তোমার_আমার_প্রণয়,08,09

0
1219

#তোমার_আমার_প্রণয়,08,09
#israt_jahan_arina
#part_8

রাত প্রায় আড়াইটা। মেহবুবা রহমান নিজের রুমে বসে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ছেন।নিজের মনকে শান্ত রাখার একমাত্র ঔষধ হচ্ছে নামাজ। নিজের দুই ছেলের প্রতি ভীষণ অসন্তুষ্ট তিনি।

হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে তার টনক নড়লো। এত রাতে কে বাসায় আসতে পারে সেটা তার জানা। তবুও উঠে নিজের রুমের দরজায় এসে দাঁড়ালো। বাসার কাজের মেয়েটা ঘুম ঘুম চোখে উঠে দরজা খুলে দিলো। জয় আর মাহাদ এসেছে। জয় মাহাদকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অতিরিক্ত ড্রাংক মাহাদ। ঠিকমতো দারাতেও পারছে না। জয় কোনোমতে ধরে তাকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে তুলছে। ছেলের এই অধঃপতন মেহেবুবা রহমান কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। তিনি আর রুম থেকে বের হলেন না।

কলিং বেলের শব্দে শামসুন্নাহার বেগম সিঁড়ির সামনে এসে দাড়ালেন। মাহাদের কাছে আসতেই চোখমুখ কুঁচকে ফেলেন। মদের গন্ধ তিনি কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না। অতি আদরের নাতিটা এভাবে জীবনটাকে ধ্বংস করছে দেখে তিনি ভীষণ কষ্ট পান। জয়ের পিছুপিছু তিনি মাহাদের রুমে আসলেন। জয় কোনমতে মাহাদকে বিছানায় শুইয়ে দিল। শামসুন্নাহার বেগম এগিয়ে এসে মাহাদের পা থেকে জুতা খুলতে লাগলেন। আর বিড়বিড় করতে লাগলেন

-“ওই কালনাগিনী টা আমার সোনার সংসার ধ্বংস করে ফেলছে। ওই মা** জন্য আমার নাতিটা রসাতলে গেল।”

দাদির বিড়বিড় শুনে জয় কিছুটা বিরক্ত হলো। এই বুড়িকে জয় একদমই পছন্দ করেনা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা এই মহিলার কাজ।
জয় কে উদ্দেশ্য করে দাদী বললো

-“ওই জয়, তুই মাহাদরে এই সব ছাইপাশ খাইতে আটকাইতে পারিস না?”

জয় কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। সে বললো

-“দাদী আপনি তো জানেন মাহাদ কে। ও কারো কথা শোনে?”

জয়ের কথা শুনে দাদী চোখ মুখ কালো করে ফেললো। আর বললো

-“তুই আটকাবি কেমনে? তুই তো নিজেই ছাইপাশ গিলা বইসা আছস।”

জয় এবার কিছুটা লজ্জা পেল। এমনিতেই বেচারা মহা টেনশনে আছে। রাত আড়াইটা বাজে অথচ সে বাসায় পৌছায়নি। বউ যে আজ তাকে সেই ক্যালানি দেবে তা সে ভাল করেই বুঝতে পারছে। তাই সে দ্রুত দাদীকে বিদায় দিয়ে বেরিয়ে গেল। শামসুন্নাহার বেগম কিছুক্ষণ মাহাদের চুলে হাত বুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
________________________
সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল দৃশ্যর। দ্রুত উঠে রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে বসলো। লতা আপু আগেই টেবিলে বসে নাস্তা করছে। দৃশ্যকে দেখে বললো

-“কিরে রাতে তোর ঘুম হয়নি? চোখের নিচে কেমন কালো হয়ে গেছে?”

-“না আপু তেমন কিছু না।”

-“কাল অফিস থেকে আসার পর থেকেই তোর মুড অফ দেখছি? কী হয়েছে?”

দৃশ্য জোরপূর্বক হেসে বললো

-“কি যে বলো না আপু, তেমন কিছুই না।”

-“বুঝলাম। অফিস থেকে এসে তোর সময় হবে? আসলে চিন্তা করছিলাম আজ বিকেলে একটু বাজারে যাব। অফিসের ব্যস্ততায় বাজার করতে পারিনি দুই দিন। আর জিনিয়া তো অনেক লেট করে আসে।”

-“ঠিক আছে আপু। সন্ধ্যার দিকে আমরা যাব।”

লতা কিছুক্ষণ দৃশ্যের দিকে খেয়াল করে বললো

-“কিছু হয়েছে দৃশ্য?”

