গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ২৯:#হিচকি,৩০
লেখিকা:#নবনী_নীলা
পর্বঃ২৯
অনেক্ষন পর টয়া ছাড়া পেলো। টয়া জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো। ইয়াদ টয়ার কানে কানে এসে বললো,” রাগ কমেছে?” টয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেল। এনার দেখছি লজ্জা বলতে কিছু নেই। এভাবে নাকি রাগ কমায়? হাতুড়ে ডাক্তার হলে যা হয় আরকি! লজ্জায় টয়া নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার থেকে একটুও দূরে সরে নি। অপলকে তাকিয়ে আছে, একটা মোহ তাকে ধরে রাখছে। টয়ার নড়াচড়া করাও বন্ধ, বুকের ভিতরটায় ভূমিকম্প হচ্ছে। ইয়াদ মুচকি হেসে টয়ার মুখের সামনে পড়ে থাকা চুল কানে গুঁজে দিয়ে বললো,” রাগ কমেছে বুঝি! না কমে থাকলে আরেকবার চেষ্টা করি রাগ কমানোর। I promise I’ll try my level best.”, ইয়াদের কথায় টয়া চোখ বড় বড় করে ইয়াদের দিকে তাকালো। কি বলছে এসব আমাকে কি মেরে ফেলবে নাকি। Level best মানে? দম বন্ধ হয়ে মরে না যাই। মাথা কি পুরো খারাপ হয়ে গেছে। টয়া একটা ঢোক গিলতেই ইয়াদ এগিয়ে আসতে নিলো সঙ্গে সঙ্গে টয়া এক হাত দিয়ে মুখ চেপে বললো,” না, একদম না।”
ইয়াদ আরেকটু জ্বালানোর জন্যে বললো,” তা রাগ কমাতে পেরেছি তাহলে।”
টয়া চোখ নামিয়ে নিয়ে হাতের ঘড়িটা শক্ত করে ধরে বসে আছে। নড়াচড়া করতে পারছে না কারণ ইয়াদ তাকিয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে ইয়াদ বললো,” দাও আমার ঘড়িটা আমায় ফেরত দেও।”
” আপনার ঘড়ি মানে?”, হাত দুটো পিছনে নিয়ে বললো টয়া।
” আমারই তো ঘড়ি। এতো বছর আমি আগলে রেখেছি। তুমি তো আগলে রাখতে পারোনি।”, গভীরতায় বললো ইয়াদ।
টয়া অপলকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ তাকে কখনো এতো ভালোবাসবে সেটা সে কল্পনা করতে পারিনি। টয়া চোখ সরিয়ে বললো,” হারিয়ে ফেলেছি তো কি হয়েছে যেটা আমার ছিলো সেটা আমারই আছে।”
” হুম, তোমারই থাকবে।”, হাত দিয়ে টয়ার গাল স্পর্শ করে বললো ইয়াদ। টয়া ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। অন্যরকম লাগছে সবটা টয়ার কাছে। ইয়াদ হাতের আঙ্গুল টয়ার ঠোঁটের কোণে ছোঁয়াতেই বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠলো সঙ্গে সঙ্গে টয়ার হেচকি উঠলো। টয়া এতক্ষন ইয়াদের চোখের মাঝে হারিয়ে গেছিলো কিন্তু হিচকি উঠায় সে নড়ে চড়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। ইয়াদও নিজের হাত সরিয়ে নিলো। টয়া আস্তে করে একটু পিছে সরে গেল। ভাগ্যিস হিচকিটা উঠেছিলো। এ যাত্রায় সে বেচেঁ গেছে। কিন্তু টয়ার হিচকি আর থামার নাম নিচ্ছে না। হিচকি দিতে দিতে টয়া ইয়াদের দিকে তাকালো ইয়াদ উঠে কিচেনের দিকে গেলো। আজব দেখেছে যে হিচকি উঠেছে আর আমাকে রেখে চলে যাচ্ছে। মায়া দয়া নেই মনে। কোথায় গেলো আবার? টয়া হিচকি দিতে দিতে উঠে দাড়ালো তারপর একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো ইয়াদ জগ থেকে গ্লাস এ পানি ঢালছে। নাহ ভুল ভেবেছি। ধুরো আমি যেটাই ভাবি সেটাই দেখি ভুল প্রমাণিত হচ্ছে আর কিছুই ভাববো না। এবার থেকে ভাবাভাবি বন্ধ। ইয়াদ পানির গ্লাস হাতে এগিয়ে এসে টয়াকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,” তুমি উঠে এসেছো কেনো?”
