তোমার_খোঁজে_এই_শহরে পর্বঃ৪ :#ভুল_বোঝা,০৫

0
1321

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ৪ :#ভুল_বোঝা,০৫
লেখিকা:#নবনী_নীলা
পর্বঃ৪

” আপনি আমার চুলগুলো একটু বেধে দিতে পারবেন?”, টয়ার কথায় ইয়াদ একটু অপ্রস্তুত হলো। এতো সহজে টয়া একটা ছেলেকে নিজের চুল বেঁধে দিতে বলছে। এতোটা সরল হওয়া ভালো না।

ইয়াদ টয়াকে বললো,” শোনো তুমি এখন যথেষ্ট বড়ো হয়েছো নিজের চুল নিজে বাঁধাটা তোমার শিখা উচিৎ। আর এভাবে যাকে তাকে নিজের চুল বাঁধতে বলবে না।”
টয়া মুখ কালো করে রাবার ব্যান্ডটা হাতে পরে নিয়ে বললো,” আমি সবাইকে আমার চুল বেঁধে দিতে বলি না এতটুকু জ্ঞান আমার আছে।”

” তাহলে আমাকে বললে কেনো?”, প্রশ্ন করলো ইয়াদ। টয়া কি বলবে বুঝতে না পেরে বলল,” দেখতে চাইলাম আমি পারেন কিনা।”
বাহ্ টয়া কি সুন্দর করে গুছিয়ে ব্যাপারটা স্বাভাবিক করে ফেললো। যতটা বোকা ভাবা হয়েছে মেয়েটা এতো বোকা না। ইয়াদ উঠে দাড়ালো সন্ধ্যা হয়ে এসেছে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না। আর ইয়াদ না গেলে হয়তো এই মেয়েও এখানেই থাকবে।

ইয়াদকে উঠে দাড়াতে দেখে টয়াও উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো,” কি হলো? উঠে দাড়ালেন যে?”

“বাসায় ফিরবো।”, বলে ইয়াদ হাঁটতে শুরু করলো। টয়ার আরো কিছুক্ষন থাকতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে কিছু না বলে ইয়াদের পিছু পিছু হাটছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়, আসার সময় ইয়াদ চায়ের দোকানে কয়েকটা ছেলেকে সিগারেট হাতে বসে থাকতে দেখলো।

কিছুদূর এসে ইয়াদ পিছে তাকালো, টয়ার থেকে কিছু দূরেই ছেলেগুলো আসছে। তারমানে ছেলেগুলো ফলো করছে। ইয়াদ থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। টয়াকে চোখের ইশারায় তাড়াতাড়ি আসতে বললো। টয়া তো মহা খুশী একা একা হাঁটতে তার খুবই বিরক্তি লাগে। টয়া তাড়াতাড়ি পা ফেলে ইয়াদের কাছে গেলো দুজনে একসাথে হাঁটবে বলে।

ইয়াদ টয়ার ভাবনায় জল ঢেলে বললো,” যাও হাটো। আমার আগে আগে যাও।”
টয়া মুখ গম্ভীর করে বললো,” একসাথে হাটি।”
ইয়াদ তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,” যেটা করতে বলেছি সেটা করো।”

টয়া আর কথা না বাড়িয়ে আগে আগে হাঁটতে লাগলো। এই ছেলে সুযোগ পেলে আগে জ্ঞান দিতো এবার অর্ডার দিতে শুরু করেছে। ইয়াদ টয়ার পিছনে হাঁটছে, টয়া যেই মেয়ে পিছন থেকে মুখ চেপে ধরে নিয়ে গেলেও হুশ পাবে না। এর চেয়ে আগে আগে হাঁটুক খেয়াল রাখা যাবে।

টয়া ভেবেই পাচ্ছে না ইয়াদ কেনো টয়ার পিছে পিছে হাঁটছে। টয়া অন্যদিকে তাকিয়ে হাঁটছিলো হটাৎ তার চুলে এক টান অনুভব করে। কেও যেনো তার চুল ধরে এক টান মেরেছে। টয়া হাত দিয়ে চুল ধরে পাশ ফিরতেই দেখলো নিরব মুখ ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে। নিরবকে দেখে টয়া হকচকিয়ে উঠলো। নিরব টয়ার খালাতো ভাই, টয়ার চেয়ে দশ মাসের বড়ো।
টয়া বিস্ময় নিয়ে বললো,” তুই এখানে কি করছিস?”

