তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_১১
লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)
মায়াবিনী আমার ভালোবাসা। মেয়েটা আমাকে অন্ধ বিশ্বাস করে। কি শখ ছিল তার আমার বউ সাজার। বাইক চালিয়ে সেই ব্রিজটাতে এসেছি যেখানে আমাদের প্রথম চুমু আঁকা হয়েছিল।দাঁড়িয়ে ভেবে চলেছি পুরোনো মায়াবিনীকে…..
সংঘের কাজে ওইবার আমাদের সিলেট যাওয়া হয়।মায়াবিনীও সদস্য এখন।শশী ওর বাসায় যেয়ে ওর ভাইয়াকে রাজি করিয়ে নিয়ে এসেছে।রাত ৮ টায় বাস। আমি মায়াবিনী পাশাপাশি বসেছি। শশী শিমুল একসাথে আমাদেরই বিপরীতে। দিহান নীলা একসাথে বসেছে শশীদের পিছনে। দিপু নিলয় সহ আরও নয়জন আমরা সিলেট যাচ্ছি।
শশী নীলা আর মায়াবিনী মেয়ে। তাই ওরা একসাথে থাকবে একরুমে। শশীকে আগেই বলে দিয়েছি নীলা যেন মায়াবিনীকে উল্টা পাল্টা কিছু না বলে। যদি বলার কোনো সুযোগ পায় তবে শশীর খবর আছে। আপাতত ওয়ার্নিং দিয়েছি।
জানালার পাশে মায়াবিনী বসেছে। ওর চুলগুলো বেসামাল উড়ে আমার মুখে পড়ছে।ওর চুলের সুগন্ধে আমি মাতোয়ারা। জোরে জোরে শ্বাস টানছি। বুকের মাঝে জমিয়ে রাখছি।
-অনেক রাত হয়েছে মায়াবিনী। জানালা বন্ধ করতে দাও। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। তুমিও ঘুমাও।
-নাহ বাতাস খাবো।(মুখ ফুলিয়ে)
-আমাকে খাও?।
-চুপ করো। খালি আজেবাজে কথা নিলজ্জ?।
একটু হেসে জানালাটা লাগিয়ে দিলাম।ওকে টেনে সীট নামিয়ে ভালো মতো শুইয়ে দিলাম। পৌঁছাতে সকাল হবে।ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে ওকে ঢেকে দিলাম। আমিও সীট নামিয়ে ওর পাশে শুয়ে পরলাম। ব্ল্যাঙ্কেট টা আগিয়ে ও আমাকে জড়িয়ে দিল। কাঁধে মাথা এলিয়ে দিল ও।ঘুমিয়ে গেলাম একসাথে।
ভোর হতেই ঘুম ভেঙে গেল। আমার বাহুর বেস্টনে মায়াবিনী আবদ্ধ। আমার ডান হাত ওর ডান বাহু চেপে ধরে রেখেছিলাম।ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে এমন মুড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে শুয়েছে। দিহান দিপুরা উঠে অলরেডি টোন মারছে।শশী ওদের ধমকাচ্ছে।কখন রেগে যাই বলা তো যায় না। কিন্তু আমিও জানি মায়াবিনীর সামনে আমিও রাগ দেখাই না।
মায়াবিনীকে ডেকে তুলে দিলাম নামার সময় হয়েছে বলে। নেমে কি উচ্ছাস ওর! ভোরের সিলেট দেখতে খুব সুন্দর। তার উপর কি মিষ্টি বাতাস।
সবাই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। হোটেলে উঠে সবাই সবার রুমে চলে গেল। আমি আর শিমুল এক রুমে উঠেছি।আজকে সারাদিন কালকে সারাদিন থেকে কালরাতে বাসে উঠবো।কালকে দিনে সংঘের কাজ। আজকের দিনে শুধু ঘুরার জন্য ফিক্সড। সবাই চা বাগান ঘুরে রাত ওইখানেই থাকবো প্ল্যান। ভুত আছে কিনা সেটার পরীক্ষা করবে সব।
মায়াবিনী রাতে এখানে কিছুতেই থাকবেনা। শেষে বাধ্য হয়ে আমি আর মায়াবিনী চলে এলাম হোটেলে।সারাদিনের খুব টায়ার্ডনেস ঘিরে ধরেছে আমাদের। দুজন দুজনার রুমে যেয়ে গোছল করে নিলাম।
রাতের খাবার অর্ডার করে নিচে থেকে এনে মায়াবিনীর দরজায় নক করলাম।নকের সাথে সাথে দরজা যেন খুলে গেল। যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল।ঢুকা মাত্র মায়াবিনী আমায় ঝাপটে ধরলো।কেঁদে শেষ মেয়েটা। ঘাবড়ে গেলাম একপ্রকার।
-কি হয়েছে মায়াবিনী? কাঁদছ কেন? কে বকেছে? কে কি বলেছে? বলো!
