তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই #পার্টঃ১০,১১

0
311

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১০,১১
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
১০

সারা বাড়িতে খুজেও মিষ্টিকে দেখতে না পেয়ে নীলু আপুর ঘরের কাছে গেলাম।দরজার পাশে দারাতেই কিছু মেয়ের হাসাহাসি কানে ভেসে এলো।নীলু আপুর ঘরে কারা এতো হাসাহাসি করছে? ওর বান্ধবীরা এসেছে নাকি? এই মুহূর্তে কি ওর ঘরে যাওয়া ঠিক হবে? বান্ধবীরা মিলে মজা করছে,সেখানে যাওয়া ঠিক হবে না।কিন্তু মিষ্টিকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে হবে।পরে বললেও হবে কিন্তু এখন না বললে রা গ টা কিছুতেই সামলাতে পারছি না।

দরজায় দারিয়ে এসব ভাবতেই কেউ একজন হা ত ধরে টে নে নীলু আপুর ঘরে নিয়ে গেলো।আচমকা এভাবে এতোগুলা মেয়ের সামনে উপস্থিত হয়ে খুব নার্ভাস লাগছে।যে ঘরে টে নে নিয়ে এসেছে সে ঈশা আপু।ঈশা আপুকে আমি একটু এড়িয়ে চলি,ওনি একটু বেশিই ফ্রী ভাবে মিশতে চায়, কিন্তু সেভাবে মেশা আমার কাছে খুব বিরক্তিকর সাথে অসহ্যও লাগে।ঘরে এনেই ঈশা আপু বললো

” কি বিষন্ন বাবু,দরজার ওপাশে দারিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছিলে? ”

অস্বস্তিতে বললাম ” আসলে তেমন কিছু না,আমি পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তা….”

আমায় থামিয়ে দিয়ে ঈশা আপু বললো ” তুমি জানোনা? যখন কয়েকটা মেয়ে একসাথে থাকে তখন উল্টোপাল্টা সব বিষয় নিয়ে হাসিঠাট্টা করে,”

আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে সেই উল্টোপাল্টা বিষয় কি?কি নিয়ে তারা আলোচনা করে যে সবাই হাসিতে মেতে থাকে?। ঈশা আপুকে থামিয়ে দিয়ে তিশা বললো ” ঈশা,কি শুরু করলি তুই বলতো? কেনো এভাবে ওকে ল জ্জা দিচ্ছিস? দেখছিস না বেচারা ল জ্জায় লাল হয়ে গেছে ”

ঈশা আপু বললো ” তাতে কি হ’য়েছে? মেয়েদের কথা শুনবে কেন? আমি এতক্ষন যেসব নিয়ে বলছিলাম সেটা এই পিচ্চিটা শুনে ফেলেছে,এখন আমার যে কি ল জ্জা লাগছে সেটা তুই কি বুঝবি? ”

তিশা আপু আর কিছু বললো না।আমি বুঝতে পারলাম না ঈশা আপু কি এমন বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো,যেটা আমি শুনলে ঈশা আপু ল জ্জা য় পড়ে যাবে?।আমি বিনীত স্বরে বললাম

” ঈশা আপু সত্যিই আমি তোমার কোনো কথা শুনিনি,বিশ্বাস করো,আমি মিথ্যা বলছি না ”

” আচ্ছা ঠিক আছে বিশ্বাস করলাম।এখন বলো কেনো দারিয়ে ছিলে,”

মিষ্টিকে খুজতে এখানে চলে এসছি,এই কথাটা কি বলবো? ঈশা আপু যেরকম মজা করে, যদি এটা বলি তাহলে এটা নিয়ে তোলপাড় শুরু করে দিবে।নাহ এটা বলা যাবে না।আশেপাশে নীলুপুকেও দেখতে পাচ্ছি না।বেশ স্বাভাবিক হয়ে বললাম

” নীলুপুকে খুঁজতে এসেছিলাম ”

” আর কাউকে খুজতে আসোনি?আমি কি খোঁজার মতো মেয়ে না? ”

তিশা আপু একটু ধ ম কের স্বরে বললো ” ঈশা, তুই সবসময় মজা করিস এটা কিন্তু ঠিক না,বিষন্ন তুমি ছাঁদে দেখো ওখানে হয়তো নীলু থাকতে পারে,”

