তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই #পার্টঃ৬,০৭

0
403

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৬,০৭
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
০৬

” কি হলো কথা বলছেন না কেন? এভাবে হুট করে ঘরে ঢুকে চুপ করে আছেন যে? ”

উফফ মুশকিলে পড়ে গেলাম তো,এখন কথা বললে তিশা বুঝতে পেরে যাবে আমি এসেছি।তবে এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য একটা কাগজ সাথে এনেছি।কাগজে লেখা ” প্লিজ একবার ছাদে চলো,অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে,এখানে বলা যাবে না,প্লিজ এখানে কোনো প্রশ্ন করিও না “।মিষ্টি আবারো বললো

” আরে কি ব্যাপার বলবেন তো? এই আপনি চোর টোর নাকি? ”

এই মেয়ে বলে কি? এবার চোর চোর বলে চেঁচামিচি শুরু করবে নাকি?তাহলে তো আমি একদম শেষ।আর দেরী না করে মিষ্টির দিকে কাগজটা এগিয়ে দিলাম।মিষ্টি কাগজটা হাতে ভ্রু কুঁচকে তাকালো আমার দিকে।আমি অন্যদিকে তাকালাম।মিষ্টি একবার তিশার দিকে তাকিয়ে আমার হাত ধরে টেনে ছাঁদে নিয়ে গেলো।নিয়ে গিয়ে একটু সন্দেহ ভাব নিয়ে বললো

” কে আপনি ? আমি যাকে ভাবছি আপনি সেই নন তো? ”

আমি হাসলাম।আমার হাসিতে মিষ্টি খুব ভড়কে গেলো।কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো

” বি..বিষন্ন,আপনি বিষন্ন তাই না? ”

আমি মিষ্টির দিকে এক পা এক পা করে এগুচ্ছি, মিষ্টি ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে।এক পর্যায়ে সিঁড়ির কাছে দেয়ালটায় ধাক্কা খেয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমি মুখ থেকে বোরখাটা খুললাম।মিষ্টির চোখ দেখে মনে হচ্ছে ভূল করে চোখের সামনে ভূত দেখে ফেলেছে,আর এই ভূত দেখার বিষয়টা শুধু দেখবেই না ভয়ে চেঁচিয়ে উঠবে।যেমন ভাবলাম তেমনিই হলো,মিষ্টি একটু চেঁচিয়ে বললো

” বি..বিষন্ন তুই,তুই এতোরাতে আমার হোস্টেলে? ”

আমি ওর মুখে হাত চেপে ধরলাম যেন চেঁচাতে না পারে।ভয় পেলে মেয়েদের মাথা ঠিক থাকে না।অতি চালাক মেয়েও বোকার মতো কাজ করে ফেলে।মিষ্টিও তাই করছে,বোকার মতো শব্দ করে কথা বলছে।মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বললাম

” আস্তে কথা বলো, কেউ শুনে যদি ছাঁদে চলে আসে তাহলে আমাদের দেখে লজ্জা পেয়ে যাবে ”

মিষ্টি এক ঝটকায় আমার হাত সরিয়ে দিলো।চাপা স্বরে বললো ” লজ্জা পাবে মানে? ”

” লজ্জা পাবে না? এতো রাতে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ছাঁদে রোমান্স করছে,যে কেউই তো দেখলে লজ্জা পাবে ”

মিষ্টি একটু ইতস্তত হয়ে বললো ” কিসের রোমান্স,কে রোমান্স করছে ”

” আমরা ”

মিষ্টি এবার আমার দিকে প্রচন্ড রাগি দৃষ্টিতে তাকালো।মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবে আমায়,রেগে রেগে বললো

” তুই এতো রাতে এখানে আসার সাহস পাস কিভাবে? তোর লজ্জা লাগছে না মেয়ে সেজে গার্লস হোস্টেলে আসতে? ”

” একটু লজ্জা লাগছিলো,আগে তো কখনো বোরখা পড়িনি,গেইটে ঢোকার সময় দারোয়ান যেভাবে দেখছিলো যে লজ্জায় পড়ে গেছিলাম ”

রাগে মাত মুঠো করে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললো ” তুই আর এক মুহুর্ত এখানে থাকবি না,কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে ”

