#তোমার_আমার_প্রণয়,part_53
#israt_jahan_arina
স্নিগ্ধ নিয়ন আলো রেস্টুরেন্টের পরিবেশকে মনমুগ্ধকর করে তুলেছে। সাউন্ড বক্স এ ক্লাসিক গান বেজে চলছে।বর্ষা লাজুক চোখে মাহিম কে দেখে যাচ্ছে।এই ভাবে কখনোই তাদের ডেটে আসা হয়নি।সব সময় বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নিয়েই দেখা করে।তাছাড়া ভার্সিটিতে তো দেখা হয়,আড্ডা হয়।কিন্তু আজ মাহিম তাকে এমন ফরমাল ডেটে কেনো আনলো?মাহিম অনেকক্ষণ যাবত বর্ষাকে দেখে যাচ্ছে।তাইতো বর্ষা বেশ লজ্জা পাচ্ছে।
মাহিম ভেবে পায়না একটা মেয়েকে শাড়ি পড়লে এতো এট্রাক্টিভ কি করে লাগতে পারে? সারাদিন ছেলেদের মত প্যান্ট শার্ট পড়ে ঘুরে বেড়ায় মেয়েটা। বর্ষার এমন রূপ মাহিম আগে উদ্বোধন করতে পারেনি। এই মেয়েটার প্রতি সে প্রচণ্ড ভাবে দুর্বল। এখন তো মনে হচ্ছে তার বন্ধ করেই শান্তি পাবে মেয়েটা।বর্ষা বিরক্ত হয়ে বললো
-“এমন করে তাকিয়ে আছিস কেনো?চোখ কিন্তু গেলে দিবো।”
মাহিম কপাল কুঁচকে বললো
-“ডেটে এসে কেউ বয়ফ্রেন্ড কে তুই করে বলে? এর জন্যই তোকে নিয়ে কোথাও বের হইনা।”
-“তাহলে কি যাদু সোনা বলবো নাকি?”
-“বলবি সমস্যা কি?বিয়ের পর আম্মু আর দাদীর সামনে তুই করে বলা চলবে না।তাই এখন থেকেই তুমি বলার প্রেকটিস শুরু করে দে।”
-“আমি তোর বড়ো।তাই তুই আমাকে তুমি বলবি।”
-“উফফ! ডেটে এসে ঝগড়া করতে চাইনা।কি খাবি বল?”
-“ফাইভ স্টারে নিয়ে এসেছিস। আজ তোর পকেট ফাকা করেই ছাড়বো।হিহিহি!”
-“এই তোর মধ্যে কি বউ বউ ভাব জীবনে আসবেনা? কই ভবিষ্যৎ স্বামীর টাকা বাঁচাবি তা না পকেট ফাঁকা করার চিন্তায় আছিস।”
-“আমি এমনই। ওই লাজুক লতা আমি হতে পারবো না। চললে চালা না হলে টাটা বায় বায়।”
-“আচ্ছা রেগে যাচ্ছিস কেনো? যেটা মন চায় সেটাই অর্ডার কর দেখি আমার পকেট ফাঁকা করতে পারিস কিনা? আজ কিন্তু একটা স্পেশাল দিন।”
-“স্পেশাল দিন? কই আমার তো মনে পড়ছে না?”
-“আজ ভাইয়া ভাবি ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি।”
-“বলিস কি তাই নাকি? তোর দেবদাস ভাই কই আজকে?নিশ্চয়ই মদ গিলতেছে?”
-“অন্যান্য দিন তো এই দিনটাতে পাওয়াই যায়না তাকে। তবে আই থিঙ্ক এই বছর ভাইয়া ভাবির সাথে থাকবে।”
-“তাই নাকি?”
