তোমার_খোঁজে_এই_শহরে পর্বঃ১৪ : #Wishing_star ⭐,১৫ বিয়ে

0
1323

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১৪ : #Wishing_star ⭐,১৫ বিয়ে
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ১৪ : #Wishing_star ⭐

” টয়া আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না। মা এই সহজ কথাটা তুমি কেনো বুঝতে পারছো না?” ছেলের এমন কথায় মিলি আক্তার বললেন,” চেস্টা না করে হাল ছাড়লে হবে?”
ইয়াদ কোমরে হাত দিতে দাড়িয়ে পড়ল,” মা তুমি আমার বিয়ে নিয়ে কেনো পড়েছ বলতো? আর তুমিই টয়ার বাবা মাকে ডেকেছো তাই না?”
” ধেত, আমি কেনো ডাকবো? মেয়ের এমন ঘটনা শুনে ওনারা চলে এসেছেন। আমি কি নিজে ফোন দিয়ে ডেকে এনেছি? টয়ার ফোন বাজছিল বেচারির ঘুম ভেঙে যেতো তাই কথা বলেছি একটু।”বলেই ছেলের উদ্দেশে হাসলেন।
” আচ্ছা, তাই? তাহলে বাবা কি করে একরাতের মধ্যে ঢাকায় চলে এলো?”, বলে সন্দেহের চোখে তাকালো ইয়াদ।
মিলি আক্তার হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললো,” তোর বাবার ফোন ধরিনি যে কালকে তাই এসেছে, কল দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে তো আমার মোবাইল। বুড়োটাকে শিক্ষা দিতে হবে বুঝলি?”
ইয়াদ বললো,” বাবাকে বুড়ো বলছো!”

” এই শোন বেশী বাবা বাবা করিস না। আমি যাই ওনাদের নিয়ে আসি।”, মায়ের কথায় ইয়াদ চমকে উঠে বলে,” ওনাদের মানে কাদের?”
মিলি আক্তার যেতে যেতে বললো,” টয়া আর টয়ার বাবা- মা ওনাদের ডিনারের দাওয়াত দিয়েছি।”
ইয়াদ নিজের মায়ের কাজকর্মে হতবাক হয়েগেলো। ইয়াদের বাবা টিভিতে নেশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেল এ ম্যান vs ওয়াইল্ড দেখছে। ইয়াদের বাবা একজন শান্তি প্রিয় মানুষ আর এদিকে তার মা অশান্তি প্রিয়।

ইয়াদের মা সবাইকে নিয়ে ফ্লাটে ঢুকলেন। ইয়াদ নিজের রুমে ছিলো। ইয়াদ অনেক্ষন পর রুম থেকে বেরিয়ে এলো। টয়ার বাবা তার বাবার সাথে কি বিষয়ে খুবই জোরালো এক আলোচনায় বসেছে। টয়ার বাবা একের পর এক কথা বলছে ইয়াদের বাবা চুপ করে শুনছেন এবং মাঝে মাঝে নিজের কিছু মন্তব্য জানাচ্ছেন।
এদিকে উল্টো, ইয়াদের মা বক বক করছে টয়ার মা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। ইয়াদের মা এমনভাবে কথা বলে সবাই আগ্রহ সহকারে শুনে। টয়া ডাইনিং টেবিলে বসে ফোন নিয়ে ব্যাস্ত, হাতে ম্যাঙ্গো জুস।
সব দেখে ইয়াদ টয়ার পাশের চেয়ারটা টেনে বসলো। টয়া একবার আড় চোখে তাকিয়ে আবার ফোনে দৃষ্টি স্থির করলো। ইয়াদ অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য একটু কেশে নিলো। টয়া ইয়াদ নামক বিষয়টাকে ইগনোর করছে। ইয়াদের মেজাজ একটু বিগড়ে গেলো তার বাসায় এসে তাকেই ইগনোর করছে।
ইয়াদ টয়ার হাত থেকে হটাৎ করে জুসের গ্লাসটা নিয়ে নিলো। টয়া এবার বিরক্তি চোখে ইয়াদের দিকে তাকালো তরপর বললো,” দেখুন ওটা আণ্টি আমার জন্য বানিয়েছে। আমাকে ফেরত দিন।”
ইয়াদ গ্লাসটা নাড়িয়ে চারিয়ে দেখে বললো,” আচ্ছা ” বলে গ্লাসটা একটা চুমুক দিতেই টয়া চোখ বড় বড় করে ইয়াদের দিকে তাকালো।
ইয়াদ এমন কিছু করবে টয়া ভাবেনি। এক চুমুক দিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে গ্লাসটা টয়ার দিকে এগিয়ে দিলো। টয়া ভ্রু কুচকে ফেললো। ইয়াদ জুসের গ্লাসটা টয়ার সামনে রাখতে গিয়ে বললো,” তুমি অনেক অকৃতজ্ঞ সেটা কি তুমি জানো?”
টয়া চোখগুলো রসগোল্লার মতোন করে তাকালো তারপর বলল,” আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?”
” কালকে এতো কষ্ট করে তোমাকে বাঁচলাম তুমি একটা ধন্যবাদ দিলে না।” ইয়াদের কথায় টয়া এমন ভাবে তাকালো যেনো তার কাছ থেকে তার একটা কিডনি চেয়েছে ইয়াদ।
” আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন?” টয়ার কথায় ইয়াদ বললো,” নাহ্ ভূত তোমাকে কোলে করে ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছে। ”

