#তোমার_ছায়া,পর্ব ২,৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
পর্ব ২
ফারহা কে একটু আগে করা অপমান যেনো মুহুর্তেই ভুলে গেলো আবরার। মেহেদী পরানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো ফারহার দিকে। কিন্তু ফারহা ভুলেনি কিছুই। মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।
আয়রিন ফারহার কাধে আলতো ধাক্কা দিয়ে বললো,
– কিরে, কোন ধ্যানে আছিস? সেম আমার ডিজাইনটা ভাইয়াকেও এঁকে দিবি।
নিরুপায় হয়ে মনে মনে আয়রিনের গোষ্টি উদ্ধার করতে করতে এক হাতে আবরারের হাতটা ধরে অন্য হাতে মেহেদী আঁকা শুরু করলো ফারহা।
আঁকার সময় আয়রিন তাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,
– খুব মানাবে দুজনকে।
ফারহা মাথা তুলে আয়রিনের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। মান ইজ্জত যেই টুকু আছে ওটাও খাবে নাকি এই মেয়ে?
ফারহার এমন লুক দেখে আয়রিন হেসে বললো,
– আরে আমি তো ভাইয়ার আর আমার দুজনের মেহেদীর ডিজাইনের কথা বলছি। খুব মানাবে ভাইয়ার আর আমার মেহেদী ডিজাইন।
ফারহা নিজের বোকামিতে একটু লজ্জা পেলেও তা প্রকাশ করলো না। চুপচাপ বললো,
– ওহ্।
,
,
ফারহার ভাই ফারদিন। ফারহার আর সে একসাথেই এসেছিলো। ফারদিনকে সন্ধা থেকে দেখা গেলেও এখন রাতে হলুদ লাগানোর মুহুর্তে কোথাও সে নেই। ফারহা এদিক সেদিক খুজে ফারদিনকে না পেয়ে ফোন দিলো।
দুইবার রিং হতেই ফোন রিসিভ করে ফারদিন। ফারহা বলে উঠে,
– সবাই এখানে তোমাকে খুজছে আর তুমি কোথায় গেলে ভাইয়া? আর আবরার ভাইয়া ফোন দিচ্ছে তুমি ফোন ধরছো না কেন?
ওপাশ থেকে শান্ত গলায় উত্তর এলো,
– ভালো লাগছে নারে ফারু, তাই বাসায় চলে এসেছি।
– মানে কি, তুমি বাড়ি চলে গেলে?
– হুম ভালো লাগছিলো না তাই কাউকে বলে আসারও ধৈর্য পাই নি। তোরা ইনজয় কর, আনার ভালো লাগছে না, ঘুমাবো বায়।
ফারদিনের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না ফারহা। ফোন রেখে আয়রিনের কাছে এসে দেখে সবাই আয়রিনকে হলুদ লাগাচ্ছে। ফারহা গিয়ে লাগাতেই আয়রিনও তাকে লাগিয়ে দিলো। ফারহা একটু অবাক হয়ে বললো,
– আমাকে লাগাচ্ছিস কেন?
পাশ থেকে সাথি বললো,
– হলুদ লাগিয়ে দিলে তারাতারি বিয়ে হয়। আয়রিন তো আবরার স্যারকেও হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে।
ফারহা একটু অবাক হয়ে বললো,
– এসব কি আয়রিন?