টয়া ইয়াদের কথা না শুনার ভান করতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে এর মাঝে আরেকটা হিচকি উঠলো। ইয়াদ কাছে এসে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,” পানি খাও ঠিক হয়ে যাবে।”
টয়া গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোক শেষ করলো। যা হয়েছে গলা তার এমনেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। টয়া গ্লাসটা এগিয়ে দিলো সাথে সাথে আবার হিচকি উঠলো। হটাৎ এমন শুরু হয়েছে কেনো? এক যন্ত্রণা কি কম ছিলো এ আবার কোন নতুন যন্ত্রণা! ইয়াদ হিচকি কিভাবে বন্ধ করা যায় ভাবছে। টয়া হিচকি দিতে দিতে সোফায় গিয়ে চুপ করে বসলো। কি অসহ্য এক জিনিস! ইয়াদ আরেক গ্লাস পানি টয়ার দিকে এগিয়ে দিলো। টয়া এই গ্লাসও শেষ করলো।
” হিচকি গেছে?”, টয়ার উত্তরের অপেক্ষায় ইয়াদ তাকিয়ে আছে। টয়া বোঝার চেষ্টা করছে হিচকি আছে না গেছে। এখণ তো আসছে না তার মানে নিশ্চই চলে গেছে টয়া না বলতে যাবে এমন সময়ে আবার হিচকি উঠলো। টয়ার রাগ উঠে গেলো। টয়া রেগে বললো,” আপনার জন্যে এটা শুরু হয়েছে। ”
ইয়াদ খালি গ্লাসটা হাতে নিয়ে টয়ার পাশে বসে বললো,” তাই বুঝি? তা আমি কি করেছি?”
“আমি কি করেছি!”, মনে মনে বেঙ্গ করে বললো টয়া এমন ভাব করছে যেনো ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে না। খুব সাধু সাজা হচ্ছে। টয়া আড় চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই আবার হিচকি উঠলো। টয়া মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ইয়াদ গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে কাত হয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,” আমি কিছু করেছি বুঝি?” মূখে তার দুষ্টুমির হাসি।
টয়া মুখ ফুলিয়ে বসলো। শান্তিতে বসতেও পারছেনা হিচকিটা থামার নাম নিচ্ছে না। হিচকিটাও ঘাড়তেড়া। ইয়াদ টয়ার মুখ নিজের দিকে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে বললো,” আবার রাগ করলে নাকি? রাগটা দেখি আবার কমাতে হচ্ছে।”
টয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো। কোন ভুতে এসে একে ধরেছে? টয়া একটা ঢোক গিলে বললো হাত দিয়ে ঠেলে ইয়াদের হাত সরিয়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলো।
” রাগ করে সরে গেলে বুঝি?”, ঠোট চেপে হাসি আটকে বললো ইয়াদ। টয়া ভয়ে চোখ পিট পিট করে তাকাচ্ছে। হার্ট এমনভাবে বিট করছে মনে হচ্ছে এক্ষুনি বেরিয়ে আসবে। ইয়াদ এগিয়ে আসতেই টয়া একটা কুশন ইয়াদের দিকে ছুঁড়ে মারে ইয়াদ সেটা মুখে পরার আগেই হাত দিয়ে ধরে ফেললো। কুশন সরিয়ে টয়ার দিকে তাকাতেই টয়া চোখ বড় বড় করে বললো,” জ্বালাচ্ছেন কেনো আমায়? আপনার জন্যেই এই হিচকি আমার পিছু নিয়েছে।”
” হ্যা, তো আমার উচিৎ না সেটা ঠিক করা। আমার কর্তব্য না এটা।”, বলে ইয়াদ এগিয়ে এলো। টয়া পিছাতে পিছাতে একদম সোফার শেষ মাথায় এসে গেলো। টয়া শাসিয়ে বললো,” এতো উপকার করতে হবে না আপনার।”
