#তোমার_আমার_প্রণয়,part_36
#israt_jahan_arina
ভীষণ ভয় ও শঙ্কা নিয়ে সে রাতে ঘুমোতে পারলোনা দৃশ্য। মাথায় হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। তার কারণে আবার মাকে কষ্ট পেতে হবে না তো? তবে মাহাদের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা আছে। এই মানুষটা ঠিক সব সামলে নেবে।
প্রায় অনেক রাত করে বাসায় ফিরলো মাহাদ।বন্ধুদের সাথে সব ঠিক করে বাসায় ফিরেছে সে।চিন্তা যে তার হচ্ছে না তেমনটা না।বাসায় ফিরেই সে তার চাচুর রুমে গেলো।এই মানুষটাকে না জানিয়ে সে কিছুই করতে চায়না।রুমে ঢুকেই দেখলো দেয়ালে টাঙ্গানো একটা ফটোফ্রেম দিকে তাকিয়ে আছে আরিফ। মাহাদ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। দেয়ালে টানানো ছবির মানুষটি হয়তো তার চাচি হত। আচ্ছা ভালোবাসলেই কষ্ট পেতেই হবে এটাই কি ভালোবাসার ধর্ম?তাহলে তারা কেন কষ্ট পাচ্ছে? ভালোবাসায় সুখ অনুভুতি টা যেমন তীব্র হয় ঠিক কষ্টের অনুভূতি টাও তেমনই তীব্র হয়।
-“আসবো চাচু?”
আরিফ পিছনে ঘুরে মুচকি হেসে বলল
-“আরে মাহাদ আস ভেতরে।”
মাহাদ রুমে এসে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো। আরিফ তার পাশে বসে বলল
-“এত রাত অব্দি বাসার বাইরে কেন থাকিস? ভাবি চিন্তা করছিল তোর জন্য।”
-“চাচু আজ সকাল থেকে সেই মানুষটার কবরের পাশে ছিলে তুমি তাই না? আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী তাইতো?”
আরিফ মুচকি হেসে বলল
-“বা বা! সব খবরই রাখিস দেখা যায়।”
মাহাদ কিছুই বললো না।কিছুক্ষণ গম্ভীর থেকে বললো
-“চাচু আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি। সেটাতে তোমার ফুল সাপোর্ট চাচ্ছি।”
-“তোর সব ডিসিশনে আমি ফুল সাপোর্ট করি।”
-“চাচু কাল আমরা বিয়ে করছি।”
কথা শুনে আরিফ কিছুটা চমকে গেল। বাঁকা হেসে বললো
-“ওই বাচ্চাটা কি তোকে সামলাতে পারবে?যা পাগল তুই।শেষে বাসর ঘর থেকে সোজা হসপিটালে না যেতে হয়।”
-“ওফ চাচু!ফাজলামি করো নাতো? যতটা বাচ্চা তুমি ওকে মনে করো অতটা বাচ্চা না। ওই বাচ্চাটাই বরং আমার ওপর বেশ কয়েকবার চড়াও হয়ে গেছিল। আমি না সামলালে তো রফাদফা হয়ে যেতো। এতদিনে দাদু হয়ে যেতে।”
আরিফ কিছুক্ষণ মন খুলে হাসলেন।তারপর গম্ভীর হয়ে বললো
-“হঠাৎ এত সিরিয়াস ডিসিশন কেন নিচ্ছিস? দৃশ্য এখনো অনেক ছোট কিছুটা সময় নিতি।”
-“আমি আর সময় নিতে চাইনা।ওই বাড়িতে দৃশ্য কষ্টে আছে।আমার পাখিটার গায়ে হাত তুলছে বার বার। ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে সে।আর সেই কষ্টের কারণ আমি।”
-“আমি তোর সাথে আছি, তবে এক শর্তে।”
-“কি?”
এবার আরিফ মুচকি হেসে বললো
-“এক বছরের মাথায় সুখবর চাই।দেখ আমি কয়েক দিন পর চলে যাবো।নেক্সট আসবো তোর বাচ্চা দেখতে।”
মাহাদ চাচুর বিছানায় শুয়ে পড়লো।আর বললো
-“তাহলে চার পাঁচ বছরে আর তোমার দেশে আসা হচ্ছে না।”
-“কেনো?”
