তোমার মাঝে(২),পর্ব_০৪,০৫

0
3333

তোমার মাঝে(২),পর্ব_০৪,০৫
সারিফা তাহরিম
পর্ব-০৪

সকাল হওয়া সত্ত্বেও জানালার কাছে আলো প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা পেয়ে রুমকে আলোকিত করতে পারছে না। ঘুটঘুটে আঁধার ঘরটি একেবারে নিঃশ্চুপ হয়ে আছে। এই গম্ভির নিঃস্তব্ধতার মাঝেও আমায় শাসিয়ে যাচ্ছে মেহরাবের রাগ মিশ্রিত শ্বাস। উনার প্রতিটি শ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ে আমার মধ্যে কিছুটা ভয় আর অনেকটা অস্বস্তির সৃষ্টি করছে।

গতকাল মেহরাবের কাছ থেকে পালিয়ে এসেছিলাম ঠিক। কিন্তু আজ পালানোর কোনো রাস্তা নেই। ভার্সিটিতে এসেই মেহরাবের ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে থেকেছি।কিন্তু কথায় আছে না, “যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়”। আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি ঠিক তাই হয়েছে। প্রথম দুটো ক্লাস ভালোভাবেই শেষ করি।কিন্তু পরের ক্লাসেই মোটকা আলুর বস্তা এসে আমার সুন্দর দিনটাকে সন্ধ্যা বানিয়ে বাঘকে আমার সামনে পাঠালেন। মেহরাবের নাকি আমার সাথে কিসের কাজ আছে। আর আলুর বস্তার সম্মতি নিয়ে আমাকে টানতে টানতে একটা খালি ক্লাসরুমে এনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। ধরলেন বললে ভুল হবে, আমি নিজেই দেয়ালের সাথে সেঁটে আছি। আর উনি আমার দুই পাশে, দেয়ালে হাত রেখে আমাকে বন্দি করে রাখলেন।রাগে উনার ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে। রাগের কারণে তার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। আর এদিকে আমার নিঃশ্বাসও সমান তালে ভারি হচ্ছে। কিন্তু তা রাগের জন্য না বরং অস্বস্তির জন্য।

উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,

~” গতকাল এমন অভিনয় করেছিলে কেন?”

আমি ভয়ে চোখ পিটপিট করে উনার দিকে তাকালাম। উনি এবার জোরে চিল্লিয়ে বলে উঠলেন,,

~”জানো আমি কতোটা ভয় পেয়েছিলাম? আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল। নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছিল।কেন করেছো তুমি এমন? কেন?”

উনার শেষের কথাগুলো খুব জোরে বলার কারণে আমি কেপে উঠি।কেন জানি কিছু বলতে পারছি না। আসলেই তো উনি খুব অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। বারবার আমাকে জাগানোর জন্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমি তো জানতাম না যে উনি সামান্য একটা বিষয়কে এতোটা সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলবেন। আমি তো শুধু পালানোর জন্য এমনটা করেছিলাম। কিন্তু এর ফল এমনটা হবে কখনোই ভাবি নি। হুট করে উনি আমার প্রতি খুব কেয়ারিং হয়ে উঠেছিলেন। যতোটা কেয়ারিং সবচেয়ে কাছের কারো জন্য হওয়া যায় ঠিক তেমন। কিন্তু কেন? কি হিসেবে? আমি তো উনার শত্রু ছাড়া আর কিছুই না। তাহলে?

আমার কাছ থেকে কোন জবাব না পেয়ে উনি দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। আমার দিকে রাগীভাবে তাকিয়ে বললেন,,

~”তোমার জন্য আমার হাল বেহাল হয়ে গিয়েছিল। তোমার দুষ্টুমিতে আমার পাগলপ্রায় অবস্থা হয়েছিল। এর জন্য তোমার শাস্তি পেতে হবে। কঠিন শাস্তি। ”

এই বলে উনি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে দরজার কাছে যেতেই আমি বলে উঠলাম,,

~”এতোটা অস্থিরতা কেন? এতোটা পাগলামি কেন? এতোটা পসেসিভনেস কেন? কোন কাছের মানুষ ছাড়া তো এতোটা কেয়ারিং হওয়া সম্ভব না। তাহলে আমি আপনার কি হই?”