” চলে তো যাবো,আগে আমার কিছু কথার উত্তর দিতে হবে তারপর ”

মিষ্টি একটু ইতস্তত হয়ে বললো ” কি উত্তর ”

” তুমি নতুন টিউটর কেনো ঠিক করেছো,?তুমি কি মনে করো এতো সহজে তুমি আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে? ”

” দেখ বিষন্ন তুই এখনো অনেক ছোট,প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর,আমাদের মধ্যে কখনো এটা সম্ভব না,তুই কেনো বুঝিতেছিস না ”

” আমি এসব শুনতে চাইনি,তুমি কি ঠিক করেছো? আমাদের বাড়িতে আর আসবে না? আমার সামনাসামনি কখনো হবে না তাই তো? ”

” হ্যা তাই ”

” তুমি খুব ভালো করে জানো মিষ্টি, আমি যা চাই সেটা পাওয়ার জন্য কতদূর যেতে পারি ”

” আচ্ছা এখন তুই প্লিজ চলে যা,আমি কাল তোর সাথে কথা বলবো, প্লিজ,”

” আরো কথা আছে,”

মিষ্টি বিরক্তি নিয়ে বললো ” কি কথা? ”

” জুনায়েদ কে? ”

নামটা শোনার সাথে সাথে মনে হলো মিষ্টি খুবই অবাক হলো।এই সময়ে আমার মুখে এই নামটা হয়তো ও কখনো আশা করেনি। আমার দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বললো

” কে…কেউ না ”

” মিথ্যা বলবে না,সত্যিটা বলো,তোমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছি ”

” বললামই তো কেউ না, তুই কেনো আমার পার্সোনাল লাইফে এন্টাফেয়ার করছিস,”

মিষ্টির মুখে এমন কথা শুনে মাথা ঠিক রাখতে পারলাম না।ঠাস করে গালে একটা চড় বসিয়ে দিলাম।মিষ্টি তাল সামলাতে না পেরে ছাঁদের ফ্লোরে পড়ে গেলো।গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ওর সামনে হাটুগেড়ে বসে বললাম

” পার্সোনাল লাইফে এন্টাফেয়ার করবো না কেন? আমি কি তোমায় ভালোবাসি না? যাকে ভালোবাসি তার লাইফে এন্টাফেয়ার করা কি দোষের কিছু? ”

” বিষন্ন, তুই আমার গায়ে হাত তুললি?”

মিষ্টির মায়াবী স্বরে আমার সব রাগ নিমিষেই মোমবাতির আগুনের মতো নিভে গেলো।এই মেয়েটা মাঝে মাঝে এতো মায়ায় জড়ানো কথা বলে যে মনে হয় শুধু এই কথা শুনেই সারাজীবন পার করে দিতে পারবো।

মিষ্টি কান্না করছে,ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।পাশের বিল্ডিংয়ের আলোতে ছাদ অনেকটাই আলোকিত।মিষ্টির ফর্সা গালটা লাল হয়ে আছে।এর মধ্যে অনেকবার ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু ও বারবার ছাদের এদিক থেকে সেদিক যাচ্ছে।ওর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম

” আমি তোমায় মারতে চাইনি,কিন্তু তুমি এমন সব কথা বলো যে আমি রাগ সামলাতে পারিনা।মিষ্টি আমি চাই তুমি তোমার সব কথা আমার সাথে শেয়ার করো,কিন্তু তুমি এতো বড় একটা কথা আমার থেকে আড়াল করে গেলে।জুনায়েদ ছেলেটা কত খারাপ সেটা তুমি জানো? ”

মিষ্টি এখন কান্না করছে না তবে বারবার চোখের জল মুচছে।আমার কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না।আমি আবারো বললাম

” মিষ্টি চুপ করে থেকো না, কথা বলো,আমি বেশিক্ষণ এখানে থাকতে পারবো না। জুনায়েদ কি তোমার সাথে খারাপ কোনো ব্যাবহার করেছে? বা খুব ডিস্টার্ব করছে? ”

মিষ্টি কান্না মিশ্রিত স্বরে বললো ” না, ”