” তোকে খুঁজতে বের হচ্ছিলাম। কোথায় ঘুরে বেড়াস?” বলেই টয়ার মাথায় একটা বাড়ি দিলো।

টয়া নিরবের পিঠে আরো জোরে দুটো দিয়ে বলে,” আমাকে মারবি না বেয়াদব।”

ইয়াদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে এদের কাণ্ড দেখলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে মারামারি শুরু
করেছে। ছেলেটাই বা কে? দেখে তো মনে হচ্ছে টয়া চিনে একে। ইয়াদ নিজের মতো হাঁটতে লাগলো সামনেই বাসা টয়া নিজেই চলে যেতে পারবে।

এদিকে নিরব হ্যান্ডস আপ কোরে বললো,” হয়েছে হয়েছে আর মারিস না।। ছেরে দে মা কেঁদে বাঁচি।”

টয়া বিজয় ভরা হাসি দিয়ে বললো,” আমাকে মারার আগে এরপর থেকে দশবার চিন্তা করবি।” বলতে বলতে টয়া থেমে গিয়ে পিছে তাকালো ইয়াদ কোথায়? এতোক্ষণে ইয়াদের কথা তার মাথায় ছিলো না। পিছনে না দেখে টয়া সামনে তাকালো ইয়াদ সামনেই আছে। টয়া রেগে
গিয়ে বললো,” তুই আর কোনো সময় পেলি না? দিলি তো সব ব্লান্ডার করে।”

নিরব সামনে হেঁটে যাওয়া ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো,” এই কি সেই তোর প্রেমিক পুরুষ?”

নীরবের কথা শুনে টয়ার গা জ্বলে যাচ্ছে। প্রেমিক পুরুষ আবার কেমন কথা? টয়ার রাগ মিশ্রিত চেহারা দেখে নিরব বললো,” আচ্ছা সরি, বাবা। তোর ক্রাশ হয়েছে এবার?”

টয়া হা সূচক মাথা নাড়ল। নিরব টয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ঘামিয়ে গেছে। নিরব টয়ার চুল গুলো নিজের হাতে নিয়ে বললো,” দে আমাকে রাবার ব্যান্ডটা আমি বেধে দিচ্ছি। তুই তো আবার রাজকন্যা চুল বাঁধতে পারিস না।”

টয়া আড় চোখে তাকিয়ে ব্যান্ডটা নীরবের হতে দিলো। ইয়াদ হাঁটতে হাঁটতে কি মনে করে একবার পিছনে ফিরলো। ছেলেটা টয়ার চুল বেঁধে দিচ্ছে। এভাবে রাস্তায় দাড়িয়ে ছেলেটা চুল কেনো বেধে দিচ্ছে মনে প্রশ্ন জাগলো ইয়াদের।

ছেলেটা কি হয় টয়ার? বয়ফ্রেন্ড? তাহলে টয়া তার পিছনে পিছনে প্রতিদিন যায় কেনো? আর যদি বয়ফ্রেন্ড না হয় তাহলে কি এমন চেনা মানুষ যে কিনা এতো যত্নে টয়ার চুল বেঁধে দিচ্ছে। ইয়াদের রাগ হচ্ছে। টয়া বলেনি তো ছেলেটিকে নিজের চুল বেঁধে দিতে? একটু আগেই তো ইয়াদকে বলেছিলো টয়া। ইয়াদের মাথায় অনেক কিছু চলছে সে চুপ করে নিজের বাসার গেট এ ঢুকে পড়লো।

নিরব টয়ার চুল বেঁধে দিয়ে বললো,” তোর লজ্জা হয় না আমি ছেলে হয়ে পরলাম আর তুই? আকর্মের ঢেঁকি একটা। চল বাসায় চল।”
রাস্তা বলে টয়া আর কথা বাড়ালো না।

ইয়াদ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসলো। তখনই তার মা তাকে বললো,” ইয়াদ তোমার বাবার খুলনায় ট্রান্সফার হয়েছে। দুদিনের মধ্যেই আমাদের সেখানে যেতে হবে। তোমার জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখো।”

ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,” মা আমার ফাইনাল এক্সামের কি হবে?”

