তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,পর্ব (১৬)

0
3226

#তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,পর্ব (১৬)
#রোকসানা-রাহমান

দরজা খোলা থাকা অবস্থায় আরেকটা কান্ড ঘটে যাচ্ছিলো। ব্যাপারটা তিহি আগে টের না পেলেও সপ্তাহ দুয়েক হবে টের পেয়েছে। মাঝরাত হলেই তার পেটে চুমু খেতে আসে তাজ। তিহি ইচ্ছে করেই বাধা দেয়না,বুঝতে দেয়না সে জেগে আছে। থাকুকনা বাবা-মেয়ের মধ্যে একটু লুকোনো বন্ধন। লোকটা সামনাসামনি যা কিছুই বলুকনা কেন,তিহির পেটের অস্তিত্তটাকে যে খুব করে ভালোবাসতে চায় সেটা তিহি এতোদিনে বুঝে গিয়েছে। আজ রাতেও আসবে। কিন্তু আজ সে চুমু খেতে দিবেনা। এতোদিন পরে একটু সামনাসামনি এলো তাও আমার সাথে ঝগড়া?? আসুননা আজকে, আমার পেটে হাত দিয়েছেনতো,এই ছুরি দিয়ে আপনার হাত,সাথে আপনার পেটটাও ফুটো করে দিবো। আমার সাথে ঝগড়া করবেন আবার আমার পেটে চুমু খাবেন? আজ আপনার চুমু খাওয়া আমি বের করে ছাড়বো।

তিহি ছুরিটা যত্নসহকারে নিজের বালিশের কাছে রেখে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে সাথে ঠোঁটে ফুটে আছে হাঁসির ছোট রেখা।

তিহি অনেক্ষনযাবত তাজের জন্য অপেক্ষা করছিলো। শোয়া অবস্থায় এপাশওপাশ করতে করতে এক সময় চোখ লেগে আসে। গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। সে রাতে তাজ আর তিহির রুমে আসেনি,আসবে কিভাবে বাসায় থাকলে তো আসবে। সে যে তিহির সাথে রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছে তারপর আর বাসার মুখো হয়নি। তিহির মন খারাপ হয়েছে,খুব মন খারাপ। মানুষটা এমন কেন?? একটু কিছু হলেই পালিয়ে বেড়ায়। এভাবে আর কত?? দিন ফুরিয়ে,মাস ফুরিয়ে,বছরও ফুরাতে শুরু করেছে সবে। কিন্তু তাতেই তিহি ক্লান্ত। মনে হচ্ছে সে যুগ যুগ ধরে এমন অদ্ভুত বদমেজাজী লোকটার সাথে সংসার পেতেছে। যে সংসারে ভালোবাসা বাধে সব আছে। আসলেই কি এটা সংসার?? কতদিনই বা তার সাথে ঘুমিয়েছিলাম????

~~

সতেরো দিন হলো তাজ বাসায় নেই। এখন আর তিহি তাজকে নিয়ে মাথা ঘামায়না,চিন্তাদের জায়গা করতে দেয়না মনের মধ্যে। ভাজ পড়তে দেয়না কপালের ত্বরণে।এখন যে তার সবটা সময় কাটে তার পেটের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা রাজ কন্যার সাথে কথা বলে। দুষ্টুমিষ্টু কথার ফুলঝুড়ি নিয়েই দিনরাত পার করছিলো হঠাৎই মিহি আর ফরিদা বেগম এসে উপস্থিত হলেন তিহির শ্বশুড়বাড়ি।

উনারা এ প্রথম এসেছেন এ বাসায়। একটু খুটিয়ে খাটিয়ে দেখছে সবকিছু। মেয়ের ভালোমন্দ দেখার ভারটাতো মা-বাবার উপর সারাজীবন থাকে। শিরিন বেগমও বেশ খুশি। অনেকদিন পর মনের মতো একজন সঙ্গি পেয়েছেন। একলা জীবনে হাপিয়ে উঠেছেন। নিজের বয়সী একজনকে পেয়ে পান-সুপারির ঢালা নিয়ে গল্প জুড়ে দিলেন। গল্পের মাঝখান থেকেই ফরিদা বেগম আবেদনভঙ্গিমায় বললেন,,,

“” তিহির প্রথম সন্তান আমাদের বাসায় হলে খুশি হতাম। যদি আপনি অনুমতি দেন তো,ওকে আমাদের সাথে নিয়ে যাই?””