” না না আমাকেই করতে হবে। আমি না করলে কে করবে।”, টয়ার একদম কাছে চলে এলো ইয়াদ।
” বলছি তো করতে হবে না।”, বোলেই টয়া একটা কুশন নিজের মুখের সামনে ধরে মুখ আড়াল করে ফেললো।
ইয়াদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সরে এসে বললো,” তোমার হিচকি চলে গেছে।”
ইয়াদের কথা শুনে টয়া কুশন নামিয়ে আড় চোখে তাকালো। তারপর খেয়াল করলো আসলেই তার হিচকি চলে গেছে। কিন্তু কখন গেছে? ভারী অদ্ভুত ব্যাপার সে টের পেলো না কেনো। টয়া কুশন নামিয়ে সেটাকে জড়িয়ে ধরে বসলো।
” আমাকে থ্যাঙ্কস দেও।”, টয়ার কাছ ঘেঁষে বসে বললো ইয়াদ।
” কিসের জন্যে?”, আড় চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।
” এই যে তোমার হিচকি বন্ধ করে দিলাম।”, টয়ার হাত থেকে কুশনটা টান মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো ইয়াদ।
টয়া শুকনো গলায় তেজ দেখিয়ে বললো,” কীসের ধন্যবাদ? উল্টে আপনি সরি বলুন, একটু দুঃখিত হন। আপনার জন্য এসব হয়েছে।”
” আচ্ছা, কাছে আসো তারপর দুঃখিত হচ্ছি।”, টয়ার পিলে চমকে উঠলো ইয়াদের কথা শুনে। বেশিক্ষণ এখানে বসে থাকলে তোর কপালে দুঃখ আছে টয়া। ভেবেই ইয়াদকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলো ইয়াদ সরছে না। টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
টয়া প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললো,” আপনার ঘরে খাবার মতো কিছু নেই?”
ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,” হটাৎ এমন প্রশ্ন? খাবার কিছু থাকবে না কেনো? আমি কি হাওয়া খেয়ে থাকি।”
ইয়াদের কথায় টয়া ইয়াদকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো,” সরুণ আমার খিদে পেয়েছে।”
ইয়াদ ভদ্র ছেলের মত আড় চোখে তাকিয়ে সরে বসলো। টয়া ছাড়া পেয়ে তাড়াতাড়ি কেটে পড়লো। টয়া কিচেন ড্রয়ার খুলে আবার সেই নুডুলস দেখতে পেলো। এই লোক কি নুডুলস ছাড়া কিছু খায় না। অসহ্য! টয়া উপায় না পেয়ে নুডুলস রান্না করতে বেস্ত হয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। একবার ভেবেছিলো কিচেনে গিয়ে একটু জ্বালাতন করবে কিন্তু আবার কোনো দুর্ঘটনা না হয়ে যায়। হরবরিয়ে হয়তো কিছু গন্ডগোল লেগে যাবে। থাক এখন বিরক্ত না করাই ভালো।
টয়া নুডুলসের বাটি নিয়ে এসে বসলো টিভির সামনে। ইয়াদ টিভি ছেড়ে খবর শুনছে। টয়া চামচ মুখে তুলতেই ইয়াদের দিকে তাকালো। লোকটার কি খিদে পায় না? ইয়াদের দিকে তাকাতেই ইয়াদ টয়ার দিকে তাকালো। টয়া একটু কেশে নিয়ে গলা পরিষ্কার করে বললো,” আপনি খাবেন?”
ইয়াদ টিভির হেডলাইনের দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,” হুম খাওয়া যায়।” টয়া বাটিটা ইয়াদের দিকে এগিয়ে দিতেই ইয়াদ বাটিটার দিকে তাকিয়ে নিজের ডান হাতের দিকে ইশারা করে বললো,” তোমার কি মনে হয়? এই হাতে আমি খাবো?” তারপর জোর দিয়ে বলল,” খাইয়ে দেও।”
টয়া রসগোল্লার মতো চোখ বড় করে বললো,” কি করবো?”
