#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#সিজনঃ২
#পার্টঃ৩
#লেখকঃজয়ন্ত_কুমার_জয়
বাড়িতে ফিরতেই মা রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ” তোকে যে বারবার বললাম মিষ্টির সাথে থাকবি,তারপরেও ওই ক্লাবে কেন গেছিলি? ”
হাত থেকে ঘড়ি খুলতে খুলতে বললাম ” মা আর কতবার বলবো আজকে ক্লাবের প্রথম দিন,তাছাড়া এমনিতেও দেরি হয়ে গেছে।আর মিষ্টিকে তো আমি নামিয়ে দিয়ে তারপর গেছি ”
” ও একা একটা মেয়ে হয়ে ঘুরেফিরে শপিং করবে? ”
” আমি থাকলে আরো বেশি ঘুরতে হতো,আমি তো চিনিনা কোথায় কি পাওয়া যায়।বাদ দাও তো মা এইসব কথা,ফ্রেশ হয়ে নিই,টাটা ”
একথা বলে মায়ের থেকে সরে এলেও মায়ের কঠিন কঠিন কথা চলতেই থাকলো।এখন মনে হচ্ছে সত্যিই তো,মা তো ঠিকি বলছে,মিষ্টিকে একা ছাড়া একদমই উচিত হয়নি।রুমে গিয়ে দেখলাম মিষ্টি বিছানার ওপর খানিকটা হেলে শাড়ি ভাজ করছে।পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।ভেবেছিলাম মিষ্টি রেগে থাকবে,জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলবে ” একদম কাছে আসবে না,তোমার ক্লাব নিয়েই থাকো “।কিন্তু আমার ভাবনা পুরোপুরি ভুল প্রমাণ করে মিষ্টি হেসে বললো
” এতোক্ষন লাগলো আসতে?আচ্ছা এখন ফ্রেশ হয়ে নাও,আমি খাবার নিয়ে আসি ”
মিষ্টির স্বাভাবিক আচরণটা আমার কাছে এখন কেন জানি অস্বাভাবিক লাগছে।মিষ্টিকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বললাম
” তুমি কি রাগ করছো? ”
মিষ্টি ভ্রু কুচকে বললো ” ওমা রাগ কেন করবো? ”
” ওই যে তোমায় একা রেখেই ক্লাবে চলে গেলাম।দেরি হয়ে গেছিলো জানোই তো,আর তাছাড়া আজকেই প্রথম দিন,আর…..”
আমার কথা থামিয়ে দিয়ে মিষ্টি বললো ” আরে বাবা সেটা তো আমি বুঝি নাকি?আমি কিচ্ছু মনে করিনি,তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে আসো ”
” সত্যি বলছো তো? ”
” হু সত্যি ”
বলপই মিষ্টি টাওয়ালটা আমার হাতে দিয়ে আবারো শাড়ি ভাজ করছে। আমি টাওয়াল হাতে পেঁচিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকবো তখন শুনলাম মিষ্টি নিচু স্বরে বলছে ” নতুন বউয়ের থেকে যে ক্লাব বেশি ইম্পরট্যান্ট সেটা তো সবাই জানে,এখানে রাগ করার মতো কিছু আছে নাকি?এখানে কেউ রাগ করে নাকি? ”
আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না,তবে এতোটুকু বুঝলাম ও সত্যিই রেগে আছে।এটাকে অবশ্য রাগ বলে না,এটাকে বলে অভিমান।ভালোবাসার মানুষের ওপর রাগ জিনিসটা কখনো আসে না।
এতোক্ষনে বুঝলাম অভিমানের চাদরটা বেশ ভারী হয়েছে।প্রায় আধাঘন্টা হলো পাশাপাশি শুয়ে আছি,অথচ মিষ্টি কোনো কথা বলছে না।একবার সাহস করে হাতে হাত রাখলাম,কিন্তু সাথেসাথেই ও হাত সরিয়ে নিলো।এরপর আর স্পর্শ করার মতো সাহস পাচ্ছি না।মিষ্টি আমার ঠিক বিপরীত পাশ ফিরে শুয়ে আছে।ঘুমিয়ে গেছে এরকম একটা ভাব ধরে থাকলেও ও যে জেগে আছে সেটা বুঝতে পারছি।আচ্ছা রাত বারোটায় বউয়ের অভিমান কিভাবে ভাঙ্গতে হয়?।
বিছানা থেকে উঠে মিষ্টি যে পাশ ফিরে শুয়ে আছে সেদিকে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসলাম।আমি যে সামনে বসে আছি সেটা মিষ্টি হয়তো বুঝতে পেরেছে,কেননা ও প্রাণপণে চেষ্টা করছে চোখ বন্ধ রাখতে।এতোজোড়ে চোখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে যে চোখের পাতা কুঁচকে গেছে।বিষয়টা দেখতে ভালোই লাগছে।কানের কাছের চুলগুলো গুঁজে দিয়ে বললাম
” এতো কষ্ট করে চোখ বন্ধ রাখতে হবে না।আমি জানি তুমি জেগে আছো ”
মিষ্টি চোখ মেললেও কপালের চামড়া কুঁচকে গেলো।কঠিন গলায় বললো
” ঘুমের মধ্যে সামনে এমনে বসে থাকলে কি ঘুম আর থাকে নাকি? ”
” ও আচ্ছা? তা ঘুমালে বুঝলে কিভাবে সামনে কেউ বসলো কিনা? ”
” কেউ না বুঝলে সেটা তার সমস্যা।আমি ঠিকি বুঝি ”
” তুমি না তখন বললে যে রাগ করোনি ”
মিষ্টি বিছানায় উঠে বসলো।গাল ফুলে তাকায়ে রইলো অন্যদিকে।আমি বিছানায় ওর সামনাসামনি বসলাম।দুঃখিত স্বরে বললাম
” তো কি করলে এখন আপনার রাগ ভাঙ্গবে শুনি? ”
” আজব তো,কতবার বলবো রাগ করিনি।ঘুম পাচ্ছে,আমি ঘুমাবো, গুড নাইট ”
এতটুকু বলে মিষ্টি ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।চাদরে নিজেকে পুরোপুরি ঢেকে নিলো।আমি বসে বসে ভাবতে লাগলাম এতটুকু কারনে কেউ এতোটা অভিমান করে কিভাবে?