-ততুমি ককোথায় ছছিলে?(কেঁদে হেঁচকি তুলে ফেলছে)
-খাবার আনতে। তুমি ভয় পেয়েছিলে?
-হুঁ
মায়াবিনী আমার গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আমি একহাত ওর মাথা বুলিয়ে দিচ্ছি অন্যহাত ওর পিঠে রেখেছি। বুঝলাম ভুতের কাহিনি শুনে ভয় পেয়েছে। ওকে শান্ত করে বিছানায় বসিয়ে দিলাম।
-পাগলি মেয়ে। ভুত বলতে কিছু আছে? মিথ্যে ভয় পেয়েছো কেন? আমি কি তোমাকে রেখে কোথাও যাব?
ওর কান্না থেমে গেছে। এখন তো আমার হাসির শেষ নেই। হেসেই যাচ্ছি। মেয়েটা লুচির মতো ফুলেই চলেছে। বুঝেছে বোকামির ফলাফল। রাগ করে বলল
-হাসো হাসো।
– আচ্ছা আর হাসবো না।চলো খেয়ে নেই।
না সে কিছুতেই খাবে না।
তারপর ওকে খাইয়ে দিলাম জোর করে। নিজেও খেয়ে নিলাম। কান্নার ফলের মেয়েটার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। গাল দুটো লাল আভায় ভরে আছে।তীক্ষ্ণ নাকের মাথায় লাল হয়ে রক্ত জমে আছে। গোলাপি ফোলা ঠোঁট আরও লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। মায়াবী মুখটা আজ মায়াবী না মোহনীয় লাগছে।চোখ লাল হয়ে উঠায় আমার নেশা জমে গেছে। বিছানায় পাশাপাশি বসে আছি আমরা।একজন অন্যজনের চোখে ডুবে।
এই মেয়েটাকে আমি বড়ই ভালোবাসি। মেয়েটাকে দেখে যে আমি কেন নেশায় মত্ত হয়ে যাই। মেয়েটাকে দেখা মাত্রই আমার ভেতরে আদিম মানুষ জেগে ওঠে। আমি জানি আমি মায়াবিনী প্রেমে মাতাল। আমি আরও মাতাল হতে চাই। ডুবে যেতে চাই মায়াবিনী এর মাঝে। কোনো কথা না ভেবে আমি মায়াবিনীর ফোলা ফোলা ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম।
হালকা প্রেম স্পর্শমাত্র। মুখ উঠিয়ে মায়াবিনীকে দেখতে লাগলাম। কি মিষ্টি মুখখানা লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে। মায়াবিনী চোখে সর্বনাশ দেখছি বুঝি।কোনো কথা ভাবতে ইচ্ছা করলো না আর। আমি জানি আমি এখন এ মায়াবী মেয়ের প্রেমে মাতাল।
মায়াবিনীকে ছাড়া আমার বাঁচা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।
গালে ঠোঁটে কত জায়গায় যে ভালোবাসা ভরিয়ে দিলাম, তা বলাবাহুল্য নয়। কি দরকার অন্যকিছু ভাবা। চুম্বন কখন গভীর হয়ে গিয়েছে আর খেয়াল ছিল না। মাঝে মায়াবিনী বুঝি আমার ভর আর সহ্য করতে পারলো না। হেলতে হেলতে বিছানায় শুয়ে পড়ল। আমি মায়াবিনীর উপরে শুয়ে পড়লাম। আস্তে আস্তে গলা ঘাড় বেয়ে প্রেম গভীর থেকে গভীর হতে থাকলো। কতক্ষণ আর এরকম বেখেয়ালি ছিলাম আমাদের কোনো ধারনা ছিল না।
