#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৩৭,৩৮
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
৩৭
পুরো বাড়িতে উৎসবের একটা আমেজ তৈরি হয়েছে।আত্নীয় স্বজন দিয়ে একটা হুলুস্থুল একটা কান্ড বেঁধে গেছে।বিষন্ন সন্ধার পর থেকে দরজা লাগিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে শুয়ে আছে।ঘড়ি ধরে দুই মিনিট পরপর বিষন্নর মা এসে দরজায় কড়া নাড়ছে।এবার কড়া নাড়তেই বিষন্ন কড়া গলায় বললো
” মা তুমি প্লিজ বিরক্ত করো না তো,আমি কি চিড়িয়াখানার বাঘ নাকি যে সবাই দেখতে এসছে ”
মা ধমকের স্বরে বললো ” এসব কেমন কথা,এতোদিন পর ফিরলি তাই দেখতে এসছে,দরজা খোল বাবা! ”
” না খুলবো না।যাদের জীবনেও দেখিনি তাদের সামনে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দাও।কাকতাড়ুয়ার মতো দাড়িয়ে থাকতে হয়,এটা আমার মোটেও ভাল্লাগে না ”
” চিনিস না জন্যই তো চিনিয়ে দিচ্ছি ”
” আমার চিনতে হবে না,”
” ওই দেখ তোর মামা এসছে,নাটোর থেকে,”
মায়ের গলা না পেয়ে বিষন্ন হাফ ছেড়ে বাচলো।তার আদৌ কোনো মামা নাটোরে থাকে কিনা সেটা সে নিজেও জানেনা।এইতো কিছুক্ষণ আগে বিষন্ন ল্যাবটপে বসে ক্লাবের ছেলে-মেয়েদের সাথে কনভারসেশন করছিলো,এমন সময় তার মা ঘরে ঢুকে বিষন্নর হাত ধরে টেনে নিচে চলে গেলো।মায়ের এতো গম্ভীর কার্যকলাপে বিষন্নও একটু সংকুচিতবোধ করলো,মা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সেটা জিগ্যেস করলো না।এক পর্যায়ে দেখা গেলো একগাদা লোকের সামনে বিষন্নকে দার করিয়ে বললো ” বিষন্ন ইনি হলেন তোর বড় মামার সালা,আর ইনি হলেন তোর বড় কাকার শ্বশুর।বিষন্নকে ভদ্রতার খাতিরে সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলতে হয়।তারা একেরপর এক প্রশ্ন করে বিষন্ন শুধু উত্তর দিয়ে যায়।কিছু উদ্ভট প্রশ্নেরও সম্মুখীন হতে হয়।যেমন ” তা বাবা বিদেশে তো আছো,ওখানে আবার বিয়ে করে ফেলোনি তো “, ” তোমার চুলগুলো তো বেশ বড়,চুলে কি শ্যাম্পু ইউজ করো? “,” আমায় চিনতে পারছো? তুমি যখন ছোট ছিলে তখন আমার কোলে কত হিসু করে দিতে,মনে আছে তোমার? “,” হায়রে!পোলাডা কত্তো বড় হইয়া গেছেনি,সেইদিনি দেখলুম নেং’টু হয়ে দৌড়াইতাছে “। বিষন্ন হতভম্ব হয়ে ভাবতে থাকে এইসব উদ্ভট প্রশ্ন তাদের মাথায় আসে কেমনে।অনেক কষ্টে সে পালিয়ে নিজের রুমে এসছে।এখন তো বাইরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।নইলে মা আবারো হুট করে কারো সামনে দার করিয়ে বলবে ” বিষন্ন দেখ তো এনাকে চিনতে পারিস কি না,! “।তখন হয়তো লোকটা বলবে ” মনে আছে আমার কোলে হা’গু করে দিছিলা? “।