শিরিন বেগমের হাসি হাসি মুখটা মিলিয়ে যাচ্ছে। কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছেননা। তাজের অনুপস্থিতে তিহিকে বাপেরবাড়ি পাঠালে যদি আবার কোনো যুদ্ধ শুরু করে দেয়?? কল করে যে জিজ্ঞেস করবে সে সুযোগটাও নেই। আজকাল তার ফোনটা বন্ধই থাকে!

শিরিন বেগমকে চুপচাপ দেখে ফরিদা বেগম আবার বললেন,,

“” কিছু বলছেননা যে। প্রথম মেয়ের প্রথম সন্তানতো বাপেরবাড়িতেই হয়। মানছি আমরা হয়তো আপনাদের মতো ভালোমন্দতে রাখতে পারবোনা। কিন্তু খারাপও রাখবোনা,নিজের মেয়ে বলে কথা,বড় আদরের!””

এমন একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাবে বুঝতে পারেননি শিরিন বেগম। না ও বলতে পারছেননা আবার হ্যা ও বলতে পারছেননা। অসস্থিতিতে গলা শুকিয়ে আসছে।

হঠাৎই দরজার কাছ থেকে তাজ বলে উঠলো,,

“” তিহি কোথাও যাবেনা। দরকার হলে আপনারা এখানে থেকে যান। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।””

এতক্ষন সকলে শিরিন বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকলেও এখন সবার নজর দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকা তাজের উপর। মাথার চুলগুলো নাপিতের ছোয়া না পেয়ে বেশ লম্বা হয়ে ব্রুর কাছে পৌঁছে গেছে,দাড়িমোছ সমানতালে বড় হয়ে মুখটা অনেকটাই ঢেকে আছে,পড়নে মাটি কালারের ঢিলেঢালা ফুলহাতার শার্ট,কব্জী বেয়ে ঝুলে আছে।

মিহি বেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে তিহির কানে ফিসফিস করে বললো,,,

“” এই রাগী বনমানুষটার সাথে তুই কি করে থাকিস,আপু? আমি একে কোনোদিনও দুলাভাই বলে ডাকবোনা।””
“” তাহলে কি ডাকবি?””
“” জানিনা!””

মিহি তিহির কাছ থেকে সরে এসে তাজের মুখোমুখি দাড়িয়ে বললো,,

“” আপনি সবসময় এমন বনমানুষ সেজে থাকেন কেন??””

মিহির কথায় তাজ ব্রু কুচকে তাকালো। তীক্ষ্ণদৃষ্টি পড়তেই মিহি মিয়িয়ে গিয়ে বললো,,

“” আপনাকে আমি কখনোই দুলাভাই ডাকবোনা!””

তাজ চেহারায় কিছুটা স্বাভাবিকতা এনে মিহির থুতনিতে হাত রেখে মুখটা উচু করে বললো,,

“” তাহলে ভাই বলে ডাকিস!””

মিহির মিয়িয়ে যাওয়া চেহারাটা সাথে সাথে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তাজের মুখের দিকে চোখ পড়তেই মনে হলো,এমন সুন্দর বনমানুষ সে আর জীবনেও দেখেনি। ইশ! চেহারায় কি মায়া,দেখলেই মনে হয় ভাইয়া বলে জড়িয়ে ধরি!

“” কি হলো,চুপ করে আছিস যে,তুই বললে আমি এখনি তোর হ্যান্ডসাম ভাই হয়ে দেখাতে পারি। কিন্তু কি বলতো,আমার এভাবে থাকতেই ভালো লাগে,মনের ভেতরে প্রশান্তি কাজ করে!””

মিহি ঘোরের মধ্যেই বললো,,

“” তুমি হলে আমার সবথেকে সুন্দর বনমানুষ ভাইয়া!””
“” সুন্দর বনমানুষ?””
“” হুম!””

মিহির কথাতে তাজ অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে। মিহি দৌড়ে ওর আম্মুকে বললো,,

“” আম্মু,আজকে ভাইয়ার বাসায় থেকে যায়,প্লিজ!””

