#তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,পর্ব (২৩)
#রোকসানা-রাহমান
তিহি ভাবনার মাঝেই হঠাৎ কারো ছোয়ায় শিউরে উঠে। তার পিঠে পড়ে থাকা ভিজে চুলগুলো সরে যাচ্ছে। কারো উষ্ণ ঠোঁটের উষ্ণ নিশ্বাসে তিহি নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। মনের অজান্তেই কন্ঠে ভেসে উঠলো,,,
“” ইশ!””
নামটা উচ্চারন হওয়ার সাথে সাথে তার গলার পাশে লেগে থাকা ঠোঁটজোড়া সরে যাচ্ছে। তিহি চট করে চোখ মেলে ফেললো। সে কি কোনো ঘোরে চলে গিয়েছিলো নাকি সত্যি সত্যি কারো ঠোঁটদ্বয় তার দিকে এগিয়ে এসেছিলো? কোনো ভালোবাসার স্পর্শ দিতে??
তিহি বসা থেকে উঠে পড়লো পেছনে ঘুরে দাড়িয়েছে। সাথে সাথে নিজের চোখদুটো বিস্ময়কারে ফুটছে। গলার স্বর নিভু হলেও বিস্ময়ের কঠিন ছোয়ায় কিছুটা জোরালো হয়ে ফুটলো,,
“” আপনি?””
তিহির সামনে দাড়িয়ে রয়েছে,তাজ। তার চোখেও বিস্ময় কিন্তু সেটা মন খারাপের। কি চেয়েছিলো কি হয়েছে? কি আশা নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়েছিলো আর কি পেয়েছে। তিহির চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করছে। অপরান্তর ব্যর্থ হলেও এটা খুব করে বুঝতে পারছে,এ চোখদুটো তার জন্য অপেক্ষারত ছিলোনা,তাকে দেখার জন্য মনটা উশখুশ করেনি,তার ছোয়া পাওয়ার জন্য তিহির বুকে ঝড় উঠেনি। তাহলে কি তার এতো পরিশ্রম সব বৃথা?? কেন এলোনা তিহির চোখে আনন্দের অশ্রু?? তাকে এতোদিন বাদে দেখতে পাওয়ার আনন্দ তার চোখে পানি আনতে পারেনি?? কেন পারেনি??
তিহি তাজের দিকে ভালো করে খেয়াল করতেই দেখতে পেলো,পালকের শ্যামবর্নের চেহারায় কিছুটা লাবন্যতা এসেছে। গালের ঘন চাপদাড়িটা কেটে ফেলা হয়েছিলো হয়তো,তাই ছোট ছোট দাড়ির অংশ উকি দিচ্ছে। মোছটাও কেটে ফেলা হয়েছে।এমন চেহারাটার সাথে সাদা পান্জাবী আর মাথায় গোলটুপিটা বেশ মানিয়েছে। উনি কি এখন নামাজ পড়ে এলেন?? কিন্তু এখন তো কোনো নামাজের ওয়াক্ত নয়, তাহলে??
তিহি ভাবনার আরেকটু গভীরে যেতেই তাজ বললো,,
“” কেমন আছো?””
“” হুম,ভালো।””
“” আমাকে দেখে খুশি হওনি?””
তিহি ঠোঁটে হাসি আনার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
“” আপনি বসুন আমি ফুপিমাকে ডেকে আনছি!””
তিহি তাড়াহুড়ায় পা চালানোর আগেই ওর হাতের কনুই বরাবর চেপে ধরলো তাজ।
“” পালাচ্ছো?””
তিহি হাত ছাড়াতে গিয়েও থেমে গিয়েছে। তাজের দিকে তাকাতে গিয়েও তাকালোনা। মেঝের দিকে তাকিয়ে বললো,,
“” লাগছে।””
তাজ সাথে সাথে ওকে ছেড়ে দিলো।
“” যা আশা করেছিলাম তা হয়নি,হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?””
তিহি প্রশ্ন নিয়ে তাকালে তাজ ওর কাছে এগিয়ে এলো। খুব কাছে এসে ওর থুতনির নিচে আঙুল ঠেকিয়ে মুখটা উচু করে বললো,,
“” এই ঠোঁটের মাঝে ইশাদ নয় তাজ আসবে কি?””
তিহির চোখে আবার বিস্ময় ফুটে উঠেছে,সাথে ভয় মিশ্রিত আশংকা। তারমানে সে হুশে থেকে বেহুশে চলে গিয়েছিলো। কিন্তু এবার ইশাদ নয় তাজের জন্য,তাঁর উষ্ণ ছোয়ায়!
“” তাজ,বাবা! কখন এলি?””
