#তোমার_আমার_প্রণয়,part_22
#israt_jahan_arina
সকাল প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে।দৃশ্য দাড়িয়ে আছে মিস লুবনার কেবিনে।মিস লুবনা মনোযোগ দিয়ে একটা স্কেচ তৈরি করছেন। মডেল অরিন এর নেক্সট প্রজেক্ট এর জন্য তিনি ড্রেস ডিজাইন করছেন।কয়েকদিন ধরে মিস লুবনা ভীষণ ব্যস্ত।তাই দৃশ্যকে ও ব্যাস্ত থাকতে হচ্ছে।এই ব্যাস্ততার জন্য রাতে বাসায় লেখাপড়ার সময় অব্দি পাচ্ছে না।
কক্সবাজার থেকে আসার পর আর মাহাদের সাথে দেখা হয়নি। মাহাদ সপ্তাহ খানেক হলো ইন্ডিয়াতে গেছে গানের রেকর্ডিং করতে।আসলেই মাহাদ ভীষণ ব্যস্ত মানুষ।যদি এখনো সে মাহাদের জীবনে থাকতো তাহলে কি সে এতটাই ব্যস্ত থাকতো?দৃশ্যর জন্য কি কোনো সময় থাকতো না?এই যা!কি ভাবছে ও। মাহাদ কেনো তার জীবনে দৃশ্যকে রাখবে?সে তো ধরা ছোঁয়ার বাইরে।এখন সে একজন সেলিব্রেটি। আশেপাশের হাজারো সুন্দর রমণীদের আনাগোনা।সেখানে দৃশ্য খুব বেশি বেমানান হয়ে যাবে।
নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে দৃশ্য মিস লুবনার কেবিন থেকে বের হয়ে নিজের ডেস্কে বসলো।মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।না চাইতেও এই মানুষটা তার মন ও মস্তিষ্কে ঝেকে বসে থাকে।
তার পাশের ডেস্কে বসে ঈশিতা দৃশ্যকে খেয়াল করলো। চিন্তিত মুখে বললো
-“দৃশ্য আর ইউ ওকে?”
-“হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। একটু মাথা ব্যথা করছে।”
-“ঠিক বলেছ কয়েকটা দিন ধরে এই লুবনা ম্যাডাম মাথাটা গরম করে রাখছে। এতগুলো কাজ একসাথে কেনো যে নেয় সেটাই বুঝিনা। তোমার তো কষ্ট বেশি।মিস লুবনার সাথে সব জায়গায় ঘুরতে হচ্ছে, সব মিটিং এ সাথে থাকতে হচ্ছে।ওনার প্রতিটি অর্ডার ফলো করতে হচ্ছে। এক কাজ করো এক কাপ কফি খেয়ে আসো ভালো লাগবে। আমার হাতে অনেক কাজ না হলে আমিও যেতাম তোমার সাথে।”
দৃশ্য মুচকি হেসে বললো
-“আরে না সমস্যা নেই আমি একা যেতে পারবো।”
তখন সেখানে উপস্থিত হল মৃদুল। তাদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“হাই গার্লস কি খবর?”
ঈশিতা লজ্জা মাখা মুখে বললো
-“এইতো ভালো আপনার কি অবস্থা?”
-“আমার চলছে। বোঝোই তো মিস লুবনা সবার উপর ভীষণ প্রেসার দিয়ে রাখছে। তাই ভাবলাম কফি খেয়ে আসি।তোমরা কেউ যাবে?”