*
চাদরের নিচে থাকতে থাকতে এখন দম বন্ধ লাগছে।মাথার কাছ থেকে চাদরটা সরিয়ে এক বু’ক শ্বাস নিলাম।ব্যাপারটা কি? ও চুপচাপ হয়ে আছে কেন? ঘুমিয়ে পড়লো নাকি? ওরে বিষন্নর বাচ্চারে,ঘুমাইলে তুই আজ শ্যাষ!।চাদরটা সরিয়ে বিষন্নর দিকে তাকালাম।ও দুই হাটু ভাজ করে হাটুর ওপর হাত রেখে আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে।ওর এমন অবস্থা দেখে অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে বললাম
” কি হলো? এভাবে বসে আছো কেন? ”
” ভাবছি কি করলে তোমার অভিমান ভাঙ্গবে ”
ইচ্ছে করছে ওর গ’লা চেপে ধরে চিল্লিয়ে বলি, ওরে ছোট গাধা,এতো ভাবার কি আছে,একবার হাত সরিয়ে দিছি জন্য কি বারবার সরিয়ে দিবো নাকি? জরিয়ে ধরলেই তো অভিমান শেষ হয়ে যায়,এটাও কি বলে দিতে হবে নাকি?।কিন্তু আত্মসম্মানের জন্য এইসব বলতে পারছি না।অনুভব করলাম বিষন্ন চাদরটা তুলে আমার কোমড়ে হাত রাখলো।যদিও এতোক্ষন এটাই চাচ্ছিলাম তবুও একটা ঝটকায় ওর হাত সরিয়ে দিলাম।ওকে বুঝাতে হবে আমি প্রচন্ড রেগে আছি।বিষন্ন একটু পর চাদরের ওপর থেকেই জড়িয়ে ধরলো।ওর জড়িয়ে ধরায় এতো কেন ভালোলাগে?তখন মনে হয় আমি অন্য এক দুনিয়ায় চলে যাচ্ছ।তবুও এই ভালোলাগাকে আপাতত কিছুক্ষণ প্রশ্রয় দিলে চলবে না,আমাকে কঠোর হতে হবে।প্রথম প্রথম রাগ,শাসনে রাখতে হবে।অভিমানী ভাবটা বজায় রাখতে আমারো বিষন্নকে সরিয়ে দিলাম।
কি হলো এইটা?ও জড়িয়ে ধরতেছে না কেন?আচ্ছা আমি কি অতিরিক্ত করে ফেললাম? দু’বারই তো করছি শুধু।আরেকবার স্পর্শ করলে আমি কি আটকাতাম নাকি? আচ্ছা ও কি উল্টে আমার ওপর রাগ করলো? করলে করবে,ও কি জানে না? আরেকবার স্পর্শ করতে চাইলে আমি আটকাতাম না।যেহেতু বুঝে নি সেহেতু এটা ওর দোষ,আমার না।বিষন্নর চুপচাপ বসে থাকা দেখে এইবার আর রাগ কন্ট্রোল করতে পারলাম না।চাদরটা সরিয়ে প্রায় উড়ে গিয়ে বিষন্নর টি-শার্ট চেপে ধরে বললাম
” এতো ঢং কেন করিস তুই হ্যা? ”
” আমি কি করলাম? ”
” সেটাই তো,কিছুই করছিস না।ছোট গাধা একটা,মনে হয় ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না ”
বলেই বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম।পেছন পেছন বিষন্ন আসলো।এসে কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো,তারপর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো
” অভিমান করলে নিজেই ঠকবা,বুঝছো? ”
নিজে ঠকবো মানে? বুঝতে না পেরে বললাম ” মানে? ”
” মানে হলো এতোক্ষণ কত্তোগুলা আদর করতাম,কিন্তু অভিমান করার জন্য আদর গুলা মিস করলা,আফসোস ”
” এহহহ,,আমার বয়ে গেছে তোর আদর খেতে,যা ভাগ ”
বিষন্ন আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো ” আচ্ছা প্রমিজ করলাম,এখন থেকে আর এরকম হবে না।এখন থেকে সবসময় আমার কিউট বউটাকে সময় দিবো,এত্তো এত্তো ভালোবাসবো ”
” হু ঠিক আছে,ঠিক আছে,মনে থাকে যেন,প্রথমবার তাই মাফ করে দিলাম,”
” আর অভিমান করলে তোমার অভিমান তোমার দাড়াই এমনে ভাঙ্গাবো, বুঝছো? ”
” ও আচ্ছা,তার মানে তুমি এতোক্ষন ইচ্ছে করেই চুপ করে ছিলা?”
” না ঠিক সেটা না,তবে দেখলাম আর কি যে চুপ করে থাকলে তুমি কি করো ”
” আর আমি বেলজ্জার মতো বললাম জড়িয়ে ধরতে !! ভালো ভালো,এখন তুই বাঁচতে চাইলে আমার চোখের সামনে থেকে সর ছোট গাধা,নইলে তোর যে কি করবো।আমার কিন্তু মাথায় রক্ত উঠে গেছে , ”
চলবে?
Baki part kobe deoa hbe???