শিরিন বেগমের কন্ঠস্বর পেয়ে তাজ নিজেকে সামলে নিলো তিহির দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে এগুলো।
~~
ইশাদ ছাদ থেকে নেমে নিজের বিছানায় পা বাড়াতেই পেছন থেকে মিহি এসে হাজির।
“” মিহিরানী,তুমি এখানে?””
মিহি চটপট শাড়ী গুটিয়ে নিয়ে ইশাদের বেডের উপর বসে বললো,,
“” আমার একা একা ভয় লাগছে,সুন্দর ভাইয়া।””
“” একা একা মানে,ভাইয়া কোথায়?””
“” জানিনা।””
ইশাদ মিহির পাশে এসে বসলো। ওর দিকে কড়া করে তাকিয়ে বললো,,
“” ইশ! আমি এ জিনিসটা মিস করে ফেললাম!””
“” কি?””
“” এই যে তোমার মতো ভয়ংকর সুন্দরী রানীকে বিয়ে করার সুযোগ। মিহিরানী আমার তো সত্যি সত্যি খুব আফসোস হচ্ছে!””
ইশাদের মজার ছলের কথা মিহি সত্যি সত্যি ভেবে নিয়ে মন খারাপ করে বললো,,
“” এমন করে বলছেন কেন? আমার মন খারাপ লাগছে।””
ইশাদ অট্টস্বরে হেঁসে নিয়ে মিহির নাক টিপে দিয়ে বললো,,
“” খুব সুন্দর লাগছে তোমায়। পুরো রুপকথার রুপরানীর মতো সুন্দর। তাহলে শেষমেষ আমার ভাবী হয়েই ছাড়লে। কিন্তু মিহিরানী,তুমি আমার ভাইয়ার প্রেমে কিভাবে পড়লে বলোতো,আমার তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা৷ আমি কোনো স্বপ্ন দেখছিনা তো? ভাইয়ার নাকটা কি ছোট নাক?””
তিহি লজ্জামাখা কন্ঠে বললো,,
“” আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন কেন? আমার ভীষন লজ্জা করছে।””
ইশাদ হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে মিহিকে হাত ধরে উঠালো। ওকে নিয়ে বেড়িয়ে যেতে যেতে বললো,,
“” সব লজ্জা আমাকে দেখিয়ে দিলে কিভাবে হবে? ভাইয়ার জন্যও একটু জমিয়ে রাখো। নাহলে শেষে দেখা যাবে,ভাইয়া কপাল চাপড়ে চাপড়ে বলছে,এ আমি কেমন মেয়ে বিয়ে করলাম? বাসর রাতেও যার লজ্জা পায়না!””
“” ভাইয়া!””
ইশাদ মিহিকে ইরফাদের রুমে বসিয়ে দিয়ে বললো,,
“” যাও, এই মুখে কুলো পাতলাম। আজকের জন্য এখানেই চুপ। তুমি এখানে বসো। জাস্ট পাঁচ মিনিট। আমি ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।””
“” হুম।””
ইশাদ চলে যেতে নিয়ে আবার ফিরে তাকালো মিহির দিকে। কিছুক্ষন নিরবতা পালন করতে মিহি ব্রু নাড়িয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলো। ইশাদ হাটু গেড়ে মেঝেতে বসে পড়লো। মিহির হাতদুটো নিজের হাতে নিয়ে বললো,,
“” আমি জানি,তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো। যে ভুল একবার করেছো সেটা যেন দ্বিতীয়বার আর না হয়। ভাইয়া তোমার উপর রাগ দেখাতে পারে। তবে সেটাকে রাগের চোখে নয় অভিমানের চোখে দেখো। অভিমানের দেয়াল ভেঙে নিজের ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিয়ো। মনে রেখো,তোমার জন্য আমি ভাইয়ার মতের পরোয়া না করে দুজনকে এক সুতোয় বেধে দিয়েছি। বাধনটা পোক্ত করার দায়িত্ব তোমার। পারবে না মিহিরানী? ভাইয়ার মনে ভালোবাসার ফুল ফুটাতে পারবেনা?””
“” আমার ভয় করছে,সুন্দর ভাইয়া।””
“” সিউর?””
“” হুম।””
“” তাহলে চলো তোমাকে আন্টির কাছে দিয়ে আসি।””
ইশাদের দুষ্টুমী বুঝতে পেরে মিহি অভিমানির সুরে বললো,,
“” আপনি বেশি দুষ্টু হয়ে গেছেন।””
“” দুষ্টুমীর তো এখনো কিছুই দেখোনি,এখন তো তুমি আমার ভাবী,ভাবী আর দেবরের সম্পর্কে রসকস না থাকলে চলে??””