-“আমি তো ব্যস্ত আছি আপনি এক কাজ করুন দৃশ্যকে নিয়ে যান ওর মাথা ব্যথা করছে।”
দৃশ্য কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো। মৃদুল মুচকি হেসে বললো
-“হে দৃশ্য চলো। এমনি লুবনা ম্যাম তোমাকে যে পেশার দিচ্ছে, তাতে তুমি চ্যাপ্টা হয়ে কাগজের মতো পাতলা হয়ে যাবে। ফ্যান ছাড়ালেও তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
মৃদুলের কথায় ঈশিতা আর দৃশ্য খিল খিল করে হেসে উঠল। হঠাৎ তাদের চোখ পরলো দরজার দিকে। মাহাদ এবং পেছনে দুজন বডিগার্ড দ্রুত এ দিকে এগিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে মিস লুবনার কেবিনে যাবে। মাহাদ তাদের ক্রস করে যাওয়ার সময় এক পলক দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই আবার মাথা ঘুরিয়ে নিল। যেন দৃশ্যকে দেখেও দেখলো না। মাহাদের সেই এক পলক যেনো হাজারো কথা বলে গেলো।যেই পলকে ছিলো তৃষ্ণা,ভালোবাসা, ক্রোধ। দৃশ্যর মনের শক্ত পাহাড় কে এক নিমিষে গুলিয়ে ফেলতে পারে এই একটা পলক। দৃশ্য ড্যাবড্যাব করে মাহাদকে দেখে যাচ্ছে। ব্ল্যাক জিন্স, হোয়াইট টি-শার্ট তারপর ব্ল্যাক জ্যাকেট। একদম কিলার লুক। দৃশ্যর মনে হল সে আরেক দফা মাহাদের উপর ক্রাশ খেল। দৃশ্যর ধ্যান ফিরলো মৃদুলের ডাকে। তারপর তারা দুজনেই চলে গেল কফি খেতে।
সারাদিনের ব্যাস্ততায় দৃশ্যর এখন চোখ ভেঙে ঘুম আসছে। জাস্ট বিছানায় মাথা পাততে পারলেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যাবে।দৃশ্য ভেবেই পায়না যে দৃশ্য কোনোদিন প্লেটে খাবার অব্দি বেড়ে খায়নি,সেই মেয়ে আজ এতটা পরিশ্রম করছে জীবিকার তাগিদে।
লিফটে উঠে নিচে নামার বাটনে প্রেস করে। ডোর টা ক্লোজ হওয়ার মুহূর্তে কেউ পা দিকে আটকে দিলো।দৃশ্য বিস্ময় নিয়ে তাকাতেই কিছুটা থমকে গেল। মাহাদ ফোন চাপতে চাপতে লিফটের ভিতরে প্রবেশ করে। দৃশ্যর ভীষণ অস্বস্তি ফিল হচ্ছে। ভয়ে দৃশ্য লিফটের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো। ভিতরে প্রবেশ করেই মাহাদ বাটন প্রেস করে আবার ফোনে মনোযোগ দিল। এমন একটা ভাব করছে যেন এখানে সে ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি উপস্থিতি নেই। দৃশ্য কাদের ব্যাগটা হাতে চাপ দিয়ে শক্ত করে ধরে দাড়িয়ে রইল। এই মানুষটা কেন বারবার তার সামনে এসে তার মনটাকে এলোমেলো করে দেয়?তাকে এভাবে কষ্ট দিয়ে কি সে খুব বেশি আনন্দ পাচ্ছে?
লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোরে পৌঁছাতেই দৃশ্য নামার জন্য এগিয়ে আসলো। দরজা ওপেন হতেই দৃশ্য বেরিয়ে যেতে নিলে হঠাৎ হাতে টান অনুভব করলো। কি হলো সেটা বুঝে ওঠার আগেই দেখলো মাহাদ লিফটে হোল্ড বাটনে প্রেস করছে। দৃশ্যর এবার গলা শুকিয়ে আসলো। কি করতে চাইছে মাহাদ?