প্রশ্নটা দৃশ্যর মনে ভীষণ ভাবে আচর কাটলো। আসলেই কি কিছু হয়েছে? কিছু হওয়ার তো কথা নয়। অন্তত সে এতটা দুর্বল তো নিশ্চয়ই না। সে হালকা হেসে বললো

-“কিছুই হয়নি আপু,তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে তুই নাস্তা করে বের হ।আমি বেরিয়ে যাচ্ছি আমার আবার দেরি হয়ে যাবে।”

-“ঠিক আছে আপু।”

ভিড় ঠেলে খুব কষ্টে বাসে উঠলো দৃশ্য। কিছু টাকা হাতে রাখা প্রয়োজন। তাছাড়া আজ বাজার করতে হবে, তার কিছু দেওয়া দরকার। তাই আজ রিক্সা নিলো না। দৃশ্যর বেতন খারাপ না। তবে বিগত কয়েক মাসে অগ্রিম খরচ এর তালিকা টা বেশ বড় হয়ে গেছিল। তাই এই মাসে প্রেসারটা বেশি যাচ্ছে। নেক্সট মাসে অনেকটা সামলাতে পারবে।
ড্রিম ফ্যাশন হাউজের সামনে দাঁড়িয়ে দৃশ্য একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। নিয়তি তাকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করাবে সেটা তার ভাবনাতে ছিল না। অন্তত ওই মানুষটার মুখোমুখি সে হতে চায়নি। মাথায় শুধু অতীতের স্মৃতিগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে।

দৃশ্য আর মাহাদের প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয় স্কুলে। সরাসরি কথা না বললেও আড়চোখে দুজন দুজনকে দেখে থাকে। মাঝে মাঝে মাহাদ তার বান্ধবীদের স্পেশাল অফার দিয়ে থাকে। তবে মাঝে মাঝে সে অফার মাহাদের উপরই ভারি পড়ে যায়। যেমন সেদিন দৃশ্য আর তার বান্ধবীরা ক্যান্টিনে এসে বসেছিল। মাহাদ ও তার বন্ধুরা তখন ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছিল। দৃশ্য কে আসতে দেখেই রাফসান মৌকে তাদের টেবিলের কাছে আসতে ইশারা করলো। মাহাদরা তাকে ডাকছে ভেবে খুশিতে গদগদ হয়ে উঠেছে মৌ। মৌ যেতেই রাফসান বললো

-“ছোট আপু আজ এত দেরিতে আসেলে যে ক্যান্টিনে।”

-“এমনি।কিছু বলবেন ভাইয়া?”

-“ইসস!!মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে ছোট বেয়াইন টার।”

মৌয়ের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সিনিয়র ভাইগুলা কি তার সাথে মজা করার জন্য ডেকেছে। পাশের টেবিলে দৃশ্য, নাবিলা আর সায়মা বসে দেখছে রাফসানের কান্ড।জয় বলে উঠলো

-“যেহেতু দেখছিস আমাদের বাচ্চা বিয়াইন টার মুখটা শুকিয়ে গেছে। তাহলে দাড়িয়ে আছিস কেন ঠান্ডা কিছু খাওয়া।”

দৃশ্য বুঝতে পারলো মাহাদের ফ্রেন্ডরা মৌয়ের সাথে মজা নিচ্ছে। দৃশ্য দ্রুত মৌ এর পাশে এসে দাঁড়ালো। মাহাদ কপাল চুলকে আড়চোখে দৃশ্যের দিকে তাকালো। দৃশ্য মুচকি হেসে বললো

-“হ্যাঁ ভাইয়া একদম ঠিক বলেছেন। শুধু আমার ফ্রেন্ডের না, আমাদের সবারই গলা শুকিয়ে গেছে। কিন্তু আপনাকে কষ্ট করে যেতে হবে না ভাইয়া। আমরাই যাচ্ছি আপনি কষ্ট করে একটু বিল টা দিয়ে দিয়েন।”

রাফসান হেসে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো
-“হ্যাঁ অবশ্যই পিচ্ছি ভা… সরি আপু।”

দৃশ্য একবার আড়চোখে মাহাদকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে মৌ কে সাথে নিয়ে চলে গেল।
দৃশ্যর সেই হাসিটা অনেক রহস্যজনক লাগলো মাহাদের কাছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর ক্যান্টিনের ছেলেটা বিল নিয়ে রাফসানের সামনে ধরলো। রাফসান হাসিমুখে বিল টা নিয়ে খুলে স্তব্ধ হয়ে গেলো। সাড়ে তেরো হাজার টাকা বিল। রাফসানের বিস্ময় ভরা মুখ দেখে জয় বিলটা হাতে নিলো। সে রীতিমত শক। দুইজনের চেহারার দিকে তাকিয়ে মাহাদ বিল টা নিয়ে দেখলো।রাফসান বির বির করে বলে উঠলো

-“মামা ভুলটা আমারই ছিল। পিচ্চি ভাবির সাথে তো আর পারিনা। ভাবলাম তার বান্ধবীকে একটু জব্দ করব। কিন্তু ভাবি তো পুরা পকেটে লাথি মারলো।”

জয় বললো

-“পিচ্চি ভাবিকে এখানে আসতে দেখে তখনই আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। নিশ্চয়ই একটা ঝামেলা পাকাবে।”

মাহাদ মনে মনে একটু হাসলো। এই পিচ্ছিটা আসলেই সেই একটা জিনিস। পুরো পৃথিবীতে মনে হয় এক পিস। এমনিতে দেখলে মনে হয় ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে শয়তানি বুদ্ধি সারাক্ষণ ঘুরে। মাহাদ ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলো এতো বিল এর কারণ কি?