টয়া আরো বিস্ময় নিয়ে বললো,” কিহ? আমাকে কোলে করে এনেছে! আপনি! আপনি কোলে নিয়েছেন আমাকে? কেনো?”

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” আসলে ভুল করেছি, তোমাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাটিয়ে হাটিয়ে নিয়ে আশা উচিৎ ছিলো।”
” তাই বলে আপনি এভাবে অনুমতি না নিয়ে কোলে নিবেন?” উত্তেজিত হয়ে বললো টয়া।
ইয়াদ একটা ভ্রু তুলে বলল,” ও আচ্ছা তোমার অনুমতি নিতে হতো। তাহলে সেখানে অজ্ঞান অবস্থায় আগে তোমাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ ছিলো এক্সকিউজ মি ম্যাডাম আমি আপনাকে কোলে করে বাসায় পৌছে দিবো? তারপর অপেক্ষা করতাম কখন তোমার জ্ঞান ফিরবে তুমি অনুমতি দিবে। তারপর কোলে নিতাম, হুম বুঝতে পেরেছি।”

ইয়াদের উপহাসে টয়ার রাগ হলো সে সামনে থাকা জুসের গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোক পুরোটা শেষ করে ফেললো।
ইয়াদ সেটা দেখে হেসে ফেললো, রাগের মাথায় টয়া কি করেছে সে সেটা নিজেও বুঝতে পারছেনা। টয়া অবাক হয়ে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে থাকতেই তার মনে পড়লো ইয়াদ এই জুসটায় চুমুক দিয়েছিলো। এটা কি করে ফেলল টয়া? সে অনেক অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। টয়া আর ইয়াদের চেয়ারের মাঝে অনেকটাই দূরত্ব ছিলো। ইয়াদ টয়ার চেয়ারের মাথা ধরে নিজের দিকে টেনে আনতেই টয়া হকচকিয়ে উঠলো। সে আশেপাশে দেখলো কেউ দেখেছে কিনা? এমন সময়ে ইয়াদ টয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো,” কি দেখছো? কেউ দেখেনি। ”
ইয়াদের কাছাকাছি থাকলেই টয়ার বুকের ভিতরটা কেমন যেন করে।টয়া অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো,” আপনি কি শুরু করেছেন? আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে।” বলে টয়া উঠে যেতেই টয়ার হাত ধরে ফেললো ইয়াদ। টয়া দাড়ানোর আগেই বসে পড়লো। টয়া হাত ছড়ানোর জন্য নানা চেস্টা করছে আর ভয়ও লাগছে কেউ না জানি দেখে ফেলে।
টয়া আওয়াজ নিচু করে বললো,” আমার হাতটা ছাড়ুন।”
ইয়াদ টয়ার হাতটা নিজের কাছে টেনে নিতেই টয়া হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। ইয়াদ টেবিলের নিচে হাতটা আবার শক্ত করে ধরে বললো,” তুমি যদি এই চেয়ার উঠে অন্য চেয়ারে বসো তারপর আমিও পিছু পিছু গিয়ে তোমার পাশের চেয়ারে যদি বসি। কেমন হবে ব্যাপারটা? তোমার বাবা মা কি ভাববে? আর তুমি যদি না চাও আমি তোমার পিছু পিছু যাই তাহলে চুপ করে এখানে বসে থাকো।”

