প্রেমিক ভেবে নিয়েছেন। কিন্তু সত্যি বলতে এমনটা কিছুই না। আসলে আমরা যেই কলেজে পড়তাম সেই কলেজের সবাই-ই এরকম অনেক শব্দের শর্ট ফর্ম গুলো নিয়ে বিভিন্ন ভাবে প্যাঁচ লাগাত তাই আমরাও কয়েকজন মিলে এই শব্দটা এইভাবে ব্যবহার করতে শুরু করি। আশা করি আপনি আমার কথাগুলো বুঝতে পেরেছেন। যাইহোক এতক্ষণ ধরে কথা বললাম অথচ আপনার সাথে পরিচিত ই হলাম না। আমি রনি আপনি.?
তামিমঃ আমি তামিম।
রনিঃ আচ্ছা তাহলে আপনারা লাঞ্চ করেন আমি আজকে যাই অন্য একদিন আসলে দেখা হবে।
কথাটা বলেই রনি ছেলেটা মায়ার কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। তামিমও আর দাঁড়িয়ে না থেকে হাত ধুয়ে এসে খেতে বসে পরল।
তামিমঃ মাইশাকে স্কুল থেকে আনা হয়েছে.?
মায়াঃ হুম স্কুল থেকে এনে বাসায়ও দিয়ে এসেছে ড্রাইভার।
তামিম আর কিছু না বলে নিজের মতো খেতে শুরু করলো। খাওয়ার মাঝে আর কেউ কোনো কথা বললো না। একটু পর তামিমের খাওয়া শেষ হলে সে উঠে হাত ধুয়ে মায়ার কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের ডেক্সে চলে গেল।
–––––––
মায়াঃ আচ্ছা আজ অফিসে রনি যখন বললো সে আমার বয়ফ্রেন্ড তখন তোমার চেহারা ওমন দেখাচ্ছিল কেন.? দেখে মনে হচ্ছিল এই বুঝি কিছু একটা হারাতে বসবে।
রাতেরবেলা খাবার খাওয়ার পর তামিম রুমে এসে বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে বসে আছিল। এমন সময় মায়া রুমে ঢুকে তামিমের পাশে এসে কথাটা বললো। তামিম চোখ মেলে একবার মায়ার দিকে তাকাল অতঃপর চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো…
তামিমঃ কই কেমন করেছিলাম.? আর কি হারানোর কথা বলছ.?
মায়াঃ এই একদম মিথ্যা বলবে না আমি খুব ভালো করেই দেখেছি তোমার চেহারা কেমন হয়েছিল।
তামিমঃ তুমি থাক আমি একটু আম্মুর রুম থেকে আসছি। অনেকদিন ধরে আম্মুর সাথে ভালো করে কথা বলা হয়নি।
মায়াঃ আমিও আসবো কি.?
তামিমঃ আজ আমি একাই যাই অন্যদিন নাহয় দুজন মিলে যাব।
মায়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর তামিম সেখান থেকে তাঁর আম্মুর রুমে চলে আসলো। এসে দেখলো তাঁর আম্মু মাইশার সাথে গল্প করছে।
তামিমঃ মাইশা মামনি, তুমি একটু আম্মুর কাছে যাও তো। আব্বু একটু তোমার দাদুর সাথে কথা বলবো।
মাইশাঃ আচ্ছা আব্বু, দাদু এই গল্পটা আমায় ঘুমানোর আগে বলিও.?
তামিমের আম্মুঃ আচ্ছা দাদু ভাই।
তারপর মাইশা সেখান থেকে মায়ার কাছে চলে আসলো। মাইশা চলে যাওয়ার পর তামিম তাঁর আম্মুর পাশে গিয়ে বসলো।
তামিমঃ তোমার শরীর এখন কেমন আছে আম্মু.? ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ নিয়মিত খাচ্ছ তো.?
তামিমের আম্মুঃ হে বাবা আল্লাহর রহমতে এখন ভালোই আছি আর ঔষধ খাওয়ার কথা মাঝেমধ্যে ভুলে যাই কিন্তু মায়া প্রতিদিন রাতে খাওয়া শেষে আমায় ঔষধ খাইয়ে দিয়ে যায়। মেয়েটা অনেক ভালো রে, একদম আমাদের নীলার মতো। আজ নীলা বেঁচে থাকলে সেও এইভাবে আমার যত্ন নিত (কষ্ট মাখা কণ্ঠে)।
তামিমঃ নিশ্চুপ।
তামিমের আম্মুঃ আচ্ছা তুই হঠাৎ এতদিন পর আমার ঘরে আসলি যে কোনো কাজে এসেছিস.?