” নিজের বরকে খাইয়ে দিবে। সে তুমি চাইলে আমাকে সারারাত না খাইয়ে রাখতেই পারো।”, টয়ার চোখে চোখ রেখে বললো ইয়াদ।
” আপনি……!”, বলে টয়া থেমে গেলো। এবার নাকি খাইয়ে দিতে হবে। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকালেই কেমন একটা হয়ে যায় সে। কিভাবে খাইয়ে দেয়।
” আপনি চোখ বন্ধ করুন তো।”, টয়ার কথায় ইয়াদ আড় চোখে তাকিয়ে বলল,” কেনো?”
” চোখ বন্ধ করতে বলেছি করুন। এতো প্রশ্ন করবেন না।”, ইয়াদ আর চোখে তাকিয়ে থেকে চোখ বন্ধ করতেই টয়া ইয়দের মূখে এক গাল দিয়ে দিলো।
ইয়াদ চোখ খুলে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এটা কি ছিলো?
টয়া নিজে এক গাল নিয়ে বললো,” আপনি তাকিয়ে থাকেন খাবার সময় তাই এই পদ্ধতি।”
” পৃথিবীতে মানুষ কি চোখ বন্ধ করে খায়।”, ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো ইয়াদ
[ চলবে ]
গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
[পর্বঃ৩০ :#অনুভুতি
লেখিকা :#নবনী_নীলা
“পৃথিবীতে মানুষ কি চোখ বন্ধ করে খায়।”, ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো ইয়াদ। টয়া উত্তর দিতে যাবে এমন সময়ে কলিংবেল বেজে উঠলো। এ সময়ে কে আসতে পারে? টয়া হাতের বাটিটা সোফার সামনের টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়াবে ইয়াদ বাম হাত দিয়ে টয়ার হাত ফেললো। ইয়াদ দরজার দিকে তাকিয়ে বললো,” তোমার গুণধর ফ্রেন্ড হবে। ডিস্টার্ব করতে চলে এসেছে। যাওয়ার প্রয়োজন নেই।”
টয়া অন্যহাত দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,” আরে আজব! তাই বলে দরজা খুলবো না। ভুল ভাল কথা বলে খালি।”
আরো কয়েকবার কলিংবেল বেজে উঠলো। টয়া এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো রিতু দাড়িয়ে আছে ভীতু ভঙ্গিমায়। টয়াকে দেখে দৌড়ে এসে টয়ার পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে কাপা কাপা গলায় বললো,” টয়া টয়া! আমার না খুব ভয় করছে। মনে হয় ঘরে কিছু আছে। ঘরের ভিতরে আমি বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি।” চোখে মুখে ভয়ের ছাপ রিতুর।
ইয়াদ বসে থাকতে পারলো না এ মেয়ে আবার এসেছে কেনো? টয়া আবার এর সাথে চলে না যায়।
ইয়াদ উঠে এসে প্রশ্ন করলো “কি হয়ছে?”
টয়া আর রিতু একে অপরের সঙ্গে আটিসাটি মেরে দাড়িয়ে আছে। টয়া কাপা কাপা গলায় বললো,” ভিতর থেকে নাকি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।”
ইয়াদ কথাটা শুনে হেসে ফেললো। তারপর বললো,” আচ্ছা তাই বুঝি? বাচ্চাটা কার?”
