তোমার_খোঁজে_এই_শহরে পর্বঃ১৬ : #Bye,১৭

0
1124

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১৬ : #Bye,১৭
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ১৬

টয়া পালিয়ে যাবে এমন সময় ইয়াদ টয়ার শাড়ির আঁচলটা ধরে ফেলে। আবার সেই হিটলারের হাতে পড়তে হলো টয়ার, শাড়িটা অনেক কষ্টে পরেছে সে। এবার যদি কোনো অঘটন ঘটে তখন। টয়া শাড়ির আঁচলটার অগ্রভাগ শক্ত করে ধরলো। ইয়াদ আস্তে আস্তে আঁচলটা নিজের হাতের মুঠোয় পেচিয়ে নিতেই টয়ার বাধ্য হয়েই কাছে আসতে হচ্ছে। টয়া বিনয়ী ভঙ্গিতে বললো,” দেখুন আমি অনেক কস্ট করে এই শাড়িটা পড়েছি। ছাড়ুন আঁচলটা না হলে আমি সামলাতে পারবো না।”

ইয়াদ টয়ার শাড়ির আঁচলটা হেচকা টান দিতেই টয়া একদম ইয়াদের কাছে চলে এলো। ইয়াদ হাতে পেঁচিয়ে রাখা আঁচলটা খুলে সেটা দিয়ে টয়াকে জরিয়ে দিয়ে বললো,” তোমার শাড়ি আর তোমাকে সামলানোর জন্য আমি তো আছি।”
টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার পায়ের কাছে হাঁটু ভাঁজ করে বসতেই টয়া হকচকিয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার শাড়ির কুচি গুলোর ভাজটা ঠিক করে দিচ্ছে। টয়া সরে যেতে নিলেই ইয়াদ টয়ার হাতটা ধরে দাড় করিয়ে রাখাল। টয়ার অদ্ভুত এক অনুভুতি কাজ করছে। ইয়াদ মনোযোগ দিয়ে টয়ার শাড়ির কুচিগুলো ভাজ করছে। টয়ার সাত বছর পর আবার সেই অপলক দৃষ্টিতে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। মনের কোণে যেনো পুরনো সেই অনুভুতিগুলো নাড়া দিয়ে উঠেছে। ইয়াদ কুচি ভাজ শেষে টয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,” শাড়িটাও তো ঠিকমতন পড়তে জানো না।”
ইয়াদের কথায় টয়া ইয়াদের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে। ইয়াদ উঠে দাড়িয়ে বললো,” ভাবছি শাড়ি কীভাবে পড়ায় সেটা শিখে রাখবো। ভালো হবে না?”

টয়া বিরক্ত হয়ে বলল,” অনেক ভালো হবে। নিজের বউকে শাড়ি পড়াইয়েন।”
টয়ার মনে যা আসে সে সেটাই বলে ফেলে কিন্তু সে নিজেই যে এখন ইয়াদের বউ, এ কিছুক্ষনের জন্যে সেটা তার মাথায়ই ছিলো না। ইয়াদ ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে টয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। টয়া ভ্রু কুঁচকে পিছাতে গিয়ে রেলিংয়ের সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়ল। ইয়াদ টয়ার এক পাশের রেলিং এ হাত রেখে বলল,” তা বউ যখন নিজেই চাইছে আমি যেনো তাকে শাড়ি পরিয়ে দি তাহলে তো হলোই। তুমি একদম আমার মনের ইচ্ছাটা বলে দিয়েছো।”
টয়া কিছুক্ষন হতবুদ্ধির মতো তাকিয়ে থাকতেই টয়ার মনে পড়লো সে তার নিজেই এখন ইয়াদের বউ। টয়ার মুখ হা হয়ে গেলো। ইয়াদ টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,” এসো শাড়িটা পড়িয়ে দেই।”বলেই ইয়াদ টয়ার চোখের দিকে তাকালো। চোখে চোখ পড়তেই টয়া লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। টয়া এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো তারপর নিচু স্বরে তেজী গলায় বলল,”এগুলো বলতে আপনার লজ্জা করছে না।”
ইয়াদ সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট করে বললো,” না, একদমই না। আমার বউকে আমি শাড়ি পড়িয়ে দিতেই পারি এতে লজ্জার কি আছে? আর নেক্সট টাইম থেকে আমি পড়িয়ে দিবো বুঝলে?”
