তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,পর্ব (২৮)

0
3432

#তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,পর্ব (২৮)
#রোকসানা রাহমান

ইশাদ খাবার রেখে দরজার নিকটে আসতেই ওর বুকটা ছেদ করে উঠলো। তিহিকে এমন বিধ্বস্ত লাগছে কেন?? ইনার আকস্মিক জড়িয়ে ধরাতে তিহির শাড়ীর আচল পড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু সেদিকে তিহির কোনো খেয়াল নেই। ইশাদ ঝটপট তিহির কাছে গিয়ে ওর বুক থেকে পড়ে যাওয়া আচলটা উঠিয়ে কাধে বিছিয়ে দিয়েছে। আতংকিত কন্ঠে বললো,,

“” কি হয়েছে তিহি?””
“” ইনাকে আমায় দিবে,ইশ??””

ইশাদ তিহির দিকে ভাবান্তরভাবে চেয়ে আছে। নানা প্রশ্নের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কি হয়েছে? এমনটা কেন দেখাচ্ছে? আর ইনাকেই বা চাইছে কেন??

ইশাদের পেছন পেছন বাকি সবাই এসেছে। ফরিদা বেগম মেয়েকে ভেতরে আনতে আনতে বললেন,,

“” মা,তুই ঠিক আছিস তো? আয় এদিকটাই বস। মিহি এক গ্লাস পানি নিয়ে আয় তো।””

তিহিকে সোফাতে বসিয়ে দিয়েছেন ফরিদা বেগম। ক্লান্তভরা চোখদুটো দিয়ে বারবার ইশাদের দিকে তাকাচ্ছে তিহি। যে চাহনিতে রয়েছে অনুনয় আর আশার আলো।

মিহি পানির গ্লাসটা দিয়ে তিহির পাশেই বসে পড়লো। তারও খুব টেনশন হচ্ছে। তিহি ঢকঢক করে পানিটুকু খেয়ে নিয়ে মিহির হাতে গ্লাস ধরিয়ে বললো,,

“” আরেকটু পানি দে। পিপাসা পেয়েছে খুব!””

মিহি দৌড়ে পানি আনতে চলে গেলো। এবার শুধু গ্লাস নয়,সাথে জগটাও নিয়ে এসেছে।

জমিল সাহেব,ইরফাদসহ সকলেই তিহিকে ঘিরে আছে। সকলেই বিস্মিত আর চিন্তিত। কি হয়েছে তা জানার প্রবল ইচ্ছেতে আছে। তবে কারো মুখেই কোনো শব্দ নেই। মনে হচ্ছে আজ সকলে নিরব দর্শক হয়ে আছে। সকলের মন উতলা হয়ে আসছে তিহির কথা শোনার জন্য।

তিহি দ্বিতীয়বারের পানিটুকুও শেষ করে,তৃতীয়বারের পানির গ্লাসের তৃতীয়াংশ পান করে ইশাদের উদ্দশ্যে বললো,,

“” তোমার ইনাকে আমায় দিবে?? জাস্ট কিছু সময়ের জন্য। আমি বিকেলেই ওকে দিয়ে যাবো।””

ইশাদ তিহির দিকে তাকাতে পারছেনা। তার তিহিপাখির এই করুন চেহারা সে দেখতে পারছেনা। সহ্য করবে কিভাবে?? তার পছন্দ রঙের শাড়ীটা পড়ে আছে তিহি। তবুও কেন ঝলছে যেতে চাচ্ছে তার রুপ?? তাজ কিছু করেনি তো?? ইশাদের আত্মা কেঁপে উঠতেই তিহি আবার বললো,,

“” ইশ! দিবেনা??””