অহহ বলতে ভুলেই গেছি,আরেকটা উদ্ভট প্রশ্ন ছিলো।এক বুড়ি সোফায় বসে পান চিবোতে চিবোতে বললো ” এই ব্যাটা কাছে আয় “। তার রুক্ষ স্বর অমান্য করতে পারলাম না।কাছে যেতেই উনি বললেন ” ছুডো থাকতে তোর পা’ছায় যে পিকড়া কামড় দিছিলো,গোটা হইয়া ছিলো, অহনো কি গোটা হইয়া আছে? “। বুড়ির এই প্রশ্নে রীতিমতো আমি অবাকের চরম পর্যায়ে।
দরজায় আবারো কড়া নাড়ার শব্দ হচ্ছে। বিষন্ন এইবার প্রচন্ড রেগে গেলো।প্রয়োজন পড়লে মা’কে দু চারটা ধমক দিবে এই ভেবে ঠাস করে দরজা খুলতেই দেখলো নীলু এসেছে।ওর হাতে একটা প্লেট,প্লেটে রুটি আর মুরগীর কশা মাংস।নীলুপু ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল
” কিরে তোর কপালের চামড়ায় এতোগুলা ভাজ কেন? ”
” আর বলিস না, মা বারবার এসে বিরক্ত করছে,যাদের জীবনেও দেখিনি তাদের সামনে দার করিয়ে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ”
নীলুপু প্লেটটা টেবিলের ওপর রেখে বিছানায় বসতে বসতে বললো ” মা তোকে খুব ভালোবাসে রে,তুই আসবি জন্য এমন কোনো আত্নীয়স্বজন নেই যাদের মা ফোন করে আসতে বলেনি ”
” কিন্তু এসবের কি প্রয়োজন? আমার একদম বিরক্ত লাগছে ”
” মায়েদের বিষয়টা আলাদা।ছেলের আসার সংবাদে আনন্দে কি করবে কি করবেনা বুঝতে পারেনা ”
” খিদে লাগছে খুব,খাইয়ে দে ”
নীলু পরম মমতায় রুটি ছিঁ’ড়ে বিষন্নর মুখে তুলে দিচ্ছে।আর বিষন্ন নীলুর হাটুর ওপর মাথা রেখে ফোন ঘাটছে।কিছুক্ষণ পর বিষন্ন বললো
” আচ্ছা আপু আগে এটা বল, তোরা বিয়ে কবে করছিস? ”
নীলু লজ্জায় নুইয়ে পড়ে বললো ” আমায় কেন বলছিস,আমি কি জানি ”
” এহহহ দেখো,আবার লজ্জাও পাচ্ছে, যত্তসব ঢং ”
বিষন্নর টিটকিরি শুনে নীলু বিষন্নর কান টেনে বললো ” কি বললি? আমি ঢং করি? ”
” আপু ছাড়,লাগতেছে।ভুল কি বললাম,আসার পর থেকে তো দেখছি ফোনে কথা বলিস আর একা একা থাকিস ”
নীলু কেমন যেন চুপ হয়ে গেলো।প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো ” আচ্ছা বিলু ”
কথা আটকে দিয়ে বিষন্ন বললো ” আবার বিলু? কতবার বলবো ডোন্ট কল মি বিলু ”
” আচ্ছা সরি।শুনেন বিষন্ন বাবু,আপনার জন্য যে একটা সুন্দরী মেয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সেটা কি আপনি জানেন? ”
বিষন্ন ফোন ঘাটতে ঘাটতে বললো ” আমার জন্য আবার কে অপেক্ষা করছে? ”
” এহহ এখন যে তুই ঢং করছিস তার বেলা? এমন ভাব করছে যেন কিচ্ছু জানেনা,কিচ্ছু বুঝেনা,”
বিষন্ন উঠে বসলো।ফোনটা প্রায় ছুঁড়ে দিলো পেছনের দিকে।কোলবালিশ থাকায় ফোনটার শেষ রক্ষা হলো।কঠিন গলায় বললো
” মিষ্টির কথা বলছিস তাই তো?আপু দেখ ওর কথা আমায় আর নেক্সট টাইম বলবি না, আমি মিষ্টি নামের কাউকে চিনিনা ”