” সেই দশ বারো দিন তুমি হোস্টেলে এসে থেকো। আমাদের কাছে যে আর কোনো উপায় নেই। তোমার বাবাকে একা সেখানে পাঠাতেও তো পারি না।”, ইয়াদ বাকি কথা না শুনেই নাস্তা না করে উঠে গেলো। তার এই শহর ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।

এদিকে টয়া আর নিরব গল্প করছে। নিরব দেখতে সুন্দর একদম ফর্সা তবে রঙটা নীরবকে মানিয়েছে। কিন্তু এতো ফর্সা হওয়ার কারণে টয়া নিরবকে সাদা চামড়া বলে ডাকে। এই বয়সে নিরবের গার্ল ফ্রেন্ডের অভাব নেই। আর মেয়েরা ওকে দেখে গলে পরে। রাহি পর্যন্ত নিরব নিরব করে টয়ার মাথা খায়। নিরব আসলেই উল্টা পাল্টা কথা বলে টয়ার মাথা খারাপ করে দেয়।

টয়া কপালে হাত দিয়ে নিরবের বক বক সহ্য করছে। এই ছেলে এতো কথা কেনো বলে?
টয়া ধৈর্য্য হারিয়ে বললো,” তুই জিরায় নে। একটু থাম। আমার কান দুইটার রেস্ট প্রয়োজন।”

কে শুনে কার কথা? নিরব বলে উঠলো,” কাল না তোর কিসের নৃত্য প্রতিযোগিতা আছে? ভাবছি আজকে থেকে যাই বুঝলি তোর প্রতিযোগিতা দেখে যাবো ?”

নীরবের কথা শুনে টয়ার হুশ হলো সে স্কুলের অনুষ্ঠানে একক নাচে নাম দিয়েছিল অথচ টয়া কিছুই প্রিপারেশান নেয় নি। টয়া অস্থির হয়ে গেলো,” অ্যাহায় এবার কি হবে? আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।”

নিরব উঠে দাঁড়িয়ে বললো,” আরে চিন্তা করিস না আমি তো আছি। আমি তোকে নাচ শিখাবো।” বলে টয়ার হাত ধরে টেনে তুলে উল্টা পাল্টা নাচতে লাগলো।

ইয়াদের অসহ্য লাগছিলো তাই সে বারান্দায় এসেছিলো। এসে টয়া আর নিরবকে একসাথে দেখে মাথা আরো গরম হয়ে যায় ইয়াদের। বিষয়টা ভালোভাবে নেয়নি ইয়াদ। সে দ্রুত বারান্দা লাগিয়ে জানালায় পর্দা দিয়ে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে রইলো।

এদিকে টয়া নিরবকে ঘর থেকে বের করে বিছানায় শুয়ে পড়লো কালকে সে কি করবে সেটা নিয়েই তার চিন্তা। টয়া ঘাড় ঘুড়িয়ে ইয়াদের রুমের দিকে তাকালো। সব দরজা জানালা বন্ধ আর পর্দা টেনে দেওয়া। ওরা কি কোথায় গেছে? কোনোদিন তো এমন হয় নি।

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ৫ : #এটা_কি_শুধু_ভালোলাগা?
লেখিকা :#নবনী_নীলা
সকালে কলেজে যাওয়ার সময় আজ ইয়াদ টয়াকে গেটের সামনে দেখলো না।প্রতিদিন টয়া এইখানে দাড়িয়ে থাকতো। কিছুদূর যাওয়ার পর পিছে তাকালো সে, আজ পিছু পিছুও আসছে না। ইয়াদ নিজের মতো করেই হাঁটছে তবে কেনো জানি আজ একা একা লাগছে এভাবে যেতেও ভালোলাগছে না।মেয়েটা সব সময় পিছু পিছু আসতো আজ আসেনি তাই কি এমন লাগছে। টয়া অসুস্থ নাতো? ভাবতে ভাবতে ইয়াদের কাল রাতের ঘটনা মনে পড়লো।
না অসুস্থ হবার কথা না কাল রাতে তো সেই বাঁদরের সাথে সুন্দর মতো নাচ্ছিলো। ভেবেই ইয়াদের গা জ্বলে যাচ্ছে। কেনো এমন হচ্ছে ইয়াদ জানে না।

আজকের দিনটা ইয়াদের খুবই বাজে গেছে। তার কিছুই ভালো লাগছে না। বাসায় এসে রুমের জানালার পর্দা সরালো টয়ার রুমে টয়া নেই। মেয়েটার হটাৎ আজ কি হলো? এতোক্ষণে স্কুল শেষে বাসায় আসার কথা। ইয়াদের চিন্তা হতে লাগলো।

বিকালে ইয়াদ নীচে নামলো। প্রায় নীচে টয়াকে দেখা যায় আজ সেটাও নেই। ইয়াদ হাঁটছিলো হটাৎ অপূর্বের সাথে দেখা। অপূর্ব ইয়াদের খুব ভালো বন্ধু। অপূর্ব ইয়াদকে প্রশ্ন করলো,” কিরে কোথায় যাচ্ছিস?”