আমার কথা শুনে উনি থমকে গেলেন। একটু চুপ থেকে আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,,

~”তুমি আমার কিছুই না। হয়তো কিছু না হওয়া সত্ত্বেও তুমিই আমার সবকিছু। ”

???

আমি রেডি হচ্ছি। একটু পরে আমরা আরাফ ভাইয়াদের বাসায় যাব।কারণ আজ এক বছর পর আরাফ ভাইয়ার ছোট ভাই সাদাফ ভাইয়া কানাডা থেকে ফিরে আসছে। বিদেশে থাকার কারণে আরাফ ভাইয়ার এনগেজমেন্টে আসতে পারে নি। আর সেই উপলক্ষে আজকের অনুষ্ঠান। সাদাফ ভাইয়া মেহরাবের সমবয়সি।মেহরাব আর সাদাফ একই সাথে পড়াশোনা করে। কিন্তু বিজনেসের কিছু কাজে কানাডা যাওয়ার প্রয়োজন ছিল।আরাফ ভাইয়া এখানকার কাজে ব্যস্ত থাকায় আর আঙ্কেল কিছুটা অসুস্থ থাকার কারণেই সাদাফ ভাইয়াকে পাঠানো হয়েছিল।আর আজ তিনি ফিরে আসবেন। বলা যায় আজ আবার নতুন করে দিয়াপু আর আরাফ ভাইয়ার এনগেজমেন্ট হবে।

কিন্তু আমার সেইদিকে খেয়াল নেই বরং এখনো সকালের ঘটনাগুলো মনে পড়ছে।মেহরাবের কথাগুলোও আমার কানে বাজছে। কি বুঝাতে চেয়েছেন উনি? একটু বুঝিয়ে বললেই তো হতো। আর বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলারও সুযোগ দেয় নি উনি। কথাটি বলেই সেখান থেকে হনহনিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিল। আর আমি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে ছিলাম তার যাওয়ার দিকে।

~”কিরে তিতলি আর কতোক্ষণ? কোনো তেমন সাজ্যগুজুও করিস না। জোর করেও সাজানো যায় না। সবসময় ইন্টারন্যাশনাল নরমাল সাজ দিস। তবুও এতো দেরি হয় কেন বুঝি না।আরে আমাদের যেতে হবে তো।দেরি হয়ে যাচ্ছে। সবাই অপেক্ষা করছে তো। তারাতাড়ি কর আমার মা।”

মায়ের ডাকে আমার ধ্যান ভাঙে। আমি বললাম,,

~”এইতো আর ২ মিনিট মা। তুমি যাও। আমি আসছি।”

~”ঠিক আছে। তারাতাড়ি আয়।”

আম্মু যেতেই আমি চোখে মোটা করে আইলাইনার দিলাম। যদিও আইলাইনার এর এই থিকনেস আমার কাছে মোটা হলেও সবার কাছে বেশি হলে মিডিয়াম মনে হবে। যাই হোক আইলাইনার দেওয়ার পরে ঠোঁটে হালকা পিঙ্কিস লিপ বাম দিলাম। তারপর চিরুনিটা পরশ ছোঁয়ালাম চুলে। আজ আমি একটা চকলেট কালার গাউন পড়েছি।চুলগুলো ছেড়ে রেখেছি।সেই সাথে আমার হালকা সাজে আমি রেডি হয়ে গেলাম।

নিচে যেতেই দেখতে পেলাম দিয়াপু সুন্দর করে সেজেগুজে বসে আছে। আপু আজ একটা হালকা গোলাপি কালারের শাড়ি পড়েছে। শাড়িটি বেশ সুন্দর করে কাজ করা। সেই সাথে আপু গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিয়েছে। চোখে কাজল ও মোটা করে আইলাইনার। সাথে আইলেশ ও দিয়েছে। আর দুই গালে হালকা গোলাপি ব্লাশ। আপুর ওয়েভ হেয়ার সামনের দিকে হালকা ফুলিয়ে রাখা। ডান কাধের উপর চুল এনে রেখেছে। কিন্তু আমার কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না যে দিয়াপু এতোটা সেজেছে। হ্যাঁ দিয়াপু সাজতে পছন্দ করে ঠিক। কিন্তু আইলেশ খুব একটা লাগাই না। আর ভারী মেক আপে ও কম দেখা যায়। কিন্তু সত্যি আজ দিয়াপুকে পুরো অপ্সরি লাগছে।