-“হুম। আই থিঙ্ক সো।”
___________________
দৃশ্য প্লেটে খাবার বাড়ছে।আর লতা দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে দৃশ্যকে পর্যবেক্ষণ করছে।দৃশ্য বেচারি এমনি লজ্জায় শেষ তার উপর লতার এই তীক্ষ্ণ নজর যেনো তাকে আরো অসস্তিতে ফেলছে।দৃশ্য খাবার নিয়ে পেছন ফিরে বললো
-“কি…কিছু বলবে আপু?”
-“তোর গায়ক সাহেবের গায়ে জ্বর কেমন?”
দৃশ্য আমতা আমতা করে বললো
-“শরীর অনেক গরম।ভাবছি কিছু খাইয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিবো।”
লতা দেখলো দৃশ্যর মুখটা মলিন হয়ে গেছে।সে গম্ভীর হয়ে বললো
-“এতো রাতে জ্বর গায়ে যাবে কি করে?উল্টা অ্যাকসিডেন্ট করে বসে থাকবে।ওই রুমেই ঘুমিয়ে পড়তে বল।আমি ঘুমাতে গেলাম।কিছু প্রয়োজন হলে ডাকিস।”
-“আচ্ছা।”
লতা চলে যেতে নিয়ে আবার ঘুরে বললো
-“তোর লাইফটা এমনি কমপ্লিকেটেড দৃশ্য।আর কোনো কম্প্লিকেশন ক্রিয়েট করিস না।আর শোন?”
দৃশ্য ফিরে তাকালো।লতা বললো
-“শুভ বিবাহবার্ষিকী পিচ্ছি।”
দৃশ্য চমকে তাকালো।লতা মুচকি হয়েছে চলে গেলো।
দৃশ্য রুমে ঢুকে দেখলো মাহাদ খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে।দৃশ্যকে দেখে সোজা হয়ে বসলো।দৃশ্য খাবার প্লেট নিয়ে মাহাদকে দিতে দিতে বললো
-“কিছু খেয়ে নাও।মেডিসিন নিতে হবে।”
মাহাদ দৃশ্যর দিকে কোমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
-“খাইয়ে দাও প্লিজ।”
দৃশ্য চোখ তুলে একবার মাহাদকে দেখে আবার মাথা নিচু করে নিলো।নিজ হাতে মাহাদকে খাইয়ে দিতে লাগলো।খাবার খেতে খেতে মাহাদ বললো
-“ভীষণ টেস্টি হয়েছে।তুমি রেধেছো?”
দৃশ্য কিছুই বললো না। মাহাদকে খাওয়াতে মনোযোগ দিলো।আজ দৃশ্যর কেনো যেনো মনে হয়েছিলো মাহাদ আসবে।এই দিনে সে প্রতিবার ভালো কিছু রান্না করে লতা আপু আর জিনিয়াকে খাওয়ায়।টুকটাক রান্না বান্না সে লতা আপুর কাছ থেকে শিখেছে।বিরিয়ানি মাহাদের ভীষণ পছন্দ তাই এটাই আগে শিখেছে।তবে কোনো দিন তাকে রান্না করে খাওয়াতে পারবে ভাবেনি।
দৃশ্য মাহাদকে খাইয়ে মেডিসিন দিলো।কপালে হাত দিয়ে দেখলো ভীষণ জ্বর।সে দ্রুত বাটিতে করে পানি এনে মাহাদকে জল পট্টি দিতে লাগলো।অনেকটা সময় পর মাহাদ নিভু নিভু চোখে দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে দেখলো দৃশ্যর চোখ ভেজা।সে দৃশর চোখ মুছে দিয়ে বললো
-“আমি ঠিক আছি পিচ্ছি।কাদেনা প্লিজ।”
দৃশ্য কিছুই বলছে না।মানুষটার এই অবস্থা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।মানুষটার শত পাগলামি সে সহ্য করে নিবে।কিন্তু অসুস্থতা মানতে পারবে না। মাহাদ দৃশ্যর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে জোরালো কন্ঠে বললো
-“পিচ্ছি একটা আবদার করবো রাখবে?”