ইয়াদের কথায় লজ্জায় এখান থেকে লাফ দিতে ইচ্ছে করছে টয়ার। এতো সাবলীলভাবে এসব বলছে যেনো পান্তা ভাত আর পিয়াজ। টয়া লজ্জায় কথাও বলতে পারছেনা তাও মাথা নিচু রেখে শাসিয়ে বললো,” কোনদিন না। আমি আর জীবনে কোনোদিন শাড়ি পড়বো না। ”
“সে তোমার আর পড়তে হবে না আমিই পড়িয়ে দিবো।”,ইয়াদ ইচ্ছে করে কথাগুলো বলছে।
টয়ার বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে যদি সত্যিই এমন কিছু করে ফেলে। অসভ্যতার একটা সীমা থাকা দরকার, দিন দিন অধঃপতন হচ্ছে এই ছেলের। এই বিয়েটা করে কি যে বিপদে পড়েছে কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা সে। টয়া মনে মনে বির বির করছে আর রাগে ফুলছে।
ইয়াদ উপহাস করে বললো,” যা বলার বলে ফেলো। মনে মনে নিজেকে বলে তো কোনো লাভ নেই।”
টয়া রাগে কটমট করে তাকিয়ে রইল। টয়ার অবস্থা দেখে ইয়াদ হেসে ফেললো।
” আমি নীচে যাবো। সরুন তো। অসহ্য আপনি।”, বিরক্তি নিয়ে বললো টয়া।
” আচ্ছা ঠিক আছে।”, বলে ইয়াদ টয়ার হাত ধরলো।
” এতো দেখি মহা জ্বালা, আবার হাত ধরেছেন কেনো?”, বলে হাত ছড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে টয়া।
” একসাথে যাবো তাই।”,বলে টয়াকে নিয়ে নিচে নেমে যেতে লাগলো।
” ছাড়ুন, ছাড়ুন।”, বলতে থাকলো টয়া। ইয়াদ সেটা কানে নিচ্ছে না। দরজার সামনে এসে টয়া আরো অস্থির হয়ে গেছে হাত ছাড়ানোর জন্য। ইয়াদ বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিলো বেশি জোর করতে গেলে টয়া ব্যাথা পেতো। টয়া ছাড়া পেয়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে নিজের রূমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে পা তুলে খাটের উপর বসে পড়ল। আজ যা হয়েছে তা মনে পড়লেই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে।


বাবা মা আজ চলে গেছে টয়া শান্তিতে ঘুমাচ্ছিল সকাল সকাল কলিং বেলে টয়ার ঘুম ভাঙলো। পুরো মেজাজটাই বিগড়ে গেলো তার। এতো সকালে নিশ্চই ইয়াদ বিরক্ত করতে এসে গেছে। আজ ভার্সিটি নেই তাই কোথায় ভেবেছে একটু শান্তিতে ঘুমাবে সবকিছুতে পানি ঢেলে দিয়েছে। টয়া উঠে যেতে চাইছে না তাই অন্য দিকে ফিরে শুয়ে রইলো। কিন্তু বার বার কলিং বেল বাজায় টয়ার মেজাজ হারিয়ে উঠে বসলো। অনেক জ্বালিয়েছে এই লোকটা আজ একটা হেস্ত নেস্ত হওয়া দরকার। আজ এমন ভয় দেখাবো জীবনে তাকে আর বিরক্ত করার সাহস ইয়াদ পাবে না। টয়া রান্না ঘর থেকে ছুরি হাতে নিয়ে দরজা খুলেই ছুরি দেখায় তবে মজার ব্যাপার হলো টয়ার সামনে রিতু দাড়িয়ে। রিতুকে দেখে টয়ার মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো। টয়া ছুরি দেখিয়ে শাসিয়ে বললো,” এই বেয়াদব তোর কাছে ফ্ল্যাটের চাবি নেই। সকাল সকাল আমার ঘুম নষ্ট করলি কেন? ইচ্ছে করছে তোকে … অসভ্য।”
আচমকা এমন কিছু দেখে রিতু হতবাক হয়ে গেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে রিতু বললো,” বইন তোরে কি জ্বীনে ধরসে? এমন করতেছিস কেন? ”
” না তোকে তো মিষ্টি খাইয়ে, ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে সাগতম জানাবো। এতো দিন যে লাপাত্তা ছিলা তার বেলায়? আসছিস কেনো বান্দরবনের একটা বাঁদর ধরে ওখানেই থেকে যেটি।”, বলে গম গম করে হেটে গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো টয়া।

” আরে মাইয়াডার মাথা দেখি পুরা গেছে।”, বলে ভিতরে ঢুকলো রিতু তারপর বললো,” তুই কি আজকাল বিছানার পাশে ছুরি নিয়ে ঘুমাস?”