টয়ার ইয়াদের উপর বিশ্বাস নেই এই ছেলে সব পারে। উপায় না পেয়ে টয়া বসে রইলো। এই ছেলেটা এতো কথা শিখেছে কবে কে জানে? টয়া মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বসে আছে আর নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। টয়ার এবার রাগ লাগছে, হাতটা এভাবে ধরে বসে আছে কেনো সে কি তার প্রেমিকা।
টয়া বির বির করে বললো,”হাত ধরে আছেন কেনো?”
“ভালো লাগছে, তাই।” বলে অন্য হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে টেবিলে রাখলো। টয়া তেজী গলায় বললো,” আমার ভালো লাগছে না।” ইয়াদ ফোনর স্ক্রীন স্ক্রোল করতে করতে বলল,” সে তোমার কিছুই ভালো লাগে না। তাই বলে কি সব কিছু তোমার ইচ্ছে মতো হবে?”

” মানে? আপনি আমার হাত ধরে আছেন কেনো আমি সেটাই বুঝতে পারছি না। আমি কি আপনার প্রেমিকা লাগি? হাত ছাড়ুন।” জোর দিয়ে বললো টয়া।
বলে সে বিরক্তি নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়াদ ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো,” উহু, you’re my wishing Star।”
ইয়াদ কথাটা একটু আস্তে নিজে নিজে বির বির করলো। টয়া কিছু না বুঝে আড় চোখে তাকিয়ে থেকে বললো,” কি বলছেন জোড়ে জোড়ে বলুন। বির বির করেছেন কেনো?”
” তুমি এতো ঝগড়ুটে কেনো?”ইয়াদের কথায় টয়া রাগে গজগজ করতে লাগলো।
তাকে ঝগড়ুটে বলা কতো বড় সাহস! সব সময় ঝগড়া বাজায় কে? নিজে ঝগড়া শুরু করে এবার আমাকে ঝগড়ুটে বলা। টয়া টেবিল থেকে অন্য হাত দিয়ে একটা কাটা চামচ তুলে ইয়াদের মুখের সামনে হুমকি স্বরূপ দেখাতেই ইয়াদ হেসে উঠে বললো,” সিরিয়াসলি টয়া” টয়া কিছু বলতে যাবে এমন সময় মিলি আক্তারের কণ্ঠ,” কি ব্যাপার কাটা চামচ হাতে কি করছো তোমরা।” শুনেই টয়া সাথে সাথে চামচটা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
ইয়াদের মা ট্রেতে খাবার এনে টেবিল সাজালেন। ইয়াদ এখনো হাতটা ধরে আছে। টয়া ভীষণ অসস্থিতে পরেছে কেউ দেখে ফেললে কি যে ভাববে। টয়া আড় চোখে ইয়াদের দিকে তাকালো সে এমন ভাব করছে যেনো কিছু হয়নি।
টয়া একটু চালাকি করে নিচু স্বরে বললো,” হাতটা ব্যাথা করছে ছাড়ুন।” ইয়াদ যদিও টয়ার কথা বিশ্বাস করেনি তাও সে ছেড়ে দিলো হাতটা না হলে ইয়াদেরই সমস্যা পড়তে হতো কারণ ইয়া ডান হাতে টয়ার হাত ধরেছিলো। একটু পর এমনেই ছেড়ে দিতে হতো অন্য হাতে ধরে রাখা যেত কিন্তু থাক একটু আগে কাটা চামচ হাতে নিয়েছে কিছুক্ষণ পর হয়তো ছুরি দেখিয়ে শাসিয়ে যেতো।
টয়া যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো ছাড়া পেয়ে,হাতটা গুটিয়ে রাখলো।

