#তোমার_ছায়া,পর্ব ১১,১২
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
১১
ফারহাকে এক হাতে ধরে জঙ্গলের পথ ধরে এগুতে থাকে আবরার। এতো বড় জঙ্গলে ফারহাকে নিয়ে কোন দিকে যাবে সেটাও নিশ্চিত করতে পারছে না সে। পত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে হটাৎ থমকে দাড়ায় আবরার। পারহার দিয়ে চেয়ে দেখে, ফারহার দুটি ভয় মাখা চোখ তার দিকে ঝাপসা অন্ধকারে তাকিয়ে আছে।
আবরারের দিকে চেয়ে কাঁপা গলায় বললো,
– হটাৎ থেমে গেলেন কেন?
আবরার বললো,
– এই পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। যদি ওরা আবার ফিরে আসে তাহলে ধরা পরে যাবো। তাছারা ওরা এতো সহজে আমাদের ছেরে দিয়েছে এটা বিশ্বাস যোগ্য না। বিপদ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। তুমি পাশে না থাকলে হয়তো এতোটা টেনশন থাকতো না। এখন এই গভির জঙ্গলে তোমাকে নিয়েই যত টেনশন। তাই সোজা পথে না হেটে আমাদের জঙ্গলের মাঝ দিয়ে পথ খুজে নিতে হবে।
ফারহা আর কিছু বলছে না। ভয় মাখা চেহারা নিয়ে আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে। আবরার ফারহার হাত ধরে এবার পথ ছেরে জঙ্গলের মাঝে ঢুকে গেলো।
অনেকটা পথ আসার পর ফারহা পা ধরে বললো,
– আমি আর হাটতে পারছি না। পা টা ব্যাথা করছে খুব। কা’টার আ’ঘাতে হয়তো কিছুটা ছিলেও গেছে।
আবরার আবছা অন্ধকারে চার পাশে তাকিয়ে একটা ভাঙা গাছের উপর ফারহাকে বসালো। পাশে নিজেও বসলো।
ফারহা কাঁদু কাঁদু ভাব নিয়ে বললো,
– আমরা কি এখান থেকে বের হতে পারবো না? আমার খুব ভয় হচ্ছে।
আবরার ফারহাকে আশ্বাস দিতে বললো,
– ভয় পেও না, আমি আছি। একটা না একটা ব্যবস্থা নিশ্চই হয়ে যাবে।
– কিভাবে বের হবো? আমরা তো এখানের কিছুই চিনিনা। তাছারা ফোনও নেই যে, কাউকে কল দিবো বা লোকেশন দেখে বের হবো।
ফারহার কথা গুলো আর কানে আসছেনা আবরারের। কিছুটা দুরে কিছুর উপস্থিতি টের পেয়ে, তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ওদিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।
দেখে কয়েকটা লোক, টর্চ হাতে কিছু খুজে বেড়াচ্ছে। কেউ একজন কড়া গলায় বললো,
– কোথায় হাড়িয়ে গেলো চোখের পলকে? মেয়েটাকে আমার চাই চাই। সারা জঙ্গল খুজে দেখ।
মুহুর্তেই বুকটা ধুক করে উঠলো আবরারের। পাশে থাকা ফারহার হাত ধরে চার পাশে তাকিয়ে দেখে কিছু কিছু বড় গাছের গোড়ায় অনেক ঝোপ। লুকানোর জন্য আপাতত এর চেয়ে ভালো জায়গা এই মুহুর্তে চোখে পরছে না। যদিও এসব যায়গায় সা’সাপের ভয় অনেকটা বেশি। তবুও যেভাবেই হোক, ফারহাকে ওদের চোখের আড়াল করতে হবে।
ফারহার দিকে তাকিয়ে মুখে আঙুলের ইশারা দিয়ে বললো,
– একধম সাউন্ড করবে না। ওরা আবার আমাদের খুজতে এখানে চলে এসেছে। আমার সাথে এসো চুপচাপ। আর ভয় পেলে চোখ বন্ধ করে থাকবে।
বলেই ফারহাকে নিয়ে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পরলো সে। দেখে ফারহা মুখে কিছু না বললেও চোখ বন্ধ করে ভয়ে থর থর করে কাঁপছে।
হটাৎই আবরার ফারহাকে টেনে বুকের সাথে চেপে ধরে আরো আড়াল করার চেষ্টা করছে। মাথাটা এক হাতে বুকের সাথে চেপে ধরে আছে, যেন ফারহা চাইলেও কিছু দেখতে না পায়।
