তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই #পার্টঃ১৪,১৫

0
288

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১৪,১৫
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
১৪

মিঃ বিষন্ন,কি ভেবেছিস? আমি কিচ্ছু বুঝি না? আমায় জেলাস ফিস করাতে যে এসব করছিস সেটা আমি ভালো করেই জানি।আমায় দেখিয়ে দেখিয়ে মেয়েদের সাথে লুতুর পুতুর করছিস যেন আমি বুঝতে পারি যে আমি তোর ওপর দূর্বল তাই তো? হাহাহাহা,বিষন্ন বাবু,তুমি ছোট তো ছোটোই রয়ে গেছে।এইবার দেখো এই মিষ্টি কি করে,তোমার রাস্তায় এবার তোমাকেই হাটাবো।

তখনি দরজায় টোকা পড়লো। দরজা খুলতেই দেখলাম তিশা এসেছে।তিশা বললো

” কিরে দোস্ত, তুই ঘরে কি করছিস?”

” কিছু না রে,মাথা ব্যাথা করছিলো,তাই শুয়ে ছিলাম। কি বলবি বল ”

” তোকে ডাকতে এসেছি।নীলু বললো তুই নাকি ওর ওপর রাগ করে চলে এসেছিস? ”

” আমি কারো ওপর রাগ করিনা।তুই যা,আমি এখন যাবো না ”

” দোস্ত প্লিজ চল না।আমার না একটা ছেলেকে খুব পছন্দ হয়েছে,তুই ছাড়া কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না,দোস্ত প্লিজ না করিস না ”

” তিশা দেখ আমায় এসবে প্লিজ জরাস না।মনে আছে কলেজে কি কান্ড বেঁধেছিলু,,নীলুকে বল ও হেল্প করবে,এসবে তো ওর খুব ইন্টারেস্ট ”

” দোস্ত তুই তো জানিস নীলু ছেলেদের সাথে কথাই বলতে পারে না।ও শুধু মেয়েদের সাথে কথা বলে সেটিং করিয়ে দিতে পারে,ছেলেদের সাথে কথা বলতে নাকি লজ্জা করে ওর ”

” সে যাই হোক,আমি পারবো না ”

” তোর পায়ে পড়ি দোস্ত,প্লিজ চল,ওই ছেলেকে আমার লাগবেই দোস্ত ”

” তোর না কয়দিন আগেই ব্রেকআপ হলো? ”

” ধূর ওইটা তো একটা ছা*গল ছিলো।তুই চল তো,প্লিজ প্লিজ প্লিজ ”

আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিশা হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো।সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই একটা ছেলের সাথে প্রচন্ড ভাবে একটা ধাক্কা খেলাম।ভাগ্যিস ছেলেটা ধরেছিলো,নইলে সিঁড়ি থেকে সোজা নিচে পড়ে যেতাম।ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি।চোখ মেলতেই দেখলাম ধূসর রঙের একটা শার্ট পরিহিত ছেলে।চাপা ধরা চাপ দাড়ি। ছেলেটা বেশ সুদর্শন।আমার কো মড় জরিয়ে ধরে আছে।আমি নিজেকে সামলে দারালাম।জি লজ্জার ব্যাপার,ছেলেটা না জানি কি না কি ভাবছে।সরি বলবো তার আগেই ছেলেটা বললো

” আপনার লাগেনি তো? সরি আমি দেখতে পাইনি ”

বাহ্ ছেলেটা তো বেশ বিনয়ী। কেননা আমি নিজেই ছেলেটাকে দেখিনি,আমিই ধাক্কা দিলাম অথচ ছেলেটা কত সহজে সব দোষ নিজের করে নিচ্ছে। বিষয়টা সত্যিই খুব সুন্দর। আমি লজ্জার ভঙ্গিতে বললাম