রিতুর প্রশ্নে টয়া কটমট করে তাকাতেই রিতু বললো,” আচ্ছা বইন তুই ঘুমা। কথায় কথায় চেইত্যা যায় খালি।”

সকাল দশটা টয়া এখনও ঘুমাচ্ছে টয়া।এদিকে রিতু গোসল সেরে বেরিয়ে এসে পাউরুটি টোস্ট করছিলো। এমন সময় আবার কলিং বেল বাজলো। কলিংবেেল বাজার সাথে সাথে রিতু আতকে উঠলো। মানুষ হুট করে এভাবে কলিংবেল বাজায় কেনো? ভাগ্যিস টয়ার ঘুমটা ভেঙ্গে যায় নি। রিতু গিয়ে দরজা খুলে হা করে রইলো রিতুর সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে। ইয়াদকে মেরুন রঙের শার্টটায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে। রিতু ভ্রু কুঁচকে বললো,” কাকে চাই?”
এ মেয়েটা কে? ইয়াদ বুঝতে পারছেনা। ইয়াদ বুকের কাছে দুই হাত গুজে জিজ্ঞেস করলো,” তুমি কে? ”
” আরে মশাই আপনি কি চান?”, চেঁচিয়ে বললো রিতু।
” টয়া কোথায়?”, গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
“, আপনি টয়াকে চিনেন! আপনি কে বলুন তো?”, একটা ভ্রু তুলে প্রশ্ন করলো রিতু।
ইয়াদের এতো প্রশ্ন শুনতে বিরক্ত লাগছে তাই সে ভিতরে চলে এলো। এভাবে ভিতরে চলে আসায় রিতু চমকে উঠলো।
” আরে আরে! যাচ্ছেন কোথায়?”রিতু বলতে বলতে ইয়াদের পিছু পিছু গেলো।
ইয়াদ টয়াকে সোফায় শুইয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে রিতুর দিকে তাকালো। ইয়াদ রিতুকে বললো,” টয়া সোফায় ঘুমাচ্ছে কেনো?”