তিশাপুর কথা শুনে ঈশাপু একটু রে গে গেলো মনে হলো।তারমানে এখানেও মিষ্টি নেই,কোথায় তাহলে মিষ্টি?। আচ্ছা মিষ্টি কি চলে গেছে? আমার কথা এড়িয়ে চলে গেলো? আচ্ছা মিষ্টির কি আমার ওপর বিন্দু মাত্র ফিলিংস ও কাজ করে না? এসব ভাবে সাইডে তাকাতেই দেখলাম ওয়াসরুমে থেকে মিষ্টি চুল মুছতে মুছতে বেড় হচ্ছে। মিষ্টিকে দেখে আমি পাথরের মতো দারিয়ে আছি।মিষ্টি মাথার ওপর তোয়ালে দিয়ে চুল মুচছে,সামনে যে আমি সেটা ও দেখতেই পাচ্ছে না।মিষ্টির পরনে কটকটে লাল একটা টি-শার্ট,আর জিন্স এর একটা মিনি প্যান্ট।সেই লাল টি-শার্ট জলে ভিজে বু*কে*র সাথে চি প কে আছে।

চুল থেকে তোয়ালে সরাতেই আমায় দেখে মিষ্টি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।আমিও একপলকে তাকিয়েই আছি।ওর থেকে চোখ কিছুতেই সরাতে পারছি না।মিষ্টি মুহূর্তেই তোয়ালে দিয়ে নিজের শ রী র পেঁ চিয়ে বিপরীতে ঘুরে দারালো।আমিও লজ্জায় ওখান থেকে ছুটে পালিয়ে আসলাম।ঈশা আপুর হাসি কানে পড়লো।

নীলু ছাঁদ থেকে আচারের বয়াম নিয়ে দোতলায় নামতেই দেখলো বিষন্ন নিচ থেকে দৌড়ে ওর ঘরে ঢুকে ঠা স করে দরজা লাগিয়ে দিলো।নীলু একটু অবাক হয়ে তাকালো।মনে মনে ভাবলো , ” এর আবার হলো কি? এভাবে দৌড়ে এসে এতো জোড়ে দরজা বন্ধ করলো কেন? গিয়ে দেখবো? না থাক,”। এর পর আচারের বয়ামটা কিচেনে রেখে নীলু নিজের রুমে যেতেই দেখলো ঈশা খুব হাসছে।মিষ্টি গম্ভীর মুখে দারিয়ে আছে,তিশাও থমথমে মুখ নিয়ে বিছানায় বসে আছে।নীলু সোফায় বসতে বসতে বললো

” কিরে ঈশা, কি হলো? হাসছিস কেন?,”

ঈশা বললো ” দোস্ত তোর ভাই,”
বলেই আবারো হাসতে লাগলো।নীলু একটু ইতস্তত করে বললো

” বিষন্ন? কি করেছে বিষন্ন ? ”

ঈশা বললো ” তোর ভাই একটু আগে মিষ্টির ভে জা শ রী র দেখেছে ”

কথা শেষ হতেই তিশা ধ ম ক দিয়ে বললো ” ঈশা এইবার কিন্তু তুই অতিরিক্ত করছিস,বিষন্ন ইচ্ছে করে এমন করেনি,হঠাৎ চোখ পড়েছে, আর মিষ্টির’ও দোষ আছে,তুই বেড় হয়ে দেখবি তো আশেপাশে কে আছে ”

মিষ্টি হতভম্ব হয়ে বললো ” আরে আমি কিভাবে দেখবো,তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে তো আমার মুখ ঢাকা পড়েছিলো,আমি ইচ্ছে করে তো আর করিনি ”

নীলু কি বলবে বুঝতে পারলো না।তবুও ইতস্তত করে বললো ” বাদ দে দোস্ত, এটা ভুলবসত হয়ে গেছে, বাদ দে,”