~~

যে মেয়েটা তাজকে দুলাভাই ডাকতেও নাক সিটকাচ্ছিলো সে হুট করে ভাইয়া ভাইয়া বলে পাগল হয়ে গেলো কিভাবে,তা কিছুতেই মাথায় ঢুকছেনা তিহির! এক বছরেও মানুষটার সাথে একটা স্বাভাবিক দিন কাটিয়েছে বলে মনে নেই তিহির তাহলে এক সেকেন্ডে কি করে এতো আপন করে নিয়েছে মিহিকে?? কিভাবে সম্ভব? তাহলে কি উনি ইচ্ছে করেই চাচ্ছেনা আমার সাথে স্বাভাবিকে আসতে? নাকি আমিই পারছিনা উনাকে স্বাভাবিকে আনতে???

সেদিন মিহিরা থেকে গিয়েছিলো,রাতে তিহির সাথেই ঘুমিয়েছিলো। তবে সারারাত তাজের সাথে আড্ডায় মেতে ছিলো৷ ঘুমোতেও চায়নি মিহি,একপ্রকার জোর করেই ঘুম পাড়ানো হয়েছিলো। মিহির কলেজ,সাথে ফরিদা বেগমের অফিসও খোলা তাই সকাল সকাল চলে যেতে হয়েছিলো। তারা চলে গেলেও একগাদা চিন্তা-ভাবনা দিয়ে গেছে তিহির মাথায়। এতো চিন্তা নিয়ে কি ঘুমানো যায়?? যায়না! তিহিও ঘুমাচ্ছেনা। তাজের একদিনের স্বাভাবিক আচরনে তিহির পাগল হয়ে যাওয়ার অবস্থা। সারাক্ষন মাথায় শুধু সেসব ঘটনায় ঘুরছে। মিহির সাথে কাটানো একটা সেকেন্ডের জন্যও মনে হয়নি,মানুষটা এতো রাগী,এতো জেদী,এতো হিংস্র! তাহলে তার সাথে কেন এমন করে???

তিহি চিন্তা-ভাবনা ফেলে দিয়ে সবেই চোখটা বন্ধ করেছে অমনি দরজা খোলার শব্দ এলো কানে। উল্টো দিকে শুয়ে থাকায় দেখতে পারছেনা কে আসছে! তাজ নয়তো?? ভাবতেই তিহির বুকটা ঢিপঢিপ করছে। ঘুরতে গিয়েও ঘুরলোনা। চুপচাপ পড়ে রইলো,চোখ বন্ধ। হাতদুটো মাথার নিচে,শরীরে পাতলা কাথা।

তাজ বিছানায় উঠে বসেছে। নাতো কিছু বলছে নাতো কিছু করছে। এদিকে তিহি নিঃশব্দে বালিশের নিচে ছুরিটা খুজছে। কোথাও পাচ্ছেনা। ঠিক করে যে খুজবে সে সুযোগও নেই,যদি তাজ টের পেয়ে যায় সে ভয়ে। বেশ কিছুক্ষন বালিশের আশেপাশে হাতড়িয়ে চুপচাপ পড়ে রইলো,মনে মনে নিজেকে হাজারটা বকা দিচ্ছে।

তাজের নিস্তব্ধতা তিহিকে বিরক্ত করে তুলছে। এভাবে চুপচাপ কতক্ষন পড়ে থাকবে?? ঘুমোতেও তো পারছেনা। তারমধ্যে তলপেটের ব্যথাটা ধীরে ধীরে বাড়ছে। রাতের খাবার খেয়ে রুমে আসার পর থেকে হঠাৎ চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছিলো। এ সময়ে এমন ব্যথা নাকি হয়েই থাকে তাই তিহি তেমন পাত্তা না দিয়ে শুয়ে পড়েছিলো। কিন্তু মনে তো হচ্ছে এ ব্যথা দমে যাওয়ার নয়,বেশ নেড়ে উঠছে।

তাজ বিছানা থেকে নেমে পড়লো। হাতের মদের বোতলটা মেঝেতে পড়ে যেতেই তিহি ছিটকে উঠে। কি হয়েছে দেখার জন্য ঘাড় ঘুরাতেই নিজের পেটে তাজের হাতের স্পর্শ পেলো। তিহি সামনে তাকিয়ে বুঝতে পারলো এতক্ষন তাজ চুপচাপ বসে অপেক্ষা করছিলো তিহির পাশ ফেরার। কিন্তু সেতো জানতোনা তিহি জেগে ছিলো। হয়তো আর অপেক্ষা করতে পারছিলোনা তাই তাজ বিছানা থেকে নেমে ঘুরে এসেছে।

তিহি অন্ধকারে একটা ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তিহির পেটে চুমু খেয়ে কিসব বিড়বিড় করে যাচ্ছে। কোনো শব্দ তার কানে পৌছুচ্ছেনা,সামনের মানুষটার ছায়াটা আরো বেশি ঘোলাটে হয়ে আসছে।

তাজ,তিহির শরীরে কাথাটা জড়িয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলেই ওর হাত আকড়ে ধরে তিহি,বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে বললো,,

“” ব্যথায় মরে যাচ্ছি,ফুপিকে ডাকুন প্লিজ! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!””

