তোমার_ছায়া,পর্ব ১৭,১৮

0
919

#তোমার_ছায়া,পর্ব ১৭,১৮
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
১৭

আবরার ও ফারহাকে একসাথে দেখে কিছুক্ষন স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলো ফারদিন। অথচ এই আবরারই এক সময় তাকে নীয়ম-নীতি, ভালো-মন্দের বানী শুনাতো।
বন্ধুর বোন মানে নিজেরও বোন, কথাটা সবচেয়ে বেশি শুনেছিলো আবরারের মুখেই। যার কারণে ফারদিন ভালোবাসি শব্দটা কখনো ভালোবাসার মানুষটিকে বলার সাহস পায়নি।
চুপচাপ সব সহ্য করে মেনে নিয়েছে। এই টপিক টা নিয়ে সোহেলের সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করেছে। আয়রিনকেও হাসি মুখে অন্যের হয়ে যেতে দেখেছে।
আর আজ সেই আবরার কিনা, বিয়ের কথা চলছে দেখেও ফারহাতে নিয়ে নদীর তীরে একাকি সময় কাটাচ্ছে।

ফারহার সাথে দেখা করতে আসার সময় পথি মধ্যে একটা ছোট ছেলে কিছু ফুল নিয়ে এসে বললো, কয়টা ফুল নিতে। আজ সারা দিনে তেমন বেচা-কেনা হয়নি তার। কয়টা ফুল নিলে খুব উপকার হতো।
ছেলেটার প্রতি একটু মায়া জন্মালো তার। টেপ দিয়ে মোড়ানো দশটা ফুল একসাথে। ওগুলো নিলে হাসি মুখে সেখান থেকে চলে যায় ছেলেটা। আবরার ফুল হাতে হাসি মুখে নদীর তীরের দিকে চলে যায়। কারণ ফারহা বলেছিলো, এমন একটা নিরিবিলি জায়গায় দেখা করতে, যেখাতে তেমন একটা মানুষ জন থাকবে না।

ফারহা সম্পর্কে আবরারের স্ত্রী হলেও কখনো কিছু দেওয়া হয়নি তাকে। তাই কাঁপা হাতে ফুলগুলো ফারহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
– আসার সময় নিয়েছিলাম।

ফুল নেওয়ার সময় থমকে যায় ফারহা। বুকের ভেতর ধুক ধুক শব্দটা বেড়ে যায় দ্বিগুন। কিছুটা দুড়ে দাড়িয়ে থাকা ফারদিনের দিকে চেয়ে বললো,
– ভা ভা ভাইয়া,,,,,,
ভাইয়া শব্দটা শুনতেই পেছন ফিরে তাকায় আবরার। ফারদিন কে দেখে দুজনই উঠে দাড়ায়।
ফারদিন তাদের কাছে এগিয়ে এসে দুই হাত পকেটে গুজে স্ট্রেট হয়ে দাড়িয়ে বলে,
– এসব কি আবরার? খুবতো জ্ঞান দিতি এক সময়।
পাশ থেকে ফারহা বললো,
– ভাইয়া ওর কোনো দোষ নেই।
ফারহার মুখ থেকে কথা বের হওয়ার আগেই সজোড়ে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো ফারদিন। রাগ মিশ্রিত চাহোনিতে বললো,
– তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি?
আবরার ফুল হাতে নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে থাকলে ফারদিন তার বাম কাধে ধাক্কা দিয়ে বললো,
– কি হলো কথা বলছিস না কেন? কি এসব?
আবরার কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বললো,
– ওয়াইফ সে আমার।
ফারদিন এবার হতভম্ব হয়ে বলে,
– মানে?
বলেই ফারহার দিকে তাকালে দেখে সেও নিশ্চুপ।
– তোকে আমি বিষয়টা বুঝিয়ে বলছি। এখানে সিনক্রিয়েট না করে চল কোথাও গিয়ে বসে ঠান্ডা মাথায় বলি সব।
পারদিন সোজাসুজি ভাবে বলে,
– কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। যা বলার এখানেই দাড়িয়ে বলতে থাক। কান খোলা আছে আমার। শুনছি আমি।