মুহুর্তেই তার পুরো শরীর কাপতে শুরু করলো। মাহাদ হাতের ফোনটা পকেট এ রেখে দৃশ্যের দিকে ঘুরে তাকালো। এতক্ষণে দৃশ্যর গলা শুকিয়ে কাঠ। মাহাদ তার দিকে কয়েক কদম এগোতেই দৃশ্য ভয়ে লিফটের দেয়ালের সাথে মিশে দাঁড়িয়ে গেল। পারলে সে এই দেয়াল ভেদ করে বেরিয়ে পরতো।
মাহাদ দুই পাশের দেয়ালে হাত রেখে মাঝে দৃশ্যকে বন্দি করে নিলো। ভয়ে দৃশ্যর কলিজা শুকিয়ে গেছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি যদি আগের মত হতো তবে নিশ্চয়ই দৃশ্যর এমন লাগতো না। তবে তার সামনে দাঁড়ানোর মানুষটি সম্পূর্ণ আলাদা।দৃশ্য ভয়ে ভয়ে বললো
-“প্লিজ সরে দাঁড়ান, আমি বের হব।”
মাহাদ কিছুটা রুক্ষ স্বরে জবাব দিল
-“এতদিন তো সরে দাড়িয়েছিলাম আর সেই সুযোগে কত কিছু করে বেড়াচ্ছো তা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
দৃশ্যর এবার ভীষণ মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এই মানুষটা কেনো যখন তখন তার সাথে এ ধরনের ব্যবহার করছে?কিছুটা রেগে বললো
-“কি বলতে চান আপনি?”
-“ছেলেদের সাথে অবাধে মেলামেশা করছো দেখা যায়? একবার চিন্তা করেছো সেটা তোমার জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে? মৃদুল ছেলেটা তোমাকে কোন নজরে দেখে সেটা নিশ্চয়ই তুমি বুঝতে পারছ ?এতটা অবুঝ শিশু তুমি না!”
-“আমি যা খুশি তাই করে বেড়াবো,তাতে তো আপনার ইন্টারফেয়ার করার কোন মানে নেই?”
মাহাদ দৃশ্যর ঘাড়ে হাত রেখে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।আর অন্য হাত দিয়ে দৃশ্যর মুখ চেপে ধরলো। দৃশ্য মনে হচ্ছে তার মুখটা বুঝি চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। মাহাদ রাগী গলায় বললো
-“মানে আছে নাকি নেই সেটা তোমাকে বোঝাতে গেলে তোমার খুব একটা ভালো লাগবে বলে মনে হয় না। কারন আমার মাথা চটে গেলে একদম মেরে ফেলবো তোকে।”
দৃশ্যর দু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। এতটা রুঢ় ব্যবহার কেন করছে তার সাথে? কি দোষ তার?
মুহূর্তেই মাহাদ দৃশ্যকে ছেড়ে লিফট থেকে বেরিয়ে গেল। আর দৃশ্য সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।
রাতে মাহাত বাড়ি ফিরতে দেখতে পেল বাড়ির পরিবেশটা জনসমাগমে ভরপুর। ভিতরে ঢুকেই লিভিং রুমে দেখতে পেল তার দুই মামা ও মামিকে দাদির সাথে বসে থাকতে। পাশের সোফায় বসে আছে দুই মামাতো বোন ও এক মামাতো ভাই।আরমান,আমরিন দুইজন বড় মামার ছেলে মেয়ে।আর আরফা ছোট মামার মেয়ে।
আরমান ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ছে। আমরিন এবার মাস্টার্স করছে। আরফা অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের।
মাহাদ কে দেখে আমরিন দৌড়ে আসলো পাশে। হাসিমাখা মুখে বললো
-“মাহাদ ভাইয়া ভালো আছেন?”
-“এইতো ভালো তুই কেমন আছিস?”
-“এইতো আছি ।অনেকদিন পর আপনাকে দেখলাম। এ বাসায় আসলে ও আপনার দেখা পাই না।”
-“আমি ব্যস্ত থাকি তাই দেখতে পাস না।”
মামা মামীদের সালাম জানিয়ে আরমান কে বললো
-“কি খবর আরমান ইঞ্জিনিয়ারিং কেমন চলছে?”
-“জি ভাই ভালো চলছে।ইন্ডিয়া থেকে কবে আসলে?”
-“গতকাল রাতে এসেছি। আর আফরা কেমন আছিস পিচ্চি?”
