তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই #পার্টঃ৮,০৯

0
338

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৮,০৯
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
০৮

রিকশায় পাশে বিষন্ন বসে আছে।ওর মুখ হাসি হাসি।হেসে হেসে রিকশাওয়ালা মামাকে বললো

” মামা চলো, আমি কলেজে নামবো,তারপর আপাকে ভার্সিটিতে নামায় দিবা বুঝছো? ”

রিকশাওয়ালা বললো ” মামা ওইদিক দিয়া তো বেশি ঘুরা হইয়া যায় ”

” তাতে কি? এই যে ম্যাডাম দেখছো না? ইনি ভাড়া বাড়ায় দিবে চলো ”

” হুটটা উঠায় দিই মামা,দাম কিন্তু একটু,বুঝেন’ই তো ”

” হুট উটানোর দরকার নাই,”

রিকশাওয়ালা রিকশা টা*ন দিলো।আমি হতভম্ব হয়ে বিষন্নের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ওর মধ্যে বিন্দু মাত্র জীর্ণতা নেই,মনে হচ্ছে আমার সাথে এভাবে রিকশায় যাওয়া ওর বহুদিনের অভ্যাস,অথচ আজকেই প্রথম ও আমার সাথে বসলো।আমার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে বিষন্ন বললো

” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?লোকে দেখলে কি ভাববে? ”

কি বলছে বিষন্ন?লোকে দেখে কি বলবে মানে কি? যেকথা আমি ওকে বলবো সেটা ও নিজেই আমায় বলছে।ছেলেটা বেশি পেকে গেছে।একটু ধ*ম*ক দেওয়ার মতো করে বললাম

” তুই এভাবে হু*ট করে রিকশায় উঠলি কেন? আমার কাছে পারমিশন নিয়েছিস? ”

” কিউট মেয়েদের মুখে এমন কথার ধরন মানায় না,ধরনটা পাল্টাও বুঝছো? ”

” আমার কথার ধরন ঠিক নাই? তা কেমন ধরন চাস? ”

” ঠিক নাই’ই তো,বারবার তু*ই*তো*কা*রি করছো,শুনতেই কেমন লাগে,”

” তুই এখনি রিকশা থেকে নামবি,এই মুহূর্তে।এই মামা রিকশা থামান ”

” মামা থামাবা না,তোমায় যেতে বলেছি আমি,যতক্ষণ আমি থামতে বলবো না ততক্ষণ থামাবা না ”

” ঠিক আছে,আমিই নেমে যাচ্ছি,আমি তোর সাথে একি রিকশায় যাবো না ”

” কি আজব,একি রিকশায় গেলে সমস্যা কি? আমি কি সাধে চড়েছি নাকি? কোনো রিকশা পাইনি তাই তোমারটায় উঠলাম।বাড়ি থেকে এতদূর হেঁটে এসছি জানো? ”

” সমস্যা আছে,তুই বুঝবি না ”

” হুম বুঝেছি,একসাথে গেলে তোমার মনে কুচ কুচ হোতাহে তাই না? ”

” বিষন্ন! একটা চ*র দিবো কিন্তু, আমি তোর সিনিয়র।আর চা*পা*চা*পি করে বসতে আমার অসুবিধা হচ্ছে,দুজন বসে যাওয়ার অভ্যাস নাই আমার,মনে হচ্ছে রাস্তায় টুপ করে কখন যেনো পড়ে যাবো ”

” পড়বে না, আমি ধরে ফেলবো ”

” এই হাত সরা, হাত পে*ছ*নে দিচ্ছিস কেন? ”

” তুমিই তো বললে পড়ে যাবে? ”

” পড়বো না,আমি রিকশার হুট ধরে আছি,তুই হাত একদম পে*ছনে রাখবি না, ”

” আচ্ছা রাখবো না,এতো রেগে কথা বলছো কেন,”

আমাদের কথা শুনে রিকশাওয়ালা মামা বারবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে।এই তাকার অর্থ হলো তার ধারনা আমরা বয়ফ্রেন্ড গালফ্রেন্ড, আমি রাগ করেছি,আর বিষন্ন আমার রাগ ভাঙ্গাচ্ছে।রিকশাওয়ালাকে ধম*ক দিয়ে বললাম

” আপনি পেছনে বারবার তাকান কেন? সামনে তাকিয়ে চালান ”