______________

ছাঁদের চারপাশটা মরিচবাতিতে চকচক করছে।সেখানে বড়সড় হয়ে সবাই বসে আছে।মিষ্টি আর নীলুপু একসাথে বসে আছে।এখানে আসার পর থেকে মিষ্টির থেকে চোখ সরাতে পারছি না।এই মেয়েটা কি আমায় বাঁ চ তে দেবে না? কি দরকার ছিলো সাদা ব্লাউজ, কালো শাড়ি পড়ার? আবার চোখে কাজলও দিয়েছে,কানে কি ফুল দিয়েছে ওইটা? ঠিক বুঝতে পারছি না,পরে একসময় জেনে নিতে হবে,হাত ভর্তি কালো চুড়ি।চুড়ির টুংটাং শব্দ হচ্ছে।নীলুপুও একই ভাবে সেজেছে।ওকেও সুন্দর লাগছে।কয়েকবার মিষ্টির সাথে চোখাচোখি হলো,মিষ্টি প্রত্যকবারই লজ্জায় মুচকি হেসে অন্য দিকে তাকিয়েছে।ওকে দেখে নিজেকেও কেমন অচেনা লাগছে,কিছুতেই নিজেকে আঁটকে রাখতে পারছি না।

বিষন্নের বাবা রে গে উঠে দারালেন।কড়া গলায় বললেন

” ওই গা*ধা*টা কোথায়? গান বাজনা হবে বলে এখন নিজেই উধাও,কই ব্যান্ড পার্টির লোকজন কোথায়? ”

মিষ্টি আমতা আমতা করে বললো ” আ..আঙ্কেল, কোনো ব্যান্ডপার্টি আসবে না ”

তিনি ভ্রু কুঁচকে বললেন ” আসবে না মানে? আঠারো হাজার টাকা দিয়েছে ওদের,আসবে না কেনো?।আর ছাদে তো প্যান্ডেল করার কথা, শুধু কয়েকটা মরিচবাতি জ্বলছে, কোনো সাজসজ্জা নেই,গা*ধা*টা কোথায়? বিষন্ন, তোমার মামাকে ডেকে আনো যাও,এক্ষুনি, বলো আমি ডেকেছি ”

_________

মামাকে ডাকার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামতেই ঈশা আপুর সাথে মুখোমুখি হলাম।ঈশা আপুও শাড়ি পড়েছে।মনে হচ্ছে চার বান্ধবী মিলে ঠিক করেছে শাড়ি পড়বে।মেয়েরা এক জোট হয়ে সাজে,কোনো অনুষ্ঠান হলে সবাই মিলে সেইম ড্রেসআপ করবে।ঈশা আপু বললো

ল” কোথায় যাচ্ছো হ্যান্ডসাম ”

” মামাকে ডাকতে যাচ্ছি আপু,”

” কি সবসময় আপু আপু করো হ্যা? নাম ধরে ডাকবে, ঈশা বলবে,মনে থাকবে? ”

” কিন্তু আপু ”

” আবার? বললাম না নাম ধরে ডাকবে? বলো ঈশা,না বললে যেতে দিবো না ”

ঈশা আপুকে কেমন যেন লাগছে।কথা না বাড়িয়ে বললাম

” ঈশা তুমি ছাদে যাও,ছাঁদে সবাই আছে,”

” উফফফ তোমার মুখে ঈশা নামটা শুনে বু*ক*টা কেমন কেঁ*পে উঠলো।বিশ্বাস না হলে আমার বু কে হাত দিয়ে দেখো!”

ঈশা আপু কি বলছে এসব? এমন ভয়ঙ্কর কথা নিঃসংকোচে বলে ছাঁদে চলে গেলো।বিষয়টা এড়িয়ে মামার ঘরে গিয়ে কয়েকবার ডাকতেই দরজা খুলে মামা বেড় হলো।মামাকে বললাম, ” মামা তোমার ডাকছে ছাঁদে, চলো”।মামা গম্ভীর হয়ে বললেন ” তুই যা,আমি আসছি ”

ছাঁদে সবাই গোল হয়ে বসে আছি।কাজিনরাও সবাই উপস্থিত। মামা ছাঁদে এলেন।তার মুখ ভার।তাকে দেখে বাবা বললেন

” তুমি নাকি ব্যান্ডপার্টি আনো? টাকা নিলে এখনো নাই যে? ”

মামা সহজ ভঙ্গিতে বললো ” আমি ওদের কিছু জানাইনি দুলাভাই,এজন্য আসেনি ”

বাবা ধ ম ক দিয়ে বললেন ” কেন জানাওনি? একটা দায়িত্বও কি তুমি ঠিক ভাবে পালন করতে পারো না ? ”

