তোমার_খোঁজে_এই_শহরে পর্বঃ১০:#আমার_গার্লফ্রেন্ড,১১

0
1361

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১০:#আমার_গার্লফ্রেন্ড,১১
লেখিকা:#নবনী_নীলা
পর্বঃ১০

টয়া এতো রাগী হলো কবে ইয়াদ সেটাই বুঝতে পারছে না। গাল ফুলিয়ে বসে আছে এমন ভাব করছে যেনো চিরো শত্রুর পাশে বসে আছে। টয়া কানে হেডফোন লাগিয়ে বাসের সীটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে। সামনের ছোটো চুল গুলো গালের দুপাশে এসে পড়েছে, কিছুক্ষণ পর উড়ে টয়ার মুখে পড়ছে। ইয়াদ বিস্ময় নিয়ে টয়াকে দেখছে। হটাৎ করে এভাবে মেয়েটার সাথে তার দেখা হয়ে যাবে এটা সে ভাবেনি।

টয়া ঘুমে কাহিল সে অন্য পাশে মাথা রেখেছে। ইয়াদ ভেবেছিলো মাথাটা ঠিক করে দিবে, হাত বাড়ালো কিন্তু সে সেটা করলো না। উপকার করতে গিয়ে ঘুম ভেঙে ফেললে মহারানী আবার তেলে বেগুনে রেগে উঠবে। টয়া নিজে নিজে ঘাড় সোজা করেলো। তারপর চোখ খুলতেই দেখলো ইয়াদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া বিরক্তি চোখে তাকালো কিন্তু ইয়াদ চোখ সরালো না। আরো এমন ভাবে তাকিয়ে থাকলো যেনো টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার অধিকার আছে তার।
টয়া কিছু বলার আগেই বাস থামলো। সবাই বাস থেকে নামতে শুরু করেছে। টয়া আর ইয়াদ দুজনেই নেমে পড়লো। ইয়াদ অবাক হয়ে শহরটা দেখছে। অনেক কিছু বদলেছে কিন্তু আকাশটা আজও তারায় ভরা। ইয়াদ কিছুক্ষণ এদিকে ওদিকে তাকিয়ে চারিপাশ দেখছিল এর মাঝে টয়া একটা রিক্সায় উঠে চলে গেলো। ইয়াদ পরে আর টয়াকে আশে পাশে দেখলো না। মেয়েটা হটাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। দুই জন নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হলো।

______________________________

টয়ার ভার্সিটির ফাইনাল বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি টয়া একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। একটা অফিসে পার্ট টাইম জব করছে। টয়ার পুরো ফ্ল্যাট এর সব ওয়ালম্যাট টয়ার নিজের ডিজাইন করা। নিজের রুমটা মনের মত করে সাজিয়েছে সে। টয়া আর ঋতু মিলে ফ্ল্যাটটায় থাকে। ঋতু টয়ার সাথেই পড়ে, তবে বেশির ভাগ সময় ঋতু ঘুড়িয়ে বেড়িয়ে কাটায়। তাই পুরো ফ্ল্যাট এ তার একাই থাকতে হয়। বাবা মা গ্রামে চলে গেছে, তারা সেখানেই নাকি থাকতে চায়। টয়ার পড়ুয়া ভাইয়া বিয়ে করে বড়ো ভাইয়ার কাছে চলে গেছে।
টয়া একাই এই শহরে আছে দু বছর ধরে। এই ফ্ল্যাটটা বড়ো ভাইয়ের দেওয়া। টয়া চাইলে তাদের পাঁচতলা বাসাটায় থাকতে পারতো কিন্তু ওই বাসায় একা থাকতে তার ভালো লাগে না। বারো তলা বিল্ডিংটার এগারো তলায় থাকছে টয়া।