ইশাদ তিহির দিকে না ঘুরেই বললো,,

“” ইনা তোমাকে খুব পছন্দ করে,সেটা তুমি ভালো করেই জানো। কিছু সময়ের খুশি দিয়ে পরে কি আবার অশ্রু ঝড়াতে চাও?? ওকে সামলাতে আমায় খুব কষ্ট করতে হয়েছে তিহি। এমন আবদারের কারন কি??””
“” এক মৃত্যুযাত্রীর শেষ ইচ্ছে পুরন করতে চাচ্ছি।””

তিহির কথায় সকলেই নড়ে উঠেছে। এতক্ষন ইশাদ অন্যদিকে চেয়ে থাকলেও এখন আর পারলোনা। তিহির রহস্যময়ী ভঙ্গিমার দিকে গাঢ়ভাবে চেয়ে আছে। তার রহস্যে ঘেরা ছোট্ট বাক্যটির মানে বুঝার চেষ্টা করছে। ইশাদ কিছু বুঝে উঠার আগেই তিহি সোফা ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছে। ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে নিজের দুটো হাত করজোড়ে বললো,,

“” প্লিজ! বাবা তার মেয়েকে দেখতে চাচ্ছে। মৃত্যুপুরীতে যাওয়ার আগে একটিবার চোখের দেখা দেখবে। সে আমায় কথা দিয়েছে তার পরিচয় সামনে আনবেনা। শুধু দুচোখ ভরে দেখবে!””

তিহির কথাতে ইশাদের শক্তসমর্থ শরীরটা নড়ে উঠেছে। চোখের পাতা পড়তে গিয়েও থমকে গিয়েছে। নিশ্বাসটা টেনে নিয়েও ছাড়তে ভুলে গিয়েছে। কিছু সেকেন্ডের জন্য সে পৃথিবীর অনুভূতি থেকে হারিয়ে গেলেও ক্ষনিকের মধ্যেই ফিরে এসেছে। তিহির দুবাহু শক্ত করে চেপে ধরে বললো,,

“” এসব কি বলছো? কি হয়েছে তাজের??””
“” ফুসফুসে ক্যান্সার!””

ইশাদ তিহিকে ছেড়ে দিয়েছে। দুকদম পিছিয়ে গিয়ে তিহির দিকে চেয়ে আছে নির্লিপ্তে। ওর মুখে স্পষ্ট এক দুঃখী মেয়ের ছাপ দেখতে পারছে। যার চোখ বেয়ে সাগরের স্রোত বয়ে যাওয়ার কঠিন আদেশ দেওয়া হয়েছে। মেয়েটার যেটুকু সুখ ছিলো আমি কি সেটুকুও কেড়ে নিলাম। নিজের অজ্ঞতার উপর আজ খুব রাগ হচ্ছে তিহি। নিজের বেখেয়ালির জন্য আজ তোমাকে এতোটা করুন পরিস্থিতে যেতে হচ্ছে। এই কষ্টের বোঝা তুমি কিভাবে বয়ে বেড়াবে গো তিহিপাখি?? যে ছেলে নেশার জন্য নিজের মেয়ে হারানোটাকেও উপলব্ধি করতে পারেনি সে তো এমন কঠিন রোগে ভুগবেই। আমি তো সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম তাজ নেশাতে কতটা ডুবে গিয়েছিলো! ইশাদের চোখে পানিরা উকি দিচ্ছে,অপরাধভোগির পানি। এ পানি শুধু সেই দেখতে পারবে যে এমন কঠিন অপরাধের অনুতাপে ভোগে।

ইশাদ শুকনো গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে বললো,,

“” কোন হসপিটালে এডমিট করিয়েছো?””
“” উনি বাসায় আছেন। নিজের রুমে। উনার জেদের সাথে আমি পেরে উঠিনি। উনার একটাই কথা,শেষ নিশ্বাস তিনি তার রুমের গন্ধ থেকে নিবেন।””

তিহির কথায় ইশাদের নাক,মুখ,চোখ শক্ত হয়ে এসেছে। ইনাকে নিজের কোলে উঠিয়ে তিহির ডান হাতটা ধরে বললো,,

“” চলো,আমার সাথে।””