“আপনি মজা করছেন? কথা বিশ্বাস না হলে নিজে গিয়া দেইখ্যা আসেন।”, টয়াকে শক্ত করে ধরে বললো রিতু।
” ঠিক আছে চলো। বেশ ভালো, ভৌতিক একটা ব্যাপার হলে দারুন হবে।”, বলে ইয়াদ আগ্রহ দেখিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো। টয়া ভেবেই কেপে উঠছে। টয়া পিছিয়ে গিয়ে বললো,” আমি.. আমি যাবো না। আমার ভয় করছে। ভুতের নাম শুনলেই তার ঘাম ছুটে যায়।
ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে নিজের সামনে এনে দাড় করিয়ে বলে,” আমি আছি তো। ভূত বলতে কিছু নেই। আর তোমার বান্ধুবির কানে সমস্যা হয়তো।”
কানে সমস্যার কথা শুনে রিতু চেঁচিয়ে বললো,” আমার নাম রিতু রজনী। এতো সহজে ভয় পাই না। আমি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনেছি। একবার নয় বার বার।”
” তুমি থামো।”, বলে ইয়াদ টয়াকে ঘুরিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মাথাটা কানের কাছে নিয়ে এসে বললো,” আমি আছি তো তোমার সাথে। চলো দেখে আসি রিতু রজনীর কথা সত্য না মিথ্যা।”
টয়া যাবে না মানে যাবে না। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াদ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এদের কি আমি রোমান্স করতে ডেকেছি না ভূত তাড়াতে? ভূত তাড়াতে যাবে এখানেও এদের রোমান্স শেষ হয় না। এবার আমি কার পিছে লুকাবো। ভেবে ভেবে আস্তে আস্তে ওদের পিছু পিছু পা বাড়ালো রিতু। ইয়াদ বাসায় গিয়ে নিজে প্রথমে একটু অবাক হয়েছিলো। মনে হচ্ছে সাত আট মাসের কোনো বাচ্চা কান্না করছে। টয়া আওয়াজে আরো বেশী ভয় পেলো। ইয়াদ পিছন থেকে জড়িয়ে রাখলেও টয়া মুখ ঘুরিয়ে ইয়াদের বুকে মুখ লুকিয়ে চোখ বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে রাখলো। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকালো মেয়েটা ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে। ইয়াদ একহাতে জড়িয়ে রেখে অন্য হাতে টয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
রিতু আওয়াজ শুনে সাথে সাথে চিৎকার করে বললো,” বলে ছিলাম না। বিশ্বাস হয়েছে। বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাইছেন? এবার বলেন।”
ইয়াদ রেগে বলল,” চিৎকার করবে না। তো কি হয়েছে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসছে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের হতে পারে না। রাতের বেলায় এমনিতেই বাচ্চাদের অসুবিধা হয়। এতে ভূত টেনে আনার মানে কি?”
” পাশের ফ্ল্যাটে বুড়ো দাদা দাদীর বাচ্চা হয়েছে তো তাই না!”, রিত ভয় ভয় গলায় বললো। রিতুর মূখে যদি কোনো কিছু দিয়ে আটকে রাখা যেতো ভালো হতো। টয়া এদিকে চোখ কান বন্ধ করে আছে।
ইয়াদ আসে পাশে তাকাতে লাগলো,কিচেনের পাশের জানালাটার দিকে চোখ গেল। জানালার বাহিরে সামনের খালি অংশটায় একটা বিড়াল বসে আছে। দেখেই ইয়াদের বোঝার বাকি নেই বিড়ালের আওয়াজটাকেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ মনে হচ্ছিল। কিছু কিছু বিড়াল এমন আওয়াজ করে। ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভয় পাওয়ার মতো কিছু না। টয়া এদিকে ইয়াদকে ভয়াথ গলায় বললো,” আমি এখনে থাকবো না।চলুন বেরিয়ে যাই।”
ইয়াদ টয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,” আরে বোকা। ওটা বিড়াল, এমন আওয়াজ করছিলো।”
ইয়াদের কথা শুনে টয়া চমকে উঠে ইয়াদের দিকে তাকালো। এটা কেমন কথা? টয়ার চোখে মুখে অবিশ্বাসের ছাপ। বিড়াল এমন আওয়াজ করছিলো মানে। কিভাবে সম্ভব।
” তোমরা কি এখানে রোমান্স করতে এসেছো। আজকাল মানুষের দেখি ভয় ডর কিছু নাই।”, ভয়ার্ত গলায় কটাক্ষ করে বললো রিতু।
রিতুর কথায় লজ্জা পেয়ে টয়া ইয়াদ থেকে একটু সরে আসতে গেলে ইয়াদ টয়াকে জড়িয়ে ধরে রিতুর উদ্দেশ্যে বললো,” তুমি নাকি ভয় পাও না। একটা বিড়াল কি সুন্দর বোকা বানালো তোমায়।” টয়া আর ইয়াদ দুজনেই রিতুর দিকে তাকালো।
রিতু হতভম্ব হয়ে বললো,” বিলাই! কই বিলাই?”
