#তোমার_ছায়া (পর্ব ১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
– পর-পুরুষের রুমে এসে শাড়ি চেঞ্জ করতে তোমার একটুও বিবেকে বাধলো না? নাকি সব নিজে থেকেই প্লেন করে করছো?
হটাৎ রুমে কারো আগমন ঘটায় আর তারপর এমন কথায় থতমত খেয়ে যায় ফারহা। মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা তার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। ভয়ে ও লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে ফারহা।
আজ প্রথম শাড়ি পরে বান্ধবির বিয়েতে এসেছে ফারহা। আজ গায়ে হলুদ, বাকি সব বান্ধবিরাও হলুদ রঙের শাড়ি পরে এসেছে। তাই বাধ্য ফাহাকেও পরতে হয়েছে শাড়ি।
কিন্তু এখানে আসার পর দৌড়ে আসা একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যায় সে। ছেলেটা পেছনে না তাকিয়ে সোজা চলে গেলো। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে দারালো ফারহা। দেখে সুন্দর করে পরে আসা শাড়িটি ও এলোমেলো হয়ে গেছে।
ছেলেটাকে মনে মনে গালি দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো সে। দেখে বাকি বান্ধবি গুলো আয়রিনকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। তার দিকে তাকানোরও সময় নেই তাদের।
তখনই আয়রিনের মা লতা রহমান। তার কাছে এগিয়ে এসে সমস্যার কথা জানতে চাইলে ফারহা খুলে বলে সব। এক হাতে শাড়িটা ধরে আন্টির সাথে হাটা দরলো সে। যাই হোক আগে শাড়িটা গুছিয়ে নিতে হবে।
বিয়ে বাড়ি, প্রায় সারা বাড়ি জুড়েই মানুষের ছড়াছরি। তার মাঝে একটা রুম ফাকা। আর তা হলো আবরার ভাইয়ের। আয়রিনের বড় ভাই।তার রুমে কাউকে ঢুকতে দেয়না সে। নিজেই রুম পরিপাটি করে রাখে। এরপর কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেই সুবাদে আজও রুম ফাকা পরে আছে।
তাই লতা রহমান তাকে আবরারের রুমে ঢুকিয়ে বললো,
– আবরার এখন বাইরে আছে, ও আসার আগেই চেন্জ করে নাও। ওর রুমে কেউ এসেছে তা দেখলে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে বসবে সে।
নিরুপায় দৃষ্টিতে সাত-পাঁচ না ভেবে রুমে ঢুকে শাড়ি ঠিক করতে লাগলো ফারহা। যেহেতু এই রুমে কারো আসা নিষেধ তাহলে একেবারে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে সে।
সব শেষে একটু ঝুকে শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করছিলো তখনই আবরার রুমে আসে। আর এসব কান্ড দেখে এতো কথা শুনিয়ে নিলো ফারহাকে।
চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে ফারহা। আবরারের ভয়ে হাত কাচুমাচু করছে বার বার। মানুষটাকে ভয় পাওয়ার কিছু কারণ আছে। তার চোখে সবচেয়ে রাগি মানুষের নাম হলো আবরার আহমেদ।
তাছারা তার আরেকটা পরিচয় হলো, ফারহা দের কলেজে নতুন জয়েন করেছে। জন্মের পর মনে হয় তাকে মধুর বদলে লবন খাওয়ানো হয়েছে। তাই তার আচরণও নোনতা টাইপের।
কলেজে যখন প্রথম প্রথম জয়েন করে তখন কথায় কথায় একদিন ফারহা তার বান্ধবিদের বলে ফেলেছিলো তার আবরার স্যারকে ভালো লাগে। সেটাকে বাকি বান্ধবিরা টানাটানি করতে করতে আবরারের কান অব্দি চলে গেলো। সেদিন কলেজ ছুটির পর কোচিংএ সারা ক্লাস কান ধরে দাড় করিয়ে রেখেছিলো তাকে।
এই মুহুর্তে ফারহা’র দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে আবরার। ফারহা’র নিরবতা দেখে সে আবারও রাগি গলায় বললো,
– এখন মুখে তালা পরে গেছে নাকি? এমন ভাব ধরলে মনে হচ্ছে কিছুই জানো না। মানে আমাকে আকৃষ্ট করতে আর কতো নিচে নামবে তুমি?