ফারদিনের এমন কথা বার্তায় ভয়ে দুই হাত এক করে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে ফারহা।
নিজের ভালোবাসা হারানোর কষ্টটা যেন পুনরায় জেগে উঠেছে ফারদিনের। সেই সাথে নিজের বন্ধুর সাথে বোনকে দেখে রাগটা ও বেড়েছে অনেক।

অনেক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে পুরো কাহিনিটা শুনলো ফারদিন। সব শুনে কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে আবরারের দিকে চেয়ে কঠিন স্বরে বললো,
– ফারহাকে ভালোবাসিস?
প্রতি উত্তরে আবরার বললো,
– ভাই দেখ এখানে প্রশ্নটা ভালোবাসার নয়। বিষয়টা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। আর আমরা নিজেদের মধ্যে সমাধান করতে চেয়েছিলাম। তাই কাউকে জানাইনি। এক মাস পর হয়তো আমাদের ডিবোর্সও হয়ে যাবে। তখন সব আবার আগের মতোই হয়ে যাবে। প্লিজ ভাই ভুল বুঝিস না আমায়।
রাগ নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে এবার অনেক্ষন মুষ্টিবদ্ধ হাত টা আবরারের মুখে বসিয়ে দেয় ফারদিন। হটাৎ এমন ঘু’ষির আঘাতে ছিটকে কিছুটা পেছনের দিকে চলে যায় আবরার।
আবরার নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও বললো,
– বিশ্বাস কর, আমাদের বিন্দু মাত্র কোনো দোষ নেই। সব হুটহাট হয়ে গিয়েছিলো,,,
বলতেই আরেকটা মে’রে দেয় ফারদিন। পেছন থেকে ফারহা দৌড়ে এসে ফারদিনের এক হাত চেপে ধরে বলে,
– প্লিজ ভাইয়া ওকে এভাবে মে’রো না।
ফারদিনের রাগটা এতোই বেশি ছিলো যে, ফারহার কথা কানে না নিয়ে তাকেও সজোড়ে একটা থা’প্পর মে’রে দেয়। ছিটকে কিছুটা দুড়ে গিয়ে ঘাসের মাঝে পরে ফারহা।
রাগি দৃষ্টিতে বলে,
– একটু বেশিই আদর করি আর ফ্রি-লি কথা বলি দেখে মাথায় চড়ে বসেছিস না?

ফারদিন এবার নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে চার দিকে তাকিয়ে দেখে, আর কিছুক্ষন এমন চলতে থাকলে লোক জড় হয়ে যাবে এখানে।
তাই ফারহার এক হাত চেপে ধরে টানতে টানতে মেইন রোডের দিকে হাটা ধরে সে।
ওদিকে নাক থেকে ঝড়ে পরা র’ক্ত টা হাত দিয়ে মুছে নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে আবরার। ফারদিন এবার থেমে আবরারের দিকে চেয়ে বললো,
– বন্ধুত্বের মর্যাদা এভাবে দিবি তা ভাবিনি আমি। আজ থেকে ফারদিন নামক কোনো ফ্রেন্ড তোর জীবনে নেই।
বলেই পারহাকে টেনে হিছরে বাড়ির দিকে রওনা দিলো ফারদিন।
,
,
– আমাদের পছন্দের বিষয় নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত পাকা করেই আজ ফাইনাল কথা বলতে এসেছি। আর যেখানে আমাদের ছেলেই ফারহা মাকে পছন্দ করেছে সেখানে আমাদের আর দ্বি-মত নেই।
ফারহার বাবা একটু হাসি দিয়ে ঘরির দিকে তাকালো। ফারদিনও তো এখন আসবে বলেছিলো। বললো, আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। কিচুক্ষনের মাঝেই চলে আসার কথা, অথচ এখনো খবর নেই।