ছেলেটা জানালো বিশ টাকার দুইশ টা কোক আর চল্লিশ টাকার দুইশ সাব বার্গার নিয়েছে।সাথে কয়েক বোতল পানি।
ছেলেটার কথা শুনে মাহাতো তার বন্ধুরা হা করে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা আরও জানানো ক্লাস এইট এর দুই সেকশনের সকল স্টুডেন্টদের এই খাবার দিয়েছে। দৃশ্য যে তাদের বড় রকমের একটা বাশ দিয়ে গেল সেটা বুঝতে তাদের বেশি সময় লাগল না। শেষ পর্যন্ত এই বিল মাহাদকে পরিশোধ করতে হয়েছে।

সেদিন বিকেলে কোচিংয়ে বের হয়েছে দৃশ্য আর নাবিলা। মাহাদ সাইডে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।দৃশ্য মনে মনে যে ভয় পাচ্ছিলো তাই হলো। মাহাদের ভয়ে আজ কোচিং আসতে চায়নি।কিন্তু বাবা আজ বাসায়।তাই আসতে হলো।দৃশ্য কে দেখতেই এখানে দাঁড়িয়ে থাকে মাহাদ।
দৃশ্য কে আসতে দেখে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে তার কাছে ডাকলো। মনে মনে কিছুটা ভয় পাচ্ছে দৃশ্য। মাহাদের সাথে তার সম্পর্ক তা অনেকটাই সহজ হয়ে এসেছে। তবুও আজ যেই কাণ্ড ঘটিয়েছে নিশ্চয়ই মাহাদ তাকে বকা দিবে। মাইরও দিতে পারে। মুচকি হেসে মাহাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। মাহাদ দুই হাত ভাঁজ করে দাড়িয়ে বললো

-“কি ব্যাপার আজ এতো দেরি করে আসলে কেনো?”

-“এমনি।দেরি হয়ে গেছে।”

-“নাকি আমার ভয়ে আসতে চাইছিলে না?”

দৃশ্য আমতা আমতা করে বললো

-“আমি ভয় কেনো পাবো?আপনার বন্ধু না আমার বান্ধুবিদের তৃষ্ণা মেটাতে চেয়েছিলো?তাই আমার সব বন্ধুদের ট্রিট দিয়ে দিলাম।”

-“ভালো করেছো। ভবিষ্যতে এমন চলতে থাকলে আমার সংসার যে লাটে উঠবে তা বুঝা হয়ে গেছে।”

দৃশ্য মাহাদের কথা কিছুই বুজলো না।বললো
-“মানে?”

-“মানে কিছু না। যাও কোচিং এ যাও।”

-“ওকে।”

দৃশ্য চলে যাচ্ছে আর মাহাদ এক দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে আছে।এই পিচ্ছি টা কবে বড়ো হবে?
আজ কাল দৃশ্য নতুন অনুভূতির সাথে পরিচিত হচ্ছে। মাহাদকে দেখলে তার বুকের বা পাশে শীতলতা বয়ে যায়। মাহাদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলতে ভীষণ ভালো লাগে।দৃশ্যকে মাহাদের যেই জিনিসটা আকৃষ্ট করে তা হলো মাহাদের ধূসর চোখ।একদিন তো বলে ফেলেছিলো

-“আপনার চোখ বিড়ালের মত কেনো?”

-“বিড়ালের মত! এটাকে ধূসর চোখ বলে।”

-“কিন্তু আমার কাছে তো কেমন বিড়াল বিড়াল লাগে।”

-“তার মানে আমার চোখ তোমার পছন্দ না?”

-“তা বলিনি। আমার আপনার এই বিলাই চোখ গুলো অনেক ভালো লাগে।”

-“আল্লাহ এতক্ষণ বিড়াল অব্দি ঠিক ছিলো। এখন তো সোজা বিলাই তে চলে আসছে।”

মাহাদে কথা শুনে দৃশ্য খিল খিল করে হেসে উঠল।
মাহাদ হঠাৎ দৃশ্য কে বলে উঠলো

-“দৃশ্য একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

-“বলুন।”

-“তোমার কাছে ভালবাসার মানে কি?”

কথাটা শুনে দৃশ্য কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকলো। তারপর বললো

-“জানিনা। তবে আমি মা কে আর ভাইয়াকে প্রচন্ড ভালোবাসি।বাবাকেও বাসী কিন্তু তাদের দুজনের থেকে একটু কম।”

কথাটা বলেই সে শব্দ করে হেসে উঠলো। যে হাসি মাহাদের মনে কম্পন সৃষ্টি করলো।সে বললো

-“আমরা সবাই ফ্যামিলি কে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু আমি তোমাকে এই ভালবাসার কথা বলছি না।”

-“ও বুঝতে পেরেছি। ফ্যামিলি বাদে আমি নাবিলাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তারপর মৌ আর সায়মাও আছে।”

মাহাদের এবার নিজের কপাল নিজেই চাপড়াতে ইচ্ছা করছে।কাকে কি বলছে?এই পিচ্ছির মাথায় শুধু শয়তানি বুদ্ধি ছাড়া আর কিছু নাই।আর সে এক পাগল গেছে এই পিচ্চিকে ভালোবাসা বুঝাতে।
দৃশ্য কথা শেষ করে গেলো ডিনার করতে।টেবিলে বসে খেতে শুরু করলো।দৃশ্যর বাবা গম্ভীর মুখে বললো

-“দৃশ্য এইবার ফাইনালে যদি তোর রেজাল্ট খারাপ হয়েছে তো এই মোবাইল আমি এক আছাড়ে ভাঙবো।যখন দেখি তখনই হাতে মোবাইল।”

দৃশ্য ভীষণ ভয় পেয়ে গেল।আজ কাল সে আসলেই বেশি মোবাইল হতে নিয়ে ঘুরছে। সারাক্ষণ মাহাদের সাথে চ্যাটিং চলে তার।ভয়ে আমতা আমতা করে বললো

-“সরি বাবা।এমন আর হবে না।”

-“মনে থাকে যেন।আর ফাহিম তুই রাতে দেরি করে বাসায় আসা শুরু করেছিস?”