” মিষ্টি আমি জানি তুমি আমায় সত্যিটা বলছো না,তুমি ভাবছো আমায় বললে আমি গিয়ে মারপিট করবো।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি সেরকম কিছুই করবো না, ”

” উনি আমার দিকে খারাপ উদ্দেশ্যে তাকায়,এখনো তেমন ডিস্টার্ব করে না,তবে এখন করবে ”

” আচ্ছা ”

দেখলাম মিষ্টি এখনে কাঁদছে। মনে হচ্ছে চড়টা বেশ জোরেই লেগেছে,বেশি ব্যাথা পেয়েছে।নিজের কাছে নিজেকে কেমন কাপুরুষ মনে হচ্ছে, যে কি না রাগ সামলাতে না পেরে একটা মেয়ের গায়ে হাত তোলে,তাও আবার যাকে ভালোবাসে তার গায়েই।আলতো করে পেছন থেকে ওর হাত স্পর্শ করতেই হাত সরিয়ে নিলো।আমি ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলাম।কেঁদে কেঁদে এইটুকুতেই চোখ,ঠোঁট ফুলিয়ে ফেলেছে।চোখের জল মুছে দিয়ে অপরাধী ভঙ্গিতে বললাম

” খুব ব্যাথা পেয়েছো? ”

আমার কথায় যেন মিষ্টি আরো বেশি আঘাত পেলো।আবারো ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।আমি ওকে জরিয়ে ধরলাম।প্রথমত মিষ্টি অনেক ছটফট করলো, কিন্তু আমি ছাড়লাম না।এক পর্যায়ে মিষ্টিও চুপ করে রইলো।

__________________________

হোস্টেলের যিনি মালকিন তিনি একজন মহিলা।বেশ জাদরেল ধরনের মহিলা।তিনি রোজ দশটার দিক হোস্টেলে আসেন।সবার সুবিধা অসুবিধা দেখেন।অন্য দিনের মতে আজকেও তিনি হোস্টেলে এসেছেন।ওপর তলার ঘরগুলি একনজরে দেখে যান।তিনি দেখলেন মিষ্টির ঘরে আলো জ্বলছে,দরজা খোলা।তিনি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন মিষ্টির ঘরে।এসে দেখলেন তিশা কানে হেডফোন লাগিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।তিনি কয়েকবার ডাকলেন,কানে হেডফোন থাকায় তিশা শুনতে পেলো না।এবার তিনি কাছে এসে তিশাকে ডাকলেন।তিশা ফোনটা লুকিয়ে বললো

” আন্টি আপনি,কখন এলেন ”

” এখনি, তা কি এতো মনোযোগ দিয়ে দেখো?যে তখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না ”

” আসলে আন্টি, ইয়ে মানে,একটা মুভি দেখছিলাম ”

” মুভি এতো মনোযোগ দিয়ে দেখছিলে?মুভিটা খুব ইন্টারেস্টিং নাকি? ”

তিশা আমতা আমতা করে বললো ” হ্যা আন্টি অনেক ইন্টারেস্টিং,”

” তাহকে আমাকেও দেখাও,আমি অনেকদিন থেকে ইন্টারেস্টিং দেখার মতো মুভি খুজে পাচ্ছিলাম না ”

তিশা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।তিশা মনে মনে ভাবলো,”যে মুভি দেখছি,সেটা যদি আন্টিকে দেখাই তাহলে আমি শেষ,মায়ের কাছে ফোন করে সব বলে দিবে।হয়তো বলবে,ভাবি,আপনার মেয়ে বড় হয়ে গেছে,ওকে পড়াশোনা না করিয় বিয়ে দিয়ে দেন।এই মহিলার কাছে এমন কাজ খুবই স্বাভাবিক।একবার তিনি একটা মেয়ের ঘরে গেলেন।মেয়ের নাম সানজিদা,গিয়ে দেখলেন তার বালিশের কাছে একটা বই,বইয়ে একটা অ*র্ধ*ন*গ্ন মেয়ের ছবি,সেই মেয়েকে পেছন থেকে একটা যুবক জরিয়ে ধরে আছে।তিনি এটা দেখে সাথে সাথে তার মা’কে সবটা জানিয়ে দিলেন।একটা মেয়ের কাছে এটা যে কি পরিমান লজ্জার বিষয়।যদিও তারপর সানজিদা বলেছিলো বইটা ওইকম টাইপের বই না,আন্টি বানিয়ে বলেছে,কিন্তু আমরা জানি,আন্টি কোনোকিছু বানিয়ে বলেন না,সত্যিটাই বলেন।তিশার ভাবনা ভাঙ্গলো, আন্টি চেঁচিয়ে বললো