” সবটা দোষ নিজের করে নিবেন না। তিশা এমন ভাবে নিয়ে যাচ্ছিলো যে আমিই আপনাকে দেখতে পাইনি,দোষটা আমার,আপনার না।সরি ”

ছেলেটা একটু লজ্জা পেলো মনে হলো, বললো ” না ঠিক আছে,সমস্যা নাই ”

আর কিছু বললাম না।একটা সিঁড়ি নামতেই ছেলেটা বললো ” সাবধানে যাবেন,তাড়াহুড়োর কিছু নেই ”

আমি আর তেমন কিছু বললাম না।ধরেই নিলাম অতি বিনয়ীভাব থেকেই কথাটা বলেছে।তিশা কাছে এসে বললো

” দোস্ত ছেলেটা কেমন? ”

” এটাই সেই ছেলে? যাকে পছন্দ করেছিস? ”

তিশা লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো ” হুম ”

” লজ্জা পাচ্ছিস কেন? ”

” না এমনিই,,আচ্ছা ও তোকে কি বললো? ”

” কেন শুনতে পাসনি? ”

” না, এতো সাউন্ডে গান বাজলে কিছু শোনা যায় নাকি? ”

” বলেছে আপনার বান্ধবীকে বলবেন সিড়ি দিয়ে কাউকে নিয়ে নামতে হলে আস্তে আস্তে নামতে ”

তিশা মন খারাপ করে বললো ” এটাই বলেছে? ”

” হুম ”

” এহহ,খুব জ্ঞানদাতা হয়েছে নাকি? সিঁড়ি দিয়ে কি আমি দৌড়াচ্ছিলাম নাকি? ”

” তোকে খেয়াল করেছে হয়তো,তাই বলেছে,তুই তো সবসময় এখানে ওখাবে যাচ্ছিস আসছিস তাই বলেছে। ছেলেটা তোকে ফলো করছে মনে হয় ”

” সত্যি বলছিস দোস্ত? ও সত্যিই আমায় ফলো করছে? ”

” হ্যা, অবশ্যই করছে,বিশ্বাস না হলে কাগজ আন,আমি লিখে দিচ্ছি ”

” আইলাবিউ বান্ধবী, আজকে তোকে এত্তোগুলা চকলেট কিনে দিবো ”

মিথ্যা কথাটা কেন বললাম নিজেই বুঝতে পারছি না।কেন জানি খুব মিথ্যা বলতে ইচ্ছে করছে।

______________

মিষ্টির সাথে ছেলেটার ধাক্কা খাওয়া,ছেলেটার সাথে মিষ্টির কথা বলা এইসব নিচ থেকে বিষন্ন একদৃষ্টিতে দেখছে।প্রচন্ড রা গি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিষ্টির পানে।হাত মুষ্টি করে নিজের রাগকে কন্ট্রোলে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।তখনি নীলু কাছে এসে বললো

” এই বিলু,মেয়েটা তোর সাথে কথা বলতে চাচ্ছে ”

নীলু লক্ষ্য করলো ওর কথায় বিষন্নর কোনো রিয়েকশন নেই।সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিঁড়ির দিকে।নীলুও সিঁড়ির দিকে তাকালো।দেখলো সেখানে মিষ্টি আর তিশা কথা বলছে।নীলু বিষন্নের হাত ঝাঁকিয়ে বললো

” কিরে কি বলছি শুনতে পাচ্ছিস না? ”

বিষন্ন নীলুর দিকে রাগি রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ” আপু ডিস্টার্ব করিস না এখন,আমার মাথা ঠিক নেই ”

নীলু বিষন্নের এই রাগ সম্পর্কে জানে।তাই আর কিছু না বলে চলে গেলো।বিষন্ন একবার ছেলেটার দিকে তাকালো।ছেলেটা ওপরের তলা থেকে রেলিংয়ে হাত রেখে মিষ্টির দিকে চেয়ে আছে ।ছেলেটাকে বিষন্ন চেনে।তার বাবার অফিসের যিনি সহকারী ম্যানেজার, তার ছেলে।বিষন্ন নিজেকে আর সামলাতে পারছে না।ইচ্ছে করছে যে হাত দিয়ে মিষ্টিকে স্প র্শ করেছে সেই হাত ভে ঙ্গে গুড়িয়ে দিতে।

