তোমার মাঝে(২),পর্ব_১২,১৩শেষ
সারিফা তাহরিম
পর্ব-১২
—”কককি হহচ্ছে এএসব,, ততুমি আ আমার দদিকে এএগিয়ে আসছ ককেন?”
মেহরাবকে এগিয়ে আসতে দেখে নাফিজ ঘাবড়ে গিয়ে কথাটি বলল। মেহরাব বাঁকা হেসে বলল,,
—” কি হচ্ছে তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। আর আমি আপনার এগিয়ে আসছি আপনার মতো নষ্ট হয়ে যাওয়া মানুষটাকে ঠিক করতে। উফফ…..একটু বেশিই সম্মান দেখিয়ে ফেলছি আমি তাই না। তোর মতো ব্যক্তিকে তো আপনি বললেও ওই মর্যাদার অসম্মান করা হবে। ”
মেহরাব কাছে গিয়ে নাফিজের কলার চেপে ধরে চিল্লিয়ে বলল,,
—”বল তুই কেন এমন করেছিস? তিতলিকে কেন কিডন্যাপ করিয়েছিলি? কেন করেছিলি বল। আর তিতলিকে সেদিন কিভাবে অজ্ঞান করেছিস?”
নাফিজ মেহরাবের লম্বা সুঠাম দেহের সাথে পেরে উঠছে না। কিন্তু কিছুটা দাঁত চেপে বলল,,
—”আমি ভালোবাসি তিতলিকে। অনেক আগে থেকে ভালোবাসি। সবসময় ওকে নিজের করে পেতে চাইতাম। তিতলির কাছে যেতে চাইতাম। কিন্তু আমি তিতলির কাছে গেলেই তিতলি আমাকে সহ্য করতে পারত না সবসময় আমার থেকে দূরে দূরে থাকে। সেই সাথে ছোট মামুও আমাকে একদম পছন্দ করত না। উনি আমাকে তিতলির আশেপাশে যেতে দিত না। আর সেখানে তিতলিকে আমার সাথে বিয়ে দেওয়া তো সম্পূর্ণ দূরের ব্যাপার। তারা কেউই কখনো আমাকে মেনে নিত না। যা করার আমারই করতে হতো।
তাই তো আমি সেদিন আমার বন্ধুকে বলি যাতে কর্নারের টেবিলে রাখা বোতল থেকে এক বোতল পানি তিতলিকে দিয়ে আসতে আর ও দিয়ে আসে। কিন্তু আমার বন্ধুটা জানত না যে ওখানের সব পানির বোতল আগে ছিল না আমিই এনে রেখেছিলাম যখন তিতলিকে পানির জন্য বোতল খুজতে দেখি তখন। আর সেই পানির বোতলগুলোর ঢাকনায় আমি সরু সিরিঞ্জ দিয়ে ছোট্ট ফুটো করে বোতলের পানির সাথে হালকা ড্রাগস মিশিয়ে দিয়েছিলাম তাই মনে হয়েছিল ওটা মিনারেল ওয়াটার।আর পরে বোতলগুলো সরিয়ে ফেলি। আমার বন্ধুও এই প্ল্যানের কিছুই জানত না। আর আমিও তাকে গুটি হিসেবে চাল চেলেছি যাতে কোন সন্দেহ হলে ওর উপর হয়।
যদিও আমার ওকে ফাসানোর কোন ইচ্ছা ছিল না কিন্তু তিতলি আমার প্রথম প্ল্যান দুটোতে পানি ফেলে দেওয়ায় এই কাজ করতে হয়েছে। আমি তিতলির খাবার এমনকি জুসেও ড্রাগস মিশিয়ে তিতলিকে দিয়েছিলাম। ওকে অনেক জোর করেছি তবুও ও খায় নি। তাই এই চাল চালতে হয়েছে আমার। আর তাতে কাজ হয়। তিতলি অজ্ঞান হয় আর আমি তাকে গাড়িতে বসিয়ে আসি তারপর আমার লোকেরা ওকে নিয়ে যায়। আমার প্ল্যান মতো সব হচ্ছিল। আমি জানতাম যে তিতলিকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করলে ওর পরিবার আর সাথে তিতলিও জীবনেও কোন দিন আমাকে মেনে নিবে না। তাই আমি চেয়েছিলাম কিডন্যাপ করার পরে আমি এখানে থাকব। সবাই মিলে যখন খুঁজে না পেয়ে রাতে বাসায় ফিরবে তার পরে আমি সেই জঙ্গলে গিয়ে তিতলির অজান্তেই তাকে নিজের করে নিব। আর এর পর দিন তাকে সেখান থেকে ছেড়ে দিবে আমার লোকেরা। তিতলি মনে করবে সেই অচেনা কিডন্যাপাররাই তার সাথে এসব করেছে। তারপর তিতলি বাসায় ফিরে সবাইকে সবটা জানাবে। আর একজন ধর্ষিতা মেয়েকে নিশ্চয়ই কেউ বিয়ে করবে না এইভেবে যখন সবাই চিন্তিত হয়ে পড়বে তখন আমি তিতলিকে বিয়ে করার প্রস্তাব রাখব। আর তখন মামুও নিজের মেয়ের সম্মান বাঁচাতে আমার সাথে তিতলির বিয়ে দিবে আর তিতলিও আমাকে মহৎ মনে করবে আর আমাকে ভালোবেসে মেনে নিবে। আর আমার মনের বাসনাও পূর্ণ হবে।