এইকথা বলেই শার্টটা গায়ে দিয়ে হনহন করে রুম থেকে বেড় হয়ে গেলো।বেড় হওয়ার সময় নীলু বললো ” নীচে কিন্তু অনেক আত্নীয় এসছে,দেখবি মা আবার ধরে একে একে সবার সাথে পরিচয় করাতে শুরু করবে, “।
__________________
মিষ্টির ঘুম ভাঙলো সন্ধায়।এয়ারপোর্টে বিষন্নকে দেখার পর থেকে কেমন যেন মাথায় ঝিমঝিম একটা ভাব হচ্ছে।ঘুম থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো ছাব্বিশটা মিসকল।কলব্যাক করতেই ওপাশ থেকে বিষন্নর মা বললো
” এই ফাজিল মেয়ে,ফোন ধরিস না কেন? কতক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছি ”
” আন্টি আমি ঘুমায় গেছিলাম,সাইলেন্ট করা ছিলো,বুঝতে পারিনি ”
” তোকে যে বলছি বাড়িতে আসতে,এখনো আসলি না কেন? পার্টি শেষের পরেই তো তোদের এঙ্গেইজমেন্টের এনাউন্সমেন্ট করা হবে, ”
এইসব কথা শুনে মিষ্টির বু’ক কাঁপতে লাগলো।কাঁপা কাঁপা গলায় বললো ” আন্টি আজকেই এসব করতে হবে?”
” হ্যা আজকেই করতে হবে।তারাতাড়ি চলে আয়,”
বলেই তিনি ফোন কেটে দিলেন।তার কন্ঠ শুনে মনে হচ্ছে তিনি মহা ব্যস্ত।মিষ্টির সারাশরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো।বিষন্নর সাথে আগে কথা বলা দরকার।হুট করে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ঠিক হবে না।এখন শেষ ভরসা নীলু।মিষ্টি নীলুকে ফোন দিলো।বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর নীলু ফোন ধরলো
” হ্যালো নীলু,”
” হ্যা,কই তুই? তোকে না বাড়িতে আসতে বলছিলাম? ”
” দোস্ত আমার কথাটা আগে শোন,আন্টি বললো আজকেই নাকি এঙ্গেইজমেন্টের এনাউন্সমেন্ট করা হবে? ”
” হু ”
” দোস্ত যে করেই হোক এটা আটকা প্লিজ।তুই তো জানিস’ই সব,আগে আমরা একটু সহজ স্বাভাবিক হই তারপর না হয় ”
” হু আমিও সেটা ভাবছি।আর…..”
” থামললি কেন? আর কি? ”
” আমার মনে হচ্ছে, বিষন্নর তোর প্রতি অনেক রাগ,ক্ষোভ জমা হয়ে আছে ”
” তাতে কি,আমারো তো রাগ জমা আছে,,দুই রাগে কাটাকাটি হয়ে যাবে।তা কিভাবে জানলি? ও আমার কথা বলছিলো? ”
” না, আমিই বলছিলাম তোর কথা।কিন্তু বলার সাথে সাথেই রেগেমেগে কই যেন গেলো ”
” আরে বান্ধবী প্যারা নিস না তো,ওইটুকু পিচ্চির আবার রাগ।আমার সামনে আসলে সবরাগ দেখবি ফুলের মতো ঝড়ে পড়ছে ”
” হইছে থাক,তোদের যে কি হবে ভেবেই আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ”
” কি আর হবে,বিয়ে হবে,বাচ্চা হবে,কাচ্চা হবে,আর ওরা তোর কোলে উঠে হিসু করে দিবে ”
” হু সে দেখা যাবে।চলে আয় তাড়াতাড়ি ”
” হু ”
