তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই #পার্টঃ১২,১৩

0
321

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১২,১৩
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
১২

মিষ্টি যে আমায় একটু একটু করে ভালোবাসতে শুরু করেছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি।এটা যে এতো তারাতাড়ি বুঝতে পারবো সেটা কখনো ভাবতেই পারিনি।ঈশার কারনে মিষ্টির চেপে রাখা ভালোবাসা আজ বুঝতে পারলাম।মিষ্টি,আজ তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা বের করিয়েই ছারবো।

গিটারটা রেখে নিচে আসলাম।কিন্তু মিষ্টিকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।সামনে তাকাতেই দেখলাম সদর দরজা খোলা।মানে কি? মিষ্টি কি কোথাও চলে গেছে নাকি? এতো রাতে একা বেড় হয়ে গেলো,?

রাস্তায় বেড় হলাম,কিন্তু মিষ্টিকে দেখতে পাচ্ছি না।রাস্তার দুইদিক জন মানব শূন্য। মিষ্টি যদি যায় তাহলে তো হোস্টেলের দিকেই যাবে।বাইক স্টার্ট দিলাম।রওনা হলাম মিষ্টির হোস্টেলের দিকের রাস্তাটায়।বেশ কিছুদূর যেতেই মনে মনে একটা আশঙ্কা হলো,মিষ্টি তো এতো তারাতাড়ি এতদূর কখনোই আসতে পারবে না,দৌড়ে আসলেও তো এতো কম সময়ে এতদূর রাস্তা আসা সম্ভব না। তাহলে কোথায় মিষ্টি? ও কি কেনো খারাপ ছেলের পাল্লায় পড়েছে? এসব ভাবতেই সারা শরীর হির হির করে উঠলো।মিষ্টি, মিষ্টি বলে কয়েকবার ডাকলাম,কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না।বাধ্য হয়ে আশেপাশের গলি গুলোতে দেখতে লাগলাম।যদি খারাপ ছেলেদের পাল্লায় পড়েও যায় তাহলে এসব গলিতেই থাকবে। মিষ্টিকে নিয়ে এসব ঘটনাও কল্পনা করতে হচ্ছে! আরেকটু তারাতাড়ি বেড়িয়ে এলে হয়তো মিষ্টিকে হারিয়ে ফেলতাম না।

_________

মিষ্টি দুই হাত আড়াআড়ি ভাবে দিয়ে বু ক ঢেকে প্রাণ পনে ছুটছে একটা অন্ধকার গকির মধ্যে দিয়ে।তার পেছন পেছন ছুটছে মা তা ল কয়েকটা ন রপশু।তাদের চোখে লা ল সা। রাতে একা একটা মেয়েকে পাওয়ার লা ল সা তাদের চোখে।মিষ্টির ওপর যখন দুইটা ছে লে একসাথে ঝা পি য়ে পড়ে তখন মিষ্টি কোনোভাবে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়,একজনের হাত লেগে মিষ্টির ব্লাউজের বু কে র দিকটা অনেকাংশে ছিঁ ড়ে যায়।সেই অংশে হাত রেখেই মিষ্টি ছুটছে।শাড়িতে বারবার পা পেঁচিয়ে যাচ্ছে। অন্ধকার গলি হওয়ায় সামনের একটা ল্যাম্পপোস্টের সাথে মিষ্টি প্রচন্ড জোড়ে একটা ধাক্কা খেলো।মিষ্টি লু টিয়ে পড়লো মাটিতে।হাত দিয়ে কপালে স্পর্শ করতেই হাত র ক্তে ভি জে উঠলো।মিষ্টি ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করলো।তার আর কিচ্ছু করার নেই।সে জ্ঞান হারিয়েছে।

_____________

সবকয়টা গলিতে খুজেও কোথাও মিষ্টিকে দেখতে পেলাম না।আচ্ছা মিষ্টি বিপরীত রাস্তায় যায়নি তো? ও তো ভালো করেই জানে যে আমি ওর পেছন পেছন আসবো,।আমি যেন ওকে খুজে না পাই এজন্য কি উল্টো রাস্তায় চলে গেছে? ওহহ শিট।