বাবার কথা শুনে ফাহিমের কাশি উঠে গেলো।সে বুঝতে পারলো এখন তার ক্লাস নিবে বাবা। রাগী চোখে দৃশ্যের দিকে তাকালো। ভাইয়ের দৃষ্টি বুঝতে পেরে দৃশ্য মুখ ভেংচি কাটলো। যার মানে এবার তোমার খবর আছে।
ফাহিম এক গ্লাস পানি খেয়ে বললো

-“নাতো বাবা।আমি তো ঠিক সময়ে বাসায় চলে আসি।”

-“এমনটাই যেনো হয়।”

-“জি বাবা।”

দৃশ্য ফাহিমের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আর ফাহিম তাকে বারবার চোখ রাঙাচ্ছে। খাওয়া শেষে দৃশ্য রুমে গেল।ফাহিম দৃশ্যর রুমে এসে বললো

-“ওই সারাদিন তোর মোবাইলে কি?বাবা অব্দি নোটিস করেছে?”

-“আমি কি করবো?আমি সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকলে বাবা দেখে না। যখনই ফোন হাতে নেই বাবা চলে আসে।”

-“এমন কিছু করিস না যাতে ভাই রাগ হয়ে যাই।আমাদের মান সম্মান যাবে এমন কিছু ঘটলে বাবার আগে আমিই তোকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিবো।”

দৃশ্য বিরক্ত হয়ে বললো
-“আমার সাথেও গুন্ডামি শুরু করেছিস ভাইয়া?তুই না পাশের এলাকার কোন ছেলেদের সাথে দুইবার মারা মারি করে হসপিটাল অব্দি পৌঁছেছিস।তবুও তোর গুন্ডামির সখ মিটেনি?”

ফাহিম রেগে দৃশ্যর বেনুনিতে দিলো এক তান।দৃশ্য চিৎকার দিয়ে ফাহিমকে মারতে দৌড়াতে শুরু করলো।দুই ভাই বোন খুনসুটিতে মেতে উঠলো।

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_9

দৃশ্য ক্লাসে বসে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে।আতিক স্যার গতকাল কোচিং এ এই ম্যাথ গুলি করিয়েছে।কিন্তু সে এই ম্যাথ এর আগা মাথা কিছুই বুঝেনি।আজ ক্লাসে তিনি সব স্টুডেন্ট দের ওই ম্যাথ করতে দিয়েছে।দৃশ্য বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।আতিক স্যার বিষয়টা লক্ষ করে দৃশ্যর পাশে এসে বললো

-“কি ব্যাপার দৃশ্য?এই ম্যাথ করতে এতক্ষণ লাগে?গত কাল না বুঝিয়েছি?”

দৃশ্য আমতা আমতা করে বললো
-“স্যার আমিতো এইটা অনেক ভালো করে বুঝেছি।কিন্তু এখন কিছুতেই মনে করতে পারছি না।”

আতিক স্যার চোখ গরম করে বললো
-“হাত পাত।”

দৃশ্য ভয়ে ভয়ে বললো
-“কেনো স্যার?”

আতিক স্যার দাতে দাঁত চেপে বললো
-“তোকে খুশিতে চকলেট দিবো তাই।”

দৃশ্য ভালো করেই জানে এই চকলেট কোন চকলেট?তাই ঢোক গিলে বললো

-“থাক স্যার,আমার চকলেট লাগবে না।”

আতিক স্যার এক ধমক দিয়ে বললো
-“এক্ষনি হাত পাত।সব সময় তুই ফাঁকিবাজি করিস।আজ তোর খবর আছে।”

দৃশ্য আড়চোখে একবার স্যারের হাতের মোটা বেত টা দেখে নিলো।ভীষণ ভয় লাগছে।এই বেতের বারি তার হাতে পড়লে হাত টাই খসে পড়বে।ভয়ে ভয়ে হাত সামনে বাড়ালো।আর চোখ বন্ধ করে নিলো।ভীষণ জোরে শব্দে দৃশ্য কেপে উঠলো।মনে হচ্ছে তার হাতটা জ্বলে যাচ্ছে।চোখ খুলতেই গর গর করে পানি পড়তে লাগলো।নাবিলা,মৌ আর সায়মা করুন চোখে দৃশকে দেখে যাচ্ছে।

