#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৩৯,৪০
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
৩৯
মিষ্টির ইচ্ছে করছে সামনের লোকটাকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করতে।সামনে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটা সিগারেটটা শেষ করে আবার একটা সিগারেট মুখে ধরলো।লাইটারের ঝলকিত আলোয় ছেলেটার মুখটা দেখা যাচ্ছে।চুলগুলো দিয়ে বট শেকড়ের মতো নাক অব্ধি ঢেকে আছে।
সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে একটা হাত পকেটে রেখে ছেলেটা এগিয়ে আসছে মিষ্টির দিকে।মিষ্টির মনে কেমন যেন একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি তৈরি হচ্ছে।ছেলেটা মিষ্টির একদম সামনে এসে দাঁড়ালো।চাঁদের আলোয় ছেলেটাকে এবার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ছেলেটা বিষন্ন।
কো’মড়ে বিষন্নর উষ্ণ হাতের স্পর্শে মিষ্টি কেঁপে উঠলো।দ্রুত বু’ক ওঠানামা করছে।মিষ্টি বিষন্নর চোখে চোখ রাখলো।কি গভীরতা সেই দৃষ্টিতে।বিষন্ন তার ঠোঁ’ট এগিয়ে আনছে মিষ্টির কাঁপতে থাকা ঠোঁ’টের কাছে।মিষ্টি লজ্জায়,শিহরণে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
বিষন্নর ঠোঁ’টের স্পর্শে মিষ্টির সারাশরীরে কারেন্ট বয়ে যাচ্ছে।এই অনুভূতি বর্ণনা করা যাবে না।মিষ্টি শক্ত করে বিষন্নর টি-শার্ট চেপে ধরলো।দু’জনে মিলেমিশে হয়ে গেছে একজন।
কতক্ষণ তাদের এই সুখের মুহুর্ত পার হয়েছে মিষ্টি বুঝতে পারলো না।দু’জন বসে ছাদের রেলিঙের ওপর।মুখের ওপর আঁচড়ে পড়া চুলগুলি সরিয়ে দিতে দিতে আড়চোখে তাকালো বিষন্নর দিকে।মিষ্টির খুব ইচ্ছে করছে এই অনুভূতিকে কখনো শেষ হতে না দিতে।সে বিষন্নকে কাছে পেতে চাইছে।খুব কাছে।যতটা কাছে পেলে দু’জন মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে পারবে।
মিষ্টি নিজেকে কিছুতেই আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।লজ্জায় মাথা খেয়ে বিষন্নর ঠোঁ’টে ঠোঁ’ট ডুবিয়ে দিলো।বিষন্নও মিষ্টিকে তার বাহুদ্বয় দারা আবদ্ধ করলো।হঠাৎ মিষ্টির পে’টের কাছে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছে।তীব্র ব্যাথায় মিষ্টি চিৎকার করতেও পারছে না,কারন তার ঠোঁ’ট বিষন্নর ঠোঁ’টে ডুবে আছে।
বিষন্ন ইচ্ছে করেই মিষ্টির ঠোঁ’ট আঁকড়ে নিজের দখলে করে রেখেছে।মিষ্টি চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারছে না।এদিকে পে’টের সেই জ্বালা আরো বাড়ছে।বিষন্ন তার হাতের জলন্ত সিগারেট চেপে ধরেছে মিষ্টির পে’টের কাছে।ব্যাথায় মিষ্টি ছটফট করছে,কিন্তু বিষন্ন তবুও জ্বলন্ত সিগারেট পে’ট থেকে সরিয়ে নিচ্ছে না।সে যেন মেতেছে ভয়ঙ্কর এক আনন্দে।