ফোন কেটে মিষ্টি ফ্রেশ হতে গেলো।ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে বসে ভাবতে লাগলো শাড়ি পরবে না লেহেঙ্গা পড়বে।অনেক ভাবার পর ঠিক করলো শাড়িই পড়বে।সেজেগুজে আয়নার সামনে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ নিজেকে ভালোভাবে পরখ করে নিলো।লাল শাড়ি,কপালে ছোট্ট একটা টিপ,খোলা চুল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। এতেই নিজেকে দেখে নিজেই লজ্জা পেলো।নিজেকে দেখে কেমন বউ বউ একটা ফিলিংস কাজ করছে।মনে মনে ভাবলো “বিষন্নর এত্তো সাহস? এত্তো কিউট একটা মেয়ের ওপর কিনা রাগ করে থাকে?শোনো মিঃ বিষন্ন, যতোই রাগ করে থাকো না কেন,আমি জানি আমার সামনে আসলে তুমি সব ভুলে যাবে।আর যদি তাতেও রাগ না কমে তাহলে নাহয় আমি কান্নাকাটি করে সরিটরি বলবো ।হবু স্বামীকে তো সরি বলা যেতেই পারে।আর তারপরেও যদি রাগ না কমে তাহলে আর কি করার,টাইট দিয়ে সোজা করতে হবে।এতোদিন পর পাইছি,আর হারাতে দিবো না তোমায়, বুঝছো? ”
গাড়িতে উঠতে উঠতে মনে মনে ভাবলো ” শাড়ি তো পড়লাম,এয়ারপোর্টের মতো অবস্থা যেন আবার না হয়,”
______________________
রিফাত বললো ” দোস্ত এতোদিন কোনো যোগাযোগ নাই তোর সাথে,হঠাৎ করে তোকে দেখে কি যে ভালো লাগছে ”
উত্তরে বিষন্ন বললো ” যোগাযোগ না করলেও তোদের কথা খুব মনে পড়তো ”
আফাদ বললো ” দোস্ত, বিদেশি মেয়েরা দেখতে কি আসলেই সুন্দরী? ”
রিফাত বললো ” ছোট ছোট ড্রেস পড়ে চিকনা কোমড় হেলেদুলে মেয়েরা হাঁটছে, উপপপসসস ভেবেই তো আমার নেশা হয়ে যাচ্ছে ”
বিষন্ন বললো ” তোরা আর পাল্টাবি না ”
রিফাত বললো ” পাল্টে কি হবে বল।আমাদের এই মোটা পে’টের মেয়েদের দেখেই থাকতে হবে,আফসোস ”
মারুফ বললো ” দোস্ত দেখ,কালো টিশার্ট পড়া মেয়েটা দেখ।মনে হচ্ছে পে’টে ফুটবল বেঁধে নিয়ে এসছে,ধুর ”
বিষন্নকে ঝাঁকিয়ে রিফাত বললো ” দোস্ত ওই মেয়েটাকে দেখ,,উফফ কি হ’ট,নাভীর কতদূর নিচে জিন্স পড়ছে দেখছোস!ব্যাক সাইটটা দেখ একবার,পুরাই আগুন ”
বিষন্ন গ্লাসের লাল তরল পুরোটা মুখে দিয়ে মুখ বিকৃত করে বললো ” তোদের ইচ্ছে হয় তোরা দেখ না,আমায় কেন বলতেছিস ”
কিছুক্ষণ পর সাকিব আসলো।বিষন্নর অবস্থা দেখে সে জোর করে বিষন্নকে বার থেকে বাহিরে বেড় করলো।রাস্তায় কোনো গাড়ি,ট্যাক্সি কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না।বিষন্নর এক হাত কাঁধে নিয়ে সাকিব হাটছে বিষন্নর বাড়ির দিকে।বিষন্নর নেশা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে।আবোল তাবোল প্রলাপ বলতে শুরু করেছে। যেমন,কখনো রাগে গিজগিজ করতে করতে বলছে “তোকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না” তো কখনো হুট করে কান্না করতে করতে বলছে ” তুমি কেন আমায় এতো কষ্ট দিচ্ছো “। এর বেশিরভাগ কথাই অস্পষ্ট,কেমন জোরালো। সাকিব বললো
” তুই বারে এসছিস আমার তো বিশ্বাস’ই হচ্ছে না, তাও এমন খাওয়া খেয়েছিস যে নেশা মাথায় উঠে গেছে,”
বিষন্ন নিজেকে সাকিবের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো ” তাতে তোর বাপের কি,আমার টাকায় আমি খাবো”