দৃশ্যকে কাদতে দেখে আতিক স্যার তাকে ক্লাস থেকে বাইরে বের করে দিলো।
মাহাদ করিডোর দিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিল।হঠাৎ তার চোখ পড়ল ক্লাসের বাহিরে দাড়িয়ে থাকা দৃশ্যর দিকে।ভালো করে খেয়াল করতেই দেখতে পেলো দৃশ্য হাতের দিকে তাকিয়ে শব্দহীন কান্না করছে।তার নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে।ফর্সা মেয়েদের এই এক জ্বালা।কান্না করলেই সবার আগে নাক আর কান লাল হয়ে যায়।দুই বেনুনী করা কান্নারত কিশোরীকে দেখে মাহাদের প্রেমিক মনটা বিচলিত হয়ে উঠলো।সে দৌড়ে দৃশ্যর সামনে পৌঁছালো।হঠাৎ কাউকে আসতে দেখে দৃশ্য কান্না বন্ধ করে দিলো।মুখ তুলে মাহাদকে দেখে অবাক হলো।মাহাদ বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো

-“এই পিচ্ছি কাদঁছো কেনো?”

মাহাদের এই কথায় কি ছিলো তা দৃশ্যর জানা নেই।তবে সে এবার জোরে কান্না শুরু করলো।হাত ধরে কাদতে দেখে মাহাদ দৃশ্যর হাত সামনে মেলে ধরলো।আর দেখতে পারলো হাতে মোটা লাল দাগ বসে গেছে।সামনে উকি দিয়ে দেখতে পারলো ক্লাস রুমে আতিক স্যার।সে বুঝতে পারলো কি ঘটেছে।তাই সে দৃশ্যর হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো।দৃশ্য তখনও ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে। মাহাদ তাকে মেডিকেল ফ্যাসিলিটিজ রুমে নিয়ে আসলো।একটা সীটে বসিয়ে গেলো মলম আনতে।তাক থেকে একটা মলম এনে তার পাশে বসে মলম লাগতে শুরু করলো।

এতখন কান্নার জন্য দৃশ্য কিছুই বুঝতে পারেনি।কিন্তু এখন মাহাদ হাত ধরায় তার অন্যরকম লাগছে।অনুভূতিটা ঠিক কেমন তা সে জানে না।তবে তার ভীষণ লজ্জা লাগছে।এই মানুষটার সামনে সে এতক্ষণ ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেছে।মান সম্মান আর কিছুই রইলো না।
মাহাদ দৃশ্যকে উদ্দেশ্য করে বললো

-“আতিক স্যার কেনো মারলো?”

সে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো
-“একটা ম্যাথ পারিনি তাই।”

-“পারনি কেনো? উনি বুঝিয়ে দেয় নি?”

-“দিয়েছিলো,কিন্তু আমি কিছুই বুঝিনি।”

-“না বুজলে বলনি কেনো?”

এবার আর দৃশ্য কোনো জবাব দিলো না। মাহাদ বললো ছুটির পর লাইব্রেরীতে বই খাতা নিয়ে চলে আসবে।আমি বুঝিয়ে দিবো ম্যাথ।মনে থাকবে?
দৃশ্য মাথা ঝাকিয়ে হে জানালো। মাহাদ কড়া চোখে দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে বললো

-“এমন কিছুই করবে না যাতে কেউ তোমার গায়ে হাত তোলার সুযোগ পায়।।আমি সহ্য করতে পারবনা।আর বড়দের সাথে আমি বেয়াদবি করতে চাইনা।স্যার ছারা অন্য কেউ হলে হাতটাই কেটে ফেলতাম।নেক্সট টাইম লেখাপড়ায় কোনো গাফিলতি যেনো না হয়?”

দৃশ্য মাহাদের কথা শুনে ভয় পেলো।এই লোকটা কতটা রাগী সেটা সে সেইদিন বুঝেছে।এই বিলাই চোখ যেনো তাকে এক্ষনি ভোৎস করে দিবে।সে দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো।
মাহাদ তাকে বসে থাকতে বলে বেরিয়ে গেলো।কয়েক মিনিট পর হাতে আইসক্রিম নিয়ে ফিরলো।দৃশ্য আইসক্রিম দেখে ভীষণ খুশি হলো। মাহাদ নিজে প্যাকেট খুলে দৃশ্যের হাতে আইসক্রিম ধরিয়ে দিলো।দৃশ্য মনের আনন্দে আইসক্রিম খাচ্ছে।আর মাহাদ এক মনে দৃশ্যর খাওয়া দেখলো।দৃশ্যর বাচ্চাদের মতো খাওয়া দেখে মাহাদ হেসে ফেললো।পকেট থেকে টিসু বের করে দৃশ্যর কাছে বসলো।হঠাৎ মাহাদকে পাশে বসতে দেখে দৃশ্য অবাক হয়ে গেলো। মাহাদ টিসু দিয়ে দৃশ্যর মুখ পরিষ্কার করে দিলো।মাহাদের এই যত্ন টুকু দৃশ্যর খুব ভালো লাগলো।ধূসর চোখ গুলো আজ অনেক কাছ থেকে দেখছে।কেমন নেশা ধরানো চাহুনি তার। মাহাদ দূরে সরে বসতেই দৃশ্য বাস্তবে ফিরলো।ইসস এতক্ষণ কি সব ভাবছিলো সে।

ক্লাস ছুটির পর দৃশ্য আর নাবিলা আসলো লাইব্রেরীতে। দুজনেই চেয়ার টেনে মাহাদের সামনে বসলো। মাহাদ নাবিলাকে দেখে কিছুটা বিরক্ত হলো। এই বাচ্চাটা বডিগার্ড ছাড়া চলতে পারে না। সারাখন চারিপাশে বান্ধবীদের একটা বহর নিয়ে চলে। মাহাদ তানিমকে একটা টেক্সট করে দিলো।কিছুক্ষণ পর তানিম আসলো লাইব্রেরীতে। তানিম এসেই নাবিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো

-“কি ছোট আপু? তোমারও ম্যাথ নিয়ে প্রবলেম?”

