তোমাতে_আমি
দ্বিতীয় পর্ব
,
মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখে ১৮ টা মিসড কল আর চার টা মেসেজ, এগুলো দেখে না যতটা অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে মোবাইল এ সময় দেখে, ১২ টা বাজে, আর এতোক্ষণ ঘুমাচ্ছিলো? মাও ডাকেনি।
কিরন মেসেজ সিন না করেই ফোনটা রেখে দিলো।
তাড়াতাড়ি স্নান করে নিচে নেমে আসলো। মা আগে থেকেই টেবিলে খাবার নিয়ে বসে আছে।
কি হলো মা তুমি খাওনি এখনো? (কিরন)
তোকে না খাইয়ে কি কখনো আগে খেয়েছি? (মা)
মা তুমি কি কখনই শোধরাবে না এভাবে আর কতদিন? (কিরন)
যতদিন তুই আমার কাছে থাকবি ঠিক ততদিন (মা)
হুম বুঝলাম এবার বলো তো এতো বেলা হয়ে গেলো আমাকে ডাকোনি কেনো? (কিরন)
রাতের অর্ধেক টা সময়ই না ঘুমিয়ে ব্যালকনিতে বসে ছিলি, আর ঘুমিয়েছিস মধ্যে রাতে, তাই ভাবলাম ঘুমটা পুরো হোক, নাহলে তো মাথা ব্যাথা করতো (মা)
কিরন নিশব্দে কেদে ফেললো,
এভাবে এতো খেয়াল রাখো কেনো, এতোটা ভালোবাসো আর সেই আমিই কি না কষ্ট দিলাম, দুঃখিত মা।
মাকে জড়িয়ে ধরে বলল কিরন।
মা আদরে কাছে নিয়ে নাকটা কেটে বলল,
ধুর পাগলী মেয়ে, কষ্ট কিসের? নয় মাস পেটে যখন ছিলে তখন তোমার লাথিতে পেটে ব্যাথা পেতাম, আবার পরক্ষণেই মনে হতো আমার মাঝে যে আছে সে তো আমারি অংশ, ছোট ছোট তুলোর মত নরম পা দিয়ে গুতো মেরে মজা পাচ্ছে আর আমি কিনা তাতেই হাফিয়ে যাচ্ছি তা কি করে হয়, সেদিন কষ্ট পেয়েও আমার কষ্ট টাকে কষ্ট মনে হয়নি আর আজ সামান্য একটু খেতে দেরি হলো তাতেই এতো কিছু? কষ্ট না খেয়ে থাকলে কেউ পায়না বরং সন্তান অবাধ্য হলেই পায় প্রত্যেক টা বাবা মা। (মা)
তুমি দেখে নিও মা আমি তোমার অবাধ্য কখনই হবো না আর তুমি কষ্ট পাও এমন কাজ কখনই করব না (কিরন)
সে তো জানি আমি, আমার মেয়ে কতটা লক্ষি, কথাটা বলতে বলতে এক গ্রাস ভাত মুখে তুলে দিলো কিরনের।
খাওয়া শেষ করে রুমে আসলো ভাবলো একটু গেম খেলা যাক , হঠাৎ মনে পড়লো
মেসেজ গুলো দেখা হয়নি।
একটা মেসেজ ছিলো,, সু প্রভাত, পরের টা,, এই ঘুম ভেংগেছে তো?
তৃতীয় টা,, মহারানী এখনো ঘুমাচ্ছেন? তারাতাড়ি কলেজ আসুন অপেক্ষা করছি।
আর লাষ্ট মেসেজ টা ছিলো, আর কত অপেক্ষা করাবে শুনি? সেই দুই ঘন্টা থেকে অপেক্ষা করছি, এই ওয়েট তুমি আবার সুসাইড করোনি তো? করোনা কিন্তু সুসাইড করলে আমি বিধবা হবো।
,
মেসেজ গুলো দেখে কিরন ফিক করে হেসে ফেললো,
ছেলেরাও তাহলে বিধবা হয়? কি জানি হতেও পারে তবে আমি তো কাউকেই বিয়ে করিনি তাহলে বিধবা হবে কিভাবে??
কিছুক্ষণ ভেবে কিরন পালটা মেসেজ দিলো।
আচ্ছা আমিতো বিয়ে করিনি,তাহলে আপনি বিধবা কিভাবে হবেন?