বিলাই শব্দটা ইয়াদের মাথার উপর দিয়ে গেলো।
ইয়াদ জানালার দিকে তাকিয়ে বললো,” ঐ বিড়ালটার আওয়াজ টাই এমন বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজের মতন লাগছে।”
টয়া আর রিতু দুজনেই বিশ্বাস করতে পারলো না কথাটা।
টয়া ইয়াদ থেকে একটু সরে এসে দাড়ালো। টয়ার ভয় কমেনি, তবুও সে জোর পূর্বক ইয়াদ থেকে দূরে এলো যদিও ইয়াদ এখনও টয়ার হাত ধরে আছে।
রিতু ইয়াদের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। ভয়ে ভয়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেলো। কাছে গিয়ে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেলো রিতুর। ছি ছি সে কিনা একটা বিড়ালের আওয়াজে ভয় পাইসে। কি লজ্জা কি লজ্জা!
” বেয়াদব বিলাই। যা এইখান থেইক্কা।”, কড়া গলায় বিড়ালটাকে ঝাড়ি মারলো। বিড়ালটা লাফ মেরে উঠে দাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে লাফ দিয়ে আরেকটা জায়গায় চলে গেলো।
টয়া খেয়াল করলো বিড়ালটা চলে যাওয়ার পর কান্নার আওয়াজটা আর নাই। এদিকে টয়া নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে ইয়াদ হাত ধরেই আছে, ঠোঁটের এক কোনে তার হাসি।
” হয়েছে এবার শান্তি?”, ইয়াদের প্রশ্নে রিতু না সূচক মাথা নাড়ল। ইয়াদ বিরক্তির চোখে তাকালো। এই মেয়েটা দেখছি জ্বালিয়ে ছাড়বে।
রিতু বড়ো বড়ো পা ফেলে টয়ার কাছে এসে বলে,” আমার তো মনে হচ্ছে বিড়ালটার সাথে খারাপ কিছু ছিলো।”
টয়ার বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। সে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে বললো,” মানে।”
” আরেহ বুঝিস না…”, বাকিটা বলে শেষ করার আগেই ইয়াদ রিতুকে থামিয়ে বললো,” অনেক হয়েছে, টয়া চলো।” বলে টয়াকে নিয়ে যেতেই রিতু আরেক হাত ধরে ফেললো টয়ার তারপর তেজী গলায় বললো,” টয়া চলো মানে। আমি কি একা থাকবো। টয়া যাবে না।”
” মানে?”, ভ্রূ কুচকে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
” মানে আমার সাথে এখানে থাকবে। আমি আজ একা থাকলে ঘুমের মধ্যে হার্ট এ্যাটাক করে মারা যাবো।,” টয়ার দিকে তাকিয়ে মন খারাপের ভান করে বললো রিতু।
টয়া নিজেও ইয়াদের সাথে না গেলে বেচেঁ যায়। কখন আবার কি উল্টা পাল্টা করে বসে। মাথায় ভূত চেপে আছে। টয়া ইয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে,” আপনি যান। আমি আপনার সাথে যাবো না।”
রিতু ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বিজয়ের হাসি হাসলো। ইয়াদ টয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে গা হেলিয়ে বলল,” তা হলে আমি এখানেই থাকছি।”
টয়া আর রিতু একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। হায় আল্লাহ যাবে না মানে। টয়া চোখ পিট পিট করে বললো,” এখানে কোথায় থাকবেন?”
