তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,পর্ব (২৬)

0
2880

#তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,পর্ব (২৬)
#রোকসানা-রাহমান

তিহির মুখে ছোট্ট শব্দটাই ইশাদের সব হাঁসি উবে দিলো। কিছু সময়ের জন্য ভুলে গিয়েছিলো তার আর তিহির বাস্তবতা। আবার কেন মনে পড়লো?? এমনটা কি হতে পারেনা আমি সবকিছু ভুলে গিয়েছি??

“” ইশ!””
“” হুম বলো।””
“” তোমার কি আজো কিছু বলার নেই?””

তিহির প্রশ্নে ইশাদ ওর দিকে শান্তদৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

আমি কি বলতে চাচ্ছি তুমি ঠিকই বুঝতে পারছো ইশ। তুমি শুধু একবার বলো,তিহিপাখি আমি তোমাকে নিতে এসেছি। দেখবে আমি সব ছেড়ে এখনি তোমার কাছে চলে যাবো। আমার যে তোমাকে চাই। আমার অপুর্ন স্বপ্নদেরও তোমাকে চায়। প্লিজ ইশাদ আজ একা ফিরে যেওনা। আজ যদি আমাকে ফেলে যাও,তাহলে এই তিহি আর কোনোদিনও তোমার জন্য চোখের পানি ফেলবেনা। নিজের সবটা সে বিসর্জন দিবে। আমার ভালোবাসার কসম!

তিহি নির্লিপ্তে চেয়ে আছে ইশাদের দিকে। চোখের মনিদুটো স্থির থাকলেও তাহার ভেতরে চলছে পাওয়া না পাওয়ার ঝড়। শান্ত ঝড়! যা অদৃশ্য অনেককিছু ভেঙে লন্ডভন্ড করে দিয়ে বন্যা বয়িয়ে দিতে পারে চোখের অশ্রুর। হয় পাওয়ার অশ্রু নাহয় না পাওয়ার অশ্রু!

ইশাদও তিহির দিকেই চেয়ে আছে। তার ভেতরে কি চলছে সে জানেনা। তবে তার চোখদুটো ঠিক পড়তে চাইছে। চোখের চাওয়াটা সে বুঝতে পারছে। মনের ভেতরে জমে থাকা আবেগগুলো চাইছে তিহির চোখের চাওয়াটা পুরন করে দিতে। তিহিকে নিজের করে পেতে কিন্তু এটা কি ঠিক?? যে সংসার আমার ইচ্ছেতে গড়ে উঠেছে,হোক সেটা ভুল মানুষের সাথে কিন্তু ইচ্ছেতো আমারি ছিলো। আজ সেই সংসার আমি কি করে ভেঙে দিবো?? এতোটা স্বার্থপর কি আমি হতে পারবো?? সারাজীবন এই স্বার্থপরের বোঝাটা বয়তে পারবো তো?? যা হচ্ছে তা বাধা না দিয়ে চলতে দেওয়াটা কি ভুল হবে? ঠিক ভুল জানিনা তবে,বিবেক বলছে অন্যের সংসার ভেঙে নিজের সংসার সাজালে তাহা কখনোই সুখের পুর্ণতা পাবেনা৷ কখনোই না! তাই এই ভাঙা-গড়া খেলাতে নিজেকে না মাতিয়ে পিছু হটার ইচ্ছেতেই
ইশাদ চোখদুটো বন্ধ করে বললো,,

“” আমি আসছি!””

ইশাদের ছোট্ট বিদায়বানীটা তিহির বুকের ভেতরে ফুটো করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে হাজারও আলপিন তার বুকের ভেতরে এক এক করে নয়,সব একসাথে গেথে দিচ্ছে আর বের করছে। আচ্ছা আলপিনগুলো কি লাল রঙে মেখে যাচ্ছেনা???