আবরারের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে ফারহা। যেন এই বুকটাই এই মুহুর্তে তার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।
আবরার ঝোপের আড়ালো লোক গুলোর উপস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে।
লোক গুলো কিছুক্ষন টর্চ নিয়ে এদিক ওদিক খোজাখুজি করে অন্য দিকে চলে গেলো। একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিয়ে ফারহার দিকে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো সে। কোথায় এসে কিসের মাঝে ফেঁসে গেলো দুজন।
ধিরে ধিরে ঘন অন্ধকার নেমে এলো। আবরার ফারহার গালে হাত রেখে বললো,
– তুমি খুব সাহসি মেয়ে। মোটেও ভিতু নও। বুকে সাহস নিয়ে শুধু আমাকে ফলো করবে। আমি যা করবো তাই করবে। এই নাও একটা লা’ঠি। আমি একটা নিলাম। কোনো বিপদ আসলেই আক্র’মণ করে বসবে। মনে রেখো এই অচেনা শহরের মানুষ রুপি প’শু গুলোর জীবনের চেয়ে নিজের ইজ্জত ও জীবন দুটুই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
দুইটা লা’ঠি হাতে দুজন এক পা, এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষন হেটে ফারহা মাটিতে বসে বললো,
– পানি খাবো। খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।
আবরার চার পাশে তাকিয়ে বললো,
– এখন এই জায়গায় পানি কোথায় পাবে তুমি? দেখো ফারহা, খাওয়ার চিন্তা পরে করা যাবে। আপাততঃ এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুজতে হবে। কষ্ট করে আর কিছুটা চলো, হয়তো কিছু পেলেও পেতে পারি।
ফারহা চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে আবার উঠে দাড়ালো। আবরার তাকে ধরে আবার সামনের দিকে পা চালালো। বেশ কিছুটা পথ আসার পর খুটখুটে অন্ধকারের মাঝে কিছু আলো চোখে পরলো। সামনেই হয়তো কোনো রাস্তা বা কারো বাড়ি-ঘর অথবা বাজার এমন কিছু।
দুজনের মুখেই হাসি ফুটে উঠলো। ফারহা খুব ভয়ে ছিলো। নতুন জীবন পাওয়ার মতো আনন্দে আবরারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে।
আবরা হেসে বললো,
– এখনই এতো খুশি হওয়ার দরকার নেই। আগে এইসব থেকে একেবারে মুক্ত হই।
বলেই ফারহাকে ধরে আবার সামনের দিকে এগিয়ে গেলো সে।
খুটখুটে অন্ধকারে কিচুটা পথ এগিয়ে গেলে দেখে। কয়েক টা লোক টর্চ হাতে তাদের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
– এই কারা তোমরা? আর এতো রাতে জঙ্গলে কি করতে গিয়েছিলে, দুজন?
পাশ থেকে একটা লোক বললো,
– কি আর করতে যাবে? বুঝতেছেন না, ওরা কি করে বের হচ্ছে?
ওদের কথা শুনে আবরার বললো,
– দেখুব আপনারা যেমনটা ভাবছেন, বিষয়টা মোটেও এমন নয়। আমরা খুব বিপদে পরে এখানে চলে এসেছি।
আবরারের কথায় লোকটা স্ব-শব্দে হেসে বললো,
– হাতে নাতে ধরা পরলে সকলে এমনই কাহিনি শুনায়। আর যদি সত্য হয়, তাহলে বলো তোমাদের পরিচয় কি? কি হও একে অপরের?
একটগ আগেও ভাই বোন পরিচয় দিয়েছে, সেই থেকে ফারহা ভয়ে ভয়ে বললো,
– আমার ভাইয়া হয়,,
আর অপর দিকে আবরার বলে ফেলে,
– আমার ওয়াইফ হয়।
এর পর দুজনই একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
লোকগুলো আবরারের কলার চেপে ধরে বললো,
– এর পরেও আবার কি কাহিনি সাজাবি দুজন?