হঠাৎ যখন আমার নিজের খেয়াল ফেরত আসলো আমিও উঠে বসে পড়লাম। মায়াবিনীকেও তুলে বসিয়ে দিলাম। ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কেন সে আমার বারণ করেনি অকে ছুঁতে? কেন মেয়েটা এমন অবাধ্য হয় না আমার? খুব রাগ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল মায়াবিনীকে খুব ইচ্ছা মত বকে দিতে। না আর কিছু ভাবতে পারছি না।আমি মায়াবিনীর দিকে তাকিয়ে দেখলাম অগোছালো হয়ে গেছে। চুল এলোমেলো। ওড়না দিয়ে ঢেকে ওকে জড়িয়ে দিলাম।মেয়েটার চোখ এখনো লাল তবে জানি এখন আর কান্নার পরে লাল নয় এখন অন্যকিছুর জন্য।
মায়াবিনীকে বললাম
-এই মেয়ে তোমার বিবেক বুদ্ধি বলতে কিছু নেই আমি যা বলি তুমি তাই কেন মেনে নাও? আমি যা করি আবদার তা অন্যায় হলেও কেন তুমি মেনে নাও? তুমি কেন প্রতিবাদ করতে পারো না? বোকা মেয়ে।
ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।তারপর বলল,
-আমি কি করবো বলো তোমায় ভালবাসলে দোষ, তোমায় ভালবাসতে দিলে দোষ। আমি কোন দিকে যাব একবার আমায় বলে দাও।(চোখ নামিয়ে নিলো)
-কোন কিছুই ভুল নয়। ভালোবাসা কোন ভুল নয়। আমি তোমাকে চাই। খুব করে চাই। কিন্তু এখন চাইনা। আমি চাই পবিত্র করে, তোমাকে নিজের ঘরের বউ করে নিয়ে যেতে। এভাবে আমি তোমাকে নিজের কাছে পেতে চাই না মায়াবিনী। আমি সারা জীবনের জন্য তোমাকে চাই নিজের করে।
মায়াবিনী আমার দিকে তাকালো।
-আমি কথা দিচ্ছি এই আমার শেষ বার ভুল এরপর আমি কোনো ভুল করবোনা।
মায়াবিনীর চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি।
কপালে চুম্বন একে দিলাম দুই গাল চেপে ধরে।
আজ রাত আমাদের দুজনকে একই রুমে ঘুমাতে হবে। আমি মায়াবিনীকে শুইয়ে ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে ঢেকে দিলাম। মেয়েটা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেল।আমি ওর পাশে বসে ঘুমিয়ে গেলাম ওকে দেখতে দেখতে।
জানতাম আজকে আমার দ্বারা ভুল হবে না এক ঘরে থাকলেও। মেয়েটা যে আমায় বড্ড বিশ্বাস করে। অন্ধবিশ্বাস! আমি ওর বিশ্বাসের মূল্য অবশ্যই দিব।
পরদিন কাজ সেরে নিজ শহরে ফিরে এলাম।
কয়েকদিন যেতে না যেতে মায়াবিনী এক বিকালে বলে বসল সে বউ হবে!
-এ্যাঁ?
-হ্যা।বউ হবো তোমার?।
-অবশ্যই তুমি আমার বউ হবে।
-সে তো আরো অনেক দেরি।আরো দুবছর সময় লাগবে আমার বিএসসি কমপ্লিট করতে। আর তুমিও বলো শূন্য পকেট এ তুমি বিয়ে করতে পারবে না। তাহলে তো সে আরো দুটো বছর অপেক্ষা করতে হবে। আমি এতদিন অপেক্ষা করতে পারব না। আমার এখনই বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে আমি এখনই বিয়ে করব। তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে চাও এখনই বিয়ে করো। নয় তো আমি বিয়ে করতে রাজি হব না পরে।(বলেই মুখ ফুলিয়ে রাখলো)
-এখন বিয়ে করবো কিভাবে এখন না তোমার বাবা রাজি হবে। না আমার বাবা রাজি হবে। কি করে বিয়ে করবো?