অনেক কষ্টে মিষ্টি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পে’টের পো’ড়া যাওয়া অংশের আশেপাশে হাত বুলাচ্ছে।ঠোঁ’ট সরিয়ে নেওয়ায় ঠোঁ’ট কিছুটা কে’টেও গেছে।র’ক্ত ঠোঁ’ট বেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ছে।মিষ্টির চোখে অঝোরে অশ্রু খেলা করছে।জ্বা’লাপোড়ার ব্যাথায় এক হাত মুখে চেপে ধরে শুধু ছটফট করছে।
মিষ্টির ছটফট করতে দেখেও বিষন্নর কোনো ভাবান্তর হলো না। সে নিজের মতোই আরেকটা সিগারেট ধরালো।সিগারেট ধরিয়ে নিজের বলিষ্ঠ হাতে মিষ্টির গাল চেপে ধরে শান্ত গলায় বললো
” ইশশ,খুব ব্যাথা করছে তাই না ? ”
মিষ্টি চক্ষু স্থির করে তাকিয়ে রইলো বিষন্নর চোখে।এ কোন বিষন্নকে দেখছে সে? মিষ্টি বিষন্নকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে বললো
” বিষন্ন তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?জ্বলন্ত সিগারেট কেউ এভাবে পেটের ওপর ধরে? ”
এটুকু বলতেই মিষ্টির গলা ভারি হয়ে এলো কান্নায়।জ্বালাপোড়ার সাথে সাথে কান্নার বেগও যেন ক্রমশ বেড়েই চলেছে।মিষ্টির দিকে শীতল চাহনিতে বিষন্ন বললো
” এরকম কষ্ট আমারো হয়েছিলো।তোমার একটা ফোনের আশায় আমি এভাবেই ছটফট করেছিলাম ”
মিষ্টি চোখের জল মুছে ফুপাতে ফুপাতে তাকালো বিষন্নর দিকে।মিষ্টি বুঝতে পারলো বিষন্নর শীতল চাহনিতে যে কষ্ট লুকিয়ে আছে তা এই জ্বালাপোড়ার থেকে হাজার গুন বেশি।মিষ্টি করুন স্বরে বললো
” তুমি কি মনে করো? আমি অপেক্ষা করিনি তোমার একটা ফোনের জন্য? তুমি কি একটাবার কথা বলেছিলে? ”
বিষন্ন মিষ্টির গাল শক্ত করে চেপে ধরে কঠিন গলায় বললো
” আমি কেন ফোন করবো?তুমি তো আমায় ভালোই বাসোনি।আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছো।সেদিন কি যেন বলেছিলে, আমার পাগলামিতে সায় দিয়েছিলে তাই না? হারে হারে বুঝাবো পাগলামি কি জিনিস।যে কষ্ট আমি পাইছি তার হাজারগুন তোমায় ফেরত দিবো ”
মিষ্টি বুঝতে পারলো বিষন্নর মনে তার প্রতি একটা ভুল ধারনার সৃষ্টি হয়েছে।সেই ভুল ধারনাটা প্রখর।মিষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগেই বিষন্ন মিষ্টির গাল থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে ঝাঁঝালো স্বরে বললো
” তোমার প্রতি আমার যে কি পরিমাণ রাগ জমা হয়ে আছে তা তুমি কল্পনাও করতে পারছো না।কেবল শুরু,তোমার জীবন আমি হেল করে ছাড়বো।মাইন্ড ইট ”
মিষ্টিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আরেকটা সিগারেট মুখে দিয়ে লম্বা একটা টান দিলো।মুখ ভর্তি ধোঁয়া ছাড়লো মিষ্টির মুখের ওপর।
সারা রাত মিষ্টি ঘুমাতে পারলো না।মিষ্টি ভাবতেই পারেনি বিষন্ন তার প্রতিটি কথা এভাবে মনে রেখে দেবে।যে করেই হোক ওর এই ভুল ধারণা ভাঙ্গতেই হবে।এসব ভাবতে ভাবতে মিষ্টির ফোনে একটা কল এলো।স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো অভ্র নামটা ভেসে উঠেছে। রিসিভ করতেই অভ্র বললো