বাইকে স্টার্ট দিয়ে বিপরীত রাস্তার দিকে গেলাম।একটু দূর যেতেই একটা রাস্তার মাঝে এক টুকরো কাপর নজরে আসলো।বাইক থেকে নেমে কাপড়টা হাতে নিতেই দেখলাম এইটা সাদা রঙ্গের ব্লা উ জে র হাতা। মুহূর্তেই খেয়াল হলো,মিষ্টিও তো সাদা রঙ্গের ব্লা উজ আর কালো শাড়ি পড়েছিলো।তার মানে কি এটা মিষ্টির?। সামনে একটা গলি নজরে পড়লো।গলির একটু ভেতরে যেতেই কয়েকজনকে ফিসফিস করে কথা বলতে শুনলাম।বুঝতে বাকি রইলো না এখানে কি হচ্ছে।

______________

চোখ মেলে আশেপাশে তাকালাম।আবছা আলো চারদিকে। একটু উঠতেই মাথা যেন ছি ড়ে পড়বে এমন অসহ্য যন্ত্রণা হলো।মনে করার চেষ্টা করলাম আমি কোথায়।তখনি মনে পড়লো সেই ভয়ঙ্কর মুহুর্তের কথা,যখন কয়েকটা নরপশু আমার পেছন নিয়েছিলো।হাত কো ম ড় বেয়ে নিচে নামালাম। বুঝালম আমার পড়নে শুধু ব্লাউজ আর পেডিকোট।বু কটা কেমন যেন ছ্যাত করে উঠলো।আমি কি আমার সতিত্ব হারিয়ে ফেলেছি?। তখনি কোত্থেকে যেন একটা হাত এসে পড়লো আমার সামনে।এটা একটা মানুষের হাত।শুধু একটা হাত দেখে ভয়ে চিৎকার দিলাম।একটা কথা কানে ভেসে এলো,কথাটা হলো ” এই হাত দিয়ে ওকে টার্চ করেছিস তাই না?। তারপর একটা প্রচন্ড চিৎকার দিয়ে উঠলো কেউ।তারপর আমার আর কিচ্ছু মনে নেই।

_____________

ভাঙ্গা ম*দের বোতল হাতে দারিয়ে আছি।সেই ভাঙ্গা বোতল দিয়ে টপটপ করে র ক্ত পড়ছে।সামনে পড়ে আছে তিনটা লা শ।আমার রাগ এখনো কমছে না,সারা শ রী র রাগে থরথর করে কাঁপছে। বোতলটা ফেলে দিয়ে মিষ্টির কাছে গেলাম।আমার শার্টটা খুলে মিষ্টির শ রীরে পেচিয়ে দিলাম।মিষ্টির মাথা দিয়ে র ক্ত পড়ছে।ঠোঁ ট টাও অনেকটা কে টে গেছে। ” মিষ্টি,মিষ্টি চোখ খোলো,কিচ্ছু হবে না তোমার,চোখ খোলো মিষ্টি, ” মিষ্টিকে ডাকতেই কেউ একজন আমার দিকে একটা বোতল এগিয়ে দিলো।তাকিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে।মেয়েটা নরম স্বরে বললো

” এমনে ডাকলে হবে না সাহেব,এই নেন জলের বোতল,মুখে জলের ছিঁটা দেন,”

বোতলটা হাতে নিয়ে মিষ্টির মুখে জলের ছিঁটে দিলাম।কিন্তু মিষ্টি চোখ মেলছে না।মেয়েটা বললো

” এক কাজ করেন সাহেব,সামনে আমার বাড়ি,বাড়িতে চলেন,ওনার চিকিৎসা হওয়া দরকার ”

মেয়েটার কথায় মিষ্টিকে কোলে নিলাম।মেয়েটা আগে আগে যাচ্ছে, পেছন পেছন মিষ্টিকে কোলে নিয়ে যাচ্ছি।