-“না ভাইয়া।আমার তো ইংরেজিতে প্রবলেম।”

-“তাহলে এইখানে কি করো? এখানে তো ম্যাথ ক্লাস চলে।”

নাবিলা মুখটা কাচুমাচু করে বললো
-“ভাইয়া আমিতো দৃশ্যের সাথে এসেছি।”

-“ভাবী কি কোলের বাবু যে তুমি তার সাথে এসেছো?”

তামিমের কথা শুনে দৃশ্য এবং নাবিলা দুজনেই বড় বড় চোখ করে তাকালো। বেচারা তানিম পড়লে ফ্যাসাদে। মুখ ফসকে বলে ফেলেছে। নাবিলা চোখ কুঁচকে বললো
-“ভাবী কে?”

তানিম বিড় বিড় করে বললো
-“ভাবী মানে! ভাবী নাতো বেবি বেবি?”

তানিমের কথা শুনে মাহাদ চোখ গরম করে তাকালো। এমনিতেই মাহাদের বন্ধুরা দৃশ্য কে কিছুটা ভয় পায়। যা মেয়ে কখন তাদের নাকানি-চুবানি খাওয়ায় বলা তো যায় না। তানিম নাবিলাকে বললো

-“আরে মেয়ে বেশি কথা বলে। চলো তোমার ইংরেজি ক্লাস নেই।”

কথাটা বলেই সে নাবিলার পিঠের ব্যাগ ধরে টেনে দূরের টেবিলে নিয়ে গেল। দৃশ্য অবাক হয়ে তাদের কান্ড দেখছিল। মাহাদের কথায় তার ধ্যান ফেরে।

-“হাতে কি এখনো ব্যথা আছে?”

-“না।”

মাহাদ নিজের ব্যাগ থেকে একটা স্যান্ডউইচ বের করে দৃশ্যর সামনে ধরলো। আর বললো

-“তুমি এটা খেতে থাকো আর আমি তোমাকে ম্যাথ বোঝাচ্ছি।”

-“ওকে।”

দৃশ্য স্যান্ডউইচ খাচ্ছে আর ম্যাথ বোঝার চেষ্টা করছে। মাহাদ খুব ইজি ভাবে দৃশ্যকে ম্যাথ গুলো বুঝিয়ে দিল। মাহাদ যেমন ভালো গান গায় তেমনি সে লেখাপড়া তেও পটু। আফটার অল ক্লাসের ফার্স্টবয় বলে কথা। দৃশ্য খুব সুন্দর ভাবে ম্যাথগুলো বুঝলো এবং দুইটা ম্যাথ মাহাদকে করেও দেখালো। পড়া শেষ করে মাহাদ বললো

-“সপ্তাহে দুই দিন লাইব্রেরীতে চলে আসবে আমি তোমাকে বুঝিয়ে দিব।মনে থাকবে?”

-“জি ভাইয়া।”

তারপর দৃশ্য আর নাবিলা বেরিয়ে গেল স্কুল থেকে। তানিম মাহাদের কাছে আসতেই পিঠে এক ঘা বসিয়ে দিলো মাহাদ আর বললো

-“ওই শালা তোদের ভাবি বলতে মানা করছি না? আর ভাবি থেকে সোজা বেবি?”

-“আরে ব্যাটা বেবি বলতে তোর বেবি বুঝাইসি। আমাদের জন্য তো জাস্ট ভাবী। দেখ শালা এমনি এক বাচ্চাকে ভাবি বলতে হইতাছে। তার উপরে আবার প্যারা দিস না।”

-“তোদের জন্য একদিন আমি মহা ঝামেলায় পরবো। আগে আমার অনুভূতি ওকে বুঝিয়ে নেই, তারপর যত খুশি ভাবী ডাকিস।”

-“তুই তো শালা এত দিনেও বলতে পারলি না। তোর জায়গায় আমি হলে প্রথম দিনেই প্রপোজ করে দিতাম।”

-“হ্যাঁ প্রথম দিনই প্রপোজ করতাম আর আমার গালটা ও লাল করে দিতো তাইনা? তাছাড়া প্রথম দিন তো আমাকে বেকুব বানায়া গেছে।”

-“হ্যাঁ সেটা তো জীবনেও ভুলব না।”

-“মজা নিস না তো? এই বাচ্চাটাকে কিছু বললে কি বুঝবে?”