” কি হলো কি ভাবছো? আমার মেয়ে কাল দেশে ফিরবে,ওর সাথে এই মুভিটা দেখবো,দেখাও দেখি কেমন ”

” আন্টি এই মুভি তো আপনার ভালো লাগবে না,এখানে প্রেমের বিষয় আছে,যদি মেয়ের সাথে বসে রোমান্টিক মুভি দেখতে চান,তাহলে দিতে পারি ”

” তাহলে থাক,প্রেম বিষয়কে আমি অত্যাধিক ঘৃণা করি”

তিশা হাফ ছেড়ে বাচলো। আন্টি আশেপাশে তাকিয়ে বললো

” মিষ্টি কই গেছে?রুমে নাই কেনো? ”

” আন্টি ছাঁদে গেছে মনে হয়,আমি ডেকে নিয়ে আসছি ”

” যুবতী মেয়ে এতো রাতে ছাঁদে কি করে? ছাঁদের চাবি তোমাদের কাছে রেখেছি জন্য কি রাতবিরাতে ছাঁদে উঠে যাবে? ছাঁদে কেনো গেছে? ”

” জানিনা আন্টি,আপনি দারান আমি ডেকে আনছি,এক মিনিট ”

” তোমার যেতে হবে না,আমিই যাচ্ছি, মেয়েগুলা বড্ড জ্বালায়,রাতে ছাঁদে গেলে পাশের ফ্লাটের ছেলেরা উঁকি দেয়,তারপর কোনো ঘটনা ঘটে গেলে দোষ হবে আমার ”

” জি আন্টি”

” তুমি চুপ করে থাকো,তোমার বয়স আমিও পার করে এসেছি,কি মুভি দেখছিলে সেটা বুঝিনা ভেবেছো? একেকটা বদের হা*ড্ডি হয়েছে ”

উনি ছাঁদের দিকে রওনা হলেন।তিশা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো।ফিসফিস করে বললো,এই বুইড়া বেডীর জ্বালায় জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেছে।বেডীডার ওপর ঠাডা পড়লে ভাল্লাগতো।

ছাঁদের কাছে যেতেই আন্টি শুনতে পেলো কেউ কথা বলছে।আরেকটু কাছে এসে ছাঁদে যাওয়ার দরজাটায় কান পাতলো,গুনগুন করে কথা বলার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।তিনি এক ধাক্কায় দরজা খুললেন।সামনে দেখলো মিষ্টি আর……

চলবে?

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৭
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

আন্টি ছাদের দরজা খুললেন।দেখলেন মিষ্টি একা দারিয়ে আছে।আন্টি সন্দেহপ্রবণ স্বরে বললো

” মিষ্টি,ছাঁদে কেউ ছিলো নাকি? ”

” কই না তো আন্টি, কে থাকবে? ”

” আমি যে শুনলাম কে যেন কথা বলছিলো ”

” আমিই কথা বলছিলাম আন্টি,বাবা মায়ের সাথে কথা বলছি,ওই যে দূর আকাশে ওনারা, ওদের সাথে কথা বলছিলাম ”
আন্টি এখনে সন্দেহ নিয়ে আমায় দেখছেন।,দরজা খোলার শব্দে বিষন্ন উপায়ন্তর না পেয়ে ট্যাঙ্কের মধ্যে ঢু*কে পড়েছে।আন্টি আমার সাথে টুকটাক কথা বলছে আর চারপাশে তাকাচ্ছে, তিনি দেখছেন সত্যিই কেউ আছে কি না।

“বলেছি না বিকেল ৬টার পর ছাঁদে আসা নিষেধ”

” সরি আন্টি,আমি রুমে যাচ্ছি ”