তামিমঃ আসলে কাজের চাপে ইদানীং তোমার সাথে ভালো করে কথা বলতে পারছি না তাই আজ মায়ার বিষয়ে তোমার সাথে কথা বলতে আসলাম।
তামিমের আম্মুঃ মায়ার বিষয়ে কি কথা বলবি.?
তামিমঃ এই যে আমি মায়াকে কেন বিয়ে করলাম। এতবছর মাইশার কথা ভেবে বিয়ে করি নি তাহলে এখন কেন আমি বিয়ে করলাম এটা হয়তো তুমি বুঝতে পারছ না তাইনা.?
তামিমের আম্মুঃ বুঝেছি আমি, মায়া নিজেই আমায় সবকিছু বলেছে।
তামিমঃ কবে বলেছে.?
তামিমের আম্মুঃ যেদিন আমি হাসপাতাল থেকে বাসায় আসি ওইদিন রাতেই মায়া আমার ঘরে এসে আমায় এ বিষয়ে সবকিছু বলে।
তামিমঃ ওহ।
তামিমের আম্মুঃ দেখ যা হবার হয়েছে এটা নিয়ে আর কিছু ভাবিস না। হয়তো উপরওয়ালা তোর ভাগ্যেই লিখে দিয়েছেন যে এমনটা হোক তাই এমনটা হয়েছে। তা ছাড়া মেয়েটা তোকে সত্যিই ভালোবাসে নাহলে সবকিছু জেনেও কেন তোকে বিয়ে করল বল.? তুই এইখানে কোনো যুক্তি দেখিয়ে বলতে পারবি না যে মেয়েটা তোকে এই কারণে বিয়ে করেছে। মেয়েটার বড়লোকের মেয়ে হয়েও তোর মতো ছেলেকে বিয়ে করেছে কারণ সে তোকে ভালোবাসে, শুধু তোকে নয় সাথে তোর মেয়েকে আর আমাকেও ভালোবাসে। তুই কখনো মেয়েটাকে কোনো কারণে কষ্ট দিস না বাবা।
তামিমঃ আচ্ছা আম্মু অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমিয়ে পর। মাইশাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি ওকে নিয়ে বেশি রাত পর্যন্ত গল্প করিও না নাহলে তোমার শরীর খারাপ করবে।
তামিমের আম্মুঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর তামিম তাঁর আম্মুর রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। রুমে এসে দেখলো মায়া মাইশাকে কাতুকুতু দিচ্ছে আর মাইশা হো হো করে হাসছে। মাইশার হাসি দেখে তামিমও হেসে দিল।
তামিমঃ মামনি এবার দাদুর কাছে যাও আর গিয়ে ঘুমিয়ে পর অনেক রাত হয়েছে।
মাইশাঃ আচ্ছা আব্বু, আম্মু টাটা (বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল)।
মায়াঃ আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না যে.?
তামিমঃ কোন প্রশ্ন.?
মায়াঃ ওই যে তখন রনির কথা শুনে তোমার চেহারা ওমন হয়েছিল কেন.?
তামিমঃ মনে নাই আমার কেমন হয়েছিল।
মায়াঃ আচ্ছা রনির কথাগুলো কি তোমার বিশ্বাস হয়নি.?
তামিমঃ হুম হয়েছে বাট প্রথমে ভেবেছিলাম সত্যিই তোমার প্রেমিক।
মায়াঃ আসলে ও এমনই।
তামিমঃ তা উনি এতদিন কোথায় ছিলেন.? আগে তো কখনো অফিসে দেখি নি।
মায়াঃ অন্য শহরে ছিল। কয়দিন আগে তাঁর আব্বুর এই শহরে ট্রান্সফার হওয়াতে তাঁর ফ্যামেলি এই শহরে এসেছে।
তামিমঃ ওহ, আচ্ছা তাহলে এবার ঘুমিয়ে পর।
মায়াঃ আচ্ছা।
তারপর তাঁরা দুজন বিছানার দু’দিকে মুখ করে শুয়ে পরল। শুয়ে শুয়ে তামিম ভাবছে, আচ্ছা রনির ওই কথাটা শুনে তখন আমার মনের ভিতর ওমন খচখচ করছিল কেন.? এর কারণ কি.?
