তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,অন্তিম পর্ব

0
3791

#তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,অন্তিম পর্ব
#রোকসানা-রাহমান

তাজ নিজের চোখ নামিয়ে নিয়েছে। সাথে সাথে তিহি নিজের ঠোঁটের স্পর্শে মেখে নিয়েছে তাজের ঠোঁট!নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে মেখে নিচ্ছে তাজের ভালোবাসায়। প্রত্যেকটা স্পর্শে অদৃশ্য বুলিতে বুলিয়ে যাচ্ছে,,,,

**মনের পিঞ্জিরায় রবে বন্দী,গহীন অন্তরায়…..
নাইবা হলো মনের মিলন
নাইবা হলো সুখের চয়ন
তাই বলে কি হবে মরন
তোমার সাজানো অতৃপ্ত স্বপন???
♪চাওনি তুমি,,
চাইনি আমি,,
তবুও তোমায় দিলাম আজ
অনাকাঙ্ক্ষিত,অনাবৃত সাজ!!
♪নিয়তির লেখায়,হলাম আবার একা
কালো কালিতে লিখে স্মৃতির দ্বিতীয় পাতায়
জানালাম,,
গভীর ছোয়ায়,শেষ বিদায়,গভীর অন্তরায়(অভিমান)***

~~

মিহির জরুরী তলবে ইরফাদ নিজের ক্লাসগুলো শেষ করেই বাসার উদ্দশ্যে বেড়িয়েছে। কিছুদুর এগিয়ে মাঝপথে গাড়ীটা থামিয়ে নিয়েছে। রাস্তার একপাশে এক মাঝ বয়সী লোক ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। মিহি ঝালমুড়ি প্রচন্ড রকমের পছন্দ করে। যদিও বাসায় যেতে যেতে ঝালমুড়ি আর ঝালমুড়ি থাকবেনা। তবুও মেয়েটা যে ভীষন খুশি হবে তা ভেবেই ঝালমুড়ি নিয়ে নিলো।

“” এটা কি ঝালমুড়ি আনছেন,একটাও তো বুট নেই!””

ইরফাদ শার্ট ছেড়ে পাতলা টি-শার্টটা পড়তে পড়তে মিহির কাছে এগিয়ে এসে বললো,,

“” আমি তো বলেছিলাম বেশি করে বুট দিয়ে দিতে। দেয়নি?””

মিহি নিজের হাতের ঝালমুড়িটা ইরফাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,,

“” এমন তেতো ঝালমুড়ি না নিয়ে আসলেও পারতেন।””

মিহি গটগট করে রুম ছেড়ে বিড়িয়ে যাচ্ছে। ইরফাদ মিহির চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে ঝালমুড়ির দিকে মনোযোগ দিলো। মুড়ির থেকে বুট বেশি দেখা যাচ্ছে। এমন মিথ্যে কথা কিভাবে বললো??ইরফাদ মিহির শব্দ করে লাগিয়ে দেওয়া দরজাটার দিকে চেয়ে থেকে নিজেও বেড়িয়ে গেলো।

“” যেভাবে চ্যানেল পাল্টাচ্ছো,মনে তো হচ্ছে টিভিটা এখনি ফেটে যাবে।””
“” ফাটলে ফাটবে তাতে আপনার কি?? আপনি কিনছেন?””

ইরফাদ মিহির পাশে বসতে গিয়েও হালকা কেঁশে উঠে বললো,,

“” আমার আব্বু তো কিনেছে।””
“” তাহলে টেনশন তার হওয়া উচিত। আপনার কেন হচ্ছে?””

মিহির হাত থেকে রিমোটটা কেড়ে নিয়ে মিহিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,,

“” তোমার কি হয়েছে গো?? গলায় এতো ঝাঝ কেন?””
“”আমার গলায় ঝাঝ থাকবে নাকি মধু থাকবে সেটা আমার ব্যাপার আপনার কি? গলাটা কি আপনার?””
“” আমার বউয়ের গলা তো? বউ আমার হলে গলাটাও আমার।””
“” আমি আপনার বউ হতে যাবো কেন?””
“” তাহলে কার বউ?””