বাসাটা অনেক সুন্দর দুইটা রুম, ড্রয়িং, ডাইনিং, কিচেন আর সবচেয়ে ভালো লেগেছে করিডরটা। উপরে তাকালেই তারায় ভরা আকাশটা দেখা যায়। টয়ার আজ কিছু ডিজাইন জমা দিতে হবে। ডিজাইন গুলো নিয়ে সে লিফটে দাড়ালো। লিফটটা বন্ধ হয়ে আসতেই একজন হাত দেওয়ায় দরজাটা খুলে যায়। ফরমাল ড্রেসে একজন লিফটে উঠলো। কালো প্যান্ট , সাদা শার্ট , হাতে সিলভার কালারের ঘড়ি। টয়া মুখের সামনে ডিজাইনগুলো ধরে রাখায় চেহারা দেখতে পায় নি। এতক্ষন ডিজাইনগুলো ধরে রাখতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে সবগুলো লিফটে এলো মেলো হয়ে পরে যায়।

টয়া বিরক্তি নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা তুলতেই বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠলো কারণ সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে আছে। এমনটা সে আশা করেনি, ইয়াদও চমকে গেছে।
দুদিন ধরে যাকে খুজে বেড়াচ্ছে সে কিনা একই বিল্ডিং এ আছে। ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ঘাড় কাত করে হেসে ফেললো। টয়া একটা ঢোক গিলে ডিজাইন গুলো তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। ইয়াদ কিছু ডিজাইন তুলে নিয়ে দেখতে লাগলো, ডিজাইন গুলো দেখে বুঝতে দেরী হলো না যে টয়া একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার।
ইয়াদ কিছুক্ষণ সেগুলো দেখে তারপর বললো,” বাহ্ , impressive!”

এর মাঝে টয়ার ডিজাইন গুলো তোলা শেষ। সে উঠে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে ইয়াদের হাত থেকে বাকিগুলো টান দিয়ে নিয়ে নেয়। ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” কি সমস্যা তোমার? ”
টয়া বিরক্তি নিয়ে বললো,” বুঝলাম আপনি ডক্টর তার মানে এই না সবাইকে জিজ্ঞেস করে বেড়াবেন কি সমস্যা। আর আমার সমস্যা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।”
টয়ার কথা শেষ হতেই লিফট নিচে নেমে দরজা খুলে দিলো। টয়া বেড়িয়ে যাচ্ছিলো ইয়াদ টয়ার হাত ধরে অন্য হাতে আবার লিফটের ১০ বাটনে প্রেস করলো। টয়ার চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো। ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে লিফটের দেওয়ালে সাথে দাড়করালো। টয়ার বিস্ময়ের সীমা রইল না। কি হয়েছে এই ছেলের? টয়া দাতে দাঁত চিপে বললো,” কি করলেন এটা আপনি? আবার কেনো উপরে যাচ্ছি আমরা?”

ইয়াদ টয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের পকেটে হাত ভরে বললো,” আমার ঘড়ি লাগবে তাই।” টয়া ভালোভাবেই দেখতে পারছে ইয়াদের হাতে ঘড়ি আছে তাহলে…? টয়া কটাক্ষ করে বললো,” আপনার কি চোখে সমস্যা? নাকি দুই হাতে দুটো ঘড়ি পড়বেন?”
ইয়াদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,” কালারটা ডাল লাগছে, চেঞ্জ করবো।”
এই কথা শুনে যেনো টয়ার মাথা আরো গরম হয়ে গেল। সামান্য একটা ঘড়ি বদলাতে উপরে উঠছেন তিনি ভেবেই রাগে গা জ্বলছে। টয়া রাগ চেপে বললো,” দেখুন আপনার কাছে অফুরন্ত সময় থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে নেই। আমার এগুলো অফিসে জমা দিয়ে আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।”

ইয়াদ লিফটের দেওয়ালে হেলান দিয়ে প্রশ্ন করলো,” সমস্যাটা তাহলে কার?” টয়া রেগে গিয়ে বলল,” অবশ্যই আমার সমস্যা।”
ইয়াদ বললো,” তোমার সমস্যা নিয়ে আমি কেনো ভাববো? As you said তোমার সমস্যা নিয়ে আমার ভাবনার দরকার নেই।”