এদিকে মায়া ভাবছে, রনির কথা শুনে ওর তখন ওমন চেহারা কেন হয়েছিল.? আমার প্রতি তো ওর কোনো ফিলিংস আছে বলে আমার মনে হয়না। কারণ ও তো ওর আম্মুকে বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে আমায় বিয়ে করেছে। তাহলে আজকে তাঁর ওমন চেহারা কেন হলো.? তাহলে কি আমার প্রতি ওর মনে একটু হলেও ফিলিংস আছে.? যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে ও একদিন নিশ্চয়ই আমায় ভালোবাসবে। কিন্তু ও কবে আমায় ভালোবাসবে.? আমার যে খুব ইচ্ছা ওর ভালোবাসা পাওয়ার। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মায়া একসময় ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল।
.
.
.
.
.
Loading…….
#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৯
,,
,,
,,
,,
আজ শুক্রবার, তাই একটু দেড়িতেই ঘুম ভাঙলো তামিমের। ঘুম থেকে উঠে তামিম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১০ টা বাজে। রুমের চারপাশে তাকিয়ে দেখল মায়া নেই হয়তো নাস্তা বানাচ্ছে এটা ভেবে তামিম ফ্রেশ হতে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে তামিম রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই নাস্তা খাচ্ছে।
মায়াঃ আরে তুমি উঠে গেছ.! যাও ফ্রেশ হয়ে নাও তাহলে তোমার জন্য নাস্তা দিচ্ছি (তামিমকে দেখেই কথাটা বললো)।
তামিমঃ আমি ফ্রেশ হয়েই এসেছি। তোমরা কখন উঠলে.?
মায়াঃ তাহলে এসে বসে পর। আমি অনেক আগেই উঠেছি, আম্মু আর মাইশা একটু আগেই উঠেছে।
তামিমঃ তাহলে আমায় এতক্ষণ ধরে ডাকলে না কেন.? (টেবিলে বসতে বসতে)
মায়াঃ অফিসের জন্য তো প্রতিদিন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠ তাই ভাবলাম আজকে একেবারে ভালো করে ঘুম সেড়েই উঠ।
মাইশাঃ আম্মু আব্বুকে পায়েস দেও।
মায়াঃ হ্যাঁ মামনি দিচ্ছি (বলেই পায়েস আনতে রান্নাঘরে চলে গেল)
কিছুক্ষণ পর মায়া একটা প্লেটে করে পায়েস নিয়ে এসে তামিমের সামনে রাখল।
তামিমঃ পায়েস কে বানিয়েছে.?
তামিমের আম্মুঃ বউমা বানিয়েছে। খেয়ে দেখ অনেক মজা।
তামিম প্লেট থেকে এক চামচ পায়েস মুখে দিল। পায়েস মুখে দিতেই তাঁর নীলার কথা মনে হয়ে গেল। নীলা অনেক ভালো করে পায়েস বানাতে পারতো। বিয়ের প্রথম প্রথম প্রায়ই সে তাদেরকে পায়েস বানিয়ে খাওয়াতো। কিন্তু মাইশা পেটে আসার ৩ মাস পর থেকে তামিম আর তাকে তেমন একটা রান্না করতে দিত না। তামিম নিজেই সবার জন্য রান্না করতো আর মাঝেমধ্যে তামিমের আম্মুও রান্না করতেন। আজ প্রায় ৬ বছর পর তামিম আবারও নীলার বানানো পায়েসের স্বাদ পেল মায়ার পায়েসে।
মায়াঃ কি হলো পায়েস ভালো হয়নি.? খাচ্ছ না যে।
তামিমঃ হে অনেক ভালো হয়েছে (বলেই আবার খেতে শুরু করলো)।
–––––––
মায়াঃ আব্বু নাকি অনেক অসুস্থ, আমি একটু আব্বুকে গিয়ে দেখে আসি তুমি বাসায় থেক।
দুপুরবেলা খাওয়া দাওয়া শেষে তামিম রুমে এসে রেস্ট নিচ্ছে এমন সময় মায়া রুমে এসে কথাটা বললো।
তামিমঃ কি হয়েছে আব্বার.?
মায়াঃ তেমন কিছু নাহ একটু জ্বর আরকি।
তামিমঃ আমিও আসবো তোমার সাথে.?