ইশাদ ঘুরে চলে যাচ্ছে। তিহি সেদিকেই চেয়ে আছে। আজ শুধু একা ফিরছেনা। হয়তো সে তিহিকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেনা তবে তিহির ছোট্ট বুকের ভেতরজুড়ে ভালোবাসার হৃদয়টা সে নিয়ে চলে যাচ্ছে। যে ভালোবাসার নাম ছিলো ইশাদ। ইশাদনামক হৃদপিন্ডটা ইশাদ নিজে টেনে বের করে নিয়ে যাচ্ছে!

~~

ইনাকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে মিহিরও চোখ লেগে এসেছিলো। হঠাৎই ফোনটা বেজে উঠায় ঘুম চোখেই ফোনটা কানে ধরে মিহি।

“” আম্মুর রুমের চাবি তোমার কাছেনা?””

ইরফাদের কন্ঠ পেয়ে মিহি চট করে উঠে বসে পড়েছে। বিয়ের এতোগুলো মাস কেটে গেলেও ইরফাদ তাকে সচরাচর কল দেয়না। খুব প্রয়োজন হলে দেয়।

“” হুম।””
“” আমি বাসায় আসছি। আম্মুর রুমে আমার একটা ফাইল আছে। ওটা বের করে রাখো। আমার আসতে আর ২০ মিনিট লাগবে।””
“” কিসের ফাইল?””

মিহির প্রশ্ন না শুনেই ইরফাদ কলটা কেটে দিয়েছে। কিসের ফাইল,কেমন ফাইল কিছুই জানা হলোনা মিহির। কোথায় আছে সেটাও জানা হয়নি। কিন্তু উনি যখন বলেছে বের করে রাখতে তারমানে খুব জরুরী হবে!

মিহি তড়িঘড়ি করে চাবিটা নিয়ে মরিয়ম বেগমের রুমের দিকে ছুটছে।

~~

ইরফাদ বাসার সামনে গাড়ীটা রেখে হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। মিহির নাম ধরে কয়েকবার ডেকেও যখন কোনো সাড়া পেলোনা তখন সে রাগে ফুসছে।

“” কিরে এভাবে চিল্লাচ্ছিস কেন? কি হয়েছে?””

বাবা জমিল সাহেবের প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই মিহিকে খুজতে থাকে। নিজের রুম আর ইনার রুমে না পেয়ে সোজা মায়ের রুমের দিকে হাঁটা ধরলো।

“” একি তুমি খাটের নিচে কি করছো?””

মিহি উপুত হয়ে খাটের নিচে সবেই মাথাটা ঢুকিয়েছিলো। হঠাৎ ইরফাদের কন্ঠ পেয়ে নড়ে উঠায় মাথায় টাক খেয়েছে। মাথায় হাত রেখেই ফ্লোর থেকে উঠে বললো,,

“” আপনার ফাইল খুজছিলাম।””

ইরফাদের পুরো রুমের দিকে তাকিয়ে মাথা গরম হয়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,

“” ফাইল খাটের নিচে থাকে?? রুমের একি হাল করেছো? মনে তো হচ্ছে বেশ বড়সড় একটা ঘুর্নিঝড় বয়ে গেছে। তোমার কি বুদ্ধীসুধী কিছু হবেনা??””
“” আমি তো আপন…””
“” সাটআপ। আর একটা কথাও বলবেনা। ইচ্ছে করছে তোমাকে…””

“” কি হয়েছে ভাইয়া?””

ইরফাদ পেছন ঘুরে বললো,,

“”তোর জন্য সব হয়েছে। আমি বারবার বলেছিলাম,এমন একটা বাচ্চা মেয়েকে আমি বিয়ে করবোনা। তোর জরাজুরিতে করতে হলো। আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে এ মেয়েটা। এর থেকে তো আমি একাই বেশ ছিলাম ইশাদ।””
“” ভাইয়া,কি হয়েছে বলবিতো!””
“” আমার দিকে না তাকিয়ে আশেপাশে তাকা। সামান্য একটা ফাইল বের করে রাখতে বলেছিলাম আর সে পুরো রুমে ঘুর্নিঝড় এনে হাজির করেছে!””

