তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই সিজনঃ২ ,পার্টঃ১

0
1842

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#সিজনঃ২
#পার্টঃ১
#লেখকঃজয়ন্ত_কুমার_জয়

মাঝরাতে হঠাৎ আমার মনে হতে লাগলো আমি ভয়ঙ্কর একটা অন্যায় করে ফেলেছি।স্ত্রী হিসেবে আমার এই বিষয়টা বিষন্নকে জানানো প্রয়োজন।কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা শেষ পর্যন্ত বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না,কেননা এতোক্ষণে আমার ঠোঁ’ট বিষন্নর দখলে।বিষন্নর স্পর্শে আমার পুরো শরীর শিউরে উঠছে বারবার।

বিষন্ন আমার থেকে দুই বছরের জুনিয়র।আজ আমাদের ফুলসজ্জা। বিষন্নর স্পর্শ পেতেই আমার পুরনো সেই স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো,ভেসে উঠলো সেই নির্মমতার দৃশ্য।আমার এখন কি করা উচিত? বিষন্নকে কি সেই কলঙ্কিত ঘটনার কথা কি বলবো? কথাটা শোনার পর কি ও আমায় আর ভালোবাসবে না?। এইসব ভাবতে ভাবতেই বিষন্ন আমার কপাল থেকে চুল থেকে সরিয়ে দিতে দিতে বললো

” মিষ্টি,তোমায় অন্যমনস্ক লাগছে,কি হয়েছে? ”

আমি ভয়ঙ্কর সেই ঘটনার কথা বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না।হেসে বললাম ” কই না তো,কিছু হয়নি ”

” তোমায় কেমন যেন লাগছে,”

” একটু নার্ভাস লাগছে,আর ভয়ও করছে ”

” ভয় করছে? কেন? ”

এই ভয়ের কথা আমি বলতে পারবো না বিষন্ন,প্লিজ জানতে চেয়ো না।তোমায় অনেক যুদ্ধ করে পেয়েছি,আর হারাতে চাই না।আচ্ছা ভালোবাসার মানুষটার এইটুকু ত্রুটি কি তুমি মেনে নিবে না?।বিষন্নর ডাকে আবারো এইসব ভাবনা কাটলো।বিষন্ন আমার কপালে হাত রেখে বললো

” তোমার শরীর কি খারাপ? ”

” আমার পি’রি’য়’ড চলছে ”

কথাটা বলে দুজনই অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গেলাম।এই প্রথম ওর সাথে এই বিষয়টা শেয়ার করলাম।লজ্জায় মাটির নিচে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।বিষন্ন ইতস্তত করে বললো

” সরি,আমি বুঝতে পারিনি।তুমি ঘুমাও ”

আমি কিছু বললাম না,ওপাশ ফিরে শুয়ে থাকলাম।প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে।বাসর রাতটা এভাবে নষ্ট করার কি খুব প্রয়োজন ছিলো?বিষন্ন না জানি মনে মনে কি ভাবছে।পি’রি’য়’ড হওয়ার মিথ্যা বিষয়টা হঠাৎ মাথায় এলো কিভাবে সেটাই বুঝতে পারছি না,আজকাল হুটহাট কিসব উদ্ভট কথা মাথায় ভর করে বসে।

বেশ কিছুক্ষন পর পাশ ফিরে বিষন্নর দিকে তাকালাম।টেবিল ল্যাম্পের হাল্কা লাল আলো ঝরে পড়া ফর্সা মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলাম মুগ্ধ দৃষ্টিতে।মনের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হচ্ছে।ইচ্ছে করছে ঘুমন্ত বিষন্নকে ডেকে তুলে বলি ” এই বিষন্ন,তুই বাসর রাতে ঘুমাইচ্ছিস কেন? আমার ওইসব হয়নি,তোকে মিথ্যা বলছি।আমি অনেক কিছুই বলি,সবকিছু ধরবি না বুঝলি? এখন আমায় জরিয়ে ধরে একটু আদর করে দে “।কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও কথাগুলো চাপা রেখেই বিষন্নর দিকে তাকিয়ে শুয়ে রইলাম।সাথে সাথেই বিষন্ন চোখ মেলে তাকালো আমার দিকে।চোখে চোখ পড়ায় অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গেলাম।লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললাম।বিষন্ন আমার দিকে একটু ঝুঁকে এসে বললো

” আচ্ছা তোমার কি পে’টে ব্যাথা করছে? ”