তখনই ফারহাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো ফারদিন। কাঁদেই চলছে ফারহা। বাবা বসা থেকে উঠে বললো,
– কি হলো ফারদিন, ফারু কাঁদছে কেন? আর ওকে কোথায় থেকে নিয়ে এলি? ফারু তো ঘরেই ছিলো।
পারদিন এখনও রাগি লুক নিয়ে বললো,
– ঘরেই ছিলে তোমার মেয়ে তাই না? মাকে জিজ্ঞেস করো কোথায় ছিলো এতোক্ষন?
ততোক্ষনে মা ড্রয়িং রুমে এসে বললো,
– ফারু তো পাঁচ মিনিটের কথা বলে বাইরে গিয়েছিলো। কেন কি হয়েছে?
– তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো কাহিনি কি?
ফারহা এবার কাঁদু কাঁদু ভাব নিয়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে চিৎকার করে বললো,
– আমার হাসবেন্টের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম আমি। শুনছো তোমরা, আমার হাসবেন্ট আবরারের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এখন তোমরাও আমাকে মা’রবে তাই না, মা’রো সবাই মা’রো আমাকে। আমার ইচ্ছে, আমার চাওয়া তো কখনো জানতে চাও নি তোমরা। কেন আমার জীবনের সব তোমাদের সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করবে? কেন আমার কোনো কিছু চাওয়ার কোনো অধিকার থাকবে না? কেন আমার মতামত একবার জানতে চাইলে না তোমরা? আমার জীবনে কি আমার চাওয়ার গুরুত্বটা একটুও নেই? শুনে রাখো সবাই, আবরারকে বিয়ে করে নিয়েছি আমি। এখন সে ছারা আর কারো ঘরে নিয়ে যাওয়ার অধিকার নেই আমাকে।

বলেই কাঁদতে কাঁদতে রুমের দিকে চলে গেলো ফারহা।
ওদিনে ছেলের বাবা ও মা হা করে বিষয় গুলো তাকিয়ে দেখছে।
পাশ থেকে ছেলের মা বলে উঠলো,
– ছি! এমন একটা দুঃচরিত্রা মেয়েকে কিভাবে আমাদের ছেলে পছন্দ করলো? বিয়ের আগেই অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক থাকার পরও এই মেয়েকে আমার ছেলের বৌ বানাতে এসেছি? ছি!
পাশ থেকে ছেলের বাবা বললো,
– বিয়ের কথাবার্তা নামে এই বাড়িতে ডেকে এনে মেয়ের কু-কর্ম দেখিয়ে অপমান করে মোটেও ঠিক করেন নি আপনারা। এর জবাব আপনাদের সবাইকে দিতে হবে।
বলেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো তারা। বের হওয়ার সময় ছেলের মা বলে গেলো,
– খুব তো বড় বড় কথা শুনতাম এই মেয়েকে নিয়ে। যে মেয়ে এমন, মেয়ে তেমন, বাবা মায়ের মুখের উপর কথা বলার ও সাহস নেই। খুব ভদ্র ঘরের মেয়ে। এখন দেখছি ঠিক তার উল্টো। না জানি আরো কতো কু-কর্ম ঢেকে মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছে তারা। বলেই ধম ধম শব্দে পা ফেলে বেড়িয়ে গেলো তারা।
বাবা কথা বলার শব্দ হারিয়ে সোফায় বসে গেলো ধপাশ করে। মা দেখি রক্তিম চোখে হাতের মুষ্ঠি বদ্ধ করে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিচ্ছে।

রুমে গিয়ে স্থির হয়ে কয়েকটা বড় বড় শ্বাস নিলো ফারদিন। এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে তার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। সবার ভালোবাসাই পূর্ণতা পাক এটাই সে চায়। কিন্তু আবরার? তাকে হিট করার আগ মুহুর্তেও ফারদিন জিজ্ঞেস করেছিলো, সে ফারহাকে ভালোবাসে কি না?
কিন্তু আবরারের উত্তরে না সুচক শব্দটাই খুজে পেয়েছিলো সে। কারণ সে বার বার বলছিলো, এটা একটা এক্সিডেন্ট, আর এক মাস পরই বিচ্ছেদ হলে সব আগের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু ফারহা, সে কি মেনে নিতে পারবে সব? আর একজন ডিবোর্সি মেয়ে সমাজে কতোটা অবহেলিত এটা ফারহার সাথে মিলাতেই নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারেনি সে। রাগে আবরারকে হি’ট করে বসে।