মিষ্টিকে বিছানায় শুয়ে দিলাম।মেয়েটা একটা কাপড়ে করে ভায়োডিন নিয়ে মিষ্টির কে টে যাওয়া অংশে দিচ্ছে।ওদের বাড়িটা টিনের। ভাঙ্গা একটা বাড়ি।ঘরে দুইটা চেয়ার আর বিছানা।বিছানায় কাঠের ওপর একটা চাঁদর বিছানো।মেয়েটা বললো

” আপনে চিন্তা করবেন না,জ্ঞান ফিরছে।এখন ঘুমাচ্ছে।মেয়েটার শরীর ক্লান্ত ”

আমি মুগ্ধ হয়ে বললাম ” তুমি কি ডাক্তারি জানো? ”

” হ,, একটু আধতু জানি।বাইরে চলেন।এনার ঘুম প্রয়োজন ”

আমি আঙ্গিনায় একটা বেতের চেয়ারে বসে আছি।আমার সামনে বসে আছে মেয়েটা।বয়স খুব কম,দেখে মনে হচ্ছে পনেরো,কি ষোলো।মেয়েটির মুখ গোল,মায়াবী চেহারা,পাতলা শরীর।মেয়েটিকে বললাম

” নাম কি তোমার? ”

” পদ্ম ”

” এতো রাতে ওই গলিতে তুমি কি করছিলে? ”

” সাহেব মনে হয় আমারে চেনেন নাই, একটু ভালো করে দেহেন তাহলেই চিনবেন কেন ওই গলিতে আমি ছিলাম ”

মেয়েটির দিকে তাকালাম।এইসব মেয়েরা বেড় হয় আঁধারে। কি আশ্চর্য এতোটুকু মেয়ে এই লাইনে?। মেয়েটা হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো

” সাহেব চিনতে পারছেন? ”

” হ্যা। তোমার বয়স কত? ”

” আঠারো ”

” আশ্চর্য, এতো কম বয়সে তুমি এই লাইনে কেন? ”

” কি করবো কন সাহেব,ছোট থাকায় বাপ মা ছাইড়া চইলা গেলো।বড় হইলাম একটা অনাথ আশ্রমে।বয়স যখন পনেরো,তখন অনাথ আশ্রমের মালিকের ছোট ছেলে আমারে ডাইকা নিয়া গেলো একটা ঘরে।আমি ছোট,তখন এসবের কিছুই বুঝি নাই।তারপর থেকে ওনার ছোট ছেলে প্রায় আসতো,আমার শ রী রে হাত দিতো।আবার কখনো কখনো বন্ধুদেরও নিয়ে আসতো”

” চুপ করো পদ্ম ”

” আইচ্ছা,”

মনে মনে খুব খারাপ লাগছে।এই পৃথিবীতে কত দূখী মানুষ আছে।মনে মনে ঠিক করলাম এই মেয়েকে একটা কাজের সন্ধান দিবো।মেয়েটা বললো

” সাহেব,কি এতো ভাবেন? আপনে চাইলে আমার সাথে রা ত কা টাইতে পারেন।আজ একটা কাস্টমার ও পাইনাই ”

মেয়েটার কথা শুনপ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম।এইটুকু মেয়ে অবলীলায় কিসব বলছে।স্বাভাবিক স্বরে বললাম

” আমি ওরকম না পদ্ম ”

” ভুল বললেন সব ছেলেরাই একই,মেয়েদের শ রীর দেখলে তারা ঠিক থাকতে পারে না।আপনি যদি আমার শ রী র দেখেন আপনিও ঠিক থাকতে পারবেন না। শা ড়ি খুলবো? ”

” পদ্ম তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো ”

” আচ্ছা আর বলবো না ”

এইটুকু মেয়ে দুনিয়ার নিষ্ঠুরতা কতো কাছ থেকেই না দেখছে।মেয়েটাকে বললাম

” পদ্ম, তুমি আমার সাথে যাবে? ”