তিহি চুপচাপ ইশাদের পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের পেছন পেছন বাকিরাও হাঁটছেন। সকলের মুখেই বিষাদের ছায়া। ফরিদা বেগম বারবার আচলে চোখ মুচ্ছেন।

~~

অন্ধকার রুমে আলো জ্বলতেই তাজ অর্ধ চোখ মেলে তাকিয়েছে। রুমভর্তি মানুষের দিকে তাকানোর আগেই তিহির কোলে ৯/১০ বছরের এক বাচ্চার দিকে নিজের দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকে সুক্ষভাবে পা থেকে মাথা অবদি দেখে যাচ্ছে। একবার দেখা শেষ হলে আবার দেখছে, আবার দেখা শেষ হলে আবারও দেখছে। আজ বুঝি তার দেখা শেষই হবেনা। ইনাও ভাবুকনয়নে চেয়ে আছে তাজের দিকে। ইশাদ ইনার কাছে এসে দাড়ালো। তাজের দিকে একটা হাত তাক করে ইনাকে বললো,,

“” সোনামা,তুমি সবসময় আফসোস করতে না যে তোমার শুধু বাবাই নেই কেন? উনিই তোমার শুধু বাবাই। তোমার সত্যিকারের বাবা। যাবেনা শুধু বাবার কাছে?””

ইনা ইশাদের দিকে চেয়ে থেকে তাজের দিকে তাকালো। বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তিহির কোল থেকে নেমে যাচ্ছে। গুটিগুটি পায়ে তাজের কাছে গিয়ে বললো,,

“” তুমি এমন অন্ধকার রুমে শুয়ে আছো কেন? তোমার ভয় লাগেনা?? তুমি কি সত্যি আমার শুধু বাবাই?””

ইনার কথা শ্রবণের সাথে সাথে তাজের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তবুও তার চোখের পলক ফেলার নাম নেই। আজ সে তার মেয়েটাকে দেখবে,চোখের পলক ফেলে সময় নষ্ট কেন করবে??

ইনা তাজের কাছটাতে বসে দুহাতে দুচোখের পানি মুছে বললো,,

“” তুমি কি অসুস্থ?? তারমানে তো তুমি আমার অসুস্থ বাবাই,শুধু বাবাই নও। তুমি ঔষধ খেয়ে সুস্থ হও তারপর থেকে তোমাকে শুধু বাবাই বলে ডাকবো,ওকে?””

তাজ ইনাকে ঝাপটে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,,

“” মা,তুই এমন আদেশ আগে কেন দিলিনা?? তোর আদেশ আমি কখনোই ফেলতামনা। মায়ের আদেশ কি সন্তান ফেলতে পারে??””

ইনা চুপটি করে তাজের স্নেহমাখা বুলি শুনে যাচ্ছে। কেন শুনবেনা?? তার এই বাবাইয়ের কথাগুলো যে তার বুকের ভেতরে শীতলতায় ছেয়ে যাচ্ছে। ইনাকে জড়িয়ে নিতেই প্রাপ্তির কান্নার শব্দ পেলো তাজ। দরজার কাছেই শিরিন বেগমের কোলে চিৎকার করে যাচ্ছে। তাজ এক হাতে ইনাকে জড়িয়ে আরেক হাত বাড়িয়ে প্রাপ্তিকে ডাকছে।

শিরিন বেগম প্রাপ্তিকে তাজের কাছে দিয়ে নিজের চোখের পানি আড়াল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। দু মেয়েকে দুহাতে নিজের বুকের দুধারে চেপে ধরে আছে তাজ। এবার বুঝি তার পিতৃস্বাদ পরিপুর্ন হলো।

সকলেই মুগ্ধনয়নে বাবা-মেয়ের ভালোবাসা দেখছে। দু মেয়েকে সমান বাটোয়ারায় ভালোবাসা ভাগ করে দিচ্ছে তাজ। মুখের বুলি বেশিক্ষন আউরাতে পারেনি হঠাৎ করে কাঁশি উঠেছে। ইশাদ দৌড়ে এসে তাজের ঠোঁটে নিজের রুমালটা চেপে ধরেছে। আদেশি সুরে বললো,,,