মায়াঃ না না তোমার আসা লাগবে না আমি একাই যেতে পারবো। ড্রাইভারকে বলেছে ও গাড়ি নিয়ে আমায় নিতে আসছে। তুমি বরং বাসায় থাক আমি সন্ধ্যার আগেই চলে আসবো।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে, যাও তাহলে। যাওয়ার সময় আম্মুকে বলে যেও।
মায়াঃ আচ্ছা
তারপর মায়া সেখান থেকে তামিমের আম্মুর রুমে চলে আসলো।
মায়াঃ আম্মু আমি একটু আমাদের বাসায় যাচ্ছি। আব্বু নাকি অসুস্থ উনাকে দেখতে যাচ্ছি। সন্ধ্যার আগেই চলে আসবো।
তামিমের আম্মুঃ আচ্ছা ঠিক আছে যাও।
তারপর মায়া বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো আর দেখলো ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে। এরপর মায়া গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললো। ড্রাইভারও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মায়াকে তাদের বাসায় নিয়ে আসলো। বাসায় ঢুকে মায়া তাঁর আব্বুর রুমে চলে আসলো।
মায়াঃ কেমন আছ আব্বু.?
মায়ার আব্বুঃ এইতো মা ভালোই, তুমি কেমন আছ.?
মায়াঃ আমিও ভালো আছি। শরীর কেমন আছে এখন তোমার.? ঔষধ খেয়েছ.?
মায়ার আব্বুঃ হে ঔষধ খেয়েছি আর শরীরও ভালো আছে। তুমি কি একা এসেছ সাথে কেউ আসেনি?
মায়াঃ ও আসতে চেয়েছিল কিন্তু আমি না করেছি। নাহলে আম্মু আবার যদি ঝামেলা করে। তা আম্মু কোথায়.?
মায়ার আব্বুঃ ভালোই করেছ। তোমার আম্মু মনে হয় রান্নাঘরে।
মায়াঃ আচ্ছা আমি আম্মুর সাথে দেখা করে আসি (বলেই সেখান থেকে রান্নাঘরে চলে আসলো)।
মায়াঃ কেমন আছ আম্মু.?
মায়ার আম্মুঃ কেমন আছি এটা জেনে তুই কি করবি.? আমার ভালো থাকা না থাকা নিয়ে তো তোর কোনো আসে যায় না।
মায়াঃ এইভাবে বলছ কেন.?
মায়ার আম্মুঃ জানিস না কেন বলছি.?
মায়াঃ আমি ওর সাথে সুখে আছি আম্মু আর আমি সুখে থাকলেই তো তোমরা খুশি তাহলে এইখানে রাগ করে থাকার মানে কি.?
মায়ার আম্মুঃ রাতে খেয়ে যাবি.?
মায়াঃ নাহ চলে যাব একটু পর।
মায়ার আম্মু আর কথা বাড়ালেন না। মায়াও আর কিছু না বলে সেখান থেকে তাঁর আব্বুর কাছে চলে আসলো, এসে অফিসের ব্যাপারে টুকটাক কথা বলতে লাগলো। অনেক্ষণ সময় তাঁর আব্বুর সাথে কথা বলে মায়া আবার বাসায় চলে আসলো।
মাইশাঃ আম্মু কোথায় গিয়েছিলে তুমি.? আর তোমায় এতো চকলেট কে দিয়েছে.?
বাসায় এসে ঢুকতেই কোথা থেকে জানি মাইশা এসে মায়ার সামনে দাড়ালো আর উক্ত কথাগুলো বললো।
মায়াঃ তোমার জন্য চকলেট আনতে বাহিরে গিয়েছিলাম মামনি। এই নাও এইগুলা তোমার জন্য (মাইশার দিকে একটা চকলেটের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে)।
মাইশাঃ Thank You আম্মু।
মায়াঃ Welcome মামনি। আচ্ছা তুমি স্কুলের হোমওয়ার্ক কমপ্লিট করেছ.?