–” এমনেই হাঁটতে বেরিয়েছি।”

–” চল সামনের মাঠে যাই। কোন স্কুলের নাকি অনুষ্ঠান হচ্ছে।”

ইয়াদ আসতে চাইলো না তবুও অপূর্ব জোড় করে নিয়ে আসলো। অন্য স্কুলের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন বোধ করছে না ইয়াদ। কিন্তু অপূর্ব নাছর বান্দা সে নিজেও যাবে ইয়াদকেও সঙ্গে নিবে।
সেখানে গিয়ে ইয়াদ একটা চেয়ার নিয়ে নিজের মতো বসে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রোল করছিলো। অপূর্ব বেশ আগ্রহ নিয়েই অনুষ্ঠান দেখছে আবার হাতে তালি দিচ্ছে। প্রায় পনেরো বিশ মিনিট তো হলো ইয়াদ বসে আছে। এখানে অহেতুক বসে থাকবার কোনো কারন খুজে পাচ্ছে না ইয়াদ। সে চলে যাবে বলে উঠে দাড়ালো এমন সময় একটা অ্যানাউন্সমেন্ট কানে এলো ।

” এবার মঞ্চে একক নাচের জন্য আসবে আমাদের পরবর্তী প্রতিযোগী অর্নিহা তাবাসসুম টয়া।”

এতটুকু শুনেই ইয়াদ চেয়ারে বসে পড়লো। টয়া নাচ পারে? তাহলে দেখে গেলেই হয়। অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ইয়াদের দিকে। ইয়াদ সেই দৃষ্টিকে তেমন গ্রাহ্য করলো না। অপূর্ব বললো,” কিরে তুই না চলে যাচ্ছিলি? বসে পড়লি যে?”

ইয়াদ আমতা আমতা করে বলল,” বসে পড়লাম কেনো ? আসলে ….. আমি ভাবলাম তোকে…. I mean তোর সাথেই যাই।”

অপূর্ব কথাটা ঠিক বিশ্বাস করলো না তবে আর কোনো প্রশ্ন করলো না। টয়া বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে স্টেজে উঠলো। তার ছোট চুলগুলো খোঁপা করা। ইয়াদের মুখ হা হয়ে রইলো কারণ টয়াকে এতো মায়াবতী লাগছে যে তার দিকে সারাদিন অপলকে তাকিয়ে থাকা যাবে, কোনো ক্লান্তি আসবে না। এর মাঝে অপূর্ব বলে উঠলো,” মেয়েটাকে দেখ কি মিষ্টি দেখতে।”

ইয়াদ আড় চোখে অপূর্বের দিকে তাকালো।” এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো? সুন্দরকে কি সুন্দর বলবো না।” অপূর্বর কথায় ইয়াদ কিছু বললো
না।

ইয়াদ অবাক হয়ে টয়ার নাচ দেখছে, খুব সুন্দর নাচে মেয়েটা। নাচের তালে চোখের যে খেলা সব মিলে অসাধারণ। পুরো ভিড়টা এখণ শান্ত সবই মন দিয়ে টয়ার নাচ দেখছে। অপূর্বর মুখ তো পুরো হা হয়ে গেছে তা বন্ধের নাম নেই। ইয়াদ হাত দিয়ে অপূর্বের মুখ বন্ধ করে দিতেই অপুর্ব সন্দেহর চোখে তাকালো কিন্তু কিছু না বলে দৃষ্টি সামনে স্থির করে রাখলো।

নাচ শেষে টয়া স্টেজ থেকে নেমে গেলো। টয়ার বুক ধড়ফড় করতে লাগলো কারন তার মনে হয়েছে ভিড়ের মাঝে ইয়াদকে দেখেছে সে। টয়া স্টেজ থেকে নেমে হাপাতে লাগলো। নিরব সেখানেই ছিলো, টয়ার অবস্থায় দেখে বললো,” কিরে এমন কৈ মাছের মত ছটফট করছিস যে।”

টয়া বিস্মিত চোখে নিরবের দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না ওটা ইয়াদ ছিলো। নিরব টয়ার অবস্থা দেখে একটু অস্থির হয়ে গেলো। নিরব একটা পানির বোতল খুলে টয়ার হাতে দিলো। টয়া একদৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকিয়ে পানি খেলো। নিরব টয়ার হাত থেকে পানির বোতলটা নিয়ে বললো,” এমন করছিস কেনো এবার বল।”

টয়া একটা ঢোক গিলে বললো,” ইয়াদ এখানে এসেছে!”। টয়ার কথা শুনে নিরবের রাগ হলো এমন ভাব করছে এ মেয়ে যেনো কোনো হলিউড সিনেমার হিরো এসেছে। নিরব বিরক্তি নিয়েই বললো,” তাতে হয়েছে টা কি?”