ফারহা এবার নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বললোয়,
– আমি এসব কখনোই ভাবিনি। আমি যাস্ট বিপদে পরে আপনার রুমে এসেছি। আপনি যেমনটা ভাবছেন, মোটেও আমার এমন কোনো উদ্দেশ্য নেই। বিশ্বাস না হলে আপনি আন্টিকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
ফারহার কথায় আবরার আরেকটু রাগি স্বরে বললো,
– স্টপ, নাটক বন্ধ করো তোমার।
তখনই রুমে আসে লতা রহমান। আবরারের দিকে চেয়ে বললো,
– কি হয়েছে, তুই শুধু শুধু মেয়েটাকে এতো ধমকাচ্ছিস কেন?
– ও কি করেছে তুমি যানো? কতো বড় সাহস এই মেয়ের। আমার রুমে এসে,,,,,
ছেলেকে থামিয়ে দিয়ে লতা রহমান বললো,
– জানি আমি, সে এমনি এমনি তোর রুমে আসেনি। বাইরে কার সাথে যেন ধাক্কা লেগে পরে গিয়ে সব এলোমেলো করে ফেলেছিলো। তারপর আমাকে বললে আমি এখানে নিয়ে আসি। সারা বাড়িতে এখন মেহমান। এক মাত্র তোর রুমটাই ফাকা ছিলো। তাই তাকে বললাম তারাতারি ঠিক করে বেরিয়ে আসতে। তো এখানে দোষের কি আছে? মেয়েটা বিপদে পরেছে তাই বাধ্য হয়ে এই রুমে নিয়ে আসলাম আমি।
আবরার আর কিছু না বলে ফারহার দিকে মাথা তুলে তাকালো। কিছু না বলে চুপচাপ নিচের দিকে চেয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো ফারহা। কি ভাবে সে নিজেকে?
মুখ গোমড়া করে চুপচাপ আয়রিনের কাছে গিয়ে বসে বলে,
– থাকবো না আমি তোর বিয়েতে। এক্ষুনি চলে যাচ্ছি। বান্ধবির বিয়েতে এসেছি, কারো অপমান সহ্য করতে আসিনি আমি।
আয়রিন তার দিকে চেয়ে বললো,
– তোর আবার কি হলো, কে অপমান করেছে তোকে?
ফারহা একবার বান্ধবিদের দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। কারণ আবরার স্যারের কথা বললে, নির্ঘাত তাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করবে সবাই। তবুও হাত কাচুমাচু করে বললো,
– কে আর, তোর সেই গুনধর ভাই। একটু বিপদে পরে তার রুমে ঢুকেছি, এতে কি এমন মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে গেলো?
ফারহার কথায় মুখ চেপে হেসে উঠে আয়রিন। যেন এক মোহা জোক্স শুনেছে সে। তারপর হাসি থামিয়ে বললো,
– তুই ঘুরে ফিরে ভাইয়ার উঠানে কেন আছাড় খাস? আর তুই জানিস না, ভাইয়ার রুমে আমরা ব্যাতিত ঘরের বাইরের কোনো প্রবেশ নিষেধ?
ফারহা একটু রেগে বললো,
– আমি কি জানতাম নাকি, বাড়িতেও তোর ভাই এতো রুল্স নিয়ে চলে?
আয়রিন আবারও হেসে বললো,
– ভাইয়ার অনেক রুল্স আছে। ওগুলো না জানলে কি হবে, ভাবি জি? নাহলে তো পরে দেখা যাবে সারা জীবন ভাইয়ার হাতে মার খেতে হবে।
আয়রিনের কথায় হো হো করে হেসে উঠে সবাই। যাতে রাগটা আরো বেড়ে গেলো ফারহার। আয়রিনের দিকে চেয়ে বললো,
– কানের তিন ইঞ্চি নিচ বরারব একট কষিয়ে খেলে তখন মজা নেওয়া বের হয়ে যাবে তোর। আর ভাবি ডাকস কাকে? আমি কি তোর ভাইকে বিয়ে করার জন্য বসে আছি নাকি?