কিন্তু তা আর হলো না। এই মেহরাব এসে আমার সব আশায় পানি ঢেলে দিল।”
নাফিজের কথা শুনে মেহরাব রাগে ফেটে পড়ল। নাফিজকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে তাকে এলোপাথাড়ি মারা শুরু করল। মেহরাব কখনোই তিতলির নাম অন্য কোন ছেলের মুখে শুনতে পারে না আর সেখানে নাফিজ তিতলি সম্পর্কে এতো বাজে কথা বলার কারণে মেহরাব পারছে না নাফিজকে সেখানেই মেরে ফেলতে। নাফিজের নাকে বেশ কয়েকটি ঘুষি মেরে চিল্লিয়ে বলতে লাগল,,
—”সাহস কি করে হলো তোর তিতলির ব্যাপারে এমন কিছু বলার? তুই কোন সাহসে আমার তিতলিকে নিয়ে এতো বাজে কথা বলিস? আমার তিতলির দিকে তুই বাজে নজর দিয়েছিস, আজ তো তোকে আমি ছাড়বো না। তোর এই চোখ আমি উঠিয়ে ফেলবো। মেরে ফেলবো আজ তোকে।”
এই বলে মেহরাব নাফিজকে আবারও মারতে শুরু করল। মারতে মারতে নাফিজের নাক ও কপাল থেকে রক্ত বের হতে লাগল আর চোখের নিচেও কালো জখম হয়ে গেল। মেহরাব রাগের মাথায় নাফিজকে ইচ্ছে মতো মারছে। আর সবাই সেই দৃশ্য চুপচাপ দেখছে। কেউ কিছু বলছে না এমনকি নাফিজের মা ও না। কারণ নিজের চোখের সামনে তার একমাত্র ছেলের কুকর্মের কথা শুনে ও প্রমাণ পেয়ে অতি শোকে তিনি পাথর হয়ে গেছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পরে তিনি অনেক কষ্ট করে তার একমাত্র ছেলেকে লালন পালন করে বড় করেছেন। এখন নিজের চোখের সামনে ছেলের এতোটা জঘন্য কাজ দেখে তিনি পাথর হয়ে গেছেন।
মেহরাব নাফিজকে মেরে অবস্থা একেবারে খারাপ করে ফেলছে। অবস্থা বেগতিক দেখে সাদাফ গিয়ে মেহরাবকে থামানোর চেষ্টা করে। মেহরাবকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করতে করতে বলে,,
—”মেহরাব হয়েছে আর মারিস না। এবার ছেড়ে দে। আর কতো মারবি। এ তো এখানেই মরে যাবে।”
—”মরে যাক। আজ এই বাস্টার্ডটাকে আমি মেরেই ফেলব। কোন সাহসে আমার তিতলির দিকে নজর দেয়। আজ শেষ করে ফেলবো। সাদাফ ছাড় আমাকে। ওকে না মারা পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না।”
সাদাফ মেহরাবকে ধরে আর রাকিবসহ এসে অনেক কষ্টে নাফিজকে মেহরাবের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনে। রাকিব তাদের গ্যাঙের অন্য ছেলেদের বলে দেয় নাফিজকে তাদের গোডাউনে নিয়ে যেতে। তারাও রাকিবের কথামতো নাফিজকে নিয়ে যায়। সাদাফ মেহরাবকে সোফায় বসায়। মেহরাব এখনো রাগে গিজগিজ করছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে মেহরাব কিছুটা শান্ত হয়। তারপর তিতলির বাবা আর বড় বাবাকে বলে,,
—”আঙ্কেল আমি দুঃখিত এই ধরনের একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য। আমি আসলে চাই নি এমন কিছু করতে। কিন্তু নাফিজের কথা শুনে আমি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারি নি। তাই এমনটা হয়ে গেছে। আমি আসলেই খুব দুঃখিত। ক্ষমা করবেন। ”