” দুলাভাই আমি একজন কবি,কবিদের সাথে এভাবে রুঢ় আচরণ করবেন না দুলাভাই।এতে মনে কষ্ট পাই ”

” তুমি কবি? ”

” হ্যা কবি।এবারের বই মেলায় আমি যে বেস্ট সেলার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি এটা আপনার অজানা নয় দুলাভাই ”

” তা এর সাথে ব্যান্ডপার্টির না আসার কারন কি? ”

” কবিদের কোনো দায়িত্ব থাকে না দুলাভাই, তারা থাকে উদাসীন,তারা থাকে মনভুলো।আমিও তার বেতিক্রম নই। আপনি ঢ়ে দায়িত্ব দিয়েছেন সেই দায়িত্বে উদাসীন ছিলাম।কবিরা উদাসীন থাকে সবসময় ”

বাবা রা গ সামলে বসলেন।মা তাকে কি যেন বলে শান্তনা দিচ্ছে। আমি বললাম

” আচ্ছা বাবা ব্যান্ডপার্টি নেই তাতে কি? আমার গিটারটা নিয়ে আসি,গিটার প্লে করে গান গাওয়ার তুলনা নেই ”

কথাটা শুনে বাবার মুখ হাসিহাসি হয়ে উঠলো।বাবাও হয়তো চেয়েছিলেন বিবাহবার্ষিকীর আগের রাতটায় সবাই মিলে আনন্দ করতে,হাসি মজায় মেতে উঠতে।

রাত বাজে দুইটা।বাবা,মা, নীলুপু সবাই গান গেয়েছে।মিষ্টিকে হাজারবার বলার পরেও গান গায়নি,তার নাকি গলা ভালো না।অথচ এখানে সবার থেকে মিষ্টির গানের গলা সুন্দর।এই মেয়েটার সবকিছুই কেন জানি সুন্দর।বাবা বললেন অনেক রাত হয়েছে,কাল আবার আসর বসবে,সবাই ঘুমোতে যাও। সবাই একে একে নিচে নেমে গেলো।আমি গিটারটা ব্যাগে রাখতে গিয়ে দেরি হলো।দেখলাম সবাই গেলেও একজন থেকে গেলো।সেটা ঈশা আপু।ঈশা আপুকে দারাতে দেখে আমি আরো ধীরে গিটারটা ব্যাগে রাখছি,যেন ঈশা আপু নেমে যায়।কিন্তু সেটা হলো না।বরং ঈশা আপু আমার পাশে বসলো।ছাঁদে এখন কেউ নেই।

গিটার ব্যাগে রেখে উঠে দারাতেই ঈশা আপু তার দুইহাত আমার গলায় জরিয়ে ধরে দারালো।আমি সরাতে গেলে আরো শক্ত করে ধরে বললো

” তুমি তো খুব সুন্দর গিটার বাজাতে পারো বিষন্ন,আমাকেও একটু শিখিয়ে দিবে? ”

” আচ্ছা দিবো,আপু তুমি আমার গ লা ছাড়ো,”

” ছাড়বো তো একটু কাছে পেয়ে নিই আগে,তারপর নাহয়”

কথা শেষ না হতেই কাচ ভাঙ্গার শব্দ হলো।সামনে তাকাতেই দেখলাম মিষ্টি দারিয়ে আছে।ওর হাতে পিরিচ,কাপটা নিচে ভেঙ্গে পড়ে আছে।মিষ্টির চোখ টলমল করছে।ঈশা আপু আমার ঘা ড় থেকে দুহাত সরিয়ে নেমে গেলো।আমি হতভম্ব হয়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলাম।মিষ্টি চোখের জল মুছে দৌড়ে নিচে নামলো।দুবার ডাকলাম,কিন্তু মিষ্টি শুনলো না।বুঝতে পারলাম এইটুকুতেই অনেককিছু হয়ে গেছে।মিষ্টি এখন আমায় খারাপ চরিত্রের ছেলে ভাবছে।

চলবে?

