তোমাতে_আমি তৃতীয় পর্ব

0
2848

তোমাতে_আমি
তৃতীয় পর্ব
?
কিরন মেসেজ টা পড়েছো তো তাইনা? নাও হয়ে গেলো গান্ধর্ব মতে আমাদের বিবাহ, এখন তো বিধবা হতেই পারি তাইনা?
এরকম কেউ মেসেজ দেয়? কিরন ভাবতেই পাচ্ছেনা।
মেসেজের রিপ্লে না দিয়ে মায়ের কাছে গেলো মোবাইল টা নিয়ে।
কি কিরন? (মা)
মা আমি আজ এখানেই ঘুমাবো (কিরন)
এখানে ঘুমাবি? তাও জিজ্ঞাসা করতে এসেছিস, আমার কাছে ঘুমাবি না তো কার কাছে ঘুমাবি, (মা)
কিরন দাঁড়িয়ে আছে কিছু না বলে।
তোর এই অভ্যাস টা এখনো গেলো না, এদিকে আয় মাথায় হাত বুলিয়ে দেই, হেসে বলল মা।
কিরন মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো,
ঘুমানোর ব্যার্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে, কোনো ভাবেই ঘুম আসছে না শুধু এদিক সেদিক, মোড়ামুড়ি দিয়ে যাচ্ছে।
গত দেড় ঘন্টা থেকে তোকে ঘুমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি, কি হয়েছে বল তো ,তুই তো কিছু লুকাস না আমার থেকে তাহলে আজ কি এমন হলো মায়ের কোলেও ঘুম আসেনা? (মা)
কিরন মোবাইলটা বের করে মায়ের হাতে দিলো ।
মেসেজ দেখে বড় বড় চোখ করে কিরনের দিকে তাকালো কিরনের মা।
কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই কিরন কেদে ফেললো,
বিশ্বাস করো মা আমি কিছুই জানিনা উনি কে তাও জানিনা (কিরন)
চোখ মুছে দিয়ে কিরনের মা বললো ,
আমি জানি আমার মেয়ে কেমন, ছেলেটা কে আমি খোজ নিবো, কিন্তু তার আগে বলো তো তুমি কি চাও? (মা)
মা আমি,,, আমি রিদ কে (কিরন)
ভালোবাসো তাই তো? (মা)
হুম, মাথা নিচু করে বলল কিরন।
সব শুনেছি আমি রিদের কাছ থেকে, আর তোমার মাঝে ভালো খারাপ দুটোরি জ্ঞান দিয়েছি আমি তাই আলাদা করে কিছু বলছিনা, ভালো জ্ঞান টাকে কাজে লাগিয়ে তুমি সিদ্ধান্ত নাও তুমি কি করবে (মা)
,
কিন্তু মা আমি তো এখনো নিজেকে নিয়েই ভাবতে পারিনা ঠিক মত তাহলে সারাজীবনের ভাবনা কিভাবে ভেবে নিবো? (কিরন)