“” তিহি,ইনা আর প্রাপ্তিকে এখান থেকে নিয়ে যাও।””

তিহি দুজনকে সরিয়ে শিরিন বেগমের কাছে দিয়ে এসে নিজেও ইশাদের পাশে বসে পড়েছে। ইশাদ তাজের ডানহাতের কব্জির এক ইঞ্চি নিচে চেপে ধরে আছে। সুক্ষমনোযোগে নিজের ঘড়ীটার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ইরফাদের দিকে চেয়ে বললো,,

“” ভাইয়া,কল ফর ইমার্জেন্সি এ্যাম্বুলেন্স। হারিয়াপ!””

ইরফাদের জন্য ওয়েট না করেই ইশাদ নিজের ফোনটা পকেট থেকে বের করলো। ফোনটা কানে নিতেই তাজ বললো,,,

“” তোমার কি মনে হয় আমার নেশা আমাকে এখানে এনেছে? তুমি ডক্টর হলেও তোমার এই ভাবনাটা ভুল!””

ইশাদ কপাল কুচকে তাজের দিকে তাকাতেই তাজ আবার বললো,,

“” আমার পাপ আমাকে এখানে দাড় করিয়েছে।””
“” পাপ!””
“” হুম। বিয়ের আগে পরনারীতে আসক্ত হয়েছিলাম আমি। তাও জেনেশুনে,সজ্ঞানে। ইসলামী ভাষায় যেটাকে যেনা বলে সম্বোধন করা হয়।ইহকালেই একজন যেনাকারীকে তিনটি কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। ১. সে এমন এক মহামারী রোগে ভোগবে যে রোগ এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নিরাময় করতে পারবেনা। ২. সে এমন এক রোগে ভুগবে যে রোগে তার পুর্বপুরুষেরা মুখদর্শন করেনি। ৩. সে হতো দরিদ্র হয়ে মারা যাবে। যারা বিবাহ পুর্বে নিজের কামুকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে মিলনে সম্বতিতো হয় তাদের এই শাস্তি অবশ্যই ভোগ করতে হবে। হোক সেটা একজনের সম্মতিতে অথবা দুজনের সম্মতিতে!

তাজ ইশাদের কাছ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,,

“” আমিও একজন যেনাকারী তাই আমাকেও এই শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর আমি ভোগ করছিও। আমার জানামতে আমার পুর্বপুরুষেরা কখনোই এ্যালকোহলে আসক্ত ছিলোনা,তাহলে মহামারি রোগ তাদেরকে ছুবে কিভাবে?? আর আমি তো মারা যাবো নিশ্চিত,নাহলে আমার রোগ সম্পর্কে শেষ সময়ে কেন অবগত হলাম?? আর দরিদ্র?? আমি তো ভালোবাসায় কাঙাল। আমি ভালোবাসায়হীন দরিদ্রতায় ভুগছি। নিজের বাবা-মা থাকতেও আমি তাদের থেকে দুরে পড়ে আছি। নিজের স্ত্রী-দুটো মেয়ে থাকতেও আমি না পেলাম বউয়ের ভালোবাসা না পেলাম সন্তানের ভালোবাসা। এর থেকে দরিদ্র আর কি হতে পারে?? আমি হত দরিদ্র ভালোবাসার অভাবী। এক ভুল করে যেনাকারীতে নাম লিখিয়ে তার উপর নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত না হয়ে,মাঝরাতে জায়নামাজে বসে,চোখের অশ্রু ফেলে তওবা না করেই আমি তিহিকে বিয়ে করেছি। একজন যেনাকারী হয়ে একজন মুসলিম,আল্লাহভিরু মেয়েকে কখনোই বিয়ে করতে পারেনা,আলাহর হুকুম যেনাকারীকে অবশ্যই নিজের পাপ কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে, তওবা করে তারপর বিয়ে করতে হবে। নাহলে তাহার জন্য বিবাহ হারাম! আর আমি সেই হারাম বিয়েটাই করেছি,চতুষ্পদী জানোয়ারের মতো আচরন করেছি,তার জন্য তো আমাকে শাস্তি পেতেই হবে ইশাদ। তোমার হসপিটাল,তোমার ডক্টরি পড়া আমাকে এই শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবেনা। আর আমিও চাইনা রক্ষা পেতে আমি আমার ভুলের শাস্তি ভোগ করতে চাই। জ্বলতে চাই আমি কঠিন আগুনে।””