রাগে টয়ার গা জ্বলে যাচ্ছে। টয়া ওই কথা বলেছে বলে এভাবে বদলা নিচ্ছে তো, ঠিক আছে। সুযোগ পেলে টয়াও ছেড়ে কথা বলবে না। টয়া অপেক্ষা করে আছে কখন ইয়াদ লিফট থেকে বের হবে ঘড়ির জন্য। একবার বের হলেই টয়া বাঁচে। লিফট এসে থামলো কিন্তু ইয়াদ বের হচ্ছে না, এটা দেখে টয়ার আরো রাগ হচ্ছে। ” কি ব্যাপার? যাচ্ছেন না কেনো আপনি?” টয়ার প্রশ্নে ইয়াদ বললো,” না ঘড়িটা ভালোই লাগছে এখন। বদলানোর প্রয়োজন নেই, নিচেই যাওয়া যাক।” বলে আড় চোখে টয়ার দিকে তাকিয়ে বাটন প্রেস করলো।

টয়ার রাগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। মনে হচ্ছে সে রোলার কোস্টারে উঠেছে, একবার উপরে আবার নিচে অসহ্য লাগছে। এই ছেলেটা আর কোনো বাসা পেলো না? ঢাকা শহরে কি বাড়ির অভাব পড়েছে? যত দূরে দূরে সরে থাকতে চাইছে টয়া ততবার কাছে চলে আসছে ইয়াদ।
লিফটটা নীচে এসে থামতেই টয়া দৌড়ে বেড়িয়ে এলো। মনে হচ্ছে যেনো পিছনে ডাকাতরা ধাওয়া করেছে। ইয়াদ একটু হেসে লিফট থেকে বেরিয়ে এলো।
ইয়াদ নিজের গাড়িতে উঠে বসলো।

টয়া আজ এমনিতেই দেরী করে ফেলেছে। ভার্সিটিতে আবার শয়তান নিরবটা আবার এসে হাজির। এই ছেলেটা কি চাইছে টয়া বুঝতে পারছে না। টয়া এড়িয়ে যেতে চাইলো নিরব এসে হাত ধরে ফেললো। টয়া হাত ছাড়িয়ে বললো,” দেখ আমার ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে। একদম জ্বালাবি না এখন।”
নিরব টয়ার দিকে রেগে বললো,”তোকে ফোন করেছি ধরিস নি কেনো? এনজিও থেকে ফিরে এসে দেখাও করলি না।”

টয়া রেগে বলল,” নীরব আমি এখন ক্লাস এ যাবো।”

নিরব কপাল কুচকে বললো,” আচ্ছা বাবা যা। আমি বাহিরে ওয়াইট করছি ।”

টয়া হাতের ইশারায় থাকতে বলে ক্লাসের দিকে গেলো। টয়ার ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরব বসে রইলো ক্যান্টিনে। টয়ার ক্লাস শেষে টয়া এসে নিরবকে হাত ধরে টেনে দাঁড়করালো। নিরব দাড়াতে দাড়াতে বললো,” আবার কি হলো? শেষ তোর ক্লাস?”
টয়া তাড়া দিয়ে বললো,” হুম, চল এবার আমায় বাসায় দিয়ে আয়।”

নিরব না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” না আমার তোর সাথে কথা আছে। আর এমনিতেই তোর বাসায় যাওয়া আমার জন্য নিষেধ করেছিস। তুই কুমারী মেয়ে , ফুলের মত পবিত্র ব্লা ব্লা……. । তুই বাহির থেকেই তাড়িয়ে দেস। so তুই আমার সাথে থাকবি কিছুক্ষণ।” বলে নিরব আবার বসে পড়ল।

টয়া নিরবের শার্ট টেনে বললো,” উঠ, গাড়ীতে কথা বলবে। চল”