আয়রিন একটু হেসে বললো,
– তেমন কিছু না, তোর আর ভাইয়ার বিয়েটা যেন তারাতারি হয়ে যায় তাই। হিহিহি।
ফারহা লাফ দেওয়া কথার মতো বলে উঠলো,
– জীবনেও না, তোর ভাইয়ের মতো ঘার ত্যারাকে আমি তো দুরে থাক, জীবনেও কোনো মেয়ে বিয়ে করবে না।
তখনই সাথির ইশারায় ফারহা পেছন ফিরে আবরার কে দেখে একটা শুকলো ঢোক নিলো।
,
,
সারা মুখে হলুদ মাখায় নাজেহাল অবস্থা। ভেতরে গিয়ে ওয়াশ রুমে মুখ ধুয়ে নিলো ফারহা। বের হতেই ওয়াশ রুমের সামনে সাদাফকে দেখে থমকে যায় সে।
পাশ কাটিয়ে চলে আসতে চাইলে সাদাফ দেওয়ালে এক হাত দিয়ে পথ আটকে দাড়ায়। ফারহা একটু রাগি লুক নিয়ে বলে,
– পথ ছারুন আমার।
সাদাফ বললো,
– হুম ছারবো, ধরে রাখতে আসিনি। অনেক দিন পর দেখছি তোমায়। কেমন আছো?
ফারহার অস্বস্থি লাগছে খুব। বিরক্তি নিয়ে বললো,
– হুম ভালো,, পথ ছারুন আমার।
সাদাফ আরো ভালো করে আটকিয়ে বললো,
– সেদিন কিভাবে পারলে দুই বছরের সম্পর্ক শেষ করে দিতে।
রাগে ফারহার শরির কাঁপছে। তবুও নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো,
– আমি চাইনি, আপনিই বাধ্য করেছেন আমায়।
– এই তোমার ভালোবাসা?
– আপনার ভালোবাসাও কতোটা শুদ্ধ ছিলো তা তো তখনই প্রমান করে দিয়েছেন। আর এই বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে ইচ্ছুক নই,,,,
বলেই সাদাফের হাত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে হাটা ধরে ফারহা। সাদাফ সোজা হয়ে দাড়িয়ে তাকিয়ে থাকে ফারহার চলে যাওয়ার দিকে। হলুদ শাড়িতে খুব মানিয়েছে মেয়েটাকে। তার সুন্দর্যের সাথে শাড়িটা পুরোপুটি মিশে গেলো। আচ্ছা ব্রেকআপের পর প্রাক্তনকে এতো সুন্দর লাগে কেন?
অনুষ্ঠান শেষ হতে প্রায় রাত ২ টা বেজে গেলো। শেষ রাতে এসেও বান্ধবিদের জ্বালায় ঘুমাতে পারছে না ফারহা। চারজন একসাথে আছে মানেই তাদের আলোচনা বিশ্বের বড় বড় গবেষনাগারকেও হার মানাবে। উপায় না পেয়ে ফারহা একটা বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো। এবার একটু ঘুমাতে পারলেই হয়।
,
,
সকালে ঘুম কাতুর চোখে হাত দিয়ে চোখ কঁচলাচ্ছে ফারহা। ভোরের আলো ফুটে উঠেছে। রুমের বাইরে কয়েকজন চা নাস্তা নিয়ো দৌড়াদৌড়ি করছে। বাকিরা হয়তো এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। আয়রিন, সাথি, সুমাইয়া সবাই এখনো ঘুমাচ্ছে। তিনজন মিলে সারা রাত রুমটা একবার উল্টো করেছে আরেকবার পাল্টা করেছে। এমন অবস্থা করেছিলো তিনজন মিলে।
শেষ রাতে ঘুমিয়ে এখন মরার মতো পরে আছে।
ফারহা আরো কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে রইলো। না, ঘুম আসছে না আর। রুম থেকে বেড়িয়ে বাইরে এলো। ফারহাকে দেখে লতা রহমান এগিয়ে এসে বলে,
– ফ্রেশ হয়েছো?
ফারহা দুই দিকে মাথা নাড়ায়। লতা রহমান আবার বলে,
– ওয়াশ রুমে গেলে এক পাশে টুথ পাউডার পাবে। ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি নাস্তা তৈরি করছি। আর বাকিদেরও ডেকে দিও।
ফারহা লক্ষি মেয়ের মতো ঘুমু ঘুমু চোখে এক পাশে মাথা কাত করে হ্যা সূচক সম্মতি জানালো।
শাক/চুন্নি গুলো যেই মরার মতো ঘুমাচ্ছে, মনে হয়না ডাকলে উঠবে এখন। তাই ফারহা হাটতে হাটতে ছাদে চলে গেলো। দেখে আবরার আগে থেকেই ছাদে হাটাহাটি করছে।
আবরারকে দেখে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ডাক দেয় আবরার। ফারহা দাড়িয়ে পেছন ফিরে তাকালো। আবরার তার কাছে এসে শান্ত ভাবে বললো,
– সরি।
ফারহা একটু ভ্রু-কুচকে বললো,
– সরি কেন?