ইশাদ বেড়িয়ে যাওয়ার আগে মিহির মাথার ঘোমটা টেনে দিলো।
~~
পাঁচ-ছ মিনিটের মধ্যেই ইরফাদ এসে হাজির। দরজা লাগাতে গিয়েও লাগালোনা। গুটিগুটি পায়ে মিহির দিকে এগিয়ে এলো। মিহি ঘোমটা আরো বড় করে টেনে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে আছে। ভয়ে তার বুক ধরফর ধরফর করছে। মনে হচ্ছে ঘোমটা খুলেই ঠাস করে একটা চড় মেরে বসবে।
“” যাও দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসো।””
ইরফাদের এমন আদেশে মিহি ভ্যাবাচেকা খেলো। নিজের ঘোমটা নিজেই সরিয়ে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো ইরফাদের দিকে।
“” কি হলো এখনো বসে আছো যে?””
মিহি বিরবিড় করতে করতে দরজা লাগিয়ে আবার আগের জায়গায় আসতেই ইরফাদ আবার বললো,,
“” ঐ চেয়ারটা এদিকে নিয়ে আসোতো।””
ইরফাদের দ্বিতীয় আদেশ পালন করতে গিয়ে মিহির নাস্তানাবুদ অবস্থা। চেয়ারটা কাঠের হওয়ায় বেশ ওজন। নিজের শরীরে জড়ানো ভারী বেনারশী,হাতভর্তি চুড়ি সব ঘেটে যাচ্ছে। মিহি বেশ কসরত করে চেয়ারটা টেনে নিয়ে এসে হাফাতে লাগলো। ইরফাদ বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে বললো,,
“” চেয়ারের উপর উঠে কান ধরে দাড়িয়ে থাকবে। অবশ্যই এক পা উচু করে। আমি যতক্ষননা নামতে বলবো ততক্ষন অভাবেই থাকবে। বুঝতে পেরেছো?””
মিহির এবার কান্না পেয়ে গেলো। বাসররাতে বৌকে দিয়ে এতো খাটাচ্ছে আবার শাস্তিও দিচ্ছে? উফ! আমার কি সারাজীবন এভাবে কানে ধরেই কাটাতে হবে?
“” কি হলো? কি ভাবছো? শাস্তির ডোজ কি আরো বাড়াতে চাচ্ছো??””
মিহি মিনমিন করে বললো,,বুড়ো একটা,রসকসহীন বুড়ো! আমার ঘাট হয়েছে এমন রসকসহীন বুড়োকে বিয়ে করে। আর জীবনেও কোনো বুড়োর দিকে তাকাবোনা। স্বপ্নেও কোনো বুড়োর উপর ক্রাশ খাবোনা। আর আত্মহত্যা!স্বপ্নেও স্বপ্ন দেখবোনা। হুহ!
ইরফাদ চোখটা বন্ধ করে নিয়েছে। বন্ধ করে মিহিকে বলল,,
“” বউ সাজে তোমাকে খুবই কুৎসিত লাগছে,মিহি। আমার তো মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে কুৎসিত বধুটি তুমি!””
মিহি কান ধরে আছে। এক পায়ে ভর করে থাকায় বারবার নড়ে উঠছে। অনেকটা পড়ে যাবার ভাব। সেই ভাব নিয়েই ধরা গলায় বললো,,
“” আপনি মিথ্যে বলছেন। আমার মন ভেঙে দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমি আমার মন ভাঙবোনা। আমাকে মোটেও কুৎসিত লাগছেনা।””
ইরফাদ মিহির দিকে ঘুরে কাত হয়ে শুয়ে বললো,,
“” কে বললো?””
“” আপু বলেছে,আর সুন্দর ভাইয়াও বলেছে। আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। রুপকথার গল্পের মতো সুন্দর!””
“” বাচ্চাদের তো বাচ্চামী কথা বলেই মন ভুলিয়ে রাখে। রুপকথার গল্প কখনো জীবন্ত হয়না,মিহি। তুমি একটা জীবন্ত প্রানী। তাহলে তুমি কি করে রুপকথার মতো সুন্দরী হলে?? আর ওরা তো বলবেই,ফাঁসিয়েছো আমাকে ওদেরকে তো না।””
মিহি এবার আর নড়ছেনা। দিব্বি টানটান হয়ে দাড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে ও একপাকন্যে। যারা এক পায়ে অনায়াসে জীবন কাটিয়ে দেয়। মিহি চোখের দৃষ্টি স্থির করে ইরফাদের দিকে তাকিয়ে রইলো।
“” আমি তো এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা,তোমার মতো এমন পুচকি মেয়ে আমার বিরুদ্ধে এতোবড় ষড়যন্ত্র করতে পারে। কি করে পারলে মিহি?””