নিরব উঠে দাড়ালো এই মেয়ে নাছোড় বান্দা।
নিরব একটা উবার ডাকলো।
ফ্ল্যাটের সামনে এসে থামতেই টয়া আর নিরব নেমে যায়।
নিরব বিরক্তি নিয়ে বলে,” যা বাসায় যা।” টয়া সেদিকেই যাচ্ছিলো হটাৎ মনে হলো এবারও যদি লিফটে ইয়াদ থাকে। ভেবেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। টয়া তাই নিরবের কাছে এলো। নিরব ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমাকে তোর ফ্ল্যাটে যেতে বলবি না জানি তাহলে আবার ফিরে এলি যে।”

টয়া আমতা আমতা করে বলল,” আমাকে একটু লিফট করে বাসার দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিবি।”
নিরব যেনো কোনো হাসির কথা শুনেছে এভাবে হাসছে। টয়া মুখ কালো করে তাকিয়ে আছে। নিরব হাসি থামিয়ে বললো,” লিফটে ভুত দেখেছিস?” নিরবের কথায় টয়া বির বির করে বললো,” ভুত না রাক্ষস।” তারপর নিরবকে টেনে নিয়ে যায়।

লিফটে ইয়াদ ছিলো না তবে টয়ার ফ্ল্যাটের দরজার সামনে পৌঁছে টয়ার গলা শুকিয়ে এলো। টয়ার মুখোমুখি ফ্ল্যাটটার সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে দরজা খুলছে। এটাই হবার বাকি ছিলো। টয়া পা বড় বড় পা ফেলে নিজের ফ্ল্যাটের সামনে গেলো। ইয়াদ খেয়াল না করলেই সে বাঁচে। ইয়াদ ফোনে ব্যাস্ত, টয়া এর ফাঁকে দরজা খুলে ফেলে। নিরব ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে, টয়া ইশারায় নিরবকে চলে যেতে বললো।

নিরব বলে উঠলো,” তুই ভিতরে গিয়ে দরজা বন্ধ কর তারপর যাবো।”

নিরবের কথায় ইয়াদ পিছে ফিরতেই টয়াকে দেখলো। টয়া সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে দিল। ইয়াদের চোখ গেলো এবার নিরবের দিকে, টয়া কার সাথে এতক্ষন ছিলো। ইয়াদ কান থেকে ফোন নামিয়ে কলটা কেটে ফোনটা পকেটে রেখে তীক্ষ্ণ চোখে নিরবের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিরব কি ভেবে ইয়াদের দিকে এগিয়ে বললো,” এই ফ্ল্যাটটায় আপনি থাকেন?” ইয়াদের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সে কিছু বলল না। নিরব নিজে থেকেই একটু হুমকির মতো দিয়ে বললো,” এই ফ্ল্যাটে আমার গার্লফ্রেন্ড থাকে , বুঝলেন।”

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১১ : #টিয়া_পাখি
লেখিকা :#নবনী_নীলা

“এই ফ্ল্যাটে আমার গার্লফ্রেন্ড থাকে, বুঝলেন?”নিরব যদিও কথাটা ইয়াদকে সাবধান করার জন্যে বলেছে যাতে টয়াকে বিরক্ত না করে। কথাটা শুনার সাথে সাথে ইয়াদের ইচ্ছে করছে এক্ষুণি একটা ঘুষি মেরে ছেলেটাকে শিক্ষা দিয়ে দেয়। ইয়াদ নিজের রাগটা প্রকাশ করলো সজোড়ে দরজা খুলে। ইয়াদের চোখ মুখ দেখে যে কেউ বুঝবে যে সে কতটা রেগে আছে। নিরব আর কিছু বললো না কারণ তার মনে হচ্ছে এমন কথা বলা ঠিক হয়নি ভেবে চিন্তে বলা উচিৎ ছিলো। ইয়াদ দাতে দাত চিপে বললো,” আর কিছু ?” নিরব একটু হাসো হাসো চেহারা করে মাথা নেড়ে চলে গেলো।