আবরার শান্ত ভাবে বললো,
– কালকের ব্যবহারের জন্য।
– ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করিনি। আমি জানতাম না, আপনার রুমে বাইরের কেউ প্রবেশ করা টা আপনি পছন্দ করেন না।
আবরার আর কিছু না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। ফারহা আবার বললো,
– আচ্ছা ওই ছেলেটা আপনার কি হয়?
আবরার বললো,
– কোন ছেলেটা?
– ওই যে, একটু ফর্সা করে লম্বা, ব্লু শার্ট পরেছিলো কালকে দেখলাম।
– ওহ্ সাদাফের কথা বলছো? আমার বাবার বন্ধুর ছেলে। কেন, কি করেছে সে?
– না কিছু না এমনি।
বলেই নিচে চলে আসলো ফারহা। রুমে এসে বাকি বান্ধবিদের টেনে তুললো। ৯ টা বাজে, এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে।
,
,
আবরারের অনেক ফোনের কারণে দুপুরে বর পক্ষ আসার একটু আগে আসলো ফারদিন। ফারহা এগিয়ে গিয়ে বললো,
– এতোক্ষনে এলে কেন ভাইয়া? কোনো সমস্যা? আর কালকে এভাবে ফোন কেটে দিলে কেন?
প্রশ্ন গুলোয় একটু বিরক্তি নিয়ে ফারদিন বললো,
– এতো কথা বলিস না তো, ভালো লাগছে না।
বলেই সামনের দিকে চলে গেলো। হা হয়ে তাকিয়ে আছে ফারহা। ভাইয়া তো তার সাথে এভাবে কথা বলে না। কাল থেকে ভাইয়ার কি হলো হটাৎ।
,
,
সামাজিক ভাবেই বিয়েটা শেষ হলো। আয়রিন কে বিদায় দিচ্ছে সবাই। গত কাল থেকে হাসিখুশি মেয়েটাও এখন কাঁদছে সবাইকে ধরে। আমারও খুব খারাপ লাগছিলো। আমাকেও হয়তো একদিন এমন একটা যায়গায় এসে দাড়াতে হবে।
সাদাফকে গত কাল রাতে দেখেছিলো সে। আর বিয়ের আগে দুপুর বেলায় এসেছে। ফারহার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো বার বার। বাট সুজুগ পায়নি দেখে হয়তো হয় নি।
আয়রিনকে বিদায় দিয়ে ফারদিনকে খুজতে লাগলো ফারহা। ভাইয়ের মতিগতি ভালো লাগছে না তার কাছে।
দেখে সবার বিপরিত পাশে একা দাড়িয়ে আছে সে। ফারহা গিয়ে পেছন থেকে কাধে হাত রাখতেই চমকে উঠে চোখের পানি মুছে নের ফারদিন। ফারহার দিকে চেয়ে একটু হাসলো। ফারহা বললো,
– কাঁদছো কেন ভাইয়া?
– কই না তো।
– আমার কাছে লুকানোর চেষ্টা করেও লাভ হবে না ভাইয়া। কাঁদছো কিনা ওটা জিজ্ঞেস করিনি, কেন কাঁদছো তা জিজ্ঞেস করেছি।
ফারদিন একটু হেসে ফারহার গালে হাত রেখে বললো,
– একদিন আমার বোনটাকেও এভাবে বিদায় দিয়ে দিতে হবে তাই না রে?