ফারহা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আবরারে পেছনে ঘেসে দাড়ালো।
আবরার লোকটার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
– কি করছেন আপনারা? আর আমরা যেই হই, আর যাই করি এতে আপনাদের প্রব্লেম কোথায়?
পাশ থেকে আরেকটা লোক বললো,
– এতো দেখি চোরের মায়ের বড় গলা।
কিছুক্ষনের মাঝে ওখানে চেচামেচি শুনে অনেক মানুষ এসে জড়ো হয়। কেও কেও জিজ্ঞেস করছে, ভাই কি হয়েছে? কারা এরা?
পত্যেক বারই উত্তর আসে,
– আরে ভাই, আর বলবেন না, দুজন জঙ্গলে ঢুকে ফষ্টিনষ্টি করছিলো, আর এখন হাতে নাতে ধরা খেয়ে বড় বড় কথা বলছে।
একটার পর একটা ঝামেলার জন্য আবরারের মাথা এমনিতেই খারাপ ছিলো। তাই চিৎকার করে বলে উঠে,
– মুখ সামলে কথা বলুন। এখানে কেউই আমার পরিচিত নন। তাই বেয়া’দবি করতে দ্বিতীয় বার ভাববো না৷ ভালোয় ভালোয় বলছি আমাদের যেতে দিন।
মুহুর্তেই কয়েকটা ছেলে এসে আবরারকে লা’থি ঘু’সি মে’রে দেয়। তখনই একটা গাড়ি এসে তাদের সামনে দাড়ায়। আর একটা লোক নেমে বললো,
– কি হয়েছে, এতো ভির কেন এখানে?
একটা লোক তাকে চেয়ারম্যান বলে সম্বোধন করে, তাদের বানানো কাহিনিটা খুলে বললো।
চেয়ারম্যান বললো,
– কয়দিন আগে একটা ঘটনা ঘটেছিলো না এই জঙ্গলে? ওই যে মজিদ ভাইয়ের মেয়েটা কোন ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো। তারপর পর দুই দিন পর সকালে জঙ্গলে ওই মেয়েটার লা’শ পাওয়া যায়।
লোকজনের নানার কিচির মিচিরের মাঝে চেয়ারম্যান বললো,
– আজ রাতের মাঝে দুজনের বিয়ে পরিয়ে দেওয়া হবে।
আবরার এবার করুন গলায় বললো,
– প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন, আমরা বিপদে পরে এখানে এসেছি।
তখনই আবরারকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– হয়তো তুমি মেয়েটাকে আজ বিয়ে করে কালকে সকালেই এই এলাকা ছারবে, আর নয়তো দুজনকেই পু’লিশে দেওয়া হবে, জঙ্গলে ফষ্টিনষ্টি করার কারণে। এর পর দুজনের ফ্যামিলি এসে ছারিয়ে নিয়ে যাবে। আর আজকাল কার ছেলে মেয়েরা আকাম করার সময় ভাবে না৷ আর ধরা খেলে সব মিথ্যা সাজাতে থাকে।
অপর দিকে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আছে ফারহা। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরছে জল। জীবনে কখনো কল্পনাও করেনি তার নামের পাশে এমন একটা কলঙ্ক যোগ হবে।
এটা খুব দ্রুতেই সারা এলাকায় ছড়াতে থাকে, দুইটা ছেলে মেয়ে জঙ্গলে আকাম করতে গিয়ে এলাকা বাসির হাতে ধরা পরেছে। তাই রাতের মাঝে দুজনকে বিয়ে করিয়ে পরদিন এলাকা ছারা করবে।
এখানে সবাই অপরিচিত। আর এমন একটা জঘন্য কলঙ্ক নিয়ে ফ্যামিলির সামনে দাড়াতে চায়না তারা কেউই। তাদের দুজনের ফ্যামিলি এসব শুনলে কখনোই নিতে পারবে না। আর ফারদিন তো তার বেষ্ট ফ্রেন্ড। আর সে নিজে একজন ভার্সিটির টিচার। এমন একটা মিথ্যা কলঙ্ক নিয়ে কিভাবে সবার সামনে দাড়াবে দুজন?