রুম থেকে বেড়িয়ে ফারহার রুমের দিকে এগিয়ে গেলেই দেখে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। ভেতর থেকে ঠাস টাস শব্দ আসতেই জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখে মা হাতে বাবার একটা বেল্ট নিয়ে নানান ধরনের কথা বলো বলে বেধরম পি’টাচ্ছে। আর বাবা ড্রায়িং রুমের সোফায় নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। এতো আদরের মেয়েটাকে বাচাতেও আসছে না আজ।
ফারদিন বার বার দরজায় থা’প্পর দিতে দিতে মাকে ডাকতে লাগলো। মায়ের এমন রুপ দেখেছিলো সেই ছোট বেলায়। বড় হওয়ার পর আজ প্রথম এমন ভাবে পি’টাচ্ছে ফারহাকে।
মায়ের বলা কথা গুলোর কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ ফ্লোরে বসে মা’র খাচ্ছে আর কান্না করছে ফারহা। কারণ মা সব সময়ই বলতো, তাদের কথার বাইরে কিছু করলে কে’টে নদীতে ভা’ষিয়ে দিবে। তবুও কোনো অন্যায়কে মেনে নিবে না সে।

To be continue…….

#তোমার_ছায়া (পর্ব ১৮)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

মায়ের এমন হিংস্র রুপ টা এর আগে কখনো দেখেনি ফারহা। ছোট বেলায়ও তো অনেক মে’রেছিলো। হয়তো গাছ থেকে চিকন ঢাল ভে’ঙে কয়েকটা লাগিয়ে দিতো, আবার কখনো পড়ার টেবিল থেকে স্কেল নিয়ে কয়েকটা দিতো।
ওগুলোকে মা’র বলা গেলেও আজকেরটা কে কোনো মতেই মা’র বললে ভুল হবে। বাইরে থেকে ফারদিন বার বার দরজায় আঘাত করে বললো,
– মা তুমি কি পাগল হয়ে গেলে আজ।
কিন্তু কোনো কথাই কানে না নিয়ে নিজের সব শক্তি নিয়ে পি’টিয়ে মনে হচ্ছে সব রাগ এই মা’রের মাধমেই ঝাড়লেন।
একটাই মেয়ে, আশে পাশের কিছু মেয়েদের খবর শুনতে শুনতে সব সময় ফারহাকে নিয়ে যাই ভয়টা পেতো সেটাই আজ সত্যি হয়ে গেলো। মেয়েকে এতো শাসন করলেও শেষে এসে সব মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলো সে।

নিজের সব টুকু রাগ এতোক্ষন ঝেড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো তার মা। ফারদিন দ্রুত রুমে ঢুকে দেখে ক্লান্ত শরিরে চোখ বন্ধ হবে হবে ভাব নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে আছে ফারহা। একটু আগের আঘাত গুলো হাত পা যতটুকু দেখা যাচ্ছে সবটা লাল হয়ে আছে। কিছু যায়গায় ফেটে র’ক্তও বেড়িয়ে গেছে অনেকটা। মায়ের এমন রুপ টা যেন কল্পনায়ও আনতে পারছেনা সে।

