তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #পর্বঃ৬ :হবে_কি_আবার_দেখা?,০৭

0
1502

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্বঃ৬ :হবে_কি_আবার_দেখা?,০৭
লেখিকা:#নবনী_নীলা
পর্বঃ৬

ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে টয়াকে প্রথম দিনের সেই জায়গায় নিয়ে এলো। টয়া হতবাক হয়ে গেছে। ইয়াদ বেশ রেগেই বললো,” সমস্যা কি তোমার? আমার পিছু নেও কেনো প্রতিদিন?”

টয়া আরো রেগে বললো,”আপনার পিছু নিতে যাবো কেনো? রাস্তা কি আপনার একার?”

ইয়াদ রাগ মিশ্রিত একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,” হুম, জিজ্ঞেস করলে এটাই তো বলবে। সৎ সাহস থাকতে হবে তো তাই না। নাকি এটা কোনো ট্রিক? এভাবে নিশ্চই অনেক ছেলেকে ফাঁসিয়েছো।”

ইয়াদের কথায় টয়া আকাশ থেকে পড়ল। ইয়াদ এভাবে কথা বলছে কেনো তার সাথে আর ছেলে ফাঁসানো মানে। টয়া প্রথমে চুপ করে থাকতে চাইলো কিন্তু পড়ে সাহস করে দুই হাত শক্ত করে ধরে বলেই ফেলল,” ছেলে ফাঁসানো মানে?”

” হ্যা এখণ তো না বুঝার ভান করবেই। তা নতুন যাকে ফাঁসিয়েছো তাকে ছেড়ে আবার আমার পিছু নিয়েছো কেনো? তোমার লজ্জা করে না। এই বয়সে এইসব করে বেড়াচ্ছো রাস্তা ঘাটে, চুল বেঁধে দিচ্ছে, হাত ধরে টেনে তুলছে।”, বলেই ইয়াদ থেমে গেলো। সে উল্টা পাল্টা কিছু বলতে চায় না। টয়া স্তম্ভিত হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে দুই হাত শক্ত করে ধরে দেওয়ালের সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে। টয়ার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। তাও চোঁখ তুলে বললো,” আপনি ভুল করছেন”

” শোনো আমি নিজের চোখে তোমাদের দেখেছি। আমারই ভুল হয়েছে তোমাকে সরল ভেবেছিলাম।তার চেয়েও বড় কথা আজকের পর থেকে আমি যেনো তোমাকে আমার আশে পাশে না দেখি।”, বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইয়াদ চলে যায়।

টয়া স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোঁখের পানি সে আটকাতে পারছে না। তার সম্পর্কে ইয়াদ এতো খারাপ ধারণা রাখে সেটা ভেবেই তার কষ্ট হচ্ছে। সে এতো খারাপ একটা মেয়ে, সেটা তার জানা ছিলো না। টয়া সেখানে হাঁটুতে মাথা রেখে বসে আছে, চোঁখের জল তার গাল বেয়ে নামছে।

______________________

ইয়াদ কিছুদূর গিয়ে বুঝতে পারলো সে কাজটা ঠিক করেনি। একবার ফিরে গিয়ে দেখতে ইচ্ছে হলো কিন্তু ইচ্ছাটা, ইচ্ছাই রেখে সে কলেজের বাসে উঠে গেলো। কলেজ থেকে ফিরে প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় সে কিছুক্ষণ শুয়ে ছিলো। উঠে ফ্রেশ হয়ে বের হওয়ার সাথে সাথে তার মাকে বেশ চিন্তিত মনে হলো। ইয়াদ মাথা মুছতে মুছতে প্রশ্ন করলো,” কি হয়েছে মা?”