_____________

” হ্যালো জুনায়েদ ভাই, আমি ঈশা বলছি ”

” কোন ঈশা ”

” ভাইয়া আমি মিষ্টির বান্ধবী।খুব ক্লেজ ফ্রেন্ড আমরা ”

” ও আচ্ছা,কি বলার জন্য ফোন দিয়েছো বলো ”

” ভাইয়া আমি জানি আপনি মিষ্টিকে পছন্দ করেন,আপনি চাইলে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি ”

” তুমি আমায় সাহায্য করবে? ”

” হ্যা করবো।আমি জানি আপনি দীপার সাথে যে কাজটা করেছেন সেটা মিষ্টির সাথেও করতে চান।”

” মা..মানে?কোন দীপা? কি কাজের কথা বলছো? ”

” কি বলেন ভাইয়া,সত্যিই মনে নেই? দীপাকে ডেকে নিয়ে গেলেন,ডিপার্টমেন্টের শেষের ক্লাস ঘরে জোড় করে ঢুকালেন।আবার ভিডিও করে ভাইরালও করে দিলেন,,ভুলে গেছেন? ”

” তু..তুমি এসব কিভাবে জানো সেটা আমি ? ”

” দীপা আমার রুমমেট ছিলো ভাইয়া।ও সব কিছু আমায় বলতো,এমন কি এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর যখন আ ত্নহ ত্যা করলো তার আগের রাতে ও সবকিছু আমায় বলেছে।এখন যদি আমি চাই আপনাকে ফাঁ সির দড়িতে ঝোলাতে পারবো,বুঝলেন ভাইয়া? ”

” ক..কি চাও তুমি? ”

” কিচ্ছু না,আপনি যা চান,আমিও তাই চাই ”

” মানে? ”

” আমি চাই দীপার সাথে যা হয়েছে সেটা মিষ্টির সাথেও হোক ”

” কি বলছো তুমি,মাথা ঠিক আছে তোমার? ”

” আমার কাছে পীর ফকির সেজে লাভ হবে না ভাইয়া।মিষ্টিকে বি*ছানায় নিয়ে যেতেই তো ওর পেছনে পড়েছেন,সেটা বুঝিনা ভেবেছেন?তবে ভাইয়া,আমি আপনাকে সাহায্য করবো,এখন আপনিই ভেবে দেখেন কি করবেন ”

” তুমি আমার সাথে ভার্সিটিতে দেখা করো,তারপর কথা হবে ”

” আচ্ছা ভাইয়া,ভালো থাকবেন ”

ব্যাস ! সব কাজ ওকে।এইবার তুই বুঝবি মিষ্টি এই ঈশাকে চ ড় মারার পরিণাম কতো ভয়ঙ্কর। তোকে তিলে তিলে শেষ করে দিবো আমি,একদম শেষ।

______________

আঙ্কেল আন্টি একসাথে কেক কা টছেন।তাকে ঘিড়ে ধিরে ধরে সবাই দারিয়ে আছেন।কেন জানিনা বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে,তারা বেঁচে থাকলে হয়তো এইভাবে বিবাহবার্ষিকী পালন করতো।এসব ভাবতেই চোখে জল চলে আসছে। তখনি হঠাৎ কেউ একজন আমার মুখ চে পে ধরলো।আচমকা ঘটনায় আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।মুখ চেপে ধরায় চিৎকার ও করতে পারছি না।যে শব্দটুকু হচ্ছে সেটা কারো কানে পৌছার কথাও না।লোকটা আমায় কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছে।আমি প্রাণ পনে চেষ্টা করলাম ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু পারছি না।লোকটা একটা অন্ধকার রুমে আমায় নিয়ে গেলো।অন্ধকার রুমে ঢুকেই সেই লোকটা তার বলিষ্ঠ হাত আমার কো*মরের ওপর রাখলো।এতো জোরে কো*মর চেপে ধরলো যে ব্যাথায় আমার চোখের কয়েকফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।একটু চোখ মেলতেই সামনে যাকে দেখলাম সে……..