ফারদিন দ্রুত ফারহাকে কোলে তুলে নিয়ে সবাইকে উচু গলায় ঝাড়ি দিতে দিতে ঘর থেকে বেড়িয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে ছুটে চলে।
,
,
সন্ধার আগে বাসায় ফিরে রুমে নিশ্চুপ হয়ে বসে ছিলো আবরার। মাথা জুড়ে নানান চিন্তা৷ এতো দিন যেই ভয়টা বার বার পেছন থেকে তাড়া করছিলো আজ সেটাই সত্যিই হয়ে গেলো। কেন হতে হলো এমন? সবাইকে সব কিছু বুঝিয়ে বললে কি মেনে নিবে সব?
প্লিজ না চাইলেও সব কিছু একবার মেনে নাও না তোমরা। আমি যে আশে পাশের প্রিয় মানুষ গুলোর ভয়ে কখনো তাকে ভালোবাসি শব্দটা বলারও সাহস পাই নি। কেন এমনটা হয়?
প্রিয় জিনিস গুলো চাইলাম, আর পেয়ে গেলাম। নিয়মটা এমন হলেই বোধ হয় পৃথিবী টা সুন্দর হতো। তাহলে আর প্রিয় জিনিস হারানোর ভয় থাকতো না। প্রিয় মানুষটার কথা ভেবে বুকের ভেতরটায় ধুক ধুক শব্দ তৈরি হতো না। আমি যে ছায়া হয়ে হলেও তার পাশে থাকতে চাই। না চাইতেও নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি তার সাথে। যেমন করে কারো সাথে তার ছায়া মিশে থাকে।

নিজের মাঝে এসব ভাবতে ভাবতে নিজেকে আরো অস্থির করে তুলছে আবরার। এর মাঝে আয়রিন এসে নাস্তা করার জন্য ও মায়ে কি জন্য যেতে বলছে তাই ডেকে গেলো।

রুম থেকে বেড়িয়ে দেখে মা চা হাতে সোফায় বসে টিভি দেখছে। আয়রিন নাস্তা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
আবরার চুপচাপ মায়ের পাশে গিয়ে ফ্লোরে বসে মায়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চুপ হয়ে রইলো। মা তার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বললো,
– কিরে এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে? কিছু বলবি?
আবরার কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বললো,
– মা,,,
মা এবার টিভির থেকে মনোযোগ সরিয়ে বলে,
– কি হয়েছে তোর?
– ছোট বেলা থেকে কখনো তোমাদের কথার অবাধ্য হয়েছি?
– না, কারণ আমার ছেলে তো অবাধ্য হওয়ার মতো না।
– কখনো তোমার কথার বাইরে কিছু বলিনি। তোমাদের চাওয়াকেই সব সময় প্রধান্য দিয়েছি। আচ্ছা মা, আমি যদি তোমাদের কাছে খুব বেশি কিছু একটা চেয়ে বসি, তাহলে দিবে আমাকে? যদি তোমাদের মনে আ’ঘাত লাগবে এমন কিছু?
– চাওয়া অনেক রকমেরই হয়। শুধু নিজেকে মিলিয়ে দেখতে হয় যে, আমি যেই জিনিস টা চাইছি তা আমার লাইফে কতটুকু দরকারি। আর এর মাঝে কি আমার উপকার হবে নাকি অপকার। সব মিলিয়ে চাওয়া গুলো হতে হবে সব থেকে উত্তম।
– আমি জানি না মা, আমার চাওয়াটা আমার জন্য কতটুকু বেষ্ট হবে। শুধু এটা জানি যে, চাওয়া টা পুরণ না হলে আমি কখনোই ভালো থাকতে পারবো না।
মা একটু হেসে বললো,
– চাওয়া টা কি ফারহা?
আবরার মুহুর্তেই অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে তাকে কিছুক্ষন।
– তুমি কিভাবে জানো মা?
মা আবারও হেসে বললো,
– ওটা পরে বললো। এখন কাজের কথা বল। তাকে পেলে তুই হ্যাপি হবি?
– জানিনা মা, তবে না পেলেও হ্যাপি থাকতে পারবো না। প্লিজ মা, এই একটাই চাওয়া তোমাদের কাছে। জীবনে কিচ্ছু চাইবো না, তোমরা যাই বলতে তাই করবো।
মায়ের হাসিটা আরো বেড়ে গেলো। হাসতে হাসতে বললো,
– তোর মাঝে আজ ঠিক সেই ছোট্ট কালের অভ্যেস গুলো ভেষে উঠেছে। ছোট বেলায়ও কিছু আবদার করলে ঠিক এভাবে বলতি।
– মা,,, আমি যদি ফারহাকে এখানে নিয়ে আসি তাহলে তোমরা মেনে নিবে, মা?
– যদি তোরা একে অপরকে মন থেকে ভালোবাসিস, আর তোরা যদি এতে সুখে থাকতে পারিস, তাহলে নিয়ে আয়।
– সত্যি মা?(আবরারের হাস্যজ্জল মুখ)
– হুম।
– কিন্তু বাবা?
– তোর বাবার কথা ভাবতে হবে না। আমি ম্যানেজ করে নিবো তাকে।
– থ্যাংক ইউ মা, লাভ ইউ। আমার দেখে পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ট মা টা হলে তুমি।
,
,
হসপিটালে ফারহার পাশে বসে আছে ফারদিন। পাশে ঘুমিয়ে আছে ফারহা। প্রথমে নিয়ে আসার পর অনেক ভয়ে ছিলো ফারদিন। এর পর ডাক্তার এসে দেখে গেলো। মেডিসিনও দিয়ে গেছে। এখন কিছুক্ষন লং টাইম রেস্ট নিলে মোটামুটি সুস্থ হয়ে যাবে।