ইয়াদের মা অস্থির হয়ে বললো,” আরে আমাদের এলাকার একটা মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একটু আগেই মাইকিং করে গেলো। আল্লাহ যেনো মেয়েটাকে সুস্থ ভাবে তার বাবা মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়।”

ইয়াদ বড়ো রকমের একটা ধাক্কা খেল। এলাকার একটা মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? ইয়াদ ছুটে নিজের রুমের পর্দা সরিয়ে টয়ার রুমের দিকে তাকালো টয়া রুমে নেই। তাহলে যাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না সে কি টয়া? ইয়াদ চিন্তায় পড়ে গেল। মেয়েটাকে বেশি বেশি বলে ফেলেছে ইয়াদ, তার জন্যই কি বাসায় ফিরে নি? ইয়াদ চুপ করেও বসে থাকতে পারছেনা অনেক গিল্ট ফিল হচ্ছে। কিছু না ভেবেই ইয়াদ বাসা থেকে বেরিয়ে এলো, কি করবে এবার। এমন হতে পারে মন খারাপ করে আগের জায়গায় বসে আছে, বাসায় যায় নি।

ইয়াদ আর অপেক্ষা করল না দৌড়াতে শুরু করল। সেখানে পৌঁছে ইয়াদ আরেকটা ধাক্কা খেলো। টয়ার ব্যাগ পরে আছে কিন্তু টয়া কথায়? ইয়াদ কিছু ভাবতেও পারছেনা ভাবতে গেলেই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠে। ইয়াদ অনেক চিন্তা করলো কোথায় থাকতে পারে টয়া। কাশফুলের মাঠে যায় নি তো।
এটাই শেষ আশা, ইয়াদ আর দাড়ালো না। কিছুক্ষণ পরই সন্ধ্যা তার আগেই মেয়েটাকে খুজে বের করতে হবে।

টয়া কাশ ফুলের সেই মাঠে মাথা নিচু করে বসে আছে। এক মুহুর্তে যেনো তার পৃথিবীটাই পাল্টে গেছে। ষোলো বছরের একটা মেয়ের কাছে এই অনুভুতিগুলো অনেক বেশি মূল্যবান। ইয়াদ না বুঝেই সে অনুভূতিতে আঘাত করেছে।
নিরবও টয়ার নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছে। খুঁজতে খুঁজতে নিরব টয়াকে দেখলো স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায় এক কোণে বসে আছে। নিরবের মাথায় রক্ত ওঠে গেছে। এই মেয়েকে খুঁজতে খুজতে সে পাগল হয়ে গেছে আর দেখো সে এখানে ঘাপটি মেরে বসে আছে। নিরব টয়ার হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো। টয়া দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কোনো কথা বলছে না।

নিরব ভেবেছিলো ইচ্ছা মতন বকবে টয়াকে কিন্তু টয়ার অবস্থায় দেখে নিরব আর কিছু বলতে পারলো না। অনেক কেঁদেছে বুঝাই যাচ্ছে চোঁখ মুখ ফুলে আছে, নাক লাল হয়ে গেছে।

নিরব বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো,” কি হয়েছে তোর? এমন লাগছে কেনো তোকে?”

টয়া কোনো কথা বললো না। নিরব বুঝতে পেরেছে কোনো কারনে টয়া কষ্ট পেয়েছে কিন্তু কি সেটাই বুঝতে পারছে না। নিরব গলা নরম করে বললো,” কি হয়েছে তোর আমাকে বল। কেও খারাপ কিছু করেছে? টিজ করেছে? আমাকে বল, দেখ কি হাল করি।”

টয়া না সূচক মাথা নাড়ল তারপর আবার কাদতে লাগলো। নিরব কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা না টয়াকে এভাবে দেখতেও ভালো লাগছে না তার। নিরব একটা নিশ্বাস ছেড়ে টয়াকে হাত দিয়ে আগলে টয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে লাগলো।

ইয়াদ খুঁজতে খুঁজতে টয়াকে পেয়েছিলো কিন্তু ইয়াদের পৌঁছানোর আগেই নিরব এসে টয়াকে টেনে তুলে তাই ইয়াদ আর আগায় না।
টয়াকে নিরব সেখান থেকে নিয়ে যায়।
ইয়াদ পুরোটা দেখে চোখ বন্ধ করে একটা নিশ্বাস ফেললো।
রাত হয়ে গেছে কিন্তু ইয়াদের বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছে না। এই মাঠে কিছুক্ষণ বসতে ইচ্ছে করছে এমনিতেও আর হয়তো আসা হবে না কোনোদিন এই মাঠে।
ইয়াদ সেই জায়গায় গিয়ে চুপ করে দৃষ্টি সামনে স্থির করে বসে রইলো। কাল সে চলে যাচ্ছে, এই শহরে আর কোনোদিন আসা হবে কিনা সে জানে না।