” ওর ইচ্ছা ওয় ঘুমাইসে আপনার কি সমস্যা? আপনি ভিতরে চলে এলেন কেনো?”, রিতু রাগ দেখিয়ে বললো।
ইয়াদ রিতুর কথায় কান না দিয়ে টয়ার পাশে হাঁটু ভাঁজ করে বসলো। টয়া হাত একপাশে রেখে পা আরেকপাশে দিয়ে পা ছুড়ে ঘুমিয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার অবস্থা দেখে একটা নিশ্বাস ছেড়ে টয়াকে কোলে তুলে নিলো। এটা দেখে রিতু হতবাক হয়ে গেলো।
” আপনি নিশ্চই নারী পাচারকারি তাই না। দাড়ান আমি এক্ষুনি পুলিশ এ কল দিচ্ছি।”, বলেই রিতু লাফালাফি করতে লাগলো।
ইয়াদ রিতুর দিকে রাগী চোখে তাকাতেই রিতু ভয় পেয়ে গেল। এদিকে রিতুর লাফালাফিতে টয়ার ঘুম অনেকটাই ভেঙ্গে গেছে।
ইয়াদ টয়াকে কোলে করে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিতেই টয়ার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে ইয়াদকে দেখতেই টয়া লাফ দিয়ে উঠে বসে গেলো। ঘুম থেকে উঠেই ইয়াদের চেহারা দেখতে হবে এটা কল্পনাও করেনি।
” আ~আপনি এ~ খানে?”, কাপা কাপা গলায় বলল টয়া।
” হুম, তুমি সোফায় ঘুমাচ্ছিলে কেনো?”, ইয়াদ নরম গলায় বলল।
” আপনি এখানে কেনো?” টয়ার আবার এক প্রশ্ন।
রিতু একপাশে দাড়িয়ে হা করে ওদের দেখছে।
ইয়াদ টয়ার সামনে বসে বললো,” আমি ক্লিনিকে যাচ্ছি।”
টয়া বিস্ময় নিয়ে বললো,” তো!” সে ক্লিনিকে যাচ্ছে যাক সেটার
সাথে এখানে আসার সম্পর্ক কি?
ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে টয়ার গালে হাত ছোঁয়াতে টয়ার পুরো শরীর শিউরে উঠলো। টয়ার আবার ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,” Bye।”
টয়ার পুরো শরীর বরফ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে এমন কিছু ঘটবে কে জানত? টয়ার এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো, ব্যাপারটা তার হজম হচ্ছে না। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। সবটা দেখে রিতু ভুত দেখার মত চমকে তাকিয়ে আছে।

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১৭ : #অনুভবে_তুমি
লেখিকা :#নবনী_নীলা
ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে টয়ার গালে হাত ছোঁয়াতে টয়ার পুরো শরীর শিউরে উঠলো। টয়ার আবার ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,” Bye।”
টয়ার পুরো শরীর বরফ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে এমন কিছু ঘটবে কে জানত? টয়ার এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো, ব্যাপারটা তার হজম হচ্ছে না। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। সবটা দেখে রিতু ভুত দেখার মত চমকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে চলে যেতেই রিতুর হা হওয়া চেহারা দেখে দাড়িয়ে পড়ল।
” আমি কে তা বুঝতে পেরেছো?”, মূখে মিষ্টি হাসি নিয়ে প্রশ্ন করলো।
রিতু ঘন ঘন হা সূচক মাথা নাড়ল।
” Good, এরপর থেকে আমাকে জিজু বলে ডাকবে। মনে থাকবে তো।”, ভয় দেখানোর জন্য হুমকস্বরূপ বললো ইয়াদ।
রিতু আবার ঘন ঘন মাথা নাড়তে লাগলো। ইয়াদ একবার পিছনে ঘুরে টয়ার দিকে তাকিয়ে পকেটে এক হাত ভরে বের হয়ে গেল। টয়া যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। রিতু এসে টয়ার পাশে বসে বললো,” কাহিনী কি কিছুই বুঝলাম না। কি সাংঘাতিক পোলা। আর কাউরে পাইলি না তুই? মা গো মা।”
টয়া চেঁচিয়ে বললো,” আজকের দিনটাই খারাপ কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছিলাম?” বলতেই টয়ার চোখ গেলো রিতুর দিকে রিতু ভোলাভালা একটা হাসি দিলো।
” তুই… তোর চেহারা দেখছি তাই এইসব হইসে।”, চোখ পাকিয়ে বলল টয়া।
” ইহ! নিজে প্রেম কইরা আমারে দোষ দেষ কেন? অখন সব দোষ আমার তাই না।”, রিতুর কথায় টয়া গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। রিতু নাস্তা এসে করতে বলে উঠে গেলো।
আর এই যন্ত্রণা ভালো লাগছে না। কোথায় পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। ইয়াদ কাছাকাছি আসলেই যেনো টয়া ওর প্রতি দুর্বল হয়ে যায়। ইয়াদের থেকে দূরে থাকতে হবে। হটাৎ এনজিওর কথা মাথায় এলো। আজ কি কোথাও ক্যাম্পিং নেই? থাকার তো কথা, সবসময় তারা তো কাজেই থাকে।টয়া সেখানে কল দিলো। আজ দুপুরের পর একটা বাস চড় এলাকার দিকে যাবে কাল রাতে ফেরত আসবে। এটাই সুযোগ ইয়াদ ক্লিনিকে আছে এখন কেটে পড়লে আটকাতেও পারবে না। সাড়ে দশটা বাজে টয়া গোসল ছেড়ে রেডি হয়ে নিলো। এক রাত এক দিনের জন্য জামা কাপড় তেমন কিছু নিতে হবে না তার শুধূ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস একটা ছোট ব্যাগ এ ভরে নিলো টয়া। রিতু টয়ার ঘরে এসে হা করে থেকে বলল,”তুই কই যাস?”