” হ্যালো মিষ্টি,কোথায় তুমি? কতবার ফোন করলাম,ধরছো না।অফিসেও আসছো না,কি হয়েছে তোমার? ”
মিষ্টি চোখের জল মুছে শান্ত গলায় বললো
“এতো রাতে কেন ফোন দিয়েছেন,?আর আপনাকে বলেছি আমায় তুমি করে না বলতে।তুমি করে বলার মতো সম্পর্ক তো আমাদের মধ্যে হয়নি ”
” রাত কোথায় পেলে, এখন সকাল সাতটা বাজে।আর তুমি চাইলেই তুমি বলার সম্পর্ক হতে পারতো।হঠাৎ করে তুমি এমন বদলে কেনো গেলে মিষ্টি?আমার পক্ষ থেকে কি কোনো ভুল ছিলো? ”
” অভ্র প্লিজ।কিছুদিন একটু হেসে কথা বলেছি,একসাথে এখানে ওখানে গিয়েছি জন্য এটা না আমি আপনার প্রেমের অফারে রাজি হয়েছি।আমি সাফ সাফ বলে দিয়েছিলাম আমার পক্ষে সম্ভব না।তখন আপনিই বলেছিলেন, তাহলে আমরা আগের মতোই থাকবো।এবং এই বিষয়ে আর কখনো কথা বলবেন না বলেছিলেন, তারপরও কেন বারবার এসব বলে আমায় বিভ্রান্ত করছেন ”
” আচ্ছা সরি,এতো রেগে যাবে বুঝতে পারিনি ”
” আপনি আবারো তুমি করে বলছেন ”
” ওহহ সরি।আপনি একটু নিচে আসবেন? ”
” আমি বাড়িতে নেই,”
” আমি জানি আপনি আপনার বান্ধবীর বাড়িতে আছেন,আমি সেখানেই দাড়িয়ে আছি ”
মিষ্টি বিছানা থেকে উঠে গিয়ে জানালা দিয়ে রাস্তার পাশে দেখার চেষ্টা করলো।অভ্র তাকে দেখে হাত তুললো।মিষ্টি ইতস্তত করে ফোন কানে লাগিয়ে বললো
” আমি এখানে সেটা কে বললো ”
” আপনার বাড়িতে গিয়েছিলাম।ড্রাইভার বললো এখানে আছেন ”
” কি বলবেন বলে চলে যান ”
” আপনি একটু নিচে আসবেন? প্লিজ,এতো কষ্ট করে এসছি,ফিরিয়ে দিলে খুব কষ্ট পাবো ”
” আচ্ছা দাড়ান,আসছি ”
মিষ্টি চোখেমুখে জল দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।অভ্র ভ্রু কুচকে বললো
” আপনি কি সারারাত কান্না করেছেন? চোখ ফোলা ফোলা লাগছে ”
মিষ্টি চোখে হাত রেখে বললো ” না,এমনিই ঘুম কমের জন্য হয়েছে বোধহয় ”
” আচ্ছা,আপনাকে টি-শার্টে কিন্তু বেশ লাগছে ”
মিষ্টি নিজের দিকে তাকালো।টি-শার্ট পড়ে সে নিচে চলে এসছে বুঝতেই পারেনি।তার মনের অবস্থা এতোটাই বিষন্ন যে খেয়ালই করেনি কি পড়ে চলে এসছে।মিষ্টি সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে চলে এলো নীলুর ঘরে।ড্রেস চেঞ্জ করে তারপর নিচে গেলো।
রাস্তার পাশে চা খেতে খেতে অভ্র এই কয়েকদিনের অফিসের টুকটাক ঝামেলার কথা মিষ্টির সাথে শেয়ার করছে।মিষ্টিও চা খেতে খেতে অভ্রর সাথে অফিশিয়াল ডিসকাস করছে।অথচ মিষ্টি বুঝতেই পারছে না ছাদের ওপর থেকে কেউ একজন জ্বলন্ত সিগারেট হাতে একজোড়া শীতল চোখে তাকে লক্ষ্য করছে।ছাদ থেকে মিষ্টি এবং অভ্রর একসাথে চা খাওয়া এবং কথা বলা দেখে বিষন্নর ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে সেখানেই জ্যন্ত কবর দিতে।মিষ্টির প্রতি বিষন্নর মনে যে ক্ষোভ ছিলো তা আরো ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করছে……
চলবে?