মিহি কি বলবে খুজে পেলোনা। চুপ করে উঠে পড়তে নিলে ইরফাদ ওকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো। পেছন থেকে জড়িয়ে নিয়ে মিহির কাধে নিজের থুতনিটা রেখে বললো,,

“” আমার ছোটবউটা রেগে আছে কেন?? তার বুড়ো বরটা কি কোনো ভুল করেছে?””

এমনিতেই কোনো কারন ছাড়াই রাগ দেখাচ্ছে মিহি। তার উপর ইরফাদের এমন আদরমাখা কন্ঠে মিহি কি করে রাগ দেখাবে?? তবুও জোর করে রাগ নিয়ে বললো,,

“” জানিনা। ছাড়ুন আমাকে। আমার কাজ আছে।””

ইরফাদ মিহিকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললো,,,

“” না বললে ছাড়বোনা। এখনি আব্বু রুম থেকে বের হবে। আর ইশাদেরও আসার সময় হয়েছে। তুমি যদি সবার সামনে লজ্জা পেতে না চাও তাহলে চুপচাপ বলো রাগের কারন কি?””

মিহি মোচড়ামুচড়ি শুরু করলে ইরফাদ আবার বললো,,

“” শুধু শুধু সময় নষ্ট করছো,শরীরের বল ক্ষয় করছো। তোমার মতো পিচ্চি মেয়ে এই বুড়োর বাধন থেকে কখনোই ছুটতে পারবেনা।””
“” ছাড়ুন বলছি,নাহলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।””

ইরফাদ মিহির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,

“” খারাপ তুমি করবে নাকি আমি?””

মিহি অসহায়ভঙ্গিতে ইরফাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ইরফাদ মিহিকে ছেড়ে ওর গালে একটা হাত রেখে বললো,,

“” কি হয়েছে ছোটবউ? তুমি জানো তোমার এই আচরনটার সাথে আমি অভ্যস্ত নই,আর অভ্যস্ত হতেও চাইনা। তাও কেন এমন করছো? বলোনা কি হয়েছে??””
“” আমার ছোট ইনা চাই।””
“” ছোট ইনা মানে? ইনা কি বড় হয়ে গেছে নাকি?””
“” হুম। আমার আরো ছোট ইনা চাই। যাকে আমি সারাদিন কোলে নিয়ে ঘুরবো,আদর করবো। আমাকে আম্মু বলে ডাকবে!””

ইরফাদ মিহির গাল থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়েছে। সোফা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,,

“” অসম্ভব!””
“” কেন?? এখন তো আমার কোনো পরীক্ষাও নেই।””
“” তোমার মাথায় এসব কে ঢুকিয়েছে?””

মিহিও সোফা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে পড়লো। ইরফাদের মুখোমুখি দাড়িয়ে বললো,,

“” শিখাতে হবে কেন?? বিয়ে হলে তো সবারই বাবু হয়। আপুর ও তো হয়েছে। তাহলে আমার কেন হবেনা?””

ইরফাদ নিজেকে নিয়ন্ত্রণে এনে শান্তসুরে বললো,,

“” তোমারও হবে। তবে এখন নয়। তুমি আগে বড় হও।””

মিহি গলা উচিয়ে বললো,,

“” আর কত বড় হবো?? এখন তো সব জানি,সব বুঝি।””
“” শুধু জানলেই হয় না। আর তোমার এখনো পড়াশুনা শেষ হয়নি। সবে তো এইচ.এস.সি দিলে।””
“” আমি আর পড়বোনা। তবুও আমার বাবু চাই।””
“” মিহি!””