—”আরে মেহরাব তুমি ক্ষমা চাইছো কেন বাবা? তুমি কোন ভুল কর নি। ওর কথা শুনে তো আমারও এতটা রাগ উঠে গেছিল। আমি ভাবতে পারছিলাম না কি করব। কিন্তু তোমার কাজ দেখে আমি নিশ্চিন্ত হলাম যে আমার কোন শাস্তি দিতে হবে না। যা করার তুমিই করবে। আমার মেয়েটার জন্য তোমার এতোটা কেয়ার আর দ্বায়িত্ববোধ দেখে আমার অনেক ভালো লেগেছে। তুমি অনেক কিছু করেছ আমার মেয়েটার জন্য। আমরা সত্যিই তোমার কাছে ঋণী হয়ে থাকব।” (তিতলির বাবা)
—”না না আঙ্কেল কি বলছেন এইসব। এটা তো আমার করারই ছিল কারণ তিতলি তো আমার……
এটুকু বলেই মেহরাব থেমে গেল। কি বলবে মেহরাব? তিতলি তো তার কিছুই না। হ্যাঁ সে তিতলিকে ভালোবাসে কিন্তু তিতলি তো তাকে ভালোবাসে না। আর আজই এখানে শেষ আসা, এই বিষয়টি প্রমাণ করতেই মেহরাব এখানে এসেছে। কিন্তু আজকের পরে আর কখনো আসবে না। কখনো তিতলির সামনে আসবে না। মেহরাব একটু চুপ থেকে বলল,,
—” একজন মানুষ হিসেবে এইটা আমার কর্তব্য ছিল আঙ্কেল। আর আমি তা পালন করেছি। ”
~~~~~~~~~~~~
আমি বারান্দায় বসে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছি। আজকের এই বিষন্ন গানগুলো যেন আমার কথাই ফুটিয়ে তুলছে। বারান্দার দরজা লাগানো। সেই সাথে আমার রুমের দরজাও লাগানো। আর আমি গান শুনছি। তাই নিচে কি হচ্ছে আমার জানা নেই। আর জানার ইচ্ছেও নেই। হয়তো সবাই মিলে গল্প করছে। করলে করুক। আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আমি তো আমার বিষন্নতাকেই আপন করে নিয়েছি।
কিছুক্ষণ পরে রুমে দিয়াপু এলো। দিয়াপুর কাছে আমার রুমের দরজার চাবি থাকে। আমিই দিয়ে রেখেছি। তাই সহজেই দরজা খুলে ঢুকতে পারে। বারান্দায় এসে আমাকে বলল,,
—”প্রজাপতি, অনেক সময় হয়ে গেল কিছুই খাস নি। তুই রুমে ফ্রেশ হয়ে এসে বস আমি খাবার নিয়ে আসছি। ”
—”আচ্ছা”
দিয়াপু খাবার আনতে গেল আর আমি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। কারণ আনিকা আমার বিছানায় উদ্বিগ্ন মুখে বসে আছে। ওকে দেখে আমার বুকে একটা ব্যাথা অনুভব করলাম। কারণ ওকে দেখতেই আমার মেহরাবের কথা মনে পড়ে গেল আর সেই কথা,, “” ভাইয়া একটা মেয়েকে ভালোবাসে। খুব বেশি ভালোবাসে।”” এটা মনে পড়তে কষ্টের পরিমাণ বেড়ে গেল।
নিজেকে সামলে আনিকার সামনে গিয়ে বললাম,,
—”আরে আনিকা কেমন আছো? কখন এসেছ?”
—”সেসব পরে বলব। তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
—”কি কথা?”
—”আপুনি তোমার সাথে কি মেহরাব ভাইয়ার কিছু হয়েছে? মানে ঝগড়া বা মনোমালিন্য হয়েছে?”
—”কি বলছ এসব? উনার সাথে আমার ঝগড়া হতে যাবে কেন?”
—”তাহলে কি হয়েছে? পরশু সকাল পর্যন্ত তো সব ঠিক ছিল। ভাইয়া তো অনেক খুশি ছিল এমনকি সবকিছু সুন্দর করে আয়োজন করেছিল। কিন্তু ভার্সিটি থেকে এসে ভাইয়া ঘরে প্রচুর ভাংচুর করে এতে ভাইয়ার হাতও কেটে যায়। আর সেইদিন থেকে ভাইয়া কেমন চেঞ্জ হয়ে গেছে। তোমার সাথে কি কিছু হয়েছে? ”
—”কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আর কিসের আয়োজনের কথা বলছ?’