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১১
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

মিষ্টির চোখ টলমল করছে।ঈশাপু আমার ঘা ড় থেকে দুহাত সরিয়ে নেমে গেলো।আমি হতভম্ব হয়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলাম।মিষ্টি চোখের জল মুছে দৌড়ে নিচে নামলো।দুবার ডাকলাম,কিন্তু মিষ্টি শুনলো না।বুঝতে পারলাম এইটুকুতেই অনেককিছু হয়ে গেছে।মিষ্টি এখন আমায় খারাপ চরিত্রের ছেলে ভাবছে।

________________

” কিরে মিষ্টি এভাবে দৌঁড়ে কোথায় যাচ্ছিস? আর একটু হলেই তো দু’জনে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতাম ”

নীলুর কথার কোনো উত্তর না দিয়েই নীলুুর ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করলাম।বারবার চোখের সামনে পই দৃশ্যটা ভেসে আসছে কেন? কেন আমার এতো কষ্ট হচ্ছে? এই কষ্টের কারনটা কি?

চোখের সামনে সবকিছু কেমন যেন ঘোলা হয়ে আসছে।দরজার নিচেই বসে রইলাম।চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে।কিছুতেই কেন জানি কান্না আটকাতে পারছি না।বু কের ভেতরটা কেমন যেন ফাঁ কা হয়ে যাচ্ছে,দম বন্ধ লাগছে।মনে হচ্ছে এখন আমার কাছে বাঁ চা ম রা দুটোই সমান।তবে কি বিষন্ন এতোদিন যে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগল করে দিচ্ছিলো সেইসব মিথ্যে নাটক ছিলো?।

হাতের পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছলাম।আয়নার সামনে দারালাম।নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম ” আমি কেন কান্না করছি? আমি তো বিষন্নকে ভালোবাসি না,ওর যাকে ইচ্ছে তার সাথে ছাঁদে একান্ত সময় কাটাতেই পারে,তা দেখে আমি মন খারাপ কেন করবো? বিষন্ন আমার কি হয়? কিচ্ছু না।মিষ্টি তুই নিজেকে সামলা “।

হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো।কেউ একজন বলে উঠলো

” কে রে ঘরে ঢুকেছে রে,এই দরজা খোল ”

দরজা খুলতেই দুইজন বুড়ি ঢুকলো।তাদের হাতে একটা প্লেটে পান সাজিয়ে রাখা।ওদের থেকে একজন বললো

” ওই মাইয়া,তুই কেডা? তোরে তো চিনবার পাইতাছি না ”

” দাদি আমি মিষ্টি,নীলুর বান্ধবী, আপনারা ভালো আছেন? ”

” অহন কতা কমুনা,ঘুম আইতাছে,এই বয়সে ছাঁদে উইঠা নাচ গান শুনতে হইলো,কি যুগ আইলো রে বাপ।সোয়ামি বউ দু’জন একসাথে গান কইলো,কি বেসরম, ছিঃ।ওই ছেমড়ি সর এইহান থাইকা,এইহানে কাউরে আসতে দিবি না ”

” আচ্ছা দাদি আপনি ঘুমান ”

দুই বুড়ি বিছানায় উঠে বসলো।বসার সাথে সাথে গায়ের সব কাপড় খুলতে লাগলো।এখানে আর থাকা যাবে না,দ্রুত ঘর থেকে বেড় হয়ে দরজা বন্ধ করতেই নীলু আসলো।নীলু ভ্রু কুচকে বললো

” কিরে দরজা বন্ধ করছিস কেন? ”

” ভেতরে দুই বুড়ি গেছে,ওরা নাকি এই ঘরেই থাকবে ”

” থাকবে মানে কি? আমার ঘরে আমি ওই দুই বুড়িরে রাখবো না,”

বলেই নীলু দরজা খুলতেই দুই বুড়ির মধ্যে থেকে একজন বললো ” মর হা রাম জাদি,দরজা কেন খুলচোস,”

নীলু ঠাস করে দরজা বন্ধ করলো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো

” আজকে এদের আর বেড় করা সম্ভব না,এই বুড়ি দুইটা যে কেন আসে এই বাড়িতে,এদের দেখলেই রাগে গা জ্বলে যায় ”

” এনারা তোর কে হন? ”

” আমার দাদিমা,আর আরেকজন হলো তার বোন।দাদিমার মাথা খারাপ সবসময় আবোল তাবোল প্যাচাল পারে।”