তাজের বলে যাওয়া কথাগুলো মনোমুগ্ধকরভাবে শুনছে রুমে অবস্থানকারী নিরব স্রোতারা। তাজ বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। ইশাদের হাতদুটো নিজের কপালে ঠেকিয়ে বললো,,

“” ভাই আমার,আমি তোমাদের পবিত্র ভালোবাসাকে পায়ে পিষিয়ে নিজের প্রতিশোধের আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছি। আমাকে ক্ষমা করে দিও। জীবনে এতো পাপ করেছি যে,এখন ক্ষমা চাওয়ার সময়টুকুও আমার কাছে নেই। যদি পারিস তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। তোর তিহির মনে তুই ছাড়া আর কারো ভালোবাসার ফুল ফুটেনি আর ফুটবেওনা। তোর ভালোবাসার ফুলটা হয়তো এতোদিন পানির অভাবে নুয়ে পড়েছে,কিন্তু মরে যায়নি। আবার জাগিয়ে তুলিস।””

তাজ নিজের বালিশের নিচে থাকা একটা কাগজ নিয়ে তিহির হাতে দিয়ে বললো,,,

“” এটা হলো,আমার পাপরাজ্য থেকে মু্ক্তির দেনমোহর। আমি সই করে দিয়েছি। শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে এমন ভালো একটা কাজ করতে পেরে আমার আনন্দ লাগছে। এতোটাই আনন্দ যে এখন আমার মৃত্যু হলেও আমি আফসোস করবোনা!””

তিহি চোখভরা নোনাপানি নিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাজ চেচিয়ে বললো,,,

“” সবাই আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যাও। আমি একটু একা থাকবো। আমার তোমাদের উপস্থিতে শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ! আমার আর কারোর উপস্থিতি চায়না। কারো চোখের পানি দেখতে চায়না।””

তাজের কথায় কারো নড়নচড়ন না দেখে তাজ তিহিকে অনুরোধের সুরে বলল,,

“” নেশাবউ,প্লিজ! সবাইকে নিয়ে বাইরে যাও। লাইটটা অফ করে দিও। আমি আর দুনিয়াবিআলোর স্পর্শে আসতে চায়না। প্লিজ!!””

তাজের অনুরোধের জবাবে তিহি কিছু বলেনি। সবাইকে নিজ হাতে টেনে বাইরে বের করে দিচ্ছে। ইরফাদ দরজার কাছে গিয়েও আবার ফেরত এসে তাজকে জড়িয়ে ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো,,,

“” বন্ধু,তুই কি জানিস আমি তোকে কতটা ভালোবাসি?? তোর উপর রাগ করে আমি আজোও দ্বিতীয় কোনো
বন্ধু বানায়নি। আমি আগেও যেমন বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে তোর নাম বলতাম,আজোও বলি,আজীবন বলে যাবো। তোকে খুব মিস করেছি রে!
তুই বলেছিলিনা,একদিন তোকে জড়িয়ে ধরে বলবো,আল্লাহ যা করেন,কল্যানের জন্য?? তুই ঠিক ছিলি। দেখ আমি তোকে জড়িয়ে তাই বলছি,আল্লাহ যা করেন,কল্যানের জন্য। আল্লাহ আমার জন্য মিহির মতো এমন জীবন সঙ্গিনি রেখেছিলেন,তাই হয়তো সানজিদাকে কেড়ে নিয়েছিলেন। আমি মিহিকেও প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি।””
“” আমার অবুঝ বোনটাকে কখনো কষ্ট দিসনা। আমার ভালোবাসাটাও তুই ওকে দিয়ে দিস!””