ইয়াদ রুমে গিয়ে সোফায় গা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাগ সামলাচ্ছে। ছেলেটার এমন সাহস হয় কীভাবে? আর টয়া কেনইবা এই ছেলের সাথে ছিলো। এটা কি সেই ছেলেটা? ইয়াদের এই সব প্রশ্নের জবাব শুধু টয়া দিতে পারবে। ইয়াদ উঠে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলো কিন্তু রাগ কমছে না। ইয়াদ কিছু না ভেবেই রুম থেকে বেরিয়ে এলো। টয়ার দরজার সামনে এসে বেল বাজলো। টয়া গোসল সেরে বেরিয়েছে মাত্র, কলিংবেলের আওয়াজ শুনে সে ভেবেছে ঋতু। টয়া মাথা মুছতে মুছতে দরজা খুললো, খুলে ইয়াদকে দেখে বিস্ময়ের সীমা রইল না।
এতো রাতে চাইছে টা কি? টয়া ভ্রু কুঁচকে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইল। টয়ার কিছু বুঝে উঠার আগেই ইয়াদ ভিতরে চলে এলো।

টয়া বিস্ময় নিয়ে বললো,” আপনি চাইছেন টা কি? এতো রাতে এভাবে আপনি কারোর বাসায় আসতে পারেন না তারউপর যেখানে একটা মেয়ে রয়েছে।”

ইয়াদ মহা বিরক্তি নিয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে একটা চেয়ারে বসলো। টয়া রেগে গিয়ে বলল,” আপনাকে কি আমি নেমতন্ন করেছি চেয়ারে বসছেন কেনো?দেখুন আপনি আমার ফ্ল্যাট থেকে চলে যান।”

ইয়াদ রাগ সামলে নিয়ে বললো,” তোমার বয়ফ্রেন্ড যে তোমাকে দেখে রাখতে বললো। তাই দেখতে এলাম ঠিক আছো কিনা?” যদিও নিরব এমন কোনো কথা বলেনি তাও টয়ার মুখ থেকে কথা বের করতে একটু চালাকি করেছে ইয়াদ। টয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। কোথ থেকে আবার এই বয়ফ্রেন্ড এলো। টয়া রেগে বলল,” আজেবাজে কথা বলার জায়গা পান না? কিসের বয়ফ্রেন্ড? কোথাকার বয়ফ্রেন্ড? শুনুন আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। এসব ট্রিক আমার সাথে করবেন না।”

ইয়াদ একটু সস্থি পেলে কিন্তু তারপরও বললো,” নেই বললেই হলো নাকি? তোমার বয়ফ্রেন্ড নিজে আমাকে বলেছে।”

টয়ার রাগে গজগজ করছে। বলা নেই কওয়া নেই কোথা থেকে আবার বয়ফ্রেন্ড উদয় হলো। আর রাতের বেলা এই লোকটা আবার সেই বয়ফ্রেন্ডের খোঁজ জানাতে এসেছে। টয়া রেগে বলল,” কে সেই হতচ্ছাড়া? কে রটিয়েছে এসব?”

টয়ার কথায় ইয়াদ একগাল হাসলো তারপর বললো,” যেই হতচ্ছাড়া তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিলো সে নিজে বলেছে।”

টয়া অবাক হয়ে বললো,” নিরব বলেছে ?”
ইয়াদ মাথা নাড়িয়ে বললো,” ইডিয়েটটার নাম তাহলে নিরব!”