-“তুই খামোখাই প্যারা নিচ্ছিস।”

-“আমার মতে প্রোপোজ করে ফেল। কারণ দৃশ্য চোখে তোর জন্য কিছু একটা দেখেছি আমি। তাছাড়া বড় হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে দেখবি পাখি অন্য খাঁচায় ঢুকে গেছে।”

কথাটা শুনেই মাহাদের ভীষন রাগ হল। দৃশ্য কে অন্য কারো সাথে সে চিন্তাই করতে পারে না। এই বাচ্চা মেয়েটা ধীরে ধীরে তার অনুভূতির সাথে মিশে গেছে। তার কিশোর মন সেই কিশোরীর প্রেমে বারংবার হাবুডুবু খাচ্ছে।

কয়েক দিন পরই এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান। নেক্সট ইয়ার এই সময়ে মাহাদরাও বিদায় নিবে। তাই এই বছর তারা বেশ মজা করে এদিনটা পালন করতে চায়। তবে মাহাদের অন্য প্ল্যান আছে। এই দিনটাতে সে দৃশ্যকে তার মনের কথা বলতে চায়।আর মাত্র একটা বছর সেখানে থাকবে। তাই সে আর দেরী করতে চাইছে না। সব বন্ধুরা মিলে বিদায় অনুষ্ঠানের প্ল্যান করতে বসে পড়লো।
সন্ধ্যার দিকে মাহাদ বাসায় ফিরলো। বাসায় ফিরেই ড্রয়িংরূমের সোফায় মাহিমকে দেখতে পেলো। বসে বসে সবজি পাকোড়া খাচ্ছে। পাশে দাদী বসে বসে পান চিবুচ্ছে। এটা তার দাদীর পুরনো অভ্যাস।সারাদিন পান চিবিয়ে মুখ লাল করে রাখবে। মাহাদকে দেখেই দাদীর মুখে হাসি ফুটে উঠল। বরাবরই মাহাদ তার প্রিয় নাতি। মাহিমের সাথে দাদীর ঠিক বনিবনা হয় না।সারাদিনে দুইজন লেগেই থাকে। মাহাদকে দেখেই দাদি বললেন

-“কিরে মাহাদ এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো?”

-“এইতো সুইট দাদী স্কুলে সামনে অনুষ্ঠান তো সেটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।”

-“তোরা দুই ভাই সারাদিনই বাইরে টই টই করে ঘুরে বেড়াস। আল্লাহ! আজ একটা নাতনী দিলে আমার দুঃখটা বুঝতো।”

মাহিম মুচকি হেসে বললো
-“দাদী এসব আমাদের সামনের না বলে বাবার সামনে বলো কাজে দিতে পারে।”

মাহিমের কথা শুনে দাদি মাথায় এক চটি মারলো।আর বললো

-“বান্দর পোলা। কার সামনে কি বলতে হয় সেটাও শিখিস নি?”

মাহিম মাথা ডলতে ডলতে বললো
-“আরে দাদি, আমি তো সে কথাই বললাম। যেকথা বাবার সামনে বললে কাজে দিবে সেটা আমাদের সামনে বলে কি লাভ বল?”

কথাটা বলতে বলতেই আমজাদ রহমান ড্রইং রুমে আসলেন। আর বললেন

-“কি কথা হচ্ছে দাদি নাতির মধ্যে? আমার সামনে বললে কাজে দিবে কি কথা?”

শামসুন্নাহার বেগম এবার লজ্জায় পড়ে গেলেন। ছেলের সামনে এখন কিভাবে কথাটা বলবে? তাই তিনি চুপ হয়ে গেলেন। কিন্তু মাহিম তো চুপ থাকার পাত্র না। সে বললো
-“বাবা দাদির একটা বিষয় নিয়ে ভীষণ আফসোস হচ্ছে।”
মাহিমের কথা শুনেই শামসুন্নাহার বেগমের কাশি উঠে গেল। তিনি চোখ গরম করে মাহিমের দিকে তাকালেন। মাহাদ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমজাদ রহমান কিছুই বুঝতে পারলেন না শুধু বললেন

-“কি নিয়ে আফসোস হচ্ছে?”

-“দাদীর একটা নাতনীর খুব শখ বাবা সেটা নিয়ে আফসোস হচ্ছে।”

আমজাদ রহমান মুচকি হেসে বললেন

-“আম্মা মনে আফসোস রাইখেন না। পাঁচটা বছর ওয়েট করেন তারপর একবারে নাত বউ দেখে মন ঠান্ডা করবেন।”

শামসুন্নাহার বেগম রেগে বললেন

-“হারামজাদা! লজ্জা সরম কিছু নাই।নিজে যেমন,পোলা গুলাও তেমনই হইছে।”

তিন বাপ ছেলে মিলে হাসতে লাগলো আর দাদী বিরক্ত হয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
______________________
দৃশ্য আর নাবিলা বের হয়েছে বিকেলে কোচিং এর উদ্দেশ্যে। বাসা থেকে বের হতেই তমা আপুর সাথে দেখা হয়ে গেলো। দৃশ্যদের সামনের বাড়িটাই তমাদের বাড়ি। তমা এবার ক্লাস টেনে পড়ে। তমাকে দেখেই দৃশ্য হেসে বললো

-“কেমন আছো তমা আপু?”

-“এইতো ভালো তোরা কেমন আছিস?”

-“আমরা ভালো আছি আর ফাহিম ভাইয়াও ভালো আছে।”

তমা অবাক চোখে দৃশ্যের দিকে তাকালো আর বললো
-“আমি কি তোর ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছি?”