রাত তখন ৯ টা। ফারদিনকে পাশে দেখে একপাশে লুকিয়ে গ্লাস ভেদ করে ফারহার দিকে চেয়ে আছে আবরার। ফারহা হসপিটালে ভর্তি হয়েছে শুনেই ছুটে এসেছিলো। এসেই ফারদিনকে ওর পাশে দেখে আর সামনে গেলো না। আড়াল থেকে তাকিয়ে রইলো। হয়তো বাসায় অনেক কিছুই হয়ে গেছে ফারহার সাথে। যার কারণে হসপিটাল পর্যন্ত আসতে হলো তাকে। আবরারের চোখের কোনে এক ফোটা জল জমে এলো। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই একটা সময় আছে, যেই সময়টা খুব খারাপ কাটে। তার জীবনে হয়তো এই সময়টা।
,
,
পর দিন বাসায় নিয়ে গেলো ফারহাকে। কিন্তু ফারহার এমন অবস্থা দেখেও মন গললো না কারো। কথা কখনো গোপন থাকে না। তেমনই খবটাও চলে গেলো আশে পাশের মানুষদের কানে।
ওই দিনের ঐ মহিলাটা কিছুক্ষন আগে এসে বললো,
– বলেছিলাম, বিয়ের বয়স হয়েছে মেয়েকে বিয়ে দিতে। না ওনি ঐ দিন আরো উল্টো কতো মহান মহান কথা শুনালো মেয়েকে নিয়ে। শেষে কি হলো? ওই যেই লাউ সেই কদু।

ফ্যামিলির অবহেলা, আশে পাশের মানুষদের এমন কথা সহ্য করে চুপচাপ রুমে বসে আছে ফারহা। আজ দুই দিন বাবা মা কেউই কথা বলছে না তার সাথে। ফারদিন খাবার নিয়ে আসে। এর পর ঔষধ খাইয়ে দিয়ে যায়।