টয়া আরো রেগে বললো,” নিরব আমার খালাতো ভাই। ও এসব কেনো বলবে? আপনি ইচ্ছে করে আমাকে জালাচ্ছেন।”

ইয়াদ চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,” ওই ইডিয়েটাকেই জিজ্ঞেস করো সে কি বলেছে।” বলতে বলতে ইয়াদ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এভাবে রুমের ভিতরে আসাটা তার উচিৎ হয় নি সে বুঝতে পেরেছে।

টয়া চিন্তায় পড়ে গেলো, কথাগুলো টয়ার ঠিক হজম হচ্ছে না। ইয়াদ ফিরে এসে টয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো,” এসো দরজা বন্ধ করো।” টয়া হা করে তাকিয়ে আছে। সে এতক্ষন ইয়াদকে নিজের রুমে বসিয়ে রেখেছে তার উচিৎ ছিলো আরো আগে তাকে বের করা। বাহ্ কি ভদ্রতার নমুনা জোর করে বাসায় ঢুকলো আবার নিজে নিজে চলে যাচ্ছে। যাক বাঁচা গেল।

ইয়াদ দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে গিয়ে বললো,” ইডিয়েটটার নাম যেনো কি?” টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” আপনি কাকে ইডিয়েট বলছেন?”

ইয়াদ হাসো হাসো চেহারা করে বললো,” তুমি যাকে হতচ্ছাড়া বলেছিলে।”

” সে আমি বলতেই পারি, আপনি কেনো বলবেন? আর আমি আপনার সাথে এতো কথাই বা কেনো বলছি। আপনি প্লীজ যান।” ইয়াদ মনে করে বললো,” ও নিরব দেট ইডিয়েট । মনে পড়েছে।”

টয়া ইয়াদকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। ইয়াদের এবার রাগ কমেছে, সে নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। টয়া কিছুতেই বুঝতে পারছেনা নিরব এসব উল্টা পাল্টা কথা ইয়াদকে কেনো বলতে যাবে? নিরব যদি বলে থাকে তাহলে ওর বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে টয়া। আর এই ইয়াদ? এর কতো বড় সাহস হুট করে রুমে চলে এলো, যদিও ভদ্র ভাবে চলেও গেছে তাও সে আসবে কেনো? আমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা কেনো উনার?

________________________

সকালে বেলের শব্দে ইয়াদের ঘুম ভাঙ্গলো এতো সকালে কে আসবে? ইয়াদ কোনো মতে চোখ খুলে উঠে এসে দরজা খুললো। খুলে ইয়াদ একটু চমকালো তার মা এত সকালে এখানে কি করছে? ইয়াদের মা ইয়াদকে সরিয়ে ভিতরে এসে সোফায় বসলো। ইয়াদ ঘুম ঘুম চোখে দরজা বন্ধ করলো। তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না তার মা এখানে কেনো এসেছে।

ইয়াদের মা ঘাম মুছতে মুছতে বললেন,” বুঝলি ফজরের নামাজ পড়ে রওনা দিয়েছি তাই এতো তাড়াতাড়ি আসতে পেরেছি।”

ইয়াদ চুপ করে একপাশে বসে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে কিছুক্ষণ পর প্রশ্ন করলো,” মা বাবা কি করবে তুমি যে চলে এলে?”

ইয়াদের মা কটাক্ষ করে বললো,” কি করবে মানে? খেয়ে দেয়ে ঘুমাবে। সব রান্না করে বক্স ভরে ফ্রিজে রেখে এসেছি। আমি কয়েকদিন তোর কাছেই থাকবো বুঝলি।” ইয়াদ গালে হাত দিয়ে হা সূচক মাথা নাড়ল।

ইয়াদের মায়ের নাম মিলি আক্তার। তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,” বাপ বেটা হয়েছে একরকম।”

মায়ের কথায় ইয়াদ হাসলো তারপর উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে রেডি হয়ে ক্লিনিকে গেলো। যাবার আগে মাকে কোথাও বের হতে বারণ করেছে ইয়াদ কিন্তু কে শুনে কার কথা।
মিলি আক্তার বের হয়ে কিছু কেনা কাটা করলেন। লিফটে উঠে টয়ার সাথে দেখা কেউ কাউকে চিনে না যদিও, তারপরও টয়া মিলি আক্তারকে সালাম দিলো। টয়া সাথে কথা বলে টয়াকে বেশ ভালোই লাগলো তার। কি মিষ্টি চেহারা!