তুমি যতটুকু পারবে নিজের মত করে সাজিয়ে নিবে তোমার জীবন আর না পারলে এমন কাউকে চুজ করো যে সাজিয়ে দিবে, কেমন? (মা)
ঠিক আছে মা, (কিরন)
হুম এখন নিশ্চিত মনে ঘুমাও,আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।
কয়েকদিন পর কিরন কলেজে গেলো রিদের জোড়াজুড়ি তে, সেদিনের অপমানের পর আর কলেজ আসেনি কিরন, ঈশান প্রতিদিন এসে খোজ খবর নিয়ে যেতো, তবে কলেজ যাওয়ার জন্য বলেনি কখনো।
হেই কিরন কেমন আছো (রিদ)
জ্বি ভালো, আপনি ? (কিরন)
এখন তুমি এসে গেছো, আমি সব সময় ভালো থাকবো, আচ্ছা একটা কথা বলি? (রিদ)
হুম,,
তুমি সবসময় এতো সাধারণ ড্রেস পড়ো কেনো?
আমার জীবন যাপন সাধারণ, কারণ আমি সহজ সরল ভাবে চলতে ভালো বাসি, আর আমার মনে হয় ড্রেস, ফ্যাশন আর স্মার্টনেস এ বিচার না করে মনের দিকটা বিচার করা বুদ্ধিমানের কাজ, সে যাক গে
সাধারণ ড্রেস এ কি আপনার কোনো সমস্যা আছে? (কিরন)
আসলে বুঝতেই তো পাচ্ছো আমার ফ্রেন্ড রা সবাই স্মার্ট আর কতটা আধুনিক, আর সে জায়গায় তুমি এখনো দিদিমা টাইপের, এই নিয়ে ওরা হাসাহাসি করে, তাই বলছিলাম যদি চেঞ্জ হতে (রিদ)
আপনার কোনো দুর্বলতা নিয়ে যদি আপনার কোনো বন্ধু হাসাহাসি করে তাহলে কি করবেন? (কিরন)
কি আর করব যাতে হাসাহাসি করতে না পারে সে ব্যাবস্থা করব (রিদ)
যেমন?
আমি যদি ক্ষ্যাত হই আর সেটা নিয়ে যদি ওরা হাসাহাসি করে তাহলে আমি নিজেকে পালটিয়ে স্মার্ট করব (রিদ)
আর আমি কি করব জানেন? (কিরন)
কি করবে? (রিদ)
আমি অবশ্যই সেই বন্ধুর সঙ্গ ত্যাগ করব,
যে আমার সাধারণতাকে নিয়ে হাসাহাসি করে তাকে আমি বন্ধু মানতে পারব না, বন্ধু তো তাকেই বলে যে ভুল গুলো শুধরে দেয়, চলার পথ দেখায়, দুর্বল দিক গুলো দেখে হাসাহাসি না করে সবল করে যাতে অন্যকেউ হাসাহাসি না করতে পারে (কিরন)
হুম বুঝলাম, তা ম্যাডাম আপনি এতো কথা জানেন আগে তো জানতাম না, সারাক্ষণ তো চুপচাপ থাকেন (রিদ)
অযথা কথা বলা, কৌতুহল দেখানো এর কোনটাই আমার নেই, (কিরন)
হুম রহস্যে কন্যা, তোমার বাড়ি না গেলে তো জানতেই পারতাম না কত বড় বাড়ির মেয়ে তুমি, আচ্ছা সব প্রপার্টির মালিক তো তুমিই তাইনা? (রিদ)
না এখনো হইনি তবে মায়ের পর আমার নামেই হবে সব (কিরন)

তারপর কি করবে ওগুলো দিয়ে? (রিদ)

আমার সমস্ত সম্পত্তির চার ভাগের তিন ভাগ অনাথ আশ্রম আর বৃদ্ধা আশ্রমের নামে দিয়ে দিবো (কিরন)
গুড,,
ও আচ্ছা, শোন তুমি ক্লাস করো এখন আমি একটু বাহিরে থেকে আসি (রিদ)
ঠিক আছে, (কিরন)
কথা বলেই ক্লাসে গেলো কিরন আর রিদ বাহিরে চলে গেলো।
কি ব্যাপার ম্যাম, ভাব হয়ে গেছে নাকি? (ঈশান)
হ্যা, রিদ বাসায় এসেছিলো আর তারপর ক্ষমাও চায়, (কিরন)
তারপর (ঈশান)
আর কি, আমি তো রেগে ছিলাম না, তাই ক্ষমা করিনি, আচ্ছা ছাড়ো তোমাকে একটা কথা বলার আছে (কিরন)
হুম, শোনার জন্য অপেক্ষা করছি (ঈশান)
রিদ বলেছে ও আমাকে ভালোবাসে (কিরন)
ও, কিছু মনে করোনা কিরন আমার মা মাসির বাড়িতে যাবে, পৌঁছে দেওয়ার মত বাসায় কেউ নেই, আমাকে এখন যেতে হবে (ঈশান)
আচ্ছা ঠিক আছে,,
ঈশান তড়িঘড়ি করে ব্যাগ নিয়েই ছুটে গেলো।
পরের দিন ও ক্লাসে আসলো না, কিরন ভেবে ছিলো ক্লাসে না আসলেও বিকেলে আসবে দেখা করতে, কিন্তু তারপর ও দেখা মিলল না। এদিকে ঈশানের নাম্বার টাও নেই, ক্লাসের যে কোন বন্ধুর থেকে নেবে সে উপায় ও নেই, ঈশান কাউকেই নাম্বার দেয়নি আর তেমন কারো সাথে বন্ধুত্ব করেনি যে নাম্বার পর্যন্ত যাবে।
দুদিন কেটে গেছে ইশানের কোনো খোজ নেই, এদিকে রিদ বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে,
মা বাবাকে নিয়ে বিকেলেই হাজির বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
চলবে,,,
রাধিকা রাই বর্মন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here