” ও আচ্ছা ”

” এখন কোথায় থাকবো আমরা? অন্য ঘর গুলিও তো খালি নেই,আত্মীয়স্বজন দিয়ে প্রতিটা ঘর বন্ধ হয়ে গেছে।”

” কি বলিস? এখন উপায়? ”

নীলু চিন্তিত ভঙ্গিতে কি যেন ভাবতে লাগলো।আমি নীলুর দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছি।হঠাৎ চোখ পড়লো সামনের রেলিঙের দিকে।বিষন্ন হাতে একটা বালিশ নিয়ে দারিয়ে আছে।নীলু বিষন্নকে দেখতে পেয়ে বললো

” কিরে বিলু,তুই বালিশ নিয়ে দারিয়ে আছিস কেন? ”

বিষন্ন গম্ভীর হয়ে বললো ” আমার ঘরে আন্ডা বাচ্চা দিয়ে ভর্তি।পুরো ঘর এলোমেলো করে ফেলেছে ”

” আর বলিস না,তোর ঘরে আন্ডা বাচ্চা আর আমার ঘরে দাদিমা আর ওনার বোন।বাড়িতে কেউ আসলে আমাদেরই আর থাকার যায়গা থাকে না ”

তখনি আন্টি নিচ তলা থেকে উঠে এসে নীলু,বিষন্ন আর আমায় দেখে বললো

” কিরে তোরা ঘুমাবি না? কতো রাত হয়েছে,”

নীলু রে গে রে গে বললো ” আমার ঘরে দাদি, আর ভাইয়ের ঘরে বাচ্চারা,আমরা থাকবো কোথায়?”

আন্টি বললো ” মেঝেতে একটু কষ্ট করে থাক রে মা,একটা রাতের ব্যাপার তো ”

নীলু বিরক্তির স্বরে বললো ” আমি ওখানে থাকতে পারবো না।দাদি সব কা পড় খু লে ঘুমায়,”

বিষন্ন বললো ” মা তুমি যাও ঘুমাও,আমি ব্যাবস্থা করছি ”

আন্টি সস্তির নিশ্বাস ফেলে নিজের ঘরে চলে গেলেন।নিচ থেকে তিশা আর ঈশাও উঠে এলো।ঈশা বললো

” আরে তোরা সবাই এখানে,কি নিয়ে কথা হচ্ছে? ”

নীলু বললো ” ঘুমানোর যায়গা নেই,সব ব্লোক ”

ঈশা একটু নাক ছিঁচকে বললো ” কি বললি? আমি কিন্তু রাতে না ঘুমিয়ে থাকতে পারিনা,”

তিশা বললো ” ছাঁদে গিয়ে ঘুমা তাহলে ”

বিষন্ন ফোন বেড় করে সময় দেখে বললো ” এখন বাজে রাত তিনটা,আর কিছুক্ষণ পরেই তো সকাল হবে।চলো আমরা সবাই মিলে ছাঁদে আড্ডা দিবো,”

ঈশা বিষন্নের কাছে গিয়ে পর গান টে নে বললো ” একদম ঠিক বলেছো বিষন্ন, চলো আমরা গানের কলি খেলবো ”

বলেই বিষন্নের হাত ধরে টে নে ছাঁদে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে রাগে আমার র ক্ত টগবগ করছে।ইচ্ছে করছে ঈশার গা লে ইচ্ছে মতো চ ড় বসিয়ে দিই।বিষন্ন একবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।এই হাসির অর্থ কি বুঝতে পারলাম না।

ছাঁদে পাঁচটা চেয়ার গোল করে বসানো।আমার একদিকে নীলু,আরেকদিকে তিশা।তিশার সাথেই ঈশা বসেছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে একটু আগেই সেজেছে। ঠোঁ টে গাঢ় লি পস্টিক দিয়েছে।বিষন্ন নিচে গেছে গিটার আনতে।একটু পর গিটার নিয়ে আসতেই ঈশা বিষন্নের হাত ধরে টেনে ওর পাশের চেয়ারটায় বসালো।ঈশার এমন কর্মকান্ডে বিষন্নকে তেমন অবাক হচ্ছে না।বিষন্ন বসে আমার দিকে তাকালো।আমি তাকালাম অন্যদিকে।