“” আমি মোটেও ষড়যন্ত্র করিনি,আপনি ইচ্ছে করে আমাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলছেন! “”
ইরফাদ শোয়া থেকে উঠে বসলো। মিহির দিকে কড়া চাহনি এঁকে বললো,,
“” আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজ করে আমাকে ফাঁসিয়েছো। আমাকে বিয়ে করেছো এটাকে ষড়যন্ত্র বলবেনা তো কি বলবে?””
মিহির কান থেকে হাতগুলো সরে গেলো। চোখ পানিতে টয়টুম্বুর! এই বুঝি গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু সে গড়াতে দিবেনা। তাহলে তার কাজলে আঁকা চোখদুটো কালোতে ঘেটে যাবে। তখন সত্যি সত্যিই তাকে কুৎসিত লাগবে। মিহি পুনরায় হাতদুটো কানে নিয়ে নিষ্পাপকন্ঠে বললো,,
“” আমি সত্যি কোনো ষড়যন্ত্র করিনি ইরফাদ ভাইয়া,আমি তো আপনার প্রেমে পড়াকালিনও ভাবিনি আপনার সাথে আমার বিয়ে হবে। আপনি আমাকে প্রত্যাখ্যান করলেও আমার কোনো সমস্যা ছিলোনা। আমি ঠিক নিজেকে সামলিয়ে নিতাম। আমি তো ভাবিওনি আপনি আমাকে ভালোবাসবেন। কিন্তু আপনার অন্যায় আবদারে আমার মন ভেঙে গিয়েছিলো,আমি সয়তে পারছিলাম না তাই ট্যাবলেট খেয়েছিলাম। আপনাকে ফাঁসানোর জন্য নয় নিজে মরে…””
“” তোমার এই কুৎসিত সাজের জন্য তোমার কথাগুলোও কেমন কুৎসিত লাগছে। কন্ঠে কুৎসিত গন্ধ বের হচ্ছে। এক্ষনি চেন্জ করে আসো। কুইক!””
মিহির গলা চিড়ে কান্না আসতে চাইছে। এমন নুন ছিটানো কথা উনি কিভাবে বলছেন? আমার যে গলায় কষ্টরা কুন্ডলি পেকে আসছে।
মিহি ওয়াশরুমে ঢুকার আগে আরেকবার ড্রেসিং টেবিলে আটকে থাকা চারকোনো আয়নায় নিজের বধুসাজ দর্শন করে নিলো। নিজের চোখে চোখ পড়ার আগেই সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো। সত্যিই কি কুৎসিত লাগছে আমাকে? উনি তো ঠিক মতো দেখেননি। না দেখেই বলে দিলেন কুৎসিত??
মিহি চেন্জ করে বেরুলে। ইরফাদ গলা হাঁকিয়ে বললো,,
“” লাইটটা অফ করে শুয়ে পড়ো। আমার কাল ক্লাস আছে।””
মিহি লাইট নিভিয়ে চটপট বিছানায় উঠে পড়েছে। ইরফাদের বুকের উপর মাথা রেখে জড়িয়ে নিলো। চোখটা বন্ধ করতেই ইরফাদ নিভু কন্ঠে বললো,,
“” মিহি,মানুষের দুটো রুপ থাকে। এক. আত্মিক আর দুই. বাহ্যিক। তুমি আমার বাহ্যিকটা দেখে আমার প্রেমে পড়েছো। ওটা কি আসলেই প্রেম নাকি কিশোরী বয়সের ভুল সেটা আমার আত্মিক রুপ দেখলেই বুঝা যাবে। আমার বাহিরটা কেমন আমি জানিনা। কিন্তু ভেতরটা জানি। আমার ভেতরজুড়ে পুরোটা সানজিদার বসবাস। তুমি আমার জীবনে এসেছো বলেই যে আমি তাকে ভুলে যাবো তেমনটা নয়। তোমার প্রথম প্রেম যেমন আমি,তেমন আমার প্রথম প্রেমও সানজিদা। জানো তো,মানুষের যেকোনো কঠিন কাজের প্রথম পদক্ষেপটা সে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত মনে রাখে। আর যদি সেটা প্রেম হয় তাহলে তো ভুলার অবকাশও নেই। আর আমি ভুলতেও চাইনা। তবে হ্যা,আমি চেষ্টা করবো তোমাকে…..””