মাইশাঃ আরও একটু বাকি আছে।
মায়াঃ যাও তাহলে তোমার দাদুর রুমে গিয়ে হোমওয়ার্ক করতে বস।
মাইশাঃ আচ্ছা আম্মু (বলেই মাইশা তাঁর দাদুর রুমে চলে গেল)।
এইভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেল এক মাস। এই এক মাসে মায়া একেবারে তামিমের আম্মুর মন জয় করে ফেলেছে কিন্তু তামিমের সাথে তাঁর তেমন ঘনিষ্টতা হয়ে ওঠেনি। হয়তো তামিম এখনো নীলাকে ভালোবাসে আর নীলার জায়গায় সে অন্য কাউকে স্থান দিতে পারবে না তাই। তারপরও তামিমের মায়াকে একদিক দিয়ে পছন্দ হয়েছে সেটা হলো মায়া তাঁর আম্মুকে একদম নিজের মায়ের মতো দেখে আর মাইশাকে নিজের মেয়ের মতো। এই এক মাসে তামিম একবারও দেখেনি যে মায়া মাইশাকে ধমক দিয়েছে বা মাইশা কখনো তাঁর কাছে এসে মায়ার নামে অভিযোগও করেনি। তামিম এতে মায়ার প্রতি মনে মনে অনেক সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। নীলার জায়গায় মায়াকে পেয়ে তামিমের আম্মু আর মাইশা অনেক খুশিতেই আছে। কিন্তু তামিমের মনে নীলার স্থানটা এখনো রয়ে গেছে তাই সে মায়ার সাথে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি করতে পারছে না।
আজ অফিসে লাঞ্চ টাইমের সময় তামিম লাঞ্চ করার জন্য মায়ার কেবিনে এসে ঢুকতেই দেখল মায়ার কেবিনে একটা ছেলে বসে আছে। ছেলেটা মায়ার কাছাকাছি এসে মায়ার চোখে কি যেন খুজছে। তামিম কেবিনে ঢুকে আস্তে করে একটা কাশি দিল। কারও কাশির আওয়াজ শুনে মায়া আর ওই ছেলেটা দুজনেই পিছনে ফিরে তাকাল।
মায়াঃ তুমি এসে গেছ আস বস। আসলে আমার চোখে কি যেন একটা পরেছিল তাই সানি ভাই দেখছিল যে কি পরেছে।
তামিমঃ উনি তোমার কি হোন.?
মায়াঃ আমার খালাতো ভাই। এতদিন আমেরিকায় ছিলেন। এক সপ্তাহ আগে দেশে এসেছেন। আমাদের বাসায় গিয়ে আমাকে দেখতে পাননি বলে আব্বুর থেকে অফিসের ঠিকানা নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে অফিসে চলে এসেছেন।
তামিমঃ ওহ আচ্ছা। তা কেমন আছেন.?
সানিঃ ভালোই বাট আপনি কে.? মায়া উনি তোমার ফ্রেন্ড নাকি.? (মায়ার দিকে তাকিয়ে)
মায়াঃ আম্মু তোমায় কিছু বলেনি.?
সানিঃ না তো, কি বলবে.?
মায়াঃ এই যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
সানিঃ What.! Are You Joking With Me.?
মায়াঃ আমি সিরিয়াস, আমার বিয়ে হয়ে গেছে। যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে উনি তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন।
সানি ছেলেটা মায়ার কথা শুনে তামিমের দিকে তাকাল আর বললো…
সানিঃ তোমরা নিশ্চয়ই খুব ভালো ফ্রেন্ড, আর মায়া আমার সাথে মজা করছে আমি জানি।
তামিমঃ মায়া যেটা বলেছে সেটা সত্যি।
তামিমের কথা শুনে সানি ছেলেটা একেবারে চুপ হয়ে গেল। সে একবার তামিমের দিকে আরেকবার মায়ার দিকে তাকাতে লাগলো। তারপর আচমকা নিজের পকেট থেকে ফোনটা বের করে কানে ধরে এমন ভান করলো যেন তাঁর ফোনে কল এসেছে।
সানিঃ হ্যালো.! আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি (বলেই কান থেকে ফোন সরিয়ে নিল)। মায়া আমাকে এখন যেতে হবে আমি এখন যাই। অন্য আরেকদিন দেখা হবে (কথাগুলো বলেই সে মায়ার কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল)।
মায়া পিছন থেকে তাকে দু-একবার ডেকেছিল কিন্তু তাঁর আগেই সে বেরিয়ে যায়।
মায়াঃ যাহ শুনেই গেল না। আচ্ছা তুমি হাত ধুয়ে এসে বস পর আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
তামিমঃ হুম।
তারপর তামিম আর মায়া দুজনে মিলে দুপুরের খাবারটা খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে তামিম আবার নিজের ডেক্সে চলে আসলো। ডেক্সে এসে তামিম ভাবতে লাগলো, আচ্ছা উনি মায়ার বিয়ে হয়ে গেছে এটা শুনে এতো অবাক হলেন কেন.? হয়তো হঠাৎ করে কথাটা শোনায় অবাক হয়েছেন। কিন্তু উনি ওইভাবে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন কেন.? যেন কেউ উনাকে ফোন করে খুব জরুরি একটা কাজের জন্য ডেকেছে। অথচ উনি যখন উনার ফোনটা পকেট থেকে বের করেছিলেন তখন ফোনের স্ক্রিনে কোনো আলো জ্বলে ওঠেনি। তাহলে উনি এমন করলেন কেন.? নিশ্চয়ই কোনো একটা রহস্য আছে এর পিছনে, সেটা আমায় খুজে বের করতে হবে।
.
.
.
.
.
Loading…….