রাত তখন ১২ টা। দুজনকেই একটা বাড়িতে নিয়ে বিয়ে পরিয়ে দিলো সবাই। তারপর রাতে এখানে থাকতে দিলো আর বললো, ভোর হতেই এলাকা ছারবে দুজন।
আবরারের চোখ দুটু রক্তিম লাল হয়ে আছে। মাথাটা দুই হাতে চেপে ধরে শক্ত হয়ে বসে আছে সে। একটু পর পর বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত নিজের ছাত্রী ও বন্ধুর বোনের সাথে এমন একটা কলঙ্কে জড়িয়ে তাকেই বিয়ে করতে হলো? ফারদিনের সামনেই বা কিভাবে দাড়াবে সে?
আর অন্য পাশে বিছানার এক কোনে বসে বসে কাঁন্না করছে ফারহা। তার ফ্যামিলি তাকে কত বিশ্বাস করতো। বাবা তো সব সময় বলতো, আমার ফারু কখনো আমার কথার বাইরে কিছু করবে না।
আর মা তো বলেই দিলো তাদের সম্মান নষ্ট হবে এমন কিছু করলে, আর তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করলে ডিরেক্ট তে’জ্য মেয়ে করে দিবে।
বাবা ও ভাইয়ের বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারেনি সে। তাই বিছানার এক কোনে বসে ডুকরে কেঁদে উঠে ফারহা।
To be continue……
#তোমার_ছায়া (পর্ব ১২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
ফারহা সকালে ঘুম থেকে উঠে রুমের কোথাও খুজে পেলো না আবরারকে। রুমের বাইরে এসে খুজে দেখেও পাচ্ছে না। ওই বাড়ির দুই একজন কে জিজ্ঞেস করলেও, কেউ কথা বলছেনা ফারহার সাথে।
পুনরায় রুমে ফিরে আসলে ঐ বাড়ির একটা ছোট মেয়ে চা আর বিস্কিট রেখে গেলো। মেয়েটাকে পেছন থেকে ডেকে আবরারের কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলে, দেখেনি।
ফ্লোরে বসে দুই হাতে নিজের চুল খা’মচে ধরে কেঁদে উঠে ফারহা।
‘এই অচেনা একটা শহরে আবরার আমায় একা ফেলে চলে গেছে। কোথায় চলে গেলেন আবরার? প্লিজ আমার এখান থেকে নিয়ে যান।
কাঁদতে কাঁদতে বার বার আবরারের নাম জ্বপছে ফারহা। তখনই পেছন থেকে পুরুষ কন্ঠ ভেষে আসলো।
– কাঁদছো কেন?
আবরারের গলার স্বর শুনে পেছন ফিরে উঠে দাড়ায় ফারহা। কাঁদু গলায় বললো,
– কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি আমাকে রেখে?
আবরার তার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
– আর ইউ ম্যাড? আমি তোমাকে ফেলে চলে গিয়েছি তাও আবার অচেনা একটা জায়গায়?
– আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কোথায় ছিলেন এতোক্ষন?
আবরার তার পাশে বিছানায় বসে বললো,
– রাতে তো কিছুই খেয়াল করিনি। তাই রাস্তা খুজতে গিয়েছিলাম। চলো বের হবে।
ফারহা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
– এখন? মানে এতো সকালে?