#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৪০
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
ছাদ থেকে মিষ্টি এবং অভ্রর একসাথে চা খাওয়া এবং কথা বলা দেখে বিষন্নর ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে সেখানেই জ্যন্ত কবর দিতে।মিষ্টির প্রতি বিষন্নর মনে যে ক্ষোভ ছিলো তা আরো ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করছে।
__________________
অভ্রর সাথে কথা বলে বাড়িতে ঢুকতেই সকালের ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে নীলু হাত ইশারায় মিষ্টিকে ডাকলো।মিষ্টি চুপচাপ নীলুর পাশে এসে চেয়ার টেনে বসলো।বিষন্নর মা ভ্রু কুচকে বললো
” কিরে মিষ্টি,এতো সকালে বাইরে কোথায় গেছিলি? ”
নীলু বললো ” আমিও সেটাই বলতে চাচ্ছিলাম।কোথায় গেছিলি রে? আমি সকালে উঠে দেখি তুই ঘরে নেই ”
মিষ্টি হালকা হেসে বললো ” অফিসের একজন স্টাফ এসছিলো আন্টি,সেটা নিয়েই কথা বলছিলাম ”
বিষন্নর মা মিষ্টি প্লেটে রুটি দিতে দিতে বললেন ” অনেক তো হলো,এভাবে আর কতদিন? অফিস অফিস করেই কি জীবনটা পার করে দিবি?”
নীলু বিড়বিড় করে বললো ” বাবুদের মান অভিমান চলছে “। কথাটা এমনভাবে বললো যেন মিষ্টি শুনতে পায়।নীলুর কথায় মিষ্টি ভ্রু কুচকে তাকালো নীলুর দিকে।নীলুর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
” আন্টি আমার কথা ছাড়ো,এই শাঁকচুন্নিটাকে আগে বিদেয় করার ব্যবস্থা করো তো,”
নীলু ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিতে নিতে বললো ” বিয়ে তো করতেই চাই,কেন যে বিয়ে দিচ্ছে না কে জানে ”
বিষন্নর মা চোখ বড়বড় করে তাকালেন মেয়ের দিকে।বললেন ” অমনি সব দোষ আমাদের হয়ে গেলো না?বিষন্ন না আসলে বিয়ে করবি না, এটা কে বলছিলো শুনি? ”
নীলু অভিমানী স্বরে বললো ” বিষন্ন তো এসছে,তবুও তো বিয়ে দিচ্ছো না ”
নীলুর কথা শেষ না হতেই কলিং বেল বাজলো।বিষন্নর মা গেলেন দরজা খুলতে।নীলু মিষ্টিকে বললো ” এতো সকালে আবার কে এলো রে ”
কথাটা শেষ হতেই বিষন্নর মায়ের স্বর ভেসে এলো।তিনি কাউকে বলছেন,আরে আপনারা হঠাৎ,না বলেই,আসুন আসুন ভেতরে আসুন। মিষ্টি টেবিলটা শক্ত করে ধরে হেলে দেখার চেষ্টা করলো কে এসছে, দেখলো প্রথমে সমুদ্র ভেতরে এলো।তারপর আরো দুজন।মিষ্টি চোখ বড়বড় করে নীলুর দিকে তাকিয়ে বললো
” বান্ধবী,সমুদ্র ভাইয়া এসছে,সাথে ওনার বাবা,মা’কেও নিয়ে এসছে ”