~~

শিরিন বেগমের কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে তিহি। মাঝরাতে রাস্তা ফাঁকা হলেও ঠিকমতো গাড়ী চালাতে পারছেনা তাজ। নেশায় পুরো টাল,চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। এক দিকে তিহির ব্যথার আর্তনাদ অন্যদিকে তাজের ভয়ঙ্কর ড্রাইভিং হতাহত শিরিন বেগম,কাকে রেখে কাকে কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছেননা। তিহির বা’হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আছেন।

তিহি প্রচন্ড ব্যথাতুর কন্ঠেই চিৎকার করে বললো,,,

“” তোর এই মাতলামীর জন্য আমার সন্তানের যদি কিছু হয়,আমি তোকে কোনোদিন ক্ষমা করবোনা,কোনোদিনও না। মাতাল একটা!””

তাজ ভারী ভারী চোখের পলক ফেলে তাকিয়ে আছে সামনের লুকিং গ্লাসটার দিকে। মনে মনে বলছে,আমি আমার নেশা বউয়ের কিছু হতে দিবোনা,কিছুনা!

~~

“” তুমি কি করো?””

ইশাদ বাদাম ছিলা বন্ধ করে তিহির দিকে তাকিয়ে বললো,,

“” কি করি মানে? দেখছোনা তোমাকে বাদাম ছিলে দিচ্ছি।””

তিহি বিরক্ত নিয়ে ইশাদের কাছ থেকে বাদাম কেড়ে নিয়ে বললো,,

“” উফ! আমি এই করার কথা বলিনি,অন্য করা!””
“” অন্য করাটা আবার কি?””

তিহি এবার বিরক্তের চরম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ইশাদ হো হো করে হেঁসে উঠে। সবসময় ইশাদের হাসি দেখে তিহি মুগ্ধ হলেও এবার পারলোনা। বসা থেকে উঠে হাটা ধরতেই ইশাদ ওকে আবার টেনে বসিয়ে দিয়েছে। ওর মুখে বাদাম পুরে দিতে দিতে বললো,,

“” আমার সাথে এতোদিন ধরে প্রেম করো অথচ এটা জানোনা আমি কি করি?””
“” উহু!””

ইশাদ দুষ্টুমী করে বললো,,

“” কিভাবে মানুষের পেটে ছুরি ধরতে হয়,সেটার ট্রেনিং নিচ্ছি,ট্রেনিং নেওয়া প্রায় শেষ। কয়েকদিনের মধ্যেই কোনো গেংয়ে জয়েন হয়ে ডাকাতীর পদবীটা নামের আগে বসাবো।””

ইশাদ কথা শেষ করে তিহির দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো ওর চোখগুলো এতোটাই বড় হয়ে এসেছে যে, মনে হচ্ছে এই বুঝি মনিদুটো বের হয়ে আসলো। ইশাদের হাসি পেলেও হাঁসিটা আটকে নিয়ে গম্ভীর সুরে বললো,,

“” এমনভাবে তাকিয়ে আছো যে,তোমার বুঝি ডাকাতবর পছন্দ না?””

তিহি কাঁদোকাঁদো গলায় বললো,,

“” তুমি ডাকাত? তারমানে আমি একটা ডাকাতের বউ হবো???””
“” হুম!””