বিষন্ন এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সে চোখে আছে মুগ্ধতা,আবেগ,অনুভূতি,কৌতুহল। বাতাসে যখন চুল উড়ে মুখে পড়ছে তখন ওর হাতটা বাড়িয়ে দেয় চুল কানে গুজিয়ে দেওয়ার জন্য,কিন্তু ও দেওয়ার আগেই আমি চুল কানে গুজে দিচ্ছি।এ নিয়ে ও কিছু বলতেও পারছে না,শুধু বারবার কপাল কুঁচকে ফেলছে।আমার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে ওর এমন কর্মকান্ডে।অনেক কষ্টে ঠোঁ*ট চেপে আছি।বিষন্ন বললো

” খুব হাসি পাচ্ছে তাই না? আমার কষ্টে খুব হাসি পাচ্ছে? ”

ওর কথায় আর হাসি আটকাতে পারলাম না।হেসে হেসে বললাম

” তুই বারবার হাত এগিয়ে এনে আবার সরিয়ে নিচ্ছিস দেখে খুব হাসি পাচ্ছে ”

” আর আমার ভেতরটা কষ্টে ফে*টে যাচ্ছে, একবার শুধু চুলগুলা কানে গুজে দিবো,জাস্ট একবার,প্লিজ ”

” না ”

বিষন্ন অন্য দিকে তাকালো।এমন ভাব নিচ্ছে যেন আমি মনে করি আমার কথায় ও খুব ক*ষ্ট পেয়েছে সাথে রাগ করেছে।আমি কিছু বললাম না।মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকালাম,সবসময় মুখ গম্ভীর হয়ে রইলো।ওর গম্ভীর মুখ দেখতে ভালোলাগছে না।হঠাৎ ও বলে উঠলো

” মামা রিকশা থামাও ”

রিকশা থামাতেই বিষন্ন নেমে গেলো।কি ব্যাপার একেবারেই নেমে গেলো নাকি? নাকি আমার ওপর সত্যিই রাগ করেছে?।কিছুক্ষণপর বিষন্ন রিকশায় উঠে বসলো।হাতে কদম ফুলের গুচ্ছ।ফুলগুলা আমার কো*লে রেখে অন্যদিকে মুখ করে রিকশাওয়ালাকে যেতে বললো।

ফুলগুলোর ঘ্রাণ খুব সুন্দর। কদম ফুল আমার অনেক পছন্দের।বিষন্ন এখনো অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।গাল ফুলিয়ে বসে আছে।নাহ,ছেলেটার রাগ ভাঙ্গাতে হবে,।একটু নীচু স্বরে বললাম

” হাতে ফুল থাকায় চুলগুলা মুখের ওপর খুব ডিস্টার্ব করছে,কেউ যদি সরিয়ে দিতে চায় তাহলে দিতে পারে ”

বিষন্নের চোখ চকচক করে উঠলো।পাশ ফিরেই কি যেন ভাবলো,তারপর আবারো মুখ ঘুরিয়ে থাকলো।আমিও বুঝলাম না কারনটা ঠিক কি।ইগো হতে পারে,কয়েকবার চেয়েছি,দিই নি,তাই এবারে তার ইগোতে লেগেছে,এইটুকু ছেলের আবার ইগোও থাকে? আবারো বললাম

” ঠিক আছে,ব্যাপার না, আমি নিজেই পারবো ”

বলে চুলে হাত দিতেই বিষন্ন আমার হাত সরিয়ে ফেললো।পরম যত্নে চুলে একটু হাত বুলিয়ে কানের কাছে গুজে দিলো এখনো গাল ফুলিয়ে বসে আছে।রোদের তাপটা বেড়েছে।সূর্যের আলো চোখে ধরছে খুব।বিষন্নকে বললাম

” বিষন্ন ”

” হু ”

” রোদ লাগছে,হুটটা তুলে দাও,”

বিষন্ন হুট তুলে দিলো।হুট তুলে জায়গা আরো সংকীর্ণ হয়ে গেলো।বিষন্নর শ*রীরের সাথে আমার শ*রীর একদম লে*গে আছে।মনের ভেতর কেমন যেন একটা শিহরণ কাজ করছে।বিষন্ন বেশ কয়েকবার ইতস্তত করে আমার হাত ধ*রার চেষ্টা করলো,কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরলো না।

কলেজে নেমে রিকশাওয়ালাকে টাকা দিলো,আর বললো ” মামা সাবধানে নিয়ে যাবেন,আস্তে চালাবেন “।