খাবার টেবিলে সবাই গল্প করছিল টয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেয়ে নিয়ে উঠে পড়ল। কখন আবার হুট করে হাত ধরে বসে এই চিন্তায় সে তাড়াতাড়ি খেয়ে একপাশের সোফায় বসে রইলো। এখন হুট করে বাসায় যাবার কথা বলতেও পারছেনা, সবাই খাবার টেবিলে আড্ডা দিচ্ছে। কখন যে শেষ হবে এদের আড্ডা বাসায় গেলেই টয়া বাঁচে। টয়ার বাবা ইয়াদের সাথে তখন থেকে কি যে গল্প শুরু করেছে থামার নাম নেই। এই ছেলের সাথে এতো কথা বলার দরকার কি তার বাবার। খাওয়া শেষ উঠে পড়লেই তো হয়। ইয়াদের মা কি যেনো একটা বললেন সেটা কানে আসতেই টয়া চমকে উঠলো।
” আপনার মেয়েটাকে আমার ভীষন পছন্দ হয়েছে ভাবি। ওদের দুজনকে মানবে ভালো।” এতটুকু শুনেই টয়া হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে গেলো।

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১৫ : #বিয়ে!!!!
লেখিকা :#নবনী_নীলা
আজ বিয়ে কথাটা শুনেই টয়ার পিলে চমকে উঠলো। মানে কি বলা নেই কওয়া নেই হুট করেই বিয়ে? সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কিচেনে গিয়ে ইয়াদের মায়ের সাথে তার মায়ের আলাপ কানে আসতেই টয়া যেনো আকাশ থেকে পড়লো। কাল রাতে যা শুনেছিল সব তাহলে সত্যি কেউ কাল এই ব্যাপারে কোনো কথা বলে নি তাই টয়া ভেবেছিলো তার হয়তো সব বোঝার ভুল কিন্তু এবার তো স্পষ্ট শুনেছে সে। টয়া স্ট্যাচুর মত সেখানে দাড়িয়ে রইলো। মিলি আক্তার আর টয়ার মা এই নিয়ে টয়ার সাথেই কথা বলবেন বলে যাচ্ছিল টয়াকে এখানে পেয়ে তাদের ভালোই হলো।
টয়া যা শুনেছে সেটা নিয়ে সে কল্পনাও করতে পারছেনা। টয়াকে এনে দুজনের সামনে বসালেন। টয়ার সামনে মিলি আক্তার আর তার মা।
টয়ার মা আর দেরী না করে বললেন,” শোন ইয়াদ ছেলেটাকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। ওর পরিবার তোকে কতো যত্ন করে রেখেছে বলতো। তোর বাবা আর ওনারা মিলে আজই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চান। ইয়াদের বাবা আবার তোর বাবার পরিচিত আগের।”
” আর আমার ইচ্ছে? তার বুঝি কোনো মূল্য নেই? আমি এখণ এসবের মধ্যে জড়াতে চাই না।” জোর গলায় বললো টয়া।

” টয়া তোমাকে এসবের মধ্যে এখন জড়াতে কেউ বলছেনা। আমাদের এখন বয়স হয়েছে এভাবে শহরে এসে থাকতে পারিনা। তোমরা একা একা থাকো কখন কার কি বিপদ হয়ে যায় সে চিন্তায় চিন্তায় সারাদিন কাটাতে হয়। আমরা চাই শুধু তোমরা একে অপরের খেয়াল রাখো। তাহলে আমরা একটু চিন্তামুক্ত হই। এক্ষুণি সংসার করতে কেউ বলছেন না তোমায়। শুধু হাতে কলমে রেজিস্ট্রি করা হবে। তোমার ভাইয়েরা আছে তারা আসবে আমদের আত্মীয় স্বজন তারা আসবে ধুমধাম করে তখন বিয়ে হবে। এখন এ বিয়ের কথা কাউকে জানাবারও প্রয়োজন নেই।”মিলি আক্তারের কথাগুলোয় টয়া চুপ করে ছিলো। তার মাথায় একটাই কথা ইয়াদকে সে বিয়ে করবে না।