-“জ্বী ভাইয়া ভালো আছি।”
-“আচ্ছা তোরা থাক আমি ভিষণ টায়ার্ড একটু ফ্রেশ হব।”
মাহাদ উপরে চলে যেতেই আমরিন একদৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইল। কতটা পরিবর্তন এসে গেছে মাহাদের মাঝে। আগে তাদের দেখলে কত উচ্ছ্বসিত হয়ে গল্পের আসর জমিয়ে দিত। কিন্তু এখন সামান্য কুশলাদি বিনিময়ে ও তার অনিচ্ছা। মানুষটি কি বোঝেনা সে কেন বারবার ছুটে আসে এই বাসায়? সেই মেয়েটা কি তার জীবনের সব হয়ে গেল? সেই মেয়ের জন্য মাহাদ জীবন থেকে কত বড় মূল্যবান জিনিস হারিয়েছে সেটা কি ভুলে গেল?
প্রায় ঘন্টাখানেক একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে। মাথাটা ঠান্ডা করা জরুরি ছিল। এমনিতেই সে তার নিজের রাগটা আজকাল কন্ট্রোল করতে পারে না। যেখানে সেখানে ক্যাচাল লেগে যায়। তবে আমরিন কে দেখে তার মেজাজ এখন কিছুটা খারাপ হচ্ছে। এই মেয়েটা বারবার কেন বেহায়ার মত ছুটে আসে তার কাছে?তাকে দেওয়ার মতো তো কিছু নেই।তার জীবনের সবকিছু তো সেই দৃশ্য নামক মানুষটি অদৃশ্য করে দিয়েছে।
আজকাল দৃশ্য তাকে দেখলে ভয় পায়। অথচ সেদিন এই মেয়েটা নিজে স্বেচ্ছায় তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে প্রস্তুত ছিল। সে যদি চাইত তবে দৃশ্য এক মিনিট সময় নিত না নিজেকে তার কাছে মেলে ধরতে। মাহাদ আবার হারিয়ে যেতে লাগলো স্মৃতির পাতায়।
___________________
রাজশাহীতে যাওয়ার পর দুই দিন অব্দি দৃশ্য মাহাদের কল রিসিভ করছে না দেখে ভীষণ মেজাজ গরম হলো তার। মেসেজে বেশ কয়েকবার ধমক দেওয়ার পরে কল রিসিভ করে দৃশ্য।
-“কি সমস্যা দৃশ্য কল রিসিভ করছো না কেন?”
-”
-“কি কথা বলবেনা?”
-”
-“আমি কি কোন ভুল করেছি দৃশ্য?”
এবার দৃশ্য মৌনতা কাটিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
-“না তুমি কোন ভুল করনি। আসলে আমার ভীষণ লজ্জা লাগছিল কথা বলতে।”
মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“হ্যাঁ তখন আমার মাথা গরম করে দিয়ে এখন আবার লজ্জা পাওয়া হচ্ছে?”
-“প্লিজ এই বিষয়ে কথা না বলি?”
-“ওকে পিচ্ছি।”
________________
তমা বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফাহিম এর জন্য।এই মানুষটা তাকে খুব বেশি ইগনোর করছে। তমা যে তার জন্য একটা ব্যাকুল হয়ে থাকে সেটা এই ছেলে কোনদিন বুঝবে না? কিছুক্ষণ পর দেখতে পেলো ফাহিম এগিয়ে আসছে। তমা ফাহিমের রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে বললো
-“আচ্ছা! সারাদিন বাইরে বাইরে এত কি আপনার?”
-“সেটা জেনে তুই কি করবি? এখন কি তোকে বলে যেতে হবে?”
-“এখন না বললেও পরবর্তীতে ঠিকই বলে যেতে হবে?”
ফাহিম এক ধমক দিয়ে বললো
-“ফাইজলামি করিস আমার সাথে? সর সামনে থেকে।”
-“ফাহিম ভাই আমি ভীষণ খুশি হয়েছি আপনি ওই রকির সাথে বন্ধুত্ত্ব শেষ করেছেন বলে।”
ফাহিম ভ্রু কুঁচকে রুক্ষ গলায় বললো
-“তোর কি মনে হয় আমি তোর জন্য ওর সাথে বন্ধুত্ব বাদ দিয়েছি?”