” দেখলেন আপনেও সবার মতো হয়ে গেলেন।”

” আমি সেভাবে বলিনি,আমি তোমায় আমাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই।আগে তুমি পড়ালেখা শিখবে,তারপর চাকরি।তুমি নাহয় আমাদের বাড়িতে কেয়ার টেকার হয়ে থাকলে? ”

” আপনে সত্যি কইতাচেন? ”

” হ্যা সত্যি বলছি ”

” ভাইজান,আমারে ক্ষমা কইরা দেন।খারাপ মানুষের সাথে থাকি তো,তাই সবাইরে খারাপ মনে হয়।আপনি অনেক বড় মনের মানুষ ”

” তুমি পড়ালেখা করতে চাও তো? ”

” আমার খুব ইচ্ছা পড়ালেখা করার ”

” আচ্ছা ঠিক আছে।”

” ভাইজান আপনে কি ওই আপারে ভালোবাসেন? ”

” হ্যা ”

” আপনের নাম কি বিষন্ন? ”

” আশ্চর্য তো,তুমি কিভাবে জানলে? ”

” ওই আপার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন বিরবির কইরা আপনার নাম বলতেছিলো,”

” তুমি তো বেশ বুদ্ধিমতী ”

_______________

চোখ মেলতেই দেখলাম আমার সামনে কয়েকজন দারিয়ে আছে।আবছা আবছা তাদের দেখতে পাচ্ছি।দৃষ্টি একটু স্পষ্ট হতেই দেখলাম আমার বেডের কাছেই বিষন্ন ঘুমঘুম চোখে বসে আছে।সাইডে নীলু আর তিশা দারিয়ে আছে।আমার চোখ মেলা দেখে নীলু বিষন্নকে বললো

” এই বিলু, দেখ মিষ্টির জ্ঞান ফিরেছে ”

বিষন্ন চমকে উঠে আমার কাছে এসে দারালো।আমার কপালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো ” তুমি ঠিক আছো তো মিষ্টি? কষ্ট হচ্ছে? ”

আমি না সূচক মাথা নাড়ালাম।মাথায় চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে।বাম সাইডে একটা মেয়ে।মেয়েটা বেশ সুন্দরী।সে হাসিহাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।নীলু বললো

” তোর পাশে বিলু সারারাত বসে ছিলো,দেখ বেচারা ঘুমে চোখ লাল হয়ে গেছে ”

বিষন্নকে ধীর স্বরে বললাম ” বিষন্ন, তুই ঘুমাতে যা,আমি ঠিক আছি।”

বিষন্ন কিছি বলতে যাবে তার আগেই বললাম ” আমি ভালো আছি বিষন্ন, সত্যিই ভালো আছি,তোর চোখ লাল হয়ে গেছে,যা ঘুমা ”

বিষন্ন কিছু না বলে উঠে চলে গেলো।চলে যাওয়াতে বুঝলাম এতোক্ষণ ও আমার হাত ধরে বসে ছিলো। অথচ আমি সেটা টেরই পাইনি।

চলবে?

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১৩
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

বিষন্ন কিছু না বলে উঠে চলে গেলো।চলে যাওয়াতে বুঝলাম এতোক্ষণ ও আমার হাত ধরে বসে ছিলো। অথচ আমি সেটা টেরই পাইনি।

বিষন্ন চলে যাওয়ার পর নীলুকে বললাম বিছানার বসিয়ে দিতে।নীলু আমায় ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো।নীলুর সাথে সাথে একটা মেয়েও আমার হাত ধরে বসিয়ে দিলো।মেয়েটার দিকে একপলক তাকালাম।কে এই মেয়ে? এতো মিষ্টি চেহারা,মায়াবী মুখ।মেয়েটিকে জিগ্যেস করলাম

” তোমার নাম কি? ”

” পরি ”

” বাহ্ খুব সুন্দর নাম,তোমার সাথে একদম মিলে গেছে।”

” হু ”

নীলুর দিকে তাকিয়ে বললাম ” কিরে নীলু,এই মেয়েটি কে? আগে তো কখনো দেখিনি ”