ফোনের স্কিনে আবরারের নাম্বার ভেষে উঠলে তা কেটে দেয় ফারহা।
কল লিষ্ট চেক করে দেখে, এই দুই দিনে অগনিত বার ফোন দিয়েছিলো আবরার। বাট সে রিসিভ করেনি। কিছুক্ষন ফোনের দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকলে আবারও ফোন আসে। এবার রিসিভ করে নিশ্চুপ হয়ে থাকে সে। ওপাশ থেকে আবরার বার বার কথা বললে, সে ছোট্ট করে বলে,
– কেনো ফোন দিচ্ছেন এতো বার?
– তুমি ফোন রিসিভ করছিলে না কেন?
– ভালো লাগছেনা তাই।
– বাসার পরিবেশ এখন কেমন?
– ভালো না।
– ওহ্,,,
– হুম, ভাইয়া ছারা আর কেউ ফিরেও তাকায় না আমার দিকে।
– ওই দিন খুব মে’রেছিলো তাই না?
– হুম,,
– এখন মেনে নিয়েছে?
– না, মা বলেছে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে আর বাবা দুই দিন ধরে বাড়িতে কিছুই খায়না। হয়তো আমি আছি বলে কিছুই সহ্য হচ্ছে না তাদের। শুধু ভাইয়াই কথা বলে আমার সাথে। একটুও ভালো লাগছে না আমার। দম বন্ধ হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে দুরে কোথাও হারিয়ে যাই।
– খেয়েছো কিছু?
– না, ভাইয়া এখনো ফিরে আসেনি। সে বাইরে থেকে নিয়ে আসলে তখন খাবো।
– কেন বাইরে থেকে কেন?
– মা বলেছে বাসায় খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ আমার। আর বাসা থেকে চলে যেতে। আমাকে সহ্যই করতে পারছেনা কেউ। এতো কিছু আর নিতে পারছি না। ইচ্ছে করছে মরে গিয়ে সবাইকে মুক্ত করে দিই। তখন আপনিও মুক্তি পেয়ে যাবেন।
আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিলো আবরার। একটা শ্বাস নিলো ফারহা। নিঃস্বঙ্কোচে আবরারের কাছে আজ বলে দিলো তার অভিযোগ গুলো। কে সে? কেউ না। সেও তো ভালোবাসে না আমায়। সব খারাপ, কেউ ভালো না।
,
,
ফারহার বাসার সামনে এসে ফোন দেয় আবরার, বলে এক্ষুনি রাস্তায় আসতে। নয়তে সে নিজেই ভেতরে চলে আসবে। রাত তখন ১১ টা। একটু আগে ফারদিন খাবার খাইয়ে বললো ঘুমাতে। বাড়ির সবাই হয়তো ঘুমিয়ে আছে।
রুম থেকে বেড়িয়ে চুপচাপ বাইরে চলে আসে ফারহা। আজ আর ভয় করছে না। সবাই ই তো জেনে গেছে সব। যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর সে বাসা থেকে চলে গেলেই তারা হ্যাপি।

রাস্তায় এসে আবরারের সামনে দাড়ায় সে। শান্ত ভাবে বললো,
– যা বলার তারাতারি বলুন। আর কয়দিন বাকি আছে ডিবোর্সের?
– দিন গুনতে হবে না আর, চলো আমার সাথে।
– কোথায়?
– আমার বাসায়? এক সাথে থাকবে আমরা দুজন।
ফারহা একটু হাসির রেখা টেনে বললো,
– ভালোবাসা ছারা করুনা দেখাতে গিয়ে এমন করলে সুখি হতে পারবেন না। তার চেয়ে বিচ্ছেদই ভালো।
– ভালোবাসি বলেই, হাত ধরতে এসেছি, আর না বাসলে ছেরে দেওয়া হাত ছারাই থেকে যেতো।

আর কিছু না বলে ফারহার হাত চেপে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় আবরার। তখন গেট দিয়ে বেড়িয়ে আসে ফারদিন। আবরারের এমন শক্ত করে ধরে রাখা হাত দুটুর দিকে তাকিয়ে বললো,
– ওই দিন এই জন্যই বলেছিলাম, ফারহাকে ভালোবাসিস কি না? ওই দিন যদি ডিবোর্সের কথা না বললে এভাবে ভালোবাসি বলতি, তাহলে এতো কিছু হতো না। আমি নিজেই ফারহাকে তোর কাছে তুলে দিয়ে সব সামলে নিতাম। মা বাবা হয়তো আরে অনেকদিন এভাবে রাগ করে থাকবে। ধীরে ধীরে আমি মানিয়ে নিবো ওদের। তোরা হ্যাপি থাক এটাই চাই। চলে যা তোরা। এক্ষুনি চলে যা। নিজেদের মতো সব কিছু গুছিয়ে নে।
আবরার চুপ হয়ে দাড়িয়ে থাকলে ফারদিন করুন গলায় ডাকলো,
– আবরার,,,,
বলেই আবরারকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ওই দিনের ব্যাবহারের জন্য সরি রে। এখনও মন খারাপ করে থাকবি? আর শুন, ফারুকে কখনো কষ্ট দিস না। আমি যানি তোর কাছে থাকলে ও খুব ভালো থাকবে। আগলে রাকিস কেমন? কখনো কষ্ট দিস না আমার বোন টা কে।

To be continue……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here