চলবে?

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১৫
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

এতো জোরে কো*মর চেপে ধরলো যে ব্যাথায় আমার চোখের কয়েকফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।একটু চোখ মেলতেই সামনে যাকে দেখলাম তাকে দেখে দেখে আমি নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছি না।বিষন্ন আমায় এখানে নিয়ে আসলো কেন? মুখ থেকে বিষন্ন নিজের হাত সরিয়ে নিলো।ভয়ে আমি একদম জমে গেছি।কাঁপা কাঁপা স্বরে বললাম

” বি..বিষন্ন, তু..তুই ”

বিষন্ন আমার আরো কাছে চলে এলো।ওর শ রীর আমার শ রীরের সাথে একদম লেগে আছে।এতো কাছে এসেছে যে ওর লম্বা চুলগুলো আমার কপালে এসে স্পর্শ করছে।বিষন্ন চাপা স্বরে বললো

” কেন ওই ছেলেটা ভেবেছিলে? ”

” বিষন্ন কি বলছিস তুই এসব ”

” ঠিকি বলছি,এতো সাহস হয় কি করে অন্য ছেলের সাথে কথা বলার? ”

বিষন্ন তার হাত আমার কো মড়ে আরো শক্ত করে ধরলো।ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম।বিষন্নকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ধাক্কা দিলাম কিন্তু কোনো লাভ হলো না,এতো জোরে ধাক্কা দেওয়াতেও বিন্দুমাত্র সরাতে পারলাম না।বিষন্ন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো

” খুব ব্যা থা লাগছে তাই না? আমার স্পর্শ খুব ব্যাথা দেয় ? ওই ছেলের স্প র্শ খুব আরাম লাগে তাই না? খুব মজা লাগে? ”

বিষন্নের কথাগুলো যেনো আমার শরীরে কাঁটার মতো বিঁধে যাচ্ছে।কো*মড় থেকে হাত সরিয়ে বিষন্ন সাইডে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো।বিষন্ন কি এখন সিগারেট সাথে নিয়ে ঘুরছে? ওর চোখ দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে।খুব হাসি পাচ্ছে এখন।বেচারা আমায় যেভাবে কষ্ট দিতে চেয়েছিলো এখন নিজেই সেভাবে কষ্ট পাচ্ছে,হাহাহাহা।মিঃ বিষন্ন, কেবল তো শুরু,আরো কতো কি দেখার বাকি আছে।বিষন্ন হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে আবারো কাছে এসে বললো

” ওই ছেলেটা তোমায় কি বলছিলো? ”

” কিচ্ছু না বাদ দাও ”

” জানতে চেয়েছি আমি,”

” বলেছে এই শাড়িটায় আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে ”

” আর তুমি তখন কি বললে? ”

” আমি তেমন কিছু বলিনি,শুধু বলেছি আপনাকেও সুন্দর লাগছে ”

” এই কথা বলেছো? ”

” হ্যা শুধু এইটুকুই বলেছি ”

এতো হাসি পাচ্ছে যে হাসি চেপে রাখা খুব কষ্টের হয়ে যাচ্ছে। বিষন্নের মুখ একদম চুপসে গেছে।হাহাহাহাহা, মুখটা দেখার মতো ছিলো।বিষন্ন আমায় দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো

” কেন বলেছো এটা? ”