আন্টির ভয়ে রুমে চলে আসলাম।বিষন্ন ট্যাঙ্কেই আ*ট*কা প*ড়ে আছে,ইসস ওর ঠান্ডা লেগে যাবে তো।দরজার ফাঁ*ক দিয়ে দেখতে চেষ্টা করলাম, আন্টিকে দেখা যাচ্ছে না,মনে হলো চলে গেছে।ছাঁদের দরজায় তালা মে*রে চলে গেছেন।আমার কাছে আরেকটা চাবি বানানো ছিলো,সেটা দিয়ে তালা খুলে ছাঁদে গেলাম।ট্যাঙ্কের ঢাকনা খুলতেই বিষন্ন বোয়াল মাছের মতো বড় বড় হা করে নিশ্বাস নিচ্ছে।ওকে ধরে বাইরে বের করলাম।বে*চা*রা ভিজে একাকার।মুখ হা করে হাঁপাচ্ছে। আমার খুব হাসি পেলো।মুখ চেপে হাসছি দেখে বিষন্ন রাগি দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে।আমি হাসি বন্ধ রেখে বললাম

” যেমন এসেছিলো,এখন বোঝো মজা,আন্টি চলে গেছে,তুমি প্লিজ এখন চলে যাও,”

” ওই মহিলা এতোরাতে আসে কেন,ওর কি পে*ট খারাপ নাকি? ”

” হ্যা পে*ট খারাপ,রাতে খাওয়ার পর হাটাহাটি না করলে খাবার হজম হয় না।তুমি এখন যাও প্লিজ ”

আমার এরকম সস্তা রসিকতায় বিষন্ন হাসলো।আমিও হাসলাম।এই মুহূর্তে নিজেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। যার খুশী থাকার সবকিছু আছে।

বিষন্ন চলে গেলো।রুমে ঢু*কে দরজা বন্ধ করে দরজার কপাট ধরে বড় বড় নি*শ্বাস ফেলতে লা*গলাম।খুব জোড় বাঁচা বেঁচে গেছি।আন্টি দেখলে কি হতো ভেবেই হাত পা জমে আসছে।

____________

বো*র*খা*টা এমন কেন? বারবার পায়ে আটকে যাচ্ছে, এইটুকু সিঁড়ি নামতেই মনে হচ্ছে নাক মুখ স*মান করে ফেলবো।সামনে দারোয়ানকে দেখা যাচ্ছে,।এই দারোয়ান খুব প্যা*রা দেয়,যেমন আসার সময় বললো

” আফা এতো রাইতে আফনে বাইড়ে কেমনে গেলেন,গেট তো বন্ধ,”

আমি চুপ করে রইলাম।দারোয়ানকে ওভারটেক করার চেষ্টা করলাম,উনি আমার সামনে এসে বললেন

” আফা আফনে ভেতরে যাইতে পারবেন না,এতো রাতে বাইরে থেকে আসলে ম্যাডামরে খবর দিয়া তারপর যাইতে বলছে।আফনে দারান,আমি ম্যাডামরে ফোন দিতাছি ”

এই ব্যা*টা*র কাজ দেখে প্রচন্ড রাগ লাগছে।তবে এদের সামলানো কোনো ব্যাপার না।ওনার হাতে এক হাজার টাকা ধরিয়ে উপড়ে চলে এসেছিলাম।এখন যাওয়ার সময় কোনো নাটক শুরু করবে কিনা কে জানে।এসব ভাবতে ভাবতেই দারোয়ান বললো

” আফা কই যান? ”

চুপ করে রইলাম।আমি ওনাকে এড়িয়ে যেতেই উনি সামনে দারিয়ে বললেন

” আফা রাইত,বেরাইতে বাইড়ে যাওন নিষেধাজ্ঞা আছে ”

আগেরবারের মতো হাতে টাকা গুজে দিয়ে বেড়িয়ে আসলাম।পাঁচশ দিয়েছিলাম,মানলো না,শেষে এক হাজার দিয়েই বেড়িয়ে আসলাম।একদম দম বন্ধ লাগছে।হোস্টেল থেকে দূরে চলে এসছি,এখন এটা খুলা যেতে পারে। খু*লতেই হঠাৎ দেখলাম সামনে একটা মধ্যে বয়স্ক লোক টকটক করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি হেসে বললাম, ” কি চাচা, অবস্থা ভালো তো? প্রেমে পড়ার কি একটা জ্বা*লা দেখছেন? বো*র*খা পড়ে ঘুরতে হয় “।কথা শেষ হওয়ার আগেই লোকটা কাঁ*পতে কাঁ*পতে রাস্তায় প*ড়ে গেলো।লোকটার অল্প ভ*য়েই ফি*ট হওয়ার রো*গ আছে বোধহয়।