ফারহার কথায় আবারও হেসে উঠে সবাই।
—————-
ফোন হতে এক পাশে চলে গেলো ফারহা। বাসা থেকে মা ফোন করেছে। আজ বাসায় ফিরবে কিনা তা জিজ্ঞেস করতে। যেহেতু আজ গায়ে হলুদ, কাল বিয়ে। তাই বান্ধবিরা সবাই এক সাথেই থাকবে। তাই আজ আর যাওয়া হবে না।
তবে ভাইয়া হয়তো যেতে পারে।
ফোন রেখে আসার সময় হটাৎ চোখে পরলো একটা ছেলে আর একটা মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে গভির ভাবে চুম্বন করছে। যখন খেয়াল করলো ছেলেটা আর কেও না, তারই ভালোবাসার মানুষ সাদাফ। মুহুর্তেই বুকটা কেঁপে উঠে তার। জেগে উঠে এক তীব্র কষ্ট।
সাদাফের সাথে দুই বছরের সম্পর্ক থাকার পর যখন বছর খানেক আগে ব্রেকআপ হয়েছিলো তখন খুবই আবেগ প্রবন ছিলো ফারহা। কতো রাত জেগে কেঁদেছিলো তার কোনো হিসেব নেই।
ওই দিনের কথা মনে পরতেই বুকটা এখনো শুন্য মনে হয় তার।
সবই ঠিকটাক ছিলো। বাট একদিন সাদাফ তাকে বললো, তার সাথে রুম ডেট এ যেতে হবে। কিন্তু তা সরাসরি না বলে দেয় ফারহা। সে বিয়ের আগে এই ধরনের কোনো সম্পর্কে জরাবে না। আর ওই দিনই সাদাফ একটা কথা বললো, হয়তো তার কথা মেয়ে নিবে, নয়তো ব্রেকআপ।
ফারকা কয়েকদিন কান্নাকাটি করে সাদাফকে অনেক ভাবে বুঝানোর ট্রাই করছিলো। কিন্তু সাদাফের একটাই কথা, হয়তো রুম ডেট, নয়তো ব্রেকআপ।
পরে অনেক কষ্টে নিজেকে শক্ত করলো ফারহা। সাদাফের দেওয়া দুইটা অপশন থেকে ব্রেকআপ টাই বেছে নিলো সে। সরে গেলো সাদাফের জীবন থেকে।
কিন্তু আজ এক বছর পর হটাৎ সাদাফকে দেখে তাও আবার এই অবস্থায়। সে নিজেও জানেনা প্রাক্তনের জন্য তার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে। সে তো একটা ফ্রট, তার জন্য কষ্ট হবে কেন?
চোখে জল অনুভব করতেই ওয়াশ রুমে গিয়ে পানি ছিটিয়ে নেয় ফারহা। মুখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে বেরিয়ে আসে।
তখনই সাথি এসে তাকে ডেকে নিয়ে গেলো আয়রিনকে মেহেদী পরাতে হবে। কারণ ফারহা খুব ভালো মেহেদী পরাতে পারে।
আয়রিনের হাতে খুব যত্ন করে মেহেদী পরিয়ে দিলো সে। তখনই পাশে এসে দাড়ায় আবরার। আয়রিনের মেহেদী পরা হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। আয়রিন একটু হেসে বললো,
– দাড়িয়ে আছো কেন ভাইয়া? আমার পাশে বসো।
আয়রিনের পাশে বসে আবরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– খুব সুন্দর লাগছে আমার পুচকি বোনটাকে।
আয়রিনের হাতে মেহেদী পরানো শেষ হলে, ফারহার দিকে চেয়ে আয়রিন বলে,
– নে এবার ভাইয়াকেও আমার মতো করে সেম ডিজাইনে মেহেদী এঁকে দে।
আবরার একটু ভ্রু-কুচকে বললো,
– আমি কেন মেহেদী লাগাতে যাবো? বিয়ে টা তোর, আমার না।
আয়রিন একটু ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
– ছোট বেলা থেকে যা করেছি দুজন একসাথে করেছি না? তুমি যা করতে আমিও তাই করতাম, তুমি যা খেতে আমিও তাই খেতাম। এখন আমি মেহেদী লাগিয়েছি তোমাকেও লাগাতে হবে।
আবরার আরেকটু ভ্রু-কুচকে বললো,
– সবই যদি ভাগ করিস, তাহলে বিয়েটা একা করে নিচ্ছিস কেন?
আশে পাশের বান্ধবি গুলো হেসে উঠে আবরারের কথায়। আবরার একটু লজ্জা পেলো। বোনের সাথে দুষ্টুমি করতে গিয়ে নিজের বিয়ের কথাও মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেলো। আশে পাশের হাস্যকর পরিবেশ দেখে রাগি দৃষ্টিতে তাকায় আবরার। মেয়েগুলো চুপ হয়ে যায়। কথা ঘুরাতে আবরার বললো,
– আচ্ছা ঠিক আছে বোনের ইচ্ছে পুরনে আমিও মেহেদী লাগাতে রাজি।
বলেই হাতটা একটু সামনে বাড়িয়ে দেয় আবরার।
মনে মনে আয়রিনের গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলছে ফারহা। একটু আগে এতো কথা শুনে এই লোকটার হাতে মেহেদী পরানোর বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই তার। আর এমনিতেই লোকটাকে দেখলে ভয়ে বুকটা ধুকধুক করে। আর ওই আয়রিন শাক*চুন্নি কতো সুন্দর বুঝিয়ে বসিয়ে দিলো মেহেদী পরাতে। এতো ঠেকা পরছে নাকি আমার?
To be continue……