আমি আপুর পাশে বসে জিজ্ঞেস করলাম,,

~”কি গো আরাফ জিজুর বউ। আজ দেখছি বেশ সাজুগুজু করেছেন। আইলেশ লাগিয়েছেন,, ব্লাশ দিয়েছেন। বাত ক্যায়া হে? মান মে লাড্ডু ফুটা হে কেয়া? আমি বলছিলাম কি তুমি শুধু শুধু ব্লাশ দিয়েছো। ব্লাশ না দিলেও চলতো।কারণ আরাফ জিজু তোমার এই রূপ দেখে তোমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকবে। তখন তো তুমি এমনিতেই গোলাপি হয়ে যাবে। এক্সট্রা ব্লাশের প্রয়োজন ছিল না। তখন তোমাদের দুজনের মনে চলবে,, লা লা লা লা লা লা লা….. ”

কথাগুলো বলে আপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম আপুর চোখ রাগে লাল হয়ে গেছে।আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,,

~”কি গো দিয়াপু,, তুমি হুট করে ড্রাগন হয়ে গেলে কেন? না মানে ড্রাগনের মুখ থেকে আগুন বের হয়ে সব জ্বালিয়ে দেয়।এখানে তো তোমার চোখ থেকে আগুন বের হয়ে আমাকে জ্বালিয়ে দিবে।”

আমার কথা শেষ হতেই আপু জোরে চিল্লিয়ে বলল,,

~”তোকে বলেছিলাম না ওই আরাফের কথা আমাকে শুনাবি না। অসহ্য লাগে আমার।আমি কখনোই উনার জন্য এতোটা সাজব না। আমাকে জোর করে সাজানো হয়েছে। আর উনার জন্য আমার মনে কোন জায়গা ছিল না, এখনো নেই আর কখনো থাকবে না। এগুলো শুধুই ফর্মালিটি পালন করছি। এর চেয়ে বেশি কিছু না। ”

কথাগুলো বলে আপু থামল। দিয়াপুকে আমি কখনো এতোটা রেগে যেতে দেখি নি। আজ আপু খুব বেশি রেগে গেছে। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম। তারপরে পরিবেশ কিছুটা শিথিল হওয়ার পরে আমি এক কানে হাত দিয়ে বললাম,,

~”আপুনি সরি। ভুল হয়ে গেছে আর এমন করব না। ”

আপু কিছু বলল না। তাই আমি আবার বললাম,,

~”আপুনি সরি তো। এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। আর এমন ভুল করব না। ”

এবার দিয়াপু আমাকে জরিয়ে ধরে বলল,,

~”প্রজাপতি তুই তো জানিস আমার সাথে কি হয়েছে। আমার জীবনের সেই দিনগুলো। আমার অতীত। এসবের পরে আমি কিভাবে পারব অন্য কাউকে ভালোবাসতে? আমার সেই স্মৃতিগুলো যে আমায় খুব পোড়ায় প্রজাপতি। আমি চেয়েও ভুলতে পারি না। ”

কথাগুলো বলার সময় দিয়াপুর গলা ধিরে আসছিল। আমিও আপুকে জরিয়ে ধরলাম আর মনে মনে বললাম,,

“হে আল্লাহ তুমি আমার দিয়াপুর জীবনের আধার দূর করে দাও। আরাফ ভাইয়ার মাধ্যমে তার জীবন আলোকিত করে দাও। আরাফ ভালোবাসায় যাতে দিয়াপুও তাকে ভালোবেসে ফেলে।”

~”দুই বোনের ভালোবাসার পালা শেষ হলে কি আমরা যেতে পারি। সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”

আম্মুর কথা শুনে আমি আর দিয়াপু উঠে দাড়ালাম। হালকা হেসে আরাফ ভাইয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।

চলবে…..