-“আমার বউ নিজেই বাচ্চা। বাচ্চা নিলে আমাকেই পালতে হবে।দুই বাচ্চা নিয়ে আমার সিঙ্গার হওয়া লাগবে না।”
আরিফ হো হো করে হেসে উঠলো।তারপর বললো
-“ভাইয়াকে জানাবি না।”
-“না।বিয়ের পর জানাবো।”
পরদিন সকাল থেকেই দৃশ্যর বুকটা ধুক ধুক করছে।নাস্তার টেবিলে আসতেই দেখতে পেলো ফাহিম নাস্তা করছে।দৃশ্য কিছু না বলে টেবিলে বসে পড়লো।ফাহিম আর চোখে দেখলো দৃশ্যকে।দুইদিন আগে বাসায় এসেছে সে।বাহিরে ঘুরে তার মাথা ঠাণ্ডা হলেও মন কিছুতেই সস্তি পায়নি।
সেদিন বাসায় আসার পর থেকেই তার মনে কিছুটা খটকা লাগে মায়ের মলিন মুখ দেখে। হাতে ব্যান্ডেজ দেখে অস্থির হয়ে গেছিলো।মায়ের প্রতি এক অন্য রকম টান ফাহিমের।মায়ের শুকনো মুখ আর হাতের ক্ষত দেখে বুকের ভেতর যন্ত্রণা হচ্ছিলো।মাকে জিজ্ঞাসা করতেই বললো ভুলে হাত থেকে গ্লাস পড়ে গেছিলো। তা তুলতে গিয়ে হাত কেটেছে।কিন্তু তার কথাটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। দৃশ্যর মলিন মুখ দেখে তার সন্দেহটা যেন আরো বেড়ে গেল। তার অনুপস্থিতিতে বাসায় কিছু একটা হয়েছে বলে তার সন্দেহ হচ্ছে।তারা নিশ্চয়ই কিছু লুকাচ্ছে। সেতো আর জানেনা তার মা আর বোনের উপর কতটা ঝড় বয়ে গেছে।সেদিন দৃশ্যকে কয়েকটা থাপ্পর মেরে নিজেই কষ্ট পেয়েছে।কতো রাত ঘুমাতে পারেনি।সেখানে সেই অমানুবিক অত্যাচার এর কথা জানলে কতটা কষ্ট পেত?
এই দুইদিনে ফাহিম দৃশ্যর সাথে কোন কথা বলেনি।তবে আর এই দূরত্ব সে মানতে পারছে না।ছোট্ট বোনটার মলিন মুখটা সহ্য করতে পারছে না।তাই আজ বিকেলে বোনকে একটু সারপ্রাইজ দিবে বলে ভেবেছে।বিকেলে বোনকে এক কাটুন আইসক্রিম গিফট করলেই তার ছোট্ট বোনটা খুশিতে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে।কতদিন বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে না।
দৃশ্যর গলা দিয়ে খাবার নামছে না।আজ যা করতে যাচ্ছে তার পর সবার রিয়েকশন কি হবে সেটা তার জানা নেই।তবে ভালো কিছু হবেনা সেটা সে নিশ্চিত।হয়তো আজই এই বাসায় তার শেষ দিন হতে পারে।দৃশ্য কোনো মতে পানি দিয়ে খাবার গিলছে।ফাহিম বিষয়টা খেয়াল করছে।তবে কিছুই বললো না।
দৃশ্য কলেজে যাবার আগে মাকে জড়িয়ে ধরলো।এই বাড়িতে যদি কেউ তার মনের অবস্থা বুঝতে পারে সেটা একমাত্র এই মানুষটাই।
দৃশ্য কলেজের কাছে আসতেই দেখতে পেলো মাহাদ দাড়িয়ে আছে।পরনে তার ছাই রঙের পাঞ্জাবি।দৃশ্য আরো একবার মানুষটাকে দেখে হার্টবিট মিস করলো।এতো হ্যান্ডসাম ছেলেটা আজ তার বর হবে।এই মানুষটা একান্ত তার হবে।যাকে যখন খুশি স্পর্শ করা যাবে। দৃশ্যকে দেখেই মুচকি হেসে তার দিকে এগিয়ে আসলো মাহাদ।নাবিলা দৃশ্যকে ফিসফিসিয়ে বললো
-“ওই মাহাদ ভাই তো জামাই সাইজা আসছে।আর তুই কিনা এই কলেজ ড্রেসে বিয়ে করবি? ফিউচারে বাচ্চা কাচ্চাকে এই পিক কেমনে দেখাবি?”