মেসেজ টা দিয়ে কিরন বাহিরে গেলো রাস্তায় নামতেই ঈশানের সাথে দেখা।
একি তুমি এখানে? (কিরন)
এদিক সেদিক ঘুরছিলাম,, বিকেলে ঘুরতে ভালো লাগে তো আর কালকে তোমার গ্রাম টা দেখেই মুগ্ধ হয়েছি বিশেষ করে লাইনের ওই দিকটা, অনেক সুন্দর খোলামেলা একটা জায়গা, কথাটা বলেই থেমে গেলো ঈশান।
কি হলো? কোন সমস্যা? (কিরন)
না আসলে একটা কথা বলতাম (ঈশান)
হুম বলো (কিরন)
তোমার গ্রামটা ঘুরে দেখাবে? (ঈশান)
হু কিন্তু আমি তো অন্য এক জায়গায় যাচ্ছিলাম, সরি কিছু মনে করো না সপ্তাহের এই একটা দিন আমি আমার পছন্দের জায়গায় যাই, তবে আমার মত মেয়ের সাথে ঘুরতে তোমার সমস্যা না থাকলে তুমি আমার সাথে যেতে পারো (কিরন)
আরে না না সমস্যা কিসের ,বরং তোমার সমস্যা না থাকলে আমি তোমার সাথে যাবো (ঈশান)
আচ্ছা ঠিক আছে চলো, মুচকি হেসে বলল কিরন।
দিনোবাজার পেরিয়ে তেমোনি যাওয়ার রাস্তায় কিছুদুর গিয়েই থেকে গেলো কিরন।
এই যায়গায় দেখার মত তেমন কিছু নেই তবে রাস্তায় দু পাশে থাকা বড় বড় গাছ সবুজ মাঠ আর বড় বড় দিঘি, দিঘির হৃদে লাগানো গাছ আর মাঝে থাকা ভাটা গুলো কিরনের খুব ভালো লাগে।
কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে যে যার বাসায় ফিরে গেলো।
বাসায় ফিরে দেখতে পেলো রিদ বসে আছে ভেতরে।
কথা না বলে এড়িয়ে যাওয়া টা অভদ্রতা,সেদিনের ঘটনার পর আর রিদেএ সামনে থাকাটাও অসস্তিকর, কোনো রকম দু একটা কথা বলে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কিরন এগিয়ে গিয়ে বললো।
আপনি এখানে? (কিরন)
আসলে কিরন কালকের জন্য আমি লজ্জিতো, প্লিজ ক্ষমা করে দাও (রিদ)
না (কিরন)
কেউ অপরাধ করে অনুতপ্ত হলে তাকে ক্ষমা করতে হয় মা,, রান্না ঘর থেকে চা আনতে আনতে মা বলল ।
ক্ষমা করব কোথা থেকে মা, আমি তো ওনার ওপর রেগে নেই, আমি মোটা তাই উনি মুটকি বলেছে এখানে তো ভুল কিছু বলেনি তাহলে রাগবই বা কেনো আর ক্ষমা করব বা কেনো (কিরন)
বাবা কিরন তোমার ওপর রেগে নেই, তুমি চা খাও আমি আসছি, কথাটা বলে আবার রান্না ঘর চলে গেলো।
কিরন রুমে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাড়ালো ঠিক তখনই রিদ হাত টা ধরলো।
হাত টা ছাড়ুন রিদ, এটা ভদ্র লোকের বাড়ি, অভদ্রতা করার যায়গা নয় আপনার (কিরন)
সরি কিরন, আসলে আমি আরেকটা কথা বলতে এসেছি (রিদ)
জি বলুন,,
আই লাভ ইউ কিরন, কাল থেকে অনেক ভেবেছি আসলেই চেহারা টা কোনো ফ্যাক্ট না, মানুষের মনই আসল (রিদ)
কিরন কিছু না বলে চলে গেলো।
রাতে কিরনের ফোনে আবারো মেসেজ আসলো, সিন করতেই অবাক কিরন।
যদিদং হৃদয়ং মম,
তদস্তু হৃদয়ং তব।
অর্থাৎ ঃ আমার রিদয় তোমার হোক আর তোমার রিদয় আমার হোক,,
কিরন মেসেজ টা পড়েছো তো তাইনা? নাও হয়ে গেলো গান্ধর্ব মতে আমাদের বিবাহ, এখন তো বিধবা হতেই পারি তাইনা?
,
চলবে,,,
রাধিকা রাই বর্মন