-“না এখনো করনি, বাট ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ভাইয়ার কথায়ই তুমি জিজ্ঞেস করতে?”

-“আমার ঠেকা পড়েছে তোর গুন্ডা ভাইয়ের খবর নিতে?”

-“হ্যাঁ এর জন্যই তো বারান্দা দিয়ে আমার ভাইয়ের রুমে উঁকি ঝুঁকি মারো।”

দৃশ্যর কথায় তমার কেশে উঠলো। নাবিলা বোকার মতো তাদের দুজনকে দেখে যাচ্ছে। তার আশেপাশে এত কিছু ঘটে আর সে সেটা খেয়ালই করেনি?

তমা বললো
-“তুই বেশি পেকে গেছিস দৃশ্য।”

-“সে যাই বলো, আমার ভাইকে পটাতে না পারলে ভাবি কিন্তু ডাকবো না।”

তমা রাগী চোখে বললো
-“লাগবেনা আমার তোর মত ফাজিল ননদ।”

-“সময় আসলে আমাকেই লাগবে।”

-“এই যা কোচিংয়ে যা।”

-“ওকে আপু।”

দৃশ্য চলে যেতেই তমা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। ফাহিমকে সে ছোটবেলা থেকেই ভীষণ পছন্দ করে। কিন্তু ফাহিমের রাগকে সে ভীষণ ভয় পায়। আর সেই ভয়েই কখনো ফাহিমকে মনের কথা বলতে পারেনি তমা। ফাহিমের থেকে মাত্র দুই বছরের ছোট হলেও ফাহিম তাকে বাচ্চাই মনে করে। যেন তার থেকে সাত-আট বছরের বড়। ফাহিমের ভাব দেখলে তার মাঝে মাঝে গা জ্বালা করে। তবে দৃশ্যকে তমা ভীষণ পছন্দ করে। মেয়েটা ভিষণ চঞ্চল। সারাদিন শুধু দুষ্টুমি করে বেড়ানোই তার কাজ।

বরাবরের মতো আজও মাহাদ দাঁড়িয়ে আছে দৃশ্যের কোচিং এর গলির মোড়ে। দৃশ্য কে আসতে দেখেই বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো। পকেট থেকে দুটো চকলেট বের করে তাদের দুইজনকে দিল। দৃশ্য কে উদ্দেশ্য করে বললো

-“হাতের ব্যথা কমছে?”

-“হে। আপনি প্রতিদিন এখানে কি করেন?”

দৃশ্যের কথা শুনে মাহাদ মুচকি হাসলো। আর বললো
-“আমার খুব প্রিয় একজনের অপেক্ষা করি।”

কথাটা শুনে না চাইতেও দৃশ্যের মনটা কিছুটা খারাপ হলো। তবুও কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো

-“কে আপনার প্রিয় মানুষ?”

দৃশ্যর মন খারাপ দেখে মাহাদ মুচকি হাসলো। আর বললো
-“সময় আসুক তখন বলবো।”

-“আচ্ছা ভাইয়া। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে,আসি।”

মাহাদ বুঝতে পারল দৃশ্যর মনটা খারাপ হয়ে গেছে। তাই সে কথা বাড়ালো না শুধু বললো

-“আচ্ছা যাও।”

পরদিন দৃশ্য আর তার বান্ধবীরা ক্লাস রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। হঠাৎ মাহাদ আর তার বেশ কয়েকজন বন্ধুরা দৃশ্যদের ক্লাস রুমে ঢুকলো। আর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো, সামনে স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠান। যারা যারা অনুষ্ঠানে পার্টিসিপেট করতে চায় তারা যেন অডিটোরিয়ামে এসে নাম এন্ট্রি করে যায়। আর মেয়েদের জন্য শাড়ি আর ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি পরার নির্দেশনা দিলো।

দৃশ্যত অনুষ্ঠানের কথা শুনেই ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে গেল। অনুষ্ঠান মানেই মাহাদের গান। মাহাদ আড়চোখে একবার দৃশ্যের দিকে তাকালো। তারপর মুচকি হেসে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

দৃশ্য বরাবরই অলস প্রকৃতির মেয়ে। এসব অনুষ্ঠানে সে কখনোই পার্টিসিপেট করতে চায়না। এবারও তাই হলো। অডিটোরিয়ামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখল মাহাদ একটা মেয়ের সাথে ভীষণ হেসে কথা বলছে। মেয়েটার নাম রামিসা।মহাদের সাথে একই ক্লাসে পড়ে। এই মেয়েটাকে দৃশ্যর এককথায় ঢঙ্গি মনে হয়। তার বন্ধু বান্ধবের লিস্ট খুজতে গেলে মেয়ের সংখ্যা হাতেগোনাই পাওয়া যাবে।

দৃশ্যর মনে হঠাৎ এক সাগর অভিমান জমা হলো। মাহাদের সেই প্রিয় মানুষটা রামিশা নয়তো? মাহাদ তাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে এত ইজি ভাবে কথা বলবে বিষয়টা সে মেনে নিতে পারছে না। বক্ষস্থলের কোনায় সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করছে সে। আর এক মুহূর্তও সে সেখানে দাঁড়ালো না।সে সেখান থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here