দৃশ্য বিরক্ত হয়ে তাকালো।এই সব বিষয় তার মাথায় একদম নেই।সে ভীষণ ভয়ে আছে।তার বাবা আর ভাই কোন ঝড় তুলে এক মাত্র আল্লাহই জানে।মাহাদ দৃশ্যর সামনে এসে হাত ধরে নাবিলাকে বললো
-“চলো শালীকা।তোমাকে পার্মানেন্ট শালীকা বানাবো।”
নাবিলা মুচকি হাসলো। মাহাদ গাড়িতে এনে দৃশ্যকে বসতে বললো।দৃশ্য গাড়িতে উঠে দেখলো মাহাদের বন্ধুরা সবাই বসে আছে।দৃশ্যকে দেখেই লম্বা একটা সালাম দিলো।জয় মুচকি হেসে বললো
-“ভাবী আপনার অনুভূতি কেমন?”
-“জানিনা ভাইয়া।অদ্ভুত লাগছে।”
-“আরে ব্যাপার না।কোনো পেরা নাই।বিয়ে তো একবারই করবেন।সো জাস্ট চিল।”
তানিম খোঁচা মেরে বললো
-“ওই মাহাদ ভাবির আঠারো প্লাস হয়েছে তো?আবার কেস খাবো নাতো?”
রাফসান হেসে বললো
-“আরে না হইলেও ব্যাপার না।আঠারো প্লাস কাজ কর্ম করলেই আঠারো প্লাস ও হয়ে যাবে।”
দৃশ্য ভীষণ লজ্জা পেলো।নাবিলা মনে মনে কয়েকটা গালি দিলো।ফাজিল পোলার দল।কয়েক মিনিট পর মৌ আর সায়মা দৌড়ে আসলো গাড়ির কাছে।মৌ এসেই বললো
-“দোস্ত এইটা কি সত্যি?আজ তোর বিয়ে?”
সায়মা বললো
-“ওই বান্দর আমাদের বললি না কেনো?”
মাহাদ হেসে বললো
-“কুল শালীকারা।বিয়ের প্ল্যান হঠাৎ করেই হয়েছে।তাই জানোনা।”
জয় মৌ এর কানে ফিসফিসিয়ে বললো
-“দেখলে জান ওরা বিয়ে করতেছে।চলো আমরাও শুভ কাজ সেরে ফেলি।”
মৌ চোখ গরম করে বললো
-“ফালতু লোক একটা।”
তারা দুই গাড়ি করে বেরিয়ে গেলো।তারা শহরের অনেকটা দূরের এক কাজী অফিসে যাবে।এলাকায় থেকে কোনো রিস্ক নিতে চাইছে না।দৃশ্যর পাশে বসে মাহাদ তার হাত দৃশ্যর আঙ্গুলের ভাজে মিলিয়ে দিলো।দৃশ্য ভেজা চোখে তার দিকে তাকালো। মাহাদ দৃশ্যর গালে হাত রেখে বললো
-“ভয় হচ্ছে পিচ্ছি?”
দৃশ্য মাথা নেড়ে হে বললো। মাহাদ কপালে চুমু একে বললো
-“ভয় নেই পাখি।আমি আছি তো।”
দৃশ্য আনমনে বাইরে তাকিয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর একটা জায়গাতে গাড়ি থামলো।দৃশ্য দেখলো এটা একটা পার্লার।দৃশ্য অবাক চোখে মাহাদের দিকে তাকালো। মাহাদ দৃশ্যর হাতে কয়েকটা ব্যাগ দিয়ে বললো
-“আমার পিচ্ছিটাকে বউ সাজে দেখার অনেক ইচ্ছা ছিলো।বিয়ে যে ভাবেই হোক,বউ তো সাজতেই হবে।সবার বউ হয় লাল টুকটুকে।আর আমার বউ হবে পিংকি। আমার পিচ্চির সব সপ্ন পূরণ করতে না পারলেও কিছুতো চেষ্টা করতেই পারি তাই না?”
তারা পার্লারে চলে গেলো।জয় মৌকে বললো
-“জান তুমিও বউ সেজে এসো।সেখানে যাওয়ার পর যদি তোমারও বিয়ে করতে মন চায়।”
মৌ রেগে জয়ের গালে একটা থাপ্পর দিয়ে ভিতরে চলে গেলো।জয় গালে হাত বুলাতে লাগলো।রাফসান আর তানিম হাসিতে ফেটে পরলো।জয় তাদের ধমক দিলো। মাহাদকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“মামা তুই আমাদের ভাবিকে ম্যানেজ কেমনে করিস?আমারটা তো পুরাই আগুন।”
মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“বউ আমার ভয়ে আছে।নাহলে এইটাও এটম বোম।যখন তখন ফেটে পরে।আমরা ছেলেরা সব নিরীহ প্রাণী বুঝলি?”