ইরফাদের ধমকে মিহি কেঁপে উঠলেও দমে যায়নি। কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো,,,

“” আমার বাবু চাই,চাই,চাই””

মিহি চোখের পানি মুছতে মুছতে নিজের রুমের দরজা আটকিয়ে দিয়েছে ভেতর থেকে। ইরফাদ বারবার নক করে ডাকলেও সে দরজা খুলছেনা। ইরফাদের ডাকাডাকিতে জমিল সাহেব রুম থেকে বেড়িয়ে এসেছেন। ফরিদা বেগমও দৌড়ে এসে বললেন,,,

“” কি হয়েছে,বাবা?””
“” মিহি দরজা খুলছেনা।””
“” সেকি কেন?””

ফরিদা বেগমের প্রশ্নের উত্তরে ইরফাদ কি বলবে বুঝতে পারছেনা। একবার বাবার দিকে তাকিয়ে,আবার শ্বাশুড়ির দিকে তাকালো। দুজনের চোখের চাহনিতে প্রশ্ন ঘুরছে। ইরফাদ মিনমিনিয়ে বললো,,

“”মিহি দরজা খুলো প্লিজ! হুট করে বললেই তো বাবু হয়ে যাবেনা। আচ্ছা আমি এটা নিয়ে ভাববো।””
“” শুধু ভাববো বললে হবেনা। কবে হবে তাই বলুন!””

জমিল সাহেব আর ফরিদা বেগম মিটিমিটি হেঁসে যেদিক থেকে এসেছিলেন সেদিকে চলে যেতেই ইরফাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,

“” ওকে বলছি,দরজা তো খুলো।””

মিহি তাড়াহুড়োই দরজা খুলতেই ইরফাদ ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে মিহির দিকে রাগান্বিতভাবে তাকিয়ে রইলো।

মিহি ঠোঁট ভর্তি হাসি নিয়ে ইরফাদের গলা জড়িয়ে বললো

“”বলুননা কবে হবে?””

ইরফাদ নিজের রাগ গিলে নিয়ে বললো,,,

“” যেদিন তুমি উত্তর দিতে পারবে।””
“” কিসের উত্তর?””

মিহিকে কোলে নিয়ে বললো,,,
“” একটা ধাধার!””
“” কি?””
“” তোমার শুরুতে এবং শেষে যা আছে,আমার শুরু,শেষ এমনকি মধ্যতেও নাই। বলো সেই মিসিং জিনিসটা কি?? “”

মিহি হাত-পা ছুড়তে ছুড়তে ইরফাদের কোল থেকে নেমে বললো,,

“” মানিনা আমি। আপনি সুযোগ পেলেই শুধু আমার ক্লাস নেন। আর এমন কঠিন কঠিন প্রশ্ন করেন যাতে আমি ফেল করি। থাকিনা আমি আপনার সাথে। আমাকে আবার ঠকিয়েছেন!””

~~

খয়েরী শাড়ীটা শরীরে জড়িয়ে চোখে কাজল ল্যাপ্টে নিচ্ছে তিহি। ঠোঁটে হালকা খয়েরী লিপস্টিক, কানে স্বর্নের ছোট ঝুমকো,গলায় চিকন চেইনটা পড়ে নিয়ে চুলে আরেকবার চিরুনী চালিয়ে নিয়েছে। প্রাপ্তিকেও একটা ছোট্ট খয়েরী বারবি ডলের সাজ সাজিয়ে কোলে নিয়ে রুম হতে বের হচ্ছে।

প্রায় চারমাস বাদে সে নিজের রুম ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়েছে। সকালের মিঠা রোদটাও তীর্যকের ন্যায় তিহির চোখের কোঠরে গিয়ে বিধছে। চোখের যন্ত্রণাকে বসে আনতে ঘনঘন চোখের পলক ফেলে পা চালাচ্ছে। কিছুদুর এগিয়ে যেতেই সামনে কালো গাড়ী দাড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলো। তিহিকে দেখে ড্রাইভার তড়িঘড়িতে গাড়ীর পেছনের সিটের দরজা খুলে সাদরে আমন্ত্রণে বসতে বললো। তিহি সিটটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে হাতের ফোনের লকটা খুললো। মেসেজের ইনবক্সে তৃতীয়বারের মতো চোখ বুলিয়ে মেসেজটা পড়ছে,,