—”কি বলো! তুমি জান না? ভাইয়া সেদিন তোমাকে প্রপোজ করার প্ল্যান করেছিল।”
আনিকার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। কি বলছে ও এইসব? মেহরাব তো অন্য কাউকে ভালোবাসে তাহলে আমাকে কেন প্রপোজ করতে আসবে? আমি অবাক হয়ে বললাম,,
—”কি বলছো আনিকা? উনি আমাকে কেন প্রপোজ করতে আসবে? তুমি সেদিনই তো বললে যে উনি কাউকে ভালোবাসে।”
—”হুম বলেছিলাম। আর সেই মেয়েটা হলো তুমি। ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে। কিন্তু সেদিন তুমি আমার সম্পূর্ণ কথা না শুনেই ফোন কেটে দিয়েছিলে। তাই হয়তো মনে করেছ অন্য কেউ। কিন্তু ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে। অনেক বেশি ভালোবাসে। পরশু তোমাকে প্রপোজ করতে গিয়েছিল কিন্তু তোমাদের মধ্যে হয়তো কোন ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল তাই ভাইয়া অনেক ডিপ্রেসড আর রেগে গিয়েছিল। তোমার কাছে আমার অনুরোধ,, প্লিজ যা হয়েছে সব ঠিক করে নাও। প্লিজ।”
আনিকার কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এটা আমি কি করে ফেললাম নিজের ভুলের জন্য আমি মেহরাবকে হারিয়ে ফেললাম। না না আমি এমনটা হতে দিব না। আমার সব কিছু আবার ঠিক করতে হবে। আমার ভুল শুধরে ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু মেহরাব কি আমার এই ভুল ক্ষমা করবে?
চলবে……..
তোমার মাঝে(২)
পর্ব_১৩ শেষ
সারিফা তাহরিম
♠নিচের কথাগুলো কষ্ট করে পড়বেন প্লিজ।
—”আরে আরে তিতলি মা, কি করছিস আস্তে নাম পড়ে যাবি তো। এতো দৌড়ে নামিস না।”
বাবার কথায় কান না দিয়ে আমি দৌড়ে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলাম। আনিকার কথা শুনে আমি তৎক্ষণাৎ রুম থেকে বের দৌড়াতে লাগলাম। কারণ আজ মেহরাবের রাগ ভাঙাতেই হবে। আনিকা বলল উনি নাকি কে আমায় কিডন্যাপ করেছে তা প্রমাণ করতে এসেছে। এতোক্ষণে তা প্রমাণও হয়ে গেছে। কিন্তু কে এইসব করেছে তা জানার দিকে আমার খেয়াল নেই। আমার মনে তো এখন একটা কথাই আসছে যে মেহরাব খুব অভিমান করেছে আমার সাথে। উনার সব রাগ অভিমান আজই ভাঙাতে হবে। নাহলে আমি আর কখনোই তার সুযোগ পাব না। আজ মেহরাব এখান থেকে চলে গেলে আর কখনোই আমার সামনে আসবে না। তাই আমি দৌড়ে সেখানে যাচ্ছি।
কিন্তু বাবার কথা শুনে মেহরাব সিড়ির দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখতেই ঘুরে চলে যেতে নিলে আমি তারাতাড়ি মেহরাবের কাছে গিয়ে উনার হাত ধরে উনাকে থামিয়ে দিলাম। উনার সামনে গিয়ে উনাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে অঝোর ধারায় কেঁদে দিলাম। আশেপাশের কথা ভুলে আমি কান্না করতে উনাকে বললাম,,
—”সরি মেহরাব। আ’ম সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আবারও ভুল বুঝেছি আপনাকে। সম্পূর্ণ বিষয়টি না জেনেই আমি আবারও ভুলটা ভেবে বসে ছিলাম। আনিকা যখন বলেছিল আপনি কাউকে ভালোবাসেন তখন আমি এতোটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে আপনি কাকে ভালোবাসেন তা জানা হয় নি। তখন আমার সমস্ত পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসছিল। আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিল মেহরাব। আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন তা মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমি এই বিষয়টা একদমই সহ্য করতে পারি নি। কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি মেহরাব। আপনার মাঝে আমি হারিয়ে গেছি। অন্য কাউকে কখনোই আপনার সাথে সহ্য করতে পারব না মেহরাব। মুখে যতোই বলি না কেন মন থেকে আমি আপনাকে চাই মেহরাব। খুব করে চাই। আপনার অর্ধাঙ্গিনী মিসেস মেহরাব রায়ান চৌধুরী হতে চাই।
কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন। তাই আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। আপনার কথা ভাবলেই আমার বুক চিড়ে কান্না আসছিল। তাই সেদিন আপনাকে যা নয় তাই বলেছি। আপনাকে আমার সামনে আসতে বারণ করেছি কারণ আপনাকে দেখলে আমার কষ্ট আরও বেশি বেড়ে যাবে। এই দুদিন আপনাকে ছাড়া আমার খুব কষ্ট হয়েছে মেহরাব। আমি খুব ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে৷ সেদিন ভুলের কারণে বলে ফেলেছি আমার সামনে না আসতে। কিন্তু আজ সবটা জেনে গেছি যে আপনিও আমায় ভালোবাসেন। আমার সব ভুল ধারণা গুড়িয়ে গেছে। আজ মনের কথা চাপা দিয়ে নয় বরং খুলে বলছি, মেহরাব আমি সত্যিই আপনাকে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না। এই দুই দিন মরণ অবস্থা হয়েছে। কিন্তু সারাজীবন এমন হলে আমি আর বাঁচবো না। আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না মেহরাব। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন। একটাবার বলেন আমায় আগের মতো ভালোবাসেন। প্লিজ মেহরাব প্লিজ…..(আমি কান্নার কারণে আর বলতে পারছি না। ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম)
এদিকে,,
তিতলিকে দেখে মেহরাব মনে করে ছিল সে এখানে এসেছে বলে হয়তো তিতলি এইটা সহ্য করতে পারছে না। আর মেহরাব নিজেই বলেছিল যে আর কখনোই তিতলির সামনে আসবে না।দুদিন আগের ঘটনায় মেহরাব বুঝেছিল যে তিতলি তাকে ভুল বুঝেছে। আর এই জন্য মেহরাব বেশ কষ্ট পেয়েছিল। তিতলিকে বুঝানোর চেষ্টা করেও তিতলি শুনে নি দেখে মেহরাব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে আর কখনো তিতলির ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করবে না আর তিতলির সামনেও আসবে না।
তাই মেহরাব বের হয়ে যাচ্ছিল এমন সময় আচমকা তিতলি এভাবে এসে সবার সামনে জড়িয়ে ধরায় মেহরাব ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। প্রথমে বুঝে উঠতে একটু সময় লেগেছিল। তারপর বিষয়টি বুঝার পরে মেহরাবের মনে হাজারো অভিমানের পাহাড় গড়ে উঠে। সে ভেবেছিল তিতলির সাথে আর কোনো কথা বলবে না। তিতলির সামনে আসবে না। কিন্তু তিতলির কান্নায় মেহরাবের অভিমানের পাহাড় গুড়িয়ে যায়। তিতলির কান্না দেখে খুব মায়া হয় আর সেই সাথে তিতলি তাকে খুব ভালোবাসে শুনে হৃদয়ে এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়। সে ও তো তাই চেয়েছিল। তার মায়াপরিও তাকে খুব ভালোবাসবে। আর আজ তাই হয়েছে। তিতলি তাকে খুব বেশি ভালোবাসছে আর তাকে হারানোর ভয়ে কাতরাচ্ছে। হৃদয়ের সকল ভালোবাসা দিয়ে মেহরাবকে জরিয়ে রেখেছে। মেহরাব মনে মনে ভেবে বলল,,
—”(মায়াপরি আজ আমি খুব খুশি। তুমিও আমায় ভালোবাসো। আজ কোনভাবে তোমার উপর অভিমান করে থাকতে পারছি না। তোমায় আমার কাছ থেকে সরিয়ে দিতে পারছি না। আমারও তোমাকে নিজের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরতে মন চাইছে। মন খুলে সব কথা বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখন সবার সামনে তো তা করা যাবে না। কিন্তু তুমি এভাবে জরিয়ে রাখলে তো আমার আরও বেশি জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে করবে। তাই তোমার কাছ থেকে আপাতত ছাড়া পেতে হবে। নাহলে সবার সামনে হয়তো আমি সব কথা বলে ফেলব।)”
মনে মনে এসব ভেবে মেহরাব বলল,,
—”তিতলি আমায় ছাড়ো।”
মেহরাবের এমন কথা শুনে আমার কান্না আরও বেড়ে গেল। মেহরাব এখনও আমার সাথে খুব রেগে আছে। আমাকে আবার ছেড়ে চলে যাবে না তো? এই ভেবে আমি মেহরাব আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে জোরে জোরে কান্না করতে করতে বললাম,,
—”না মেহরাব আমি আপনাকে কিছুতেই ছাড়ব না। আমি জানি আপনাকে ছেড়ে দিলে আপনি চলে যাবেন আর কখনো আসবেন না। আমি আপনাকে যেতে দিব না মেহরাব। সরি। আ’ম এক্সট্রিমলি সরি। আমি আর কখনো ভুল বুঝবো না। আপনার সব কথা শুনব। আপনি আমাকে শাস্তি দিন তবুও আমাকে ছেড়ে যেয়েন না। আপনাকে যেতে দিব না আমি। কিছুতেই না। একবার ক্ষমা করে দিন না প্লিজ। প্লিজ সব অভিমান ভুলে যান না। আমাকে আপনার করে নিন না। আবার আগের মতো করে ভালোবাসেন না প্লিজ। একটাবার বলুন না “”আমি তোমাকে ঠিক আগের মতোই ভালোবাসি””। প্লিজ বলুন না।”