আমি লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম ” একটু একটু করছে,তুই জরিয়ে ধরবি? তাহলেই সব ব্যাথা চলে যাবে ”

বিষন্ন একটু হেসে আধশোয়া হয়ে দুইহাত বাড়িয়ে দিলো।আমিও ওমনি বিষন্নর বু’কে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে রইলাম।বিষন্ন দুইহাতে আমার পি’ঠে হাত বুলাচ্ছে।এ যেন এক স্বর্গীয় আনন্দ,এক অন্যরকম অনুভূতি।আমি ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম বিষন্নর শরীরের গন্ধ নিতে।বিষন্নর বু’ক থেকে মাথা সরিয়ে বিছানায় বাবু হয়ে বসে বললাম

” আচ্ছা বিষন্ন তুই আমায় ভালোবাসিস? ”

বিষন্ন মুখ ভোতা করে বললো ” এটা কেমন কথা? ভালো না বাসলে এতো বছর অপেক্ষা করতাম ? ”

” তাহলে কেন বলিস না,তুই আমায় ভালোবাসিস? ”

” না বললেই বা কি, তুমি বুঝনা নাকি ? ”

” বুঝি তো,তোর মতো আমায় কেউ ভালোবাসবে না।তবুও এখন থেকে সবসময় ভালোবাসি বলবি,বুঝলি? মনে থাকবে তো? ”

বিষন্ন বাধ্য ছেলের মতো বললো ” হু, মনে থাকবে ”

” আচ্ছা,তাহলে এখন একটা বোঝাপড়া হয়ে যাক, ”

” কিসের? ”

” এই যে আমি তুই তুই করে বলি এটা নিয়ে।যতোই পিচ্চি হোক,জামাইকে তো তুই তোকারি করা যায় না বল? আমি ঠিক করেছি এখন থেকে তুমি করে বলবো ”

” তোমার মুখ তো তুই ডাকটা শুনতেই আমার কেন জানি বেশি ভালোলাগে ”

” আগে লাগতো,এখন আর লাগবে না ”

বিষন্ন ভ্রু কুচকে বললো ” কেন? ভালো লাগবে না কেন? ”

” কারণ এখন আমি তোর বউ।আগে ছিলাম প্রেমিকা।প্রেমিকার সবকিছু সহ্য হলেও বউয়ের সবকিছু সহ্য হবে না।যখন প্রেমিকা ছিলাম তখন যা বলতাম তাই করতি,না করলে ব্রেকআপের ভয় দেখানো যেতো।আর এখন তো সেটা করতে পারবো না ”

” এতো পাকা পাকা কথা কই থেকে শিখছো ”

” সিনিয়র বউ হলে পাকা পাকা কথা শুনতেই হবে বুঝলি? অহহ সরি,বুঝছো? এখন থেকে তুমি বলা শুরু ”

বিষন্ন হাসলো।আমি এক লা’ফে বিষন্নর বুকে গিয়ে মুখ লুকালাম।বিষন্ন ডান হাতে আমার চুলে বিলি কে’টে দিচ্ছে।মনের প্রবল অনূভুতি গুলো আবারো তাড়া করতে লাগলো,শ্বাস দ্রুত ওঠা-নামা করছে।এই অনুভূতির মানে বিষন্নকে কাছে পাওয়ার,খুব কাছে পাওয়ার।যতোটা কাছে পেলে বিষন্নর শরীরকে নিজের মনে হবে।আমি নিজেকে যেন আর সামলাতে পারলাম না,প্রবল অনুভূতিরা আমার ধৈর্য্যকে হার মানিয়ে দিলো।বু’ক থেকে মাথা তুলে বিষন্নর বু’কের মাঝখানে একটা চু’মু দিলাম,এরপর গলায়,এরপর থুতনিতে, এরপর…….।

সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন দেখলাম বিষন্ন আমায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। ওর গরম নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ে আঁ’ছড়ে পড়ছে।কিছুক্ষণ বিষন্নর দিকে তাকিয়ে রইলাম।মনে মনে বললাম,” এই ছেলেটা এখন আমার,একান্তই আমার।আমার সবথেকে কাছের মানুষ,যে আমার মন খারাপে,আনন্দে সবসময় এই ছেলেটা আমার পাশে থাকবে “।এইসব ভাবতেই কেমন যেন লজ্জা লাগছে। বিষন্নর কপালে একটা আলতো চু’মু দিয়ে ওর ভারী হাতটা আমার পে’টের ওপর থেকে সরিয়ে চুলগুলো বাঁধতে বাঁধতে আয়নার সামনে গিয়ে প্রচন্ড একটা ধাক্কার মতো খেলাম।নিজেকে দেখে নিজেই যেন চিনতে পারছি না। কাজল চোখের চারপাশটায় লেপ্টে গেছে,লিপস্টিকের লাল রঙ্গে ঠোঁ’টের আশপাশটার লাল হয়ে আছে।পরনে যে শাড়ি নেই সেটা এতোক্ষণে নজরে পড়লো।পরনে শুধু ব্লাউজ আর পেডিকোটে এই লেপ্টে যাওয়া মেকাপে ভূতের মতো লাগছে।দ্রুত শাড়ি নেওয়ার জন্য বিছানার কাছে গিয়ে দেখলাম বিষন্ন শাড়ি দিয়ে নিজেকে পেঁচিয়ে ঘুমাচ্ছে।আলমারি থেকে বিষন্নর একটা টি-শার্ট, আর ছোট সাইজের একটা প্যান্ট হাতে নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলাম।

বিষন্নর টি-শার্ট আর ছোট সাইজের প্যান্টটা পড়ে আয়নার সামনে বসে আছি।ভেবেছিলাম একটু সাজুগুজু করবো,কিন্তু এখানে দেখি সব ছেলেদের ক্রিম।বিকেলে একটু বেড় হতে হবে,কেনাকাটা করতে হবে।সাজুগুজুর উপায় না পেয়ে আয়নার সামনে বসে বসে নিজেকে দেখতে থাকলাম।ভাবতে লাগলাম কাল রাতের কথা।হঠাৎ মনে হলো ” আচ্ছা আমি তো শেষের দিকে নিজেই সব করে ফেলছি।বিষন্ন তো নিশ্চয়ই জেনে গেছে পি’রি’য়’ডের বিষয়টা মিথ্যা বলেছিলাম।ইশশশ,মিষ্টি রে তুই যে কি করিস না।নিজের ওপর কি এতোটুকুও নিয়ন্ত্রণ নাই তোর? “।

আয়নার সামনে থেকে উঠে বেলকনিতে এসে দাড়ালাম। আজকের সকালটাও যেন অন্যদিনের মতো না,একটু অন্যরকম,একটু স্পেশাল।বেলকনি থেকে ঘুমন্ত বিষন্নকে দেখছি।আবারো মনের মধ্যে সেই ভয়ঙ্কর রাতের ঘটনাটা ভাসতে লাগলো।মুহুর্তেই যেন আমার সব খুশি,আনন্দ সব যেন হারিয়ে গেলো।মন ছেয়ে গেলো এক অজানা আতঙ্কে।

নিচ থেকে আন্টির ডাকে সেই ভয়টা সরে গেলো।হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা এখনও কি আন্টি বলেই ডাকবো? ছোট থেকে যাকে আন্টি বলে ডেকে বড় হইছি, তাকে কিভাবে মা বলে ডাকবো?। আন্টির ডাকে সাড়া দিয়ে বিছানার কাছে গিয়ে বিষন্নকে কয়েকবার ডাকলাম।কিন্তু উনি ওঠা তো দূরের কথা,আমার হাত বু’কের সাথে চেপে ধরে আরামে বিড়ালের মতো ঘুমাচ্ছে।আমি ওর পাশে বসলাম।ও একটু নড়েচড়ে বিরবির করে ঘুমের তালেই কিসব যেন বললো।আমি ওর পাশে বসেই ওর দিকে চেয়ে রইলাম।বিষন্ন কোলবালিশের মতো আমার হাতের ওপর গাল রেখে ঘুমাচ্ছে।আমি চাইলেই হাতটা সরিয়ে নিতে পারতাম,কিন্তু নিলাম না।ওর থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেয়ার স্পর্ধা যেন আমার কখনোই না হয়।বিষন্নর হাতে চু’মু দিয়ে মনে মনে ভাবলাম ” বিষন্ন,তুই আমার এই ত্রুটিটুকু মেনে নিবি তো? ”

চলবে?

সিজনঃ২ বুঝতে হলে যে সিজনঃ১ পড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই।সিজনঃ১ এর সাথে সিজনঃ২ এর মিষ্টি আর বিষন্ন ছাড়া তেমন মিল নেই।সিজনঃ১ এ এদের বিয়ের আগের লাভস্টোরি ছিলো,সিজনঃ২ এ বিয়ের পরের লাভস্টোরি থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here