টয়ার ওনার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছিলো কারন উনি অনেক আদর ভরা কণ্ঠে কথা বলে ঠিক তার বাবা যেভাবে বলে।
লিফট থেকে বেড়িয়ে মিলি আক্তার যখন ইয়াদের দরজার লক খুলছিলেন সেটা দেখে টয়ার কেমন যেন লাগলো।

মিলি আক্তার হাসতে হাসতে বললো,” এই ফ্ল্যাটে আমার ছেলে থাকে। এতো বদজ্জাত আর বলো না নিজের সুবিধা অসুবিধা কাউকে বলে না। আরে আমি মা আমাকে বল, আচ্ছা আমাকে বলতে মনে না চাইলে বিয়ে করিয়ে দেই বউকে বলিস সেটাও করতে রাজি না। এ কয়দিন কি খেয়েছে জানো? শুধু নুডুলস খেয়েছে। রান্নার কোনো জিনিস কেনার সময় পায়নি সে।”
ইয়াদের মায়ের কথা শুনে কেমন জানি মায়া লাগছে টয়ার। সব কথা কি অবলীলায় বলছে।

রাতে ইয়াদ ফিরে বাসায় মাকে না দেখে একটু চিন্তায় পড়ে গেলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর মিলি আক্তার বাসায় এলো। ইয়াদ এতোক্ষণে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এলো। তারপর রেগে বললো,” মা তোমাকে না আমি বারন করলাম বাসা থেকে বের হতে না।”
মিলি আক্তার বললো,” বাসা থেকে বের হবো না কোনো? আমি কি বুড়ি হয়ে গেছি যে বাসায় বসে থাকবো। ছেলের বিয়ে দেই নি, নতিনাতনির মুখ দেখিনি।”

ইয়াদ সরু চোখে বললো,” মা তুমি থামবে? এবার বলো কোথায় গিয়েছিলে?”

” তোর সামনের ফ্ল্যাটের মেয়েটাকে কে দেখেছিস? কি মিষ্টি দেখতে!”

বলতেই ইয়াদ চুপ করে থেকে তারপর বললো,” হুম, তা কি হয়েছে?”

মিলি আক্তার সোফায় বসে বললো,” ওর কাছেই ছিলাম এতক্ষন। কি ভালো হাতের রান্না! আমাকে গরম মাংসের সঙ্গে পরোটা করে খাওয়ালো অসাধারন!” ইয়াদ নিজের মায়ের মুখে টয়ার প্রসংশা শুনে নিচের ঠোঁট চেপে হাসছে।

মিলি আক্তার ছেলেকে বেঙ্গ করে বললো,” হাসবি না, একবার দেখলে বুঝতি। মেয়েটার নাম জানিস?” ইয়াদ দুইহাত বুকের কাছে ভাজ করে না সূচক মাথা নাড়ল। মায়ের কথা শুনতে বেশ মজাই লাগছে তার।

মিলি আক্তার বললো,” মেয়েটার নাম টয়া, দেখবি ওর জামাই ওকে টিয়া পাখি বলে ডাকবে।” ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। টিয়া পাখি নামটা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। সে আর যাইহোক টিয়া পাখি বলে ডাকবে না। মিলি আক্তার উঠে এসে বললো,” তোর সেই ঘড়িওয়ালিকে পেয়েছি? ওই ঘরিওয়ালির জন্যে না হলে এই মেয়েকেই আমি বউ করে আনতাম।”

ইয়াদ মায়ের কথায় হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না। মিলি আক্তার অবাক হয়ে বললো,” কিরে এভাবে হাসছিস যে?”

ইয়াদ হাসি থামিয়ে বললো,” যদি বলি তাকে পেয়ে গেছি?”

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here