” এনজিওর একটা কাজে যাচ্ছি।”, বলে ফোনের চার্জারটা ব্যাগের সাইড পকেটে রাখলো।
” তুই কি ওই ছেলের ভয়ে পালাচ্ছিস?”, রিতুর প্রশ্নে টয়া আমতা আমতা করে বলল,” ভয়! ভয়ের কি আছে। আর ওই ছেলেকে তুই ভুলেও বলবি না আমি কোথায় গেছি নইলে তোকে অমি বৃন্দাবন পাঠিয়ে ছাড়বো।”, টয়ার হুমকি শুনে রিতু হাসতে লাগলো তারপর বললো,” আহারে !”
টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” আহারে বলার কি আছে?”
রিতু মাথা না সূচক নাড়িয়ে বললো,” গান গাইছিলাম। আহারে আহারে কোথায় পাবো তাহারে, যে ছিলো মনের…………” গাইতে গাইতে হাত পা ছুড়ে নেচে নেচে কিচেনে গেলো।
টয়া হালকা ব্যাগটা কাধে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো। দুপুর তিনটায় বাস ছাড়লো বাস গিয়ে চড়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। টয়ার এবার শান্তি লাগছে, বুকের ধুকপুকানি একটু কম হয়েছে। এবারে স্টেশনের পাশে একটা টিনের ঘর থাকার জন্য ব্যাবস্থা করা গেছে। সাথে মধু অর টনম্ময় আছে দেখে ভালোই লাগছে। রাতে ঠিক করা হলো কি কি করবে কাল সকালে। এবার খাদ্য বিতরণ করবে তারা কারণ এই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বন্যা এসবে মানুষ বিপাকে পরে যায়।

এদিকে রিতু একা বাসায় রয়েছে রাত এগারোটায় হটাৎ কলিং বেল বাজালো কেউ। রিতু লাফিয়ে ওঠে দরজার দিকে গেলো। ভয়ে সে থর থর করে কাপছে তার মনে হচ্ছে ডাকাত এসেছে। রিতু আগে ফাঁক দিয়ে দেখে নিলো। ইয়াদকে দেখে রিতুর মরি মরি অবস্থা ওরে আল্লাহ আবার আসছে কেন এই পোলা?