ইরফাদ খাটের কোনায় পড়ে থাকা চাবিটা নিয়ে মিহির দিকে তাকিয়ে বললো,,

“” এইটা এভাবে ফেলে রাখার জন্য নয়,ব্যবহারের জন্য। ইডিয়েট!””

মিহির চোখ বেয়ে পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। ইশাদের সাথে সাথে জমিল সাহেবও রুমে এসে হাজির। কিন্তু কাউকে পরোয়া না করেই ইরফাদ যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছে। মিহির চোখের পানিও যেন তার রাগকে দমাতে পারছেনা।

ইরফাদ ফাইলটা নিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার মুহুর্তে বললো,,

“” তোমাদের ব্যাকরন বইয়ে একটা কথা আছেনা,অল্প বিদ্যে ভয়ঙ্করি,ওটার মানে জানো তো?? তুমিও অমন ভয়ঙ্করি হয়ে গিয়েছো। যেটা আমি সহ্য করতে পারছিনা। সব জিনিসে অকালপক্ক মানায়না। ভারটা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হয়!””

মিহি চোখের কোনে জমে থাকা শেষ পানিটুকু চোখ টিপে বের করলো। নিজের হাতের উল্টোপিঠে সবটা পানি মুছে নিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে পড়ছে রুম থেকে। পেছন থেকে ইশাদ বললো,,

“” মিহি,দাড়াও। মিহি! মিহি আমার কথা শুনো।””

~~

বিকেলের দিকেই তাজ বাসায় ফিরেছিলো। কিন্তু রুমে ঢুকেনি। সোজা ছাদে চলে গিয়েছিলো। বিকেল গড়িয়ে এখন রাত ৯ টা বাজে। শিরিন বেগম কয়েকবার ডাকতে গিয়েও ফিরে এসেছেন। তিহি শুধু সবটা দেখছে কিন্তু কিছু বলছেনা। আসলে কি হচ্ছে সেটা তো সে বুঝতে পারছেনা। বুঝার মতো অবস্থায় কি আছে?? ইশাদের চলে যাওয়াটা তিহি সহ্য করতে পারেনি। কষ্টে মুড়িয়ে নিয়েছিলো তাকে। কেঁদে কেটে চোখের পানিতে বালিশসহ বিছানা চাদরটাও ভিজিয়ে ফেলেছে। এতেও তার মন ভরেনি ইচ্ছে হচ্ছিলো,কোনো বিশাল সাগর বানিয়ে তাতে ভেসে যেতে। কিন্তু না সে আর কাঁদবেনা। কার জন্যে কাঁদবে?? তিহি বিছানা ছেড়ে গোসল করে নিলো। শিরিন বেগম খেতে ডাকছেন।

তিহি খাবার টেবিলে গিয়ে তাজকে না পেয়ে বললো,,

“” উনি কোথায়,ফুপিমা?””
“” ছাদে।””
“” কেন? খাবেননা?””
“” জানিনা। তুই গিয়ে দেখ।””

তিহি পা চালিয়ে ছাদে উঠে যাচ্ছে। আশেপাশে তাজকে দেখতে না পেয়ে বুঝতে পারলো নিশ্চয় দোলনায় বসে আছে। সেদিকে যেতেই তাজকে দেখতে পেলো। সামনের দিকে আনমনে চেয়ে আছে।

তিহি কি বলে ডাকবে বুঝতে পারলোনা। কখনো সেভাবে তাকে সম্বোধন করা হয়নি। তাই পেছন থেকে ডাক না দিয়ে সামনে চলে গেলো। মুখটা অমন শুকনো করে রেখেছে কেন? তার কি ইন্টারভিউ ভালো হয়নি? তাতে কি ,আবার দিবেন। এতে এতো মন খারাপের কি আছে? নাকি অন্যকিছু?