To be continue……
#তোমার_ছায়া (পর্ব ৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
ফারহা ভালোই বুঝতে পারছে কিছু একটা গন্ডোগল আছে। কারণ ফারদিন এতো সহজে কাঁন্না করার মানুষ না। তবুও এই মুহুর্তে ফারদিনকে কিছু বলাটা ঠিক মনে করছে না সে।
তখনই আবরার তাদের পাশে গিয়ে দাড়ায়। বাকিরা আয়রিনকে বিদায় দিয়ে সবাই বাড়ির দিকে হাটা ধরলো। আবার কেও গেটের কাছে দাড়িয়ে এখনো তাকিয়ে আছে।
আবরারের সামনে ফারদিন সম্পূর্ণই স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি তার। আবরারের কাধে হাত রেখে বললো,
– আচ্ছা দোস্ত, ফারহাকে নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি বাড়ির দিকে। বুঝিসই তো বাবা মা তাকে নিয়ে কেমন টেনশন করবে।
আবরারের মনটা আজ খুবই বিষণ্ন। এক মাত্র বোনটাকেও বিদায় দিয়ে দিয়েছে আজ। বাসাটা ও কেমন ফাকা ফাকা লাগবে আজ থেকে। এসব চিন্তা ভাবনা তার মনকে আরো বিষণ্ন করে তুলছে। আবরারের দিকে চেয়ে বললো,
– এখনই চলে যাবি? আজকে থেকে যা, মনটা খুবই বিষণ্ন আমার। তোর সাথে থাকলেও মনটা কিছুটা ভালো হবে আমার। তাচারা ফারহাও তো আয়রিনের মতো আমার বোনই। তোরা থাকলে মনকে কিছুটা হলেও শান্তনা দিতে পারবো।
আবরার আর ফারদিন সেই ছোট বেলার বন্ধু। কখনো কারো কথা কেউ ফেলে দিতে পারে না। কিন্তু আজ এখানে একটুও মন টিকছে না ফারদিনের। অস্থির লাগছে খুব তাকে। একটা শ্বাস নিয়ে আবরারকে বললো,
– নারে দোস্ত, বাবা মা খুব টেনশন করবে। আর গতকালকেও ফারহাকে এখানে রেখে যাওয়ার জন্য খুব কষ্ট করে বুঝাতে হয়েছে তাদের। যানিসই তো, আমার একটাই বোন। বাবা মা কখনো তাদের একমাত্র মেয়েকে চোখের আড়াল করতে চায় না। কলেজে গেলেও তারা অস্তির হয়ে থাকে মেয়ের জন্য। চোখের আড়াল হলেই যেন ফারহাকে খুজতে থাকে তারা। বুঝিসই তো বাবা মায়ের মন।
আবরার একটু হাসির রেখা টানার চেষ্টা করে বললো,
– আচ্ছা তাহলে ফারহাকে পৌছে দিয়ে তুই আবার এখানে আসিস।
– হুম, আমি সন্ধার আগেই তোর কাছে আসছি।
আবরার একটু হেসে বললো,
– আচ্ছা।
ফারহা কে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ফারদিন। ফারহা এতো কথা বললেও ফারদিন নিশ্চুপ।
বাসায় এসে জামা চেঞ্জ করে খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে রইলো ফারহা। হিসেব মেলানোর চেষ্টা করছে। প্রথমতো সাদাফের সাথে প্রায় এক বছর পর দেখা। তাও কি বিশ্রি ভাবে। ভাবতেই ‘ছি’ সূচক শব্দ মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে।
দ্বিতিয়ত ফারদিন ভাইয়া কখনো এমন আচরণ করে না। আর ফারদিনকে ছোট থেকে তেমন একটা কাঁদতে দেখেনি ফারহা। কিছু কারণ তো নিশ্চই আছে। যা ভাইয়া বার বার আড়াল করতে চাইছে।