ইয়াদ অনেক্ষন বেল বাজালো কিন্তু দরজা খুললো না। ইয়াদের মনে হচ্ছে টয়া সে এসেছে বুঝেই দরজা খুলছে না। শেষমেশ ইয়াদ নিজের রূমে চলে গেলো। এদিকে রিতু তো দরজা খুলবে না এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আরাম করে বসে রইল। আজ বেল বাজাতে বাজাতে যদি বেল খুলে পড়ে যায় তাও সে দরজা খুলবে না তার নাম ও রিতু রজনী।


আজ টয়ার ফিরবার দিন একটু পর সবাই বাসে উঠবে তার প্রস্তুতি চলছে। টয়া চুপ করে এক কোনে বসে আছে হিটলারটা কি করছে কে জানে ভালোই হয়েছে চলে এসেছে সে এখানে জ্বালাতে পারবে না। সবাই বাসে উঠে গেছে টয়া সেটা খেয়াল করেনি একটু পর মধু এসে ওকে ডাকলো।
” কি হলো যাবি না?”, মধুকে দেখে টয়া উঠে দাড়ালো।
” সবাই উঠে গেছে?”, ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল।
” হ্যা তোকেই খুজতে এসেছি। তাড়াতাড়ি চল বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে।”
টয়া আকাশের দিকে একবার তাকালো। মেঘলা হয়ে গেছে আকাশটা। টয়া আর মধু বাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। হটাৎ টয়া থেমে যায়। মধু টয়াকে যাবার জন্য তাড়া দিয়ে বললো,” আবার দাড়িয়ে পড়লি যে তাড়াতাড়ি চল।”
টয়া দৃষ্টি সামনে রেখে একটা ঢোক গিললো কারণ সামনে বুকের কাছে দুই হাত গুজে ইয়াদ নিজের গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ইয়াদের চোখে মুখে গম্ভিরতার ছাপ দেখেই টয়া বুঝতে পেরেছে তার কপালে আজ শনি রবি সোম মঙ্গল সব ঘুরছে।
টয়া ইয়াদকে পাশ কাটিয়ে কোনোভাবে বাসে উঠে যাবার চেস্টা করলো কিন্তু ইয়াদ গম্ভীর মুখে টয়ার হাত ধরে মধুর উদ্দেশ্যে বললো,” ও আমার সাথে যাবে।”
এ কথা শুনেই টয়ার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ওনার সাথে গেলে কি করে বসে কোনো ঠিক নেই। মধু আর কথা না বাড়িয়ে বাসে চলে গেলো। টয়া বির বির করে বললো,রিতু বেয়াদপটা সব ফাঁস করেছে ওকে আমি হাতের কাছে পেলেই হয়। টয়া ক্রমাগত হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ইয়াদ টয়াকে টেনে কাছে নিয়ে আসে।
টয়া ভয়ে ইয়াদের চোখের দিকে তাকাচ্ছে না। ইয়াদের দৃষ্টি টয়ার দিকে স্থির। ইয়াদ হাত দিয়ে টয়ার চেহারা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,” ফোন ধরছিলে না কেনো? ফোন আবার বন্ধ করে রেখোছো তাই না? খুব সাহস বেড়ে গেছে তোমার।”
টয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো,” এদিকে ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলে আমি কি করবো। আমাকে শাসাচ্ছেন কেনো?”
,” এসব যে করে বেড়াচ্ছো তোমার বাবা মা জানে?”
ইয়াদের কোথায় টয়া চমকে উঠলো।টয়ার বাবা মা কিছুই জানে না তাদের জানালে তারা কখনো আসতে দিতে রাজি হতো না তাই টয়া বলেনি। এই ছেলে যদি গিয়ে সব বলে দেয়। তাহলে যে লঙক্কা কান্ড লেগে যাবে। টয়া চোখ পিট পিট করে ইয়াদের দিকে তাকালো। ইয়াদ গম্ভীর গলায় বললো,” এখন চুপ চাপ গিয়ে গাড়ীতে বসে। তোমাকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি।”