তানিম হেসে বললো
-“এই নিব্বা নিব্বি গুলো বিয়ে করে ফেলতেছে। আর আমি এখনো সিঙ্গেল মরতেছি।”
মাহাদ তানিমের মাথায় চাপর মেরে বললো
-“ওই শালা আমি নিব্বা?”
রাফসান হেসে বললো
-“আরে দুই দিন পর আমাদের মাহাদের বাচ্চা কাচ্চা চাচ্চু বলে ডাকবে।আর তুই নিব্বা বলিস?”
জয় এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বললো
-“আমরা ঠিক করছি তো?দুই পরিবারের ঝামেলা আরো বাড়বে নাতো?দৃশ্য পরিবার নিয়ে ভরসা পাচ্ছি না।কেমন রিয়্যাক্ট করে কে জানে?”
তানিম বললো
-“আরে এতো চিন্তা করিস না।একবার বিয়ে হয়ে গেলে কেউ কিছু করতে পারবে না।”
মাহাদ চিন্তিত হয়ে বসে রইলো।কি ভাবে সব ম্যানেজ করবে আল্লাহ্ জানে।কিছুক্ষণ পর দৃশ্যরা বেরিয়ে আসলো।দৃশ্যকে দেখেই মাহাদ দাড়িয়ে গেলো।বেবি পিংক শাড়িতে তার পিচ্চিকে অপূর্ব লাগছে। মাহাদের বুকে ডিপ ডিপ শব্দ হচ্ছে।এই মেয়ে তাকে নির্ঘাত পাগল করে ছাড়বে।বউ সাজে তার পিচ্ছটাকে আজ বড়ো লাগছে।যেনো পূর্ণ নারী।এই মেয়েটা চোখের পলক ফেলেও ওকে ঘায়ের করতে পারে।আর এই সাজে তো তাকে পাগল করে ফেলেছে।দৃশ্য মাথার ওড়নাটা ঠিক করতে করতে আসছে।কপালে কিছু চুল বার বার অবাধ্য হয়ে উড়ে আসছে।দৃশ্য সেটা সামলাতে বেস্ত।ওপর দিকে কেউ তার রূপে পাগল প্রায় কে বুঝাবে তাকে।
মৌ কাছে আসতেই জয় বললো
-“জান আমারও বিয়ে করতে মন চাইছে। পরী সেজে ঘুর ঘুর করলে আমি তো পাগল হবই।”
মৌ এবার লজ্জা পেলো।দুই দিন ধরে যে ঝগড়া চলছে সে সব ভুলে গেলো।আজ তার ফ্রেন্ডের বিয়ে।তাই সব মাফ।
দৃশ্য মাহাদের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।ছেলেটা এমন বেহায়ার মতো কেনো তাকিয়ে আছে?দৃশ্য কাছে আসতেই মাহাদ বললো
-“মাশাআল্লাহ।”
দৃশ্য লজ্জা পাচ্ছে।ভীষণ লজ্জা।কেমন সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে।এতো দিনে সব কষ্ট যেনো হারিয়ে যাচ্ছে।সামনের মানুষ টা পাশে থাকলে সব কষ্টকেই হজম করে নিতে পারবে। মাহাদ দৃশ্যর কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো
-“বিয়ের আগেই দম আটকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছো?কোনো কাজ হবে না।পিংক শাড়ি কেনো দিয়েছি মনে আছে তো?”
দৃশ্যর পুরো শরীর কেপে উঠলো। শির ধরা বেয়ে বিদ্যুৎ বয়ে গেলো।মনে পড়ে গেলো মাহাদের সেই কথাটা।সে বলেছিল তাদের ফার্স্ট নাইটে পিংক শাড়ি পরতে।সেদিন দৃশ্য ফার্স্ট নাইট না বুজলে আজ কিছুটা বুঝে। মানুষ টা তাকে লজ্জা কেনো দিচ্ছে?
মাহাদ দৃশ্যর হাত ধরে গাড়িতে বসালো।নিজেও পাশে বসে পড়লো। মাহাদ তখনও দৃশ্য কেই দেখে যাচ্ছে।
রাফসান খোঁচা মেরে বললো
-“আরে ভাই একটু চোখ ফেরা।নজর লেগে যাবে।একটু পর তো পার্মানেন্ট লাইসেন্স প্রাপ্ত পেয়ে যাবি।তখন মন ভরে দেখিস।”
মাহাদ বিরক্ত হয়ে বললো
-“আমার বউ আমি দেখি তাতে তর কি?”