নীলু বললো ” আমিও জানিনা।বিলু নিয়ে এসছে,”

” বিষন্ন নিয়ে এসছে? ”

” হ্যা, তোকে যখন গাড়িতে করে নিয়ে আসলো তখন এই মেয়েটিও ছিলো,বিষন্নের কাছে এখনো জানতে চাইনি কে এই মেয়ে ”

নীলুর কথা শুনে আমার মনে পড়ে গেলো কাল রাতের ঘটনা।কয়েকটা নরপশুদের কথা।মেয়েটিকে চলে যেতে বলে নীলুকে কাছে বসতে বললাম,নীলু কাছে বসে বললো

” কিরে কি হয়েছিলো? কপাল এভাবে কে টে গেছে কিভাবে? আর তুই কাল ঈশাকে হঠাৎ চ ড় মারলিই বা কেন? ”

” নীলু,আমি কাল রাতে কিছু খারাপ ছেলের পাল্লায় পড়েছিলাম।ওরা সবাই মাতাল অবস্থায় ছিলো”

” মানে কি? সত্যি বলছিস তুই?ওরা কি তোর কোনো…. ”

” না তেমন কিছুই করতে পারেনি,তবে বিষন্ন যদি আরেকটু দেরি করতো তাহলে হয়তো আমার অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে যেতো রে,আমার দেহ এতোক্ষণে হয়তো নর্দমার পাশে পড়ে থাকতো ”

কথাটা বলেই চোখের জল আটকাতে পারছিলাম না কোনো ভাবেই। নীলু আমায় জরিয়ে ধরে শান্তনা দিলো।

___________

আমি আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছি।শরীরটা এখন বেশ ভালো,শুধু মাথায় সামান্য চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে।নিচে সবার হৈ হুল্লোড় শোনা যাচ্ছে। বাইরে এতো লোলজনের সমাগম জন্যই ঘরে বসে আছি।এতোলোক আমার একদম অপছন্দ।ছোট থেকেই একা একা বড় হওয়ার এই এক সমস্যা,লোকজন পছন্দ হয় না। নীলু হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বললো

” মিষ্টি চল,নিচে চল ”

আমি বিরক্তি স্বরে বললাম ” আমি যেতে পারবো না রে,”

” কেন পারবি না? মাথায় ব্যাথা হচ্ছে নাকি? ডাক্তার ডাকবো? ”

নীলুকে মিথ্যে না বললে ও নিচে না যাওয়া পর্যন্ত ছারবে না।মাথায় হাত রেখে বললাম ” ডাক্তার ডাকা লাগবে না,একটু ব্যাথা করছে,আমি যেতে পারবো না এখন দোস্ত ”

” তোর শাড়িটা তাহলে এখানে নিয়ে আসছি দারা,”

” আমার শাড়ি মানে? ”

” সবার জন্য শপিং করা হ’য়েছে!বিলু আমি আর বাবা গিয়েছিলাম ”

” এইটুকু সময়ের মধ্যে কখন করলি এসব? ”

” মিষ্টি! এখন সন্ধা হয়ে গেছে,তুই টেরই পাসনি নাকি? একবার তোর ঘরে আসলাম দেখলাম ঘুমাচ্ছিস ”

” সন্ধা হয়ে গেছে? ঘুমিয়ে ছিলাম রে,,টের ই পাইনি,”

” আচ্ছা আমি শাড়ি নিয়ে আসছি ”

” আমার জন্যে কেন কিনতে গেলি দোস্ত, তোদের এতো এতো ভালোবাসার প্রতিদান যে আমি কখনোই দিতে পারবো না রে ”

” মা র খাবি বলে দিলাম।ভালোবাসার যদি প্রতিদান’ই দিতে হয়,তাহলে সেটা ভালোবাসা নাকি?, তুই ওঠ তো,ফ্রেশ হয়ে নে,শুয়ে থাকবি না আর,,ওঠ ”