তোমার মাঝে(২)
পর্ব_০৫
সারিফা তাহরিম

“রাকিব, লাশগুলো ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠিয়ে টেস্ট করাও যে কিভাবে এদের মৃত্যু হয়েছে?আর হাতে পায়ে আঙ্গুলের গভীর ছাপ দেখা যাচ্ছে। সেই ফিঙ্গার প্রিন্টগুলো বের করাও। আর লাশগুলো বেশিদিন রাখা যাবে না। রেফ্রিজারেটরে রাখা হয়েছে। কিন্তু বেশিক্ষণ রাখলে আমরা বুঝতে পারব না যে আর কোথায় কোথায় আঘাত করেছে। সেই সাথে ফিঙ্গার প্রিন্টটাও নষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে অনেক বড় প্রুফ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই যা বলেছি তা তারাতাড়ি করো।”

মেহরাবের কথা শুনে রাকিব বলে,,

~”জি স্যার আমি লাশগুলো পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

~”আর গোডাউনের পিছনে,, সামনে এমনকি যেই রাস্তা দিয়ে লোকটা পালিয়েছিল তার আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ কালেক্ট করো।”

~”জি স্যার আমি এক্ষুনি কালেক্ট করছি।আর স্যার আরেকটা জরুরি ইনফরমেশন পেয়েছি।”

~”কি ইনফরমেশন? ”

~”স্যার ওই ছেলেগুলোর হাতে যেই ট্যাটু তা সম্পর্কে খোঁজ লাগিয়েছিলাম। যেখানে ট্যাটু করা হয় সেখানের কয়েকটি শাখায় গেলে তারা বলে এই ডিজাইন সম্পূর্ণ ভিন্ন যা তারা কেউ আগে দেখেন নি বা করেন নি।কিন্তু তাদের কাছ থেকে জানতে পারি যে এই ট্যাটু বেশ ডিপ যা বেস্ট আর্টিস্ট ছাড়া আর কেউ করতে পারে না। অন্য কেউ ভয়ে তা করতে চায় না। কারণ এতে অনেক রিস্ক থাকে। কিন্তু উনি খুব সহজেই তা করতে পারেন।সেই ট্যাটু আর্টিস্ট নাকি ইংল্যান্ড থেকে আসে। তার সান্নিধ্যে যাওয়া খুব একটা সহজ না। উনার কাছে গেলেই সেই ট্যাটু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারা যাবে।”

~”হুম আসলেই ট্যাটুগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। আমিও এই ধরনের ট্যাটু কখনো দেখি নি। একদিকে কিছুটা লাভ সেইপ দিয়ে বাকিটা ভয়ংকর কিছু দিয়ে মোড়ানো। এই ধরনের ট্যাটুর মানে টা কি হতে পারে? ”

~”জি স্যার। সেটাই কথা। এরকম অদ্ভুত রকমের ট্যাটু জীবনে এই প্রথমবার দেখলাম।”

~”কিন্তু রাকিব একটা জিনিস ক্লিয়ার যে এটা একটা গ্যাঙের ট্যাটু। এই গ্যাঙের প্রতিটি মেম্বারেরই সেইম ট্যাটু আছে। এমনকি গ্যাঙ লিডারেরও। হতে পারে একদম একই বা কিছুটা ভিন্ন। তবে এই ট্যাটুর মেইন পার্টটা থাকবেই।এই একটা সুত্র আমরা সেই ব্যক্তিকে ধরার বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে যেতে পারব।”

~”জি স্যার।ঠিক বলেছেন। কিন্তু স্যার আসলে আমার না একটা প্রশ্ন ছিল। যদি কিছু মনে না করেন তাহলে জিজ্ঞেস করি?”