-“মনে হবে কেন? আমি হান্ডেট পার্সেন্ট সিওর আপনি আমার জন্যই তার সাথে বন্ধুত্ব বাদ দিয়েছেন।”
-“দেখ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোর সাথে ফালতু প্যাচাল পারতে পারবোনা।”
তমা হাসি হাসি মুখে বললো
-“তাহলে আপনার বাসায় চলুন।”
-“ওই দিনের থাপ্পর ভুলে গেছিস আরেক গালে দিবো?”
-“দিতে পারেন সমস্যা নেই আমি মাত্র ফেসওয়াস দিয়ে গাল পরিষ্কার করে এসেছি।”
ফাহিম বিরক্ত হয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে চলে গেল। এই মেয়েটা দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে।
তার কয়েকদিন পর তমা হঠাৎ দৃশ্যদের বাসায় আসে। দৃশ্য তমাকে দেখে ভীষণ খুশি হয়ে তার গলা জড়িয়ে বললো
-“ইসস! তমা আপু কতদিন পরে আমাদের বাসায় আসলে? আমিতো ভেবেছি একেবারে আমার ভাবি হয়েই আসার পরিকল্পনা করে রেখেছো।”
তমা মুচকি হেসে বললো
-“তোর গুন্ডা বদমাইশ ভাই সেটা বুঝলে তো? আমাকে দেখলেই যেন তোর ভাইয়ের চুলকানি শুরু হয়ে যায় খালি দূরে দূরে ভাগে।”
-“কোন সমস্যা নেই তুমি চুলকানি সারিয়ে দিলেই পারো?”
-“সেই চেষ্টাই তো কত বছর ধরে করছি ননদিনী। যাইহোক এখন আসল কথা বল।”
দৃশ্য কপাল কুঁচকে বললো
-“কোন আসল কথা?”
-“ঢং করিস না? ঐদিন দেখলাম একটা ছেলের বাইকে তোকে? ছেলেটাকে?”
দৃশ্য এবার কিছুটা আমতা আমতা করতে লাগলো আর বললো
-“আপু আসলে?”
-“আসলে নকলে পরে বল এখন ঝটপট বলে ফেলো। তুই ওই ছেলের সাথে রিলেশনশিপে আছিস তাই না?”
দৃশ্য মাথা নেড়ে হ্যা জানালো। তমা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো
-“ছেলেটাকে? কোথায় থাকে? নাম কি?”
-“ধীরে বলো তমা আপু। বাসার কেউ জানলে আমার খবর নিয়ে ছাড়বে। সময় হলে সব জানতে পারবে।”
এভাবেই সময় কেটে যেতে লাগলো আর দেখতে দেখতে এসএসসি পরীক্ষা সামনে চলে আসলো। মাহাদ ও নিজের লেখাপড়া গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তবুও সময় করে সে প্রায়ই দৃশ্যর সাথে দেখা করতে রাজশাহী চলে আসে। পিচ্ছিটাকে বেশি দিন না দেখে কিছুতেই থাকতে পারে না।একদিন দৃশ্য রাত বারোটায় মৌকে কল করলো।
-“হ্যাঁ দৃশ্য বল।”
-“খবরদার আমার সাথে কোন কথা বলবি না।”
-“আমি কি করলাম?”
-“তুই জয় ভাইয়ের সাথে প্রেম করছিস অথচ আমাকে জানালিনা?”