দৃশ্য চমকে তাকালো।এমন ভাবে মায়া জড়ানো গলায় বললে সে না কি করে বলবে?সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই মাহাদ বললো
-“আমাদের বিয়ের শাড়ী তে তোমাকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছে।সেদিন মন ভরে দেখতে পারিনি।আজ দেখতে চাই।”
দৃশ্য ছল ছল চোখে তাকিয়ে রইলো।মানুষটি কি আজ তাকে দুর্বল করেই দম নিবে? মাহাদ আবার বললো
-“বউপাখি পরোনা একটু প্লিজ।”
দৃশ্য কি বলবে বুঝতে পারছে না।মানুষটা বিয়ের পর এই প্রথম কিছু আবদার করলো।সে মানা কি করে করবে?
ওয়াশরুমের মিররে নিজেকে দেখছে দৃশ্য। শাড়ীটা পরে মিররে নিজেকে দেখছে।মুখে কোনো মেকাপ নেই।বিয়ের দিন এই শাড়িতে হালকা সেজেছিল।এতো টেনশনে নিজেকে সে দিন ভালো করে দেখা হয়নি।দৃশ্য আজ চাইলেই পারতো মাহাদ কে মানা করে দিতে।কিন্তু তারও ইচ্ছে করছে মাহাদের পাগলামিতে সারা দিতে।
মাহাদ বিছানার সাইডে বসে ছিলো।হটাৎ ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ ফিরে তাকালো।মুহূর্তেই তার দৃষ্টি স্থির হয়ে গেলো।বেবি পিংক শাড়িতে এক অপ্সরী তার সামনে দাড়িয়ে আছে।কি স্নিগ্ধ সেই চেহারা। মাহাদ কয়েকবার শুকনো ঢোক গিললো।এই মেয়েটার উপস্থিতি সর্বদাই তাকে একটা ঘোরের মধ্যে রাখে।
দৃশ্য এক নজর মাহাদের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।মানুষটার তীক্ষ্ণ নজরের দিকে সে কিছুতেই তাকাতে পারবে না।এই দৃষ্টিতেই সে ভৎস হয়ে যাবে।হঠাৎ এক রাশ লজ্জা দৃশ্যর মাঝে ভর করতে লাগলো।
মাহাদ দুই হাত মেলে দৃশ্যকে কাছে ডাকলো।দৃশ্য ধীরে ধীরে মাহাদের সামনে দাড়াতেই মাহাদ তাকে জট করে কোলে বসিয়ে দিলো।দৃশ্য থথমত খেয়ে গেলো।সে মাথা নিচু করে বসে রইলো। মাহাদ দৃশ্যর চিবুকে একটা হাত রেখে তার দিকে মুখটা তুলে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো
-“মাশাআল্লাহ!-“স্নিগ্ধ সকালের সদ্য ফোটা পদ্মার মতো লাগছে আমার পিচ্চিকে।যা দেখলে চোখ,মন,প্রাণ সব জুড়িয়ে যায়।তোমাকে এই রূপে দেখে আমার অন্তরের দহন আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেলো পিচ্ছি।”
দৃশ্য কিছুটা লজ্জা পেলো তার সাথে চোখ জোড়া ভিজে উঠলো। ততক্ষণে মাহাদের একটা হাত দৃশ্যর শাড়ি গলিয়ে কোমরে চলে গেছে।দৃশ্য সাথে সাথে কেপে উঠলো। মাহাদ শান্ত দৃষ্টিতে দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো
-“তোমাকে প্রথম দেখার পর আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি একটা বাচ্চা মেয়েকে এতটা ভালোবেসে ফেলবো। যেদিন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম অদ্ভুত এক টান অনুভব করেছিলাম। তোমার ছেলে মানুষীর প্রেমে পড়ে গেছিলাম। সেকি দম বন্ধ করার অনুভূতি। তোমার প্রেমে পড়ে রাগী, জেদি, একরোখা আমি শান্ত হয়ে উঠলাম। আমার কাছে মনে হতো তোমাকে পৃথিবীর সব সুখ এনে দেই।”