টয়া মেয়েটির সাথে কি তার আর কোনোদিন দেখা হবে? যাকে যাবার আগে একরাশ কষ্ট দিয়ে ফেললো। ভালোই হয়েছে ঐ ছেলেটা আগে এসেছে ইয়াদ গেলে হয়তো বাসায়ও ফিরতে চাইতো না। ইয়াদ ঘাস ভরা সে মাঠে শুয়ে পড়লো। এভাবে আকাশ দেখতে অনেক ভালো লাগে, কি সুন্দর তারা জ্বলছে। টয়া কি এভাবে ঘাসে শুয়ে কোনোদিন আকাশ দেখেছে? চোখ বন্ধ করে দুই হাত ঘাসে মেলে দিতেই ইয়াদের ডান হাতে কি যেন লাগলো। ইয়াদ ঘাড় উচু করে সেটা হাতে নিলো।

ঘড়ি মনে হচ্ছে। ইয়াদ শুয়ে ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে রইল। ঘড়িটা টয়ার কিছুক্ষণ দেখার পর ইয়াদ বুঝতে পেরেছে। টয়া সেদিন হাত নাড়িয়ে এই ঘড়ি দেখিয়ে ছিলো।
ইয়াদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে যে জিনিস আবিষ্কার করলো, তা হচ্ছে ইয়াদের হাতের ঘড়ির সাথে এই ঘড়িটার অনেক মিল।

খুঁজে খুঁজে তার মানে একই ঘড়ি কিনেছে মেয়েটা। ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে ইয়াদের মুখে হাসির ঝিলিক এলো।

পরের দিন সকালে ইয়াদরা চলে গেলো। যাওয়ার আগে ইয়াদ অনেক চেস্টা করেছে টয়াকে দেখতে কিন্তু পারে নি কারণ টয়ার রুমের সব পর্দা দেওয়া ছিলো। একবার দেখতে ইচ্ছা হয়েছিলো ইয়াদের কিন্তু সব ইচ্ছে পূরণ করতে নেই।

টয়া ইয়াদ গল্পটা কি এইটুকুই ছিলো? সব গল্পের শেষটা তো আর সুন্দর হয় না। তবে টয়া নামের এই মেয়েটিকে ইয়াদ কোনোদিন চাইলেও ভুলতে পারবে না কারন টয়া নামটি গভীর ছাপ ফেলেগেছে তার মনে।

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ৭ : #৭_বছর_পর
লেখিকা :#নবনী_নীলা
” তোর কাছে মেয়েদের এই ঘড়ি কেনো ইয়াদ?”, মায়ের এমন প্রশ্নে ইয়াদ অবাক হয়ে তাকালো। ইয়াদের মায়ের হাতে সেই ঘড়িটা। ইয়াদ কি বলবে বুঝতে পারছেনা তাই সে চুপ করে নিজের ব্যাগ গুছাতে লাগল।

” বিয়ে করবি না, পাত্রী পছন্দ হচ্ছে না সবের পিছে কি? এই কারণ।”, গম্ভীর গলায় ইয়াদের মা আবার প্রশ্ন করলো।
ইয়াদ ব্যাগ গুছানো বন্ধ করে দুই হাত বুকের কাছে গুঁজে বললো,” সবসময় বিয়ে বিয়ে করো কেনো মা?”

ইয়াদের প্রশ্নে ইয়াদের মা বললেন,” আমার বয়স হচ্ছে আমার ছেলের বউ, নাতি নাতনী দেখতে ইচ্ছে করছে না বুঝি। সারাদিন বাসায় একা একা ভালো লাগেনা।”

ইয়াদ নিজের কাপড় আবার গুছিয়ে নিচ্ছে। ইয়াদ বললো,” একা কোথায় বাবা তো এখন রিটায়ার্ড করেছে। তোমার সাথেই তো থাকে।”

” তোর বাবার মতো বেরসিক মানুষের সাথে আবার কিসের কথা। আর তুই কথা ঘুরাবি না এই ঘড়ি কার সেটা বল। এতো বছর এতো যত্নে রেখেছিস। তুই কি ভেবেছিস আমি জানি না, খালি প্রশ্ন করে উঠতে পারি নি।”

ইয়াদ মায়ের কাছ থেকে ঘড়িটা হাতে নিয়ে ব্যাগ এ রাখতে গিয়ে বললো,” ঘড়ির মালিককে পেলে নিয়ে আসবো তোমার কাছে।” বলে ইয়াদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হাসলো।

ইয়াদের মা বললেন,” খুঁজে পেলে মানে? মেয়েটা কোথায়?”