**Vanga sakotate tmr opekkhai achi…jani ato dur theke aste tmr problem hobe tai gari pathiye diyechi….tmr nissaser shobdho sunar jonno odhir agrohe achi!**

তিহি ফোনটা ব্যাগে ভরে নিয়ে ড্রাইভারের খুলে দেওয়া দরজাটা লাগিয়ে সামনের সিটে বসে পড়লো। আরাম করে বসে সিটটাতে হাত বুলাতে বুলাতে বিড়বিড় করে যাচ্ছে,,,কত স্মৃতি আর ছোয়ারা এখানে পড়ে আছে!!

~~

“” ইশ!””

পেছন থেকে তিহির কন্ঠ পেয়ে ইশাদ আবেগের বশবর্তী হয়ে তিহিকে জড়িয়ে নিতে যাচ্ছিলো কিন্তু তিহি দুকদম পিছিয়ে বললো,,

“” কেন ডেকেছো আমায়?””
“” অভিমান করে আছো?””
“” আমাকে দেখে কি তোমার তাই মনে হচ্ছে?””

ইশাদ দু’হাতে নিজের দু’কান ধরে বললো,,

“” সরি তিহিপাখি,ক্ষমা করে দাও। এমন ভুল আমি আর কখনো করবোনা।””
“” কেন ডেকেছো তাই বলো!””

ইশাদ কানে হাত নিয়েই তিহির ধারে এককদম এগিয়ে বললো,,

“” ভালোবাসতে!””

ইশাদের কথায় তিহি স্তব্ধ হয়ে রইলো। অপলকে চেয়ে আছে ইশাদের দিকে। আজ কতগুলো বছর পর তার ইশাদের মুখে ভালোবাসি শুনছে! ইশাদ তিহির হাত থেকে প্রাপ্তিকে নিজের কাছে নিয়ে বললো,,

“” আমার দেওয়া নামে যাকে বড় করছো তাকে আদর করবো বলে! ভালোবাসবো বলে!!””

প্রাপ্তির দিকে ঝুকে ওর কপালে পরপর দুটো চুমু খেয়ে তিহির মুখোমুখি হয়ে বললো,,

“” Will you marry me??””

ইশাদের প্রপোজালে তিহি ক্ষিপ্রতার সাথে ইশাদের কলার চেপে ধরলো। ওর চোখে চোখ রেখে বললো,,

“” আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখো,এতটাই কালি পড়েছে যে আমি কাজল দিয়েও ঢাকতে পারিনি। গালে পিংকিস পাওডার দিয়েও গোলাপী আভা আনতে পারিনি,ঠোঁটের বিবর্নভাব কাটাতে লিপস্টিক দিয়েও লাভাস ফুটাতে পারিনি,কানে দুল,গলায় চেইন,শাড়ীতেও আমি নিজেকে একজন সুন্দরী যুবতীতে সাজাতে পারিনি।””

ইশাদকে ছেড়ে তিহি দুহাত দুদিকে প্রসারিত করে বললো,,,

“” ভালো করে দেখো আমাকে,আমি তোমার তিহিপাখি নই। তোমার তিহিপাখি মরে গিয়েছে!””

তিহির চোখ ছেড়ে গড়িয়ে যাওয়া পানি মুছে নিচ্ছে ইশাদ। তিহির দিকে নাকটা বাড়িয়ে গন্ধ নেওয়ার ভঙ্গিমায় বললো,,,

“” ঘামের মাদকতাটা তো সেই আগেরটাই আছে তিহি। আমার এতেই হবে। আর কিছু চাইনা। আমি তোমার রুপ,যৌবনে নয় তোমাকে ভালোবাসি,তোমার তোমাকে ভালোবাসি! আর এখন আমার সেই তোমাকে চাই। আমার বউ হিসেবে। একটিবার বউ বলে ডাকতে চাই!””