মাহাদ মাথা নিচু করে নিলো।দৃশ্য এক দৃষ্টিতে দেখছে তার প্রেমে পাগল এক প্রেমিককে। মাহাদ কাপা কাপা গলায় বললো
-“একটা সময় তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় আমাকে গ্রাস করতে শুরু করলো।যেদিন প্রথম ফাহিম তোমার গায়ে হাত তুললো বিশ্বাস করো আমার..আমার বুকটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছিলো।আর নাবিলা যেদিন তোমার শরীরের আঘাত গুলো দেখলো আমি না নিজের মধ্যে ছিলাম না।মনে হয়েছে তোমাকে ওই নরক থেকে বের করে আমার বুকে এনে রাখতে হবে।কোনো আচ তোমার গায়ে লাগতে দিবো না।কিন্তু দেখো আমার জন্যই তোমাকে হাজারো কষ্ট সহ্য করতে হলো। পরিবারহীন হতে হলো।
আমি কখনোই এই ভাবে পরিবারের বিরুদ্ধে যেয়ে বিয়ে করতে চাইনি।কিন্তু তোমার আঘাত গুলো আমি মানতে পারিনি।তাই সেই সময় এটাই আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে।বিশ্বাস করো এর জন্য আমার মনে কোনো আফসোস নেই।কারণ এটা তো হওয়ারই ছিলো।তোমাকে তো আমারই বউ হতে হতো। কিন্তু আমাদের ফ্যামিলির মধ্যোকার ঝামেলার জন্য সব এলোমেলো হয়ে গেলো।”
দৃশ্যর দু চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে।সে নিজেকে শক্ত করে বসে রইল।মাহাদ হঠাৎ দৃশ্যকে ঝাপটে ধরে তার বুকে মুখ গুজে রইলো।দৃশ্য চোখ বন্ধ করে নিলো।বুক ফেটে কান্না আসছে তার।কিন্তু সে কাদবে না।তাহলে সামনের মানুষটা আরো দুর্বল হয়ে পড়বে। মাহাদ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
-“আমি ভালো নেই পিচ্ছি।একদম ভালো নেই।যেদিন থেকে তোমায় ছেড়ে এসেছি,সেদিন থেকে ভালো নেই।বাবার মৃত্যুর পর আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছিলো।তুমি তো জানো আমি বাবাকে ঠিক কতটা ভালবাসতাম?আমি কোনো ভাবে সস্তি পাচ্ছিলাম না।মায়ের দিকে তাকিয়ে আমি তোমাকে কাছে টেনে নিতে পারছিলাম না।আর না পারছিলাম তোমায় ভুলে থাকতে।কি যে অসহ্য যন্ত্রণাময় সময় যাচ্ছিল আমার।
তোমাকে ভুলে থাকার অনেক চেষ্টা করেছি। নিজেকে হাজারো ব্যস্ততার মাঝে হারিয়ে ফেলেছি। তবুও তোমাকে একটা মুহূর্তের জন্য আমি ভুলতে পারছিলাম না। কি জাদু করেছিলে তুমি? আমার মন-মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু তোমার বিচরণ। নেশার ঘোরে ডুবেও তুমি আমার কল্পনা থেকে এক মুহূর্তের জন্য হারাতে না। কত শত অভিমান অভিযোগ করতে আমার কল্পনায় এসে। আমি যখন তোমার অভিমান ভাঙাতে জড়িয়ে ধরতে যেতাম তখন হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে।