ইয়াদ ব্যাগের চেইন লাগাতে গিয়ে একটু থমকে গিয়ে বললো,” হারিয়ে ফেলেছি মা।”

” কি বলছিস এসব? আর যাচ্ছিস বা কোথায়?”, মায়ের প্রশ্নের উত্তরে ইয়াদ বললো,” তোমাকে না বললাম এখান থেকে একটা এনজিও এর সাহায্যে একটা গ্রামে যাবো সেখানে ফ্রী ট্রিটমেন্ট দিবো তারপর কাল রাতে ঢাকায় যাবো।”

” তুই নাকি নতুন শহরের হসপিটালে অ্যাটেন্ড করবি?”, ইয়াদ মায়ের প্রশ্নে না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” নতুন না মা আমার খুব চেনা এক শহর।” তখনই ইয়াদের ফোন বেজে উঠল। ইয়াদ ফোনটা টেবিল থেকে তুলে রিসিভ করল।

ওপাশ থেকে বললো,” স্যার, আমি গাড়ী নিয়ে আপনার বাসার সামনে এসেগেছি।”

” আচ্ছা, আমার সব গোছানো হয়ে গেছে আমি বের হচ্ছি।”, বলে ইয়াদ ফোনটা প্যান্টের পকেটে রেখে বললো,” মা ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এসেছে আমার এক্ষুণি বের হতে হবে।”

ইয়াদ সব কিছু রেডি করে ব্যাগটা হাতে নিয়ে মায়ের কাছে গেলো। ইয়াদের মা আবার প্রশ্ন করলো,” বিয়েটা কি তাহলে করছিস না?”
ইয়াদ নিজের মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,” করবো তো, যেদিন ঘড়ির মালিকে খুজে পাবো।” ইয়াদের মা আর কিছু বললেন না আজ এতো বছর ধরে একটা ঘড়ি আগলে রেখেছে তার ছেলে। তিনি নিজেও চান সেই মেয়ের সাথেই ইয়াদের বিয়ে হোক যাকে সে এতোটা ভালোবাসে।

ইয়াদ মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে এলো। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করায় ইয়াদ বেশি দেরি করলো না গাড়িতে উঠে রওনা হলো।
গ্রামটায় এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেলো।

গ্রামের ভিতরের কোন জমিদার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এদিকে নাকি হোটেলের ব্যবস্থা অনেক দূরে। ইয়াদকে যে লোকেশন এ আসতে বলা হয়েছে সেখানে সে এসে দাঁড়িয়ে আছে কিছুক্ষণ হলো। গ্রামের পরিবেশটা ভালোই লাগছে তার। এর মাঝেই ইফতি চলে এসেছে ইয়াদকে নিতে। ইফতি এই এনজিওর একজন সহযোগী।

” আপনার কোনো সমস্যা হয় নি তো?”, ইফতি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো।

ইয়াদ হেসে না সূচক মাথা নাড়ল। ইফতি ইয়াদের ব্যাগ হাতে নিতে চাইলো ইয়াদ তা দিলো না।
” আরে আরফিন সাহেব দিন ব্যাগটা এতক্ষন আসতে অসুবিধা হয় নি এবার হবে। বিশ মিনিট হাঁটার পর খাল পেরিয়ে বড় রাস্তায় গাড়ী পাবো বুঝলেন?”, বলে ব্যাগ ধরতেই ইয়াদ বললো,” it’s ok, আমি পারবো।”

ইয়াদ ড্রাইভারকে গাড়ী নিয়ে আশেপাশের কোনো গ্যারেজে বা কোনো খালি ঘরে রাখার ব্যাবস্থা করতে বলে ইফতির সাথে হাটা ধরলো।
ইফতি কথা বলতে বলতে হাটছে,” আরফিন সাহেব আর বইলেন না কেও এই গ্রামে এসে সাহায্য করতে ইচ্ছুক না। আমরা বলেছি টাকা দিবো সেটাতেও কেও রাজি না। আর আপনি তো ফ্রী ট্রিমেন্ট দিতে রাজি হয়ে গেলেন। অনেক কষ্টে তিন জন ডক্টরের ব্যাবস্থা করতে পারলাম।”