তিহি মন খারাপ করে বাদাম চিবুচ্ছে। এমনভাবে চিবুচ্ছে যেন সে সারাজীবনটা এই বাদাম চিবিয়েই পার করে দিবে।

আজ পুরো এক সপ্তাহ বাদে তিহিকে নিয়ে বেড়িয়েছে ইশাদ। তাও দু-ঘন্টার জন্য। এখন মজা করে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয়না। তাই তিহির আরেকটু কাছ ঘেষে এসেছে। কোলের উপর মাথা রেখে ব্রেঞ্চের উপর পা ভাজ করে শুয়ে বললো,,,

“” এতো মন খারাপের কিছু নেই,তিহিপাখি। মজা করছিলাম। তোমার হবুবরের নামের আগে তুমি যে মিঃ ব্যবহার করো খুব শিঘ্রই ওখানে ডঃ বসে যাবে।””
“” মানে?””
“”আমি এমবিবিএস কমপ্লিট করেছি। এখন সার্জারীতে পোস্ট গ্রাডুয়েশন করছি। A future surgeon!””

একটু আগে চমকে যাওয়া মুখটা আবার মন খারাপের দিকে চলে যেতেই ইশাদ বললো,,

“” আবার মন খারাপ করো কেন? তোমার কি ডক্টর বরও পছন্দ না,তিহিপাখি?””

তিহি ইশাদের কথার জবাব না দিয়ে ওকে ঠেলে নিজের কোল থেকে সরিয়ে দিলো। নাক,মুখ কুচকে বললো,,,

“” তুমি আসলেই একটা লুচু মার্কা ছেলে। ইচ্ছে করেই ডক্টর হচ্ছো যাতে মেয়েদের পেট দেখতে পাও। তোমার সাথে আমার আজকেই ব্রেকআপ,ব্রেকআপ! ব্রেকআপ!! ব্রেকআপ!!!””

ইশাদ তিহির দিকে হা করে তাকিয়ে রয়েছে। তার মাথায় কিছুই ডুকছেনা। ডক্টরির সাথে পেট দেখার কি সম্পর্ক?? ইশাদের হা’কে অগ্রাহ্য করেই তিহি হাঁটা ধরেছে। পেছন থেকে ইশাদের ডাক যেন সে শুনতে পারছেনা।

“” তিহিপাখি,শুনোনা,কি হলো? আমি কখন মেয়েদের পেট দেখলাম?? এই!””
“” এখনো দেখনি,কিন্তু কিভাবে দেখবে সেটারই তো ট্রেনিং নিচ্ছো। ছি! তোমার লজ্জা নাই??””

ইশাদ তিহিকে জোর করে দাড় করিয়ে বললো,,

“” এতোদিন পর কত কি করে তোমাকে নিয়ে বের হতে হয়েছে। রাগাবেনা প্লিজ! কি হয়েছে বলবে তো!””
“” তাহলে বলো তুমি কোনো মেয়ের পেট দেখবেনা।””

ইশাদ কপাল কুঁচকে বললো,,

“” আমি কেন পেট দেখতে….. ওয়েট ওয়েট ওয়েট,তুমি কি সিজারিয়ান সেকশনের কথা বলছো?””
“” হুম!””
“” তোমার কি মনে হয় অমন একটা ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে আমি পেটের দিকে চেয়ে থাকবো? কিসব চিন্তা-ভাবনা!””
“” এতো বেশি কথা বলছো কেন? আমি যা বলছি তা মানলে বলো নাহলে ব্রেকআপ!””
“” কি মানবো?””
“” কোনো মেয়ের পেট দেখবেনা। কারো পেট কাটবেনা। তুমি শুধু আমার পেট কাটবে।””
“” তোমার পেট কাটবো?””
“” হুম!””
“” আশ্চর্য! তোমার পেট কাটতে যাবো কেন? কি সব আবিজাবি কথা বলছো?””
“” আমার যখন বাবু হবে তখন কাটবে।””
“” বাবু হলে পেট কাটতে হয়?””
“” না! যদি দরকার হয় তাহলে!””
“” কোনো দরকার হবেনা। এসব কথা মাথায়ও আনবেনা। তোমার শরীরে অস্ত্রপাচার! তাও আমার হাতে? ইম্পসিবল। দরকার হলে বাবু নেওয়া লাগবেনা!””
“” তারমানে তুমি অন্য মেয়ের পেট দেখতে পারবে আর আমার বেলায় মুখভর্তি না? ধুর! তোমার সাথে কোনো কথা নাই,আই হেট ইউ! হেট ইউ!! হেট ইউ!!!””
“” আরে রেগে যাচ্ছো কেন! তিহিপাখি,শুনোনা। আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করো!””