~”আরে রাকিব বলে ফেলো। তোমাকে আমি কতোবার বলেছি আমাকে স্যার স্যার করবে না ভাইয়া বলবে। তুমি তো আমার ছোট ভাইয়ের মতো।তাহলে এতো ফর্মালিটিসের কি আছে?যা জিজ্ঞেস করার করে ফেলো।”

~”আসলে ভাইয়া আমাদের এই গোপন গ্যাংটা তো মূলত অন্যায়কে প্রতিহত করার জন্যে। এমনকি মেয়েদের ব্যাপারেও অনেককে শাস্তি দিয়েছি। কিন্তু কোন মেয়ের ব্যাপারে নিজ থেকে এতোটা প্রকাশ্যে এবং শুরু থেকে কাজ করতেন না।মানে ডিরেকশন এবং লাস্ট পর্যায়ে কার্লপ্রিটগুলোকে ধরার পরে শাস্তি দিতেন। কিন্তু এবার আপনাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। আপনি বেশ অস্থির হয়ে পড়ছেন। সেদিন কিডন্যাপ হওয়ার পরে আপনি নিজেই ছেলেগুলোকে খুব মেরেছেন। সব মিলিয়ে এইবার আপনি বেশ অস্থির ও ছটফট করছেন। তিতলি ম্যাডামের জন্যও বেশ কেয়ারিং হয়ে উঠেছেন। আগে তো অন্য কোন মেয়ে থ্যাংক্স দিতে চাইলেও আপনি তেমন পাত্তা দিতেন না। তাহলে হুট করেই তিতলি ম্যাডামের জন্য এতো পরিবর্তন কেন?”

রাকিবের এমন প্রশ্নে মেহরাব স্তম্ভিত হয়ে যায়। সে নিজেও এই বিষয়টি এই কয়েকদিনে বেশ ভালো করে খেয়াল করছে। কিন্তু নিজেকে বিভিন্ন কথা দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন সে রাকিবকে সে কি বলবে? সে নিজেও তো জানে না কেন এমন হচ্ছে।

মেহরাব একবার রাকিবের দিকে তাকিয়ে আবার বাহিরের দিকে তাকাল। এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,,

~”জানি না রাকিব। আমি নিজেও জানি না কেন এমন হচ্ছে।তিতলির মাঝে আমি কেমন এক অজানা টান অনুভব করি। ওর কিছু হলে আমি নিজের মধ্যে থাকি না। পৃথিবীর সকল অস্থিরতা এসে আমাকে গ্রাস করে।কেন এমন হয়? আমি নিজেও তো বুঝতে পারি না।”

~”হুম। বুঝতে পেরেছি। ”

~”আচ্ছা সেসব কথা বাদ দাও। দেখ তো কয়টা বাজে? ”

~”স্যার সরি ভাইয়া, এখন তো সাতটা বেজে পনেরো মিনিট। ”

~”ওহ শিট। আজ তো খালামণির বাসায় যেতে হবে। সাদাফ আসবে আজ। দেরি হয়ে গেছে এমনিতে। এক্ষুনি যেতে হবে।চলো রাকিব।”