কথা বলতে বলতে ইয়াদ আর ইফতি বড় রাস্তায় পৌঁছে একটা রিক্সা ভাড়া করলেন। তবে এইগুলো একটু অন্য রকম অনেক জায়গা আছে আর একটু নিচু। ইয়াদ জমিদার বাড়িতে এসে একটু অবাক হলো। বাড়িটা পুরনো লাগছে তবে ভিতরে যে পরিমাণ হাসাহাসি কথা শুনা যাচ্ছে মনে হচ্ছে জমিদারের নাতি নাতনী আনন্দ করতে এসেছে।
ভিতরে নয় দশ জনের মতো রয়েছে দেখে সবাইকে ভার্সিটির স্টুডেন্ট মনে হচ্ছে। ইফতি বললো,” এরাই হল সব। আমাদের দৌড় তো এনজিও খোলা পর্যন্তই ছিলো। সব ধরনের সাহায্য এরাই করে থাকে বাকি দুজন ডক্টর এরাই ম্যানেজ করে আর এই জমিদার বাড়ির সাথে এদের কারোর যোগসূত্র থাকায় সুবিধা হয়েছে।” কথা বলতে বলতে ইফতি খেয়াল করলো ইয়াদকে ক্লান্ত লাগছে।

ইফতি ম্যাডাম বলে একজনকে ডাকলো। মধ্য বয়সী এক মহিলা এগিয়ে আসলেন।” ম্যাডাম ওনাকে ওনার ঘরটা দেখিয়ে দিন।” মহিলা চলুন বলে ইয়াদকে ওর ঘর দেখিয়ে দিলো।
ইয়াদ যতটা খারাপ হবে ভেবেছিলো এতো খারাপ না যথেষ্ট ভালো ব্যাবস্থা করা হয়েছে। ইয়াদ ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে এসে মাকে ফোন করলো। তারপর নিচে নেমে এলো।

এদের দেখে মনে হচ্ছে কোনো এনজিও না এরা পিকনিক করতে এসেছে। এনজিওর লোকজন একপাশে বসে আছে কিন্তু অল্প বয়সী ছেলমেয়েরা একজন মহিলাকে এনে তাকে দিয়ে চিতই পিঠা আর পাটিসাপটা বানাচ্ছে।
ইয়াদের ভিতরে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না সে বাহিরে বের হয়ে এলো। বাড়ির পেছনের নারিকেল বাগান টা খুব সুন্দর লাগছে।

ইয়াদ হেঁটে হেঁটে দেখছিল হটাৎ কেউ তাকে পিছন থেকে হাত টেনে সরিয়ে নিলো। ইয়াদ যখন পিছনে ফিরলো তখন চোখে চশমা পড়া মাথায় লম্বা চুলের একটা মেয়ে তার হাত ধরে সরিয়ে এনেছে। ইয়াদ হাতের দিকে তাকাতেই মেয়েটা অপ্রস্তুত হয়ে হাত সরিয়ে নিলো। উপর থেকে জোড়ে কোনো কিছু পড়ার শব্দে ইয়াদ পিছে ফিরলো। গাছ থেকে ডাব পাড়া হচ্ছিলো, মেয়েটা না সড়িয়ে আনলে ডাবটা ইয়াদের মাথায় পড়তো। ইয়াদ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো,” thanks you so much”

” ঠিক আছে সমস্যা নেই। আপনি কি সেই নতুন ডক্টর?”মেয়েটা বললো।

ইয়াদ মাথা নাড়ল তবে কিছু বলার আগে একটা মেয়ে অর্নীহা বলে ডাকলো। নামটা শুনে ইয়াদ অবাক হয়ে গেলো। যেই মেয়েটা অর্নিহ বলে ডাকলো সে চশমা পড়া মেয়েটির পাশে এসে দাড়িয়ে বললো,” মাগরিবের আজানের পর জমিদার বাড়ির বাহিরে বের হতে বারণ করেছে চল যাই আর থাকা ঠিক হবে না। ইয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল,” স্যার আপনিও চলুন।” বলে মেয়ে দুইটা বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।

চুপ করে আছে কারণ টয়ার নাম ছিল অর্ণিহা তাবাসসুম। এই মেয়ে কি কোনো ভাবে টয়া?

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here