তিহি ইশাদের একটা হাত নিজের পেটে ঠেকিয়ে বললো,,

“” তোমার সম্পত্তির দলিলে তোমার নাম নেই। নামটা ইশাদের জায়গায় তাজরান হয়ে গেছে,তাও আমার নিজের ইচ্ছেতে। আর সেই ইচ্ছেতেই তাজের শেষ চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছি আমি,আমার এই গর্ভে!””

তিহির এমন কথাতে ইশাদের রাগ হওয়া উচিত,কষ্টায়িত রাগ। যে রাগ দেখার জন্য তিহি সুক্ষনয়নে চেয়ে আছে ইশাদের চোখে। কিন্তু না,রাগ নয় ইশাদের চোখ হেঁসে উঠেছে,আনন্দের হাসি! তাতে যেন তিহির রাগটা আরো বেশি বেড়ে যাচ্ছে!

ইশাদ উল্লসিত কন্ঠে বললো,,

“” আমার দ্বিতীয়কন্যাও বুঝি এবার পৃথীবিতে আসবে?? উফ! এই খবরটা তুমি আমাকে এতো পরে কেন দিলে তিহিপাখি? রাজকন্যা আর রাজরানী দুজনকে একসাথে আমি আমার সুখের রাজ্যে বরণ করে নিবো!””

তিহি চোখ ফিরিয়ে ইশাদের হাতটা সরিয়ে বললো,,

“” তুমি পাগল হয়ে গেছো ইশাদ!””
“” সেতো কবেই হয়েছি,এতোদিনে বুঝলে?? তোমার আমার ভালোবাসাকে এতোটাই ঠুনকো মনে হয়েছে?? তিহিপাখি তুমি দু বাচ্চার মা কেন ১০ বাচ্চার মা হলেও আমি বউ হিসেবে তোমাকেই চাই। আমি তো তোমাকে প্রথম দেখেই মনে মনে কবুল পড়ে ফেলেছিলাম,এবার সরাসরি বলবো। আমি একা নই,তুমিও!””

তিহি প্রাপ্তিকে কোলে নিয়ে বললো,,

“” তোমার খালি বুকটা পরিপুর্ন করতে অন্য কাউকে খুজে নিও। যাকে দিয়ে পুর্ন করতে চাচ্ছো,সে অন্য কারো অধিরীনী।””
“” অসম্ভব!””
“” তোমার অনেক অসম্ভব কাজকেই তো সম্ভব করিয়ে দেখিয়েছো,তাহলে এটাও সম্ভব হবে।””
“” এভাবে বলছো কেন? আমি নিরুপায় ছিলাম।””
“” তুমি নিরুপায় ছিলে বলে আমাকেও নিরুপায় বানাবে?””
“” তিহি!””
“” বুকের ভেতরে এক মানুষকে বসবাসে রেখে অন্য মানুষের সাথে সংসার করতে কতটা কষ্টের হতে পারে সেটা তোমারও জানা উচিত।””
“” প্রতিশোধ নিচ্ছো?””
“” উহু,ব্যথার জোয়ারটা কতটা ক্ষত করেছে তা বুঝাতে চাচ্ছি।””

ইশাদ তিহির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,,

“” তিহিপাখি,আমি জানি তুমি আমার উপর অভিমান করে আছো। তোমার ভালোবাসাটা যতটা প্রখর ছিলো,অভিমানটাও ঠিক ততটাই প্রখর। তুমি আমাকে শাস্তি দিও। যা খুশি,যেভাবে খুশি কষ্ট দিও। কিন্তু আমি আমার ভুল সুধরাতে চায়। আমার ইচ্ছেতে তুমি আজ নিঃস্ব, একাকী হয়ে গেছো, কিন্তু আমি তোমাকে এভাবে একাকিত্ব শহরে থাকতে দিতে পারিনা। আমার ভালোবাসার রাজ্যে তোমাকে সবথেকে উচু স্থানে রাখতে চাই যাতে আর কোনো কষ্ট তোমাকে ছুতে না পারে। কোনো দুঃখের দানা তোমার চোখের পানি বের করতে না পারে। প্লিজ! চলো আমরা নতুন করে শুরু করি!””
“” একজন পরস্ত্রীর হাত ধরা একটি জঘন্য পাপ,সেটা কি তুমি জানোনা?””