মিষ্টির কথায় নীলুর বিষম খাওয়া উপক্রম হলো।গ্লাসের জল পুরোটা শেষ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো।সত্যি সত্যিই সমুদ্রকে দেখা যাচ্ছে,লাজুক ভঙ্গিতে সোফায় বসে আছে।তার পাশে তার বাবা,মা।আকষ্মিক তাদের অবস্থান দেখে নীলুর পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো।মনের মধ্যে ভালোলাগা,নার্ভাস দুটোই একসাথে চেপে বসেছে।নীলু মিষ্টির হাত চেপে ধরে বললো
” দোস্ত এই গাধা লোকটাকে নিয়ে আমি কি করবো বলতো,,এভাবে হুট করে বাড়িতে চলে আসার মানে কি? খবর দিবে তো ”
মিষ্টি হাসি চেপে রেখে বললো ” একটু আগেই না বিয়ে বিয়ে করলি।যাক অবশেষে বিয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে, ইশশ আমার কি যে খুশি লাগছে ”
বিষন্নর মা এসে মিষ্টিকে বললো ” মিষ্টি মা,চা বানাতে পারবি? আমি বিষন্নর বাবাকে ডেকে আনি।সমুদ্রর বাবা মা এসছে।কি যেন বলবে ”
মিষ্টি বিড়বিড় করে বললো ” কি আর বলবে,তোমার মেয়ে আগে থেকে আকাম করে রাখছে,সেটাই বলবে “।মিষ্টির কথা কিছু বুঝতে না পেরে তিনি বললেন
” কিসব বিড়বিড় করছিস “।পরোক্ষনেই নীলুর নার্ভাসনেস দেখে বললেন ” কিরে নীলু,তোর আবার কি হলো? এতো ঘামছিস কেন? ”
নীলু ওড়না দিয়ে মুখ মুছে বললো ” কই মা,কি..কিছু না তো,”
নীলুর হঠাৎ এমন ঘাবড়ে যাওয়ায় তিনি খানিকটা আঁচ করতে পারলেন।মিষ্টিকে চা বানাতে বলে উপর তলায় গেলেন বিষন্নর বাবাকে ডাকতে।নীলু মিষ্টির পাশে দাড়িয়ে আড়চোখে বারবার সমুদ্রকে দেখছে।ফরমাল ড্রেসে লোলটাকে কি সুন্দর’ই না লাগছে।নীলু লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে,আবার তাকাচ্ছে। মিষ্টি চা বানাচ্ছে আর নীলুর দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে মুখে হাত চেপে হাসছে।নীলুর হঠাৎ চোখ পড়লো মিষ্টির দিকে।মিষ্টির সাথে চোখে চোখ পড়ার সাথে সাথে নীলু একদম অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গেলো,নীলুর এই অবস্থা দেখে মিষ্টি হাসি চেপে রাখতে পারলো না।হেসে হেসে বললো
” তুই এমন করছিস কেন বোকা মেয়ে? ”
নীলু কপালের চামড়া কুঁচকে বললো ” ও তুই বুঝবি না।আমার খুব নার্ভাস লাগছে রে,বাবা মেনে নিবে তো? ”
মিষ্টি হাসি থামিয়ে বললো ” সমুদ্র ভাইয়া যথেষ্ট ভালো মানুষ।আঙ্কেল নিজেও সমুদ্র ভাইয়াকে অনেক পছন্দ করে ”
মিষ্টির কথায় নীলুর শরীরে যেন প্রাণ ফিরে এলো।মিষ্টির কাছে ঝুঁকে এসে বললো ” বাবা পছন্দ করে তুই কিভাবে বুঝলি? ”
” না বোঝার কি আছে,মাঝে মাঝেই তো দেখি ছাঁদে বসে দু’জনে হেসে কথা বলে।আঙ্কেল দার্শনিক কথাবার্তা বলে আর সমুদ্র ভাইয়া রোবটের মতো মাথা নাড়ায়।আমার তো মনে হয়না সেসব কথা সমুদ্র ভাইয়া বুঝে,হুদাই শুধু মাথা নাড়ায় ”
” আমিও তো দেখি।কিন্তু তবুও ভয় হচ্ছে ”
” ওসব বাদ দে।সমুদ্র ভাইয়াকে দেখ,সাদা ফরমাল ড্রেসে কিন্তু দারুণ লাগছে,”