~”জি ভাইয়া চলুন।”

~~~~~~~~~~~~~

চারপাশে হালকা গোলাপি আলোয় বেশ সুন্দর লাগছে। সাদা আর গোলাপি ফুলের মিশ্রণে পরিবেশটি বেশ মোহনীয় লাগছে। সেই সাথে মৃদু হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।

বেশ কিছুক্ষণ হলো আমরা আরাফ ভাইয়াদের বাসায় এসেছি। আজ বাড়িটা সিম্পলের মধ্যে বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। অনেক আত্মীয় স্বজনরা এসেছেন।সকলেই আরাফ ভাইয়া আর দিয়াপুকে দেখছে। আরাফ ভাইয়ার আম্মু দিয়াপুকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। আমার সাথেও কয়েকজনের টুকটাক কথা হয়েছে। কিন্তু সেই দিকে আমার খুব একটা খেয়াল নেই। আমার দুচোখ তো শুধু একজনকেই খুজে যাচ্ছে।

কোথায় উনি? এখনো কি আসেন নি? উফফ আমি বারবার উনার কথা ভাবছি কেন? তিতলি তোর মাথা কি গেল নাকি? ওই মি. এগ্রেসিভ ম্যানের কথা কেন বারবার মনে পড়ছে? উনি তো শুধু রেগে যায়, ভয় লাগানোর জন্য ঝাপিয়ে পড়ে। উফফ তবুও উনার কথা মনে পড়ছে। কাউকে তো জিজ্ঞেসও করতে পারছি না। আচ্ছা নিজেই আসেপাশে হেটে দেখি কোথাও আছে নাকি।

এই ভেবে আমি উঠে দাড়ালাম। আসেপাশে তাকিয়ে হাটতে হাটতে কারো সাথে ধাক্কা খেলাম।মনে মনে বেশ বিরক্ত হলাম এই সময়ই ধাক্কা খাওয়ার প্রয়োজন ছিল।বিরক্তিতে কপাল কুচকে সামনে তাকিয়ে দেখলাম একটা চশমা পড়া একটা মেয়ে। বেশ কিউট দেখতে।

~”সরি সরি আপু। আমি ইচ্ছা করে ধাক্কা দেই নি।আসলে অতিরিক্ত এক্সাইটেড হয়ে হাটছিলাম তো তাই খেয়াল করি নি। সরি। ”

মেয়েটির কিউট ইনোসেন্ট ফেস আর কথাগুলো শুনে আমার বেশ ভালো লাগল। আমি মুচকি হেসে বললাম,,

~”ইট’স ওকে কিউটি। আর আমিও সরি। আসলে আসেপাশে তাকিয়ে হাটছিলাম তো তাই ভুলে ধাক্কা লেগে গেছে।”

~”আরে সরি বলতে হবে না। আচ্ছা আপু আপনি না অনেক কিউট। আমি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি।”

~”হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। আমার আরো ভালো লাগবে। তুমি তো আমার ছোট বোনের মতো তাই না কিউটি।”

~”ঠিক বলেছ আপুনি। কিন্তু তুমি এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করছো কেন? কাউকে খুঁজছিলে?”

~”না মানে এমনিই হাটছিলাম।একা বসে বসে বোরিং হচ্ছিলাম তো তাই।”( যদিও এটা মিথ্যা। আমি তো উনাকে খুজছিলাম। কিন্তু এই কথা কাউকে বলা যাবে না।)

~”ওহ আচ্ছা। তাহলে চলো আমরা বসে গল্প করি।”

~”হুম চলো। আমারও বেশ ভালো লাগবে।”

তারপর আমরা একপাশে বসে গল্প করতে লাগলাম। প্রথমেই আমরা পরিচিত হয়ে নিলাম। মেয়েটির নাম আনিকা। আরাফ ভাইয়ার একমাত্র খালাতো বোন। মানে ওই খারুস মেহরাবের একমাত্র বোন। আনিকা এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। দেখতে বেশ কিউট আর বেশ মিশুক একটা মেয়ে। আমার বেশ ভালো লেগেছে ওকে। মেহরাবের বোন হলেও মেহরাবের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। উনিও নাকি বেশ শান্ত কিন্তু আমি জীবনেও উনাকে শান্ত দেখি নি। সবসময়ই রেগে থাকে। হুহ্।

আমার পরিচয় শুনে আনিকা বলল,,

~”তুমিই তাহলে সেই তিতলি আপু যার জন্য ভাইয়া অস্থির হয়ে পড়েছিল। জানো তোমাকে যখন পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন ভাইয়া পাগলের মতো হয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ে। এরপর ওই ছেলেগুলোর সাথে ডিশুম ডিশুম ও করেছিল।”

আমি আনিকার এমন কথা শুনে অপ্রস্তুত হাসলাম। আমি প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে অন্য কথা বলা শুরু করলাম।কথা বলতে বলতে আনিকা বলে উঠে,,

~”উফ কতোক্ষণ হয়ে গেছে ভাইয়াটা এখনো আসছে না কেন? (বলেই চোখ উঠিয়ে মেইন ডোর এর দিকে তাকিয়ে বলল) ওই তো এসে গেছে।

আমি পেছনে ফিরে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম….

চলবে……

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here