তোমাতে_আমি চতুর্থ পর্ব

0
3298

তোমাতে_আমি
চতুর্থ পর্ব
,
দুদিন কেটে গেছে ঈশানের কোনো খোজ নেই, অপর দিকে রিদ ওর বাবা মা কে নিয়ে এসেছে বিয়ের কথা পাকা করতে।
এক একটা সমস্যা নয় পুরো তিনটা সমস্যা মনে হচ্ছে কিরনের।
একদিকে ওর ভালোবাসা রিদ অপর দিকে মনে হচ্ছে সে রিদ কে নয় ঈশান কে ভালোবাসে আবার অন্যদিকে সেই মেসেজ করা অজানা মানুষ টা।
কোন সিদ্ধান্ত নেবে ভেবে পাচ্ছে না। অন্যদিকে মা বলেছে সে এই ব্যাপারে সাহায্য করবে না।
রিদের সাথে এই দু দিন মিশেও মনে হচ্ছে ও ভালোবাসে না। কোথায় একসাথে গেলেই যেন সংকোচ হয় আর কিরনের চেহারায় বারবার তাকায়। যদিও মন কারানো সৌন্দর্য নেই তবুও কেমন লোলুপ দৃষ্টি।
অপর দিকে ঈশান কত টা ফ্রি কিরনের সাথে কোথাও যেতেও সংকোচ হয়না ওর মনে হয় সময় গুলো বেশ ভালোই কাটে।
রুমে ঢুকে পায়চারি শুরু করল। কি হবে? ঈশান কে বলব? ওই বা কি ভাববে হয়তো বন্ধু হিসেবে এতোটা ফ্রি, না এভাবে বলা যাবে না।
ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে ঈশান কে বলতে, ঈশান আমি রিদ কে নয় তোমাকে ভালোবাসি, ওকে ফিল করিনা তোমাকে করি।
কিন্তু অজানা একটা দেয়াল বারবার বাধা দিচ্ছে।
হঠাৎ রুমে রিদ ঢুকলো। কিরন চমকে গিয়ে বিছানায় রাখা ওরনা টা গায়ে জড়িয়ে নিলো।
আপনি এভাবে, এখানে কেনো? (কিরন)
ক্যানো আসতে পারিনা বুঝি? রিদ হেসে বললো।
নক করে ঢুকলে খুশি হতাম, (কিরন)
রিদ হ্যাচকা টান দিয়ে কিরন কে নিজের কাছে টেনে নিলো।
শোনো আর মাত্র কয়েকটা দিন, তারপর তুমি আমি এক হয়ে যাবো, এখন এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আর কি এমন সমস্যা তুমি তো আর উলঙ্গ হয়ে ছিলেনা (রিদ)
কিরন নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে দাড়ালো।
এখনো বিয়ের কথায় পাকা হয়নি রিদ, আর আপনি এতোকিছু ভেবে নিলেন ছিহ (কিরন)
ওহ কিরন, এভাবে বলছ ক্যানো আমরা তো একে অপরকে ভালো বাসি তাহলে এতো সংকোচ কেনো? নাকি ঈশান কে নিয়ে ভাবছো? (রিদ)
মানে,, চমকে উঠে বলল কিরন।
মানে হচ্ছে এই যে কয়েকদিন থেকে তো ভালোই দেখছি ঈশানের সাথে ঘুরছো, আবার রাতেও দেখি বাসার সামনে এসে লুকিয়ে দ্যাখে ব্যাপার কি? কোনো ইনটু মিনটু তো অবশ্যই করো আর আমার কাছে আসলেই টিপিক্যাল আদ্দিকালের ভাবনা শোনাও (রিদ)
কিরন শুনেই চমকে উঠলো, বাসার সামনে ঈশান দাড়িয়ে থাকে? অপর দিকে মেসেজ ওয়ালাও দাড়িয়ে থাকে, এই দু জন এক জন নয়তো?? আনমনে ভাবছিলো কিরন। এর মধ্যেই রিদ ঘাড়ে হাত দিলো।
কি হচ্ছে কি রিদ?