আমায় তুলে দিয়ে নীলু নিচে চলে গেলো।আমি ফ্রেশ হয়ে বেলকনির দোলনায় গিয়ে বসলাম। নীলুর ঘরের বেলকনির এই দোলনাটা অসম্ভব সুন্দর।আশেপাশে লতানো গাছ দোলনায় পেচিয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে গাছের লতার ওপর বসে আছি।

__________

নীলু বিষন্নের ঘরে ডুকে বিষন্নকে দেখে বিস্মিত হয়ে বললো

” আরেহ বিলু ! কি যে লাগছে তোকে,উফফফ আমি তোর বোন না হলে এক্ষুনি তোকে বিয়ে করে ফেলতাম ”

” হাহাহা,,”

” সত্যি বলছি,,আচ্ছা আমায় কেমন লাগছে? ”

” পেত্নীর মতো লাগছে।শেওড়া গাছে থাকে না? ওইরকম লাগছে ”

” কিহ? আমায় পেত্নির মতো লাগে? দারা আজ তোর একদিন কি আমার একদিন ”

বলেই নীলু বিষন্নের দিকে তেড়ে যায় ওকে মা*রতে।বিষন্নও ঘরের এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে নীলুর মা রের হাত থেকে বাঁচতে।দুই ভাই-বোন মেতে উঠেছে মিষ্টি খুনসুটি তে।এক পর্যায়ে নীলু ক্লান্ত হয়ে বিছানায় বসে পড়ে।হাঁপাতে হাঁপাতে বললো

” তোর জন্য আমার মেকাপটাই নষ্ট হয়ে যেতো ”

বিষন্নও নীলুর পাশে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো ” তুই কি আমায় ধরতে পারছিস কোনোদিন? হাহাহাহা পারবিও না ”

নীলু বিষন্নের কা ন ধরে বললো ” এইতো এইবার পেরেছি,এখন কই পালাবি ”

” ইস লাগছে আপু,,ছাড় না, ”

” আগে বল আমায় কেমন লাগছে,নইলে তোর কান লাল করে ছাড়বো ”

” আচ্ছা আচ্ছা বলছি,তোকে খুব সুন্দর লাগছে ”

” ধন্যবাদ মেরে ভাই,যুগ যুগ জিও ”

বিষন্ন ভেংচি কেটে আয়নায় সামনে গিয়ে পাঞ্জাবির হাতাটা ওপরে তুলতে লাগলো।নীলু বিষন্নের কাঁধে ভর করে দারিয়ে বললো

” বিলু,আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি,আজকে সব মেয়েরা তোর ওপর ক্রাশ খাবেই খাবে ”

” মেয়ে কোথায় পেলি? ”

” বাবার অফিসের এমপ্লয়িরা এসছে না, ওদের মেয়েদের ও নিয়ে এসছে ”

” বলিস কি, সত্যি? ”

” হু সত্যি।আমি দেখে এলাম,একটা মেয়েকে দেখেছি,আমার খুব পছন্দ হয়েছে,তোর সাথে খুব মানাবে ”

” সত্যি মানাবে? তাহলে ওইটার ফাইনাল।তুই একটু ব্যাবস্থা করে দিস আপু,”

” আমার দিতে হবে না।তোকে কালো পাঞ্জাবিতে যা লাগছে, মেয়েরা এমনিতেই তোর পাশে ঘুরঘুর করবে দেখে নিস।আচ্ছা তুই নিচে আয়,আমি নিচে যাচ্ছি,মায়ের নাকি খুব লজ্জা লাগছে,মায়ের সাথে থাকতে হবে আমায় ”

” আচ্ছা যা, আমি আসছি ”