” কেন বলেছি তোকে বলতে হবে? তুই যখন মেয়েদের সাথে লুতুর পুতুর করিস তখন কি আমি বলেছিলাম কেন এসব করিস? ”

” ওহ মাই গড,,আমারটা আর তোমারটা কি একই হলো নাকি? আমি তো…. ”

” তুই তো কি? বল বল থামলি কেন? ”

” কিছু না,তুমি আর ওই ছেলের সাথে কথা বলবে না ”

” বলবো, একশো বার বলবো।তুইও ওই লাল পরীর সাথে কথা বল যাহ,”

ঘরে থেকে বেড়িয়ে এলাম।আঙ্কেল আন্টির কেক কাটা শেষ।এখন গান হবে।তার আগে একটু ব্রেক দেওয়া হয়েছে।নীলুর সাথে দারিয়ে আছি তখনই সেই ছেলেটা আবারো হাজির।যার সাথে সিঁড়িতে ধাক্কা লেগেছিলো।ছেলেটা সামনে এসে বললো

” হাই,কেমন আছেন ”

ইচ্ছে ছিলো ছেলেটাকে বলি যে আপনি এভাবে গায়ে পরে কথা কেন বলতে এসেছেন? কি ভেবেছেন আমায় পটিয়ে ফেলবেন? লাভ হবে না,এই মিষ্টি একজনার ওপর হালকা পটে আছে।কিন্তু সেটা বলতে পারলাম না।কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বিষন্ন আমার দিকে তাকাচ্ছে।চোখে চোখ পড়তেই চোখ অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছে।এখন ছেলেটার সাথে কথা বললে বেচারা আরো রেগে যাবে।উফফ পিচ্চিটাকে রাগাতে এতো ভালোলাগে কেন?। ছেলেটা আবারো বললো

” কিছু ভাবছেন? ”

” নাহ কিছু না,”

” আমি আদি,আপনার নামটা জানতে পারি? ”

” পরী ”

পরী নামটা কেন বললাম? আমার নাম তো পরী না? পরী হলো সেই পিচ্চি মেয়েটার নাম।কেন হুট করে এই নামটা বললাম কে জানে, আচ্ছা আমার কি হচ্ছে? কিসব উদ্ভট উদ্ভট ব্যাবহার করে যাচ্ছি। ছেলেটা বললো

” ওয়াও,অনেক সুন্দর নাম ”

” হুম সুন্দর নাম ”

” আপনাকে এই শাড়িটা খুব মানিয়েছে ”

” ধন্যবাদ ”

” আচ্ছা আপনি কি এই বাড়ির কেউ? ”

” না, আমি এই বাড়ির বড় মেয়ের বেস্টফ্রেন্ড ”

” ও আচ্ছা,”

তখনি ছেলেটার একটা ফোন আসলো।ছেলেটা ইশারায় এক মিনিট সময় চেয়ে সাইডে চলে গেলো।ছেলেটা চলে যেতেই বিষন্নের দিকে তাকালাম।বেচারা কফি হাতে ভ্রু কুঁচকে দারিয়ে আছে।আমি ওকে দেখে একটু মুচকি হাসলাম।

নীলু মাউথপিস হাতে দারিয়ে আছে। তার ওপর স্পোর্টলাইট ফেলানো।চারিদিক অন্ধকার।আমার পাশেই তিশা, তিশার পাশে ঈশা দারিয়ে। নীলু বলছে

” লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান,আজকের পার্টিটা আমার বাবা মায়ের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে। এবং এই উপলক্ষে বাবা এবং মা একটা ডান্স পারফামেন্স করে দেখাবে।”

সবাই হাত তালি দিচ্ছে। নীলু ছুটে এসে আন্টি আর আঙ্কেলকে স্টেজে নিয়ে গেলো।আন্টি লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেছে।আঙ্কেলকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি বেশ রোমান্টিক মুডে আছেন।কি সুন্দর আন্টির হাত ধরে এদিক ওদিক হাত দোলাচ্ছে।