সেদিন যখন তুমি আমাকে ডিভোর্সের কথা বললে বিশ্বাস করো আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। আমার মনে হয়েছিল কেউ করে বুকে বারবার ছুরি দিয়ে আঘাত করছে। কি যে অসহ্য যন্ত্রণা হয়েছে বলে বুঝাতে পারব না।”
কথাটা বলেই মাহাদ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।দৃশ্য দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না থামালো।কিন্তু অবাধ্য অশ্রু কনা ঠিক ঝরতে লাগলো।সে মাহাদের চুল খামচে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলো।মানুষটার যন্ত্রণা সে উপলব্ধি করতে পারছে। মাহাদ ও দৃশ্যর বুকে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।দৃশ্য মাহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।কিছুক্ষণ পর মাহাদ কিছুটা শান্ত হয়ে মুখ তুলে তাকালো দৃশ্যর দিকে। মাহাদের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।দৃশ্য মাহাদের অশ্রু মুছে দিলো।
মাহাদ দু হাতে দৃশ্যর চিবুকে হাত রেখে দৃশ্যকে নিজের দিকে নিয়ে আসলো।দৃশ্যর কপালে গভীর চুমু খেলো।তারপর কপালে কপাল ঠেকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো
-“আর কোনো দিন ডিভোর্সের কথা তোমার মুখ থেকে যেন না শুনি। তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা। তুমি শুধু আমার। তুমি আমার ভালোবাসা,আমার অর্ধাঙ্গিনী, আমার লাইফলাইন সব। আমাদের মাঝের দূরত্ব মেনে নিতে পারলেও বিচ্ছেদ কিছুতেই মানতে পারব না।”
দৃশ্য তখনও চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে।মুহূর্তেই দৃশ্যর মনে হলো তার সামনে বসা মানুষটি ভীষণ ছেলে মানুষী করছে।সব পরিস্থিতি বুঝেও না বোঝার ভান করছে। মাহাদ দৃশ্যর গালে তার ওষ্ঠ জোড়া স্পর্শ করলো।দৃশ্যর অশ্রু শুষে নিয়ে বললোআর বললো
-“জানো আমার কাজের ক্ষেত্রে অনেক মেয়েদের সাথে উঠাবসা হয়েছে।কতো মডেলদের সাথে শুটিংয়ের সময়ে কাছাকাছি আসতে হয়েছে।ছোট ছোট ড্রেস পরা হাজারো রমণী আমাকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করতে চেয়েছে।কিন্তু কোনদিন কারো প্রতি কোন আকর্ষণ জন্মায় নি। তুমি বলেছিলে না কোন সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিতে। কি করে বিয়ে করতাম বলো তো? আমি ঠিক কারো প্রতি কোন আকর্ষণ বোধ করিনা।অন্য কারো সাথে শুয়া তো দূরের কথা একটা চুমুও খেতে পারবো না।সারা জীবন কি আমাকে ভার্জিন রাখতে চাও?”
দৃশ্য চট করে চোখ মেলে তাকালো। এ কেমন লাগামহীন কথা বার্তা বলছে সে? মাহাদ আবার বললো
-“একমাত্র এই মুখটা দেখলে আমার নেশা হয়।এই শরীরের প্রতিটা লোমকূপ আমাকে আকৃষ্ট করে।এই শরীরের ঘ্রাণ আমাকে নিয়ন্ত্রণহীন করে তোলে।এই যে তোমার কাধের তিলটা..”