আবরার একটু রেগে বললো,
– এখানে বেড়াতে আসিনি আমরা। যে আস্তে ধিরে সবাইকে বলে এখান থেকে বিদায় নিবো। আর এখন এই শহরটা কেই আমার সবচেয়ে বিরক্তিকর মনে হচ্ছে। কতোটা নিচু এদের মন মানসিকতা।
ফারহা বলার মতো কিছু খুজে না পেয়ে চুপচাপ নিচের দিকে চেয়ে আছে। আবরার উঠে দাড়িয়ে বললো,
– চলো, এখানে আর থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না। নিজেদের পথ নিজেরাই খুজে নিতে হবে।
ফারহা কিছু না বলে চুপচাপ বের হয়ে গেলো আবরারের সাথে। ভুল ঠিক কিছুই যেন বুঝতে পারছে না তারা।
সকালের সূর্য উঠতেই, ঐ বাড়িতে আশে পাশের বাড়ির মহিলাদের আগমন ধটলো। কেউ খুব আগ্রহ নিয়ে বলতে লাগলো,
– গত কাল যে ধরা খেয়ে বিয়ে করেছে ঐ ছেলে মেয়ে দুটু রাতে নাকি এখানে ছিলো? কই তারা? এই শিউলি ওদেরকে গিয়ে বলবি যে, আপনাদের কে অনেক মানুষ অভিনন্দন জানাতে এসেছে। বাইরে আসতে।
মুহুর্তেই উপস্থিত সবাই হেসে উঠলো।
বাড়ির শিউলি নামের ঐ মেয়েটা রুমে এসে তাদের না দেখে দৌড়ে গিয়ে বললো,
– ওরা চলে গেলো, চা ও খায় নি। টেবিলে পরে আছে।
কেউ বলে উঠলো,
– কি অসভ্য রে তারা, যারা মায়া করে আশ্রয় দিয়েছে তাদের থেকেও বিদায় নিয়ে যায় নি। আর বলেই কি লাভ, ভদ্র ঘরের ছেলে মেয়ে হলে কি আর এভাবে ধরা খেয়ে বিয়ে করে?
এর পর একে একে বাড়ির উঠান খালি হয়ে গেলো। দেখে যেন মনে হচ্ছিলো, আজব কোনো প্রা’নি কে দেখার জন্য লোকজন ভিড় জমিয়েছিলো।
(বিঃদ্রঃ আমি চিটাগং এর ভাষা জানিনা। তাই কথা গুলো নরমাল ভাষায় বললাম)
সকাল সকাল সোনালি আলোয় দুজন পা ফেলে হাটছে রাস্তার পাশ ধরে। দুজনের পকেট’ই খালি। আর কিছুটা দুরে গেলে হয়তো বাজারের দেখা মিলবে। যদিও এখনো সামনে কিছু চখে পরছে না।
পাশ থেকে ফারহা আড় চোখে আবরারের দিকে চেয়ে দেখে মুখে দুই তিন টা জায়গায় কালো হয়ে আছে। আর গালের এক পাশে ছোট্ট একটা কা’টার চিহ্ন। গত কাল রাতে লোকজনের মা’রের কারণে এমনটা হয়েছে।
ফারহা’র খারাপ লাগলেও কিছু না বলে নিজের মতো করে হাটতে থাকলো। কারণ এই মুহুর্তে আবরারকে এসব বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা মানে কা’টা গায়ে নু’নের ছি’টা দেওয়া।
বেশ কিছুক্ষন হাটার পর সামনে একটা বাজার চোখে পরলো তাদের। দোকান খোলায় সাটারের শব্দ কানে আসছে। কেউ কেউ এখন এসে দোকান খুলছে মাত্র। আর বাকি গুলো এখনো বন্ধ।
বাজারে ঢুকে একটা দোকানের সামনে এসে দাড়ালো দুজন। ফারহা’দিকে চেয়ে আবরার বললো,
– কিছু খাবে?
ফারহা চুপচাপ দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বুঝালো। যদিও আবরার বুঝতে পারছে ফারহা’র ঠিকই ক্ষুদা লেগেছে। কারন গত কাল রাতেও কিছু খায়নি। হয়তো এখন টাকা নেই দেখে কিছু বলছে না।
আবরার একটু সামনে গিয়ে একটা মুদি দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো,
– ভাই, সামনে এই বিকাশ দোকান টা কখন খুলবে বলতে পারেন?
লোকটা বললো,
– লাগবে হয়তো কিছু সময়। সে একটু দেড়ি করে আসে।
– আচ্ছা ধন্যবাদ।
প্রায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর ওই দোকান টা খুললো। আবরার ফারহাকে নিয়ে ওই দোকানের সামনে এগিয়ে গেলো।
– ভাই একটা কল করা যাবে? খুব জরুরি।
লোকটা একটু উপর নিচ চেয়ে বললো,
– প্রতি মিনিট পাঁচ টাকা।
– আচ্ছা দশ টাকা করে দিবো, দেন।
বাসায় ফোন করে কোনো বিপদের কথা বলে ঝামেলা বাড়াতে চায় না আবরার। তাই ফারহাকে বললো,
– ফারদিনের নাম্বার টা জানো?