তিহি ভেতরে ভেতরে আরো প্রশ্ন জমা করা বাদ দিয়ে সরাসরি বললো,,

“” কি হয়েছে?””

তিহির এই একটা প্রশ্নের জন্যই যেন তাজ অপেক্ষা করছিলো। অপেক্ষার প্রহর শেষ করে দিয়ে ঝাপটে ধরে তিহিকে। শক্ত করে চেপে ধরে তিহিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,,,

“” তিহি আমি সিলেক্ট হয়ে গিয়েছি। আমি জবটা পেয়েছি। আমি তো স্বপ্নেও ভাবিনি,জীবনের প্রথম দেওয়া ইন্টারভিউতে আমি এতো ভালো করবো। আমার তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা তিহি। তুমি কি আমাকে একটু চিমটি কাটবে?””

তাজের হঠাৎ পরিবর্তনটা তিহি এখনো হজম করতে পারেনি। একটু আগেও যে এতো বিষন্ন নিয়ে মনমরা হয়ে বসে ছিলো সে হঠাৎ এতো খুশি কি করে হতে পারে?? তাজকে দেখে তো বুঝা যাচ্ছে সে অনেক খুশি। তাহলে খুশিটা এভাবে ভেতরে চেপে নিয়ে এমন অদ্ভুতভাবে ছাদে দেবদাস হয়ে বসেছিলো কেন??

তাজ খুশির আনন্দে তিহিকে নানাভাবে জড়িয়ে ধরছে আর নিজের খুশিটাকে প্রকাশ করতে চাচ্ছে। তিহিকে ছেড়ে দিয়ে ওর মুখটা নিজের হাতের আজলে নিয়ে বললো,,

“” নেশাবউ,আমিও অন্যসব সাধারন মানুষের মতো ৯ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত ডিউটি করে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরবো। তোমাকে বুকে নিয়ে ক্লান্তকে দুরে ঠেলে দিবো। হলিডে তে তোমাকে আর প্রাপ্তিকে নিয়ে বিকেলের মৃদু আলোতে পার্কে বসে বাদাম খাবো। মাঝে মাঝে সাঝের মাঝে ল্যাম্পোস্টের আলোতে ভালোবাসা মাখবো। নেশা বউ,আমি আমার ছোট সংসারটাকে নিজ হাতে সাজাবো,নিজের অর্জিত অর্জন থেকে। তুমি শুধু সেই সংসারটাকে স্নেহেরডোরে বেধে নিও তাহলেই হবে। আমার আর কিছু চাইনা। কিচ্ছুটি চাইনা!””

তাজ নিজের মতো নিজের মনের কথা আউরিয়ে তিহিকে আবার জড়িয়ে ধরেছে। তিহি চোখটা বন্ধ করে নিলো। তাজকে অনুভব করার চেষ্টা করছে। নিজের সোজা হয়ে থাকা হাতদুটো মুঠ পাকিয়ে বন্ধ চোখদুটো আরো শক্ত করে নিয়েছে। জোরে নিশ্বাস টেনে নিজের হাতদুটো দিয়ে তাজের পিঠে ছোয়া দিয়ে মনে মনে বললো,,আমি পারবো! অবশ্যই পারবো!!
তাজ ওকে আরো গভীর শক্ত করে ধরে ফিসফিস করে বললো,,

“” আমি আমার নেশা বউয়ের নেশায় ডুবতে চাই!””

তিহি সাথে সাথে চোখ মেলে বললো,,

“” ফুপিমা খেতে ডাকছেন। চলুন!””