” তোমার সাথে।”, ইয়াদের উত্তরে বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠলো টয়ার। টয়া একটা ঢোক গিললো। রিতু টয়াকে পিছনে নিয়ে বললো,” ঠিক আছে আমি তাহলে আপনাদের মাঝখানে শুয়ে পরবো।”
ইয়াদ হতভম্ব হয়ে তাকালো। ইয়াদ কয়েক সেকেন্ডে বুঝেই উঠলো না ঠিক কি বলবে। টয়া ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ইয়াদ ” আচ্ছা ” বলে উঠে টয়ার হাত ধরলো তারপর কোমড় জরিয়ে বাম কাধে তুলে নিলো সোজা টয়ার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। রিতু হা করে তাকিয়ে রইল। তারপর একটু হেসে ফেললো। মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো ওদের দরজার সামনে এসে জোড়ে বললো,” দুনিয়া থেকে লজ্জা সরম সব বিদায় নিসে।”
ইয়াদ টয়াকে নামতেই টয়া ছিটকে দূরে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে রিতুর কথা কানে আসতেই টয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ইয়াদ এগিয়ে এসে টয়াকে বিছানায় বসালো। টয়া ইয়াদের দিকে তাকাতে পারছে না। অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,” আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?”
ইয়াদ অপলকে তাকিয়ে বললো,” হুম। তোমার জন্য খারাপ হয়েছে।”
টয়ার ভিতরে তোলপাড় চলছে। টয়া বেস্ত হয়ে বললো,” আমার ঘুম পাচ্ছে।” তারপর তারাতারি বিছানার এক কোণে গিয়ে গুটি সুটি মেরে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। রাতটা শেষ হলে সে যেনো বেচে যায়।ইস রিতুর বাচ্চাটা উল্টা পাল্টা কিসব চিন্তা করে বসে আছে কে জানে। ইয়াদ টয়ার পাশে শুয়ে টয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই টয়া কেপে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে ইয়াদের দিকে ফিরতেই ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে এলো। ইয়াদ কাছে আসতেই টয়া চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,” I can’t stay without you. You’re my only wishing Star that I wished for.”
হটাৎ মনে এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে টয়ার। টয়া মাথা নুইয়ে রাখলো। মূখে তার এক ঝিলিক হাসি। দুটো কথা যে এমন অনুভুতির জাগরণ করাতে পারে, এটা টয়া আজ অনুভব করলো। মুখটায় লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে সেটা ঢাকতে ইয়াদের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে।
?
” এই বিয়েতে তোর মত না থাকলে তোকে কেউ জোর করবে না। আমি সবাইকে কথাটা জানিয়ে দিচ্ছি। বাবা মার সিদ্ধান্ত তোর উপর চাপিয়ে দিবে আমি থাকতে সেটা হবে না।”, দাদাভাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে সবাইকে গম্ভীর গলায় একসাথে বসিয়ে এই আলোচনা করছে।
আসার পর থেকেই দাদাভাইয়ের মুখ ভার। ইয়াদ দেখা করতে এসেছিলো ভাবি, ভাইয়া সবাই ইয়াদের সাথে কথায় মজে ছিলো। দাদাভাই শুধু মুখভার করে কয়েকটা প্রশ্ন করে নিজের রুমে চলে গেল। এখন সবাইকে ডেকে এসব বলছে।
বিয়ে কাগজে কলমে হয়ে গেছে দাদাভাই তো সেটা জানে না। টয়া লজ্জায় বলতেও পারছে না।
ইয়াদকে কি দাদাভাইয়ের পছন্দ হয় নি? টয়া এক কোণে বসে এলোমেলো দৃষ্টিতে নিচে তাকিয়ে আছে।
ছোট ভাইয়া চিন্তিত হয়ে বলল,” কেনো দাভাই? ছেলে তো যথেষ্ট ভালো। একজন ডক্টর, চেহারায় ভালো, লম্বা। তোমার আপত্তিটা কোথায়?”
বড় ভাবি ইভাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসে কথোপকথন শুনে। ভাবি সায় দিয়ে বললেন,” একদিনে তো আর মানুষ চেনা যায় না। আর ছেলেটার মধ্যে খারাপ কিছু তো লক্ষ্য করলাম না। বাবা মা ভালো বুঝেছেন তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
ছোটো ভাবি দাদাভাইয়ের সামনে কোনো কথা বলছে না। তিনি বেশ ভয় পায় দাদাভাইকে।
” তাই বলে টয়া মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কেনো বিয়ে করবে? আমি থাকতে সেটা হবে না।”, গম্ভীর গলায় কথা শেষ করে দাদা ভাই উঠে নিজের রুমে চলে গেল।
[ চলবে ]