আন্টি লজ্জায় আর থাকতে পারলেন না।ওখান থেকে সরে এলেন।নীলুর ওপর আবারো স্পর্ট লাইট পড়লো।নীলু বললো

” এবার আমাদের একটা গান গেয়ে শোনাবে আমার প্রিয় ছোট ভাই বিষন্ন ”

এবারে যেন হাত তালির ধুম পড়ে গেলো।বেশিরভাগ মেয়েরা হাত তালি দিচ্ছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে বিষন্নের গান গাওয়ায় তারা খুব খুশি। আমার সামনেই পাশাপাশি দুইটা মেয়ে দাডিয়ে।একটা মেয়ে অন্যজনকে বললো

” ছেলেটা দেখতে কিন্তু খুব হ*ট,,তাই না? ”

অন্য মেয়েটা বললো ” হুম, আমি তো দেখেই ক্রাশ খেয়েছি,ওর নামটাও কিন্তু ডিফারেন্ট, বিষন্ন ”

” হ্যা,ভাবছি ওকে প্রপোজ করবো ”

” লাভ হবে না,ওর নাকি তানহাকে খুব পছন্দ হয়েছে ”

” তুমি কিভাবে জানো? ”

” তখন দেখলাম ওর বোন,কি যেন নাম,,ওহহ হ্যা নীলু,ওর বোন তানহা কে বললো ওনার ভাই নাকি তাকে পছন্দ করেছে ”

” আমাদের পোড়া কপাল ”

” হ্যা,এখন মনে হচ্ছে ওর মতো ছোট ড্রেস পড়ে আসা উচিৎ ছিলো,তাহলে যদি একটু চোখে পড়ে ”

এটুকু শুনেই আমার কেমন যেন রাগ রাগ লাগলো।ইচ্ছে করছে মেয়ে দুইটাকে ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে দিই।পার্টিতে এসে ছেলে পছন্দ করবে এটা কেমন কথা? আর এখানে কি আর ছেলে নাই? বিষন্ন কি একাই নাকি? সবাই ওর পেছনে কেন পড়ে আছে?। মেয়েগুলার আজকাল এই সমস্যা,সুন্দর ছেলে দেখলো তো চাঁদ হাতে পেয়ে গেলো।এসব মেয়েদের দিনে রাতে থাপ*ড়ানো দরকার।বিষন্ন গিটার প্লে করে গান গাইছে

দুয়া ভি লাগে না মুঝে,দাওয়া ভি লাগে না মুঝে
জাবছে দিল কো মেরে,তু লাগাহে
নিন্দ রাতো কি মেরি,

গান শেষে সবাই হাত তালি দিলো।বিষন্ন সরে আসতেই কয়েকটা মেয়ে পর কাছে গেলো।কি যেন বলছে,বিষন্নও তাদের কথায় খুব মজা পাচ্ছে বলে মনে হলো।মেয়েগুলি কি যেন বকে হাসছে,তাদের সাথে বিষন্নও হাসছে।কি আজব, এতে হাসির কি আছে?।এখানে থাকতে আর ভালো লাগছে না।তবুও থাকতে হলো।নীলু জোর করে আটকে রাখলো।

রাত বাজে বারোটা।আঙ্কেলের অফিসের সবাই চলে গেছে।তাদের মেহমানরাও চলে গেছে।শুধু থেকে গেছে নীলুর দাদি একাই।তিনি দখল করে আছে নীলুর ঘর।রাতে সবাই একসাথে ডিনার টেবিলে বসে গেছে।নীলু আর আমি ওপর থেকে নামতেই দেখলাম পরী নামের মেয়েটা ওখানে দারিয়ে আছে।মেয়েটার কাছে গিয়ে বললাম

” আরেহ পরী,তুমি কোথায় ছিলে এতোক্ষণ? দেখলাম না যে? ”