বাইকটা হোস্টেল থেকে একটু দূরে এখানে স্টান্ড করে রেখেছিলাম।ফোনে দেখলাম রাত দশটা চল্লিশ বাজে।ওহহহ শিট,এতোক্ষণে তো বাবা অফিস থেকে চলে এসেছে,আজ আমার কপালে বোধহয় শনি নাচছে।বাইক স্টার্ট দিয়ে ঝড়ের গতিতে বাড়িতে আসলাম।

বাবা খাবার টেবিলে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন।তার সামনে মা ঘুমঘুম চোখে বসে আছে।বুঝতে পারলাম আজকে কথা শুনতে হবে।এক পা এক পা করে রুমের দিকে যেতেই বাবা ডাকলেন

” বিষন্ন, এই দিকে আসো ”

আমি কাছে এসে দুইহাত পেছনে রেখে দারালাম।বাবাকে আমি সীমাহীন ভয় পাই।কেন ভয় পাই সেটা আজোও বুঝতে পারিনা,বাবা কখনো আমার গা*য়ে হাত তোলেন না,তবুও কেন জানি বাবাকে খুব ভয় লাগে।ভয়ে ভয়ে বললাম

” বাবা কিছু বলবে? ”

” এতো রাত অব্দি ঘোরাফেরা ঠিক না,দিনকাল ভালো না, বাইক নিয়ে গিয়েছিলে? ”

” আ…মানে….হ্যা বাবা ”

” কতোবার বলেছি বাইক আ*স্তে চালাবে? আমার কথা কি তোমার কা*নে যায় না? ”

” বা..বাবা,আমি তো বাইক আ*স্তেই চালিয়েছি আজ ”

” তুমি যখন যাও তখন আমি সিগারেটের দোকানটায় ছিলাম।এতো জোড়ে তুমি চলে গেলে যে সেই চলে যাওয়ার বাতাসে লাইটারের আ*গু*ন নিভে গিয়েছিলো,”

” সরি বাবা আর কখনো এমন হবে না।এই যে কা*নে ধ*রছি ”

” কানে ধরতে হবে না,খেয়ে নাও,তোমার মা খাবার নিয়ে বসে আছে ”

বলেই বাবা খবরের কাগজ হাতে নিয়ে চলে গেলো।আমি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মাকে বললাম

” মা আজকে খাবো না,খেতে ইচ্ছে করছে না ”

” একটু খানি খেয়ে নে বাব,রাতে খিদে লাগবে তো ”

খাবার প্লেট থেকে এক টুকরা শশা মুখে দিয়ে রুমে চলে আসলাম।সব চাপ যেন আজকেই একসাথে এসে গেছে।ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।ফ্রেশ হয়ে আসতেই ফোনটা বেজে উঠলো।মিষ্টি ফোন করেছে, ফোনটা রিসিভ করতেই মিষ্টি বললো

” ফোন ধরতে এতো লেট হয় কেন?কয়বার ফোন দিয়েছি,ধরছিলি না কেন? ”

” ওয়াসরুমে ছিলাম ”

” বাড়িতে পৌঁছে তো জানাবি নাকি? আর আমি এখানে চিন্তায় চিন্তায় মরে যাচ্ছি ”

” কিসের চিন্তা? ”

” এতো রাতে কিভাবে যাবি সেটা নিয়ে চিন্তা হবে না? ”

” বাইক নিয়ে গিয়েছিলাম,তোমাদের হোস্টেলের সামনে যে চায়ের দোকানটা আছে,ওখানে রেখেছিলাম।আর আমি ছোট নাকি যে একা আসতে পারবো না? ”

” ছোটোই তো,পিচ্চি ছেলে,আচ্ছা রাখলাম”

” রাখবে কেন, একটু কথা বলি ”