নীলু আপু চলে গেলো।ঘড়িটা পড়তে পড়তে ঘর থেকে বেড় হতেই দেখলাম নীলুপুর ঘর থেকে মিষ্টি বেড় হয়ে আসছে।মাথা নিচু করে শাড়ির কুচি ঠিক করছে।মিষ্টিকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছি না।সাদা শাড়ির নীল পাড়ের এই শাড়িটাতে মিষ্টিকে সুন্দর লাগবে জানতাম।কিন্তু এতো সুন্দর লাগবে সেটা ভাবিনি।মিষ্টি আমার দিকে তাকিয়ে লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো।সাদা শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে সাদা চুড়ি,কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ,টিপের একটু ওপরে ওয়ান টাইম একটা টেপ লাগানো।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক,চোখে কাজল,চুল খোলা,সেই খোলা চুলে কয়েকটা ছোট ছোট লাল ফুল।ব্যাস ! এতেই একটা মেয়েকে এতো মায়াবী লাগে?। আমার তাকানো দেখে মিষ্টি একটু খুকখুক করে কেশে বললো

” ওমন ড্যাবড্যাব করে কি দেখিছিস”

” তোমায় খুব সুন্দর লাগছে ”

” আমি জানি আমায় সুন্দর লাগছে।তারপরেও তোকে ধন্যবাদ সুন্দর বলার জন্য ”

” তুমি নিজের বিষয়ে কিছুই জানো না,যতোটা আমি জানি ”

” এহহহ,সব জান্তা এসে গেছে রে ”

” আচ্ছা আমায় কেমন লাগছে দেখে বলোতো ”

” ভালো,ঈশা চোখ ফেরাতেই পারবে না ”

এইতো কাজ হয়েছে। মিষ্টি ধীরে ধীরে ঈশাপুর ওপর জেলাসি হচ্ছে। এটাই তো চেয়েছি আমি।সবটা এতো সহজেই হয়ে যাবে বুঝতেই পারিনি।আনন্দিত হওয়ার ভঙ্গিতে বললাম

” সত্যি বলছো? ”

” হু সত্যি ”

” ঈশা মেয়েটা কিন্তু খুব ভালো,তাই না মিষ্টি? ”

” আমি তোর বড়, এমন ভাবে মিষ্টি বলছিস যেম মনে হচ্ছে তুই বড় আর আমিই ছোট ”

মিষ্টিকে আরেকটু রেগে যাওয়ার জন্য বললাম

” ঈশাপু কি বলেছে জানো? বলেছে ওকে শুধু ঈশা ডাকতে,মেয়েটা একটা পাগলি তাই না বলো? ”

” হ্যা,তুই দেখ তোর পাগলি কোথায় গেলো,আমি নিচে যাচ্ছি ”

বলেই মিষ্টি পাশ ফিরে চলে গেলো।মানেটা ঠিক বুঝলাম না।মিষ্টিকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে না যে ও জেলাসি ফিল করছে।এমন ভাব করলো যেন এটা ওর জন্য স্বাভাবিক কিছু।ঈশার সাথে আমার সম্পর্কে কি মিষ্টির সত্যির কোনো জেলাসি ফিল হচ্ছে না? আমি কি আবার অন্য ভাবে ফেসে গেলাম নাকি? মিষ্টি ভেবে নিয়েছে আমি ওর সাথে নাটক করছি,আর সত্যি সত্যিই ঈশার সাথে আমার সম্পর্ক।এমন কিছু হলে তো বিরাট মুশকিলে পড়ে যাবো।মেয়েরা নিজেরা যা একবার ভেবে বসে সেটা পাল্টানো খুব দুষ্কর ব্যাপার।জানিনা মিষ্টির মনে কি চলছে।আচ্ছা, মিষ্টির সাথে কি ভার্সিটির ওই জুনায়েদ নামের ছেলেটার সত্যিই কোনো যোগসূত্র আছে? সেজন্যই কি আমাকে এড়িয়ে চলছে?