বলেই বিষন্ন কলেজের দিকে যাচ্ছে।কেন জানিনা খুব ইচ্ছে করছে একবার ওকে দেখতে, এমন ইচ্ছে তো আগে হয়নি,তাহলে এখন হচ্ছে কেন? আমার মাঝে যে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারছি।শেষমেশ রিকশার হুটের আড়াল থেকে বিষন্নর দিকে তাকালাম।বিষন্ন একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে,বিষন্ন কি যেন বলছে,সেটা শুনে মেয়েটা হাসিতে মেতে উঠছে।দেখতে দেখতে চোখের আড়ালে চলে গেলো বিষন্ন।

ক্যান্টিনে বসে আছি।আমার সাথে তিশা,ঈশা আর নীলু বসে আছে।তিশা ওর বয়ফ্রেন্ডের কথা কি যেন বলছে সেটা শুনে নিলু আর ঈশা খুব হাসছে।আমার কেন জানি এসবে মন নেই,মনটা আটকে আছে সেই যায়গায়,যেখানে বিষন্ন অন্য একটা মেয়ের সাথে কথা বলছিলো।কি হচ্ছে আমার? এসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমার মন খারাপ কেন হচ্ছে? বিষন্ন অন্য মেয়ের সাথে কথা বলেছে সেটা দেখে আমার কেনো মন খারাপ হবে? কেন?। তখনি তিশা আমার হাত ঝাকিয়ে বললো

” কিরে দোস্ত কি ভাবছিস এতো? ”

” কই কিছু না ”

ঈশা বললো ” তাহলে আমরা এখানে গল্প করছি আর তুই চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছিস যে?”

” কিছু না বাদ দে, তিশা তুই না আজ দেখা করলি, তো কি হলো, ছেলে কি চলবে? ”

তিশা, ঈশা,নীলু অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইলো।আমি বুঝতে পারছি না এরা এভাবে তাকিয়ে আছে কেন।আমি পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।খুব অন্যায় প্রশ্ন করে ফেলছি নাকি?। নীলু বললো

” তার মানে এতোক্ষণ তুই আমাদের কথা কিছুই শুনিস নি? ”

তিশা বললো ” কি বিষয়ে হাসাহাসি করছি তাও শুনতে পাস নি?”

আমি বললাম” আসলে,ইয়ে মানে,না শুনিনি।কি নিয়ে বলছিলি? ”

নীলু বললো ” তোর মন কোথায় পড়ে আছে বল তো? এতো উদাসীন লাগছে কেন তোকে? ”

ঈশা বললো ” প্রেমে পড়েছিস নাকি দোস্ত? কে সেই ছেলে? ”

আমি বললাম ” আরেহ না,কি যে বলিস তোরা,আচ্ছা তিশা কি হলো বল না? ”

তিশা বললো ” লে হালুয়া,এতোক্ষণ বকবক করার পর এখন বলছিস আবার বলতে? আমি পারবো না বলতে,এই ঈশা তুই সংক্ষেপে বল ”

ঈশা বললো ” ছেলেটা হলো এক নাম্বারের লু*চ্চা।তিশাকে নিয়ে যখন রিকশায় উঠেই হুট তুলে দিয়েছে,তারপর রিকশাতেই কয়েকবার হা*ত ধ*রার চেষ্টা করেছে।তিশা তেমন কিছু বলেনি।তারপর পেছন থেকে তিশার কো*ম*ড়ে হাত রাখে,তিশা কয়েকবার বারন করে।তারপর তিশাকে একটা বাড়ির সামনে নিয়ে গিয়ে বললো ওটা নাকি ওর বন্ধুর ফ্লাট,ওখানে গিয়ে নাকি নিরিবিলি কথা বলবে দু’জনে ”

বলেই ঈশা সহ সবাই হাসতে হাসতে ব্রেঞ্চে হু*মড়ি খেয়ে পড়ছে।আমি বললাম

” তারপর কি হলো? তিশা তুই কি সত্যি সত্যি ফ্লাটে গিয়েছিস নাকি ? ”

তিশা বললো ” আরেহ না, আমি কি পাগলি নাকি? দিয়েছি ব্যা*টার কা*ন বরাবর দুইটা থা*প্প*ড়।তারপর কয়েকটা গা*লি দিয়ে চলে আসলাম।এইসব ছেলেদের মু*খে জু*তো*পে*টা করা দরকার।”

” তোরা থাক গল্প কর,আমি হোস্টেলে যাচ্ছি,ভালোলাগছে না”

নীলু বললো ” আমিও বাড়িতে যাবো,বাড়িতে কাজ আছে ”