টয়ার মা সরাসরি জিজ্ঞেস করলো,” তোর কি পছন্দের কেউ আছে?” এই প্রশ্নের উত্তর শুনার জন্য ইয়াদের মা আগ্রহ নিয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া মাথা নিচু করে না সূচক মাথা নাড়ল। মিলি আক্তার যেনো শান্তি পেলেন।
” কাউকে পছন্দ না করলে এই বিয়েতে সমস্যা কি তোর?” মায়ের প্রশ্নে টয়া চুপ করে আছে। যে ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছে সে ছেলেই আসল সমস্যা। টয়ার নিরবতা দেখে ইয়াদের মা বললো,” আমাদের বুঝি ভালোলাগেনি তোমার?”
টয়া ইয়াদের মাকে কষ্ট দিতে চায় না উনি অনেক আলাদা একজন মানুষ যাকে বন্ধুর মতো সব বলা যায়। টয়া মাথা তুলে নিচু স্বরে বললো,” আণ্টি আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না আমি সেটা বলিনি।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টয়া আরো বললো,” ঠিক আছে তোমরা যা আমার জন্য ভালো মনে করেছো আমি সেটা মেনে নিচ্ছি তবে ওই ছেলের সাথে আমি একঘরে থাকবো না।”
টয়ার এমন আযুক্তিক কথা শুনে টয়ার মা ধমক দিতে যাবেন এমন সময় মিলি আক্তার তাকে থামিয়ে বললেন,” টয়া তো ঠিকই বলেছে এখন একসাথে থাকতে যাবে কেনো? সবে তো মাত্র রেজিস্ট্রি হবে। তোমরা আলাদা থেকো সমস্যা নেই।”
যাক একটা বিপদ থেকে বাঁচার অনুমতি পেয়েছে ভেবে বিয়ের ভয়টা একটু কমেছে টয়ার তবে ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না।
এদিকে ইয়াদ এ ব্যাপারে কিছুই জানে না হঠাৎ তার মা এসে বললো,” তোর টয়া বিয়েতে রাজি হয়েছে। দেখছিস আমি বলেছিলাম না?”
“টয়া বিয়েতে রাজি হয়েছে! হতেই পারে না”, নিশ্চয়তার সাথে বললো ইয়াদ
” রাজি হয়েছে তবে বলেছে তোর সাথে একঘরে থাকবে না। যাক সেটা বিয়ের পর তোদের পার্সোনাল ব্যাপার। সেটা দিয়ে আমার কোনো কাজ নেই। তোর বউ তুই বুঝে নিস।”
ইয়াদ বিস্ময় নিয়ে বললো,” আসলেই রাজি হয়েছে? কীভাবে সম্ভব?”
” মা থাকতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। এবার তোরা বিয়ের পর মারামারি কর কিংবা চুলোচুলি কিন্তু একসাথেই থাক। ”