নিচে নামতেই নীলুপু আমায় ডাকলো।নীলুপুর সাথেই মিষ্টি দারিয়ে আছে।আমি কাছে গেলাম।নীলুপু আমার দিকে একটু ঝুকে এসে বললো

” ওই যে মেয়েটা দেখতে পাচ্ছিস? লাল টি-শার্ট আর জিন্স পড়ে আছে, ”

আমি আশেপাশে তাকালাম। মেয়েটাকে দেখতে পেলাম।দেখেই মনে হচ্ছে আধুনিকের ছোঁয়া পেয়েছে।নীলুপু বললাম

” হু দেখতে পেয়েছি ”

” মেয়েটা কেমন? ”

” ভালোই তো।দেখতে সুন্দরী, আধুনিকতার ছোঁয়াও আছে ”

” পছন্দ হয়েছে তোর? আচ্ছা দারা আমি গিয়ে কথা বলছি ”

নীলুপুর কথা শুনে আমি যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে মিষ্টি।নীলুপু আমার দিকে ঝুকে এসে কথাগুকি বললেও মিষ্টি যেন শুনতে পায় সেভাবেই বলছিলো।মিষ্টি কথাটা শুনে তড়িৎগতিতে বলে উঠলো

” এসবের মানে কি নীলু? জানা নেই শোনা নেই হুদাই একটা মেয়েকে গিয়ে বলবি ,আমার ভাইয়ের তোমাকে খিব পছন্দ,তুমি কি ওর গালফ্রেন্ড হবা? ”

নীলুপু ভ্রু কুচকে বললো ” হ্যা বলবো,তাতে সমস্যা কি? ”

মিষ্টি অন্যদিকে মুখ করে বললো ” সমস্যা আছে,এভাবে হুট করে তুই এসব বলতে পারিস না,”

নীলুপু বিস্মিত হয়ে বললো ” মিষ্টি কি হয়েছে তোর,এমন কেন করছিস ? এটা বলায় সমস্যা কি? তাছাড়া আমি ডিরেক্ট বলবোনা তো,আগে নাম্বার নিবো তারপর সব ধীরে ধীরে হয়ে যাবে ”

” নীলু তুই ভুলে যাচ্ছিস ওরা তোর বাবার অফিসে চাকরি করে,তুই যেচে ছোট হবি কেন? ”

” আজব তো, ছোট হওয়ার কি আছে,,আচ্ছা পরিচিত হয়ে নিই,তাতে তো দোষের কিছু নেই! ”

” তোর যা ইচ্ছে তাই কর,আমি রুমে গেলাম,আমার মাথা ব্যাথা করছে।”

বলেই মিষ্টি ওপরের দিকে চলে যেতেই ওর হাত ধরে আটকালাম।আকষ্মিক হাত ধরায় মিষ্টি মনে হলো কারেন্ট শকের মতো অবস্থা হয়েছে।ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছে। আমি মৃদু স্বরে বললাম

” ভয় পেয়ো না,কেউ দেখতে পায় নি।নীলুপু ওই মেয়ের সাথে কথা বলতে গেছে ”

মিষ্টির মনে হচ্ছে আমার কথা বিশ্বাস হলো না।নীলুপুর দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্যি সত্যিই নীলুপু ওই মেয়েটার কাছে যাচ্ছে। মিষ্টি ভ্রু কুচকে বললো

” এতোলোকের মাঝে হা ত কেন ধরছিস,কেউ দেখে ফেললে কি হতো ”

” এতো ভয় পাও কেন,,কেউ দেখবে না বলছি তো ”

” আমার মাথা ব্যাথা করছে,গেলাম ”

” পালিয়ে যাচ্ছো? ”

” পালাবো কেন? ”

” কারন ওই মেয়েটা কিছুক্ষণ পর আমার সাথে কথা বলবে,হাসাহাসি করবে, আর সেটা তুমি সহ্য করতে পারবে না তাই ”

” আমার সহ্য হবে না কেন? আর হাসাহাসি কেন,তার থেকে গভীর মুহূর্ততেও তো দেখেছি তাই না? তাই আশা করি এটা বুঝতে পারছিস যে আমার এসবে ইন্টারেস্ট একদম নাই ”

বলেই মিষ্টি ওপরের ঘরে চলে গেলো।আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।মনে হচ্ছে উল্টো নিজের প্যাচে নিজেই পড়ে গেলাম।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here