ঈশা,তিশাও উঠলো।তারাও চলে যাবে।ক্যান্টিনের বিল দিতে গিয়ে আরেকটা ঘটনার সম্মুখীন হতে হলো।

” মামা কত হয়েছে আমাদের? ”

” টাকা দিতে হবে না আপু,জুনায়েদ ভাইয়ের গালফ্রেন্ডের কাছে টাকা নিলে মাথা তুলতে পারুম না ”

রীতিমতো আমার রাগে গা জ্ব*লে উঠলো।ধমক দিয়ে বললাম

” কিসের গালফ্রেন্ড? মুখে যা আসে তাই বলে দেন নাকি? কে না কে এসে কি বললো আর আপনি সেটা শুনে লাফাচ্ছেন? ”

বলেই ওনার দিকে পাঁচশত টাকার নোটটা ছুঁড়ে দিয়ে ওখান থেকে চলে আসলাম। আমার মতো তীশা,নীলু,ঈশাও ঘাবড়ে গেছে।নীলু বললো

” দোস্ত,বিষয়টা তো গভীরে চলে যাচ্ছে, কি করা যায়? ”

ঈশা বললো ” হ্যা কিছু একটা করা দরকার,জুনায়েদ হা*রা*ম*জা*দা তো এতে সহজে মিষ্টিকে ছাড়বে না মনে হচ্ছে ”

তিশা বললো ” তোকে নিয়ে আমার খুব ভয় হচ্ছে রে মিষ্টি,তুই না হয় এক কাজ কর, ভার্সিটিতে আর আসিস না ”

” তিশা কি বলছিস তুই? ওই ছেলের ভয়ে আমি ভার্সিটি আসা বন্ধ করবো? আর সামনে তো আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষা। ”

তিশা বললো ” তোর ভালোর জন্যই বললাম।তোকে খুব সাবধানে থাকতে হবে দোস্ত ”

” আজকে সবাই তাহলে বাসায় যা।কাল দেখা হচ্ছে। আমার ভালো লাগছে না।তিশা চল ”

তিশাকে নিয়ে হোস্টেলে গেলাম।তিশাকে বললাম বিকেল চারটায় ডেকে তুলতে।বিষন্নকে টিউশনি করাতে যেতে হবে।

চারটায় তিশা ডেকে তুললো।ফ্রেশ হয়ে বিষন্নদের বাড়িতে রওনা হলাম।বাড়িতে ঢুকতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।সারা বাড়িতে চোখ ধাঁধানো সাজ।এতো সুন্দর করে সাজানোর কারন কি? সাজানো দেখেই মনে হচ্ছে এই বাড়িতে কাল কারো বিয়ে হবে,কেননা সাজ এখনো একটু বাকি।কার বিয়ে? এই বাড়িতে তো আঙ্কেল,আন্টি,নীলু,বিষন্ন আর মামা থাকেন।মামা কবি মানুষ,বিয়ের প্রতি তার প্রচুর ঘৃণা।তিনি আর যাই করুন,কখনো বিয়ে করবেন না। তাহলে কার বিয়ে?

চলবে?

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৯
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

পুরো বাড়িতে লোকজন গিজগিজ করছে।চারিদিকে ডেকোরেশন করার লোকজন হৈচৈ করে সাজাচ্ছে।তাদের তদারকি করছেন মামা।মামার কাছে গিয়ে বললাম

” মামা কেমন আছেন ”

মামা হন্তদন্ত হয়ে বললো ” আমি অত্যাধিক ভালো আছি।মিষ্টি তুমি দেখে বলো তো এই গোলাপ ফুলের তোড়াটা এখানে রাখা কি ঠিক হয়েছে? ”

” সুন্দর’ই তো লাগছে মামা।গোলাপ হলো ভালোবাসার ফুল ”

” ভালোবাসার ফুলে কাঁ’টা থাকলে সেটা ভালোবাসার ফুল হয় কি করে? ভালোবাসার ফুল হতে হবে কা*টাবিহীন,গন্ধহীন ফুল ”

” কা’টাবিহীন বুঝলাম,কিন্তু মামা গন্ধহীন কেন? গন্ধহীন ফুল তো কেউ ভালোবাসে না ”

” এইজন্যই তো আজকাল ভালোবাসা ম*রে গেছে।আমরা ফুলকেও ভালোবাসি যোগ্যতা দেখে।নির্দিষ্ট কোনো কারন নিয়ে ভালোবাসা উচিৎ না বুঝলে মিষ্টি,”

” জি মামা বুঝলাম।আচ্ছা মামা একটা কথা বলি ”