বিয়ের পেপার এ ওরা সহজেই সাইন করে ফেললো। বিয়ে বিয়ে কোনো অনুভুতি কেউ পেলো না। টয়া সন্ধ্যে বেলা নিজের রুমে বসে টিভি দেখছিল এমন সময় তার মা হাতে একটা শাড়ি হাতে ঘরে এলো। যা চেয়েছিল সব তো করেই দিয়েছে আবার এ কোন আপদ সঙ্গে করে নিয়ে আসছে তার মা। এবার কি শাড়ি পড়তে হবে। মায়ের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে টয়া। টয়ার মা শাড়ি ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বললো,”এভাবে তাকিয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। শাড়ি পড়ে বাহিরে এসো।”টয়া নানা অজুহাত দেখিয়ে বাঁচার চেস্টা করলো কিন্তু তাকে আজ শাড়ি পড়তে হবে। সবার সামনে শাড়ি পড়ে যেতে হবে কতটা embarrassing একটা কাজ। টয়া কোনো মতে শাড়িটা পরে বের হয়ে এলো। বাহিরে এসে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো ইয়াদ, ইয়াদের মা বাবা সবাই বসে আছে। টয়া এদের দেখে আবার রূমে চলে যেতে চাইলো টয়ার মা টয়াকে জোর করে এনে ইয়াদের পাশে বসিয়ে দিলো। ইয়াদ টয়ার থেকে চোখ সরাতে পারছে না। বেগুনি রঙের শাড়িটাতে টয়াকে অপরূপা লাগছে। চুল গুলো খোলা রাখার তাকে যেনো আরো সুন্দর লাগছে। ইয়াদ সোফার এক পাশের উপরিভাগে এক হাত মেলে বসে ছিলো।নেভিব্লু রঙের শার্ট আর জিন্স প্যান্ট তাকেও মানিয়েছে।
টয়ার মা টয়ার মাথায় শাড়ির আঁচলটা তুলে দিলেন। টয়া সেভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে এগুলো কি শুরু হয়েছে তার সাথে।

একসাথে কিছুক্ষণ থাকার জন্য বড়রা ওদের ছাদে পাঠিয়ে দিল। টয়া আসতেই চাইছিলো না ইয়াদের সাথে টয়ার মা ঠেলে ঠুলে পাঠিয়ে দিলেন। টয়া ইয়াদের থেকে দশ হাত দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ইয়াদের এখনো টয়ার বিয়েতে রাজি হওয়াটা অস্বাভাবিক লাগছে। ইয়াদ এক দৃষ্টিতে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া সেটা ভালোই বুঝতে পারছে কিন্তু সে তাকাচ্ছে না। কতক্ষণ এইখানে থাকতে হবে কে জানে? এই ছেলের সাথে আবার নাকি বিয়েও হয়ে গেছে। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে এসে বললো,” গাল ফুলিয়ে রেখেছো কেনো?”
টয়া আড় চোখে তাকালো কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না কথা বললেই কথা বাড়ে।
” বিয়ের শোকে কি কথা বন্ধ হয়েগেছে?”, ইয়াদ কাটা ঘায়ে একটু নুনের ছিটে দিয়ে দিলো আর কি!
” আপনার সমস্যা কি বলুন তো? আপনিই এইসব করেছেন তাই না। সব আপনার প্ল্যান, এবার আমি সব বুঝতে পারছি।”, কড়া গলায় বলল টয়া।
ইয়াদ তাচ্ছিল্য করে বললো,” তুমি নিজেকে কি ভাবো বলোতো ? তোমাকে বিয়ে করতে এতো ঝামেলায় কেনো পড়তে যাবো আমি। মেয়ের কি অভাব পড়েছে?”
” তাহলে এ বিয়েতে রাজি হলেন কীভাবে? আপনার যাকে পছন্দ আমার থেকে ভালো better তাকেই বিয়ে করতেন।” তেজ দেখিয়ে বললো টয়া।
” হুম, ইচ্ছে তো এমনটাই ছিলো। কিন্তু কি করার বলো মা বাবার কথা তো ফেলতে পারি না।”, বলে ইয়াদ টয়ার দিকে তাকালো টয়ার রাগী মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। মুখে তো এতো কথা বলে তাহলে এখন অন্য মেয়ের কথা শুনে মুখ ফ্যাকাশে করেছে কেনো?
” ও আচ্ছা, বাবা মার চাপে বিয়েটা করেছেন!” , শান্ত গলায় বলল টয়া। টয়ার ভিতরটা কেমন জানি করে উঠলো ইয়াদের কথায়। তাহলে কি তার অন্য কোনো মেয়েকে পছন্দ।
” হুম , কেনো তুমি কি ভেবেছিলে?”, বলে ইয়াদ টয়ার দিকে ঝুঁকে এগিয়ে আসতেই টয়া মুখ সরিয়ে সামনের রেলিং ধরে দাড়িয়ে বললো,” কিছু ভাবিবি”, শান্ত ভঙ্গিতে বললো টয়া।
” তা তুমি কেনো রাজি হয়েছো? তুমিও কি বাবা মার চাপে?”ইয়াদের এমন প্রশ্নে টয়া শুধু হা সূচক মাথা নাড়ল টয়ার দৃষ্টি সামনে স্থির। বাতাসে টয়ার চুলগুলো উড়ছে ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা ঘোরের মধ্যে চলেগেছে। ইয়াদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বললো,” তোমার পছন্দের কেউ নেই?”
” নিজের পছন্দের উপর থেকে আস্থা অনেক আগেই উঠে গেছে আমার।”, ইয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো টয়া। ইয়াদ নিজেকে সামলে নিলো।
টয়ার আর থাকতে ভালো লাগছে না। টয়া চলে যেতেই ইয়াদ টয়ার হাত ধরে ফেললো। টয়া জোর গলায় বললো,” আমার হাত ছাড়ুন। আপনাকে আমি বারণ করেছি না আমার হাত ধরবেন না।”