আমি সর্বশক্তি দিয়ে মেহরাবকে জরিয়ে ধরলাম। একেবারে মেহরাবের সাথে মিশে আছি যেন ছেড়ে দিলেই আমার মেহরাব আমাকে ফেলে চলে যাবে। আমি মেহরাবের বুকে মুখ লুকিয়ে জোরে জোরে কান্না করে উনার শার্ট বেশ খানিকটা ভিজিয়ে ফেলেছি। উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললেন,,
—”আমি তো এতোক্ষণ এই কথা বিয়ের পরে বলবো ভাবছিলাম। কিন্তু তুমি তো বলছো এখন বলতে। তবে আমি একটা শর্তে কথাটি বলতে রাজি আছি। শর্তটি হলো এখন সবার সামনে আমাকে দেওয়া সব কষ্টের বিনিময়ে আমাকে পাঁচটা চুমু দিতে হবে। তারপর আমি তোমাকে কথাটি বলবো নাহলে একেবারে বিয়ের পরে বলবো। আর তুমি চুমু দিলে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়িও উনাদের মেয়ের ভালোবাসার প্রকাশ দেখবে। এখন বলো তুমি কি এখন ছেড়ে দাঁড়াবে নাকি সবার সামনে চুমু দিবে? চয়েস ইজ ইউরস মাই ফিউচার মিসেস।”
মেহরাবের ফিসফিসিয়ে বলা দুষ্টু কথায় আমার টনক নড়ল। আমি এতোক্ষণ সবার সামনে মেহরাবকে এইভাবে জরিয়ে ধরেছিলাম!! সবাই এখানে তা তো আমি খেয়ালই করি নি। এই বিষয়টি বুঝতে পেরেই আমি মেহরাবকে ছেড়ে দিয়ে ছিটকে দূরে সরে গেলাম। এখন লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে আর সাথে ভয়ও করছে। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে সরে যেতে দেখে মেহরাব মুচকি হেসে আমার আলতো করে আমার হাত ধরে সবাই যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে নিয়ে যায়। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ে মেহরাবের পিছে লুকিয়ে উনার হাতটা শক্ত করে ধরলাম আর অন্য হাত পিছন থেকে উনার শার্ট খামছে ধরলাম। বাবা কি আমাদের মানবে কিনা সেই বিষয় নিয়ে আমার খুব ভয় করছে। এর মধ্যেই মেহরাব আমার বাবার উদ্দেশ্যে বলে উঠল,,
—”আমি দুঃখিত আঙ্কেল। আসলে আমাদের কিছু ভুল বুঝাবুঝির জন্য আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর এতোক্ষণ সেই বিষয়টির জন্য বলা হয় নি। কিন্তু এখন বলছি। আমি তিতলিকে খুব ভালোবাসি আঙ্কেল। আপনাদের সকলের সম্মতিতে আমি তিতলিকে বিয়ে করতে চাই। আমার সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিয়ে তিতলিকে আগলে রাখব। একটা আঁচড়ও লাগতে দিব না। কখনো কষ্ট পেতে দিব না। আপনারা কি আমাকে তিতলিকে নিজের করে পাওয়ার সেই অনুমতি দিবেন?”
আমি ভয়ে পিছন থেকে দেখছি সব পরিস্থিতি। মেহরাবের কথায় বাবার মুখে এক খুশির ঝলক দেখতে পেলাম। বাবা ছলছল চোখে মেহরাবের দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,,
—”তোমার চোখে আমি আমার মেয়ের জন্য অঢেল ভালোবাসা দেখেছি। তিতলির জন্য তুমি যতটা অস্থির হয়েছ তাতেই তোমার ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। তোমার মতো ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারলে আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারব কারণ আমি জানি তুমি আমার মেয়েকে তোমার সর্বস্ব দিয়ে আগলে রাখবে। আমি রাজি বাকিটা তোমার বাবা মা জানেন। উনাদেরও এই বিষয়ে মতামত দরকার।”
—”আরে বেয়াই সাহেব আমাদের কথা আর কি বলবো। আমি তো দিয়াকে যখন দেখতে এসেছিলাম তখন তিতলি মাকে পছন্দ করেছি। আমার খুব ইচ্ছে ছিল তিতলিকে শুধু আমার ছেলের বউ না বরং আমার মেয়ে করে নিয়ে যাব। আর এখন তো আমার ছেলেও তিতলিকে ভালোবাসে। আর আপনারাও রাজি। তাহলে তো আমার ইচ্ছে পূরণ হলো। আলহামদুলিল্লাহ। তিতলি মা এদিকে আসো।”
আমার বাবাকে কথাগুলো বলে মেহরাবের আম্মু আমাকে কাছে ডাকলেন। আমিও লজ্জায় মাথা নিচু করে এগিয়ে গেলাম। আন্টি মানে আমার ফিউচার শ্বাশুড়ি আম্মু আমাকে তার পাশে বসালেন। তারপর সবাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন আর ২ বছর পরে আমার আর মেহরাবের বিয়ে হবে। তখন মেহরাব সাদাফ ভাইয়া আর আনিকার কথা বলতেই সবাই বেশ খুশি হয় আর আমাদের সাথে উনাদেরও একই দিনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর দিয়াপু আর আরাফ ভাইয়ার বিয়ে আর কিছুদিন পরে হওয়ার কথা বললে আরাফ ভাইয়া তাদের এই বিয়ে আরেকটু পেছানোর কথা বলেন। কারণ আরাফ ভাইয়া বলেছিলেন দিয়াপু যতোদিন না তাকে মেনে নিতে পারবে ততোদিন বিয়ে করবে না। কিন্তু আরাফ ভাইয়া অনেক চেষ্টা করেও বড়দের রাজি করাতে পারেন নি। তাই সিদ্ধান্ত হয় ২ মাস পরেই দিয়াপু আর আরাফ ভাইয়ার বিয়ে হবে।