আর শেষে হবো কালকে আবরারের সাথে ঘটে যাওয়া মুহুর্ত গুলো। রুমে ঢুকায় আবরারের করা বকাবকির মাঝেও একটা মায়াময়ি দৃষ্টি দেখেছে সে। কিছুক্ষন পর আবার সব রাগ হাওয়া হয়ে গেলো। তাকে মেহেদী লাগিয়ে দেওয়া মুহুর্ত টা। সকালে ছাদে দুজন একা কথা বলা। সময় গুলো বার বার চোখের সামনে ভেষে উঠছে তার।
সন্ধার সময় মায়ের ডাকে উঠে রুম থেকে বের হয় ফারহা। মায়ের কাছে যেতেই মা বললো, চার কাপ চা বানাতে। প্রতিবেশি চাচি এসেছে।
ফারহা চুপচাপ রান্নাঘরে গিয়ে চা বসালো।
ওদিকে তাদের মাঝে জমিয়ে আলোচনা চলছে। ফারহা বার বার বিয়ের কিছু টপিক শুনতে পারছে আলোচনার মাঝখানে।
বাড়িতে কোনো বিয়ের টপিক উঠলেই বুকটা ধুক ধুক করতে তাকে তার। না জানি কোন দিন তার বিয়ে নিয়ে পরে সবাই। আজও একটু একটু ভয়ে বুকটা টিপ টিপ করছে তার।
চা হাতে তাদের সামনে এগিয়ে গেলো ফারহা। চা রেখে মায়ের এক পাশে গিয়ে দাড়ায় সে।
চাচি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
– আজ কালকার মেয়ে গুলো বড় হওয়ার পর তাদের বিয়ে না দিলে এমন কান্ড করে বসে। মেয়ে উপযুক্ত হয়েছে, তাহলে তাদের বাসায় রাখবে কেন? পরে বাবা মাকে নিজে থেকে কিছু বলতে পারে না, কোনো ছেলের হাত ধরে ভেগে গিয়ে বংশের মুখে চুন কালি মাখে।
এর মাঝে মা বললো,
– তো পরে মেয়েটাকে পেয়েছে কোথায়?
চাচি আমারও চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
– আরে খুজতে খুজতে পরে ঐ ছেলেটার সাথে একটা হোটেলে হাতেনাতে ধরেছে।
চাচির কথা থামিয়ে ফারহার মা তাকে বলে,
– তুই চলে যা ফারহা। বড়দের কথার মাঝে থাকতে নেই।
মায়ের কথায় চুপচাপ সেখান থেকে চলে যাচ্ছে ফারহা। প্রতিবেশি নামক এই মহিলাটাকে দেখলেই মেজাজ খারাপ হয় তার। এই মহিলার কাজই হলো, এর কথা গিয়ে তাকে বলা ওর কথা এসে অন্যকে বলা। এখানেও এসেছে নিশ্চই তানিয়া নামক মেয়েটার কথা সবাইকে বলতে।
এর মাঝে ফারহা কে নিয়ে টপিক উঠলেই থমকে যায় সে। তবুও চুপচাপ দরজার আড়ালে গিয়ে শুনতে চেষ্টা করে ওই মহিলা বাবা মাকে কি কান পরা দিচ্ছে।
– বিষয় টা বুঝবেন ভাবি, ফারহা এখন বড় হয়েছে বিয়েরও সময় ঘনিয়ে এসেছে তার। এই বয়সে মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। বিয়ে না দিলে পরে দেখবেন সেও অন্য কারো সাথে চলে যাচ্ছে।
এর মাঝে বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– এতোক্ষন অন্যের গিবত গািছেন, কিছু বলিনি। কিন্তু শেষে আমার মেয়েকে নিয়ে যে বাড়তি দুই তিন লাইন এড করলেন, এগুলো আর কখনো বলার চেষ্টা করবেন না। বিশেষ করে আমার সামনে কখনো বলবেন না।
চাচি নির্লজ্জের মতো আবার বললো,
– আরে ভাইজান তানিয়ার মা ও এই কাথাই বলেছিলো, এখন ঠিকই তো মেয়ে এমন কান্ড করেই বসেছে।
বাবা আবার বললো,
– আমাদের মেয়ের প্রতি আমাদের পুরো বিশ্বাস আছে। আমাদের মেয়ে কখনো আমাদের কথার বাইরে যায় নি, আর কখনো যাবেও না।
এর মাঝে মা পোড়ন কেঁটে বলে,