তাজকে নিজের কাছ থেকে বল প্রয়োগে সরিয়ে দিলো। ওর দিকে না তাকিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াচ্ছে তিহি।

~~

ডিনার করতে এসে ইরফাদ কোথাও মিহিকে দেখতে পাচ্ছেনা। বিকেল থেকেই সে বাসায়,নিজ রুমে। কিন্তু অন্যসব দিনের মতো মিহি তার সাথে নানা অযুহাতে কথা বলতে আসেনি। হয়তো ব্যস্ত আছে ভেবে ব্যাপারটা নিয়ে মাথায় ঘামায়নি। ইশাদ আর জমিল সাহেব খাবার টেবিলে বসতেই টুম্পা সবার পাতে ভাত বেড়ে দিচ্ছে। ইরফাদের পাতে ভাত দিতে আসলে ওর দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে চেয়ে থেকে নিজেই নিজের পাতে ভাত নিতে নিতে বললো,,

“” আর সবাই কোথায়?””
“” ইনামা আর মিহি আপা তো ঘুমাইতাছে।””
“” এতো সকাল সকাল ঘুম,শরীর ঠিক আছে তো?””
“” কার?””

ইরফাদ ভাতের চামচটা শব্দ করে রেখে বললো,,

“” সবার।””
“” হ।””

ইরফাদ ইশাদের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে। ওর দিকে তাকিয়ে তো সবকিছু স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে। কিন্তু আসলেই কি স্বাভাবিক??

ইরফাদ শুয়ে থেকে বেশ কিছুক্ষন দরজার দিকে চেয়ে আছে। বারবার মনে হচ্ছে মিহি এখনি এসে সরি বলবে কিন্তু না সরিতো দুর এই রুমের মুখোও হচ্ছেনা। তাহলে কি ও সত্যিই সত্যিই ইনার সাথে ঘুমাবে??

ইরফাদ বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করে শুয়ে পড়েছিলো। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছেনা। নিজের হাতটা মুখের সামনে নিয়ে তালুর দিকে চেয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখানে মিহি লেগে আছে। ওর চোখের পানিতে এই হাতটা কতবার ভিজেছে তা কি সে গুনেছিলো??

“” ভাইয়া কিছু বলবি?””

ইরফাদ এপাশওপাশ ছটফট করতে করতেও ঘুমোতে পারলোনা। যে মেয়েটাকে সে কখনো ছোয়নি সে মেয়েটাকে ছাড়া তার কেন ঘুৃম আসছেনা বুঝতে পারলোনা। বারবার নিজের পাশটা খালি দেখতে দেখতে কেমনজানি সবকিছু তেতো তেতো লাগছিলো। তাই কিছু না ভেবেই হুট করে ইশাদের রুমে হাজির।

“” না কিছুনা। এতো রাতে জেগে আছিস যে?””
“” একটু কাজ করছিলাম। এখনি ঘুৃমাবো। ভেতরে আসো!””
“” না,থাক। তুই ঘুমা। অনেক রাত হয়েছে।””

ইরফাদ চলে যেতে নিলে ইশাদ বললো,,

“” আসলেই বেশি করে ফেলেছো।””

ইরফাদ থমকে দাড়িয়ে বললো,,

“” মানে?””

ইশাদ ইরফাদের কাছে এসে বললো,,

“” তুমি এটাই জানতে এসেছিলেতো, মিহির সাথে তুমি বেশি রুঢ় আচরন করে ফেলেছো নাকি? সেটারই উত্তর দিলাম। আমি তোমাকে একটা কথা বলেছিলাম যে,হয় মিহিকে তোমার মতো ম্যাচিউর হতে হবে নাহয় তোমাকে ওর মতো বাচ্চা হতে হবে। আমি জানি মিহি তার সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছে,সেটা তুমিও জানো। কিন্তু তুমি কি ওর মতো হওয়ার চেষ্টা করেছিলে?? ও একটা বাচ্চা হয়েও আপ্রান চেষ্টা করেছে তোমাকে খুশি রাখার কিন্তু তুমি কি করেছো?? আর আজকে তুমি এতোটাই বখে গিয়েছিলে যে মিহির এতো পরিশ্রমকে তুমি এক সেকেন্ডে ব্যর্থটার সিল মেরে দিয়েছো। ও খুব কষ্ট পেয়েছে ভাইয়া। আমি তোমাদের মাঝে আর আসবোনা। তোমাদের যেটা সঠিক মনে হয় তাই করো।””