বিষন্ন গিটার প্লে করে গান গাইলো,

তুমি বললে আজ দু’জনে
নীল রঙা বৃষ্টিতে ভিজবো
রোদেলা দুপুরে একসাথে
নতুন সুরে গান গাইবো
শেষ বিকেলের ছায়ায় নীল
আকাশের বুকে আমি
লাল রঙা স্বপ্ন আঁকবো।

এইটুকু শুনেই আমি উঠে দারালাম।কেন জানি খুব রাগ হচ্ছে। রাগ হওয়ার দুটি কারন আছে।প্রথম কারন হলো ঈশা বিষন্নের কাধে দুই হাত রেখেছে,আর দ্বিতীয়ত হলো বিষন্ন এইটুকু গান গাওয়ার পুরো সময়টা ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলো।প্রথমটা মেনে নিলেও দ্বিতীয় কারনটা কিছুতেই এক্সেপ্ট করে নিতে পারলাম না।উঠে দারাতেই নীলু বললো

” কিরে কি হলো? ”

” তোরাই শোন, এই বাদরের মতো স্বরের গান আমার শোনার ইচ্ছে নেই ”

বলেই ছাদের কোনে এসে দারালাম।বিষন্ন একবারও আমার দিকে তাকালো না।এমন দূরত্বে দারালাম যেন বিষন্নের গান শোনা যায়।বিষন্ন গান গাইছে।এতো সুন্দর করে কিভাবে গায় ও? যেকোনো মেয়ে এতো সুন্দর কন্ঠের টানা টানা সুরে গান শুনলে বিষন্নের প্রেমে হাবুডুবু খাবে।পাশের টবে রাখা গোলাপ ফুলটায় হাত বুলাচ্ছি আর বিষন্নের গান শুনছি।গান শেষ।সবাই হাত তালি দিলো।ওদের আড্ডার দিকে তাকাতেই দেখলাম ঈশা বিষন্নকে জ রিয়ে ধরলো।এবার আর কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারলাম না।কাছে গিয়ে ঈশার গালে ঠা স করে একটা চ ড় বসিয়ে দিলাম।নীলু, তিশা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বিষন্নের মুখে ধূর্ত হাসি।ইচ্ছে করছে এই বাদরটার গা লেও একটা চ ড় বসিয়ে দিই।

ছাঁদ থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামছি।এই বাড়িতে আর এক মূহুর্ত নয়।বিষন্নের পাশে কোনো মেয়েকেই আমি সহ্য করতে পারবো না।ওদের বাড়ি থেকে বেড় হয়ে রাস্তায় হাঁটতে লাগলাম।বার বার মনে একটা কথা ভসে উঠছে ” বিষন্নর সাথে ঈশার কি কোনো সম্পর্ক তৈরী হয়েছে ? যদি না’ই থাকে তাহলে ঈশার এমন আচরনে বিষন্ন কেনো কিছু বলছে না? আর যদি কিছু থেকেও থাকে,তাহলে আমি কি পারবে সেটা মেনে নিতে?

বিষন্ন আমার পেছন পেছন আসবে সেটা আমি জানি।আমায় যেন খুজে না পায় তাই হোস্টেল যাওয়ার বিপরীত রাস্তায় হাটা ধরলাম।হঠাৎ মনে হলো কেউ যেনো আমায় ফলো করছে।কয়েকবার পেছন ফিরলাম,কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না।আবারো হাঁটছি, তখনি কয়েকটা ছায়া আমার সামনে এসে পড়লো।পেছন ফিরতেই দেখি পাঁচ,ছয় জন দারিয়ে আছে।তাদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে ম দের বো তল।তারা এক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে।আমি আবারো হাটছি,আমার পেছন পেছন ওরাও হাটতে শুরু করলো।ভয়ে আমার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে।জোড়ে দৌড় দিবো তখনি ওদের মধ্যে থেকে কেউ একজন আমার ও ড়না টে নে ধরলো।গ লায় ও ড়না চাপ পড়ে রাস্তায় তাল সামলাতে না পেরে রাস্তায় প ড়ে গেলাম।ওরা গোল হয়ে আমার সামনে দারিয়ে আছে।ওদের মধ্যে থেকে দু’জন নিজের শা র্ট খু লতে লাগলো….

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here