-বলতো কি এখন আমি বাসায় বলতে বলেছি? তুই বিয়ে করবি আমাকে এখনই এই মুহূর্তে।চল কাজী অফিসে আমাকে বিয়ে করে নিবি।(রাগে ফুঁসছে)
ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হা করে থাকা ছাড়া আমরা আর কোন কাজ ছিল না। একবার চাপ খেয়ে গিয়েছিলাম। এসব কি বলছে ছোট্ট মেয়েটা।
কয়েকদিন ধরে রোজ একই কথা বলে যাচ্ছে আমি ওর কথা কোন প্রকার উত্তর দিচ্ছি না।
উল্টা দিকে এখন শশী শিমুল মায়াবিনীর পক্ষে। আমাকে বলছে আরে বিয়ে করে ফেল বিয়ে করে ফেল। শিমুল আমার মাথার মধ্যে উৎসসহ দুষ্টবুদ্ধি শয়তানী বুদ্ধি ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আর এদিকে শশী আমাকে বোঝাতে ব্যস্ত থাকে এই জীবনে কখনো আমায় সিরিয়াস হতে দেখিনি কোন মেয়ের জন্য। মেয়ে মানুষের দিকে দ্বিতীয় ঘুরে দেখতে দেখে নাই। হয়েছে ছাড়িস না মেয়েটা বিয়ে বিয়ে করছে তুই বিয়েটা করে ফেল। আরো দায়িত্ববান হয়ে যাবি। আরো সিরিয়াস হয়ে যাবি। তোদের মধ্যে কোন প্রকার বাধা থাকবে না।নীলা আরো কত রকম বুদ্ধিতে ছিল তাও আর কোন প্রকার হবে না। মেয়েটা বুঝি এখন ইনসিকিওর ফিল করছে। তুই বরং এখন বিয়েটা করে ফেল মায়াবিনী নিশ্চিন্তে থাকবে দুজন নিশ্চিন্তে থাকবি। তোদের মাথায় আর কোন প্রকার বাধা থাকবে না।
কি করে বোঝাই আমি যে বিয়ে টা করতে চাচ্ছি না অন্য একটা কারণে। এমনি ওর থেকে দূরে থাকা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে যায়। এখন যদি আমি বিয়ে করে ফেলি ওর থেকে কখনোই দূরে থাকতে পারবো না। প্রেমিকা থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায় তাই বলে নিজের বিয়ে করা বউ থেকে দূরে থাকা আমার দ্বারা সম্ভব নয় তাও যাকে এতো এতো চাই।
শেষ পর্যন্ত মায়াবিনী আবার জিতে গেল। জিতে গেল ওর জেদ। আমি হার মেনে নিলাম বিয়ে করে নিলাম। এতে অবশ্য আমারই শান্তি।
২৭শে অক্টোবর ভরদুপুরবেলায় বিয়েটা সেরে নিলাম। মায়াবিনীর দুই বান্ধবী আর আমার ৬/৭ জন বন্ধু মিলে আমরা কাজী অফিসে বিয়েটা সেরে নিলাম। কালো রঙের একটা পাঞ্জাবি পড়ে এসেছি। আমার বউটা একটা লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে এসেছে। কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।দুপুরবেলা আমি ওদের সবাইকে খাওয়ালাম। বিয়ে বলে কথা ছোট হোক বড়।
এদিকে সবাই আমাদের বাসর রাত নিয়ে পড়ে আছে। আমি ওদেরকে বলে দিলাম ভাই আমরা একই শহরে থাকি রাতে বেলা মায়াবিনীর বাসা থেকে বের হওয়া ইম্পসিবল। সো এ প্লেন বাদ দে।
এই দিকে দিহান দিপু মিলে লেগপুল করছে। আহারে বেচারা বলে কত আফসোস করছে যেন বিয়েটা ওদেরই হয়েছে।বাসররাত ও ওদেরই হচ্ছে না।শশী তো মায়াবিনীকে পিঞ্চ মারছে আর মুচকি মুচকি হাসছে ওর বান্ধবীরা। বাসর রাত হবে না কি করে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বাসরও হবে। কিন্তু আমার মাথার মধ্যে তখন অন্যরকম প্লেন চলছে। সবাই আলোচনায় মত্ত। তারা ব্যাবস্থা করে দিবে বাসর দিনের।কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা। রাত তো রাতই বাসর রাতেই হবে। সেটা নিয়ে তোদের ভাবার দরকার নেই। আমার আর মায়াবিনীর বাসর রাত আমরা দেখে নেবো তো ভাবতে হবে না। এদিকে কথা বলার সাথে সাথে আমার মায়াবিনীর মুখ লজ্জায় লাল করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। খুব লজ্জা পাচ্ছে।
ওই সারা দিনটা আমাদের হৈ-হুল্লোড় করে গেল সবার সাথে। সন্ধ্যায় আমি বাইকে করে বাসার সামনে মায়াবিনীকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলাম।
———————-
কল্পনা থেকে বাস্তবের ফেরার দেশে ফিরে গেলাম। ব্রিজ থেকে অফিসে যাওয়ার পর মায়াবিনী কাজ করতে দেখলাম।এ মেয়েটা আমার কয়েকদিনের আগের বিয়ে করা স্ত্রী নয়।দুবছর আগে এ মেয়েটাকে আমি বিয়ে করেছি। আমার উপর ওর সবচেয়ে বেশি অধিকার। অথচ আজ ও জিজ্ঞেস করে না, “নিবিড় তুমি কোথায় ছিলে?”