টয়া মাথা নাড়িয়ে বললো,” তুই বুঝতে পারছিস না।” টয়া আর কিছু বলার আগেই নিরব ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,” আমার বুঝেও কোনো কাজ নেই। কি আছে ঐ ছেলের যে তাকে এতো প্রায়োরিটি দিতে হবে?”

টয়া নিরবের কথা শুনে চুপ করে গেলো। নিরব আবার প্রশ্ন করলো,” কিরে বল ওই ছেলের মাঝে কি পেয়েছিস তুই?”

টয়া কিছু বললো না কারন সে নিজেও জানে না ইয়াদকে কেনো তার এতো ভালোলাগে। ইয়াদের আশে পাশে থাকলে অদ্ভুত এক অনুভুতি কাজ করে। সে অনুভুতি অনেক আলাদা।সব কিছু ম্যাজিকাল মনে হয়। এটা কি শুধুই ভালোলাগা?

টয়া সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়। ইয়াদ পুরস্কার দেওয়া পর্যন্ত সেখানে ছিল। এদিকে অপুর্ব ভেবেই পাচ্ছে না ইয়াদের মত ছেলে এতক্ষন একটা অনুষ্ঠানে কি করে বসে আছে। অপূর্ব অনেকবার যেতে চাইলো ইয়াদ নানা অজুহাত দেখিয়ে থেকে গেলো। টয়ার পুরস্কার পাওয়ার পর ইয়াদ উঠে দাড়ালো। অপূর্ব ঘাড় ঘুড়িয়ে ইয়াদের দিকে তাকালো। ইয়াদের মতিগতি সুবিদার লাগছে না তার। ইয়াদ অপূর্বকে বললো,” চল আর কত থাকবি?”
” এতক্ষন যে আমি যেতে বলেছিলাম তার বেলায়? আসছে এখন চল বলতে।”, বেঙ্গ করে বলে উঠে দাড়ালো অপূর্ব।

এদিকে টয়া নাচতে নাচতে নিরবকে পুরস্কার দেখাচ্ছে। নিরব টয়াকে থামিয়ে বললো,” হয়েছে থাম এবার। বাসায় চল আজ সারাদিন বাসার বাহিরে। আর ভাল্লাগছে না।”

নিরবের কথায় টয়া বলল,” আমি জিতেছি তাই তোর হিংসে হচ্ছে তাই না?”

নিরব হাত জুড়ে বললো,” বইন আর কথা বলিস না। চল বাসায় চল।”

টয়া হাঁটতে লাগলো, তার ভীষণ খুশি খুশি লাগছে। শাড়ি পড়ে সে ঠিকমতো হাঁটতে পারছে না। টয়া পরে যেতেই নিয়েছিলো তখনই নিরব টয়াকে ধরে ফেলে। ইয়াদ সেই সময় সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলো।পুরো ঘটনাটা ইয়াদের সামনেই ঘটে যদিও টয়া সেটা খেয়াল করেনি কিন্তু নিরব ইয়াদকে দেখে।

ইয়াদের সেদিনের কথা মনে পড়লো। সেদিনও তো টয়া পরে যেতে নিয়ে ইয়াদের শার্ট ধরেছিল। সবটা কি টয়ার নাটক ছিলো ? নাকি মজা ছিলো। না হলে একই ঘটনা আরেকজনের সাথে কি করে ঘটে। হতেই পারে সবটা মজা ছিলো, না হলে দিব্যি আজ ইয়াদকে ভুলে অন্য ছেলের সাথে ঘুরছে। সবটা ভেবে ইয়াদের রাগ বেড়েই চলেছে। মেয়েটার প্রতি দুর্বলতা তৈরি হয়েছে ইয়াদের, সেটা ইয়াদ নিজেও বুঝতে পারছে।

____________

সকালে গেট থেকে বের হয়ে ইয়াদ টয়াকে দেখলো। ইয়াদ আজ নিজের মতো হাঁটতে লাগলো। টয়া আজ পিছু পিছু হাটছে না ইয়াদের পাশাপাশি হাঁটছে। ইয়াদ কিছু বলছেনা কারন তার এ কয়েকদিনের রাগ জমে মাথা ব্যাথা হয়ে আছে।
টয়া হাঁটতে হাঁটতে বললো,” আপনি কি কালকে আমাকে দেখতে মাঠে গিয়েছিলেন?”
টয়ার কথায় ইয়াদ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ সামলাতে চেস্টা করলো। লাভ হচ্ছে না এইসবের একটা শেষ হওয়া দরকার। ইয়াদ টয়া হাত ধরে টেনে ওকে প্রথম দিনের সেই জায়গায় নিয়ে এলো।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here