যা ভেবেছি তাই দেখছি, কয়েকদিনেই মন নিয়ে ফেললো এই আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা? আমি কি না কি ভাবলাম, ভেবেছি অন্য মেয়েদের মত তুমি নও, কিন্তু এখন তো দেখছি আলাদাও নও (রিদ)
আমি এখনো নিশ্চিত না, ঈশান আমার বন্ধু এর বাহিরে কিছুনা (কিরন)
তাহলে কি ভাববো আমাকে ভালো বাসো?(রিদ)
আমার কিছুটা সময় লাগবে (কিরন)
আচ্ছা ঠিক আছে আমি জোর করব না, কাল পর্যন্ত সময় দিচ্ছি (রিদ)
ধন্যবাদ (কিরন)
তোমার মন যা চাই সেটাই করো কেমন (রিদ)
কিরন মাথা নাড়ালো,
হুম ভালো থেকো আমার ভালোবাস,,আর সিন্ধান্ত নেওয়ার পর অবশ্যই ফোন করে জানাবে, আমি অপেক্ষা করব। রিদ কথাটা বলেই বেরিয়ে গেলো।
থপ করে বিছানায় বসলো কিরন। ভেতরে অনেক প্রশ্ন না আজ রাতেই যা করার করতে হবে, এভাবে চলতে পারেনা।
রাতে অনেকটা সময় নিয়ে ব্যালকনিতে বসে আছে কিরন, যদি আমি জেগে থাকাতে মেসেজ ওয়ালা জেগে থাকে তাহলে সে আজকেও নিশ্চয়ই আসবে, আর যে কোন ভাবেই হোক দেখতেই হবে কে সে।
রাতে কোনো রকম খেয়েই ব্যালকনিতে আসলো কিরন এদিক সেদিক পায়চারি করে যাচ্ছে, এমনিতেই বেশি হাটলে হাফিয়ে ওঠে কিরন, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে ও হাফাচ্ছে না, অজানা এক শক্তি পাচ্ছে।
রাত বারোটায়, মোবাইলটা বেজে উঠলো, তড়িঘড়ি করে রিসিভ করলো কিরন।
অপর দিকে, নিস্তব্ধতা শুধু নিঃস্বাস এর শব্দ শোনা যাচ্ছে।
নিরবতা কাটিয়ে হঠাৎ বলে উঠলো,
এভাবে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে থাকার কারন কি মহারানী?
কে? কে আপনি?
কিরনের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল,
নিচে এসো অনেক কথা আছে,,
কিন্তু আপনি,,,, কথাটা শেষ হওয়ার আগেই লাইন টা কেটে গেলো। তারাহুরো করে নিচে নামলো কিরন, চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। আশেপাশে কেউ নেই, দাড়িয়ে থাকতে থাকতে কিরন কেদেই ফেললো, আজকেও ব্যার্থ তার দেখা পাওয়া গেলোনা।
বাসায় যাওয়ার জন্য ফিরলে, অন্ধকার থেকে কেউ নাম ধরে ডাকলো,,
কিরন,,
পেছন ফিরে দেখে রিদ দাড়িয়ে আছে, সাথে রনো, রনোর হাতে একটা টর্চ।
অল্প আলোতেই দুজন কে দেখা যাচ্ছে।
কি হলো এভাবে নির্বাক কেনো?? (রিদ)
ওই,ফোন আর মেসেজ?,,
আমিই করেছিলাম ম্যাডাম, আসলে অনেক আগ থেকেই তোমাকে ভালো লাগে বাট বলিনি কখনো, আর এই ফোন আর মেসেজ সেটাও আমার করা। (রিদ)
কিন্তু আমি তো,,,, কথাটা শেষ করতে পারলোনা কিরন, ভেবেছিলো ইশান কে দেখবে তার বদলে রিদ এখানে।
হুম বলো (রিদ)
না কিছু না (কিরন)
আমি জানি কি বলবা,, তোমাকে বাজে কথা বলেছিলাম এতো দিন তাই ভাবছো তো? আসলে আমি পরিক্ষা করতে চেয়েছিলাম তুমি কতটা ভালোবাসো, আর তুমি পরিক্ষায় ১০০ তে ১০৫ পেয়েছো (রিদ)
কিহ ১০৫? (কিরন)
খুশি হয়ে পাচ বেশি দিয়েছি, ও হ্যা সরি ওই ব্যাবহার গুলোর জন্য (রিদ)
ইটস ওকে আমি কিছু মনে করিনি (কিরন)
তাহলে বিয়ের ব্যাপার টা কি ভাবলা? (রিদ)
আমি রাজি, আপনার পরিবার কে দিন ঠিক করতে বলুন,, কথাটা বলেই চলে গেলো কিরন।
চলবে,,,,
রাধিকা রাই বর্মন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here