~~~~~~~~~~~
—”৫০ বার কান ধরে উঠবস কর।”(সাদাফ)
—”আমি কি করলাম আবার ভাইয়া। তুমি খালি এমন করো কেন। এ এ আমি পারবো না। বিয়ের রাতে মানুষ এমন করে।”
আনিকা ন্যাকা কান্না করে বলতেই সাদাফ আরও রাগীভাবে বলল,,
—”কি! তুই আবারও আমাকে ভাই বললি! বিয়ের রাত এইটা ঠিক বুঝতে পারলি কিন্তু এখন যে আমি তোর জামাই তা বুঝতে পারলি না? জামাইকে মানুষ ভাই ডাকে?”
—”তুমি তো আমার ভাইয়া ই হও।”
আনিকা ইনোসেন্ট ফেস করে কথাটি বলতেই সাদাফ রেগে ধুপধাপ পা ফেলে বারান্দায় চলে গেল। আনিকাও তার পিছে পিছে গেল। কিছুক্ষণ পেছনে দাড়িয়ে থাকার পরে সাদাফের সামনে গিয়ে সাদাফকে জরিয়ে ধরে বলল,,
—”সরি তো আর বলবো না। এখন থেকে ভাইয়া বাদ আর জামাই শুরু। তোমাকে এখন থেকে জামাই বলবো। নাহলে তো পরে আবার আমাদের বেবিরা তোমাকে মামা বলবে।”
আনিকার কথা শুনে সাদাফ ফিক করে হেসে দিল। তারপর সেও আনিকাকে জরিয়ে ধরল। আনিকা চোখ বুজে বলল,,
—”এভাবেই জরিয়ে রেখো আমায়। আমি সারাজীবন এভাবে মিশে থাকতে চাই #তোমার_মাঝে।
এদিকে,,
সাদাফ আর মেহরাবের বিয়ের সব কাজ শেষ করে আরাফ রুমে এসে দেখল দিয়া বিছানার এক পাশে শুয়ে আছে। সারাদিন অনেক ধকল গেছে তাই ক্লান্ত থাকার কারণে হয়তো ঘুম এসে গেছে। এই ভেবে আরাফ নিঃশব্দে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল যাতে দিয়ার ঘুম না ভাঙে।
আরাফ আর দিয়ার বিয়ের দুই বছর হতে চলল। কিন্তু এখনও তাদের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয় নি। আরাফ দিয়াকে সবসময় দিয়াকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে। দিয়ার প্রতিটি কথার মর্যাদা দেয়। দিয়াকে যথেষ্ট সময় দেয় তার সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু দিয়া হয়তো এখনো সবকিছু মেনে নিতে পারে নি।
আরাফ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দিয়ার মুখের দিকে তাকাল। অনেকদিন ধরে সে চেষ্টা করেছে। কিন্তু দিয়া হয়তো কখনো তাকে মেনে নিতে পারবে না। এখন তো আর সময় দিতে পারবে না কারণ এক সপ্তাহ পরে আরাফের লন্ডন যেতে হবে বিজনেসের কিছু কাজের জন্য। আর সেই কাজ শেষ হতে হয়তো দেড় বছর লাগতে পারে। এতোদিনের দূরত্বের কারণে হয়তো দিয়া আরাফকে সম্পূর্ণ ভুলে যাবে। আর কখনোই হয়তো ভালোবাসতে পারবে না। কিন্তু তাতে কি, আরাফকে ভালো না বাসলেও আরাফ দিয়াকে সারাজীবন এভাবে ভালোবেসে যাবে। কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষটির ভালোবাসা হয়তো কখনো পাবে না। এইসব ভেবে আরাফের বুক চিড়ে এক দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল।
আরাফ লাইট অফ করে বিছানার আরেক পাশে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পরে দিয়া আরাফের দিকে ফিরে আরাফের বুকের উপর মাথা রেখে আরাফকে জরিয়ে ধরল। আরাফ বেশ খানিকটা অবাক হলো। দিয়া এই প্রথমবার আরাফকে জরিয়ে ধরেছে। কিন্তু তা তো ঘুমের ঘোরে। আরাফ এক হাতে দিয়াকে জরিয়ে ধরে অন্য হাত দিয়ে দিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,
—”আজ প্রথম তুমি আমায় জরিয়ে ধরেছ দিয়ামণি। কিন্তু তা ঘুমের ঘোরে। আমি তো চাই একদিন তুমি নিজের ইচ্ছায় আমাকে ভালোবেসে আমার কাছে আসবে আর এভাবে জরিয়ে ধরবে।”
কথাটি বলে আরাফ মলিন হেসে আলতো করে চুমু দিল দিয়ার মাথায়। কিছু মুহুর্ত পরে আরাফ অনুভব করল তার পরনের পাতলা শার্টটি হালকা ভেজা আর দিয়াও হালকা কেপে উঠছে। আরাফের আর বুঝতে বাকি রইল না যে দিয়া কান্না করছে। আরাফ উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করল,,
—”দিয়ামণি, এই দিয়ামণি, তুমি কাঁদছো কেন?”