তিহির এমন কথাই ইশাদ বাকরুদ্ধ! নিজের অজান্তেই তিহির হাতটা ছেড়ে দিয়েছে। তিহি আবার বললো,,

“” আমার স্বামী নেই তো কি হয়েছে তার ভালোবাসা আছে। এইযে আমি যে শাড়ীটা জড়িয়ে আছি এটা আমার স্বামীর দেওয়া। কানের দুল,গলার চেইন,হাতের চুড়ি এই সবকিছুতে তার ভালোবাসা মাখা। হ্যা আমি তাকে ভালোবাসতে পারিনি। আর হয়তো পারবোও না। তো কি হয়েছে?? সেতো আমাকে বেসেছিলো। এতেই চলবে। আমি বাকি জীবনটা তার শেষবেলার ভালোবাসায় বন্দী হয়েই কাটিয়ে দিবো। ইশ! আমি চাইনা তোমাকে বিয়ে করে তার স্পর্শ তোমার স্পর্শে ঢাকা পড়ুক!””

~~

৬ মাস পর,,

তিহির জ্ঞান ফিরতেই উঠে বসার চেষ্টা করছে। একটা নার্স ওকে বসিয়ে দিয়েছে। তিহি দুর্বল শরীরে বললো,,

“” আমার সন্তান?””

নার্স উত্তর দেওয়ার আগেই ইশাদ একটি ফুটফুটে শিশু ওর কোলে দিতে দিতে বললো,,

“” তোমার দ্বিতীয়কন্যা তোমার জীবনে সুখ বয়ে আনুক!””

তিহি বাবুটিকে কোলে নিয়ে চুমু খেতে গিয়ে দেখে ইশাদের একটা আঙুল চেপে ধরে আছে। তিহি ইশাদের দিকে তাকাতেই ইশাদ মিস্টি হেঁসে বললো,,

“” করে নাওনা আমায় তোমার কন্যাদের পিতা। আমি কথা দিচ্ছি তুমি না চাইলে আমি তোমাকে কখনো ছুবোনা। তোমার কন্যাদের পিতৃপরিচয় দিতে চাই। আর কিছু নয়!””

তিহি নিজের মেয়েকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,,

“” এটা আমার অবৈধ সন্তাননা যে তার পিতৃপরিচয়ের জন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে। এটা আমার বৈধ,পবিত্র,ভালোবাসার সন্তান। আমার স্বামীর পবিত্র স্পর্শে ও পৃথিবীতে এসেছে। আমি চাইনা যে মানুষটা বেচে থাকতেও তার প্রথম সন্তানের পিতার জায়গায় নিজের নামটা বসাতে পারেনি,সেই মানুষটা আজ নেই বলে তার বাকি দুটো সন্তানের নামের পাশে নিজের নামটা মুছে যাক!””
“” তুমি এতো কঠিন কি করে হলে,তুমি তো এমন ছিলেনা তিহিপাখি!””
“” নরম ছিলাম বলেই তো কঠিন হওয়ার পাত্রে ঢেলে দিয়েছিলে,আমি নরম মাটি ছিলাম আর তুমি কুমোর সেজে আমাকে কঠিন পাত্রে রুপান্তর করেছো। বেশি নাড়াচাড়া করোনা পড়ে ভেঙে যাবে।””

~~

এক বছর বাদে তিহি আজ ইশাদের বাসার গেইটে পা রেখেছে। বুকের ভেতরে চলছে স্মৃতিদের আনাগোনা। চোখের কোনটা ভিজতে চাইলেও তিহি ভিজতে দিতে নারাজ। শাড়ীর আচল দিয়ে চোখটা মুছে নিয়ে সদরদরজার দিকে এগুচ্ছে।