নীলু লজ্জায় মুখ ঢেকে বললো ” ধুর! শুধু শুধু লজ্জা দিস তুই, ভাল্লাগেনা ”
*
ছাদের মাঝখান টায় নীলু আর সমুদ্র দু’জনই নিশ্চুপ দাড়িয়ে আছে।সমুদ্রর চুপ থাকা দেখে নীলু বললো
” তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে ”
নীলুর কথায় সমুদ্র একটু জরোসরো হয়ে দাড়ালো।মিনমিন করে বললো ” তোমাকে আরো সুন্দর লাগছে,শাড়িতে এর আগে এতো সুন্দর লাগেনি ”
” মানে কি? আগে তারমানে খারাপ লাগতো? ”
” না মানে আমি সেটা বলতে চাইনি,তুমি ভুল বুঝছো ”
” আমি ঠিকি বুঝি হুহ।আচ্ছা যাইহোক,তোমার কি বুদ্ধি কোনোকালেই হবে না? ”
সমুদ্র ইতস্তত ভাবে আশেপাশে তাকিয়ে জবাব দিলো ” মানে? ”
” এই যে হঠাৎ করেই চলে এলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ”
” আসলে অফিসের আমেরিকার শাখায় আমার ট্রান্সফার হয়েছে।সামনের মাসে ফ্লাইট ”
” কংগ্রাচুলেশনস, এতো ভালো খবরটা আগে বলোনি তো ”
” সারপ্রাইজ দিবো ভেবেছিলাম,তাই বলিনি ”
” বাব্বাহ,তুমি আর সারপ্রাইজ? হাহাহা,”
” তোমার হাসি মুখটা দেখতে যে কি ভালোলাগে ”
” ভালো তো।এক কাজ করবে,আমায় সো-কেজে প্যাক করে রেখে দিবে,আমি সারাদিন ভেতর থেকে হাসবো,আর তুমি বসে বসে দেখবে ”
” একবার পেয়ে গেলে বু’কের মধ্যে রেখে দিবো ”
নীলু লজ্জায় একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালো।বললো ” তারমানে বিয়ের পর তুমি আমেরিকায় যাবে? আমি তখন কি করবো? ”
” কয়েকটা বছরই তো,ঠিক কেটে যাবে ”
নীলুর মাথায় র’ক্ত উঠে গেলো।এইলোক বলে কি? নতুন বউ রেখে বিদেশে চলে যাবে?মাথা খারাপ? নীলু সমুদ্রের শার্টের কলার চেপে ধরে বললো ” কি বললি তুই? বিয়ে করে আমায় একা রেখে চলে যাবি? আবার বলতেছিস কয়েকটা বছরই তো? তা বিয়ে কেন করতেছিস? তুই যা, আমেরিকায় গিয়ে বিদেশি মেয়ে বিয়ে কর,ভাগ ”
একটানে কথাগুলি বলে চলে যেতেই সমুদ্র নীলুর হাত ধরলো।নীলুর কান্না পাচ্ছে।এলোমেলো লাগছে সবকিছু।নীলুকে নিজের দিকে পাশ ফেরাতেই সমুদ্র বেকুল হয়ে বললো
” আরে আরে কি মুশকিল,তুমি কান্না করছো কেন? পাগলি মেয়ে আমার পুরো কথাটা তো শোনো ”
নীলু ফুপাতে ফুপাতে বললো ” কিচ্ছু শুনতে চাইনা আমি ”
” পাগলি মেয়ে একটা,তোমায় রেখে আমি যাবো এটা ভাবলে কি করে? ”
নীলু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো ” তুমিই তো বললে,”
” হু বলছি,তবে একটু ভুল বলছি।তোমায় নিয়েই যাবো,তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারবো নাকি?বোকা মেয়ে ”
নীলুর ইচ্ছে করছে সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে।এই লোকটার এরকম আটকে রেখে কথা বলার স্বভাবটা পাল্টালো না।সমুদ্র নীলুর চোখের জল মুছে দিতে দিতে বললো