টয়া অগ্নিশর্মা হয়ে তাকিয়ে রইল, আজব এবার কি সে নিজের ইচ্ছে মতন ঘুরে বেড়াতে পারবে না।
” কি হলো?”, বলে তাড়া দিয়ে হাত ছেড়ে দিল ইয়াদ। টয়া মুখ ফুলিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে টয়া আর ইয়াদ পাশাপাশি। গাড়ীতে উঠে বসতেই বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে। কি সুন্দর বৃষ্টির ফোঁটাগুলো গাড়ির জানালা দিয়ে এসে টয়ার গাল বেয়ে পড়ছে। কিছুক্ষন পরেই ইয়াদ জানালার গ্লাস বন্ধ করে দেয়। টয়ার আনন্দ কি তার সহ্য হয় না?। টয়ার অনেক কিছু বলতে করছে কিন্তু সে চুপ হয়ে বসে বৃষ্টি দেখতে লাগলো। বৃষ্টি দেখতে দেখতে টয়ার চোখ গুলো ঘুমে এলিয়ে এলো। টয়া একপাশে মাথা ফেলে ঘুমিয়ে পড়ল। কাল রাতে মশার জন্য ঘুমাতে পারেনি সে।
ইয়াদ টয়া ঘুমিয়ে পড়ায় টয়ার কাছে এসে বসে টয়ার মাথাটা নিজের কাঁধে সাথে রাখলো। টয়ার গভীর ঘুমে ইয়াদের হাতের বাহু জড়িয়ে ধরলো। ইয়াদ গাড়িতে থাকা একটা পাতলা চাদর টয়ার গায়ে দিয়ে দিলো। ইয়াদ কিছুক্ষণ টয়ার দিকে তাঁকিয়ে থেকে নিজের মাথাটাও গাড়ীতে হেলিয়ে দিলো। এই জায়গা খুঁজে বের করতে গিয়ে অনেক ঘুরতে হয়েছে তাকে, ক্লান্ত লাগছে।

হটাৎ গাড়ির ব্রেক কষতেই ইয়াদের ঘুম ভেঙে গেলো। টয়া একটু নড়ে চড়ে ইয়াদ কাধ থেকে ঘুম ঘুম চোখে মাথা তুলে চারপাশ দেখে আবার গাড়ির সীটে মাথা হেলিয়ে রাখলো। ড্রাইভার গাড়ী থেকে নেমে গেলো ইয়াদও নেমে এলো। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি গাড়ী থেকে নামতেই ইয়াদ ভিজে গেলো। ড্রাইভার ছাতাটা ইয়াদের দিকে এগিয়ে নিয়ে বললো,” স্যার, সামনে এগিয়ে যাওয়া safe হবে না। আশেপাশে প্রচুর গাছ আছে বাতাসে যেকোনো সময় গাছ পড়তে পারে। আর এমনিতেও সামনে গাছ পরে রাস্তা ব্লক হয়ে গেছে।”
” তাহলে?”, চিন্তিত গলায় বলল ইয়াদ।
” স্যার আপনি এখানে দাড়ান আমি দেখছি আশেপাশে কোনো থাকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা।”, বলে ছাতাটা ইয়াদকে দিয়ে সে এগিয়ে গেলো।
ইয়াদ ছাতা হাতে গাড়ির সামনে এগিয়ে গিয়ে পড়ে থাকা গাছটা দেখে। গাড়ির কাছে এসে দেখে টয়া গাড়ী থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভিজছে। এই মেয়ের কোথা থেকে যে এমন ইচ্ছা জাগ্রত হয় ইয়াদ ভেবে পায় না। ভালো কোনো কাজ এই মেয়ে করবে না সব আজগুবি কাজ করে বেড়ায়। ইয়াদ এগিয়ে গিয়ে টয়াকে টেনে ছাতার নিচে নিয়ে এলো। টয়া নাছর বান্দা সে হাত ছাড়িয়ে আবার বৃষ্টিতে ভিজছে।
” আচ্ছা আপনি কখনো বৃষ্টিতে ভিজেছেন?”, টয়ার প্রশ্নে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমার কি তোমার মতো মাথার তার ছিড়া নাকি ?”
ইয়াদের কথায় টয়া হাতে থাকা বৃষ্টির পানি ইয়াদের মুখে ছিটিয়ে দিতেই ইয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেলে। টয়া নেচে নেচে বললো,” হুহ, আপনার মাথার তার ছিড়া বুঝলেন। আসছে আমাকে বলতে।”
ইয়াদ হাত দিয়ে মুখের পানি সরিয়ে বললো,” you have to pay for this. I’m telling you.”
টয়া ইয়াদের কথা কানে নিলো না।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here