” তারাতারি বলো,অনেক দায়িত্ব আমার ওপর,”

” বাড়িতে আজ কি? এতো সাজানো হচ্ছে কেনো? ”

” কাল আপা,আর দুলাভাই এর বিবাহ বার্ষিকি,শোনা হয়েছে? অনেক কাজ পড়ে আছে মিষ্টি,আমি পরে তোমার সাথে কথা বলবো ”

” আচ্ছা মামা ঠিক আছে ”

মামার যুক্তিতর্ক বরাবর এধরনের। অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথা বলে মাথা ঘু*রিয়ে দেন।এখন আমারো মনে হচ্ছে, সত্যিই তো,কাঁ’টাযুক্ত ফুল কেন ভালোবাসার প্রতিক হবে?।তবে মামাকেও একটু কথার প্যাচে ফেললে কেমন হয়?। মামাকে গম্ভীর স্বরে বললাম

” মামা,আপনার ওপর কি অনেক দায়িত্ব? ”

” হ্যা ”

” মামা,কবিরা কিন্তু দায়িত্ব নিতে পারে না,তারা সবকিছুতেই থাকে উদাসীন। তাদের কেনোকিছুতেই যায় আসে না,তারা চলে নিজের মতো,দুনিয়ায় অন্যদের বিষয়ে কি হচ্ছে তা নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যাথা থাকে না।তাদের মাথা ব্যাথা থাকে প্রকৃতির বিষয়গুলি নিয়ে ”

বলেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম।মামাকে খুব গম্ভীর মনে হলো।মামা কি করে সেটা দেখতে ওপর থেকে মামার দিকে চেয়ে রইলাম।মামা কি যেন ভাবলেন,তারপর হাতে থাকা ফুলের ঝুড়িটা নিচে রাখলেন।দুইহাত পেছনে রেখে গাম্ভীর্য নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন।আমার জানা মতে মামা আজকে কোনো কাজ করবেন না,তাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হ’য়েছে সেগুলোর কোনোকিছুই তিনি করবেন না।সারাদিন জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকবেন গাছের দিকে।আর কাজের ছেলেটার কাছে বারবার চা চাইবেন।

মামার কর্মকান্ডে আমার হাসি পেয়ে গেলো।হাসতে হাসতে নীলুর ঘরে গেলাম।নীলু বিছানায় শু*য়ে আছে,দরজা খোলা।আমায় দেখে একটু অবাক হয়ে বললো

” কিরে মিষ্টি তুই? এখন? তুই না বললি পড়াতে পারবি না,তোর নিজের পড়ার খুব চাপ? ”

” হ্যা,ভাবলাম বিষন্নেরও তো সামনে পরিক্ষা, এখন মিস দিলে যদি রেজাল্ট খারাপ করে ”

” তোর কথা, কাজ কিছুই বুঝিনা আমি ”

” বুঝতে হবে না,আমি নিজেও বুঝি না কখন কি করি,কেন করি। আচ্ছা আঙ্কেল আন্টির বিবাহ বার্ষিকি আমায় আগে বলিস নি কেন? ”

” আমি তো নিজেও জানতাম না,ভার্সিটি থেকে এসে দেখি মামা হুলুস্থুল কান্ড বেঁধে ফেলেছে।সেসব দেখে মা এসে আমায় বললো

” নীলু,তোর মামাকে একটু বোঝা,আমার এতো আয়োজন করে এসব বার্ষিকি টার্ষিকি পালন করতে ভালোলাগেনা।ল*জ্জায় ম*রে যাই আমি ”

” কিসের ল*জ্জা মা?এইদিন টা তো তোমার জন্য আনন্দের দিন, ল*জ্জার কি আছে? ”

” ঘরে এতো বড় বড় বা*চ্চাকা*চ্চা থাকলে ল*জ্জা করাই স্বাভাবিক, আর তোর মামা এবার কি করেছে জানিস? ব্যান্ড পার্টি নিয়ে এসেছে।আজ সারারাত নাকি ছাঁদে গান বাজনা হবে।এসবের কোনো মানে হয় বলতো? ”

” মামা চান যেন তোমাদের মন আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে থাকুন এই দিনে,তাই এসব করেছে”

” তোর কাছে বলাটাই উচিৎ হয়নি আমার ”

” তাহলে বলো না,এখন কথা বলতে ভালোলাগছে না মা,”

” তা তো লাগবেই না,সারাক্ষণ কি বই পড়িস ওইটা, ”

” এগুলা রোমান্টিক গল্প মা,পড়বে? ”