ইরফাদ রুম হতে বের হতে তিহি আলোপুর্ন রুমটাকে অন্ধকার বানাতে লাইটটা নিবিয়ে দিয়েছে। সাথে জানালার পর্দাগুলোও মেলে নিয়েছে। তাজের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে নিজেও দরজার দিকে এগুচ্ছে। দরজার বাহিরে একপা ফেলেই থমকে গেলো। চোখদুটো বন্ধ করে বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে সামনে তাকালো। ইশাদ তার সামনেই দাড়িয়ে আছে৷ তাজের শোকে তার চেহারায় নেমে এসেছে ক্লান্তিময় বিষাদ। ইশাদের চোখে চোখ পড়তেই বিড়বিড় করে নিজের অন্তরআত্মাকে শুনিয়ে বললো,সরি ইশ!

তিহি চট করে পা’টা দরজার ভেতরে এনে দরজার সিটকিনি লাগাচ্ছে। সিটকিনির শব্দে তাজ নড়ে উঠে। পাশ ফিরে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎই রুমের আলো জ্বলে উঠেছে।

“” তিহি,আমি সবাইকে চলে যেতে বলেছি,তুমি এখানে কি করছো? লাইটটা জ্বালালে কেন? আমার অসহ্য লাগছে। প্লিজ এখান থেকে যাও!””

তাজের কথা কানে না নিয়ে তিহি ধীর পায়ে তাজের দিকে এগুচ্ছে। একমনে চেয়ে আছে তাজের দিকে। বিছানার কাছে আসতেই তাজ চিৎকার করে,কড়া গলায় বলছে,,

“” তিহি না,আমার কাছে আসবেনা। তিহি প্লিজ! আমি সয়তে পারবোনা। তিহি প্লিজ! আমি মানা করছি!””

তিহি তাজের পাশে পা তুলে বিছানায় বসেছে। দু’হাতে তাজের দু’গাল চেপে ধরে বললো,,

“” আমার স্বামী ভালোবাসার দরিদ্রতায় মরতে পারেনা।””

তাজ গভীর চাহনিতে তিহির চোখে তাকিয়ে আছে। চোখের ভাষা,হাতের স্পর্শের ভাষা বুঝতে পেরে বুক ভেঙে যাওয়া কাশির সহিত ভাঙা কন্ঠে বললো,,

“” নেশাবউ প্লিজ! আমায় তোমার নেশাতে ডুবাবে না!!””

তাজ নিজের চোখ নামিয়ে নিয়েছে। সাথে সাথে তিহি নিজের ঠোঁটের স্পর্শে মেখে নিয়েছে তাজের ঠোঁট!নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে মেখে নিচ্ছে তাজের ভালোবাসায়। প্রত্যেকটা স্পর্শে অদৃশ্য বুলিতে বুলিয়ে যাচ্ছে,,,,

**মনের পিঞ্জিরায় রবে বন্দী,গহীন অন্তরায়…..
নাইবা হলো মনের মিলন
নাইবা হলো সুখের চয়ন
তাই বলে কি হবে মরন
তোমার সাজানো অতৃপ্ত স্বপন???
♪চাওনি তুমি,,
চাইনি আমি,,
তবুও তোমায় দিলাম আজ
অনাকাঙ্ক্ষিত,অনাবৃত সাজ!!
♪নিয়তির লেখায়,হলাম আবার একা
কালো কালিতে লিখে স্মৃতির দ্বিতীয় পাতায়
জানালাম,,
গভীর ছোয়ায়,শেষ বিদায়,গভীর অন্তরায়(অভিমান)***

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here