~~

মিহি পিলপিলিয়ে ইরফাদের রুমে ঢুকেছে। তবে ইরফাদের সাথে ঘুমোনোর জন্য নয় অন্যকারনে। আজ কেন জানি ইরফাদ এখনো বাসায় আসেনি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৯ টা বেজে ৫ মিনিট। উনি তো এতো লেট করে বাসায় আসেননা। তাহলে আজ কেন আসছেন? কিছু হয়নি তো?? মিহির ভয়ে বুকটা নড়ে উঠলেও সেদিকে পাত্তা দিলোনা। চিন্তার আবাস সরিয়ে নিজের কাপড়-চোপড় বের করছে। সবগুলো স্তুপাকারেই লাগেজে ভরে নিয়ে বের হতে গিয়েও থমকে গেলো। টেবিলে পড়ে থাকা একটা খাতা আর কলম নিয়ে লিখতে বসেছে।

~~

তিহি ব্লাউজের বোতাম লাগাতে হিমশিম খাচ্ছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে নিখুতভাবে নিজেকে দেখছে। পেটটা স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুন বড় লাগছে। পেটিকোটের বাধনের উপর দিয়ে অনেকটাই হেলে আছে। বাবু পেটে থাকার কারনে পেট বড় হওয়ার কারন ছিলো কিন্তু সে তো এখন পেটে নাই তাও কেন পেট এতো বড় হতে হবে?? ব্লাউজের বোতামটা রাগ নিয়ে লাগিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করছে,প্রাপ্তি হওয়ার আগেও তো কি সুন্দর ফিটিং ছিলো আর এখন তো দম বন্ধ হয়ে আসছে,সব ঐ প্রাপ্তির জন্য! এই মুহুর্তে তার মনে হলো,একটা বাচ্চাকে পৃথিবী আনার জন্য একটা মেয়েকে অনেকগুলো ত্যাগের মধ্যে অন্যতম ত্যাগ হলো নিজের সৌন্দর্য বিসর্জন দেওয়া!

খয়েরী রঙের শাড়ীটা নিজের শরীরে জড়িয়ে নিয়ে ছোট্ট টুলটা টেনে নিয়েছে,তিহি। আয়নার সামনে বসে গয়নার বাক্স থেকে এক এক করে সোনার গয়না পড়ে নিজেকে সাজাচ্ছে। এগুলো তাজ ওকে দিয়েছিলো বিয়েতে। এতো এতো গয়না তাকে বউ সাজিয়েও শেষ করতে পারেনি। মুখে ক্রিম লাগাতে গিয়ে মনে হলো,লাস্ট কবে মুখটাতে ফেসওয়াশ লাগিয়েছে মনে নেই। মুখটা কেমন বিবর্ন হয়ে আছে,গালের টানটান ভাবটা কেটে অনেকটা সাপ্টা হয়ে এসেছে। চুলগুলোও কেমন খড়খড়া। খড়খড়া চুলে চিরনি চালাতেই চুলে টান পড়েছে। হাত দিয়ে খুলতে গিয়েও পারছেনা। কোথায় আটকেছে কে জানে?? তিহি বেশ বিরক্ত নিয়ে চুল টেনে ছিড়তে যাবে অমনি কারো হাত পড়লো চুলে। তিহি আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চুলগুলো আলতো করে খুলে দিচ্ছে তাজ!

চুল খুলে দিয়ে সরে যেতে নিলে ওর হাতটা আকড়ে ধরে তিহি। তাজের বা’হাতটা নিজের পেটের দিকে টেনে এনেছে। পেটের মধ্যে চেপে ধরে তিহি চোখ বন্ধ করে বললো,,,

“” আপনার নেশায় ডুব দিবো বলেই এতো তোরজোর। স্মৃতির প্রথম পাতাটায় অতীতের কালি আপনার স্পর্শেই আকতে চায়!””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here