নীলু ছোট্ট নিশ্বাস ফেললো।নীলুর কথা শুনে আমার যেমন মজা লাগছে তেমনি মনের মধ্যে তীব্র কষ্ট হচ্ছে।আন্টির মতো একটা মা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যর বেপার।আমার মা থাকলে তিনিও হয়তো আমার কাছে এসে এভাবে অভিযোগ করতো।নীলু বললো

” কিরে মন খারাপ করলি নাকি? মুখ মলিন করে আছিস যে! ”

” না কিছু না।আমি যাই,”

” আচ্ছা, আর আজ কিন্তু তোর যাওয়া নেই,আজকে তুই থাকবি,রাতে গান বাজনা হবে হৈ হুল্লুড় হবে।তোকে থাকতেই হবে, না করতে পারবি না ”

” তোদের পরিবারের বিষয় এইটা, আমি কেন শুধু শুধু ”

” একথা তে পারলি তুই? ভাগ্যিস মা শুনতে পায় নি,পেলে খুব কষ্ট পেতো। মা তোকে মেয়ের মতো স্নেহ করে,ছোট থেকে তুই এই বাড়িতেই বড় হলি,আর এখন এসব বলছিস? আমিও খুব কষ্ট পাইছি! ”

” আচ্ছা সরি,আমি থাকবো,এখন যাই,”

নীলু কিছু বললো না।বই পড়তে লাগলো।এতো মনোযোগ দিয়ে নীলুকে কখনে বই পড়তে দেখিনি।কি পড়ছে এতো মনোযোগ দিয়ে? ওকে জিগ্যেস করলাম

” এতো মনোযোগ দিয়ে কি বই পড়ছিস ? ”

” রোমান্টিক গল্প,বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা ”

” কার লেখা সেটা বুঝতেই পারছি,ঈশা দিয়েছে এটা তাই না? ”

নীলু লজ্জার ভঙ্গিতে হাসলো।তার মানে ঈশাই এই বইটা দিয়েছে।ঈশার দেওয়া বইয়ে কেমন রোমান্টিকতা থাকে সেটা বলার উপেক্ষা রাখে না।

বিষন্ন সামনে ম্যাথের খাতা খুলে দই খাচ্ছে।হাত দিয়ে চু*কচু*ক শব্দ করে খাচ্ছে। ওকে দেখতে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।দই নিয়ে এসেছেন আন্টি।হাতে করে দই এনে তাড়াহুড়ো ভঙ্গিতে বললো

” মিষ্টি মা,দুই মিনিট সময় দে আমায়,পড়তে বসার আগে দই খেতে হয়,তাহলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে,বিলু দইটা খেয়ে নিক তারপর পড়া ”

আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে বললাম ” আচ্ছা ”

বিষন্নর বারবার না, না করেও লাভ হলো না।আন্টি যা বলে তাই করে।দই খাওয়া শেষে তিনি বাটিটা নিয়ে যেতে যেতে বললেন, মিষ্টি তুই দই খাবি? বগুড়ার দই,খুব মিষ্টি,এনে দিবো? ”

মিষ্টি জাতীয় খাবার আমার একদম ভালোলাগে না,গা গু*লায়।আন্টির কথা শুনেই কেমন গা গু*লাচ্ছে।আন্টিকে বললাম, না আন্টি আমি খাবো না,আমার হয়ে তুমি খেয়ে নাও,”

আন্টি রেগে রেগে বললেন, তা খাবি কেন,এই বয়সে তো পে*ট খারাপ করে ফেলছিস,ভালো জিনিস হজম করতে পারিস না,। বলেই চলে গেলেন।বিষন্ন আমার দিকে একবার তাকালো।তারপর আমরা দু’জনই হাসছি।

” বিষন্ন,এক ঘন্টা হয়ে গেছে,এই একটা ম্যাথ নিয়ে পড়ে আছিস, ব্যাপার কি? ”

” ব্যাপার কিছু না,ওসব ম্যাথ আমার ভালোলাগে না।পড়ালেখাই আমার ভালো লাগে না ”

” এটা কেমন কথা,পড়াশোনা ভালো না লাগলে কি ভালো লাগে? ”

” তোমায়,আর জানো? তোমায় আজকে অন্যরকম লাগছে,বউ বউ লাগছে,কেন লাগছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছি”

” কারন আসার সময় সাওয়ার নিয়ে এসছি,চুলগুলা এখনো ভেজা ”