” এইটুকুতেই চোখের জলে একদম টুইটুই হয়ে গেছে,”
নীলু অভিমানী স্বরে বললো ” আমায় রাগালে এভাবেই কাঁদবো।শুধু কাঁদবোই না, তুইতোকারি করে গালাগালিও দিবো।প্রতিত্তোরে আমাকে কিছু বলতে পারবে না কিন্তু!বলে দিলাম ”
” তাহলে এভাবেই রোজ রাগিয়ে দিবো, কাঁদলে তো তোমায় দারুণ লাগে ”
সমুদ্রর কথায় নীলু হাসছে,সমুদ্রও হাসছে।হয়তো তাদের সুখের মুহুর্তগুলোর সূচনা হয়েছে।হয়তো তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে।
দরজায় দাড়িয়ে মিষ্টি শব্দ করে কাশলো।মিষ্টিকে দেখে সমুদ্র, নীলু একটু স্বাভাবিক হলো।মিষ্টি কাছে এসে বললো
” এহেম, তো দুলাভাই, ভুল সময়ে চলে এলাম নাকি? ”
সমুদ্র হেসে বললো ” আরে না কি যে বলো ”
” না দু’জনে যা হাসাহাসি করছেন।মুঝে লাগা কাবাব মে হাড্ডি বানকার আগেয়া হু ”
নীলু মিষ্টির হাতে চিমটি কাটলো।এর অর্থ নীলুর খুব লজ্জা লাগছে,সে যেন এরকম কথা না বলে।মিষ্টি নীলুকে উপেক্ষা করে বললো
” আপনাদের তো হিল্লে হয়ে গেলো দুলাভাই,আমার যে কি হবে,”
সমুদ্র ভ্রু কুচকে বললো ” তোমাদেরও শীঘ্রই বিয়ে হবে,বিষন্নও ফিরে এসছে,”
মিষ্টি বড় একটা শ্বাস ছেড়ে বললো ” আর বইলেন না দুলাভাই,রাগ অভিমানের পালা চলতেছে।ছেলেদের এতো অভিমান করতে দেখিনি কখনো।আর এখন তো রাগের পরিমানও বেড়ে গিয়ে তালগাছে উঠেছে।অভিমান করবো আমি,আর আমার রাগ ভাঙ্গাবে ও,সে জায়গায় উল্টে সে রেগে আছে।সব আমার কপাল ”
সমুদ্র হেসে বললো ” এইটুকু রাগ অভিমান না থাকলে ভালোবাসা ঠিক জমে না বুঝলে।আর তোমায় কি বলবো,যার সাথে বিয়ের কথা হচ্ছে তার অভিমান ভাঙ্গাতেই আমার জীবন শেষ হবে মনে হচ্ছে। দুই ভাই বোন সেইম কোয়ালিটি ”
সমুদ্রের কথায় মিষ্টি হো হো করে হাসতে হাসতে বললো ” একদম ঠিক বলছেন,সেইম কোয়ালিটির সেইম প্রডাক্ট।অনলি এই টু-পিচ ই আছে,,, হিহিহি ”
মিষ্টি আর সমুদ্রের একত্রে হাসি তামাশাভরা কথায় নীলুর রেগে যাওয়ার কথা,অথচ রাগার বদলে সে হেসে ফেললো।পরম সুখের সময় রাগের কথাতেও মানুষ বোধহয় হাসে।কারন তখন মন থাকে আনন্দে।আনন্দ সব রাগ,অভিমানকে দূরে সরিয়ে রাখে।
নিচে নেমে দেখলো বিষন্নও সোফায় বসে আছে।মিষ্টি আড়চোখে বারকয়েক তাকালো বিষন্নর দিকে।ঠোঁ’টের কোনে মুচকি হাসি এনে মনে মনে ভাবলো ” মিঃ বিষন্ন বাবু,দেখি তোমার রাগ কতদিন থাকে।তবে তুমি কাল রাতে যা করছো সেটা মোটেও ভালো করোনি।আমি খুব ব্যথা পাইছি।প্রচন্ড জ্বা’লাপোড়া সহ্য করেও দেখো কেমন হাসিখুশি আছি।তোমার দেওয়া সব ব্যথা,কষ্ট আমি এভাবেই হাসি মুখে সহ্য করতে পারবো বুঝছো?তোমার দেওয়া কষ্টটাও এখন আমি দারুণ উপভোগ করি “।