মিহি পুরো কথাটা না শুনেই ইরফাদের বুক থেকে সরে পড়লো। ইরশাদের ডানহাতটা টেনে নিয়ে বিছানায় বিছিয়ে নিয়েছে। হাতের তালুতে নিজের গালটা ঠেকিয়ে উল্টো শুয়ে বললো,,
“” আমি কখনো একা ঘুমাইনি। ভয় লাগছে। আমাদের রুমটা আপনার রুমের মতো এতো বড় নয়। কেমন জানি লাগছে, মনে হচ্ছে আমি কোনো রুমের মধ্যে নয়, খোলা মাঠে শুয়ে আছি,আমার আশেপাশে হাজারও ভুত-প্রেত ঘুরঘুর করছে। আপনার ছোয়ার বাইরে গেলেই ওরা আমাকে খেয়ে ফেলবে। এভাবে ঘুমাই প্লিজ? আপনার ছোয়াকে বালিশ বানিয়ে? আপনার কি কষ্ট হবে??””
ইরফাদ মুখে কিছু বললোনা। হাতের তালুতে গরম পানির ছোয়া পাচ্ছে সে!
~~
“” আমার মেয়ের নাম কি রেখেছো গো?””
তাজের কন্ঠে তিহির বন্ধ চোখের পাতাটা কেঁপে উঠেছে। মেয়েটাকে বিছানার মাঝে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজেও চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো। ইচ্ছে করেই ঘুমের ভান ধরে থাকা। কেন জানি তাজের মুখোমুখি হতে অপরাধবোধ কাজ করছে। মানুষটা এতোদিন বাদে বউ আর মেয়ের কাছে আসলো। অথচ বউ তার প্রথম শব্দটিতেই তার প্রমিকের নাম উচ্চারন করেছে! এরপরও লোকটা কিভাবে এতো শান্ত আছে,তিহি ভেবে পাচ্ছেনা। এমন শান্তরুপটাকে উনার সাথে বেশ বেমানান লাগছে। তিহি না চাইলেও মনে মনে ঠিক চাইছে একটা ঝড় উঠুক,একটু ঝাঝালো কন্ঠ বেজে উঠুক,তবেইনা প্রকৃতি আবার শান্ত হবে।
তাজ ঘুমন্ত মেয়েটার কপালে চুমু খেয়ে আবার বললো
“” কি হলো বলোনা!””
তিহি বন্ধ চোখটা শক্ত করে টিপে নিয়ে বললো,,
“” প্রাপ্তি!””
“” বাহ! বেশ সুন্দর হয়েছে তো নামটা।
তাজ তিহির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,,
“” তোমার আর আমার প্রাপ্তি! এবার যে শুধু আমার প্রাপ্তিটাও চাই নেশাবউ। সবটা চাই! দিবে তো?””
তিহি শিউরে উঠে বিছানা খামচে ধরে আছে। বুকের ভেতরে চলছে ভয়ের আনাগোনা। নতুন কোনো ভয় নয়,পরিচিত ভয়। যে ভয়ের আচরে ক্ষত হয়ে যায় তার নরম শরীর। আবার তেমন কিছু হতে যাচ্ছে না তো? তেমন চাওয়ার কথাই কি বলছেন উনি?
তাজের নিশ্বাসের শব্দে তিহির কান তখনো কাঁপছে। নড়তে পারছেনা সে। কিছু বলতেও পারছেনা। তিহি ভয়ে ভয়ে চটপট করে বললো,,
“” আমার ঘুম পাচ্ছে। লাইটটা নিভিয়ে দিন প্লিজ!””
তাজ চুপচাপ নিজের জায়গায় শুয়ে পড়লো। লাইট বন্ধ করেনি।
তাজ সরে যেতেই তিহি হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। তবে সস্তি পায়নি। পুরো একটা রাত রয়েছে। যে রাতটা তাকে এক আতংকেই কাটাতে হবে। কিন্তু কেন এতো আতংক? উনি তো আমার স্বামী হয়। স্বামীর ছোয়াকে এতো কেন ভয় পাচ্ছি আমি? আগে তো এমন লাগেনি,তাহলে আজ হঠাৎ কেন এমন লাগছে??
তিহি নানা চিন্তা-ভাবনা নিয়েই একপাশ হয়ে শুয়ে রইলো। এক সময় গভীর নিদ্রায় ডুব দিলো। গভীর ঘুমে যখন আচ্ছাদনে স্বপ্নের তীরে পা ফেলবে ঠিক তখনি ও চিৎকার করে উঠেছে। চোখ মেলে দেখে ওর বা’হাতের বৃদ্ধা আঙুলটি কামড়ে ধরে আছে তাজ!
চলবে