-“কিছু না।দেখ বেশি করে দেখ।”
বাকি সবাই হেসে দিলো।দৃশ্য নিচু সরে বললো
-“এই ভাবে বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছো কেন?সবাই কি ভাবছে?”
-“আমার জিনিস আমি দেখি।তাতে ওদের কি?”
দৃশ্য একটু রেগে বললো
-“আমি জিনিস?”
-“হুম।আমার ব্যাক্তিগত জিনিস।”
দৃশ্য আর কিছুই বললো না।এই ছেলে নাহলে ভয়ংকর কথা শুরু করবে।আধা ঘন্টার মধ্যে কাজী অফিসে পৌঁছে গেলো।সেখানে পৌঁছে দৃশ্যর অস্থিরতা বাড়তে লাগলো।বার বার মা আর ভাইকে মনে পড়ছে।আজ এই দিনে সে মানুষ গুলোকে পাশে চেয়ে ছিলো।কিন্তু সেটা সম্ভব হলো না। মাহাদ দৃশ্যর হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো।সেখানে আরিফকে দেখে দৃশ্য অবাক হলো। মাহাদ আরিফের উদ্দেশ্যে বললো
-“চাচু সব রেডি তো?”
-“হুম রেডি।”
আরিফ দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।আর বললো
-“এইযে আম্মু এই পাগলটা তোমাকে তুলে আনিনি তো?”
দৃশ্য মাথা নেড়ে না জানালো।আরিফ মিষ্টি হেসে দৃশ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
-“ভীষণ মিষ্টি লাগছে তোমাকে।একদম আমার দিশার মত।”
দৃশ্য ভেজা চোখে তাকালো।এই মানুষটা তার ফুপুকে আজও পাগলের মতো ভালোবাসে।
ফাহিম ক্লাবে বসে রিজভীর সাথে কেরাম খেলছে।ঠিক এমন সময় রকি আসলো সেখানে।ফাহিমকে দেখে বাঁকা হেসে বললো
-“কীরে তুই এইখানে বসে খেলতেছি?ওই দিকে মাহাদ ও তোর বোনের সাথে টি টুয়েন্টি খেলতেছে।”
ফাহিম রেগে রকির কলার ধরে বললো
-“ওই দিনের মাইর খেয়েও তোর শিক্ষা হয়নি?আবার আমার বোনের সম্পর্কে বাজে কথা বলিস?”
রকি হেসে বললো
-“আমাকে ধমকে লাভ কি? একটু আগে দেখলাম তোর বোনকে কলেজের সামনে থেকে গাড়িতে করে নিয়ে গেলো।নিশ্চয়ই কোনো হোটেলে গেছে। মাহাদ এতো জলদি তোর বোনকে ছেড়ে দিবে?কয়েকবার বিছানা গরম না করে ছাড়বে নাকি?”
ফাহিম আক্রোশে ফেটে পরলো।রকির মুখ বরাবর কয়েকটা ঘুসি বসিয়ে দিলো।আর রেগে বললো
-“তোকে ওই দিন জিন্দা ছেড়ে ভুল করছি।আজ তোকে মেরেই ফেলবো কুত্তার বাচ্চা।”
পাস থেকে একটা রড নিয়ে রকিকে মারতে লাগলো।রিজভী কোনো মতেই ফাহিমকে থামাতে পারছে না।তার ভয় হচ্ছে।রাগের মাথায় কোনো অঘটন না ঘটিয়ে ফেলে।রকির শরীর থেকে রক্ত বেরুতে লাগলো।রিজভী অনেক কষ্টে ফাহিমকে দূরে সরিয়ে বললো
-“শান্ত হো ফাহিম।যাচাই না করে হাইপার হস না। চল দৃশ্যর কলেজে।তাহলেই বোঝা যাবে।”
ফাহিম রেগে রকিকে বললো
-“তোর কথা যদি মিথ্যে হয় তবে আজই তোর জীবনের শেষ দিন।”
ফাহিম দৃশ্যর কলেজে যেয়ে জানতে পারলো দৃশ্য কলেজে আসে নি।এমনকি নাবিলা আর দৃশ্যর বাকি দুই ফ্রেন্ড কেউ নেই কলেজে। এবার ফাহিমের মাথা নষ্ট হবার পালা।রাগে তার কপালের রগ ফুলে উঠেছে।আজ ওই মাহাদকে সে শেষ করে ছাড়বে।তার বোনকে নিয়ে খেলছে?ফাহিমের এমন উন্মাদ অবস্থা দেখে রিজভী আশরাফ হুসাইনকে কল করে সব জানালো।সে ভাবলো তিনি বিজ্ঞ লোক।ঠিক পরিস্থিতি সামলে নিবে।ফাহিম আর রিজভী ও আরো কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে আসে পাশে দৃশ্য আর মাহাদ কে খুঁজতে লাগলো।
অন্য দিকে আশরাফ হুসাইন এইসব জেনে রাগে ফেটে পড়লেন।দৃশ্যর উপর তার রাগ আরো বেড়ে গেলো।এই মেয়েটা তার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে ছাড়বে।সে দিনের মার কাজে দেয়নি।আজ এই মেয়েকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবে।
আখি রহমানের মনটা কেমন অস্থির হয়ে আছে।তার অস্থিরতা দেখে আমজাদ রহমান বললেন
-“কি হলো এমন অস্থির লাগছে কেনো?”