সাকিব অবস্থা নাজেহাল দেখে আর কথা বাড়ালো না।একটা ট্যাক্সি পাওয়া গেলো।ট্যাক্সির দুইদিকে দুইপা মেলে বসলো বিষন্ন।সাকিব বুঝতে পারলো এই নেশা না কাটাতে পারলে ঝামেলা হবে।সে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বললো ” মামা আশেপাশের দোকানে লেবু পাওয়া যাবে? “।
ট্যাক্সি ড্রাইভার বললো ” না মামা,একটা বাজে, এতো রাতে তো দোকান খোলা নাই ”
” ওহ আচ্ছা ”
” আমি একটা বুদ্ধি দেই মামা,যদি কাজটা করেন তাহলে দেখবেন নেশা কাইট্টা যাবে ”
” কি বুদ্ধি? ”
” মামারে একদলা গোবর খাওয়াইয়া দেন,গোবরটা যেন ডিরেক্ট পেটের ভিতরে ঢুইক্কা যায় ”
সাকিব রাগান্বিত স্বরে বললো ” ধুরো মিয়া আপনি ট্যাক্সি স্টার্ট দেন ”
কিছুদূর যাওয়ার পর সাকিব ড্রাইভারকে বললো ” মামা গোবর খাওয়ালে কি সত্যি সত্যিই নেশা কেটে যাবে?”
” হ মামা,বমি করবো,বমি করলে মেশা পালাইয়া যাইবো ”
” বলেন কি,তাহলে রাস্তার পাশে গোবর দেখলে দার করায়েন তো ”
চলবে?
#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৩৮
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
কিছুদূর যাওয়ার পর সাকিব ড্রাইভারকে বললো ” মামা গোবর খাওয়ালে কি সত্যি সত্যিই নেশা কেটে যাবে?”
” হ মামা,বমি করবো,বমি করলে মেশা পালাইয়া যাইবো ”
” বলেন কি!তাহলে রাস্তার পাশে গোবর দেখলে দার করায়েন তো ”
ট্যাক্সি ড্রাইভার রাস্তার পাশে একপিন্ড বস্তু দেখে ট্যাক্সি দাড় করালো।ট্যাক্সি থেকে ড্রাইভার নেমে গিয়ে আগে ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করলো।উৎসুক হয়ে সাকিবকে এসে বললো
” মামা,একদম টাটকা পাইছি,মনে হইতাছে আজ বিকালেই জন্ম হইছে ”
” কিভাবে বুঝলেন ”
” কেমনে আবার,গন্ধ শুঁকছি।একদম খাঁটি গন্ধ, কোনো ভেজাল নাই,যদিও পানির পরিমাণ একটু কম,কশা গরুর গু।এটা দিয়েই ভালো কাজ হইবো ”
সাকিব ড্রাইভারকে ইশারায় ধীর স্বরে কথা বলতে বলে বললো
” কিন্তু খাওয়াবো কেমনে? ”
” আরে মামা আমার ওপর ছাইড়া দেন,”
এটুক বলেই ড্রাইভার নিজের ফোনের ফ্লাশ অন করে দাঁত দিয়ে কা’মড়ে ধরে রাস্তায় কিছু একটা খুঁজতে লাগলো।খানিক্ষন খোঁজার পর তিনি হাতে করে একটা চকলেট নিয়ে এলেন।চকলেটের ধরনটা ছোট সাইজের পাতলা পলিথিনের দুই মাথা প্যাচ দিয়ে আটকানো।একটাকায় এরকম চকলেট পাওয়া যায়।ড্রাইভার এসে হাস্যজ্জ্বল মুখ নিয়ে বললো
” মামা এইডা খাওয়ায় দেন,ওনারে বলেন এইডা চলকেট ”
” চলকেট না,ওটাকে চকলেট বলে ”
” ধুরো মামা,এই বয়সে আমনে আমারে বানান শিখাইবেন ”
” আচ্ছা বাদ দেন,চলকেট পেলেন কোথায়,”
ড্রাইভার গম্ভীর স্বরে বললো
” এইডা চকলেট না মামা,চকলেটের খোসায় গরুর গু ভইরা নিয়া আইছি। মামা কিচ্ছু বুঝতেই পারবো না,চকলেট ভাইবা গরুর গু খাইয়া ফেলবো,”