– আর ফারহা কখনো এমন কাজ করলে তাকে মেয়ে হিসেবে স্বীকারই করবো না আমরা। তেজ্জ মেয়ে করে দিবো তবুও কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবো না।
একটা কথায় যেন ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠে ফারহা’র। মায়ের কথায় বুকটা ধুক ধুক করলেও বাবার কথা শুনে ভালো লাগছে যে, তার প্রতি তাদের কতো বিশ্বাস।
,
,
সারা বাড়িতে কোলাহ পূর্ণ পরিবেশ। আসার সময় সারা রাস্তা কেঁদেছিলো আয়রিন। আয়রিন অনেকের কাছেই শুনেছে, বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি যাওয়ার সময় মেয়েটা কাঁন্না করলে তাদের হাসবেন্ট অনেক ভাবে বুঝানোর ট্রাই করে তাদের। কতো বাবে কথা বলে তাদের স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। কিন্তু আয়রিনের হাসবেন্ট মাহিন তার দিকে একবারের জন্য ফিরেও তাকায় নি। পুরোটা সময় আয়রিনের থেকে দুরে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
এখন রাত হয়েছে অনেক। সারা ঘর জু্রে কোলাহল, বাট এখানে আসার পর মাহিনকে এক মুহুর্তের জন্যও চোখে পরছে না তার।একানে প্রায় সবাই অচেনা। মাহিনকে একটু চিনে তাও বিয়ে হয়েছে নিজের স্বামী এটা ভেবে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর তেমন কথা বলার সুজুগ পায়নি তার সাথে। ফ্যামিলি গত ভাবে ঠিক হয়ে হুটহাট হয়ে গেছে সব। আয়রিন প্রথমে কাঁন্না করলেও মাহিনের ছবি দেখার পর সেও রাজি হয়ে যায়।
আয়রিনকে একটা সাজানো ঘরে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো সবাই। একা একা বসে আছে সে। বার বার মাথা তুলে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখছে মাহিন আসছে কি না। কিন্তু প্রায় ঘন্টা খানেক হতে চললো, একনো মাহিনের খবর নেই। ভয়ে বুক ধুকধুক করছে আয়রিনের। তার সামনে কি বলবে সে? কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। তবুও অপেক্ষা করে যাচ্ছে চুপচাপ।
,
,
ওদিকে বেলকনিতে ফ্লোরে বসে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চুপচাপ আকাশের দিকে চেয়ে আছে ফারদিন। হাতে আয়রিনের একটা ছবি। চক্ষু যুগল রক্তিম আভা ধারণ করে আছে তার।
গত কাল রাতের ও দিনের বেলায় ভাইয়ার অদ্বুত আচরণ টা নিয়ে টেনশন কমছে না ফারহা’র। তাই বিসয়টা জানতে ভাইয়ের রুমের দিকে আগাতে তাকে সে।
রুমে এসে ফারদিনকে না দেখে বেলকনিতে আসে সে। দেখে ফারদিন হাতে কাগজ আকৃতির কিছু নিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। ফারহা এগিয়ে গিয়ে তার কাছে বসলো। ছবিটা হাতে নিতেই চমকে উঠলো সে। ফারদিনের দিকে অদ্ভুত চাহুনি দিয়ে বলে,
– কারণ টা তাহলে এটা ছিলো ভাইয়া? তাহলে কেন আগে কাউকে কিছু বলেনি।
ফারদিন এবার কেঁদে উঠে বলে,
– আজ ওর বাসর,, বিয়ে হয়ে গেছে ওর। বন্ধুর বোন দেখে মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে, চাইলেও কিছু করতে পারিনি আমি।
To be continue,,,,,