ইনার ১২ তম জন্মদিন আজ। তার গভীর অনুরোধ ফেলতে পারেনি তিহি। বড্ড ভালোবাসতো যে তাকে। দরজার ভেতরে পা ফেলতেই প্রাপ্তি তিহির হাত ছেড়ে ইশাদের দিকে ছুটে চলে গিয়েছে। তিহি সেদিকে তাকিয়ে প্রাপ্তিকে ডাকতে যাবে ঠিক তখনি পায়ে লেগে শাড়ীর কুচি খুলে গিয়েছে। কোলে তার দ্বিতীয়কন্যা সুখকে নিয়ে ঝুকতে গিয়েও থমকে গেলো। ইনা তার কুচি ধরে আছে। কুচির ভাজটা গুছিয়ে নিয়ে তিহির কোমড়ে গুজে দিতে দিতে বললো,,

“” আমি যেমন তোমার কুচিটা মাটি ছুয়ার আগেই ধরে ফেলেছি,তেমনি আমার ছোট বাবাইও তোমার চোখের পানি গালে পড়ার আগে মুছে ফেলবে। বাবাই খুব কষ্ট পাচ্ছে প্রাইভেট মামনি। তার জীবনটা তোমাতেই আটকে আছে। হওনা আমার মামনি। আমার এতোগুলো বাবাই থাকতেও আমার একটাও মামনি নেই। আমি প্রথম তোমাকে মামনি ডেকেছিলাম। আর কাউকে ডাকতে চাইনা। প্লিজ,আমার মামনি হয়ে এ বাড়িতে চলে আসো!””

তিহি ইনাকে বসা থেকে তুলে ওর কপালে চুমু খেয়ে বললো,,

“” তুমি যেদিন আমায় প্রথম মামনি বলে ডেকেছিলে সেদিন তো আমি জানতামও না তোমার বাবাই আমাকে ভালোবাসে। তুমিও তো জানতেনা। তোমার অবুঝ মন আমাকে দেখে তোমাকে মামনি ডাকতে বাধ্য করেছিলো। তাহলে আজ তোমার বুঝের মনটা কেন চাইছে একজনকে বিয়ে করার পর আমাকে মামনি ডাকতে?? আমাকে দেখে কি তার মামনি ডাকতে ইচ্ছে হয়না?? বিয়ে না করলে বুঝি আমি তোমার মামনি হতে পারবোনা?””
“” মামনি!””

ইনা তিহিকে জড়িয়ে ধরে আছে। তিহিও ভালোবাসার হাতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

মিহি তিহির কোল থেকে টুক করে সুখকে কেড়ে নিয়ে ইরফাদের কাছে এগুচ্ছে। বেশ উল্লসিত কন্ঠে বললো,,

“” দেখুন বাবুটা কি কিউট,আমাকে এমন একটা বাবু কবে দিবেন?””

ইরফাদ লাইটিংয়ের কাজটা বন্ধ করে মিহির দিকে ঘুরে বললো,,

“” আগে উত্তরটা বলো! আমি তো বলিনি বাবু দিবোনা। তুমি আমাকে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও তাহলে আমিও তোমাকে বাবু দিবো!””

মিহি রাগে ফুসফুসতে যেভাবে এসেছিলো ঠিক সেভাবেই তিহির কাছে গিয়ে সুখকে দিয়ে দিলো।

~~

ইনার জন্মদিনের পাঠ চুকিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হতে যাবে ঠিক তখনি পুরোরুম অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছে। তিহি,ভয়ে আম্মুকে ডাকতে যাবে তখনি নীল আলো জ্বলে উঠেছে পুরো রুমটাতে। চারপাশে চার দেয়ালে ভেসে উঠছে তিহির নানা অজানা ছবি। তবে সবগুলোতে সে ইশাদের সাথে। নানা খুনসুটি,নানা অভিমান, ঝগড়া, ভালোবাসা স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলছে ছবিগুলো। তিহি বেশ বিস্ময়ে প্রত্যেকটা ছবির সাথে হারিয়ে যাচ্ছে অতিতে। হঠাৎ ইশাদের কন্ঠে সে হুশে এসেছে।

“” Will you mary me,Tihipakhi??””