পরী মিষ্টি হেসে বললো ” ছাদে ছিলাম, এতো লোক আমার ভাল্লাগেনা ”

” ও আচ্ছা,এখানে দারিয়ে কেন,,চলো খেতে চলো ”

” আমি খাবো না আপা,আপনে যান ”

নীলু বললো ” খাবে না কেন? চলো,এই বাড়িতে লজ্জার কিছু নেই,”

টেবিলে বসলাম।আন্টি সবাইকে খাবার সার্ভ করছে।আমি সার্ভ করতে চাইলে আন্টি জোর করে আমায় বসিয়ে দিলেন।আজকে অনেক ধরনের রান্না হয়েছে। আঙ্কেল পরীকে দেখে বললো

” এই মেয়েটা কে? ”

বিষন্ন ইতস্তত করে বললো ” বাবা ওকে আমি এনেছি ”

আঙ্কেল বিষ্মিত হয়ে বললো ” নিয়ে এসছো মানে?,”

” বাবা ওর নাম পরী।ওর বাবা,মা কেউ নেই,রাস্তায় দেখা হয়েছে।তাই ওকে নিয়ে এসেছি,ও আমাদের বাড়িতে একটু আধটু কাজটাজ করবে আর এখানেই থাকবে ”

” রাস্তায় হাজার হাজার মেয়ে থাকে বিষন্ন। তাই বলে তুমি তাদেরকেও ঘরে আনবে? ”

বিষন্ন চুপ করে রইলো কিছু বললো না।আন্টি বললো

” এভাবে বলছো কেন? বাপ,মা মরা মেয়েটাকে এনেছে ভালোই তো করেছে,মেয়েটা কতো কষ্টে ছিলো,এখন একটু শান্তিতে থাকবে ”

” আমি তো এখানে শান্তিশালা খুলে বসিনি।কোথাকার কোন মেয়ে বাড়িতে এনে হাজির ”

” তুমি এরকম কেন করছো,মেয়েটাকে দেখেছো? কত মিষ্টি চেহারা,”

তখনি কলিংবেল বাজলো।আন্টি রহিমের মা’কে বললো দরজা খুলতে।তিনি দরজা খুলেই বিকট একটা চিৎকার দিয়ে ডাইনিং টেবিলে দৌড়ে এলেন।আন্টি রেগে বললেন

” কি হলো রহিমের মা? এভাবে দৌড়ে আসার কি আছে,? ”

” আ..আফা,পুলিশ ”

” কিহ? পুলিশ? ”

” হ আফা,পুলিশ আইছে ”

আমি বিষন্নের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালাম।কাল রাতে ওই মা তাল গুলোট সাথে বিষন্নর মারা মারি হয়েছিলো,এটাতো আমি ভুলেই গিয়লছিলাম, এখন কি হবে? পুলিশ কি বিষন্নকে ধরে নিয়ে যাবে?। ভয়ে আমার সারা শরীর কাঁপছে।বিষন্নকে দেখে তেমন চিন্তিত মনে হচ্ছে না।সে দিব্যি জুসের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে।

খাওয়া শেষ হওয়া অব্দি থানার ওসি বসে রইলো।খাওয়া শেষে আঙ্কেল ওসির সামনের সোফায় বসলেন।সাথে বিষন্নও বসলো।আমি ওপর থেকে সব দেখছি।ওসি বললো

” স্যার কেমন আছেন, শরীর ভালো? ”

” ভালো না,প্রেসারটা আপ-ডাউন করছে।এতোরাতে কি মনে করে? ”

” স্যার আসলে আপনার ছেলের নামে একটা অভিযোগ আছে ”

আঙ্কেল সহজ ভঙ্গিতে বললেন ” কি অভিযোগ? ”

” উনি গতকাল একজনকে মা*ডার করেছেন।আর দুইজন হসপিটালে,ওদেরও অবস্থা খারাপ ”

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here