” হ্যা ঠিক বলেছো,তাই তো বলি আমার বউটাকে আজ সত্যি সত্যিই বউ বউ লাগে কেন, আমি বিষয়টা ধরতেই পারছিলাম না এতোক্ষণ ”

“ফা*জ*লা*মে অনেক হয়েছে।ম্যাথটা কর,এই নিয়ে বারো বার বুঝিয়েছি,যতবার বুঝাই তুই ম্যাথ না দেখে আমার দিকে হ্যা*ব*লার মতে তাকায় থাকিস,এবার ম্যাথ করতে না পারলে আঙ্কেলকে গিয়ে বলবো ”

” তুমি বলতে পারবে না ”

” কেন পারবো না? ”

” বাবাকে বললে বাবা আমায় বকবে তাই বলবে না।,আমায় কেউ বকবে এমন কাজ তুমি কখনোই করো না,ঠিক বলেছি? ”

” এতো কথা না বলে ম্যাথ কর,আচ্ছা ম্যাথ বাদ দে,ইংরেজি বেড় কর,লাস্ট দিনের ভোকাবুলারিগুলা একবার দেখে নে ”

” পড়ার কথা বলছো কেন,এতে রোমান্টিক মুহুর্তে কেউ পড়ালেখার বিষয় টেনে আনে? ”

রাগি স্বরে বললাম ” বিষন্ন! ”

” দেখো না,বাড়িতে সবাই ব্যাস্ত,আর তুমি একা আমার রুমে।আমরা এতোটাই কাছাকাছি যে আমি চাইলেই তোমায় টা*র্চ করতে পারি,”

বিষন্ন এসব কি ভয়ঙ্কর কথাবার্তা বলছে? সেদিনের মতো কিছু করে বসবে নাকি? যদি তাই হয় তাহলে আজকেই ওর সাথে আমার শেষ দেখা হবে।আজকে আর পড়ানের ইচ্ছে করছে না।উঠে যেতেই বিষন্ন একেবারে প্রাসঙ্গ পাল্টে বললো

” কালকে বাবা,মায়ের বিবাহবার্ষিকী, জানো তো? ”

আমি যেতে ধরেও দারিয়ে বললাম ” হ্যা ”

” রাতে নাচ,গান হবে,হৈ হুল্লোড় হবে।তুমি থেকে যাও ”

” আমি থাকতে পারবো না ”

বিষন্ন আমার সামনে এসে দারালো।যতোটা সামনে দারালে একটা মেয়ের মনে অন্যরকম শিহরন জাগে ঠিক ততটা।চোখে চোখ রেখে বললো

” প্লিজ থেকে যাও না,যদি চলে যাও তাহলে খুব কষ্ট পাবো, ”

কথাটা বলেই বিষন্ন রুম থেকে চলে গেলো।আমি হতভম্ব হয়ে দারিয়ে রইলাম।এতো মায়াবী স্বরে কেউ যদি থেকে যেতে বলে তাহলে হয়তো মৃ*ত্যু*কে*ও পরোয়া করে বেঁচে থাকা যাবে।আর যদি সেই বলার মানুষটা বিষন্নের মতো একটা অদ্ভুত ছেলে বলে!

রাত বাজে আটটা।বিষন্নদের বাড়িতে লোকে থৈথৈ করছে।বাচ্চা মেয়েরা ছোটাছুটি করছে,কয়েকটা বয়স্ক মহিলা একসাথে বসে পান চিবোতে চিবোতে গল্প করছে,আন্টিকে পার্লারে সাজাতে নিয়ে গেছে নীলু।বাড়িতে অনেক আত্মীয়স্বজন।আমার রীতিমতো অস্বস্তি হতে লাগলো।কাউকেউ ঠিক মতো চিনিনা।মামাকেও দেখতে পাচ্ছি না, মামা থাকলে তাও গল্প করে সময় পার করা যেতো।রাতে ছাঁদে যেতেও ভয় করছে।লক্ষ্য করছি বয়ষ্ক মহিলারা আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কি যেন বলছে।আমার দারুন অস্বস্তি হলো।বাধ্য হয়ে ছাঁদে গেলাম।

ছাঁদের এক কোনে একটা ছায়া দারিয়ে আছে।চাঁদের আলো তাকে স্পষ্ট করতে পারছে না।আবছা আলোয় বোঝা যাচ্ছে না।আমি একটু এগিয়ে গেলাম,।এগুতেই দেখলাম ছায়াটা আরো যেনো গভীর হচ্ছে।আমার বুকেট ভেতরটা ছ্যাত করে উঠলো।তারপর হঠাৎ আ*গুনের একটা ফুলকি দেখা গেলো।আ*গুনের আলোয় বিষন্নের মুখ স্পষ্ট বেঝা যাচ্ছে।রাতে বিষন্ন ছাঁদের কোনে একা একা কি করছে? একটু অপেক্ষা করতেই দেখলাম সেখান থেকে ধোঁয়া উড়ছে।বুঝতে বাকি রইলো না বিষন্ন সিগারেট খাচ্ছে।