-“জানি না।মনটা কেমন কু ডাকছে।”
-“আরে মাহাদকে নিয়ে চিন্তা করছো তাই এমন হচ্ছে।”
-“ছেলেটার মুখের দিকে তাকানো যায়না।আমার হাসি খুশি ছেলেটা কেমন মন মরা হয়ে গেছে।”
-“ঠিক বলেছো।কিন্তু কি করবো বলো।আশরাফের মতো মানুষ কে বোঝানো অসম্ভব।”
কয়দিন ধরে নানান চিন্তায় আমজাদ রহমান অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।কয়েক দিন ধরে বুকে হালকা ব্যাথা করে।ছেলের চিন্তায় তিনি ঠিক মত ঘুমাতে পারে না।
হটাৎ বাইরে থেকে করো চেচামেচির শব্দ ভেসে আসছে।আমজাদ ও আখি দুজন বাহিরে বেরিয়ে আসলেন।দেখলেন আশরাফ আর তার বড়ো ভাই সহ আরো মানুষ তার বাসার সামনে দাড়িয়ে।তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন আশরাফকে দেখে।তিনি এগিয়ে আসতেই আশরাফ রেগে বললো
-“আমার মেয়ে কোথায়?”
আমজাদ রহমান অবাক হলেন।শামসুন্নাহার বেগম শব্দ পেয়ে বাইরে এসে আশরাফকে দেখে রেগে গেলেন।এই মানুষটাকে তিনি একদম সহ্য করতে পারেন না।আমজাদ রহমান চিন্তিত হয়ে বললেন
-“মানে?”
দৃশ্যর বড়ো চাচা আনোয়ার হুসাইন ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন
-“নাটক করবি না আমজাদ।তোর বেয়াদব ছেলে আমাদের মেয়েকে নিয়ে এসেছে।তুই সব জেনেও নাটক করছিস?”
বাসায় আমরিন ছিলো।অনেকদিন পর সে ফুপির বাসায় এসেছে। মাহাদের মুখ মুখী হলে কষ্ট বেড়ে যায়।তাই তেমন একটা আসে না।বাসায় ঝামেলা দেখে সে তার বাবাকে কল করে সব জানালো।
আমজাদ রহমান বললেন
-“আমি কিছুই জানিনা।আর মাহাদ এমন কিছুই করতে পারে না।আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।”
ফাহিম রেগে বললো
-“আমাদের কোনো ভুল হচ্ছে না।আপনার ছেলে সকালে আমার বোনকে কলেজ থেকে তুলে নিয়ে গেছে।”
সব কিছুই তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।শামসুন্নাহার বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন
-“আমার নাতির নামে মিছা কথা কইবি না।তোগো মেয়ে কই গেছে আমরা কেমনে যানমু?”
আশরাফ হুসাইন গম্ভীর স্বরে বললেন
-“তাহলে আপনার নাতিকে ডাকেন।”
আমজাদ রহমান মাহাদের নম্বরে কল দিলেন।কিন্তু মাহাদ রিসিভ করছে না।তার চিন্তা বাড়তে লাগলো। মাহাদ কোনো ভুল কিছু করেনি তো?ছেলেকে যে তিনি খুব বিশ্বাস করেন।সে এমন ভুল কিছুতেই করতে পারে না।