-“আসলে উনি অনেক দিন ধরেই আমাকে প্রপোজ করেছিলেন। আমি তো এতদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারিনি। গতকালকে আমি উনার প্রপোজ একসেপ্ট করেছি কালকে স্কুলে এসে আমি সত্যি সত্যি বলতাম।”
-“তুই যে কতো বলতি তা আমার জানা হয়ে গেছে?মাহাদ না বললে তো আমি জানতেই পারতাম না।”
-“আচ্ছা বোন মাফ কর যা কালকে তোরে ট্রিট দিমু।”
-“আমার আলাদা ভাবে দুই বক্স আইসক্রিম চাই।”
-“তুই কত আইসক্রিম খাস বলতো। মাহাদ ভাই প্রতিবার এত্তো আইসক্রিম খাওয়ায় তবুও তোর আইসক্রিম খাওয়ার স্বাদ মিটে না।”
-“না মিটে না।”
______________
আজ দৃশ্য মনটা ভীষণ ভালো। জয় ভাইয়া আজ তাদের ট্রিট দিয়েছে। আজ বেশ কয়দিন পর মাহাদের সাথে দেখা হয়েছে তার। বাইকে করে বেশ অনেকক্ষণ ঘুরেফিরে বেরিয়েছে তারা। দিন টা ভীষণ স্পেশাল ছিল।কিছুক্ষণ আগে মাহাদ তার বাসার সামনে এসে তাকে দেখে গেছে।আজ আবার ঢাকায় ফিরতে হবে তাকে।
রাতে ফাহিম বাসায় ফিরলে দৃশ্য দেখলো তার ভাইয়ের মেজাজ খুব বেশি গরম। তাই দৃশ্য বললো
-“কি হয়েছে ভাইয়া তোমার মাথা আজ অনেক বেশি হট মনে হচ্ছে।”
-“কথা বলিস না তো দৃশ্য মন মেজাজ বিগড়ে আছে।”
-“সেটা তো তোমার সারা বছরই থাকে। তবে আজ কেন মেজাজ গরম সেটা তো বলবে?”
-“ওই বেয়াদব তা আমাদের বাসার গলিতে কি করে সেটাই তো বুঝলাম না?”
-“কার কথা বলছো ভাইয়া?”
-“আরে আমাদের পাশে এলাকার একটা ছেলে ছিল যার সাথে আমার ক্লাস টেনে থাকতে ভীষণ মারামারি হয়েছিল।”
-“ওই ছেলেটার কথা বলছ যে তোমাকে মেরে হসপিটালে পাঠিয়ে ছিল? তোমাকে তো পুরো তিন দিনের জন্য হসপিটালে শুয়ে দিয়েছিল।”
দৃশ্যর কথায় ফাহিম রক্তচোখে দৃশ্যর দিকে তাকালো। এক ধমক দিয়ে বললো
-“ফাজলামি করিস আমার সাথে?”
দৃশ্য মুচকি হেসে বললো
-“ফাজলামি কেনো করব? তবে বলতে হবে ওই বার প্রথম তুমি কারো কাছ থেকে মার খেয়ে এসে ছিলে।”
-“একদম মাথা গরম করবিনা। আর ওই ফাজিল মাহাদ আমাদের গলিতে কি করে সেটা জানতে হবে।”
মাহাদ নামটা শুনে দৃশ্যর বুকটা ধ্বক করে উঠলো। ফাহিম ভাইয়া কোন মাহাদের কথা বলছে?দৃশ্যর ভীষণ ভয় হতে শুরু করলো।দৃশ্য কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করল
-“ভাইয়া কোন মাহাদ?”
-“আরে আমাদের এক্স মেয়র আমজাদ রহমান ওনার বড় ছেলে। বেয়াদব একটা। আরেকবার যদি আমার এলাকায় দেখি তাহলে পিটিয়ে ওর পিঠের ছাল তুলে ফেলবো।”
এতক্ষণে দৃশ্য হাতটা রীতিমতো কাঁদতে শুরু করলো। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হচ্ছে। তারমানে মাহাদ সেই ছেলে যার সাথে ভাইয়ার অনেক আগে থেকেই দ্বন্দ্ব। সবকিছু তার কাছে যতটা সহজ মনে হচ্ছিল এখন সবকিছু ঠিক ততটাই জটিল মনে হচ্ছে। এর জন্যই কি মাহাদ ভাইয়ার কথা শুনে এমন করেছিলো? মাহাদ সবকিছু জেনেও তাকে কেন এ বিষয়ে কিছু বলল না? মুহূর্তে সবকিছু ভীষণ বিষাদ লাগলো তার কাছে। ভবিষ্যতে ঠিক কত বড় ঝড় তার জন্য অপেক্ষা করছে সেটা দৃশ্য উপলব্ধি করতে পারছে।