ফারহা মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সূচক জবাব দিয়ে বললো,
– প্লিজ বাসায় কিছু বলবেন না। আমাকে বাড়িতেই ঢুকতে দেবে না তাহলে।
আবরার একটু বিরক্তি নিয়ে বললো,
– ঝামেলা বাড়ানোর ইচ্ছা আমারও নেই। অন্য দরকারে নাম্বার চেয়েছি।
এর পর নাম্বার টা নিয়ে কয়েকবার কল দিলে অবশেষে রিসিভ করলো ফারদিন। ওপাশ থেকে বিরক্তিকর গলা ভেসে উঠলো,
– আরে ভাই, দেখছেন যে ফোন রিসিভ করছি না। তাও কেন বার বার ফোন দিয়ে বিরক্ত করছেন। দুই বারের উপরে কেউ ফোন রিসিভ না করলে জানেন না যে, সে হতো বিজি আছে, নয়তো ফোন তার কাছে নেই।
আবরার বললো,
– আরে শুন, আমি আবরার। বিপদে পরেছি খুব।
ফারদিন হুট করে শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বললো,
– আবরার, কি বিপদ? কিছু হয়েছে তোর?
– ভাই এখানে একা একটু বের হয়েছিলাম, তখনই ছিন’তাই কারির কবলে পরে সব হারালাম। দুটু হাত আর পা ছারা এখন কিছুই নেই। দ্রুত এই নাম্বারে কিছু টাকা পাঠা তো। আমি ঢাকায় এসেই ব্যাক করে দিবো।
– হায় হায় বলিস কি? তোর কোনো ক্ষতি হয় নি তো? ফারহা আয়রিন এরা ঠিক আছে তো? গত কাল রাত থেকে ফারহা আর তোর ফোন বন্ধ।
– ফারহারও ফোন টাকা সব নিয়ে গেছে। এখন আমার পাশেই আছে সে।
– কিভাবে হলো এসব? আর বাকিরা কোথায় ছিলো?
– ভাই তোকে পরে সব বলবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এক্ষুনি পাঠাচ্ছি টাকা। তোরা সেভ আছিস তো?
– হুম,,,
আবরার এর পর আয়রিন কে ফোন দিয়ে এখন কোথায় আছে জেনে নিলো। আয়রিন অনেক উত্তেজিত হলেও আবরার ঠান্ডা মাথায় বললো,
– স্যারকে গিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলবি। আর বলবি যে ভাইয়া একটা ছোট্ট ঝামেলায় পরেছে।
কিছুক্ষন বসে থাকার পর আবরার দোকানদারটাকে বললো,
– ভাই টাকা এসেছে?
– হ্যা, এই নিন।
– ধন্যবাদ।
বলেই ফারহাকে নিয়ে হাটা ধরলো আবরার। দেখে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টও নেই। যেই কয়টা আছে, সেগুলো এখনো বন্ধ৷ রাস্তার পাশে কিছু চায়ের দোকান চোখে পরলো। ফারহাকে সাথে নিয়ে ওখানে গিয়ে বললো,
– ভাই কি পাওয়া যাবে এখানে?
লোকটা বললো,
– পরোটা, ডিম, আর চা।
– আর ভালো কিছু নেই?