দিয়ার কান্না বেড়ে গেল। সে আরাফকে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল,,
—”আরাফ আপনাকে ছাড়া আমি এক মুহুর্তও থাকতে পারব না। আপনি লন্ডনে যাবেন না প্লিজ। আমার প্রতিটি মুহূর্তে আপনাকে চাই আরাফ। ভালোবাসি আরাফ। খুব বেশি ভালোবাসি।”
আরাফ যেন আকাশের তারা খুজে পেল। সে উজ্জ্বল চোখে দিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,,
—”তুমি সত্যি বলছো দিয়ামণি? তুমি আমাকে ভালোবাসো?”
—”হুম। ভালোবাসি। খুব বেশি ভালোবাসি।”
আরাফ দিয়ার মুখ তুলে চোখের পা কপালে গভীরভাবে চুমু খেল। তারপর দিয়ার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,,
—”হুম আমি যাব। তবে তোমাকে সাথে নিয়ে কিছু ভালোবাসার মুহুর্ত কাটানোর জন্য। উম…এক কথায় আমাদের মধুচন্দ্রিমা। নাহলে দাদার বয়সে গিয়ে বাবা ডাক শুনতে হবে।”
কথাটি বলেই আরাফ ফিক করে হেসে দিল। দিয়া আরাফের বুকে একটা কিল বসিয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে বলল,,
—”বেশরম।”
আরাফ দিয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে গভীর আবেশের সাথে বলল,,
—”আমি ভালোবেসে বাঁচতে চাই #তোমার_মাঝে। ”
~~~~~~~~~~~
—”তিতলি দাঁড়াও। এটা কিন্তু কথা ছিল না। তুমি চিটিং করছো।”
মেহরাব আমার পিছে দৌড়ে আসতে আসতে কথাটি বলল। কিন্তু কে শুনে কার কথা! আমি তো ছাদের দিকে দৌড়ে চলেছি। আমিই হয়তো প্রথম মেয়ে যে বিয়ের রাতে এইভাবে দৌড়াচ্ছে। আমি হাসতে হাসতে বললাম,,
—”মিস্টার, পারলে ধরে দেখান। আজ আমি কোন শর্ত পূরণ করতে পারব না। আর আপনিও আমায় ধরতে পারবেন না। ”
বলে দৌড়াতে দৌড়াতে একেবারে ছাদের রেলিঙের সামনে চলে এলাম। তখন মেহরাবও এসে আমার দুই পাশে রেলিঙে হাত রেখে হালকা ঝুকে বলল,,
—”ধরে তো ফেললাম মাই মিসেস। এখন কিভাবে পালাবে আমার কাছ থেকে হুম?”
—”এই দূরে সরে দাড়ান বলছি।”
—”উহু। এতোদিন কিছু ছিলাম না বলে অনেক দূরে থাকা হয়েছে। কিন্তু এখন তো তুমিই আমার সব। তাই কোন দূরে যাওয়া হবে না। আর শর্ত অনুযায়ী তুমি আমাকে আজ চুমু দিবে। তাই বলছি শর্ত পূরণ করে ফেল। নাহলে কিন্তু….. ”
মেহরাব কথা সম্পূর্ণ করার আগেই আমি উনার গালে একটা চুমু দিয়ে পিছে ফিরে গেলাম। আমার এহেন কান্ডে মেহরাব হেসে দিয়ে আমায় পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল,,
“” এভাবে সবসময় আমার অস্তিত্ব মিশে থাকবে
তোমার মাঝে
সমাপ্ত