ভিষন রাগ লাগছে।বিষন্ন কেনো সিগারেট খাবে? ওমন সুন্দর পাতলা পাতলা লাল ঠোঁ*ট পুড়িয়ে কালো করে ফেলবে কেন?।কাছে গিয়ে বিষন্নর মুখ থেকে সিগারেটটা কেড়ে নিলাম।বিষন্ন ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো

” তু..তুমি ”

” লুকিয়ে লুকিয়ে সি’গারেট খাচ্ছিলি তাই না? দারা আঙ্কেলকে বলে দিচ্ছি ”

বিষন্ন আমার হাত ধরে বললো ” এই না না,প্লিজ এসব করো না, জানতে পারলে আমি শেষ,আস্তো রাখবে না ”

” তা এসব বদ অভ্যাস কবে থেকে ধরলি তুই? কার সাথে মিশছিস আজকাল বুঝাই যাচ্ছে ”

” আসলে আমি খাচ্ছিলাম না,ধোঁয়া মুখে নিয়ে ছাড়তে খুব ভালোলাগে তাই ”

” এমন ভালো-লাগার দরকার নাই।সিগারেট খাওয়া ছেলে আমার পছন্দ না। লাল ঠোঁ*ট গুলার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছিস ”

কথাটা বলে নিজেই নিজের কাছে লজ্জা পেলাম।ইসসস! এই কথা কেন বললাম? এখন যদি বিষন্ন অন্য কিছু মনে করে।বিষন্ন আরেকটু কাছে আসলো,আমার কো*ম*ড়ে হাত রেখে বললো

” এই লাল ঠোঁ*ট গুলার ভালো থাকার দায়িত্ব নাহয় তুমিই নাও,নিবা? ”

বিষন্নকে সরিয়ে দিয়ে নিচে নামলাম।বু*ক কেমন ধুকপুক করছে।মনে হচ্ছে এখনি ফে*টে যাবে।নিচে নামতেই দেখলাম নীলু আন্টিকে সাজিয়ে নিয়ে এসছে।নীলুর সাথে তিশা আর ঈশাও দারিয়ে।ওরা কখন এলো?।আন্টি ল’জ্জায় নিজের রুমে চলে গেলেন।নীলু,তিশা আর ঈশা হাসতে হাসতে আমার কাছে এসে দারালো।ঈশা গম্ভীর স্বরে বললো

” সবাই শোন,একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলবো ”

তিশা,নীলু কাছে দারালো।ঈশার কোনো কথা শুনার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।তবুও ভদ্রতার খাতিরে আমিও তাকালাম।ঈশা বললো

” আজকে তো আমরা এক ঘরেই থাকবো তাই না? ”

নীলু বললো ” অবশ্যই,চার বান্ধবী একসাথে থাকবো।অনেক মজা হবে ”

ঈশা ওর ব্যাগ থেকে একটা পেনড্রাইভ বেড় করলো।ধূর্ত হাসি দিয়ে বললো

” আজকে আমরা মুভি দেখবো ”

তিশা বললো ” এটায় আর গুরুত্বপূর্ণ কি এমন ?”

ঈশা ঊমক দিয়ে বললো ” তুই সবসময় বেশি কথা বলিস তিশা,আগে কথা শোন ”

নীলু উৎসুক হয়ে বললো ” তিশা তুই চুপ থাক।ঈশা বল ”

ঈশা বললো ” এইখানের মুভি হলো অন্যরকম মুভি ”

নীলু বললো ” কেমন? ভূতের? আমি ম*রে গেলেও ভূ*তের মুভি দেখবো না ”

ঈয়া বললো ” আরে ভূতের না, অন্য ধরনের ”

বলেই ঈশা, নীলু আর তিশার দিকে তাকালো।মুহুর্তেই তারা অট্টাহাসিতে মেতে উঠলো।তাদের হাসি দেখে মনে হলো তারা বুঝতে পেরেছে ঈশা ঠিক কিরকম মুভির কথা বলছে।এটাও বোঝা যাচ্ছে যে ওরাও সেই মুভি দেখতে খুব আগ্রহী।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here