তিহি নিচে তাকিয়ে আছে অন্ধকারে জ্বলজ্বল করা হীরের আংটিটার দিকে। ইচ্ছে করছে আংটিটা নিজের আঙুলে গেথে নিয়ে ইশাদের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে। কিন্তু নিজের এই বিধ্বস্ত ভবিষ্যৎে সে ইশাদকে জড়াবেনা৷ ইশাদের যে সবে শুরু হওয়ার সময় এসেছে!

“” আমি সংসার সংসার খেলায় হাপিয়ে উঠেছি। আর কোনো সংসারে জড়াতে চাইনা। সংসার জীবনের সমাপ্তি চাই!””
“” তোমার নাহয় সমাপ্তি চাই কিন্তু আমার তো এখনো শুরু করাই হয়নি তিহিপাখি। আমারও যে খুব ইচ্ছে করে সংসার সংসার খেলতে। আর সেই সংসারে প্রাপ্তি হিসেবে আমার তোমাকে চাই। তিহি আর ইশাদের সমাপ্তি ঘটিয়ে,আমরা কি আমাদের প্রাপ্তি হিসেবে তোমার আর তাজের কন্যাকে নিয়ে নতুন সংসারের সুচনা ঘটাতে পারিনা?? একবার তো আমার সমাপ্তিতে তোমার প্রাপ্তি হয়েছিলো,এবার নাহয় তোমার সংসারের সমাপ্তি ঘটিয়ে আমার সংসারের প্রাপ্তি হোক।””

তিহি চোখটা বন্ধ করে নিয়ে গভীর নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বললো,,

“” সরি!””

তিহি আর এক মুহুর্তও সেখানে দাড়ালোনা। চোখের পানিকে সঙ্গী করে বেড়িয়ে যাচ্ছে।

ইশাদ আগের অবস্থাতে বসে থেকেই বললো,,

“” কতবার ফিরাবে আমায়,কতবার মুখ ফিরিয়ে নিবে?
কতটা দুরে রবে??ততবার তোমার মনের দুয়ারে খটখট করবো। শতবার লক্ষবার কোটিবার তোমাকে ভালোবাসি বলে যাবো। বিয়ে তো আমি তোমাকে করবোই। সেটা হোক আজ,নাহয় কাল। নিজের জীবনটা তো তোমার নামেই লিখে দিয়েছিলাম। তাহলে সেই জীবনে তোমার অপেক্ষায় থাকতে দ্বিধা কিসের?? মৃত্যু পথের শেষ নিশ্বাসের আগে হলেও আমি তোমাকে আমার বধূ সাজে দেখতে চাইবো। একবার হলেও তোমাকে ভালোবেসে বউ বলে ডাকতে চাইবো! আমিও দেখতে চাই তোমার মনের দুয়ারের তালা কতটা পোক্ত। একদিন না একদিন সেই তালায় মরিচা ধরবেই। আর আমার চাওয়া পুরনে সেই তালার মরিচাই তালা খসে পড়বে। খুলে যাবে তোমার বন্ধ দুয়ার,চিরদিনের জন্য হয়ে যাবে,তুমি আমার!

~~

মাঝরাতে তারার মেলাতে চেয়ে আছে তিহি। আজ সে সকালের রোদে নিজেকে ভিজাবে। দোলনায় দোল খেতে খেতে সুখের কপালে চুমু খেয়ে আকাশের দিকে চেয়ে বললো,,,

আপনার সমাপ্তিতে,আমার প্রাপ্তি!

#সমাপ্তি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here