ইশাদের ঘুম ভেঙে গিয়েছে। উঠে বসে পানি খেয়ে নিলো। কদম ফেলে বারান্দার দিকে যাচ্ছে। আমাকে কি একটা রাতও ঘুমাতে দিবেনা তিহিপাখি? আমার যে খুব ঘুমাতে ইচ্ছে করে,গভীরঘুমে তলিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। আকাশের দিকে চেয়ে ইশাদ। অন্ধকারে ঢাকা বাতাসের ঘ্রাণ নিয়ে,তারার মেলায় ডুবতেই ফোন বেজে উঠে ইশাদের। অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফোনের উদ্দশ্যে পা চালায়।

এতো রাতে হসপিটাল থেকে কল? চিন্তার কামড় পড়ে নিচের ঠোঁটে। কল রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপরপাশ থেকে ভেসে উঠে এক নাইট সিফটে কর্মরত নার্সের কন্ঠ!

“” আমি এখনি আসছি। তোমরা যতটা পারো সামলে নাও। আমার ৩০ মিনিটসের মতো লাগবে!””

ইশাদ কল কেটে সোজা সদর দরজার দিকে এগুচ্ছে। হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে ৩ টা বেজে ৪২।

~~

ইশাদ হসপিটালে ঢুকতেই একজন নার্স আর মাঝবয়সী একজন মহিলাকে দেখতে পেলো। নার্স এগিয়ে আসতেই ইশাদ জিজ্ঞেস করলো,,

“” পেশেন্টের কন্ডিশন কেমন?””
“” বুঝতে পারছিনা,স্যার। খুব সিরিয়াস মনে হচ্ছে। মনে হয়না নরমাল ডেলিভারী সম্ভব,কিন্তু আমি এটা ভেবে পাচ্ছিনা,ব্যথায় উনি চিৎকার করে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে,কিন্তু এখনো সজ্ঞানে রয়েছে কিভাবে?? উনার চিৎকারে আমারি জ্ঞান হারানোর অবস্থা।””

ইশাদ বিরক্ত কন্ঠে বললো,,

“” আমাকে পেশেন্টের কাছে নিয়ে চলো।””

ইশাদ দ্রুতবেগে নার্সের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। ১১৮ নাম্বার কেবিনে ঢুকে পড়েছে নার্স। সেও পিছু পিছু ঢুকেছে। সামনে তাকাতেই দৃষ্টি আটকে রয়েছে প্রসববেদনায় ছটফটানি করা নারীটির দিকে। পেটে দুহাত দিয়ে চেপে ধরে অনরবত চিৎকার করে যাচ্ছে।

এমন মরণযন্ত্রণাকেও হার মানিয়ে দিয়েছে ইশাদের মুখটা। একটু আগেও যে মেয়েটা কথায় কথায় বলছিলো,আমি আর সহ্য করতে পারছিনা,আমাকে কেউ ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলুন,নাহয় বিষ এনে দিন আমি খেয়ে মরে যাই,সেই মেয়েটাও এখন লোভাতুর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার সামনের লোকটির দিকে। কতদিন পর এই মুখটা দেখছে সে? দিন কেন হবে? দিন পেরিয়ে,মাস পেরিয়ে বছরে পা দিয়েছে,যাকে দেখার জন্য বুকের ভেতরটা ধকধকানিতে মরে যাচ্ছিলো আজ সে সামনে,মন ভরে দেখবে সে,মন ভরে গেলে চোখ ভরে দেখবে,চোখ ভরে গেলে,পেট ভরে দেখবে।

তিহির চোখে চোখ পড়তেই ইশাদ চোখ সরিয়ে নিয়েছে। ওর কাছে এগিয়ে আসলে তিহি কন্ঠ টেনে বললো,,

“” মিঃইশ!””
“” ডঃইশাদ!””

ইশাদের দ্রুততর উত্তরে তিহির দৃষ্টি সরে গিয়েছে। কিছু বলার ভাষা পাচ্ছেনা। ইশাদ এতক্ষন চোখ নামিয়ে রাখলেও আর পারলোনা। তিহির পেটে হাত রেখেই শক্ত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে তিহির দিকে। মনে হচ্ছে রাগে ফেটে যাচ্ছে। নার্সকে উদ্দশ্য করে কঠিন সুরে বললো,,

“” এটা লেবার পেইন নয়,এ্যাপেনডিসাইটের পেইন! ইমিডিয়েটলি OT তে নেওয়ার ব্যবস্থা করো,হারিআপ!””

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here