– না ভাই। এখনো এগুলো ছারা কিছু তৈরি হয় নি এখনো।
– আচ্ছা তাহলে এগুলোই দিন। একটু তারাতারি করুন। আমাদের তাড়া আছে।
সব শেষে একটা সি’এন’জি নিয়ে বাকিদের কাছে পৌছাতে প্রায় ঘন্টা খানেক লেগে গেলো। তখন প্রায় ৯ টা।
ভোর ছয়টায় সকলের রওনা দেওয়ার কথা ছিলো। সবার কাছে যেতেই সবাই তাদের ঘিরে ধরলো। মুখে আঘাতের দাগ গুলো দেখে বাকি স্যার রা ব্যাস্ত হয়ে বিষয়টা জানতে।আবরার ছিনতাই কারির বিষয়টা বুঝিয়ে বললে সবাই অবাক হয়ে মুখে হাত দেয়। প্রন্সিপাল স্যার বললো,
– সকালে তোমাদের ফোন না পেলে তো এতোক্ষনে পুলিশে ইনফর্ম করতাম। যাই হোক তোমরা ভালো আছো, এটাই অনেক।
বিষয়টা নিয়ে এই মুহুর্তে আর কথা বারালো না কেউ।
রওয়া দিতে দেড়ি করায়, কক্সবাজার পৌছাতে প্রায় দুপুর হয়ে গেলো। সবাই রেডি হয়ে চলে গেলো সমুদ্রের তীরে। এক পাশে চুপচাপ বসে আছে ফারহা। আয়রিন এসে বললো,
– এখনো মন খারাপ করে আছিস? দেখ যা গেলো মালের উপর দিয়ে গেছে। জা’নের উপর দিয়ে যায় নি এর জন্য ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বল।আর এখন এসব চিন্তা বাদ দে। চল বাকিদের সাথে ইনজয় করি।
– ভালো লাগছে না, তুই যা আমি একটু পর আসবো।
যদিও ফারহার ইচ্ছে শক্তি সব ফুরিয়ে গেছে। তবুও আয়রিনকে পাঠাতে কথাটা বললো সে। এর পর আবারও বিষণ্ন মনে বসে আছে চুপচাপ। ভাবতে লাগলো, সব কি করে সামলাবে সে? আর হুট করে হয়ে যাওয়া এই সম্পর্ক টার শেষ টা কোথায় গিয়ে দাড়াবে?
একটু পর দুইটা ডাব হাতে ফারহার পাশে এসে দাড়ালো আবরার। ফারহার প্রতি তার একটু রাগ আছে এটাই স্বাভাবিক। তবুও মেয়েটাও ডিপ্রেশনে আছে প্রচুর। নিজেদের মাঝে আগে বিষয় টা সমাধান না হলে, ঝামেলা টা আরো বড় হয়ে যাবে।
হুট করে ফারহা কেঁদে দিয়ে বললো,
– কেন হলো এমন টা? আমি তো এভাবে কিছু চাইনি। আমার ফ্যামিলি আমায় নিয়ে কতটা গর্বিত ছিলো। কতো বিশ্বাস করতো আমাকে আর শেষে আমি কিনা,,,,
পাশ থেকে আবরার বললো,
– এটা মাত্রই একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। আর প্রত্যেক সমস্যারই একটা সমাধান আছে। আর আমাদের দুজনেরই কোনো ঝামেলা হোক, অথবা আমাদের ফ্যামিলির কোনো দুর্ণাম হোক। আর বিশেষ করে ফারদিনের সাথে আমার সম্পর্ক টা নষ্ট হোক তা আমি চাইনা। বিষয় টা আমাদের মাঝেই সমাধান করাটা ঠিক হবে।
ফারহা আবরারের দিকে চেয়ে বললো,
– কিভাবে?
আবরার একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে বললো,
– বিষয় টা জানাজানি না করে, আমরা নিজেরাই আলাদা হয়ে গেলে তো আর কোনো ঝামেলা তৈরি হবে না তাই না?
এই কথাটায় যেন আবরারের গলাটা খুব ভারি শোনালো। ফারহা এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার দিকে। বার বার বলতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। যে, আমরা আলাদা হবো না। আমি তো আপনাকেই চাইতাম। হয়তো ভাগ্য তা অন্যভাবে করে দিয়েছে। প্রয়োজনে ফ্রেন্ডলি আমার পাশে থাকবেন। তবুও আলাদা হবেন না প্লিজ। ভালোবাসা হারানোর কষ্টের ঢেউ টা অনেক আগে আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো। আমি চাইনা আবার সেই কষ্ট আমাকে এসে ছুয়ে দিয়ে যাক। আমি নিঃশেষ হয়ে যাবো এবার। প্রয়োজনে ‘ছায়া’ হয়ে পাশে থাকবেন আমার। তবুও ছেরে যাবেন না প্লিজ।
কিন্তু চাইলেও কথা গুলো বলতে পারছে না ফারহা। বার বার গলার মাঝে দলা পাকিয়ে কি যেন আটকে যাচ্ছে। ফ্যামিলির কথা ভেবে হলেও আবরারের কথার ছোট্ট করে একটা জবাব দিলো,
– আচ্ছা।
To be continue…..