টয়ার কথায় ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে এলো। টয়া ইয়াদের এভাবে তাকে কাছে নিয়ে আসায় চমকে গেলো। টয়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ইয়াদ টয়াকে আরো কাছে এনে বললো,” কি জানি বলছিলে একটু আগে? আমাকে যেনো তোমার হাত না ধরি? শুনলাম না তোমার কথা। কি করবে তুমি শুনি?”
ইয়াদের হটাৎ এমন আচরণে ভেবাছেকা খেয়ে গেলো। কি বলছে এইসব! টয়া নিজেকে সামলে বললো,” আমি চিৎকার করবো। ”
বাতাসে টয়ার সামনের চুল গুলো চোখে এসে পড়ছে ইয়াদ চুল গুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে ঠোঁটে বাকা হাসি রেখে বললো,” তাই বুঝি। চিৎকার বন্ধ করার ওষুধও আমার জানা আছে।”
টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” মানে?” ইয়াদ টয়ার কথায় ঝুকে এসে টয়ার ঠোটের দিকে তাকাতেই টয়ার কাছে চিৎকার বন্ধের ওষুধের মানে পরিষ্কার হয়ে গেলো। টয়া সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রাগে বলে উঠলো,” আপনি…” বলেই থেমে গেলো।
” কি হলো থেমে গেলে যে বলো আপনি আমার বর।”, টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো ইয়াদ। টয়া তেজ দেখিয়ে বললো,” বলবো না। ছাড়ুন আমাকে।”
ইয়াদ টয়াকে আরো কাছে এনে বললো,” তাহলে আমিও ছাড়ছি না।”
টয়া ইয়াদকে সরানোর চেষ্টা করলো কিন্ত কোনো লাভ হলো না। ইয়াদ বললো,” আচ্ছা তুমি যদি তিনবার জোরে জোরে বলো ইয়াদ আরফিন আমার বর তাহলে ছেড়ে দিবো।”
” আবার জোরে জোড়ে কেনো বলতে হবে? জীবনেও বলবো না।”, কড়া গলায় বলল টয়া।
” আমিও ছাড়বো না।”, কথার পিঠে কথা বললো ইয়াদ।
ইয়াদের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে টয়া এতে বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে। এভাবে আর থাকা যাবে না, কোনো না কোনো বুদ্ধি বের করতেই হবে টয়াকে। টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” একটু এদিকে আসুন একটা কথা বলবো।”
ইয়াদ একটু ঝুকে এলো টয়া বললো,” কানে কানে বলি।”
টয়ার কথা শুনে ইয়াদের মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাবার উপক্রম হলো। টয়া ইয়াদের বুকে হাত রেখে কানের কাছে গিয়ে বলল,” ইয়াদ আরফিন ” খুব সুন্দর করে এতটুকু তো বললো তারপরে যা হলো সেটার জন্য ইয়াদ প্রস্তুত ছিলো না। টয়া সজোরে ইয়াদের কানের কাছে হিটলার বলেই ইয়াদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে সফল হয়েই পালিয়ে যাবে এমন সময় ইয়াদ টয়ার শাড়ির আঁচলটা ধরে ফেলে।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here