বিয়ের ডেট এখনো ঠিক হয়নি।তারা যারা আগে বলেছেন সময়টা বিষন্নর বাবাকেই ঠিক করতে।তবে এই মাসেই বিয়েটা হবে।এইমাসে বিয়ে করে সামনের মাসেই আমেরিকা।ওনারা চলে যাওয়ার পর বিষন্নর মা নীলুকে জরিয়ে ধরে অনেক কান্না করলেন।বিষন্নর বাবার চোখেও জল টলমল করছিলো।একমাত্র আদুরে মেয়ে,তার বিয়ে হবে।এটা যেমন আনন্দ,তেমনি বেদনাদায়ক।
এইটুকু সময়ের মধ্যে নীলুর ঘরে যেন উৎসবের মতো আমেজ তৈরি হলো।নীলু ওর সব বান্ধবীদের ফোন করে আসতে বলেছে।আজ সারাদিন তারা হৈ-হুল্লোড় করে বাড়ি মাথায় করে রাখবে।নীলুর ঘর এখন ছোটোখাটো একটা ডিসকো হয়ে গেছে।বক্সে গান ছেড়ে সবাই নাচানাচি করছে।নীলুও খুব খুশি,সবার সাথে সেও নাচছে।মিষ্টিকে সবাই টানাটানি করলেও মিষ্টি অজুহাত দিলো পায়ে ব্যথা।কিন্তু সত্যি বলতে পে’টের সেই পু’ড়ে যাওয়া অংশটা খুব জ্বা’লাপোড়া করছে।সহ্য করা যাচ্ছে না আর।নীলুকেও সাহস করে বলতে পারছে না মলমের কথা।বললে সে হাজারটা প্রশ্ন করবে কিভাবে পু’ড়লো,কখন পুড়লো ব্লা ব্লা।মিষ্টি পে’টের আশেপাশে হাত রেখে চোখ খিঁচে বন্ধ করে বসে আছে।এখন শব্দটাও কেমন যেন কাবে লাগছে।প্রচন্ড অসহ্য লাগছে সবকিছু। একটা সময় মিষ্টি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো।
হঠাৎ করেই সবকিছু কেমন যেন শীতল হয়ে গেলো।মিষ্টি ব্যথায় এতোক্ষণ বিছানার চিৎ হয়ে শুয়ে ছিলো।এখন কেন জানি জ্বা’লাপো’ড়াটা আর করছে না।মিষ্টি চোখ মেলে তাকাতেই কারেন্টের মতো একটা শক খেলো।বিষন্ন গম্ভীর মুখে বসে আছে তার পাশে।এক হাতে একটা স্প্রে’ আর মলম,আরেক হাতে পু’ড়ে যাওয়া অংশে হাত বুলাচ্ছে আর ফু দিচ্ছে।মিষ্টি চোখ বড়বড় করে এইসব দেখছে।আসলে ব্যথা এতোটাই তাকে কাবু করেছে যে পে’টের অংশের অবেকটা যায়গা অবশ হয়ে গেছে।এজন্য বিষন্নর স্পর্শ সে টের’ই পায়নি।বিষন্নকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বিষন্ন একবার তাকালো মিষ্টির দিকে।মিষ্টির সাথে সাথেই সব কথা বন্ধ হয়ে গেলো।কি বলতে চাচ্ছিলো সেটাই এখন আর মনে নেই।মনে মনে বললো
” ইচ্ছে করে ব্যথা দিয়ে এখন এসে একেবারে উদ্ধার করেছে। আমি বলেছি নাকি এইসব করতে,”
এইটুকু বলে মিষ্টি আর কিছু বলতে পারলো না।কেননা বিষন্ন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বিষন্নর তাকিয়ে থাকা দেখে মিষ্টি মনে মনে ভাবলো ” সব কথা শুনে ফেললো নাকি,আমি তো মনে মনে বলছি ”
বিষন্ন কপালের চামড়া ভাজ করে বললো ” মনে মনে যে এতো জোড়ে কথা বলা যায় আগে জানতাম না “।মিষ্টি লজ্জায় ঠোঁ’ট কা’মড়ে ধরে চোখ বন্ধ করলো।একটু পর ঠোঁ’টের কাছে গরম কিছুর স্পর্শ পেতেই…..
চলবে?