সাকিব হতভম্ব হয়ে গেলো ড্রাইভারের বুদ্ধি দেখে।বিষন্নকে ঝাঁকিয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়ে সাকিব বললো
” দোস্ত চকলেট খা।হা কর আমি খাইয়ে দিচ্ছি ”
বিষন্ন চোখ বন্ধ করে জড়ানো স্বরে বললো ” চকলেট খাই না ”
ড্রাইভার বললো ” মামা একবার খাইয়া দেহেন,এমন স্বাদের চলকেট জীবনেও খান নাই ”
সাকিব বললো ” হ্যা দোস্ত,দারুণ মজার।এই মামা তো রোজ এই চকলেট খায়,তাই না মামা? ”
সাকিব ড্রাইভারের উদ্দেশ্য কথাটা বলতেই ড্রাইভার ইতস্তত ভঙ্গিতে বললো ” এ্যা,,হ মামা,রোজ খাই।কি যে টেশ।একবার খাইয়া লন ”
এইটুকু বলে ড্রাইভার সাকিবের দিকে মুখ ভোতা করে তাকালো।সাকিব দাঁত বেড় করে একটা হাসি দিয়ে বিষন্নকে হা করতে বললো। বিষন্ন এবার হা করলো।চেষ্টা সফল হবে দেখে অন্ধকারেও ড্রাইভার,সাকিব দুজনের চোখ চকচক করে উঠলো।
________________________
সোফায় বসে বিষন্নর বাবা গম্ভীর মুখে বসে আছেন।তার বিপরীত পাশের সোফায় বসে আছে নীলু,বিষন্নর মা।মিষ্টি একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।তার চোখে জল।পার্টিতে উপস্থিত যারা ছিলো তাদেরকে খাওয়া দাওয়া করিয়ে নিজেদের গাড়ি করে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।বাড়িতে এখন পিনপতন নিরবতা। এমন সময় প্রচন্ড শব্দ করে কারো আওয়াজ পাওয়া গেলো।কেউ বললো ” ওই ড্রাইভারকে আমি খু’ন করবো,আমাকে গোবর খাওয়ায়,কত্তো বড় সাহস,”। কন্ঠটা বিষন্নর।দরজায় টকটক শব্দ হলো।নীলু বাবার দিকে ভয়ে ভয়ে একবার তাকিয়ে দরজা খুলে দিলো।সাকিব ভেতরে ঢুকলো,তার পিঠে বিষন্ন।বিষন্নর চোখ বন্ধ,বিড়বিড় করে কাকে যেন হুমকি দিচ্ছে। বিষন্নর এই অবস্থা দেখে বিষন্নর বাবা গম্ভীর স্বরে সাকিবকে বললো
” ওকে পিঠ থেকে নামাও ”
ভয়ে সাকিবের গলা শুকিয়ে গেলো।ভয়ে ভয়ে বললো ” আঙ্কেল একটা সোফায় বসিয়ে দিই?,দাড়াতে পারবে না,অবস্থা খুব খারাপ ”
” তোমায় নামাতে বলেছি ”
সাকিব বিষন্নকে পিঠ থেকে নামিয়ে শক্ত করে ধরে রাখলো।বিষন্ন আলতো করে চোখ মেলে আবারো চোখ বন্ধ করলো।জোরালো স্বরে সাকিবকে বললো
” নামালি কেন,শক্ত করে ধর,পড়ে যাচ্ছি।মাথা ঘুরাচ্ছে,”
সাকিব একবার বিষন্নর বাবার দিকে তাকালো।ভয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো।বিষন্নর বাবা রাগে হনহন করে নিজের ঘরে চলে গেলেন।বিষন্নর এই অবস্থা দেখে মিষ্টির কান্না পাচ্ছে।নীলু,বিষন্নর মা দু’জন ধরে বিষন্নকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।মিষ্টি দরজার আড়াল থেকে মাতাল বিষন্নকে দেখছে।এ কোন বিষন্নকে দেখছে সে?এই বিষন্নর সাথে তো তার পরিচয় ছিলো না।এতোটা পরিবর্তন !?