” কি কথা? ”

” একটা ছেলে,একটা মেয়ে কি নিয়ে কথা বলে জানোনা? ”

” জানতে চাই না আমি,রাখলাম,গুড নাইট,”

” এইইই শুনো ”

” কি হলো আবার ”

” কাল কখন আসবে ? ”

” কোথায় আসবো? ”

” আমায় পড়াতে,”

” আমি তোকে পড়াবো না,তোর পাগলামি যতদিন বন্ধ না হবে আমি তোর সামনেও যাবো না,ফোন রাখলাম ”

” তাহলে কিন্তু আবার চলে যাবো তোমার ওখানে,আর এবার গিয়ে কিন্তু দু*ষ্টা*মি করবো বলে দিলাম ”

” এসব কি ধরনের রসিকতা বিষন্ন? ”

” আচ্ছা আর করবো না,তোমার দরজার কাছে যে টেবিলটা আছে ওখানকার ড্রয়ারটা চেইক করে ঘুমাও,গুড নাইট ”

________________

ফোনটা কাটতেই কেমন যেনো মনটা খারাপ হয়ে গেলো।আমার অবচেতন মন কি বিষন্নের এ ধরনের রসিকতা আশা করছে?মন চাইছে যেন বিষন্ন এরকম রসিকতা করতেই থাকে? কিন্তু কেন এমন মনে হচ্ছে? আমি কি ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছি নাকি?

টেবিলের ড্রয়ারটা খুলতেই দেখলাম এত্তোগুলা আমার পছন্দের চকলেট,সাথে একটা বকুল ফুলের মালা।সাথে একটা চিরকুটে লেখা,আমার মিষ্টি পাখিটার জন্য। এই ছেলেটা সত্যিই পা*গ*ল।এতো বড় হয়েছে তবুও পিচ্চি স্বভাব থেকেই গেছে।ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুতেই একটা মেসেজ আসলো।বিষন্ন মেসেজ দিয়েছে,মেসেজে লেখা ” টি-শার্টে তোমায় খুব কিউট লাগে,বিয়ের পর আমরা সেইম টি-শার্ট পড়বো “।

মেসেজটা পড়ে মনেই অজান্তেই লজ্জায় হেসে ফেললাম।এই ছেলেটা এমন সব কর্মকান্ড করে!ছেলেটা এতো পা*গল কেনো?

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম সে খেয়াল নেই।তিশার ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম,তিশা বললো, কিরে ভার্সিটি যাবি না?। আমি উঠে বসলাম।দেখলাম তিশা একদম রেডি।ফোনে সময়টা দেখলাম,ক্লাসের এখনো তিন ঘন্টা দেরি।

” এখনো তো তিন ঘন্টা বাকি, এতো তারাতাড়ি সেজেগুজে কই যাচ্ছিস?”

” একটা ছেলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি দোস্ত, এক মাস থেকে কথা হয়,আজকেই প্রথম দেখা করতে যাচ্ছি,”

” ও আচ্ছা, ”

” তোর শাড়িটা পড়েছি,আমার শাড়িটায় ভা*জ পরেছে,তুই মাইন্ড করিস না দোস্ত ”

” রিকশায় সাবধানে উঠবি ”

” থ্যাংস দোস্ত,তুই হলি আমার কেয়ারিং ক*লি*জার বান্ধবী ”

” তোকে বলছি না,রিকশার পে*রেকগুলা খুব বি*প*জ্জ*নক,কা*প*ড়ে লাগলেই ছিঁ*ড়ে যায়,তাই সাবধান ”

তিশা রা*গি দৃষ্টিতে তাকিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। আমি ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে রেডি হয়ে নিচে নামলাম ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য।আজকের আকাশটা খুব সুন্দর,সূর্যের আলোয় চারপাশটা চকচক করছে।একটা রিকশাকে দার করিয়ে রিকশায় উঠলাম।আজকের সবকিছু এতো সুন্দর কেন?ভাঙ্গা রিকশাটাকেও সুন্দর লাগছে,।রিকশাওয়ালা মামা রিকশা টান দিতেই কোথা থেকে যেনো উড়ে এসে আমার পাশে বসলো একটা ছেলে। আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম……..

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here