বলেই দৃশ্যর কাধ থেকে শাড়িটা কিছুটা নামিয়ে দিলো।সেখানে একটা চুমু খেয়ে বললো
-“এই তিলটা আমাকে পাগল করে দেয়।কতবার ইচ্ছে জাগতো এই তিলটা একটু ছুঁয়ে দেখতে।কিন্তু তুমি অনেক পিচ্ছি ছিলে।তাই ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে হতো।কিন্তু এখন আর নিজেকে আটকে রাখতে ইচ্ছে করছে না।”
দৃশ্যর সারা শরীর কাপছে।এই মানুষটা আজ তাকে বেসামাল করে তুলছে।দৃশ্য লাফিয়ে মাহাদের কোল থেকে নেমে সরে দাড়ালো।তার হার্ট তীব্রগতিতে বিট করছে।যে কোনো সময়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। মাহাদ মুচকি হেসে তার ভেজা জেকেট থেকে কয়েকটা বক্স বের করলো।দৃশ্যর সামনে এসে তার হাত ধরে বিছানায় বসালো।আর একটা বক্স খুললো।দৃশ্য দেখলো একটা সাদা পাথরের নোস পিন। এটা যে ডায়মন্ড সেটা বুঝতে দেরী হলো না। মাহাদ বললো
-“এটা আমার ফার্স্ট অ্যালবামের টাকায় কিনেছিলাম।আমাদের ফার্স্ট অ্যানিভার্সারি তে।”
তারপর মাহাদ একে একে বাকি তিনটে বক্স খুললো। একজোড়া বালা,কানের ছোট দুল, আর একটা ডায়মন্ডের পেন্ডেন্ট।দৃশ্য অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।দৃশ্য বললো
-“মাহাদ আমি এসব নিতে পারবো না।”
মাহাদ বললো
-“হুস!এই গুলো আমার বউয়ের জন্য।”
বলেই সে দৃশ্যকে সব নিজ হাতে পরিয়ে দিলো। নোসপিন পাশের টেবিলে রেখে বললো
-“এটা যখন নাক ফুটো করবে তখন পড়বে।”
দৃশ্য কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। মাহাদের এমন পাগলামি কি সায় দেওয়া ঠিক হচ্ছে? মাহাদ যে জ্বরের ঘোরে এসব করছে।
মাহাদ তার প্রিয়তমাকে মন ভরে দেখছে।একদম বউ বউ লাগছে দৃশ্যকে।ডায়মন্ডের উজ্জ্বলতা তার বউয়ের রূপের কাছে ফিকে মনে হচ্ছে।দৃশ্যকে দেখে সে বেসামাল হয়ে পড়েছে। মাহাদ দৃশ্যর চিবুকে হাত রেখে দৃশ্যকে নিজের দিকে টেনে নিলো।দৃশ্যর সারা মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো।নিজের ওষ্ঠ জোড়া দৃশ্যর ওষ্ঠে মিলিয়ে দিলো।
দৃশ্য বরফের মতো জমে যাচ্ছে।তার অনুভূতিটি গুলো আজ ভীষণ এলোমেলো।
ওষ্ঠ ছেড়ে মাহাদ দৃশ্যর শাড়ী কিছুটা সরিয়ে তার উন্মুক্ত মেদহীন উদরে ছোট ছোট চুমু খেতে লাগলো।মুহূর্তেই যেনো দৃশ্যর পুরো শরীর ঝাকুনি দিকে কাপতে লাগলো।অদ্ভুত শিহরন তার প্রতিটা লোমকূপ কে জাগিয়ে তুলছে। মাহাদ বির বির করে বলতে লাগলো
-“আই নীড ইউ পিচ্ছি। আই বেডলি নীড ইউ।তোমাকে ভীষণ গভীর ভাবে চাই আমার।তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে হারিয়ে যেতে চাই।তুমি কি অনুমতি দিবে?”
দৃশ্য চোখ বন্ধ করে নিলো।তার ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।তার অনুভূতি গুলো দিশেহারা। তারও মন চাইছে ভালোবাসার অতলে হারিয়ে যেতে।স্বামীর এই আহব্বানে সে কি করে সাড়া না দিয়ে পারবে?দৃশ্য নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। মাহাদকে ঝাপটে ধরলো। মাহাদের বুকে চুমু খেলো। এতো দিনের জমানো কষ্ট গুলো সেও কিছুটা লাঘব করতে চায়।হোক না আজ কিছু ভুল।কিছু ভুল ভীষণ সুখের হয়।
(আমি আবার অত রোমান্টিক কথা বার্তা লিখতে পারিনা।নিজেরই লজ্জা লাগে।??গল্পের প্রয়োজনে আবার না লিখলেই নয়।তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।)