মিষ্টি চেয়েছিলো ফিরে যেতে,কিন্তু নীলুর জোরাজোরিতে নীলুর সাথেই থেকে যেতে রাজি হলো।নীলু ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে আয়নায় মিষ্টির মন খারাপ করে বিছানায় বসে থাকা দেখে বললো
” কিরে এমন চুপচাপ হয়ে আছিস কেন,”
মিষ্টি চোখের জল মুছে বললো ” বিষন্ন অনেকটা পাল্টে গেছে, তাই না রে? ”
” সেটা তো স্বাভাবিক,সবাই তো একইরকম থাকেনা না ”
” হু,”
” মন খারাপ করিস না,আমি কাল ওর সাথে কথা বলবো।তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে ”
মিষ্টি নিরবে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে নীলুর একটা টি-শার্ট পড়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো।
ঘরে এখন টিপটিপ আলো।নীলু মনে হয় এতোক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে।মিষ্টি জেগে আছে,তার চোখে অশ্রুসমুদ্র খেলা করছে।বিষন্নর এই চেঞ্জটা সে কিছুতেই মানতে পারছে না।কান্নার একপর্যায়ে মিষ্টির চোখ লেগে এলো।একমাত্র ঘুম’ই পারে সব কষ্ট ভুলে রাখতে।
বিড়বিড় করে কারো কথা বলার শব্দে মিষ্টির ঘুম ভাঙলো।চোখ মেলতেই মিষ্টি ধাক্কার মতো খেলো।পুরোঘরে শুধু সে একাই। পাশ ফিরে দেখলো নীলু নেই।মিষ্টির বু’ক ধক করে উঠলো।কে বিরবির করে কথা বলছে?মিষ্টি ভয়ে ভয়ে দুইহাত বু’কে জরোসরো করে রেখে এগিয়ে গেলো ব্যালকনির দিকে।শব্দটা বেলকনি থেকে আসছে।বেলকনিতে এসে মিষ্টি চোখ বড়বড় তাকিয়ে রইলো।সামনের দোলনায় একটা লোক বসে আছে।লোকটার পেছন দিকটা শুধু মিষ্টি দেখছে,সে মিষ্টির উল্টোদিক করে বসে আছে।সিগারেটের ধোঁয়ায় বেলকনি পরিপূর্ণ। সিগারেটের গন্ধ মিষ্টি সহ্য করতে পারেনা।খুকখুক করে কাশলো।মিষ্টির কাশির শব্দে সেই লোকটা ঠোঁটে সিগারেট ঠেকিয়ে বললো
” ওহ,,তুমি, ”
মিষ্টির মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে।দুইহাত আরো শক্ত করে বু’কের মধ্যে চেপে রেখে বললো
” কে আপনি? ”
” জানতেই পাবে,চেনার জন্যই তো এসছি ”
” মানে? ”
লোকটার স্বর মিষ্টি চেনা।আনন্দে,ভয়ে,উদ্বেগে মিষ্টির মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।তার মুখ থেকে কোনো কথা বেড় হচ্ছে না।মিষ্টির ইচ্ছে করছে সামনের লোকটাকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করতে…….
চলবে?