আজকাল অফিস থেকে ফিরে ছাদে গিয়ে বসে থাকতে ভালো লাগে। চাঁদ দেখি। ছাদে একটি বেঞ্চ পাতা আছে সেখানেই আমি বসে থাকি। রাতের এ আধা ঘন্টা সময় নীরব আমার পাশে এসে বসে। কি করবে ছেলেটা? হয়তো বা সারাদিন রুমে থাকে তাই ভাল লাগেনা। এখনো বুঝি আমিই ওর একমাত্র বন্ধু। সে আমার পাশে বসে অনেক রকম কথা বলতে থাকে।গল্প করপ। সেই পুরনো দিনের কথাগুলো। জানি আমার খুব একটা ভালো লাগে না।আবার ভালো লাগে একমাত্র মানুষ তো আছে যে আমার পাশে থাকবে। আমি খুব নিতে চাই না তাই কোনো কথা বলি না। ও একা একা বলতে থাকে। তাই বলে এখন আর আমারও অপছন্দ লাগেনা।
রুমে গিয়ে দেখি নিবিড় ঘুমিয়ে যায়। আমি ওর পাশে শুয়ে অন্য দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে যাই। আমাদের মাঝে কোনো কথা হয় না। ও আমাকে অফিসে প্রতিদিন ড্রপ করে দিয়ে কোথায় যেন চলে যায়। দুই ঘণ্টা পর ফিরে আসে। তারপর একদম সন্ধ্যা বেলা কাজ শেষ হলে দুজনে একসাথে বাসায় চলে আসি। এর মাঝে আমাদের অফিস ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার কাজ ছাড়া কথা হয় না। এভাবে আমাদের দিনগুলো যাচ্ছে। এভাবে আমার আর সহ্য হচ্ছিলো না ঠিকই কিন্তু মুখে আর কখনো বলিও নাই কিছু।
এখন আমি জানিয়েছি আমার মনকে নীরবের সঙ্গ আমার পছন্দ। আর আমার বন্ধু হয়ে যাচ্ছে হয়তোবা। আমার পক্ষ থেকেও কোন রেসপন্স দিচ্ছিলাম না তবে আমি ওকে সরিয়েও দিচ্ছি না বলেই বুঝে ফেলল সবটা। বন্ধুত্বটা আবার হচ্ছে।
কাটতে কাটতে বিয়ের ২২ দিন পার হয়ে গেছে। হঠাৎ নীরব একদিন ছাদে আমাকে বলে বসল,
– মায়াবিনি তোমার জানতে ইচ্ছা করে না প্রতিদিন নিবিড় কোথায় যায়? কেন দুই ঘন্টা অফিসের বাইরে কি করে একই টাইমে? তোমার কোনো দিন জানতে ইচ্ছে হয় না তুমি কখনোই যেতে চাওনি ওর পিছু পিছু? তোমার কি মনে হয় তোমার একবার যাওয়া উচিত।তেমন কিছু তো আছে যার জন্য ওর আচরণ অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। তা তুমি লক্ষ্য করছো নিশ্চয়। তোমার সাথে ওকে আমি কোন প্রকার কথা বলতে দেখি না। আমার মনে হয় কোনো রহস্য আছে।কি বলো?
নীরবের কথা শুনে আমার মনে হল তাই তো নিবিড় প্রতিদিন কোথায় যায়। আমি ওসব কিছু ভেবে ফেলেছি আমি কালই ফোলো করবো। কিন্তু কি করে? নিবিড় বাইকে যায়। ওকে ফলো করা কোনভাবে সম্ভব নয়।আমি নীরবের দিকে তাকিয়ে রইলাম।কারন আমার মাথায় এখন অন্যকিছু চলছে…….